আবছায়া
writer::প্রিয়া
৩
আইজানের কথা ভেবে ভেবে একাই হেসে যাচ্ছে ইনায়া।তখনি আনায়া রুমে আসলো।
-ও চলে গেছে।
‘হ্যাঁ গেছে।
-আনা তুই ও সবার মতো এরকম ব্যবহার করছিস।
‘কি করবো বল।এই গুন্ডা ছেলেকে আমার একদম পছন্দ না।
-কি গুণ্ডামি করলো ও।
‘এই মাত্র তো গুণ্ডামি দেখিয়ে গেলো।
এতোরাতে রিস্ক নিয়ে কেউ এভাবে আসে।তারউপর বাসার কেউ দেখলে কি হতো।
-তোর কি দরকার ছিলো আগবাড়িয়ে আজকের ঘটনা বলার।
এগুলো শুনে ওর মাথা ঠিক থাকবে কি করে।
‘যত্তসব ন্যাকামি।
-প্রেম কর তখন বুঝবি।
‘আমি প্রেম করবোই না।
-প্রেম কি বলে আসে হঠাৎ ঝড়ের গতিতে এসে যাবে।
প্রেম আসতে ফাল্গুনের প্রয়োজন নেই।নেই কোনো কৃষ্ণচূড়া রঙের আর নেই কোনো লাল গোলাপ কিংবা হাজারটা পদ্মের।
প্রেম হয়ে যায়, মনের অগোচরে প্রেম বংশবিস্তার করে একসময় সেটা প্রকাশ পায় ভালোবাসার রঙে।
‘ধ্যাত কি কবি কবি ভাব।
ঘুমিয়ে পর আমি যাচ্ছি।
আনায়া চলে যায় ঘুমাতে ইনায়া আবার ভাবনার রাজ্যে ডুব দেয়।
সেদিনের পর থেকে আর আইজান কে দেখেনি ইনায়া।
কেনো জানি ছাদে গেলে রেলিং এর উপর বসলে সেই অভদ্র ছেলের কথা মনে পরে ইনায়ার।
অনার্সে ভর্তির জন্য সেদিন ইনায়া ওর বাবার সাথে ভার্সিটিতে যায়।
গাড়ি থেকে নেমে চার-পাঁচটা ছেলেকে দেখতে পেলো।
এরমধ্যে একটা ছেলেকে চেনাচেনা লাগছিলো।
একবার তাজিয়ে আর তাকাতে পারেনি।
বাবার সাথে অফিসকক্ষে যায়।
ভর্তির কাজ শেষ করে কলেজ ঘুরেঘুরে দেখছিলো।
ওর বাবা তখন গাড়িতে ওর জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
তখন আইজান এসে উনাকে বলে লাইটার দেয়ার জন্য।
উনি হা করে তাকিয়ে থাকেন এই বয়সের একটা ছেলে বাবার বয়সী লোকের কাছে লাইটার চায়।
উনি প্যাকেট থেকে লাইটার বের করে দেন।
আইজান সিগারেট জ্বালিয়ে ধোয়া উড়াতে উড়াতে চলে যাচ্ছিলো তখনি ইনায়ার সাথে ধাক্কা খায়।
ইনায়া তাকিয়ে দেখে সেদিনের সেই ছেলে।সিগারেট খাচ্ছে সব ধোয়া ইনায়ার মুখের উপর ছেড়ে দেয়।
-কি অসভ্যতা এগুলো।
‘আরে মিস খরগোশ যে।
তখনি ইনায়ার বাবা গাড়ি থেকে মাথা বের করে ডাক দেন।
ইনায়া কি হলো আয়।
ইনায়া দ্রুত গিয়ে গাড়িতে উঠে।ইনায়ার বাবার তখন চোখেমুখে আগুন।
-মা,বাবা কত স্বপ্ন নিয়ে ছেলেমেয়েকে ভালো কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়।মানুষ হওয়ার জন্য কিন্তু এদের মতো কুলাঙ্গার গুলো মানুষ না হয়ে অমানুষ হয়।
-কি হয়েছে বাবা।
‘ওই যে ছেলেটাকে দেখেছিস আমার কাছ থেকে লাইটার নিয়ে সিগারেট খায়।
ভাবতে পারছিস আমি ওর বাবার বয়সী।
-অসভ্য ছেলে বাদ দাও বাবা।
না আহমেদ সাহেব তো বাদ দেয়ার মানুষ না। পুরো রাস্তা কখনো এই ছেলেকে গালি দিচ্ছেন তো কখনো ছেলেটার ভবিষ্যৎ অন্ধকার ভেবে আফসোস করছেন।
বাসায় ফিরে একেএকে সবার কাছে ঘটনা শেয়ার করলেন।এক এক করে সবাই গালি দিচ্ছে তো দিচ্ছেই।
ইনায়ার কান ঝালাপালা এগুলো শুনতে শুনতে।
১৫দিন পর থেকে ইনায়ার ক্লাস শুরু হয়।
প্রথমদিন ক্লাসে যাওয়া নিয়ে ইনায়ার তো উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।
ফাস্ট দিনের কলেজ লাইফের মতোই ইনায়া বেশ উচ্ছ্বাসিত।
পুরো ওয়ারড্রব খুলে এক এক জামা বের করছে কিন্তু পছন্দ মতো কিছুই পাচ্ছে না।
শেষমেশ নীল জর্জেট থ্রিপিস পছন্দ হলো।
এ যুগের মেয়ে হলে ও ইনায়া ওয়েস্টার্ন ড্রেস পছন্দ করে না।ফরমাল ড্রেসগুলোই ওর প্যাশন।
নীল ড্রেসের সাথে লাল উড়না জড়িয়ে নিলো।হাতে কয়েকটা কাঁচের চুড়ি।হালকা কাজল চোখে।ঠোঁটে গোলাপি লিপষ্টিক।
এতেই যেনো ইনায়ার সৌন্দর্য তিনগুন বেড়ে গেলো।
ইকরাম গাড়ি করে ইনায়াকে কলেজ গেইটে নামিয়ে দিলো।
কলেজে প্রবেশের আগে ইনায়া অপেক্ষা করছে সিমিন আসবে।সিমিন ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড স্কুল জীবন থেকেই।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সিমিন চলে আসলো।
দুজন মিলে পাশাপাশি হাত ধরে হাটছে
কলেজ ক্যাম্পাসে।
কিন্তু মনে মনে সেই অসভ্য ছেলেটা কে খুঁজে বেড়াচ্ছে অবাধ্য চোখগুলো।
ক্লাসের সময় হয়ে গেছে দুজনেই ক্লাসে গেলো।
ক্লাস শেষ করে যখন ফিরছিলো বাসায় তখন রাস্তায় দেখতে পেলো আইজান মারামারি করছে ৪-৫টা ছেলের সাথে।
বেধক পেটাচ্ছে ছেলেগুলো কে। একাই এতোজনকে মারছে সবাই তাকিয়ে দেখছে।
ইনায়া এবার আর রাগ হজম হলো না।
আইজানের হাত থেকে হকি স্টিক কেড়ে নিলো।
-রাস্তার মধ্যে এসব গুণ্ডামির মানে কি।নিজেকে কি ভাবেন হিরো, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ৪-৫টা ছেলেকে মেরে হিরো সাজছেন।
আপনাকে দেখে না আমার ঘৃণা হচ্ছে। আর এই ছেলেরা তোমাদের মা,বাবা কে তোমাদের খাইয়ে বড় করেনি একটা ছেলে একাই মারছে আর তোমরা হজম করছো।
আইজানের কয়েকটা ফ্রেন্ড এগিয়ে আসছিলো ইনায়া কে কিছু বলার জন্য।
তখনি আইজান ওদের থামিয়ে দেয়।
প্যাকেট থেকে একটা টিসু বের করে দেয়
-এই যে মিস ইনায়া ঘাম মুছে নিন।রাগ করে তো ঘেমে একাকার হয়ে গেছেন।
ঘামগুলো কি মিষ্টি দেখতে একটু কি ছুঁইয়ে দেখতে পারি।
আইজানের এ কথা শুনে ইনায়া লজ্জায় সেখান থেকে চলে যায়।
**এসব ভাবতে ভাবতে ইনায়া ঘুমিয়ে যায়। ভোরের আলো ফুটতেই ইনায়ার ফোন বেজে উঠলো।
আইজান ফোন দিয়েছে।
-হ্যাঁ বলো।
‘ঘুম হয়েছে।
-হুম।
‘শরীরে ব্যথা করছে।
-না ব্যথা নেই।
‘সত্যি বলেছো।
-হ্যাঁ।এতো সকালে কল দিচ্ছো যে ঘুমাওনি।
‘না।
-কেনো।
‘তোমাকে দেখার পর থেকেই ঘুম আসছে না।আমার জন্য তোমাকে এতো নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে।
পাগলি ভুলে যা না আমাকে।তুই ভালো থাক আমায় ছেড়ে।
-এই ছেলে এই তোকে ছাড়া আমি কি করে ভালো থাকবো।তুই তো আমার ভালো থাকার কারণ।
‘কেনো এতো ভালোবাসিস।
-তোকে ভালোবাসা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে চাইলে ও ভালো না বেসে থাকতে পারিনা।
‘লাভ ইউ পাগলি।
-লাভ ইউ টু পাগলু
‘আচ্ছা আমি এবার তাহলে একটু ঘুমাই।
-আচ্ছা ঘুমাও।
ইনায়া উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো।মা নাস্তা বানিয়ে সবাইকে খেতে দিলেন।
ইনায়া রুমেই বসে আছে মা নাস্তা নিয়ে আসলেন।
মেয়েকে মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন।
দুপুর হয়ে গেছে সবাই ড্রইংরুমে বসে আলাপ আলোচনা করছে।
একসময় ইনায়ার ডাক পড়লো।
ইনায়া গিয়ে সবাইকে দেখে ঘাবড়ে যায় উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করে কি উত্তর দিবে।তখনি বাবা বললেন।
-বস এখানে।
ইনায়া নিচু হয়ে বসে রইলো।
-দেখ ইনু আমরা সবাই মিলে ডিসিশন নিয়েছে আইজানের বাবা,মায়ের সাথে কথা বলবো।
আমরা চাই তুই ভালো থাক।
‘থ্যাংকইউ বাবা।
ইকরাম-তুই আইজান কে বলিস ওর মা,বাবা কে নিয়ে আসার জন্য।
-কাল আসতে বলি।
‘এতো তাড়াহুড়ো বল কালই আসতে বল।
ইনায়া চুপ করে আছে।তখনি আবার ইকরাম বললো।
-আমরা আরেকটা ডিসিশন নিয়েছে সেটা তোকে বলি শোন।
-আর কি ভাইয়া।
‘তোর বিয়ে হবে আইজানের সাথে পারিবারিক ভাবে।
তবে শর্ত হচ্ছে।
-কি শর্ত ভাইয়া।
‘তুই বিয়ের পর আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করবি না।
যেদিন তোর বিয়ে হবে সেদিনই আমরা জানবো তুই মরে গেছিস।
কি বলছি নিশ্চয় বুঝতে পারছিস।
মাথা নিচু করে টুপটুপ জল ঝরাচ্ছে ইনায়া চোখ থেকে।
এতো কঠিন শর্ত কি করে মেনে নিবে।ওদের না দেখে না কথা বলে যে ও থাকতে পারবে না।
ইনায়া মা আর আনায়া ওর নিশ্চুপ কান্না করছে।
কান্না সামলে ইনায়া জবাব দিলো ঠিক আছে তোমরা যাই চাও তাই হবে।
চলবে।