#আবেগময়_সম্পর্ক2
#অন্তিম_পর্ব
#লেখনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া
সাখওয়াতের জন্য জুঁইকে দেখতে তাদের বাড়িতে এলেন তার মা সবিতা খাতুন। এসেই সর্ব প্রথম দেখা হয়ে গেল জুঁই এর মা জাহানারা বেগমের সাথে। তার সাথে দেখা করে সবিতা খাতুন বললেন,“আপনি কি জুঁই এর মা?”
“হ্যাঁ কেন বলুন তো?”
“আমি আমার ছেলের জন্য জুঁইকে পছন্দ করেছি।”
হঠাৎ এমন কথা শুনে জাহানারা বেগম অবাক হন। পরে সবিতা বেগম সব খুলে বলেন যে, “জুঁই আমার নাতনিকে পড়ায়। সেখানেই ওকে দেখে আমার পছন্দ হয়ে যায় এবং ওকে আমার ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ করি। এখন আপনি রাজি থাকলে বিয়ে হবে। কারণ আমি ইতিমধ্যে আপনাদের ব্যাপারে সব কিছু খোঁজ নিয়ে ফেলেছি। আমার আপনাদের সবকিছুই ভালো লেগেছে। তাই আমি চাই যে এই বিয়েটা হোক। এখন বাকিটা আপনাদের উপর নির্ভর করছে যে আপনারা কি চান।”
জাহানারা বেগম যেন মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গেলেন। কারণ তিনি জুঁই এর কাছে শুনেছেন যে, এই বাড়ির মানুষরা অনেক বড়লোক। তাই যদি বিয়েটা হয় তাহলে সুবিধাই হবে বটে। এই ভাবনা থেকেই জাহানারা বেগম বলে দেন,“হুম, আমি রাজি আছি। আপনারা এক দিন দেখতে আসুন। তারপর বিয়ে হয়ে যাবে।”
সবিতা খাতুন বলেন,“আগামী সপ্তাহেই আমি জুঁই কে আংটি পড়িয়ে যাবো। আর তার পরেই বিয়ের কথাবার্তা এগোবে।”
সবিতা খাতুনের কথা শুনে জাহানারা বেগম আরো বেশি খুশি হয়ে গেলেন। এখন শুধু কোন ক্রমে এই বিয়ে টা হলেই হলো। তাহলে দুই পক্ষই খুশি হবে।
❤️
আজকে সুইটি স্কুলে এসেই নিখোঁজ হয়ে গেছে। সাখওয়াত তাকে খুঁজে না পেয়ে পাগল এর মতো মানে পাগল প্রায় হয়ে গেছে। সুইটির নিখোঁজ এর কথা শুনে জোনাকিও এগিয়ে আসে সাহায্য করতে। তারা জানতে পারে সুইটিকে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী তুলে নিয়ে গেছে। এই খবর জেনে অনেক কষ্ট পায় তারা। কিছু তথ্য অনুযায়ী সেই স্থানে যায় এবং জোনাকি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুইটিকে উদ্ধার করে।
সুইটির এই আচরণ মুগ্ধ করে দেয় সাখওয়াত কে। এর ফলে সাখওয়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে সে যদি বিয়ে করে তাহলে শুধু জোনাকিকেই করবে। তাছাড়া আর কাউকে নয়। কারণ সে নিশ্চিত যে জোনাকি সুইটিকে দেখে রাখতে পারবে।
পরের দিন, সবিতা খাতুন যখন সাখওয়াত কে জুঁই এর ব্যাপারে বলে তখন সাখওয়াত সাফ জানিয়ে দেয়,“আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি। তাই এই বিয়েটা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
“কাকে পছন্দ করিস তুই?”
“সেটা তুমি আজই জানতে পারবে। আমি তার ঠিকানা সংগ্রহ করেছি। আজই তোমাকে সেখানে নিয়ে গিয়ে বিয়ের কথা একেবারে ফাইনাল করে দিবো। বুঝলা?”
সবিতা খাতুন হ্যাঁ বললেন। যার অর্থ তিনি বুঝেছেন৷ এখন দেখার পালা তার ছেলে কেমন মেয়ে পছন্দ করেছে।
একটু দুপুর হতেই সবিতা খাতুন কে নিয়ে জোনাকির বাড়িতে চলে আসে সাখওয়াত। জুঁই এর বাড়ি দেখে সবিতা খাতুন অবাক হয়ে বলেন,“আরে এটা তো সেই বাড়ি যেখানে আমি কাল এসেছিলাম। মানে জুঁই এর বাড়ি। তুমি যেই মেয়েকে পছন্দ করেছ, তার বাড়িও এটা! কিভাবে সম্ভব?”
সাখাওয়াতের মনেও কেমন প্রশ্নটা জাগে। তাই সে আর দেরি না করে সবিতা খাতুন কে নিয়ে বাড়িতে যায়৷ সেখানে গিয়ে তাদের সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। তারা জানতে পারে সাখওয়াত যাকে পছন্দ করেছে সে আর কেউ নয় জুঁই এর বড় বোন জোনাকি।
এখান থেকেই নতুন সমস্যার সূত্রপাত। জোনাকি বিধবা এটা জানার পর সবিতা খাতুন বিয়েটাতে রাজি হয়না। কারণ তার মতে বিধবা মেয়েরা অপয়া হয়। তার এই ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে সাখাওয়াত বলে, “বিয়ে যদি করি জোনাকিকেই করব। নাহলে বিয়ে টাই করব না।”
এভাবে মা ছেলের মধ্যে কিছুদিন যুদ্ধ চলে। অবশেষে সাখাওয়াতের জেদের কাছে হেরে সবিতা খাতুন রাজি হন জোনাকির সাথে বিয়েতে। সাখাওয়াত অনেক খুশি হয়। কিন্তু সবিতা খাতুন চরম পরিকল্পনা করেন।
সাখাওয়াত ও জোনাকির বিয়ের দিন তিনি জোনাকিকে অপহরণ করে লুকিয়ে রাখেন। এর ফলে সাখাওয়াতের সাথে জুঁই এর বিয়ে হয়ে যায়। সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যায়।
সাখাওয়াত বাধ্য হয় জুঁই এর দায়িত্ব নিতে। এভাবে একটা সম্পর্কের সূচনা হয়। জোনাকি সাখাওয়াতের জীবনে ফিরে আসতে চায়। সে সবিতা খাতুনের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়। সাখাওয়াত খুব রেগে যায়। জুঁই এবার সাখাওয়াত কে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। যার পর জোনাকি সাখাওয়াত কে বিয়ে করে নেয়। কয়েক বছর পর, জোনাকি প্রেগন্যান্ট হয়। কিন্তু বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে সে মারা যায়। মৃত্যুর আগে জুঁইকে দিয়ে কথা দিয়ে নেয় যে, জুঁই যেন সুইটির এবং তার সন্তানের খেয়াল রাখে। জুঁই সেটাই করে। এর মধ্যে সবিতা খাতুনের শেষ ইচ্ছার মর্যাদা রাখতে সাখওয়াত আবার জুঁইকে বিয়ে করে। প্রথমে তো সে শুধু বাচ্চাগুলোকে দেখে রাখত কিন্তু পরে সাখাওয়াতের সাথে তার সম্পর্ক ভালো হয়। এভাবে একটি আবেগময় সম্পর্ক গড়ে ওঠে সবার মাঝেই।
#সমাপ্ত
(