আমার একলা আকাশ পর্ব-০১

0
866

#আমার_একলা_আকাশ🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(Writer)
#১ম_পর্ব

আচ্ছা আমাকে দেখে কি আপনার পাগল মনে হচ্ছে?? আর সবার মতো কি আপনার ও মনে হচ্ছে আমি পাগল??(দিয়া)

আজই প্রথম এ হসপিটাল এ জয়েন করেছি জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে,, এখানে তেমন কাউকেই চিনিনা ভিতরে প্রবেশ করেই দেখলাম একটা মেয়ে গাছের নিচে বসে আছে ওনাকে যেই কিছু জিগেস করবো তার আগেই ওনি এমন একটা কথা বলল,, আজব পাগলা গারদে এসে অচেনা কেউ যদি বলে তাকে দেখে কি পাগল মনে হচ্ছে?? এই কথার পিঠে কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না তাই চুপ করে ওখানেই দাড়িয়ে আছি তখনি পিছন থেকে কেউ বলল।

আপনি কি মিষ্টার স্পন্দন?? (নার্স)

জি,,, ইয়ে মানে বলছি কি ডাক্তার আজিজ এর কেবিনটা কোথায় একটু বলবেন প্লিজ??(স্পন্দন)

ইয়া শিওর,, ওই যে সামনে গিয়ে বা দিকের রুমটাই ওনার,, আর তাছাড়া ওনার কেবিনের সামনে ওনার নাম লিখা আছে।(নার্স)

ওহ অনেক ধন্যবাদ,, আচ্ছা বলছি যে ওনি(বসে থাকা মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে) কে??

আরে এটা তো ৩৪ নাম্বার কক্ষের ১৬ নাম্বার বেডের পেসেন্ট,, এই তুমি এখানে কেনো?? এখন তো তোমার ঔষুধ নেওয়ার সময় তুমি এখানে কেনো?? এই কে আছো?? (নার্স)

নার্সের ডাক শুনে ওখানে দুজন ওয়ার্ড বয় আসলো।

হ্যাঁ বলুন।

একে নিয়ে যাও আমি একটু পর ওর ঔষুধ নিয়ে আসছি (নার্স)

ওকে,, এই চলো। (এই বলে লোক দুজন মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো)

না আমি কোথাও যাবো না আমি এখানেই থাকবো,,, আমি ওই বদ্ধ ঘরে থাকবো না,, আমাকে খোলা আকাশের নিচে থাকতে দাও,, ছাড়ো আমায় (দিয়া)

তারপর লোক দুজন মেয়েটাকে জোর করে নিয়ে গেলো।

একি আপনি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে, (নার্স)

ওহ হ্যাঁ আমি যাচ্ছি, (এই বলে স্পন্দন ওখান থেকে চলে আসলো)

সত্যি এখানে সব কিছুই কেমন যেনো অদ্ভুত কে ভালো কে পাগল দেখে বোঝায় যায় না,, ও হ্যাঁ আপনাদের বলে রাখি আমি একটা মানসিক হসপিটাল এ জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে জয়েন করেছি,, হসপিটাল টা অনেক বড় অনেকটা এরিয়া নিয়ে রয়েছে, চারিদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা পেসেন্ট,, ডাক্তার, নার্স আর ওয়ার্ড বয় দের জন্য আলাদা আলাদা কামড়া রয়েছে,,, এখানে সব কিছুর ব্যবস্হা আছে,, রোগীদের বাইরে ছেড়ে রাখা হয় তবে সেটা কড়া সিকিউরিটি সাহায্যে আর বাইরে বলতে হসপিটাল এর এরিয়ার মধ্যেই,,, এরি মাঝে আমি ডাক্তার আজিজ এর কেবিনের সামনে চলে আসলাম।

আসতে পারি??(স্পন্দন)

হুম আসুন। (অনেকটা গম্ভীর সরে)

স্যার আমি স্পন্দন এখানে নতুন জয়েন করেছি।

ওহ তুমিই তাহলে স্পন্দন হুম ভালো,, তারপর ওনি কাউকে ডাকদিলো আর তখনি ওখানে একটা ছেলে আসলো,, আর আজিজ ছেলেটাকে বলল আমাকে পুরো হসপিটাল এর কোথায় কি আছে সেটা দেখাতে আর আমার কাজ বুঝিয়ে দিতে। আমিও ছেলেটার সাথে চলে আসলাম।
ছেলেটা যখন আমাকে সব জায়গা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলো তখনি হসপিটাল এর গেট দিয়ে অনেক বড় একটা গাড়ি নিয়ে কেউ আসলো,, তারপর গাড়ি থেকে একটা ছেলে বার হলো দেখতে অনেক সুন্দর ওনি গাড়ি থেকে নেমে সোজা ডাক্তার আজিজ এর রুমে চলে গেলো।

আচ্ছা ওনি কে??(স্পন্দন)

আরে ওনি হলেন আকাশ স্যার,, ওনি অনেক বড়লোক (ওয়ার্ড)

ওনি এই হসপিটাল এ কি করছে?? ওনার কেউ কি এখানে আছে??(স্পন্দন)

হুম আছে তো,, ওনার একজন পেসেন্ট আছে একটা মেয়ে তবে সেই মেয়েটা ওনার কি হয় তা জানি না (ওয়ার্ড বয়)

আচ্ছা ঠিক আছে, চলো ওদিক টা যায়।

তারপর ওখান থেকে সবকিছু দেখা শেষ করে সব কিছু বুঝে নিয়ে চলে আসলাম কাল থেকে পুরো দমে কাজ শুরু করতে হবে।

আমার দু রুমের একটা ছোট্ট ফ্লাট এখানে আমি ভাড়া থাকি মা আর বোন গ্রামে থাকে তবে ভাবছি কয়েকমাস পর ওদের ও এখানে আনবো,, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ফ্লাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে চাবিটা বার করে দরজাটা খুলে ভিতরে গেলাম।

একি রুমটা এমন অন্ধকার করে রেখেছো কেনো?? এই ভর সন্ধ্যা বেলায় আলোটাও দেখছি জালানো হয়নি,,, মায়া তুমি কিন্তু দিনদিন অনেক কজ চোর হয়ে যাচ্ছো,, এই যে সেই কখন থেকে আমি একা একা বকবক করে যাচ্ছি তোমার কোনো সাড়া শব্দই নেই, কোথায় তুমি (রুমে ঢুকে আলোটা জালিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে রুমে গেলাম)

এই যে তুমি এখানে আমি সেই কখন থেকে কথা বলছি সাড়া দিচ্ছো না কেনো?? দুষ্ট মেয়ে(একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলল স্পন্দন)

(আদৌ ছবির মানুষ টা বেঁচে নেই স্পন্দন এখানে একাই থাকে তবে ছবির মানুষ টা হলো মায়া,, যাকে স্পন্দন প্রচন্ড ভালোবাসে, তবে মায়া আর বেঁচে নেই,, আসোলে আমরা যখন কাউকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলি তাকে নিজের পুরো পৃথিবী মনে হয় তখন যদি সেই মানুষ টা আমাদের কে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যায় যেখান থেকে আর কখনো ফিরে আসা সম্ভব নয়,, তখন আমরা প্রচন্ড একটা শক পাই তখন যদি একা থাকি তাহলে আমরা নিজের আজেপাশে সেই মানুষ টাকে অনুভব করি কল্পনা করি নিজেই একটা জগত বানিয়ে ফেলি সেখানে শুধু ভালোবাসার মানুষ টা থাকে, আর এই গল্পে স্পন্দন ও তাই)

রাতে খাওয়ার পর,,,,

চলো তোমাকে রাতের আকাশ দেখাবো (এই বলে স্পন্দন মায়ার ছবিটা নিয়ে টেবিল থেকে ছাদের চাবিটা নিয়ে চলল ছাঁদের উদ্দেশ্য,,ছাদের চাবিটা অবশ্য ওর কাছেই থাকে ফ্ল্যাটের মালিক কে অনেক বলার পর ওনি রাজি হয়েছে,,,, ছাঁদের এক কিনারে বসে ছবিটা পাশে রেখে স্পন্দন বলল।

আমি জানি ওই দূর আকাশের সবচেয়ে বড় তারাটা হলো তুমি,, আচ্ছা তুমি কেনো চলে গেলে আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়াটা কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো?? প্লিজ ফিরে এসো জানি সম্ভব নয় তবুও যে মন মানতে চাই না। (এটা বলে মায়ার ছবিটা বুকে নিয়ে অঝর ধারায় কাঁদতে লাগল,, এটা প্রতিদিনই করে অবশ্য)

,,,,,সকালে,,,,,

রবি ঠাকুর বলেছিলো,,,

,,,,ঘরের মধ্যে তুমি যত ইচ্ছে কাঁদো কিন্তু দরজা সব সময় হাসি মুখেই খুলবে,,,
,,,,কারণ যদি কেউ দেখে নেই যে তুমি ভেঙে পড়েছো তবে সে তোমায় আরো ভেঙে দিয়ে যাবে,,,

স্পন্দন ও তাই হাসিমুখে কাজে বেরিয়ে পড়ল, বাইরে থেকে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না ছেলেটার মধ্যে এতো কষ্ট।

,,,,হসপিটাল,,,,

এই মেয়ে তুমি এই সকালে গাছে উঠেছো কেনো?? এখান থেকে পড়লে না শরীলে একটা হাড়ও আস্ত থাকবে না নামো গাছ থেকে,, (হসপিটালে ঢুকেই দেখি একটা মেয়ে গাছে উঠে বসে আছে তাই তাকে কথাগুলো বললাম,, পাগলের ডাক্তার হয়ে যে নিজেই কবে পাগল হয়ে যাবো কে জানে)

আচ্ছা আকাশে এতো রোদ কেনো?? বৃষ্টি হয় না কেনো??(দিয়া)

আরে তুমি কালকের সেই মেয়েটা না??(স্পন্দন)

আপনি কে?? আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন যে বৃষ্টি কখন হবে?? আমার না বৃষ্টি অনেক ভালো লাগে (দিয়া)

তোমাকে দেখে তো মনে হয় না যে তুমি পাগল তবুও যে কেনো তোমাকে এখানে রাখা হয়েছে কে জানে,,,, (স্পন্দন)

আপনার ও মনে হয় না যে আমি পাগল তাই না?? জানেন আমারও তাই মনে হয় কিন্তু এরা কেউ বিশ্বাসই করে না,, আমি পাগল নয় সত্যি বলছি,, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবেন??(দিয়া)

সব পাগলই এমনই বলে (স্পন্দন মনে মনে বলল) আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাবো তার আগে বলো তোমার আকাশ ভালো লাগে??

হুম আমার খোলা আকাশ অনেক ভালো লাগে,,, ওই যে দেখছেন মাথার উপর বিশাল বড় আকাশ আমার এই আকাশ ভালো লাগে তবে, আপনাদের মতো মানুষ রূপে যেসব আকাশ আছে তাদের একটুও ভালো লাগে না খুব খারাপ (দিয়া)

কিহ?? কি সব আবুল তাবুল বলে,, ওহ আল্লাহ কেনো যে মানসিক হসপিটাল এর ডাক্তার হলাম এখন তো দেখছি নিজেই পাগল হয়ে যাবো।

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি থাকো দাখো আকাশ আমি ভিতরে গেলাম।

এই বলে যেই ভিতরে যাবো তখনি পিছন থেকে কেউ ধাক্কা মারলো আর আমি সোজা গিয়ে পরলাম ওই মেয়েটার উপর,,, আর মেয়েটা আমার নিচে।

আপনি কত ভালো দেখতে (দিয়া স্পন্দন এর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল)

আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে,, আমি তারাহুরো করে মেয়েটার উপর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম,,, মেয়েটা তখনো নিচেই পড়ে আছে।

কি হলো উঠো??

উঠিয়ে দেন (স্পন্দন এর দিকে হাত বারিয়ে)

সরি পারবো না,, আমি এতোটাও ভালো নয় (এই বলে স্পন্দন চলে গেলো)

ধূর ছাই যত ভাবি মেয়েদের থেকে দূরে থাকবো ততই আরো তাদের সাথেই বেশি দেখা হয়,,, মায়া যদি জানতে পারে তাহলে অনেক রাগ করবে (একা একা কথাগুলো বলতে বলতে ভিররে যেতেই কেউ একজন এসে বলল)

হেই তুমি স্পন্দন রাইট??.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here