#আমার_সংসার
.
.
 Part:29
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
অতঃপর সিনহা আর দেরী না করে সোজা ফাহিমের ফ্লাটে গিয়ে দেখে চমকে গেলো।ফাহিম মেঝেতে উপুড়  হয়ে পড়ে আছে।সিনহা ছুটে ফাহিমের কাছে গিয়ে ডাকলেও সাড়া পেলো না।কপালে হাত দিয়ে দেখে অনেক জ্বর।জ্বরে বেহুস হয়ে পড়ে আছে ফাহিম।বৃষ্টিতে ভেজার  তার একদমই  অভ্যাস নেই।আজ হঠাৎ করে ভিজে এমম অবস্থা হয়েছে তার।ডাক্তার তো এখন আসবে না।রাত বেশ গভীর হয়েছে।বৃষ্টির দিনে ডাক্তার পাওয়া  একটু কঠিনই।সিনহা অনেক চেষ্টার  ফলে স্বপ্ন কে সাথে নিয়ে ফাহিম কে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
.
সিনহা ফাহিমের মাথায় পানি ঢালছে আর চোখদুটো স্বপ্নের দিকে যায়।স্বপ্ন  ঝিমাচ্ছে । অনেক রাত হয়েছে  আর কতইবা জেগে থাকবে বাচ্চা  ছেলে টা ভাবলো সিনহা।
  – “বাবা ঘুম পেয়েছে?
  – ” হ্যাঁ মামুনি।
  – “একটু অপেক্ষা  করো আঙ্কেলের মাথায় পানি দিয়ে তোমায় খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।
  – ” না মামুনি আমি খাবো না খিদে পায়নি।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
  বলেই স্বপ্ন  ফাহিমের পাশে গিয়ে  শুয়ে পড়লো।সিনহাও কিছু বললো না কারন ফাহিমের জ্বর অনেক, ওষুধ খাইয়ে দিয়েও কমছে না।জ্বরের ঘোরে আবল তাবল বকছে।মায়াপরী মায়াপরী করছে।আচ্ছা  এই মায়াপরী টা আবার কে?
.
এদিকে সাইরি রাতে শুয়ে শুয়ে ফাহিমের কথা ভাবছে।লোকটা কি পাগল।কথা বললে কোনো উত্তর  দেয় না শুধু হাসে।আবার এমনিতেই মুখে হাত দিয়ে বসলো।আবার নিজেই মন খারাপ করে চলে গেলো।আমাদের চারবার দেখা হয়েছে এবং কোথায় কোথায় দেখা হয়েছে এটাও মনে রেখেছে।কেনো?
.
সিফাত শুয়ে সিনহার কথা ভাবছে।তোমার ভুল গুলো ভেংগে দিবো আমি সিনহা। আবারো নিজের করে নিবো তোমায়।আমি তুমি আর আমাদের সন্তান সবাই একসাথে থাকবো।কাউকে আসতে দিবো না আর আমাদের মাঝে।কিন্তু তোমার এই ভুল টা আমি ভাংবো কি করে।অভিমান কিভাবে দুর করবো তোমার।
.
সারারাত ফাহিমের পাশে বসে সিনহা ফাহিমের মাথায় জলপট্টি  দিয়ে যাচ্ছে  একের পর এক।প্রায়  সকাল হয়ে গেছে।মাথায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর টা বেশি নেই।স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।ফাহিম এখনো ঘুমিয়ে আছে।স্বপ্নও ঘুমোচ্ছে। সিনহা বসা থেকে উঠে দাড়ালো।জানালার পর্দা গুলো সড়ালো।সকালের রোদে ঝলমলে হয়ে উঠলো রুম।ভালো করে ফাহিমের ঘরের চারদিকে ঘুরে দেখতে লাগলো সিনহা।আগে কখনো আসেনি।ঘুরে ফিরে দেখতে দেয়ালের দিকে চোখ পড়তেই সিনহা হা।পুরো দেয়াল শুধু সাইরির ছবি।সিনহার একটুও ভুল হলো না তার ছোট বোন কে দেখতে।সিনহা ভাবছে ফাহিম সাইরি কে চিনে কিভাবে।ওরা কি একে অপরকে জানে।যেভাবে ছবি লাগিয়ে রেখেছে তাতে যে কেউ ভাববে সাইরি কে ফাহিম পছন্দ  করে।সাইরিই তাহলে ফাহিমের মায়া পরী।ওদের দুজনের কোনো সম্পর্ক নেই তো ব্যাপার টা দেখতে হচ্ছে। সিনহা আর রুমে দেরী না করে ব্রেকফাস্ট  তৈরী করতে চলে গেলো।
.
সিনহা ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসে দেখে ফাহিম জেগে গেছে।
  – “গুড মর্নিং,, !
  – ” মর্নিং,,,”
  – “এখন কেমন ফিল করছেন?
  – “কেমন ফিল করবো হঠাৎ  এই কথা,আর আপনি এখানে এতো সকালে?
  – ” এতো সকালে না সারারাতই ছিলাম।ঐ দেখেন পাশে আপনার ছাত্র ঘুমাচ্ছে।
  কথাটা শুনে ফাহিম পাশে তাকাতেই দেখে স্বপ্ন ঘুমাচ্ছে। জিঞ্জাসু চোখে তাকালো ফাহিম সিনহার দিকে।
  – “আপনারা সারারাত কেনো ছিলেন?
  – ” আপনার দেখছি কিছুই মনে নেই।কাল রাতে জ্বরে বেহুশ হয়ে ফ্লোরে পড়েছিলেন।স্বপ্ন আপনাকে ডিনারের জন্য ডাকতে এসে দেখে আমাকে বলে আমি আসি।
  পাশে থাকা বালতি , পানি,মগ দেখে ফাহিমের বুঝতে বাকি রইলো না সিনহা তার মাথায় পানি ঢেলেছে।
  – “সরি আর ধন্যবাদ?
  – ” সরি কেনো আর ধন্যবাদও কেনো?
  – “এই তো আপনাকে কষ্ট করতে হলো আমার জন্য।আর আপনি কষ্ট করে হলেও আমার উপকার করলেন এইজন্যই সরি আর ধন্যবাদ।
  – ” ফাহিম আপনি কি আমার কম উপকার করেছেন,সেগুলো কি ভুলেছি আমি।আপনি না থাকলে আজ আমরা কোথায় থাকতাম কি করতাম,বেঁচে  থাকাতাম কি মারা যেতাম তার কেনো নিশ্চয়তা  নেই।
  – “বাদ দিন সেসব কথা।
  – ” হ্যাঁ ঠিক তাই আপনিও বাদ দিন।আমরা প্রতিবেশী  না।প্রতিবেশীর বিপদে প্রতিবেশীই তো সাহায্যের  হাত বাড়াবে তাই না।এতে নো সরি নো থ্যাংকস ওকে?
  – “আচ্ছা  ওকে।
  – ” নিন এবার ফ্রেশ হয়ে এসে ব্রেকফাস্ট করুন?
  – “আবার ব্রেকফাস্ট কেনো?
  – ” একদম চুপ থাকবেন আপনি।বেশি কথা বলবেন না, আপনি এখন অসুস্থ বুঝলেন?
  – “উহু মোটেও না আমি এখন সুস্থ বলে উঠে ফ্রেশ হতে যেতেই ফাহিম মাথা ঘুরে পড়ে যেতে লাগলো।সিনহা ধরে বললো দেখতেই তো পাচ্ছি কেমন সুস্থ  আপনি।দুর্বলতার কারনে  পড়ে যাচ্ছিলেন,আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন।
  – ” আরে না ঠিক আছি আমি।
  – “কচু ঠিক আছেন আপনি,যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন।
  ফাহিম ফ্রেশ হতে চলে গেলো আর সিনহা স্বপ্ন  কে ডাকতে লাগলো।
  – “স্বপ্ন  বাবা উঠে পড়ো সকাল হয়ে গেছে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট  করে নাও।
  – ” উহু নাহ মামুনি উঠবো না এখন আমার ঘুম পাচ্ছে।
  – “সে আবার কি কথা স্বপ্ন  উঠো স্কুলে যাবে না?
  – ” নাহ মামুনি আজ যাবো না প্লিজ।ঘুম পাচ্ছে  আমার একটু ঘুমাতে দাও।
  সিনহা আর ডাকলো না।কারন কাল ওর সাথে অনেক রাত জেগেছে স্বপ্ন। বাচ্চা  ছেলে ঠিক মতো ঘুম না হলে ক্ষতি।এখন যদি ওকে জোর করে স্কুলে পাঠিয়ে দেই তাহলে ক্লাসে ঘুমাবে পড়াই মনোযোগ  থাকবে না।একই হলো সেটা যাওয়া আর মা যাওয়া।তার চেয়ে ভালো বাড়িতেই ঘুমাক।
.
ফাহিম শাওয়ার নিয়ে শুধু টাওয়াল পড়ে বাহিরে বের হতে পারছেনা লজ্জায়। অনেকক্ষন হয়ে গেছে সে ভিতরে হাটাহাটি করছে কিন্তু  এভাবে সিনহার সামনে  যাবে কি ভাবে।আসার সময় শার্ট প্যান্ট আনতে ভুলে গেছে।এবার বের হবে কি করে ভাবছে আর ভাবছে।আর ফাহিমের জন্য অনেকক্ষণ ধরে ওয়েট করছে সিনহা।ওনার কিছু হলো না তো ওয়াশরুমে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে থাকলো না তো যে দুর্বল  হয়েছে উনি এসব ভেবেই সিনহা ওয়াশরুমের দরজায় নক করলো।
  – “মি.চৌধুরী , হলো আপনার আর কতোক্ষন লাগবে?
  – ” এই তো হয়ে গেছে আরেকটু খানি।
  – “ওহ আচ্ছা  আসুন তাহলে,যাক ঠিক আছেন উনি।
  হয়েছে তো অনেকক্ষন আগেই কিন্তু যেতে পারছি না এভাবে।আমি বের হবো কিভাবে আল্লাহ উপায় দাও।
সিনহা আবারো নক করলো।
  – “এখনো হয়নি??
  – ” মিসেস আহমেদ  একটা কথা শুনবেন?
  – “জ্বী বলুন?
  – ” আপনি একটু আমার রুম থেকে বাহিরে যাবেন।কিছু মনে করবেন না প্লিজ।আমার একটু দরকার আছে।
  – “আচ্ছা  যাচ্ছি । বলে সিনহা কিছু আন্দাজ করে বাহিরে গেলো।
  – ” কই গিয়েছেন?
  – “হ্যাঁ এসেছি বাহিরে।
  – ” গিয়েছেন যখন তাহলে আমার কথা শুনতে পেলেন কিভাবে, আরো দুরে যান যতটা দুরে গেলে আমার কথা শুনতে পারবেন না আর দরজাটা লক করে দিয়েন যাওয়ার সময়।
ফাহিমের কথায় সিনহা হাসলো খানিক  তারপর ফিরে এসে দরজা লক করে চলে গেলো।যাওয়ার সময় বলে গেলো আমি যাচ্ছি  আসুন এবার।ফাহিম টাওয়াল পড়ে বের হয়ে আলমারি  থেকে শার্ট, প্যান্ট বের করে পড়তে যাবে  তখুনি বিছানায় তাকিয়ে দেখে স্বপ্ন  ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।মনে হয় হয় এর আগে কাউকে  এভাবে দেখেনি কখনো,প্রথমবার টাওয়াল পড়া কোনো এলিয়েন দেখছে সে এমন ভাব।ফাহিম ওর কাছে গিয়ে  ওকে শুইয়ে মাথার ওপর দিয়ে কম্বল মুড়িয়ে দিয়ে বললো আমি না বলা পর্যন্ত মুখ বের করবে না এর ভিতর থেকে।
অতঃপর চেঞ্জ করতে লাগলো।আর স্বপ্ন  মুখ না বের করে চোখ বের করলো।ফাহিম স্বপ্নের দিকে  তাকাতেই দেখে তাকিয়ে আছে।
  – “স্বপ্ন  তোমাকে বারন করেছি না আমি?
  – ” হ্যাঁ আঙ্কেল।
  – “তবুও কেনো কম্বলের ভিতর থেকে বের হইছো?
  – ” আঙ্কেল আপনি মুখ বের করতে না করেছেন কিন্তু  চোখ বের করতে তো বারন করেননি তাই আমি মুখ বের না করে চোখ বের করেছি।
  – “আরে বাপ তুই কি জিনিষ বলতো।এবার বলছি শুনো মাথা বের করবে না ঢুকাও মাথা।
  – ” আচ্ছা ।
  ফাহিম রেডি হয়ে ডাকলো সিনহা কে।
.
to be continue….
            
		




