আমি ফাইসা গেছি পর্ব -৩৬+৩৭

#আমি_ফাইসা_গেছি(৩৬)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

মিসেস লাবুনি বেগম আর মিঃ শহিদুল সাহেব তার ছেলের অপকর্মের জন্য নিজেরা ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলেন।তারা ভাবতেই পারছেন না শ্রাবণ এই ধরনের একটা বাজে কাজ করতে পারে।মিঃ জারিফ চৌধুরীর সাথে মিঃ শহিদুল সাহেবের অনেক আগে থেকেই পরিচয় যার কারণে শহিদুল সাহেব লজ্জায় জারিফ চৌধুরীর মুখের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছেন না।কত বড় মুখ করে এসেছিলেন জারিফ চৌধুরীর ভাতিজির সাথে নিজের ছেলের বিয়ে দেবেন।কিন্তু শ্রাবণ এমন একটা অন্যায় করেছে যা খুবই লজ্জাজনক।তবে অন্যান্য আত্নীয়স্বজন তার ছেলের এই জঘন্য কাজ টা জানার আগেই তাকেই কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে।সেজন্য মিঃ শহিদুল সাহেব মিসেস জামিলা বেগম কে প্রস্তাব দিলেন তিনি যেনো এ বিষয় টা নিয়ে আর কারো সামনে না বলেন।ভালো একটা দিনক্ষণ দেখে তিনি জারার সাথে শ্রাবণের নতুন করে আবার বিয়ে দিবেন।

মিসেস লাবুনি বেগম মনে মনে মোটেও খুশি হলেন না মিঃ শহিদুল সাহেবের এমন সিদ্ধান্তে। তিনি তো ভেবে রেখেছিলেন কিছু টাকা দিয়ে জারাকে বিদায় করে দিবেন।আর জারার পেটের সন্তান নষ্ট করতে বলবেন।কিন্তু জারিফ চৌধুরী আর মিঃ সুলেমান চৌধুরীর সামনে এরকম প্রস্তাব তিনি মুখে আনতেই পারলেন না।কারণ কামিনী ভীষণ ডেঞ্জারাস মহিলা।তিনি এই মুহুর্তে এই প্রস্তাব দিলে না জানি আবার তাকে কিভাবে অপমান করে?

সুলেমান চৌধুরী আর জারিফ চৌধুরী মিঃ শহিদুল সাহেবের কথা শুনে বললো,
না,কিছুতেই দেরি করা যাবে না।ভালো দিনক্ষন দেখে আপনি আপনার ছেলের বিয়ে ধুমধামে দিন,এতে কোনো সমস্যা নাই।কিন্তু আজ কালকের মধ্যেই জারা আর শ্রাবণের আগে বিয়ের কাজটা দ্রুত সেরে ফেলুন।আর মেয়েটাকে আপনার বাড়িতে ঘরের বউ করে নিয়ে যান।এটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান হবে।কারন শুভ কাজে বেশি দেরি করতে নেই।

শহিদুল সাহেব মিঃ জারিফ চৌধুরী আর সুলেমান চৌধুরীর মুখের উপর আর কোনো কথা বলতে পারলো না।যেহেতু এটা তার আর তার ফ্যামিলির মানসম্মানের ব্যাপার।সেজন্য সবাই মিলে ঠিক করলো কালই জারার সাথে শ্রাবণের বিয়ে হবে।কিন্তু শ্রাবণ কোথায়?মিসেস লাবুনি বেগম তখন কুশানকে বললো,
শ্রাবণ কোথায়?ওকে দেখছি না কেনো?

কুশান মিসেস লাবুনি বেগমের কথা শুনে বললো, আন্টি ও যে কোথায় গেলো বলতে পারছি না।হয় তো লজ্জায় আপনাদের সামনে আসতেছে না।আপনি চিন্তা করেন না আন্টি ও যেখানেই থাক কাল বিয়ের সময় ওকে আমি নিজে হাজির করবো।

–লজ্জা?ওর লজ্জা পাওয়া শিখিয়ে দিবো আমি।ওরে আজ হাতের কাছে পাইলে আমি একদম খুন করে ফেলতাম।একদম অমানুষের মতো একটা কাজ করেছে।আমার যা মানসম্মান ছিলো সব শেষ।এই কথা বাহিরে জানাজানি হলে আমি যে কিভাবে মুখ দেখাবো ভাবতেই আমার দম আটকে যাচ্ছে।কথাগুলো বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে বললো মিঃ শহিদুল সাহেব।তার মতো একজন সম্মানিত ব্যাক্তির ছেলে যে এরকম একটা জা*নো*য়ার হয়েছে তিনি ভাবতেই পারছেন না।

জারা আর জামিলা বেগম কুশান আর তার ফ্যামিলি মেম্বার দের উপর অনেক বেশি খুশি হলেন।জামিলা বেগম তো সবার সামনেই কুশান আর তার ফ্যামিলি মেম্বার দের জন্য হাত তুলে দোয়াও করতে লাগলেন।তিনি ভাবতেই পারেন নি এতো সহজে এতো বড় একটা প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে।তিনি তো ভেবেছেন তার মতো মনে হয় জারার ও সেম অবস্থা হবে।জারার অনাগত সন্তান ও বাবা ছাড়া বড় হবে আর লোকজনের হাসির পাত্র হয়ে বড় হবে।নতুন করে বিয়ের পর শ্রাবণ ভালো হবে কি হবে না সেটা জারা বুঝতে পারছে না।তবে তার সন্তান যে স্বীকৃতি পাবে এজন্যই অনেক বেশি আনন্দ লাগছে জারার।

জারারা আজ বাড়ি যেতে চাইলে তোড়া আর কামিনী কিছুতেই যেতে দিলো না।যেহেতু কালকেই বিয়ে হবে,আর জারাকে মিঃ শহিদুল সাহেব পুত্র বধু হিসেবে তার বাড়িতে তুলবে সেজন্য আজ জামিলা আর জারা কুশানদের বাড়িতেই রয়ে গেলো।

তবে কুশান এটাও জানালো চাইলে জামিলি তার নিকট কয়েকজন আত্নীয়কে কাল বিয়ের জন্য ইনভাইট করতে পারে।

জামিলি সেই কথা শুনে বললো আচ্ছা বাবা।আমার নিকট আত্নীয় বলতে আমার এক ভাই আর ভাই এর বউ আছে।আর এক মামি আছে।অন্তত তাদের কে ডাকতেই হবে।

🖤

এদিকে রুমের মধ্যে শ্রাবণের ট্রিটমেন্ট চলছে।শ্রাবনকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।যতক্ষন না তার শরীরের ফোলা ফোলা ভাব না কমে ততোক্ষন তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতেই হবে।আর তাকে কুশানদের বাড়িতেই রাখতে হবে।কারণ শ্রাবণ কে কুশান যেমন সুস্থ সবল ছেলে এনেছিল ঠিক তেমন সুস্থ সবল করেই তার বাবা মার সামনে নিয়ে যেতে হবে।আর সবচেয়ে বড় কথা বিয়ের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত শ্রাবণ কে কড়া নজরে রাখতে হবে যাতে সে পলায়ন করতে না পারে।

রাতের দিকে শ্রাবণের জ্ঞান ফিরলো সে চোখ মেলে তাকাতেই কুশানকে দেখতে পেলো।কারণ কুশান সেই থেকে শ্রাবণের রুমেই আছে।কুশান কোনো দায়িত্ব মাথায় নিলে তা যথাযথ ভাবে পালন করার চেষ্টা করে।শ্রাবণ উঠতে ধরলে কুশান বললো,

কি ব্যাপার শ্রাবণ সাহেব?এখন কেমন বোধ করছেন?

শ্রাবণ কুশানের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে উঠতে ধরলো।

কুশান তা দেখে চিৎকার করে বললো, না উঠিস না শ্রাবণ। তুই আজ আমার কব্জায় থাকবি।যতক্ষণ পর্যন্ত জারার সাথে তোর নতুন করে বিয়ে না হয়?

–বিয়ে? ইম্পসিবল। আমি জারাকে করবো না বিয়ে।

কুশান শ্রাবণের কথা শুনে রাগ করে আবার কিল ঘুষি মারা শুরু করলো।আর বললো বিয়ে তো তোকে করতেই হবে।যতক্ষন পর্যন্ত না না করবি ততোক্ষন পর্যন্ত তুই শুধু এভাবেই কিল ঘুষি খাবি।

এক পর্যায়ে শ্রাবণ কুশানের হাত পা ধরে বলে ভাই থাম,আর মারিস না।আমি করবো বিয়ে।ভাই আর মারিস না আমাকে।আমি তো মরেই যাবো।

কুশান শ্রাবণের আকুতি মিনুতি শুনে থেমে গেলো।

কুশান তখন বললো এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যা শ্রাবণ।বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস কর।মানুষ একটা বাচ্চা কত করে চাওয়ার পরেও পায় না,আর তোকে আল্লাহ না চাইতেই দিয়েছে।তুই কত বড় অমা*নুষ নিজের বাচ্চাকে অস্বীকার করছিস।অন্তত বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু মানিয়ে নেওয়া উচিত ছিলো তোর।কিন্তু তুই যেই শুনেছিস জারা মা হতে চলেছে আর তখনি পলায়ন করেছিস তার থেকে।আমার ভাবতেই রাগে গা শিউরে উঠছে,
এই বলে কুশান আরো কয়েকটা ঘুষি মারতে লাগলো শ্রাবনকে।শ্রাবণ বেচারা আজ কুশানের হাতের কিল ঘুষি খেতে খেতে একদম শেষ হয়ে গেলো।

🖤

পরের দিন জারা আর শ্রাবণের বিয়ে উপলক্ষে কুশানদের বাড়ি টা হালকা করে সাজানো হয়েছে।যদিও ধুমধামে হচ্ছে না বিয়েটা তবুও বিয়ে বাড়ি বলে কথা, সেজন্য হালকা করেই সব আয়োজন করা হয়েছে। শহিদুল সাহেব নিজেও কয়েকজন নিকট আত্নীয় এনেছেন।এখন পর্যন্ত কেউ জানে না জারা এই বাড়ির কেউ নয়,শহিদুল সাহেব নিজে বলতে নিষেধ করেছেন সবাইকে।কারণ জারিফ চৌধুরীর বাড়ির মেয়ের সাথে যে শ্রাবণের বিয়ে হচ্ছে তা শহিদুল সাহেবের সকল আত্নীয় অনেক আগে থেকেই জানেন।

তোড়া নিজের হাতে জারাকে হালকা করে সাজগোছ করে দিলো।প্রথমে তোড়া ইরা আর মিরাকে বলেছিলো সাজাতে।কিন্তু ইরা, আর মিরা নিজের মুখে বলেছে তুমিই সাজাও তোড়া।কারণ আমাদের থেকে তোমার সাজানো টাই সুন্দর হয়।তোমার শাড়ি পড়াটাও ভালো লাগে।বলতে গেলে তোমার সব কাজই একদম পারফেক্ট হয়।তোমাকে আমরা আনস্মার্ট, আনকালচার, আরো অনেক কিছু বলেছিলাম তার জন্য সরি বলছি।তুমি আসলে সব দিক দিয়েই পারফেক্ট একজন বউ।

তোড়া সেই কথা শুনে বললো, আপু আজকের দিনে ওসব পুরাতন কথা না বললেই ভালো।আমি সব ভুলে গেছি।আপনারা যে আমাকে এ বাড়ির একজন যোগ্য বউ বলে ভাবছেন এটাই আমার কাছে অনেক।

আসলে ইরা,মিরা,লিরা তিন বোনই ভালো হয়ে গেছে এখন।তারা কেউ আর তোড়ার সাথে হিংসা করে না,বা তাকে আর কেউ কটু কথা শোনায় না।বরং তারা সব সময় এখন তোড়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে।

ইরা,মিরা,লিরা ঠিক করেছে সমস্ত ঝামেলা মিটমাট হলে আবার তারা তাদের শশুড় বাড়িতে যাবে।নিজের স্বামীর যা আছে সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে তারা।আর নিজেদের স্বামীর সাথে ভালো ব্যবহার করবে।

অন্যদিকে শাহিন,মাহিন,তুহিন তিন ভাই একসাথে একটা দোকান দিয়েছে।তিন ভাই মিলেমিশে সেখানে কাজ করছে।কুশান আর জারিফ চৌধুরী অনেক বার বলেছে তাদের বিজন্যাস টা সামলাতে কিন্তু তারা আর সেটা গ্রহণ করে নি।তারা সবসময় যেটা চেয়েছিলো আজ সেই দিন এসে গেছে তাদের।শশুড় বাড়ির দয়ায় বেঁচে থাকার চেয়ে নিজেদের যা আছে তা নিয়ে নতুন করে শুরু করার মধ্যে যে কত খানি সুখ আজ তারা সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।আসলে একজন পুরুষ মানুষের কিছু থাক বা না থাক আত্নসম্মানবোধ টা সবার আগে থাকা উচিত।

🖤

ভালো ভাবেই জারা আর শ্রাবণের বিয়ে টা হয়ে গেলো।মিসেস লাবুনি বেগম আর মিঃ শহিদুল সাহেব তাদের সাথে নিজের ছেলে আর পুত্রবধুকে বাসায় নিয়ে গেলেন।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে ছেলে এই বিয়ের জন্য এতো বেশি এক্সসাইটেড ছিলো,যার জন্য শ্রাবণ জারাকে বিয়ে করতে রাজি হলো,যে বিয়ের জন্য সমস্ত পরিকল্পনা করলো সেই কুশানকে একবারের জন্যও কেউ দেখতে পায় নি আজ।এইভাবে কুশান কই চলে গেলো কেউ বুঝতে পারছে না কিছু।এতোক্ষণ সবাই ভেবেছিলো বিয়ে বাড়ির হৈ-হুল্লোড় এ হয় তো সে ব্যস্ত, কিন্তু এখন তো বিয়ে শেষ হয়ে গেছে।সব মেহমান চলেও গিয়েছে তাহলে কুশানকে দেখা যাচ্ছে না কেনো?

বিয়ে উপলক্ষে কুশান তার বন্ধুদের ও আসতে বলেছিলো।কারণ তার বন্ধুরা অনেক দিন থেকেই তোড়াকে দেখতে চাইছিলো।এজন্য কুশান ভাবলো এই সুযোগে ওদের ও আসতে বলি।কুশানের বন্ধু রা এসেই আগে কুশানের খোঁজ করলো।কিন্তু তাদের সাথেও কুশানের দেখা হলো না।অবশেষে তারা তোড়ার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে তার সাথে কিছুক্ষন গল্প করে নিজেরাও চলে গেলো।

এবার তোড়ার ভীষণ ভয় হতে লাগলো।এভাবে না বলে কুশান কই যেতে পারে?বিয়ে উপলক্ষে কত সুন্দর করে সেজেছিলো সে?

ব্রাউন কালারের শাড়িতে সেম সুতা দিয়ে হাতের কাজ করা কত গর্জিয়াস একটা শাড়ি পড়েসে সে।মাথায় খোঁপা করে তাতে বেলিফুল ও গুজিয়ে দিয়েছে।তোড়া যে দিকে যাচ্ছে সেই দিক থেকেই শুধু হাত ভর্তি চুড়ির ঝনঝন শব্দ আসছে।

কুশান একবারের জন্যও তোড়াকে দেখতে আসে নি আজ।কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা না।কুশান যত ব্যস্তই থাকে না কেনো অন্তত একবার হলেও তাকে দেখে যেতে পারতো।

এবার পুরো বাড়ির লোক টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।সবার মুখে এক কথা কুশান কোথায়?মুহুর্তের মধ্যে সবার আনন্দ যেনো মাটির সাথে মিশে গেলো।এতোক্ষন সবাই বেশ আনন্দেই ছিলো।

জামিলা বেগম আর তার ভাই,ভাই এর বউ,মামি এখনো কুশানদের বাড়িতেই আছে।জামিলা বেগম নিজেও ভীষণ টেনশন করতে লাগলো।যে ছেলে তার মেয়ের মানসম্মান রক্ষা করলো,তার হারানো সংসার ফিরে দিলো সেই ছেলের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য নামাযে বসে দোয়া করতে লাগলো জামিলা বেগম।

তোড়া এবার কান্দাকাটি শুরু করে দিলো।সে ধরেই নিলো নিশ্চয় কুশান বিপদের মধ্যে আছে।তা না হলে কেনো তার ফোন অফ থাকবে আর কেনো সে তাকে কিছু না বলে এভাবে উধাও হবে?…

তোড়ার কান্দাকাটি দেখে সবাই ওকে শান্ত্বনা দিতে লাগলো।ওদিকে মিসেস কামিনী বেগম ও কুশানের জন্য কান্দাকাটি শুরু করে দিলেন।মুহুর্তের মধ্যে বিয়ে বাড়ির আনন্দ মাটি হয়ে গেলো কুশান না থাকায়।

মিঃ জারিফ চৌধুরী আর সুলেমান চৌধুরী এবার চুপ করে বসে না থেকে বাসার আশেপাশে খোঁজা শুরু করে দিলেন।যেহেতু সুলেমান চৌধুরীর বয়স হয়েছে সেজন্য জারিফ চৌধুরী সুলেমান চৌধুরী কে বাসাতে পাঠিয়ে দিলেন।আর তার তিন জামাই কে তিন জায়গায় পাঠালেন।কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে কুশানকে তাদের বাসার পাশের এক পুকুর পাড়ে দেখা গেলো।এক লোক অজ্ঞান অবস্থায় কুশানকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে জারিফ চৌধুরীকে খবর দেন।জারিফ চৌধুরী আর তার জামাই রা শোনামাত্র কুশানকে নেওয়ার জন্য চলে আসে।কুশানকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে জারিফ চৌধুরী তাড়াতাড়ি করে তাদের ফ্যামিলি ডাক্তার কে খবর দেয়।তখন বাজে রাত তিনটা।ডাক্তার সাহেব ঘুমিয়ে গেছেন।কিন্তু কুশানের অজ্ঞান হওয়ার কথা শুনে তিনি তাড়াতাড়ি করে রওনা দিলেন।

এদিকে জারিফ চৌধুরী আর শাহিন, মাহিন,তুহিন কুশানকে বাসায় নিয়ে আসে।
কুশানকে এরকম কোলে করে আনা দেখে তোড়া চিল্লায়ে দৌঁড়ে এলো।সে মনে মনে এটাই ধারণা করেছিলো।কারন কুশান কখনোই তাকে না বলে এভাবে কোথাও যেতেই পারে না।

অন্যদিকে কামিনী ছেলের এমন অবস্থা দেখে নিজেও অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।এমনিতেই কামিনী ডায়াবেটিস এর রোগী তার উপর তার হাই প্রেসার,যার কারনে তিনি অল্পতেই দূর্বল হয়ে যান।একদিকে জামিলা আর সোনিয়া তোড়াকে সামলাচ্ছে অন্যদিকে ইরা,মিরা,লিরা তাদের মাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।কি একটা অবস্থা হয়েছে বাড়ির প্রতিটা সদস্যের যা বলার মতো নয়। এদিকে ডাক্তার এখনো আসে নি।

কুশানকে তার নিজের রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।জারিফ চৌধুরী কুশানকে বেডে শুয়ে দিয়ে ওর চোখে পানি ছিটিয়ে দিলো।কুশানের তবুও জ্ঞান ফিরলো না।হঠাৎ তোড়া দৌঁড়ে এসে কুশানের গা ধরে ঝাঁকাতে লাগলো।আর চিৎকার করে ডাকতে লাগলো,
কুশান?কুশান?কি হয়েছে তোমার?কুশান?কথা বলো।এই দেখো আমি তোড়া ডাকছি তোমাকে।কুশান?এই বলে চিল্লাতে লাগলো তোড়া।

সোনিয়া তা দেখে জোর করেই তোড়াকে নিয়ে গেলো সেখান থেকে।আর বললো, ভাবি ঠিক হয়ে যাবে ভাইয়া।কেঁদো না তুমি।এমনিতেই মাথা ঘুরে বসে গেছে হয় তো।

তোড়া তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, কুশান আমার সাথেও কথা বলছে না।এটা আমি কি করে সহ্য করি?ও তো এভাবে কখনো আমার ডাকে সাঁড়া না দিয়ে থাকে নি।কি হলো ওর?

কুশান সেই আগের মতোই চুপচাপ। কেউ বুঝতে পারছে না আসলে হয়েছে টা কি?
কুশানকে এমন স্তব্ধ ভাবে পড়ে থাকতে দেখে জারিফ চৌধুরীর এবার আরো বেশি ভয় হতে লাগলো।সেজন্য তিনি কুশানের নাকের কাছাকাছি একটি হাত নিয়ে অনুভব করতে চেষ্টা করলেন,শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কি না। হ্যাঁ চলছে শ্বাস-প্রশ্বাস।
জারিফ চৌধুরী যেনো স্বস্তির নিঃশাস ফেললেন। সোলেমান চৌধুরী এবার নিজেও ডাকতে লাগলো,
নানু ভাই?আমার কুশান?কি হয়েছে তোর?

কুশান আজ কারো ডাকেই সাড়া দিলো না।

অবশেষে ডাক্তার সাহেব রুমে প্রবেশ করলেন।আর কুশানকে চেকাপ করতে লাগলেন।
প্রথমে ডাক্তার নিজেও কুশানের নাকের কাছে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস অনুভব করলেন।তারপর ডাক্তার সাহেব কুশানকে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে কাত করে রাখলেন।কারন চিত বা উপুড় করে রাখলে রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

এদিকে সবাই অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে ডাক্তার সাহেবের মুখে কুশানের অবস্থা জানার জন্য।ডাক্তার সাহেব কুশান কে ভালোভাবে দেখে জারিফ চৌধুরী কে সাথে করে নিয়ে একটু আড়ালে চলে গেলেন।আর বললেন,
আংকেল কুশান কি রেগুলার মদ্যপান করে?

–মদ্যপান?না তো।কুশানের তো মদ্যপানের কোনো অভ্যাস নাই।

ডাক্তার সাহেব তখন বললো তাহলে মনে হয় ফাস্ট টাইম পান করেছে।অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে সে এমন বেহুশ হয়ে গেছে।তবে চিন্তার কোনো কারণ নাই।নেশা কেটে গেলে সে এমনিতেই জেগে উঠবে।

জারিফ চৌধুরী ডাক্তার সাহেবের মুখে কুশানের মদ্যপানের কথা শুনে যেনো বিদ্যুৎ এর ঝাটকার মতো শকড খেলেন।এটা কি করে হতে পারে?কুশান মদ্যপান করেছে।কিন্তু কেনো?

সবাই ডাক্তার সাহেব কে সেই একই কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। কিন্তু ডাক্তার সাহেব শুধু জারিফ চৌধুরী কেই বললেন কুশানের মদ্যপানের কথাটা।আর বাকি সবাইকে বললো,এমনিতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।ভয়ের কোনো কারণ নেই।

জারিফ চৌধুরী ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলেন ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে।কুশান যে মদ্যপান করেছে সেটা বিশ্বাস ই হচ্ছে না জারিফ চৌধুরীর। তবে কুশান যে সিগারেট খায় এটা ভালো করেই জানেন জারিফ চৌধুরী।কারণ তিনিও যখন লুকিয়ে মাঝেমধ্যে ছাদে যান সিগারেট খেতে মাঝেমধ্যে তার কুশানের সাথে দেখা হয়।যদিও দুই জন কখনোই বুঝতে দেয় নি তারা কি জন্য ছাদে এসেছে।তবে যেহেতু একজন গিয়েছে সিগারেট খেতে সেজন্য আরেকজন বুঝতে পেরেছে সেও ঠিক এই কাজেই এসেছে ছাদে।তাছাড়া অকারণে এই রাতের বেলা ঘুম বাদ দিয়ে কি জন্য আসবে এই ছাদে।

🖤

রাত গভীর হতে লাগলো।এক এক করে যে যার রুমে চলে গেলো।কুশান এখনো সেই আগের মতো শুয়ে আছে।তোড়ার চোখে আজ একটুও ঘুম নামলো না।সে কুশানের পাশে বসে ওর মাথার চুলগুলো বুলিয়ে দিতে লাগলো।আর একা একা কথা বলতে লাগলো।তোড়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে শুধু।এই মানুষ টার কিছু হলে সে নিজে বাঁচবে কি করে?তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ই তো সে?
কুশানের চুল বোলাতে বোলাতে তোড়া কুশানের মাথার পাশেই কখন যে শুয়ে পড়েছে নিজেও জানে না

ভোরের মৃদু আলো জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে সোজা তোড়ার মুখে এসে পড়লো।যার কারণে সে চোখ মিটমিটিয়ে হঠাৎ ধড়ফড় করে উঠে বসলো বেডে।কিন্তু তোড়া তো কুশানের মাথার পাশে বসে ছিলো।কিন্তু সে বিছানায় এলো কিভাবে?আর কুশান?কুশান কই?এই বলে তোড়া বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি করে নেমে গেলো।
কুশান হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বললো,
কাকে খুঁজছো?আমাকে?

তোড়া কুশানকে একদম সুস্থ সবল অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আর সেই আগের মতো ওর কথা শুনে একদম দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো কুশানকে।তারপর কুশানের একবার কপালে তো আরেকবার ঠোঁটে কিস করে আবার তাকে জড়িয়ে ধরলো। তোড়া কোনো প্রশ্ন করলো না এমনকি জিজ্ঞেসও করলো না কাল তার কি হয়েছিলো?সে তো কুশানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলো।কিছুতেই আর ছাড়লো না কুশানকে।

কুশান তোড়াকে এমন করা দেখে বললো,
তোড়া?কি হইছে?এমন করছো কেনো?

তোড়া এবারও কিছু বললো না।

কুশান তখন তোড়ার মুখ টি উপর করে ধরে নিজেও তোড়ার ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

বিছানায় শোয়া বাদ দিয়ে চেয়ারে কেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলে?যদি পড়ে যেতে তখন কি হতো?ভাগ্যিস আমি দেখেছিলাম।

তোড়া তখন বললো তুমি কখন জাগা পেয়েছো কুশান?কেনো আমাকে ডাকো নি?

–তুমি ঘুমাইছিলে যার কারণে আর ডাকি নি।

হঠাৎ জারিফ চৌধুরী দরজাতে ধাক্কা দিয়ে তোড়াকে ডাকতে লাগলো।তোড়া তার শশুড়ের কন্ঠ শোনামাত্র তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দিলো।জারিফ চৌধুরী রুমে এসে কুশানকে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বললো,
বাবা কেমন আছিস এখন?

–কেনো কি হয়েছে?আমি তো ভালোই আছি।হেসে হেসে উত্তর দিলো কুশান।

জারিফ চৌধুরী তখন তোড়াকে বললো,তোড়া আমাদের জন্য দুই কাপ চা নিয়ে এসো তো একটু।

তোড়া জারিফ চৌধুরীর কথা শোনামাত্র রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

তোড়া চলে যাওয়ার সাথে সাথে জারিফ চৌধুরী কুশানকে বললো,কাল সারারাত আমরা কেউ ঘুমাতে পারি নি।তোর আম্মু তো সারারাত ভুল বকে গেছে শুধু।আর তুই বলছিস কি হয়েছে?কেনো নেশা করেছিলি কাল?না তুই রোজ রোজ ই নেশা করিস?

কুশান তার বাবার প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে বললো, আব্বু জামিলা আন্টিরা কি চলে গিয়েছে?

জারিফ চৌধুরী তখন রাগ দেখিয়ে বললো আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি কুশান।আমার প্রশ্নের উত্তর দে আগে।

কুশান সেই কথা শুনে বললো সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না আব্বু।আর কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলে অনেক কিছু পালটিয়ে যেতে পারে।আমি চাই না আমার এক টা কথায় সবকিছু পালটিয়ে যাক।সরি আব্বু।তোমার প্রশ্নের কোনো উত্তর নাই আমার কাছে।

চলবে,#আমি_ফাইসা_গেছি(৩৭)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

কেমন যেনো বিষন্নতার ছাপ কুশানের চোখেমুখে!বাহিরে ঠিকভাবে সবার সাথে কথা বললেও সে যে কোনো একটা বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।সকালে নাস্তার টেবিলে বসে চুপচাপ ভাবেই কুশান নাস্তা খেয়ে নিলো,সে নিজের থেকে কারো সাথে একটা কথাও বললো না।কিন্তু তাকে নিয়ে তো বাড়ির লোকের কৌতুহলের শেষ নাই।সবার সেই একই প্রশ্ন কুশান এখন কেমন আছে?

কিন্তু কামিনী যখন হঠাৎ সেই একই প্রশ্ন নিজেও করলো, কুশান তখন কি মনে করে যেনো নাস্তার প্লেট রেখেই তার রুমে চলে গেলো।কামিনী তা দেখে চিৎকার করে করে বলতে লাগলো,

বাবা কুশান! কি হয়েছে তোর?বাবা!কিছু বলছিস না কেনো?কেনো চলে যাচ্ছিস বাবা?

কুশান তার আম্মুর এমন আবেগঘন কথা শুনেও পিছন ফিরে তাকালো না।বাসার সকল সদস্য তখন অবাক নয়নে কামিনীর দিকে তাকিয়ে রইলো।সবাই ভাবতে লাগলো কুশান কামিনীর সামান্য একটা প্রশ্নে এতো বাজে রিয়্যাক্ট কেনো করলো?হঠাৎ করে কি হলো কুশানের?

কামিনী হয় তো নিজেও কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে।সেজন্য সে তার মুখ টিপে ধরে নিজেও রুমের মধ্যে চলে গেলো।আর জোরে জোরে শব্দ করে কাঁদতে লাগলো।

কামিনীর মেয়েরা তখন নিজেরাও দৌঁড়ে তার মায়ের রুমে চলে গেলো।কিন্তু কামিনী তার মেয়েদের আসা দেখে নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো, তোরা আবার আসলি কেনো?যা তোরা খাবার খেয়ে নে।আমি একটু কিছুক্ষন একা একা থাকতে চাই।

এদিকে কুশানকে রুমে যাওয়া দেখে তোড়াও কুশানের পিছু পিছু চলে গেলো রুমে।তোড়া রুমে গিয়েই দেখে কুশান ঝিম লেগে বসে আছে।কেমন যেনো অদ্ভুত দেখা যাচ্ছে কুশানকে।চোখ দুটো পুরাই লাল,আর জ্বল জ্বল করছে।তোড়া তখন ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে কুশানের পাশে বসে ওর হাত টা ধরে নরম সুরে বললো,

কুশান কি হয়েছে তোমার?তুমি ঠিক আছো তো?

কুশান মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো হুম।

তোড়া তখন আবার জিজ্ঞেস করলো,
আম্মুর প্রশ্নে এরকম বিহেভ কেনো করলে?কেনো উত্তর না দিয়ে এভাবে চলে এলে?আম্মু তো তোমার ব্যবহারে কান্দাকাটি করছে।

কুশান তোড়ার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ওর হাত দুটি সরিয়ে দিয়ে একটু উচ্চ কন্ঠে বললো, তোড়া তুমি কি যাবে এখান থেকে?আমার এখন কারো কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না।প্লিজ চলে যাও আমার সামনে থেকে।

তোড়া কুশানের কথা শুনে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
আমি আবার কি করলাম কুশান?আমার সাথে কেনো এরকম বিহেভ করছো?আমি তো জাস্ট আম্মুর,,,,,,

তোড়া পুরো কথা শেষ না করতেই কুশান তোড়ার উপর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে তারপর রাগ করে তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।তোড়া কুশানের এমন রিয়্যাক্ট দেখে অনেক বেশি অবাক হয়ে গেলো।
আসলে কুশানের মনে কিসের ব্যাথা সেটা কুশান ছাড়া কেউই বুঝতে পারছে না। না বোঝার ই কথা।কার মনে কিসের দুঃখ সেটা আঘাত পাওয়া ব্যক্তি ছাড়া আর কারো বোঝার ক্ষমতা নেই,যতক্ষন পর্যন্ত না সে নিজের মুখ ফুটে বলছে অন্যকে।

এদিকে কুশানকে বাসা থেকে চলে যাওয়া দেখে জারিফ চৌধুরী চিল্লায়ে বললো, কুশান কই যাচ্ছিস?তুই কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হস নি।আজ কোথাও যাস না কুশান?

কুশান জারিফ চৌধুরীর কথাও শুনলো না।বরং দ্রুত বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।

সোলেমান চৌধুরী তখন জারিফ চৌধুরীর কাছে এগিয়ে এসে বললো,
জারিফ তোমরা কি কিছু লুকাচ্ছো আমার থেকে?কুশানের আসলে হয়েছে টা কি?কেমন যেনো অন্যমনস্ক লাগছে কুশানকে।

জারিফ সোলেমান চৌধুরীর প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।তারপর বললো,
না বাবা,কই কি লুকাচ্ছি?

–না জারিফ?তোমরা সবাই আমার থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছো।সত্যি করে বলো তো কাল ডাক্তার সাহেব তোমাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে কি বললো?

জারিফ চৌধুরী পড়ে গেলেন মহা বিপদের মধ্যে।কারণ এই মুহুর্তে তিনি কি উত্তর দিবেন সোলেমানের প্রশ্নের।সোলেমান একজন ধার্মিক লোক।তিনি যদি শোনেন কুশান নেশা করেছিলো কাল,নির্ঘাত তার উপর ভীষণ রেগে যাবেন।তিনি এসব মোটেও পছন্দ করেন না।

–কি হলো জারিফ?কিছু তো বলো?চুপ হয়ে গেলে কেনো?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো,আসলে বাবা,কুশানের যে কি হয়েছে সত্যি আমি নিজেও জানি না।ও বাসায় ফিরুক ওর থেকে ভালোভাবে শুনে নিবো।এই বলে জারিফ তার রুমে চলে গেলো।

তোড়া ঘরের মধ্যে বসে কান্দাকাটি করছে।এমনিতেই কাল থেকে কুশানের টেনশনে সে শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ আবার কুশানের এমন ব্যবহারে তার আরো বেশি খারাপ লাগছে।কিছুই ভালো লাগছে না তোড়ার।কেমন যেনো ভয়ানক একটা চিন্তায় ভিতর টা তার হু হু করে কেঁদে উঠছে।সে শুধু ভাবছে মানুষ কেনো পুরোপুরি সুখী হতে পারে না?যখনই একটু সুখের সন্ধান পাওয়া যায় পরক্ষনেই তার পিছু পিছু দুঃখ চলে আসে।কোনো না কোনো একটা নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবেই হবে।এইজনই মনে হয় বলা হয়েছে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন।এই জীবনে কেউ পুরোপুরি সুখী হতে পারে না।সুখ থাকলে দুঃখ থাকবেই,আবার শান্তিতে থাকলে অশান্তিও ভুগতে হবে।

🖤

সকালের নাস্তা যদিও সবাই খেয়েছে,কিন্তু দুপুরে আর কেউ ই খাওয়ার জন্য টেবিলে গেলো না।কুশানকে নিয়ে সবাই যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।
তোড়া তার রুমেই শুয়ে আছে।সে কেঁদে কেঁদে চোখ দুটো ফুলে তুলেছে একদম।কারণ কুশান তার সাথে একটু উচ্চস্বরে কথা বললেই কেনো জানি তার মন টা খারাপ হয়ে যায়,আর চোখের পানি থামতেই চায় না।

হঠাৎ ঠান্ডা কারো হাতের স্পর্শে তোড়া চমকে উঠলো।
তোড়া পাশ ফিরতেই সেই ঠান্ডা হাত দুটি তার পুরো শরীর জড়িয়ে নিলো।
তোড়া চুপ করে রইলো।সে কোনো কথা তো বললোই না,বরং বাঁধাও দিলো না কেনো তাকে জড়িয়ে ধরা হচ্ছে?
কারণ কুশানের উপস্থিতি তোড়া এমনিতেই টের পেয়ে যায়।

কুশান চুপচাপ আছে।তবে মনে হচ্ছে সে কাঁদছে।কারন দুই ফোঁটা পানির মতো কি যেনো তোড়ার ঘাড়ে পড়লো।তোড়া তা অনুভব করা মাত্র কুশানের পাশ ফিরে বললো,
কুশান?কি হয়েছে তোমার?কাঁদছো কেনো?

কুশান তোড়ার মুখে এই কথা টা শোনামাত্র আরো জোরে তোড়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
তোড়া এখন আমি কি করবো তুমিই বলো?আমি তো কোনো কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছি না।কাকে বলবো আমি এই কথা?আমি ভালো নেই তোড়া।আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

তোড়া কুশানকে কাঁদা দেখে আর কুশানের মুখে এই কষ্ট শব্দ টা শুনে মুহুর্তের মধ্যে তোড়া যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলো।কারণ এক, কুশান কাঁদছে,আর দুই সে কষ্টের মধ্যে আছে।নানারকম প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো তোড়ার মনে। কিন্তু তোড়া কোনো প্রশ্ন না করে কুশানের মুখ টা উপরে তুলে ওর চোখের পানি মুছে দিলো।তারপর ওকে ভালোভাবে জড়িয়ে তার বুকের সাথে মিশে নিলো।কারণ সবার প্রথম কুশানকে কাঁদতে দেওয়া উচিত।কাঁদলেই সে হয় তো হালকা হবে কিছুটা।তারপর তোড়া জেনে নিবে আসলে কি হয়েছে কুশানের?কেনো সে কষ্টে আছে?

কিছুক্ষন পর কুশান নিজেই তার মুখ খুললো।কুশান এবার শোয়া থেকে বিছানায় উঠে বসলো।আর তোড়ার হাত ধরে বললো,

তোড়া?আমি এই পরিবারের কেউ না।আমাকে আমার নানীমনি কিনে নিয়েছে।

তোড়া এই কথা টা শোনামাত্র কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।সে কি বলবে বুঝতে পারছিলো না।তবুও কুশানকে জড়িয়ে ধরে শান্ত্বনা দিয়ে বললো,

কার থেকে শুনেছো এসব আজগুবি কথা?এসব কথা কেউ বিশ্বাস করে কুশান?আমাকেও তো আমার মামিরা বলে আমাকে নাকি পুলের নিচ থেকে কুড়ে নিয়ে এসেছে।কই আমি তো বিশ্বাস করি না এই কথা?

কুশান তখন বললো, তোড়া আমি কিন্তু সিরিয়াস।সত্যি বলছি।এটা কিন্তু ফান করার টাইম না।

তোড়া তখন বললো, কে বলেছে তোমাকে এই কথা?

–বলে নি, আমি শুনেছি।

–কার থেকে?

কুশান তখন বললো, জামিলা আন্টির মামী সেলিনা বেগম আছে না?উনি পেশায় একজন নার্স।উনি নিজে আম্মুকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেছে,

তাহলে কুশানই হলো আপনার সেই পালক পোলা?

আম্মু সেলিনা বেগমের কথা শুনে ওনাকে ধমক দিয়ে বলে,কি ভুলভাল বলছেন?পালক ছেলে হবে কেনো?সে আমার নিজের ছেলে।

তখন সেলিনা বেগম বলেছেন,
আমি হলাম সেই নার্স,যার থেকে আপনার মা কুশান কে টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছে।সেদিন তো আপনি মৃত ছেলের জন্ম দিয়েছিলেন।আপনি তো ছেলের শোকে প্রায় পাগল ই হয়েছিলেন।

আম্মু সেলিনা হকের কথা শোনামাত্র ওনার মুখ টিপে ধরে বলে,প্লিজ চুপ করুন।আর একটা কথাও মুখ দিয়ে বের করেন না।আপনি এর জন্য তো অনেক টাকা নিয়েছেন,তাহলে সেই কথা কেনো মনে করে দিচ্ছেন আবার?

সেলিনা বেগম সেই কথা শুনে বললো, আমি তো আর জানতাম না আপনারা এতো বড় লোক?আগে জানলে ডিমান্ড টা একটু বাড়িয়ে দিতাম।এখন মনে হচ্ছে সেদিন ডিমান্ড টা বেশ অল্প ছিলো।আরো কিছু পেলে তবেই মনে হয় চুপ থাকতে পারবো।

আম্মু আর সেলিনা বেগমের এইসব কথা শুনে আমি আর বাকি কথা শোনার প্রয়োজন মনে করি নি।আমি তো ভাবতেই পারছি না এই ফ্যামিলির সাথে আমার কোনো রক্তের সম্পর্কই নাই।যাদের কে আমি এতো ভালোবাসি,যারা আমাকে এতো ভালোবাসে যখন শুনি তারা আমার আপন কেউ নয় তখন নিজেকে কি করে শান্ত্বনা দেবো তোড়া?তুমিই বলো?আমি তো বুঝতে পারছি না এখন আমার কি করা উচিত?
কারণ আমি যে এই ফ্যামিলির লোকদের কে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসি।যাদের কে ছেড়ে থাকা ইমপসিবল ব্যাপার।কিন্তু আমি যে মায়ের সন্তান, যে আমার আসল বাবা মা তাদের কে খুঁজে বের করাও তো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।যখন আমি তাদের কে খুঁজে বের করবো, তাদের কে বলে দিবো আমার পরিচয় তখন কি তারা সেটা বিশ্বাস করবে?আমি এখন কোন দিকে যাবো তুমিই বলে দাও।

তোড়া তখন কুশান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
কুশান?প্লিজ শান্ত হও।এভাবে ভেঙ্গে পড়লে তো কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।মাথা ঠান্ডা করে তোমাকে ডিসিশন নিতে হবে।আর যত কিছুই হোক তুমি তো এই ফ্যামিলির কাউকে ভুলতেও পারবে না আবার তাদের ছাড়া থাকতেও পারবে না।সেজন্য এখন তোমার সেলিনা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।ওনার সাহায্য নিয়ে তোমার আসল বাবা মাকে খুঁজে বের করে তোমার সাথে রাখা উচিত।দুই পরিবার একসাথেই থাকবে।তোমার তখন দুইজন বাবা মা হবে।এতে চিন্তা করার কি আছে?

কুশান তোড়ার কথা শুনে বললো, এতো সহজে সমাধান করে দিলে তুমি?এতো সহজ মনে হলো ব্যাপার টা তোমার কাছে?এটা একটা অন্যায় ছিলো।মারাত্নক রকমের অপরাধ এটা।আরেকজনের বাচ্চা আরেকজনের নামে চালিয়ে দেওয়া বা চুরি করা এটা কিন্তু সহজ বিষয় নয়।যখন আমি আমার আসল বাবা মাকে খুঁজে পাবো ওনারা যদি এই সব কথা শুনে আম্মু আর আব্বুর নামে কেস করে।তখন কি হবে ভেবে দেখেছো একবার?ওনারা আমার নিজের বাবা মা না হলেও ওনাদের কে আমি প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসি।চোখের সামনে ওনাদের শাস্তি আমি কি করে দেখবো?

তোড়া এবার চুপ হয়ে গেলো।হ্যাঁ ঠিকই তো কথা।এই কথা জানাজানি হলে কত বড় একটা কেলেঙ্কারি বেঁধে যাবে?সবাই ছিঃ ছিঃ করবে।কামিনী কে সবাই বাচ্চা চুরির অপবাদ দিতে থাকবে।

হঠাৎ ডাইনিং রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া গেলো।মিঃ সোলাইমান চৌধুরী কাকে যেনো বকছে।তোড়া আর কুশান মিঃ সুলেমান চৌধুরীর এমন উচ্চ কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি করে বের হলো রুম থেকে।

সুলেমান চৌধুরী সবার সামনে ঠাস ঠাস করে কামিনী কে চড় মারলো কয়েকটা।আর বললো, তুই যে আমার মেয়ে ভাবতেই আমার ভীষণ অবাক লাগছে।যা বের হয়ে যা বাড়ি থেকে।আসলে আমারি ভুল হয়ে গেছে তোদের নামে সবকিছু লিখে দিয়ে।আমি যখন দিয়েছি তখন আমিই সবার থেকে কেড়ে নিবো সব।

কুশান তখন দৌঁড়ে গিয়ে কামিনী কে জড়িয়ে ধরে সুলেমান চৌধুরী কে বললো, নানু ভাই?কি করছেন?আম্মুকে মারছেন কেনো?

সুলেমান তখন কুশানকে কামিনীর থেকে আলাদা করে দিয়ে বললো, তুই ঘরে যা কুশান।এই বলে সুলেমান কুশানকে সরিয়ে দিয়ে সবার চোখের সামনে কামিনী কে বললো,
যা বের হয়ে যা বাড়ি থেকে।আজ থেকে তুই এ পরিবারের কেউ না।তোকে আর আমি এই বাড়িতে দেখতে চাই না।

কামিনী হঠাৎ সুলেমানের পা ধরে বললো,বাবা প্লিজ কুশানকে কিছু বলো না।বাবা আমাকে ক্ষমা না করলে তাতে আমার কোনো আফসোস নাই।আমি চলে যাচ্ছি।তবুও কুশানকে কিছু বলো না।

কুশান কামিনীর এই অবস্থা দেখে নিজেই টেনে তুললো।আর টেনে ঘরে নিয়ে গেলো কামিনী কে।আর বললো,
খবরদার আম্মু কোথাও যাবে না তুমি।এই বাড়িতেই থাকবে তুমি।আমি কথা বলছি নানু ভাই এর সাথে।

কামিনী তা শুনে বললো, না তুই কথা বলবি না।যা বলার আমি বলবো।তুই তোর ঘরে চলে যা বাবা।না হয় কিছুক্ষনের জন্য বাহিরে যা।তোর নানুর সাথে আমার একটু পার্সোনাল কথা আছে।

কুশান তার আম্মুর কথা শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো,আর মনে মনে ভাবতে লাগলো তার আম্মু যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছে সেটা তো সে অনেক আগেই জেনে গেছে।আর কিভাবে লুকাবে তার আম্মু?

এদিকে বাসার সবাই সুলেমান কে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।কেনো তিনি কামিনী কে এভাবে চড় মারলেন?আর কেনোই বা তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলছেন?
সুলেমান চৌধুরী কোনো দিনও কোনো অন্যায় কে সাপোর্ট করেন না।তিনি কামিনীর ব্যাপার টা জানতে পেরেছেন।সুলেমান কে বলেছে কামিনী নিজেই।

কিন্তু সুলেমান চৌধুরী শোনামাত্র এভাবে রিয়্যাক্ট করবে কামিনী তা ভাবতেই পারে নি।

সবার প্রশ্নের উত্তর সুলেমান চৌধুরী দিলো না।এদিকে কামিনী আবার এগিয়ে আসলো তার বাবার কাছে।আর বললো,বাবা প্লিজ কাউকে কিছু বলো না।আমি তোমাকে বিশ্বাস করে বলতে চেয়েছি।প্লিজ বাবা।আমার ছেলেটাকে এভাবে আমার থেকে আলাদা করো না।

সুলেমান কোনো উত্তর দিলো না।অন্যদিকে জারিফ চুপচাপ হয়ে আছে।কারণ বাপ মেয়ের মধ্যে সে আর কি বলবে?কামিনী জারিফ কেও বলেছে কথাটা।কারণ কামিনী এখন নিরুপায়।সেলিনা বেগম এই কুশানকে ইস্যু করে তাকে ব্লাকমেল করছে।এতো টাকা এখন কামিনী কই পাবে যার জন্য সে প্রথমে জারিফ কে বলে।জারিফ তখন নিজে কামিনী কে তার বাবাকে বলতে বলে।কারণ আজ না হয় কাল তো জেনেই যাবে সবাই।তার চেয়ে এতো বড় একটা সত্য লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ করাই ভালো।

কুশান এবার সবার সামনে এসে দাঁড়ালো। আর বললো, সবাই প্লিজ এখন চুপ করো।আমি কিছু কথা বলতে চাই সবার উদ্দেশ্যে।
কুশানের কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।

কামিনী এগিয়ে গিয়ে বললো, বাবা কি কথা বলবি?আমাকে বল বাবা।

কুশান তখন কামিনীর হাত ধরে বললো, না আম্মু।শুধু তোমাকে না।আমি সবার উদ্দেশ্যই বলতে চাচ্ছি কথাটা।কারণ ব্যাপার টা খোলাসা করা প্রয়োজন।আমি যে এ বাড়ির কেউ না এটা সবার জানা উচিত।

কামিনী কুশানের কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে তার পুরো শরীর যেনো অবশ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।সে যেনো কারো কথা শুনতে পাচ্ছে না।তার দুই কানের শ্রবন শক্তি বোধ হয় সত্যি সত্যি কমে গেছে।

এদিকে কুশান বলা শুরু করেছে।সে আর থামছেই না।কুশান সবাইকে সত্যি টা জানিয়ে দিলো।কুশান বললো,
আমাকে আম্মু আর নানী মনি টাকা দিয়ে সেলিনা বেগমের থেকে কিনে নিয়েছে।কারণ আম্মুর সেদিন মরা ছেলে হয়েছিলো।যার কারণে আম্মু ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে,সেই মুহুর্তে সেলিনা বেগম নানী মনিকে এই অফার টা দেয়।যে তার কাছে একটা ছেলে সন্তান আছে।টাকার বিনিময়ে তিনি বিক্রি করতে চান।নানি মনি শোনামাত্র অফার টা গ্রহন করে।আর আম্মুর কোলে আমাকে তুলে দেয়।

কুশানের কথা শুনে পুরো বাড়ির লোকজন অবাক হয়ে গেলো।কেউ এটা বিশ্বাস করতেই পারছে না।এটা কি শুনছে তারা?
সবাই মনোযোগ দিয়ে কুশানের কথাই শুনছে শুধু।এদিকে কামিনী কখন যে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে
সে দিকে কেউ খেয়াল করে নি।

কুশান হঠাৎ যখন তার আম্মুর সাথে কথা বলার জন্য পাশ ফিরলো সে দেখতে পেলো তার আম্মু নাই।

–আম্মু?আম্মু?এই বলে কুশান পুরো বাড়ি খুঁজতে লাগলো।যখন দেখলো বাড়ির মধ্যে তার আম্মু নাই,তখন সে বাহিরে চলে গেলো।বাহিরেও কামিনী কে খুঁজে পাওয়া গেলো না।

সুলেমান কুশানের এমন ছোটাছুটি দেখে বললো,কুশান থাম এখন।ও যেদিকে মন চায় চলে যাক।যার জন্য তুই আজ নিজের বাবা মার কাছে থাকতে পারিস নি, যে তোকে টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছে তার জন্য এতো মায়া দেখাতে হবে না।অন্যায় তো অন্যায়।আমি কখনো অন্যায় কে সাপোর্ট করি নি।আর তুই ও করবি না।

কুশান তখন বললো, নানু ভাই, মা তো মা ই।সে এখন নকল মা হোক আর আসল মা হোক।আম্মু আমার নিজের মা না হলেও আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততোদিন তাকেই মা বলে ডাকবো।কারণ তিনি আমাকে কখনো পরের সন্তান মনে করে বড় করেন নি।একজন মা তার সন্তান কে যেভাবে আদর, স্নেহ দিয়ে বড় করে,আমি বলবো তার থেকেও বেশি আদর স্নেহ পেয়ে বড় হয়েছি আমি।আম্মুর ভালোবাসা আমি কখনোই অস্বীকার করতে পারবো না।আর হ্যাঁ আরেকটা কথা। আর কোনোদিন আমার আম্মুকে চড় মারবে না তুমি,আর বকতেও পারবে না।আম্মুর গালে যে কয় টা চড় মেরেছো মনে হলো সব গুলো চড় যেনো আমার গালেই পড়েছে।আম্মুকে তুমি এই কষ্ট টা না দিলেও পারতে।এখন যদি আমার আম্মুর কিছু হয় তখন কিন্তু আমি একদম সবকিছু ধ্বংস করে দিবো।কাউকে ঠিক থাকতে দিবো না।এই বলে কুশান বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

এদিকে কামিনী রাগে,দুঃখে,আপমানে আর লজ্জায় কোন দিকে যে যাচ্ছে নিজেও জানে না সে।সব সত্য তো সবাই জেনে গেছে।এখন এই মুখ টি সে কি করে কুশানকে দেখাবে?কামিনী ধরেই নিয়েছে তার কুশান আর তাকে আম্মু বলে ডাকবে না।যখন তার কুশানই আর তাকে ডাকবে না তখন সে বেঁচে থেকে আর কি করবে?কামিনী এলোমেলো ভাবে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলো।

হঠাৎ কামিনী দের পাশের বাসার এক লোক কামিনীর সামনে এসে বললো,কুশানের আম্মু?এভাবে কই যাচ্ছো?এক্সিডেন্ট করবে তো।
কামিনীকে এভাবে কুশানের আম্মু বলায় কামিনী একদম ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।আর হঠাৎ রাস্তার মাঝখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।

লোকটি কামিনীর এমন পাগলামি দেখে তাড়াতাড়ি করে কুশানের কাছে কল করে।কুশান নিজেও কামিনী কে খুঁজতে বের হইছে।সেজন্য কল করার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এসে হাজির হলো।
কুশান তার আম্মুকে রাস্তায় পড়া থাকা দেখামাত্র দৌঁড়ে গিয়ে কোলে তুলে একটা গাড়িতে ওঠালো।

এদিকে সুলেমান আর জারিফ চৌধুরী সেলিনা বেগমের বাড়ি চলে গেলেন।কারণ সেলিনা বেগম ছাড়া কেউ কুশানের বাবা মার কথা বলতে পারবে না।সেলিনা বেগমের বাড়ি যেতেই তাদের প্রথম জামিলার সাথে দেখা হয়ে গেলো।কারণ জামিলা নিজেও তার নানার বাড়ি থাকে।জামিলা জারিফ চৌধুরী আর সুলেমানকে দেখে সে কি খুশি?জামিলা খুশিমনে তাদের ঘরে নিয়ে গেলো।আর তাদের খাতির যত্ন করতে লাগলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here