আরশিকথা -৮
মীরের রাস্তা অনেক দূরে, সুপ্রভা স্কুলে না গিয়ে সেখানে কিভাবে যাবে ভেবে পাচ্ছিল না , কিন্তু ওকে তো যেতেই হবে। স্কুলে না ঢুকে সুপ্রভা ইতস্তত করছিল। হঠাৎই একটা অটো এসে পাশে থামল।
-এ্যাই, উঠে এসো!
সুপ্রভা চমকে উঠল, শুভ্র!
কিন্তু ভালো লাগল এটা ভেবে যে ওকে একা একা যেতে হবে না।
সুপ্রভা উঠে বসল। অটোতে বেশি সময় লাগল না। স্কুল দশটা থেকে চারটা পর্যন্ত, এত সময় কি করবে, সেটা ভাবতে লাগল সুপ্রভা৷
অটো ছেড়ে দিয়ে শুভ্র সুপ্রভাকে নিয়ে নেমে পড়ল।
-সুপ্রভা, তোমার নামটা কিন্তু ভীষণ সুন্দর, আর তুমিও!
সুপ্রভা গোলাপি হয়ে গেল!
-আমি জানতাম তুমি আসবে। মনের মধ্যে একটা বিশ্বাস ছিল, তুমি কোনো কথা বলবে না?
-আপনি না কয়েকদিন আগেই এলেন? আবার এত তাড়াতাড়ি ছুটি হলো?
-ক্লাশ মিস দিয়ে এসেছি, আমি আবার দীপ্রর মত এত ভালো স্টুডেন্ট না।
-ভালো স্টুডেন্ট না হলে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়া যায়?
-কেন যাবে না, চান্স পেতে বেসিক নলেজ লাগে!
-ওহ আচ্ছা৷
-কার্ডটা দেখেছ?
-হুম।
– কি মনে হলো?
– কিছু মনে হয় নি!
-সুপ্রভা, তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে, আমাদের মধ্যে যে একটা সম্পর্ক তৈরি হলো, সেটা কিন্তু তুমি কাউকে শেয়ার করবে না। ঠিক আছে?
সুপ্রভা ঘাড় নাড়ল৷
-বাই দ্য ওয়ে, তোমার কথা বলো তো, কি পছন্দ তোমার? তুমি মনে হয় ফোন ইউজ করো না, তাই না?
নাকি বাসায় আছে?
-বাসায় ফোন আছে, কিন্তু ওটা দিয়ে আসলে কারো সাথে কথা বলা সম্ভব না৷ কারন আমার সাথে মা থাকে।
-তাহলে তো চলবে না, আমার তো তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করবে। আমি তো এত ঘন ঘন আসতে পারব না৷
-আচ্ছা টেক্সট করা যাবে না?
-হুম, এটা ভালো বলেছ!
কথায় কথায় কখন সময় গড়ায় দুজন টের পায় না৷ দুপুর হয়ে গেলে শুভ্র বলল, এখন ফিরবে?
বাসায় গেলে তো মা জিজ্ঞেস করবে, এত তাড়াতাড়ি কেন ফিরলাম!
তাহলে?
আরেকটু থাকি, চারটার পরে যাই?
আচ্ছা। আমার তো সমস্যা নেই। তোমার খিদে পেয়েছে? এই সাইডটা এত নিরিবিলি কিছু তো পাওয়া যাবে না!
সুপ্রভা লাঞ্চ বক্স বের করে শুভ্রকে দিলো!
শুভ্র হেসে বলল, দেখছ, ভুলেই গিয়েছিলাম, বাচ্চারা তো স্কুলে টিফিন নেয়!
আমি মোটেই বাচ্চা না!
নাহ! তুমি তো অনেএএএক বড়! কিন্তু আমার থেকে ছোটো!
আপনি নুডুলস পছন্দ করেন?
মোটামুটি, খাই!
আচ্ছা, এটা কিন্তু আমি বানিয়েছি!
তাহলে তো এটা অনেক স্পেশাল! দাও, আমিই আগে খাই।
শুভ্র নিজে একবার খেয়ে সুপ্রভার দিকে এগিয়ে দিলো। সুপ্রভা লজ্জায় লাল নীল হতে হতে শুভ্রর হাতেই খেয়ে নিলো!
এতকিছু ভাবে নি সুপ্রভা। শুভ্রকে দেখে কেমন একটা লেগেছিল বুকের ভেতরে! শুভ্র যে এত কাছে আসবে, সেটা বুঝতে পারে নি!
চারটার আগে আগে ওরা উঠে পড়ল। এখন আর অটো পাওয়া যাবে না। অনেকটা পথ হেঁটে বাজারের কাছে গিয়ে শুভ্র বলল, শোনো, তুমি হেঁটে গিয়ে বাসায় ঢুকবে,
তুমি গেটে না ঢোকা অবধি আমি তোমার আসেপাশেই আছি। ঢুকে গেলে আমি চলে যাব। আর কাল আমাদের বাসায় যেও কোনো একটা অজুহাতে। ছুটির পরে। ঠিক আছে?
সুপ্রভা ঘাড় নাড়ল। তারপর এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে আস্তেধীরে হেঁটে বাসায় ঢুকল, কেমন একটা যেন লাগছে, এত অদ্ভুত কেন এই অনুভূতি! পেটের ভেতরে একটা চাপা অস্বস্তি, বুক ধুকপুক করছে। কেউ জানবে না শুভ্রর কথা! কখনোই না!
পরের দিন ক্লাশে দীপ্রকে ডাকতেই দীপ্র বলল, কাল আসো নি, তাই তো!
সুপ্রভা ঘাড় নাড়ল।
কাল তেমন কিছু দেয় নি সুপ্রভা। লেখার মত কিছু নেই।
ওহ আচ্ছা।
সুপ্রভার মন খারাপ হলো। শুভ্রকে কীভাবে জানাবে যে সুপ্রভা যেতে পারবে না।
ঠিক আছে দীপ্র, তোমাকে থ্যাংকস!
দীপ্রকে একা ঢুকতে দেখে শুভ্র আন্দাজ করে নিলো। তাকিয়ে টেবিলের উপর থেকে কেমিস্ট্রি শিটের কপি দেখে বুঝল, এটা সিটির কপি। সেটা গায়েব করে দিলো।
দীপ্র ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসে ওর শিট খুঁজতে লাগল।
কিছু খুঁজছিস দীপ্র?
হ্যা,আমার শিট ছিল এখানে?
এখানে তো কিছু দেখি নি!
ওইটা খুব ইম্পরটেন্ট, অজৈব যৌগের শিট!
ওই মেয়েটা আসে, ওর কাছে না তো!
না না, ওকে তো কপি করতে দেই নি। লিখে নিয়ে গেছে!
আচ্ছা পরীক্ষা তো, সময় নষ্ট করিস না। ওর বাসা থেকে লিখে নিয়ে আয়। আগে একটা ফোন করে নিস।
দীপ্র ফোন থেকে সুপ্রভাকে কল করল, প্রভা, আমার অজৈব যৌগের শিটটা পাচ্ছি না। তুমি কি তোমার শিটটা আমাকে একটু দেবে?
হ্যা, কেন দিব না। কাল নিয়ে আসব?
পাশ থেকে শুভ্র আস্তে বলল, তোর তো আজ পড়ার কথাশ শিডিউল করে পড়িস না?
দীপ্র বলল, এখন কই পাব, ম্যানেজ করে নিব।
না না, নিয়ে আয়, চল, আমিও যাচ্ছি, ঘুরে আসি!
আচ্ছা সুপ্রভা, আমি যদি এসে নিই, তোমার সমস্যা আছে, কাল দিয়ে দিব ক্লাশে, কাল আনব, আবার কপি করব, লেট হয়ে যাবে, আমার এটা পড়া বাকি আছে।
সুপ্রভা বলল, হ্যা হ্যা, এসো, এসে নিয়ে যাও!
★★
কলিংবেল বাজতেই সুপ্রভা দরজা খুলে দেখে, দীপ্র দাঁড়িয়ে আছে, পাশেই শুভ্র৷
চলবে
শানজানা আলম