আশ্রিতা🌿 পর্ব -০২

#আশ্রিতা🌿
Sumana Easmin
পর্ব দুই

হিমু মুখ কাঁচুমাচু করে শিলাকে জিজ্ঞেস করলো-
“তুমি? তাও আবার এতো সকালে?”
“হ্যাঁ আমি। কেনো খুব আশ্চর্য হয়ে গেলে দেখছি?”
“না আসলে এভাবে হুট করে….
হিমুর কথা শেষ না হতেই শিলা হিরহির করে রুমের ভেতরে ঢুকে পরলো। বেডে বসে হিমুকে জিজ্ঞেস করলো –
“তোমার ফোন কোথায়?”
“কি জানি কোথায় যে ফেলে রেখেছি জানিনা!”
“এ আবার কেমন কথা? সকাল থেকে না হলেও পঞ্চাশ বার কল দিয়েছি, অথচ তোমার কোন রেসপন্স নাই। শেষে উপায় না পেয়ে চলে আসলাম। ভাবলাম কি করছো সেটা নিজ চোখেই দেখে আসি”
হিমুর মুখ শুকিয়ে গেছে। সে ছোট বাচ্চাদের মত মুখ করে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল-
“এসেছো ভালোই করেছো। নিজ চোখে তো দেখতে পেলে আমি কি করছিলাম, তাই না? এখন বাবা-মা আসার আগেই তুমি চলে যাও। নয়তো আমি লজ্জায় কাওকে মুখ দেখাতে পারবোনা!”
“এতো তাড়া কিসের তোমার? আন্টি আংকেল তো সব কিছুই জানেন। একটু বসেই যাই না!”

শিলা সারাদিন থাকলেও হিমুর কোন প্রবলেম ছিলো না। যদি না কংকা থাকতো। শিলা যদি একবার কংকাকে দেখতে পায় তাহলেই রিলেশনের বারোটা বাজবে। একদম ব্রেকাপ করে দিবে। হিমু সেটা কখনোই চায়না। কারন শিলা একদিকে তার বেস্ট ফ্রেন্ড আর একদিকে তার গার্লফ্রেন্ড। ছোটবেলা থেকে একই সাথেই পড়াশোনা করেছে। আর কিছুদিন আগেই রিলেশনশিপেও জড়িয়েছে।

হিমু ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে কেবল সোফায় বসেছে মাত্র। এরই মধ্যে কংকা টলতে টলতে ওর রুমে এসে ঢুকলো। শাড়িটাকে কোন রকমে গায়ের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। দীর্ঘ চুল দিয়ে অবশ্য পেছনের দিক ভালোভাবেই ঢেকে আছে। কিন্তু সামনের দিকের অবস্থা একদম বেহাল। শীলা ওকে এভাবে দেখে পুরাই থ মেরে রইল।

কংকা হিমুর কাছে গিয়ে বসলো। তারপর ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল-
“এই নাও তোমার ফোন। আমার পিঠের নিচে পরেছিলো এতোক্ষণ। মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে!”
হিমু কংকার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে এক পার্শ্বে রেখে দিলো। তারপর খুব গম্ভীর ভাবে কংকাকে বলল-
“কংকোনা তুমি তোমার রুমে যাও।”
কংকা একবার হিমুর মুখের দিকে তাকালো আর একবার শিলার মুখের দিকে তাকালো। তারপর ধীরে ধীরে ওর রুমে চলে গেলো।

শীলা বিদ্যুত বেগে বেড থেকে উঠে গিয়ে হিমুর সামনে দাঁড়ালো। হিমু এখনো সোফাতেই মাথা নিচু করে বসে আছে। শীলা রাগে চিৎকার করে বলতে লাগলো-
“কংকা বাসায় আছে সেটা তুমি আমায় বলোনি কেনো?”
হিমু কোন উত্তর দিলোনা। শিলা আরো বেশি রাগান্বিত হয়ে বলল-
“বলো কেনো বলনি? আর তোমার ফোন ওর পিঠের নিচে যায় কিভাবে? আমায় একটু ক্লিয়ার করে বলবা প্লিজ?”

হিমু এতোক্ষণ নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছিলো। কিন্তু শিলার কথা বার্তায় সে আর ঠিক থাকতে পারলো না। সে রাগে হিসহিস্ করে বলল-
“হ্যাঁ, আমি ওর রুমে ওর কাছে রাতে গিয়েছিলাম, তোমার কোন সমস্যা?”
“ওহ্, তাহলে ভেতরে ভেতরে এতো কিছু? আমায় বললে কি আমি না করতাম? কই একটা দিনো তো দেখলাম না নিজ থেকে আমার হাতটা ধরছো বা কিছু আবদার করছো। অথচ ভেতরে ভেতরে…ছিঃ
এই জন্যই বুঝি তুমি আমায় স্পর্শ করতে না? এতো সুন্দর জিনিস হাতের কাছে থাকলে বাহিরের কুৎসিত জিনিস কি আর মনে ধরবে?”
“এই থাম। অনেক বলেছিস আর না। কংকার সাথে আমার কোন খারাপ সম্পর্ক নেই। আর যদি মা আসার পর ও তোর এইসব কথা বলে দেয় তাহলে আমার কি হবে একবার ভেবেছিস?”
“আমার ভাবার দরকার নেই!”

হিমুর মাথায় চরচর করে রাগ উঠলো। ও দ্বিগুণ রেগে গিয়ে বলল-
“তোর এসব ফালতু পেচাল শোনার আমার টাইম নেই। তোর কাছে জজবাবদিহি করতে আমি রাজি না। এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যা!”
হিমুর কথা শুনে শিলার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো। ও কখনোই ভাবেনি হিমু ওর সাথে এমন বিহেভ করতে পারে! ও আর সহ্য করতে পারলোনা। কান্না করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

হিমু দরজা লক করে দিলো। তারপর গেটের দারোয়ান কে বলল তার পারমিশন ছাড়া যেনো ভেতরে কাওকে ঢুকতে দেওয়া না হয়।

শিলার সাথে সে এমন ব্যবহার করতে চায়নি। কিন্তু শিলাই লিমিট ক্রস করে ফেলেছিলো। তাই হিমুর আর করার কিছু ছিলোনা। তার উপরে আবার হিমু রাগলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা।

হিমু রুমে এসে বেডে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকার পর সে ফোন টা হাতে নিয়ে চেক করতে লাগলো। কিছু হয়েছে কি না।
নাহ্। ফোনের কিছুই হয়নি। রাতে ভুল করে যদি এই ফোনটা কংকার রুমে রেখে না আসতো, তাহলে হয়তো আর আজকের এই দিনটা দেখতে হতোনা।

হিমু একটা বিষয় মনে মনে খেয়াল করলো, কংকার জন্য এতো বড় একটা ঝামেলা হয়ে গেলো অথচ কংকার উপরে তার কোন রাগ কাজ করছেনা।
একটু পর সে কংকার রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো কংকা কান্না করছে। ও খুব দ্রুত কংকার কাছে গিয়ে বলল-
“কি হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেনো?”
কংকা কোন উত্তর দিলোনা। ও কংকার থুতনি তে হাত দিয়ে ওর মুখের দিক করে নিয়ে বলল-
“কি হয়েছে আমায় বলো? মার কাছে যাবে?”
কংকা তবু কোন কথা বলল না।
কংকার চোখের পানি হিমুর কাছে অসহ্য লাগছে। সে চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল-
“মার কথা খুব মনে পড়ছে? মার সাথে কথা বলবে?”
কংকা এবারো কোন উত্তর দিলোনা।

একটু আগেই শিলা ওর সামনে থেকে কান্না করতে করতে চলে গেলো সেটা ওর চোখে পরেও পরলো না। কতোদিনের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলো, তবু সেটা নিয়ে হিমুর কোন মাথাব্যাথা নেই। অথচ কংকার চোখের পানি নিয়ে তার মাথাব্যথার শেষ নেই!
পোড়া কপাল।

কংকা ফ্লোরে বসে কান্না করছে আর হিমু ওর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। একটু পর হিমুর মা বাবা চলে আসলো।
কংকা সায়লা (হিমুর মা) কে দেখেই কান্না করতে করতে জড়িয়ে ধরলো। সায়লা মনে মনে নিজেকে খুব অপরাধী ভাবতে লাগলো। সিদ্ধান্ত নিলো যে এমন করে আর কখনো কংকাকে ফেলে রেখে কোথাও যাবেনা।

একটু পর হিমু এসে ওর মাকে বলল-
“জানো মা দিনে একশো বার করে তোমার কথা বলছিলো আর আমার মাথাটা খাচ্ছিল।”
সায়লা বেগম একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল-
“খুব বোকার মতো কাজ করেছি রে। ওকে তোর কাছে না রেখে গিয়ে সাথে করে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো।”
“আমার লাইফ হ্যাল্ হওয়ার পর সেটা তুমি বুঝলে?”
“হুম। দুই দিনেই তোর লাইফ হ্যাল্ হয়ে গেলো? তাহলে এতোদিনে আমার লাইফ কি হয়ে গেছে?”

হিমুর বাবাও রুমে এসেছিলো। সায়লা বেগমের কথা শুনে সবাই হাসিতে ঢলে পরলো। তাদের সাথে কংকাও হেসে ফেললো।

শিলা হিমুকে দুইদিন ফোন করেছিলো কিন্তু হিমু কোন রেসপন্স করেনি। উল্টা শিলাকে আরো সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিয়েছে।

কংকা দিনে একবারো রুম থেকে বের হতোনা। কেননা রুমের ভেতরে থাকাটাই ওর বৈশিষ্ট্য। হিমুই মাঝে মাঝে এই ছল ঐ ছল করে ওর রুমে যেতো। ওকে এক পলক দেখেই আবার চলে আসতো।

এভাবেই কয়েকদিন কেটে গেল। হিমু ধীরে ধীরে কংকার প্রতি আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়তে লাগলো। শেষে এমন অবস্থা হলো যে কংকাকে এক মুহুর্ত না দেখলে সে অস্থির হয়ে পরতো।

এমনি একদিন বিকেলে হিমু তার মায়ের কাছে গিয়ে বলল-
“মা, শীলার সাথে কি তোমার কথা হয়?”
“না। অবশ্য একদিন ফোন করেছিল। কিন্তু আমি ব্যস্ত থাকায় রিসিভ করতে পারিনি। পরে আমি ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু ও রিসিভ করেনি। কেনো কি হয়েছে বলতো?”
“না তেমন কিছু হয়নি, আমি ওর সাথে রিলেশন ব্রেকাপ করেছি!”

সায়লা বেগম তরকারি তেলে দিচ্ছিলেন। হিমুর কথা শুনে অবাক হয়ে রান্না বাদ দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলেন-
“কেনো? তুই কি কথা না বলে থাকতি পারবি?”

হিমু ওর মায়ের সাথে খুব ফ্রী ছিলো। সব কথাই শেয়ার করতো। তাই সে ওর মায়ের কথা শুনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল-
“হুম। কয়েকদিন হলো। আমি নিজেই যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছি। ওর প্রতি আমি খুবই বিরক্ত। মনে হয়না আর কখনো ওর সাথে কনটাক্ট করবো।”
“তাতে তুই কি হ্যাপি থাকতে পারবি?”
“হ্যা মা। আমি একদম ঠিক আছি। বলতে পারো আগের চেয়েও অনেক বেশি হ্যাপি আছি।”

সায়লা বেগম আবার রান্নায় মনোযোগ দিলেন। হিমু চুপচাপ তার পাশে দাঁড়িয়ে রান্না করা দেখতে লাগলো। একটুপর সায়লা কংকাকে আঁচারের বয়াম টা ওনার রুম থেকে আনতে বললেন!

কয়েক মিনিট পর কংকা আঁচার খেতে খেতে বয়াম হাতে নিয়ে কিচেনে ঢুকলো। ওর ঠোঁটের চারপাশে আঁচার লেগে থাকতে দেখে হিমু জোরে হেসে ফেললো। কংকা হিমুকে হাসতে দেখে ধপ করে বয়াম টা রেখে চলে গেলো। সায়লা বেগম হাসতে হাসতে হিমুকে বললেন-
“তুই সবসময় ওর সাথে এমন করিস কেনো?”
“আমি আবার কি করলাম?” বলেই হাসতে হাসতে হিমু কংকার রুমে চলে গেলো।

কংকা আয়নার সামনে বসে জিহ্বা দিয়ে ওর ঠোঁটের আশেপাশের আঁচার গুলো খাওয়ার চেষ্টা করছিল । হিমুকে দেখা মাত্রই চুপ করে গেলো। হিমু কোন রকমে হাসি চেপে রেখে ওর পাশে গিয়ে বলল-
“তুমি কি আমার উপরে রাগ করেছো?”
কংকা কোনো কথা বলল না। তবে মুখে কিছুটা রাগের ছাপ ফুটে উঠেছে।
“আচ্ছা আমি তোমায় হেল্প করবো?”
“কি হেল্প করবে?” কংকা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
“ঐ যে আয়নার দিকে তাকিয়ে যেটা করছিলে?”
কংকা হিমুর কথার কোন মাথা মুন্ডু বুঝতে না পেরে চুপ করে রইলো।
হিমু ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল-
“আর খুব বেশি দেরী নেই…”
কংকা আয়নাতে হিমুর দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না। হিমুও আয়নাতে কংকার দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমার কাছ থেকে এতো দুরে দুরে থেকে কি আমায় আরো পাগল করতে চাও?”
কংকা চুপ।
“আচ্ছা আমি যে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি এটা কি তুমি বুঝতে পারোনা?”
কংকা চুপ।
“তুমি আমায় এমন ইগনোর করো কেনো? একটু তো ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে পারো?”
কংকা এখনো চুপ। একদৃষ্টিতে হিমুর দিকে তাকিয়ে আছে।

হিমু কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো তার আগেই কংকার চোখের দিকে তাকিয়ে ও হতভম্ব হয়ে গেলো। আয়না থেকে মুখ ঘুরিয়ে সরাসরি কংকার চোখের দিকে তাকালো। একটু পর বলল-
“আয়নাতে তোমার চোখের তারা ব্রাউন কালার দেখালো কিন্তু এখন একদম ব্লাক দেখাচ্ছে কেনো?”
কংকা হিমুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি যদি মা কে সব কথা বলে দিই, সেই ভয়ে তোমার এমন হচ্ছে!” বলেই হাসতে লাগলো।

হিমু এতোদিন জানতো কংকা কথার পৃষ্ঠে কথা বলতে জানেনা। শুধু চুপ হয়ে বোকার মতো চেয়ে থাকে। আর আজ ও কিভাবে এমন সাবলীল ভাষায় উত্তর দিচ্ছে?

কংকা একটু বাঁকা হেসে হিমুর কাছে এগিয়ে গেলো। হিমুর মুখ ওর মুখের কাছে টেনে নিয়ে বলল-
“তুমি নাকি হেল্প করবে আমায়?”
হিমু পাথরের মতো স্থির হয়ে আছে। মুখে কোন কথা নেই!”

কংকা ওর জিহ্বা দিয়ে হিমুর ঠোঁটের এক পাশ স্পর্শ করলো। হিমুর পুরো শরীর সাথে সাথে কেঁপে উঠল। সে ভয়ে ভয়ে কংকাকে বলল-
“তোমার জিহ্বা এমন বরফের মতো ঠান্ডা কেনো?”

[নেক্সট পার্ট গুলো শুধু সাহসী ও প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। ছোটরা এই গল্প থেকে দূরে থাকো]
To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here