আসক্ত পর্ব ১৬

#আসক্ত🔥
জান্নাত
পর্ব : ১৬

টায়রা ডিনার করতে ডাইনিং টেবিলে এসে বসতেই রিমপি রিমি, নিশু, তিতলি মিটমিট হাসতে লাগলো তাকে দেখে! অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছে টায়রা তাদের কে! “সবগুলো মাথা কি গেছে নাকি?” মনে এগুলোই ভাবতে লাগলো সে!

রিমপি হাসি চেপে রেখে টায়রা কে জিগ্গেস করলো,
– সব ঠিকঠাক আছে তো নাকি?
অবাক হলো টায়রা, রিমপির কথায়! বোকার মত মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,
– হ্যা সব ঠিকই তো আছে! কেনো কি হয়েছে?
টায়রার কথা শুনে তিতলি মিটমিট হেসে টায়রার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে বলল,
– হ্যা হ্যা তাতো এটা দেখেই বুঝেছি!
হেসে উঠলো সবাই ওর কথা শুনে!

টায়রা অবাক হয়ে ঘাড়ে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,
– কি হয়েছে এখানে?
তিতলি মোবাইলের ক্যামেরা অন করে টায়রার ঘাড়ে ছবি তুলে ওর সামনে দিলো!
মুহূর্তেই চেহারার রং পালটাতে লাগলো টায়রার! তার ঘাড়ের কাছটাতে লাল হয়ে রক্ত জমাট বেধে গেছে! এখানেই তো লাজুক কিস করেছিলো!
লজ্জায় যেনো চোখের পলোকও ফেলতে পারছে না টায়রা! কুকড়ে গেছে সে!

রিমি মুখ চেপে হেসে বলতে লাগলো,
– আমাদের ভাইকে এতো দিনতো জমরাজ, রাগী,বদমেজাজী বলে বেরিয়েছিস! আর এখন তার সাথেই রোমান্স করে বেরাচ্ছিস! বাহহ..
কোনা চোখে তাকালো টায়রা রিমির দিকে!
– হোহ বেবি এভাবে তাকাচ্ছো কেনো? মিথ্যে কি বলেছি? হুহ..
নিশু অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
– ভাই যে এত্তো রোমান্টিক আগে যানা ছিলো না আমার! মাই গড! ইট’স শকিং নিউজ ফর মি!
হাসতে লাগলো রিমপি রিমি তিতলি, নিশুর কথা শুনে! লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে টায়রা!

– আরে ঐ তো ভাই এসে গেছে!
রিমির কথায় সবাই শিরির দিকে তাকাতেই দেখলো লাজুক আসছে! টায়রার সাথে চোখাচোখি হতেই বাকা হাসলো লাজুক! সাথে সাথে লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো টায়রা!
লাজুক এসে টায়রার পাশের চেয়ার টেনে বসে টায়রার দিকে তাকিয়ে দেখে সে নিচে তাকিয়ে ফল কাটতে ব্যাস্ত!

তিতলি মিটমিট হেসে লাজুকে বলল,
– ভাই দেখতো টায়রার ঘাড়ে কি যেনো হয়েছে?
তিতলির কথা শুনে টায়রার দিকে তাকালো লাজুক! ওর ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে দেখতেই ব্লাশিং হয়ে মুচকি হাসলো সে! লাজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে টায়রা, ইচ্ছে করছে মাটি খুরে ভেরতে ঢুকে যেতে! টায়রার অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো সবাই!

লাজুক টায়রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
– ইডিয়েট! নিচে নামার আগে চেক করে নিবে না?
গাল ফুলিয়ে আড় চোখে তাকালো টায়রা লাজুকের দিক!
– আ..আমি কি জানতাম নাকি! আপনি জমরাজ থেকে ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছেন!
ভ্রু কুচকে তাকালো লাজুক টায়রার দিকে,
– জমরাজ থেকে ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছি মানে?
– নয়তো কি? কামড়ে তো রক্ত জমাট বেধে দিয়েছেন!

টায়রার কথা শুনে বাকা হাসলো লাজুক! টেবিলের নিচ থেকে পা দিয়ে টায়রার পা চেপে ধরতেই শকিং এক্সপ্রেশনে লাজুকের দিক ফিরলো টায়রা!
টায়রার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
– খুব কথা শিখে গেছো তাই না? ভ্যাম্পায়ার কাকে বলে তা প্র্যাক্টিকাল্লি বোঝাবো তোমায়! জাস্ট ওয়েট!
ভয়ে ঢোক গিললো আড় চোখে দেখলো লাজুক কে টায়রা! বেশি কিছু বলে ফেললো নাকি সে আবার!

এর মধ্যেই ডানিং টেবিলে চলে এলো বাকিরা!
মোর্শেদা অবাক হয়ে মুচকি হেসে বলল,
– বাহ! রোজ যাদের ডাকতে ডাকতে ঘন্টা পেরিয়ে যায়, আজ তারা সবার আগে এসে হাজির! কি ব্যাপার?
রিমপি দুষ্টু হেসে বলল,
– হ্যা..হ্যাপিনেস! দিদুন হ্যাপিনেস! তাই না ভাই?
লাজুক টায়রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জবাব দিলো!
– ইয়াহ!

সাজিদা খাবার বাড়তে বাড়তে জিগ্গেস করলো,
– তা কির জন্য এতো হ্যাপিনেস শুনি?
তিতলি হেসে বলল,
– সে তো আমাদের থেকে টায়রাই ভালো বলতে পারবে! [ টায়রাকে চোখ মেরে ] তাই না?
মুখে খাবার তুলতেই কেশে উঠলো টায়রা! তারাতাড়ি পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো লাজুক টায়রার দিকে!
পানি খেয়ে আড় চোখে লাজুকের দিকে তাকাতেই সে চোখ মেরে বলল,
– কি হলো বল! কিসের হ্যাপিনেস?

সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো টায়রা লাজুকের থেকে! কাপা কাপা আওয়াজে বলতে শুরু করলো!
– এক্সুলি ফুল মা! ব..বর্ষা দি এখন আ..আমাদের সাথে আছে! তাই ভাবছি কাল বাইরে কোথাও সবাই মি..মিলে ঘুরতে যাবো! [ আড় চোখে লাজুকের দিকে তাকিয়ে ] উ.উনিও রাজি হয়েছে!

বর্ষা এক্সসাইটেড হয়ে বলল,
– ওয়াও, খুব ভালো প্লান করেছিস টায়রা! এমনই আমারও এমন সবাইকে নিয়ে বাইরে বেরনোর ইচ্ছে ছিলো!
মুচকি হাসলো টায়রা!

পাশ থেকে লাজুক টায়রাকে খোচা মেরে বলল,
– বাহ হোয়াট আ আইডিয়া! এতো টুকু মাথায় এতো বুদ্ধি কবে থেকে এলো?
আড় চোখে লাজুকের দিকে নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে টায়রা জবাব দিলো,
– তো কি করতাম! স..সবাই মিলে তো আমাকে ফাসিয়ে দিচ্ছিলেন! এবার বুঝেন মজা!
বলেই ভেংচি কেটে অন্য দিকে ফিরে গেলো সে!
হাসতে লাগলো লাজুক টায়রার অবস্থা দেখে!
আজকের দিনটা খুব স্পেশাল লাগছে তার কাছে! যেনো জীবনকে উপভোগ করার এক নতুন ছন্দ খুজে পেয়েছে! নিজেকে ভিন্ন রূপে আবিষ্কার করছে যেনো!
__________________
সবাই মিলে দুপুরে বাইরে খেতে যাবে বলে একটা রেস্টুরেন্টের এক সাইডটা সম্পূর্ণ বুক’ড করে ফেলেছে লাজুক! তার পুরো ফ্যামিলি এক সাথে ল্যান্চ করবে, তাই বাইরের বার্তি গ্যাদারিং রাখছে না!

সবাই এক্সাইটেড! অনেক দিন পর এমন সবাই একসাথে বেরচ্ছে! টায়রা বাচার জন্য বাইরে ঘোরার কথাটা বলেও বেশ ভালো কাজ করেছে!
এতে করে না তাকে লজ্জা পেতে হয়েছে! উপর থেকে সবাই মিলে গুড টাইম স্পেনও করতে পারবে!

সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে চলে গেলো! আলিশান সাজ সজ্জা এখানের! তার উপরে সব কিছু একদম হাই কোয়ালিটির! ওয়েটার গুলোও খুব ম্যান্যার্স ম্যান্টেন করে খাবার ওডার নিচ্ছে!
সবাই যখন নিজেদের মত খেতে আর কথা বলতে ব্যাস্ত! তখন অন্য একজন ব্যাস্ত টায়রাকে দেখতে!
টায়রা আড় চোখে লাজুকের দিকে তাকাতেই লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো! সে কেনো জানি চোখ মেলাতে পারে না লাজুকের সাথে!

হঠাৎ লাজুক বলে উঠলো,
– দি তোরা থাক আমি একটু টায়রাকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছি!
অবাক চোখে তাকালো টায়রা লাজুকের দিক! বর্ষা মুচকি হেসে বলল,
– হ্যা যা! কিন্তু কোথায় যাচ্ছিস?
– এই একটু কাজ আছে! তোদের হয়ে গেলে বাসায় চলে যাস!
– আচ্ছা!

পাশ থেকে রিমি মিট মিট হেসে বলে উঠলো,
– উপসস! ভাই তোমার প্রাইভেসি চাই তাই তো? আগে বললেই পারতে, আমরাই না হয় আগেই টায়রাকে তোমার সাথে পাঠিয়ে দিতাম!
কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো রিমপি তিতলি নিশু! মুখ চেপে হাসছে বর্ষা আবির, সাজিদা, শাহেদ, আর মোর্শেদা ও!
এদিকে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে টায়রা!

লাজুক বলল,
– বেশি কথা বলছিস! ভেবেছিলা চার জনের জন্য কিছু শপিং করে নিয়ে আসবো! কিন্তু এখন সেটা ক্যান্সেল!
সাথে সাথে লাফিয়ে উঠলো চার জন!
– আরে রে রে! ভাই আমরা তো মজা করছিলাম! সরি সরি! তোমার যেখানে খুশি তুমি টায়রাকে নিয়ে যেতে পারো কোনো প্রবলেম নেই!

বাকা হাসলো লাজুক সব কটার অবস্থা দেখে! টায়রার দিকে তাকিয়ে দেখলো লজ্জায় সে গুটিয়ে গেছে! আর কিছু না বলে টায়রার হাত ধরে টেনে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো!

To be continue….
shuchona zannat..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here