#ইস্ক_সাহেবান
#হীর_এহতেশাম
||পর্ব-১১||
★ইবাদ আর ইশাল একে অপরের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল। এ কী শুনলো তারা? এতকিছু করে বার্থডে সেলিব্রেট করলো, আর এখন শুনছে বার্থডে ছিলই না। ইবাদ নার্সের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
—–বার্থডে ছিল না?
—স্যার আপনি আমাকে বলতে দিলেন কই? বাসা থেকে ফোন করছিল তো ম্যাডাম জিজ্ঞেস করাই আমি বলেছি আজ আমার বার্থডে তো তাই। আর তখনই উনি জেদ ধরেছেন বেলুন এনে দিতাম, দিলামও! আর তারপরই..
—-বেশ করেছেন। এই বার্থডের চক্করে আমি পাগল উপাধিতে ভূষিত হলাম। বলেই ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো ইশাল। তার দিকে তাকিয়ে ইবাদ ঠোঁট চেপে হাসলো। হাসি থামিয়ে বলল…
—-যতদিন আছিস আমার সাথে থেকে যা।
—-তোর সাথে? আর ইউ সিরিয়াস?
—-ইয়েস!
—-ইরফান কই রে?
ইরফানের কথা বলতেই ইবাদের হাসোজ্জল মুখ খানিকটা মলিন হয়ে গেল। ইশালকে বুঝতে না দিয়ে বলল,
—-আছে তো।
—ওকেও ডেকে নে, বেশ জমবে।
—-আচ্ছা কাল গিয়ে আমি আর তুই ওকে নিয়ে আসবো। আজ বলার দরকার নেই।
—-ঠিক আছে।
ইশালকে ইবাদ রুম দেখিয়ে দিলো। ইফতির চিকিৎসা পর্যন্ত এখানেই থাকবে সে।
★সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছে। ইবাদ আর ইশাল এখনো নিচে নামে নি। মারিয়াম গিয়ে দুইবার ডেকে এসেছে। সবাই দুজনের জন্যই অপেক্ষা করছে। দিদার মাহসান উপরে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই দেখলো ইবাদ নেমে আসছে। সাথে ইশাল! দুজনে এসে খাওয়ার টেবিলে বসেছে।
—-কেমন আছেন দাদু?
—-ভালো আছি! তুমি কেমন আছো?
—-ভালো..!
—-থাকবে কয়দিন..? প্রথমবার এসেছো বেশ কিছুদুন ঘুরে তবেই যাবে কেমন? খেতে খেতে বলে দিদার মাহসান।
—আমার আপাতত কাজ নেই থাকতেই পারি। বলেই হালকা হাসল ইশাল।
—-ইবাদ..?
নাহিদা বেগমের মৃদুস্বরে মাথা তুলে তাকালো ইবাদ,
—-জি আন্টি….
—ইফতি ঘুমিয়েছে?
—-অনেক আগে। আমি খাইয়ে দিয়েছি, মেডিসিন ও দিয়ে দিয়েছি। এখন থেকে টানা ৮ঘন্টা ঘুমাবে। আর তুমি চিন্তা করো না। খুব তাড়াতাড়ি উনি সুস্থ হয়ে উঠবে। আমি একটা ট্রিটমেন্ট শুরু করেছি উনার। ৬মাসে তিন ডোজ। দু মাস পর দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ। আর প্রথম ডোজেই অনেকটা ফুরফুরে লাগছে। আমি আশা রাখি নেক্সট ৬মাসে মধ্যে উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
নাহিদা বেগম, জাফর এহতেশাম, আর দিদার মাহসানের চোখ মুখে হাসির ঝলক দেখা দিলো।
★বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে ইশাল। ঘুম কিছুতেই আসছে না। হঠাৎ তার কী হল? কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না। সোজা হয়ে উঠে বসলো ছেলেটি। বালিশের পাশে রাখা সাদা হাফ ফ্রেমের চশমাটা নিয়ে চোখে দিলো। বিছানা ছেড়ে নেমে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। ট্রাউজারের পকেট হাতড়ে সিগারেটের প্যাকেট পেল না। রুমে গিয়ে বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে এসে বারান্দায় বসল। সিগারেট ধরিয়ে টান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। এক হাত দিয়ে মাথার চুলে হাত বুলাতে থাকে। অপরহাতের আঙুলের ফাঁকে সিগারেট জ্বলছে। শীতের আভাস তেমনটা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু মৃদু বাতাসে কেঁপে উঠছে সর্বাঙ্গ। ইশালের পরনে নেবি ব্লু রঙের পলো শার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজার। বাম হাতে থাকা রোলেক্সের কালো ঘড়িটির দিকে একবার তাকালো। রাত ১টা ছুঁই ছুঁই। কী হলো তার? ঘুম আসছে না! বসেও শান্তি পাচ্ছে না। এমনতো হয় না তার? এমন না যে জায়গা চেঞ্জ হওয়াতে ঘুম আসছে না। তাহলে কী হলো? সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়ে ইশাল চোখ বন্ধ করে নিল। কেমন অস্থির লাগছে। বন্ধ চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটি মায়াবী মুখশ্রী। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যার। ঠোঁট চেপে, ভ্রু কুঁচকে যে তাকিয়ে আছে। ইশাল ধড়ফড়িয়ে সোজা হয়ে বসে। এক হাত অটোমেটিক মাথায় চলে যায়। হাতে থাকা সিগারেট ফেলে দিলো ইশাল। এসব কী হচ্ছে? সেন্টার টেবিলে থাকা পানির জগ তুলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো সে। উঠে রেলিংয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে জগ থেকে পানি নিয়ে চোখ মুখে ছিটিয়ে দিলো। ভেজা হাতে চুল টেনে ধরলো ইশাল। জগ রেখে নিকষকালো আকাশের দিকে চেয়ে রইল ইশাল। কী কারণে এত অস্তির হয়ে আছে সে নিজেও জানে না। কী কারণে তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল সে আদৌ টের পাচ্ছে না।
ভোর হতেই জগিংয়ে বেরিয়েছিলো দুজন। জগিং শেষে দুজনেই ইরফানের বাড়ির দিকে চলে গেল। সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিতেই ইবাদ আর ইশাল ভেতরে প্রবেশ করলো। ইশাল পুরো বাড়ির চারপাশ দেখে ইবাদকে প্রশ্ন করলো,
—-বাড়ি তো ভালোই বানিয়েছে। বিয়ে করছে না কেন?
—-করবে সময় হোক।
—কবে সময় হবে? তোরা কি নিজেদের খোকা মনে করিস। ৩০ চলছে….
—-দেখতে লাগে না। লুক এট মি আম’ফিট এন্ড হ্যান্ডসাম।
—-এসব প্যাঁচাল আমার ধারে পারিস না। জলদি বলছি ভালোই ভালোই বিয়ে করে নে নাহলে ভালো মোটেও হবে না।
—-আমরা এসেছে ওকে নিয়ে যেতে, আগে ওটা করি? বলেই ইবাদ উপরে চলে গেল। ইশাল ইবাদের পেছনে পেছনে গেল।
★ঘুম থেকে উঠে পড়লো ইফতি। এখনো পর্যাপ্ত ঘুম পূরণ হয় নি। বিছানা থেকে নেমে এদিক ওদিক হাটতে থাকে। ঘুমে ঢলে পড়ছে দেখে রুমে প্রবেশ করে বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। মুহুর্তেই ঘুমিয়ে পড়লো আবারও।
——এই ইরফান! ইরফান! ওঠ দেখ কে এসেছে?
ইবাদের কন্ঠস্বর কানে পৌঁছাতেই ইরফান উঠে বসলো। এক হাতে মুখ মালিশ করে তাকাতেই ইশাল কে দেখে অবাক হলো চরম পর্যায়ের।
—-তুইই? তুই কীভাবে? কখন এলি…?
—-খালি প্রশ্নই করবি নাকি জড়িয়েও ধরবি? ইশালের এমন কথা শুনে ইরফান এক লাফে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়ে। ইশাল কে দ্রুত জড়িয়ে ধরে। সেও জড়িয়ে ধরলো।
—-কতদিন পর দেখা?
—-লং টাইম। এখনও আসতাম না। প্রাণপ্রিয় শত্রু তলব করেছে বলে কথা। ইবাদের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বলল ইশাল। সোফায় বসে পানি খেতে খেতে ইবাদ বলল,
—–আমার মত শত্রু সাত দেশ খুঁজলেও পাবি না।
—-ভাই সাত দেশ লাগবে কেন? বাংলাদেশেই আছে… বলেই হাসলো ইশাল।
—-এই তুই কথা গিলছিস কেন? জলদি যা ফ্রেশ হয়ে নে। আমরা দেখেছিস কী পোশাকে আছি? তোকে নিয়ে তবেই যাবো। আর হ্যাঁ ও যতদিন আছে তুইও ওখানেই থাকবি। ইশালকে দেখিয়ে বলল ইবাদ।
—-ফ্রেশ হয়ে আসছি…
—-জলদি যা ব্রো… ইরফান কে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো। বিছানায় শুয়ে পড়লো ইশাল। ইবাদ তা দেখে ভ্রু কুঁচকালো।
—-আমার ঘুম আসছে….
—–রাতে চুরি করতে গেছিলি?
—-মোটেও না। তবে কাল রাতে আমার ঘুম হয় নি।
—চোখ দেখেই বুঝেছি। তা কেন হয় নি ঘুম..?
—-জানি না। কেমন অস্থিরতা কাজ কাজ করছিলো। কী থেকে কী হলো বুঝলাম না।
—-তোর বোঝার দরকার ও নেই। জার্নি করেছিস তাই। বলেই ইবাদ উঠে এসে ইরফানের বেড সাইড টেবিলে হাত দিলো। উপরের ড্রয়ার খুলতেই একটি প্যাকেট দেখে ইবাদ ভ্রু কুঁচকে নিল। প্যাকেট হাতে নিয়ে খুলতেই ইবাদের চোখ কপালে উঠে গেল। থরথর করে কাঁপতে থাকে ইবাদের হাত। ঠিক তখনই ইবাদের ফোন বেজে উঠলো। কাপা হাতে পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে কানে ধরলো।
ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো কান্নার শব্দ আর একরাশ ভয় জড়ানো কন্ঠস্বর।
—–ইবাদ, ইফতি কে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘুম থেকে ডাকতে গিয়ে দেখি রুমে নেই। ইবাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ইবাদ কে কানে ফোন নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশাল উঠে দাঁড়ালো।
—-কি হয়েছে? কার ফোন?
—-ইফতিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ইশাল। আমার ফিরতে হবে…
—-এই দাঁড়া আমিও যাবো। ওরা বেরিয়ে যেতে নিলেই ইরফান বেরিয়ে আসে।
—–কোথায় যাচ্ছিস তোরা?
ইরফানের ডাকে থামলো না ইবাদ। ইশাল দাঁড়িয়ে বলল,
—-ইফতিকে পাওয়া যাচ্ছে না।
—-হোয়াটট? হাত থেকে তোয়ালে পড়ে গেল ইরফানের। ইরফান নিজেও বেরিয়ে পড়ে তাদের সাথে। হাইস্পিডে গাড়ি চালিয়ে তিনজনই বাড়ি ফেরে।
বাড়িতে প্রবেশ করতেই নাহিদা বেগম ছুটে এসে ইবাদকে জড়িয়ে ধরে। কাদঁতে থাকেন তিনি.. ইবাদ নিজেকে শান্ত রেখে বলল,
—আন্টি আমি দেখছি.. কিচ্ছু হবে না ওর আমি খুঁজে দেখছি। সারা বাড়ি খুঁজে দেখেছেন? নার্সের দিকে তাকিয়ে বলে ইবাদ।
—-না স্যার।
—-পুরো বাড়ি সার্চ করুন ফার্স্ট…
—ওকে স্যার। নার্স দ্রুত ভেতরে চলে গেল।
—মারু ছাদে বা বাগানে দেখে আয় তোর আপা আছে নাকি?
—-আচ্ছা যাইতাছি… মারিয়াম চলে যেতেই। ইশাল বলে উঠে,
—-আমরা চল উপরে দেখি…
ইবাদ, ইরফান, ইশাল তিনজনই উপরে চলে গেল……
চলবে…?
|| গল্পে কি ইশাল ফায়াজ কে কেউ খেয়াল করে নি? আপনাদের সাড়া কমে যাচ্ছে কেন? কোনো অভিযোগ থাকলে অবশ্যই বলবেন..!||