উপন্যাসের শেষ পাতায় তুমি পর্ব -১৫+১৬+১৭

#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_15

কপি নিষিদ্ধ ❌

তিশা : আপনারা ঠিক সময় চলে আসবেন।

ওসমান ও ওমর : আচ্ছা।

তিশা আর আয়েশা অফিস থেকে সন্ধ্যা বাসায় চলে আসে,

রাত ১০টা,

আয়েশা ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসে ফেসবুকিং করছিল তখন তিশা ওর রুমে আসে,

তিশা একটা প্যাকেট আয়েশার দিকে বারিয়ে,
এটা পরে ১১ টায় ছাদে আসিস।

আয়েশা : এত রাতে ছাদে কেন যাবো?

তিশা : ছবি তুলবো তাই।

আয়েশা : তুই ছবি তোলার জন্য ১১ টায় ছাদে যাবি!

তিশা : হুম, রেডি হয়ে আসিস।

আয়েশা : তুই একটা পাগলি।

তিশা : তোরই তো।
তিশা ওর রুমে চলে গেল।

আয়েশা : কি দিয়েছে খুলে দেখিতো।
আয়েশা প্যাকেট টা খুলে দেখে একটা বেবি পিংক কালারের বার্বি গাউন, সাথে ডায়মন কাট ইয়ারিং, নেকলেস, ব্রেসলেট, সাথে একটা ক্রাউন ও আছে।

এগুলো দেখে আয়েশার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

রাত ১১ টায়,
আয়েশা গাউন টা পরে জুয়েলারি গুলো পরছিল তখন ফোনে এসএমএস আসে, আয়েশা ফোন হাতে নিয়ে দেখে তিশা এসএমএস দিয়েছে,লিখা ছিল,

রেডি হয়ে ছাদে আয়।

আয়েশা এসএমএস দেখে ১০ মিনিট পর ছাদের দিকে যায়,
ছাদের সামনে এসে দেখে দরজা লাগানো, আয়েশা দরজা খুলে ভেতরে যেয়ে যা দেখলো তাতে ওর চোখ কপালে উঠে গেল।

ছাদটা অনেক সুন্দর করে সাজানো,বেলুন, গোলাপ আরো অনেক কিছু দিয়ে ছাদের প্রতিটা কোনা কোনা সাজানো, সামনের টেবিলে কেকও রাখা।

কিন্তু আয়েশা কাউকে দেখতে পেলনা, ও আরেকটু সামনে আসা মাএই ওর ওপর ফুলের বর্ষন শুরু হয়।
ফুল পরা শেষ হতেই ওর কানে ভেসে আসে,

Phoolon ka taaron ka
Sab ka
Khena hai
Ek hajaro mein
Mari behna hai
Sari umar hume
Sang rehna hei
phoolon ka taaron ka
Sab ka
Khena hei.

আয়েশা মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল,
তিশা : কি জান পছন্দ হয়েছে, দেখ তোর মনের মতো করে সাজিয়েছি,তোর মনে আছে কিছুদিন আগে তুই আমাকে বলেছিলি তোর এই গাউন টা আর এই জুয়েলারি গুলো পছন্দ হয়েছিল।আমি কখনই তোর কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখিনি, এটা কি করে অপূর্ণ রাখি,আমি আগেও যেমন তোর সব ইচ্ছা পূরন করেছি,ভবিষ্যতেও তোর সব ইচ্ছা পুরন করবো।Love You,Happy Birthday Jan.

আয়েশা তিশাকে জড়িয়ে ধরে,
Thank you Jan, Thank you so much,
তোর মতো বেস্টু যেন সবার কপালে জোটে,তুই আমার জীবনে আল্লাহর দেওয়া সেরা গিফট।

ওসমান ও ওমর : Happy Birthday Too you Aysha.

আয়েশা : Thank you.

তিশা : চলো কেক কাটি।

ওরা কেক কাটলো, আয়েশা প্রথমে তিশাকে খাইয়ে দিল, তারপর ওসমান, তারপর ওমরকে খাইয়ে দিল।

তিশা আয়েশার হাতে একটা লোকেট সহ র্স্বণের চেইন দিল।লোকেটে A T লেখা।
তিশা : কেমন?

আয়েশা : অনেক সুন্দর।

তিশা : পরিয়ে দেই?

আয়েশা : হুম।

তিশা আয়েশার গলায় চেইন পেরিয়ে দিল।

ওসমান একটা ইয়া রিং এর বক্স আয়েশার দিকে বারিয়ে দিয়ে বলে,
পছন্দ হয়েছে?

আয়েশা : হুম অনেক সুন্দর।

আয়েশা পেছনে ঘুরে দেখে ওমর হাঁটু গেড়ে বসে হাতে রিং নিয়ে বলে উঠে,

মায়াবতী,
তোমার মায়ায় এমন ভাবে জড়িয়ে ফেলেছিলে না তো তোমায় ছারতে পারছিলাম না তো তোমায় বলতে পারছিলাম, কিন্তু এখন যে আর না বলে থাকতে পারছিনা,তোমার সাথে ধাক্কা লাগার পর তোমার প্রেমে পরে গেলাম কিভাবে যে তোমায় এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি,
ভালোবাসি মায়াবতী , নিজের থেকেও খুব বেশি ভালোবাসি, তোমাকে আমার রাজ্যের রানী করতে চাই,
হবে কি আমার রাজ্যের রানী?

আনন্দে আয়েশার চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো,আয়েশা তিশার দিকে তাকালে তিশা ওকে চোখের ইশারায় হ্যাঁ বলতে বলে,ওসমানের হাত ধরে ছাদ থেকে চলে যায়।

আয়েশাও হাঁটু গেড়ে বসে হাত বারিয়ে দেয়,

হুম, হবো তোমার রানী, আমিও যে তোমায় খুব ভালোবাসি, তুমি তো আমায় কয়েক মাস ধরে ভালোবাসো, কিন্তু আমি তো ৩ বছর ধরে তোমায় ভালোবাসি,বলোনা আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেনা।

ওমর আয়েশার আঙুলে রিং পরিয়ে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে,
কখনো ছেড়ে যাবোনা, সবসময় আমার মনের কোনে তোমায় আটকে রাখবো,Will you marry me?

আয়েশা ওকে জড়িয়ে ধরেই,
Yes.

আয়েশা প্রাপ্তির হাসি হাসলো।

তিশা ও ওসমান, তিশার রুমে বসে আছে,

তিশা : আয়েশা ৩ বছর ধরে ওমরকে ভালোবাসে।

ওসমান : ৩ বছর ধরে!

তিশা : হুম,আপনাদের যখন প্রথম বার টিভি তে দেখিয়েছিল সেদিন আয়েশা ওমরের ওপর ক্রাশ খেয়েছিল,এরপর আস্তে আস্তে ওকে ভালোবেসে ফেলে।

ওসমান : হুম ওমরও ঐদিন ধাক্কা খাওয়ার পর আয়েশার প্রেমে পরেছিলো।

তিশা : যাক ভালো হয়েছে ওরা একজন আরেকজনকে পেয়েছে।

ওসমান : হুম।

ওরা কথা বলছিল, কিছুক্ষন পর ওমর ও আয়েশা ওদের কাছে আসে, ওরা সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করে আড্ডা দেয়,অনেকক্ষণ পর ওসমান, ওমর বাসায় চলে যায়।

পরদিন দুপুরে,

ওসমান, ওমর, আয়েশা ও তিশা “ছায়া এতিমখানায়” আসে, ওরা সবসময়ের মতো বাচ্চাদের খেলনা,
জামাকাপড় দিয়েছে,দুপুরের খাবার একসাথে খেয়ে বাসায় চলে আসে।

৪ দিন পর,

আজ সবাই রিসোর্টে যাবে,হৃদিকা সাজ্জাতের বিয়ে একসাথে রিসোর্টে হবে।

ওরা সবাই রিসোর্টে পৌঁছে যার যার রুমে চলে যায়,
সবাই একসাথে লাঞ্চ করে রিসোর্ট টা ঘুরে ঘুরে দেখছে,রাতে সবাই একসাথে ডিনার করে যার যার রুমে যেয়ে শুয়ে পরে।

আজ হৃদিকার মেহেদী অনুষ্ঠান,

হৃদিকা দু হাতে, পায়ে মেহেদী দিয়ে স্টেজে বসে আছে, অনুষ্ঠানে আসা সব মেয়েদেরও মেহেদী দেওয়া শেষ।

আয়েশা ওমরের সাথে বসে আছে,আর ওমর ওর হাত উচু করে ধরে হাতে কিছুক্ষণ পর পর ফু দিচ্ছে,

আয়েশা : ফু দিতে হবে না, এমনিতেই মেহেদী শুকিয়ে যাবে।

ওমর : এই সাজে এসে তুমি কি আমাকে মা*রতে চাইছো।

আয়েশা : উহুম পাগল করতে চাইছি,তোমায় দেখেতো আমি পাগল হয়েছি এবার তোমাকেও পাগল করে, একসাথে পাবনায় যাবো।

ওমর : আইডিয়া টা তো জোস,আমি তো এভাবে ভেবে দেখিনি।

আয়েশা : হাহ্ বুঝতে হবে এটা আয়েশার ব্রেইন।

তিশা ঐখান দিয়ে যাচ্ছিল, আয়েশার কথাটা শুনে আয়েশার সামনে যেয়ে,

হাহ্ ভাইয়া বুঝতে হবে পুরাই প্লাস্টিক মার্কা।

ওমর তিশার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল।

আয়েশা : হা*রা*মি তুই যা এখান থেকে। ওই তুমি হাসছো কেন।

ওমরের হাসি বন্ধ হয়ে গেল।

তিশা : ভাইয়া আপনার কপালে দুঃখ আছে,কাকে যে জিএফ বানিয়েছেন তা হাড়েহাড়ে বুঝবেন,আহারে আপনার জন্য কষ্ট লাগছে।

আয়েশা : তুই যাবি এখান থেকে।

তিশা চলে গেল।

আয়েশা : কি হলো?

ওমর : ভাবছি আপুর কথা কি সত্যি হবে নাকি?

আয়েশা : কি বললে!

ওমর : আহা রেগে যাচ্ছো কেন।

আয়েশা : যাও তোমার সাথে কথাই বলবো না।
আয়েশা উঠে চলে গেল,

ওমর : যাহ বাবা এটা কি হল ম্যাডাম রেগে বোম্বাই মরিচ হয়ে গেল, হায়রে এখন আবার রাগ ভাঙাতে হবে।

ওমরও আয়েশার পেছন পেছন গেল।

তিশা দু’হাতে মেহেদী দিয়ে ওসমানকে খুঁজছে,

তিশা আজ সবুজ ও গোল্ডেনের কম্বিনেশনের লেহেঙ্গা পরেছে, তিশা মেকআপ আর্টিস্ট হওয়ার সুবাদে নিজের মেকওভার নিজেই করেছে,খু্ব সুন্দর করে একটা হেয়ারস্টাইল করেছে।

তিশা ওসমানকে খুঁজতে খুঁজতে কারো সাথে ধাক্কা খায়,

তিশা : সরি সরি,আমি আসলে,
ও সামনে তাকিয়ে দেখে নিহারিকা দাঁড়িয়ে আছে,

তিশা : আপু সরি আসলে ভুলে ধাক্কা লেগে গেছে।

নিহারিকা : ইটস ওকে।

নিহারিকা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।

তিশা : [মনে মনে]: কি হল ব্যাপার টা, নিহা না না ওমর ভাইয়া জেনো কি নামে ডেকেছিল..ওহ হ্যাঁ গরুর নেহারি, নেহারি আপু আমাকে কিছু না বলেই চলে গেল আবার হাসিও দিল! ডক্টর সাহেব সেদিন গলা চে*পে ধরায় হয়তো ভালো হয়ে গেছে,সে যাকগে আমার ডক্টর সাহেব আবার কই গেল খুঁজেই তো পাচ্ছি না।

তিশা শেষমেশ ওসমানকে পেল,দেখল ও ফোনে কারো সাথে কথা বলছে, তিশা ওর সামনে যেয়ে কিউট স্মাইল দিয়ে,

টুকি,

ওসমান : পরে কথা বলছি।
ওসমান কল কেটে ইশারায় পাশে বসতে বলে,
তিশাও বসে,

ওসমান : ও হে হৃদয়হরনী তোমার এই রুপ দেখে,আমি জ্ঞান হারাবো, ম*রেই যাবো, বাচাঁতে পারবে না কো।

তিশা : থাক থাক আপনি ম*রে গেলে আপনার বউ বাচ্চার কি হবে।

ওসমান : এখনো বউ খুঁজে পেলাম না আর তুমি বাচ্চার কথা বলছো।

তিশা : [মনে মনে] : বউ তো সামনেই বসে আছে, চোখ মনে হয় ছানি পরেছে তাই দেখতে পাচ্ছে না।

ওসমান : কি ভাবছো?

তিশা : ভাবছি না দেখছি।

ওসমান : কি দেখছো?

তিশা : আপনাকে।

ওসমান : আমাকে!

তিশা : দেখছি আর ভাবছি আমরা সবসময় শেইম শেইম কি ভাবে হই।

ওসমান আজ সবুজ কালারের পাঞ্জাবি পরেছে, পাঞ্জাবির বুকের দিকটায় গোল্ডেন সুতার কাজ করা।

ওসমান : ইয়ে তো খুদাহ জানে।

তিশা : আমার মেহেদী কেমন হয়েছে।

ওসমান : খুব সুন্দর।

তিশা : হাত ব্যাথা হয়ে গেল।

ওসমান : দাও আমি হাত উঁচু করে ধরি তাহলে হাত ব্যাথা করবে না।
ওসমান তিশার হাত হালকা উঁচু করে ধরলো।

তিশা : নিহারিকা আপু এসেছে।

ওসমান : হুম দেখেছি।

তিশা : আমার সাথে ধাক্কা লেগেছিল।

ওসমান : তোমাকে কিছু বলেছে?

তিশা : না, আমি সরি বলায় মুচকি হেসে চলে গেছে।

ওসমান : ওহ।

ওসমান : [মনে মনে]: নিহা নতুন কোনো প্ল্যান করছে না তো!

তিশার দিকে তাকিয়ে,
রিদান : দোস্ত মেয়ে টা তো খুবই সুন্দর।

আবির : হুম একদম পরীর মতো।

রিদান : একে তো পটাতে হয়।আর হে ও তোর ভাবি, তুই চোখ সরা।

আবির : আচ্ছা আচ্ছা তুই দেখ।

রিদান : সাজ্জাতকে জিগ্যেস করে দেখি মেয়ে টা কে।

আবির : হুম।

ওরা সাজ্জাতের কাছে যেয়ে দেখে সাজ্জাত হৃদিকার হাতের মেহেদী দেখছে আর কথা বলছে।

রিদান : একটু কথা বলা যাবে।

হৃদিকা : জ্বি,অবশ্যই।

রিদান, সাজ্জাতকে একটু দূরে নিয়ে, তিশাকে দেখিয়ে,

রিদান : দোস্ত ঐ মেয়ে টা কে রে?

সাজ্জাত : ওর দিকে ভুলেও তাকাইস না।

রিদান : কেন?

সাজ্জাত : ও ওসমানের জিএফ,আর ওসমানকে তো চিনিসই ও কেমন।

রিদান : উনি ওসমানের জিএফ!

সাজ্জাত : হ্যাঁ আমাদের ভাবি।

রিদান : হাল্কার উপর ছ্যাকা খেলাম রে।

অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে শেষ হল সবাই টায়ার্ড হওয়ায় যার যার রুমে চলে গেল।

পরদিন,

আজ হৃদিকার হলুদ সন্ধ্যা,

হৃদিকাকে হলুদ শাড়ি, গর্জিয়াস মেকআপে অনেক সুন্দর লাগছে, সাজ্জাত ও হৃদিকা স্টেজে বসে আছে।

তিশা আজ হলুদ কালারের লেহেঙ্গা পরেছে, লেহেঙ্গায় সিলভার কালার স্টোনের কাজ করা, তিশা হলুদের ডালা নিয়ে টেবিলের উপর রাখলো, আয়েশা সহ কয়েকটা মেয়ে বাকি ডালা নিয়ে টেবিলের উপর রাখে।

সবাই একে একে হৃদিকা,সাজ্জাতকে হলুদ দিল।

রুহী ওসমানের দিকে তাকিয়ে নওরিনকে বলে,

দোস্ত দেখ ডক্টর ওসমান কতো হ্যান্ডসাম।

নওরিন : হ্যাঁরে আমার ক্রাশবয়।

রুহী : বললেই হলো, তোর দুলাভাই লাগে, ওসমান শুধু আমার।

নওরিন : ইসস বললেই হলো নাকি ওসমান শুধু আমার।

লেগে গেল তুমুল ঝগড়া। ওদের ঝগড়া দেখে আয়েশা ওদের কাছে যায়,
কি হলো,ঝগড়া করছিস কেন?

রুহী : ওসমান শুধু আমার, ওকে বলে দে।

নওরিন : না ও শুধু আমার।

আয়েশা : তোদের কারো না উনি তিশার কারণ উনি তিশার বিএফ।

রুহী ও নওরিন : কি!

আয়েশা : জ্বি, ওনার আশা ছেড়ে দাও বালিকারা।

রুহী ও নওরিনের মন টা ভেঙে গেল।

তিশা হাতে হলুদ নিয়ে ওসমানকে খুঁজছে, শেষমেষ পেয়েও গেল,

ডক্টর সাহেব,

ওসমান তিশার গলা শুনে পিছনে ঘুরার সাথে সাথেই তিশা ওসমানের দু গালে হলুদ লাগিয়ে দেয়।

ওসমান : এটা কি হল!

তিশা মিষ্টি হাসি দিয়ে,
দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি আপনার বিয়ে হয়ে যাবে।

ওসমান বাকা হাসি দিয়ে তিশার হাত ধরে ঘুরিয়ে, দেয়ালের উপর নিজের দু হাত রেখে তিশাকে বন্ধি করে ফেললো,
ওসমান তিশার গালের সাথে গাল লাগিয়ে, নিজের গালের হলুদ তিশার গালেও লাগিয়ে দিল।

ওসমান : এবার তোমারও তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাবে,
বলে চোখ টিপ দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।

তিশা তো থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সব এতো দ্রুত হওয়াতে ও সোক্ড।

হলুদ দেয়া শেষ,

তিশা, আয়েশা ও হৃদিকার কাজিনরা, কলিগরা হেটে হেটে সামনে আসলো, ওরা “Sabki Baaratein Aayi” গান টায় নাচলো।

ওসমান, ওমর ও সাজ্জাতের কাজিনরা “Mehndi laga ke rakhna” গান টায় নাচলো।

তিশা, ওসমান,আয়েশা, ওমর, সাজ্জাতের কাজিনরা, হৃদিকার কাজিনরা সবাই মিলে “বিয়ানসাব” গান টায় নাচলো।

সবাই নাচলেও নিহারিকা দুরের দাঁড়িয়ে ওসমান, তিশাকে দেখছে,ওর যে খুব কষ্ট হচ্ছে ওদের একসাথে দেখে।

আরও নাচ গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হল।

পরদিন সকালে,

তিশা ঘুম থেকে উঠে, ফোন হাতে নিয়ে দেখে,
#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_16

কপি নিষিদ্ধ ❌

তিশা ঘুম থেকে উঠে,ফোন হাতে নিয়ে দেখে, ওসমান ওকে ১০ টা কল দিয়েছে, ফোন সাইলেন্ট থাকায় ও শুনিতে পাইনি,ও ওসমানকে কল ব্যাক করে,ওসমান কল রিসিভ করে,

ওসমান : ঘুমাচ্ছিলে?

তিশা : হুম, সরি ফোন সাইলেন্ট করা ছিল তাই শুনতে পারিনি।

ওসমান : আচ্ছা, শুনো একটু পর তাহসিনের কাছে একটা শাড়ি পাঠাবো আজ সেটা পরবে।

তিশা : শাড়ির কি দরকার ছিল।

ওসমান : ছিল তাই দিয়েছ,পরবে কিন্তু।

তিশা : আচ্ছা।

ওসমান : বায়।

তিশা : বায়।

[তাহসিন সাজ্জাতের চাচাতো ভাই,ওর বয়স আট বছর,ছেলেটা খুবই চঞ্চল।]

তিশা ফ্রেস হয়ে এসে দেখে দরজায় কেউ নক করছে,দরজা খুলে দেখে তাহসিন দাঁড়িয়ে আছে।
তিশার দিকে একটা প্যাকেট বারিয়ে দিয়ে,

তাহসিন : বার্বি ডল আপু, ওসমান ভাইয়া এটা তোমাকে দিতে বলেছে।

তিশা প্যাকেট টা নিয়ে,
আচ্ছা তুমি আমাকে বার্বি ডল আপু বলো কেন?

তাহসিন : তুমি খুব সুন্দর একদম বার্বি ডলের মতো।

তিশা তাহসিন কথায় মুচকি হেসে তাহসিনের চুলো গুলো কিছুটা এলোমেলো করে দিলো।
তাহসিন চলে গেল।

তিশা প্যাকেট টা খুলে দেখে সাদা স্টোনের কাজ করা একটা সাদা শাড়ি, শাড়ি টা খুব সুন্দর তিশার পছন্দ হয়েছে।

তিশা রেডি হয়েনিল, যখন ও ইয়া রিং পরিছিলো তখন দরজার বাহির থেকে ওসমান বলে,
আসবো?

তিশা : হুম আসুন।

ওসমান ভিতরে প্রবেশ করে দেখে তিশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইয়া রিং পরার চেষ্টা করছে,ও লক্ষ্য করলো তিশা ইয়া রিং টা পরতে পারছে না,

ওসমান : আমি পরিয়ে দিব?

তিশা : হুম,পরতেই পারছিনা।

ওসমান ইয়া রিং পরিয়ে দিল।

তিশা : কেমন লাগছে?

ওসমান : আমার হৃদয় হরন করার জন্য এই সাজই যথেষ্ট।

তিশা ওসমানের কথায় কিছুটা লজ্জা পেল।

ওসমান : চলো নিচে যাওয়া যাক।

তিশা : হুম।

ওসমান, তিশা বাহিরে চলে আসে।

ওমর : মায়াবতী চোখ বন্ধ করো।

আয়েশা চোখ বন্ধ করলো,ওমর ওর হাতে একটা ব্রেসলেট পরিয়ে দিল, ব্রেসলেটের ওপর খুব সুন্দর করে O এর মাঝে A লিখা, ব্রেসলেট টা খুব সুন্দর।

ওমর : এবার চোখ খুলো।

আয়েশা চোখ খুলে হাতের দিকে তাকাল,

ওমর : কেমন?

আয়েশা : অসাধারণ।

ওমর : এটা কখনো তোমার হাত থেকে খুলবেনা।

আয়েশা : আচ্ছা।

সব রীতিনীতি মেনে ভালো ভাবেই হৃদিকা, সাজ্জাতের বিয়ে টা সম্পূর্ণ হল।

রাতে হৃদিকাকে বাসর ঘরে নিয়ে আসে,সবাই নানারকম কথা বলে হৃদিকাকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে, কিছুক্ষন পর সাজ্জাত আসে, সবাই ওকে চেপে ধরেছে টাকা দেওয়ার জন্য, শেষমেষ সাজ্জাতকে টাকা দিয়ে রুমে যেতে হয়।

ওরা সবাই বাহিরে চলে আসে,
সবাই গোল হয়ে বসে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলে,অনেকক্ষণপর ওরা যার যার রুমে চলে গেল।

আজ বউভাত,

নিহারিকা রুমে বসে কাঁদছে,
কেন ওসমান আমার ভালোবাসা টা বুঝলেনা, আমার ভালোবাসায় কি কমতি ছিল, আমার যে খুব কষ্ট হয় ওদের একসাথে দেখলে,
এরকম আরো নানারকম কথা বলছে আর অঝোরে কাঁদছে।

ওসমান তিশার ছবি তুলে দিচ্ছে,

আজ তিশা নীল কালারের শাড়ী পরেছে, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া।ওসমান নীল কালারের পাঞ্জাবি পরেছে।

তিশা : ছবি গুলো খুব সুন্দর উঠেছে,থ্যাঙ্ক ইউ।

ওসমান : ওয়েলকাম ম্যাম।

তিশা : একটা জিনিস ভালো হয়েছে পার্মানেন্ট দুটো ফটোগ্রাফার পেয়েছি।

ওসমান মুচকি হাসলো।

আয়েশা : কুঁচি টা একটু ঠিক করে দাও না।

ওমর নিচে বসে কুঁচি গুলো ঠিক করে দিল।

আয়েশা কফি কালার শাড়ী পরেছে, ওমর কফি কালার পাঞ্জাবি পরেছে।

সাজ্জাত, হৃদিকা,তিশা, ওসমান, ওমর, আয়েশা, সাথে আরো কিছু বন্ধুরা একসাথে বসে খাবার খাচ্ছে।
খাবার খেতে খেতে তিশার কাশি উঠে গেল,ওসমান পানি খেতে বলে, তিশা পানি পান করে,কিন্তু কাশি কমছে না তিশা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়,
ওসমান,ওমর, আয়েশাও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়,তিশার কাশি কিছুতেই কমছেনা কাশতে কাশতে মুখ থেকে র*ক্ত বের হচ্ছে, তিশা পরে যেতে নিলে, ওসমান ধরে ফেলে, সবাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়,

তিশা : আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ডক্টর সাহেব।

ওসমান : তিশা কি হলো তোমার, ওমর এম্বুলেন্স কল কর।

ওমর এম্বুলেন্স কল করে।

তিশার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে,
তিশা ওসমানের গালে হাত রেখে,

খু্ব কষ্ট হচ্ছে, আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।

ওসমান : প্লিজ চোখ বন্ধ করো না, চোখ খুলে রাখতে চেষ্টা করো, তোমার কিছু হবে না।

তিশা আর চোখ খুলে রাখতে পারলো না,

তিশাকে চোখ বন্ধ করতে দেখে কেউ একজন বাঁকা হাসি দিল।

ওসমান তিশাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসালো, ও এম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করতে পারবেনা, ওসমান ড্রাইভিং সিটে বসে, ওর পাশে ওমর, আর পেছনের সিটে আয়েশা তিশাকে ধরে বসে আছে, আয়েশা কান্না করছে,

গাড়ি স্টাট দেওয়া হল, ওসমান ফুল স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে, ৩০ মিনিটের রাস্তা ১৫ মিনিটে শেষ করলো,ওরা হসপিটালে পৌঁছাল, ওসমান তিশাকে কোলে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল,

তিশাকে ওটিতে নেওয়া হল, ওর ট্রিটমেন্ট শুরু করা হল,

১ ঘন্টা পর ডক্টর বের হল,

ডক্টর : উনার খাবারে বিষ মেশানো ছিল।

ওসমান : বিষ!

ডক্টর : হুম, খুব মারাত্মক বিষ ছিল আরেকটু দেরি করে আসলে ওনাকে বাঁচানো যেত না।

ওসমান : ও এখন কেমন আছে?

ডক্টর : পেশেন্ট এখন বিপদ মুক্ত, ওনাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে,একটু পর কেবিনে সিফট করা হবে।

তিশাকে কেবিনে সিফট করা হল,ওরা তিশার কাছে গেল, ওসমান তিশার হাত ধরে বসে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।

ওমর : আপুকে বিষ দিল কে?

আয়েশা : আমার মনে হয় এই কাজ নিহারিকা আপু করেছে।

ওসমান : ওমর তোরা এখানে থাক আমি আসছি।

ওমর : কোথায় যাচ্ছো?

ওসমান আসছি বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।

ওসমান রিসোর্টে এসে সোজা নিহারিকার রুমে দিকে গেল রুমের সামনে এসে দরজায় নক করে, নিহারিকা এসে দরজা খুলে,

নিহারিকা : তুমি!

ওসমান ভেতর প্রবেশ করে,
তিশার খাবারে বিষ মিশিয়েছো কেন?

নিহারিকা : আমি ওর খাবারে বিষ মিশাইনি।

ওসমান : নিহা আমার মাথায় এমনিতেই রাগ চড়ে আছে,তুমি সত্যি করে বলো খাবারে বিষ মিশিয়েছো।

নিহারিকা : তুমি বিশ্বাস করো আমি ওর খাবারে বিষ মিশাইনি, তোমার কসম আমি বিষ মিশাইনি।

ওসমান : ঠিক আছে, আমি বিশ্বাস করলাম,কিন্তু আমি যদি জানতে পারি কাজটা তুমি করছো তাহলে তোমার এমন অবস্থা করবো যা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা।

ওসমান ওর রুম থেকে বেরিয়ে গেল,

ওসমান আবার হসপিটালে চলে আসে,

তিশার কেবিনে এসে,

ওসমান : ওমর তুই আয়েশাকে নিয়ে রিসোর্টে চলে যা।

ওমর ও আয়েশা : আমরাও থাকি।

ওসমান : না তোমরা চলে যাও।

ওমর,আয়েশা চলে গেল, ওসমান তিশার বেডের পাশে রাখা চেয়ারে বসে, একহাত দিয়ে তিশার ডান হাত ধরে, আরেক হাত দিয়ে তিশার চুলে হাত বুলায়,তিশা ঘুমিয়ে আছে,ঘুম নেই ওসমানের চোখে,

ওসমান ভাবছে,
নিহারিকা না করলে কাজটা করলো কে? কাল যেয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে হবে, যে আমার জানপাখিকে মা*রতে চেয়েছে তাকে আমি কঠিন শাস্তি দিব, ও মৃ*ত্যু জন্য আহাজারি করবে কিন্তু ও ম*রতেও পারবেনা,সারাটাজীবন পচতাতে হবে।

সারাটা রাত ওসমান দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি।

ভোর ৫ টায়,

তিশা আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করলো,ও চোখ ঘুরিয়ে দেখলো ওসমান ওর হাত বুকে জড়িয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে।

তিশা ওসমানের দিকে তাকিয়ে আছে ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে,

ওসমানের ঘুম ভেঙে যায় ও দেখে তিশা ওর দিকে তাকিয়ে আছে আর তিশার চোখ দিয়ে পানি পরছে,
তিশার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে,

ওসমান : তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে, বলো আমাকে।

তিশা এবার শব্দ করে কাঁদছে,

ওসমান : কাঁদছ কেন?

তিশা : আমি ভাবিনি আপনাকে আবার দেখতে পাবো, আমার মনে হয়েছিল এই বুঝি আপনাকে হারিয়ে ফেললাম, আমি আপনাকে হারাতে চাই না।

ওসমান তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে,
আর কান্না করোনা।

তিশার কান্না কিছুটা কমলে ওসমান ওকে পানি খাইয়ে দিল।

তিশা : আমার কি হয়েছিল, এখনও গলা জ্ব*লছে আর ব্যাথা করছে।

ওসমান : তোমার খাবারে কেউ বিষ মিশিয়ে ছিল।

তিশা : আমাকে কে মা*রতে চায়।

ওসমান : জানি না।

তিশা : নিহারিকা আপু নয়তো?

ওসমান : জানি না। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি জেনে যাবো।

তিশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

ওসমান : তুমি ঘুমাও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,

শরীর দূর্বল থাকায় তিশা ঘুমিয়ে পরে,ওর ঘুম ভাঙে ৮ টায়, উঠে দেখে আয়েশা চেয়ারে বসে আছে।

আয়েশা : তোর জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছি।

তিশা : উনি কোথায়?

আয়েশা : এই উনি টা কে।
ঠাট্টার সুরে কথা টা বলে।

তিশা : আপনি লাগে জানেন না।

আয়েশা : বিল পেমেন্ট করতে গিয়েছে।

তিশা : ওহ।

তিশা ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় বসে, ওসমান কেবিনে প্রবেশ করে,

তিশা : ডিসচার্জ দিবে কখন?

ওসমান : ৩ ঘন্টা পর।

দরজায় কেউ নক করে,

ওসমান : আসো।

হৃদিকা, সাজ্জাত কেবিনে প্রবেশ করে,

সাজ্জাত : এখন কেমন আছেন শালি সাহেবা।

তিশা : এইতো ভালো, সরি আমার জন্য আপনাদের অনুষ্ঠান টা মাটি হয়ে গেল।

হৃদিকা : কি বলছো তিশা, তুমি যে সুস্থ আছো এটাই আমাদের কাছে অনেক।

তিশা মুচকি হাসলো।

ওমর আয়েশাও কেবিনে আসে।

৩ ঘন্টা পর তিশাকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়,ওসমান, ওমর ওদের বাসায় দিয়ে এসে, ওরা আবার রিসোর্টে যায়,

ওরা সিসিটিভি ফুটেজ ওন করে দেখে,
#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_17

কপি নিষিদ্ধ ❌

ওরা সিসিটিভি ফুটেজ অন করে দেখে,

কালো হুডি পরা এক লোক একটা ওয়েটারকে এক বান্ডিল টাকা আর একটা ছোট বোতল দিল।

ওসমান : এই ওয়েটারকে ডাকুন।

ম্যানেজার : উনি আজ সকালে উনার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন।

ওসমান : উনার বাড়ির এ্যাড্রেস দিন।

ম্যানেজার লোকটার বাড়ির এ্যাড্রেস দিল।

ওসমান ওমর গাড়িতে বসল,

ওমর : ভাইয়া জায়গায় টা তো বেশি দূর না।

ওসমান : হুম কাল সকালে যাবো।

ওমর : হুম।

ওরা ওদের বাসায় পৌঁছাল।

ওসমান : কি করছো,

তিশা : মুভি দেখছিলাম।

ওসমান : ওহ।

তিশা : ডিনার করেছেন?

ওসমান : একটু পর খাবো, তুমি খেয়েছো।

তিশা : হুম মাএই।

ওরা আরও কিছুক্ষন কথা বলে।

ওমর : হ্যালো মায়াবতী।

আয়েশা : হুম বলো।

ওমর : কি করো?

আয়েশা : তোমার কথা ভাবছি।

ওমর : কি ভাবছো?

আয়েশা : কিভাবে ফিউচারে তোমাকে সায়েস্তা করবো।

ওমর : এগুলো ভাবতে নেই,হবু স্বামীকে সায়েস্তা করতে চাইলে পাপ হবে পাপ।

আয়েশা : হোক তোমার জীবন তো আমি ধনেপাতা করে দিব।

ওমর : তেজপাতার দিন শেষ?

আয়েশা : ধনেপাতার বাংলাদেশ।

ওরা দু’জন হেসে দিল।

পরদিন সকালে, ওমর ও ওসমান সাথে ৪ জন বর্ডিগার্ড ম্যানেজারের দেওয়া এ্যাড্রেসে গেল,
ওরা ৬ জন মিলে ঐ লোকটাকে খুঁজছে,অবশেষে তার বাড়ি খুঁজে পেল।

ওসমান : আকরাম শেখ বাসায় আছেন।

আকরামের স্ত্রী সীমা : জ্বি আছে।

ওসমান : ওকে বলেন ওর বন্ধুরা এসেছে।

সীমা : জ্বি।

সীমা আকরামকে বলে ওর বন্ধুরা এসেছে, আকরামের ব্রু কুচকায় কারণ ওর কোনো বন্ধুই তো ওর বাসা চিনে না, কে এসেছে দেখার জন্য ঘর থেকে বের হয়, ওসমানকে দেখে আকরাম পালাতে নিলে ওসমান ওর কলার ধরে আটকে দেয়।

ওসমান : তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে গাড়িতে উঠে বস।

আকরাম কিছু বলতে নিবে তার আগেই ওসমান বলে উঠে,
আমি চাইছিনা তোর স্ত্রী সামনে তোকে কিছু বলতে তাই চুপচাপ গাড়িতে উঠে বস।

আকরাম আর কি করবে ওসমান যেভাবে ওকে চেপে ধরেছে না যেয়ে তো উপায় নেই আর ও চায় না ওর স্ত্রীর সামনে অপমানিত হতে।

ওসমান : ভাবি আজ আসি।

সীমা : বসেন কিছু খেয়ে যান।

ওসমান : আরেক দিন আসবো ভাবি।

ওরা আকরামকে নিয়ে ঢাকা ব্যাক করলো,আকরামকে ওসমানের বাসায় নিয়ে আসলো,

ওসমান : চেয়ারে বস।

আকরাম ওসমানের পা ধরে,
আমাকে মাফ করে দেন ভাই,আমি টাকার লোভে পরে কাজটা করেছি,আমাকে মাফ করে দেন ভাই।

ওসমান : কাজটা কে করতে বলেছে।

আকরাম : ভাই আমি তাকে চিনি না,আমি তার মুখও দেখিনি,সে হুডি আর মাক্স পরা ছিল।

ওসমান : তার নাম্বার আছে?

আকরাম : হে ভাই উনি কল করে আমাকে ঢাকা থাকতে মানা করেছেন গ্রামের বাড়িতে চলে আসতে বলেছেন।

ওসমান : নাম্বার টা দে।

আকরাম ওর ফোন বের করে ওসমানকে দিল।

আকরাম : ভাই এই নাম্বার টা।

ওসমান : স্পর্শ যতো দ্রুত সম্ভব ওকে খুঁজে বের করো।

স্পর্শ : ওকে বস।

ওমর : ভাইয়া পুলিশ চলে এসেছে।

ওসমান : ওকে নিয়ে যেতে বল।

আকরাম : ভাই আমাকে মাফ করে দেন, আমি আর কখনো এরকম কাজ করবোনা, আমাকে পুলিশে দিয়েন না, আমাকে মাফ করে দেন।

ওসমান : আমি চাইলে তোকে জানে মে*রে ফেলতে পারি, কিন্তু আমি চাই না তোর স্ত্রী বিধবা হোক তাই তোকে পুলিশে দিচ্ছি।

পুলিশ আকরামকে নিয়ে গেল।

ওসমান : হ্যালো।

তিশা : হুম বলেন।

ওসমান : অফিসে?

তিশা : হুম,আমি লাঞ্চ টাইমে কল দেই।

ওসমান : আচ্ছা।

ওসমান কল কেটে দিল।

তিশা কাজ করছিল তখন ওর মনে হল কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে, তিশা পিছনে ফিরে দেখে রিক দাঁড়িয়ে আছে।

তিশা: [মনে মনে]: রিক এখানে কেন?

রিক এমডির রুমে চলে গেল,

তিশা : তুই কি জানিস রিক এখানে কেন?

আয়েশা : হুম, এমডির সাথে কথা বলতে এসেছে।

তিশা : ওহ। হৃদিকাকে মিস করছি।

আয়েশা : হুম আমিও।

লাঞ্চ টাইমে,

তিশা : হ্যালো।

ওসমান : হুম বলো।

তিশা : আপনি কোথায়?

ওসমান : হসপিটালে।

তিশা : ফ্রি আছেন?

ওসমান : কিছুটা, কিছু কি বলবে?

তিশা : অফিসের পাশে রেস্টুরেন্ট টায় আসতে পারবেন।

ওসমান : আসছি।

ওসমান রেস্টুরেন্টে এসে দেখে তিশা আগে থেকেই বসে আছে,

ওসমান : হুম বলো কি বলবে।

তিশা : কি বলবো?

ওসমান : কেন ডেকেছো?

তিশা আনমনে বলে উঠে,
আপনাকে দেখবো তাই,

ওসমান : কিছু বললে!

তিশা : বলেছি কথা ছাড়া কি দেখা করা যায় না।

ওসমান : কেন যাবে না।

তিশা : সেটাই আমি এমনই ডেকেছি।
তিশা : [মনে মনে]: রিকের কথা টা কি বলবো?

ওসমান : লাঞ্চ অর্ডার দিয়েছি, তুমি কি ভাবছো?

তিশা : আব, রিক এসেছিল আজ।

ওসমান : কিছু বলেছে?

তিশা : না, এমডির সাথে দেখা করতে এসেছিল।

ওসমান : ওহ।

তিশা ওসমানের দিকে তাকিয়ে বলে,
রাতে ঘুম হয়নি?

ওসমান : হয়েছে তো।

তিশা : মিথ্যা বলছেন কেন, আপনার চোখ মুখই বলে দিচ্ছে ঘুমিয়েছেন কি না,কেন এতো টেনশন করেন বলেন তো।

ওসমান : কোনো টেনশন করছিনা, নাও খাবার চলে এসেছে।

তিশা : আপনি কথা ঘুরাতে এক্সপার্ট।

ওসমান, তিশা খাবার খেয়ে যার যার কাজে চলে গেল।

তিশা সন্ধ্যা বাসায় চলে আসে,

তিশা বসে বসে ভাবছে,
আল্লাহ আমাকে ৩ বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছে, আগে তো ম*রতে ভয় হতোনা,ভাবতাম আমার তো কেউ নেই, বাচঁতেও ইচ্ছা করতোনা , কিন্তু এখন তো ভয় হয় আমি চাইনা এতো তাড়াতাড়ি মৃ*ত্যু বরণ করতে আমি ডক্টর সাহেবের সাথে অনেক বছর বাঁচতে চাই,তাকে ছেড়ে যেতে চাই না।

এশার আযান শুনতে পেয়ে উঠে নামায পড়ে নেয়,
মোনাজাতে,
আল্লাহ জানি না আমার ভাগ্যে কে আছে, আমি জানি না ডক্টর সাহেবকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবো কিনা, আমি জানি তুমি যা করো বান্দার ভালোর জন্যই করো, ডক্টর সাহেবকে যদি আমার ভাগ্যে না রাখাে তাহলে একজন ভালো মানুষকে তার জীবনসঙ্গী করো,তাকে সবসময় সুখে শান্তিতে রেখো,আমিন।

ওসমান ওর রুমে বই পড়ছিল,তখন ওর ফোন টা বেজে উঠে, ওসমান স্কিনে দিকে তাকিয়ে দেখে স্পর্শ দেখা, ওসমান কল রিসিভ করে,

ওসমান : বলো স্পর্শ।

স্পর্শ : স্যার ঐ লোকটাকে পেয়েছি।
ওসমান স্পর্শের কথা শুনে বাঁকা হাসি দিল।

ওসমান : আমার ফ্রামহাউজে নিয়ে আসো।

স্পর্শ : ওকে স্যার।

ওসমান ও ওমর ওদের ফ্রামহাউজে গেল।

ওসমান ও ওমর বাসার ভেতর প্রবেশ করে দেখে সেই লোক টাকে অজ্ঞান অবস্থায় চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে, পাশে স্পর্শ দাঁড়িয়ে আছে।

চেয়ারে মুখোমুখি সোফাটায় ওসমান ও ওমর বসে।

ওসমান : বরফ ভর্তি এক বালতি পানি নিয়ে আসো।

গার্ডদের মধ্যে একজন বরফ ভর্তি এক বালতি পানি নিয়ে আসে।

ওসমান : ওমর ওর মাথায় পানি টা ঢালো।

ওমর তাই করলো, পানি ঢালাতে লোকটা ধড়ফড়িয়ে উঠে।

ওসমান : ওয়েলকাম মি রিক।

রিক ওসমানকে দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।

ওসমান : এটাই তো ভাবছিস আমি কিভাবে বুঝলাম তুই সেই ব্যাক্তি যে আমার ভালোবাসাকে মা*রতে চেয়েছিলো।

রিক ওর কথা শুনে অবাক হল,আসলেই তো ও যেভাবে প্ল্যান করে কাজটা করেছিল,ওসমানের তো বুঝার কথা না।

ওসমান : তোকে ক্লিয়ার করে বলি,তুই সবকিছুই ঠিক মতো করেছিস, তুই কি মনে করেছিলি নাম্বার অফ করলে আমি তোকে ধরতে পারবোনা, অবশ্য ঠিকি ভেবেছিলি তোকে আমরা ধরতে পারতাম না যদি তোর এই হাতের ট্যাটু টা না থাকতো,সিসিটিভি ফুটেজি তোর হাতের ট্যাটু টা ধরা পরেছিল যখন তুই আকরামকে টাকা দিয়েছিলি,সব ভালো মতো করলেও নিজের হাতের ট্যাটু টা লুকাতে পারলিনা। কথায় আছে চোর চুরি করলে কোনো না কোনো ক্লু রেখে যায়,তুইও সেই কাজ টাই করেছিলি, আমি ট্যাটু টা দেখেই তোকে সন্দেহের তালিকায় ফেলি,আর তুইও ধরা পরে গেলি। এবার বল কেন তিশাকে মা*রতে চেয়েছিস।

রিক রাগে ফুঁসছে,

ওসমান জোরে হুঙ্কার দিয়ে,
বল কেন তিশাকে মা*রতে চেয়েছিস।

রিক : ও আমার না হলে ওকে আমি কারো হতে দিব না।

ওসমান : তার জন্য মে*রে ফেলতে চাইছিলে।

রিক : হ্যাঁ ও কেবল আমার শুধু আমি ওকে ভালোবাসবো,আমি ওকে চাই আমি ওকে না পেলে কাউকে পেতেও দিব না মে*রে ফেলবো।

ওসমান উঠে রিকের কাছে যায়,পকেট থেকে একটা ইনজেকশন বের করে, ইনজেকশনের দিকে তাকিয়ে ওসমান বলে,
এর কাজ কি জানিস,আমি এই ইনজেকশন পুষ করার ১০ সেকেন্ড পর এটা তোর শরীরকে সম্পূর্ণভাবে অবশ করে দিবে না তো তুই কথা বলতে না হাটতে পারবি নাতো দাঁড়াতে পারবি, তোকে আমি জানে মা*রবো না,তুই তিলে তিলে ম*র*বি, তুই মৃ*ত্যু*র জন্য আহাজারি করবি কিন্তু ম*র*তেও পারবি না।

ওসমান রিকের হাতে ইনজেকশন পুষ করে দিল,রিকের হাত পা বাধা থাকায় ও নিজেকে বাঁচাতে পারলোনা ১০ সেকেন্ড পর রিকের শরীর অকেজো হতে শুরু করলো।

ওসমান রিকের দিকে তাকিয়ে,
আমি সবার মতো মাথা গরম করে কাজ করিনা, আমি হলাম ঠান্ডা মাথার খু**নি, আমি মা*রা*র জন্য ছু*ড়ি ব*ন্দু*ক ব্যবহার করি না, আমি জানে মা*রি*না তিলে তিলে মা*রি, আমি কখন কাকে কিভাবে মা*র*বো তা কেও বলতেও পারবেনা।

রিক ওসমানের সব কথা শুনল কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া করতে পারল না।

ওসমান স্পর্শের দিকে তাকিয়ে,
ওকে ওর বাসার সামনে ফেলে আসো।

ওসমান ও ওমর ফ্রামহাউজ থেকে বেরিয়ে ওদের বাসায় চলে যায়।

পরদিন সন্ধ্যায়,

ওসমান ওটি থেকে বের হয়ে তিশাকে কল করে,

ওসমান : অফিস থেকে বের হয়েছো?

তিশা : ১০ মিনিট পর বের হবো।

ওসমান : ওকে আমি আসছি।

তিশা : আচ্ছা।

ওসমান তিশার অফিসে দিকে যেতে লাগল,

তিশা অফিস থেকে বের হয়ে দেখে ওসমান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোন চালাচ্ছে, তিশা ওসমানের কাছে যায়।

তিশা : টুকি।

ওসমান মুচকি হাসলো।

তিশা : খুব টায়ার্ড তাইনা,

ওসমান : হুম।

তিশা : তাহলে এখানে আসলেন কেন, বাসায় চলে যান।

ওসমান : এখন যাওয়া যাবেনা, ৯ টায় একটা অপারেশন আছে।

তিশা : তো মশাই আপনি এখানে কেন এসেছেন।

ওসমান : তোমাকে দেখতে,

তিশা : ওহ, দেখা শেষ?

ওসমান : সারাজীবন দেখলেও দেখা শেষ হবেনা।

তিশা : ফিল্মি ডায়লগ।

ওসমান : তুমি ডায়লগ মনে আর যাই মনে করো তাতে আমার কি।

তিশা : জানতে পেরেছেন কে আমাকে মা*রতে চেয়েছিলো।

ওসমান : হুম।

তিশা : কে সে?

ওসমান : রিক।

তিশা : রিক!

ওসমান : হুম, ও তোমার চায় ও তোমাকে না পেলে কাউকে পেতেও দিবে না তাই মা*রতে চেয়েছিলো, আমি ওকে পুলিশে দিয়েছি।
ওসমান : [মনে মনে]: তোমাকে সত্যি টা বলা যাবে না।

তিশা ওসমানের কথা শুনে কিছু বললো না।

ওসমান : চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।

তিশা : হুম।

ওসমান, তিশাকে বাসায় দিয়ে এসে হসপিটালে চলে গেল।

তিশা আয়েশাকে ওসমানের বলা কথা গুলো বললো,

আয়েশা : ভালো হয়েছে রিকের বাচ্চা এবার জেলে বসে বসে মশা মারুক।

তিশা আয়েশার কথার উত্তরে কিছু বললোনা।

এভাবে ১০ দিন কেটে গেল,

অবান্তিকা বসে চা খাচ্ছিলেন, তখন কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পান।

অবান্তিকা : নিলু দেখতো কে এসেছে।

নিলু দরজা খুলে দেখে,

চলবে কি?

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here