#ঋণশোধ
#পর্ব৩
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা
ওটাই ছিলো আবেগের সঙ্গে অথৈয়ের প্রথম দেখা।
এরপর এক মাসের মাথায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। অথৈয়ের এখনি বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো না, ও চেয়েছিলো অনার্স কম্পিট করে চাকরি করবে। তাই যত বিয়ের প্রস্তাব আসতো সবকটাই নাকোচ করে দিতো। আবেগের মা যখন প্রস্তাব নিয়ে আসেন তখনও একই কাজ করে। কিন্তু আবেগ নাছোড়বান্দা ছিলো। যেনো অথৈকে ছাড়া তার পৃথিবীটাই অচল। প্রথমে অথৈয়ের সঙ্গে কথা বললো কিন্তু দেখলো অথৈয়ের জবাব সেই “না” ই.. তখন ফ্যামিলির সবাইকে হাত করলো।
প্রথম টার্গেট করলো অথৈয়ের দুলাভাইকে। যেহেতু সে আবেগের কাজিন তাই তাকে বাগে আনতে কষ্ট হয়নি। সেই বুদ্ধি দিয়েছিলো তার শশুরকে হাত করার। আর বলেছিলো বউ শাশুড়ীকে তিনি ই ম্যানেজ করতে পারবেন। আবেগও সেটাই করলো শশুড়কে হাত করলো।
অথৈকেও আরও কয়েকবার বলেছিলো কিন্তু ওকে বাগে আনতে পারেনি। আর ওকে বাগে না আনতে পারলেও কোনো লস হয়নি। ওর যেটা দরকার ছিল সেটা তো পেয়েই গিয়েছে।
°°°
সেদিনটা অথৈয়ের মনে করতে করতেই কেটে গেল, দুপুরের খাবার খেতেও অনন্যা ডেকেছে তারপর গিয়ে খেয়েছে। বিকেলে শাশুড়ী মা তার রুমে ডাকলেন। বাড়িতে শুধুমাত্র এই চারজন ই রয়েছে। বউভাতের অনুষ্ঠান বাহিরে করা হবে বলে বাসা ফাঁকা। অথৈ শাশুড়ী রুমে গেলেই তিনি ওকে পাশে বসতে বললেন। তিনি ভেবেছেন ছেলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিয়ে করে থাকুক না কেনো। বিয়েটা যখন হয়ে গেছে তখন সেটাকে ভালো ভাবে ই রাখুক। তিনি বারবার বারণ করেছিলেন এই মেয়েকে বিয়ে করিস না কিন্তু ছেলে তার কথা শুনেনি। এখন যখন করেই ফেলেছে তখন আর পিছনের কথা ভেবে লাভ নেই। তাই অথৈকে তিনি ডেকেছেন। অথৈ যখন জিজ্ঞেস করলো কি জন্য ডেকেছে তখন তিনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন,
“শোনো বউমা, বিয়ে এমন একটা জিনিস যেটা শুধুমাত্র দুটো মানুষের এক হওয়া নয়। দুটো পরিবারও কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত। এটা একটা সাধারন কথা। কিন্তু কথাটার গভীরতা কিন্তু অনেক বেশি। এই যে ধরো তোমাদের মধ্যে যদি বন্ধুত্ব থাকতো তখন যদি তোমাদের মধ্যে ঝগড়া হতো তখন যদি তোমরা আলাদা হয়ে যেতে তাহলে কিন্তু সেটা দৃষ্টিকটু হতোনা। একটা কথা সব সময় মনে রাখবে প্রতিটা বিষয়ের ই ভালো খারাপ দুইটা দিকই রয়েছে। এই যে বন্ধুত্বের কথা বললাম এখানেও কিন্তু খারাপ দিক আছে। ঝগড়া করে আলাদা হয়ে গেলে যেমন কেউ-ই গুরুত্ব দিবে না তেমনই কিন্তু তোমাদের বন্ধুত্বও ভালো চোখে দেখবে না। এখন তোমরা স্বামী স্ত্রী হয়ে যদি কোথাও যাও কেউ কিন্তু কিছু মনে করবে না। আবার এই তোমরাই যদি ঝগড়া করে আলাদা হয়ে যাও সেটা ভালো চোখে দেখবে না।”
অথৈ আসলে বুঝতে পারছিলো না মনোয়ারা বেগম কি বোঝাতে চাইলো। তাই বলে ফেললো যে,
“আমি আসলে কিছু বুঝতে পারছি না মা, আপনি কি বলতে চাইছেন”।
মনোয়ারা বেগম তখন বললেন, “আমি পুরো টা শেষ করি আগে, তারপর বুঝিয়ে বলছি।”
অথৈ হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে বললো, “আচ্ছা”
মনোয়ারা বেগম আবার বলতে শুরু করলেন,
” কারোর সঙ্গে যদি তোমার বন্ধুত্ব বা প্রেমের সম্পর্ক থাকতো তখন সেই ব্যাপারটা অল্প কিছু মানুষ জানতো। এই ধরো তোমার বান্ধবি বা ফ্যামিলির লোক বা দেখা গেলো শুধু তোমরা দুজন জানো। তখন কিন্তু তোমরা আলাদা হয়ে গেলে সেটা লোক জানাজানি হতো না কানাকানি হতো না। কিন্তু মা বিয়ে এমন একটা জিনিস সেটা যেমন বৈধতার প্রতিক তেমনি অনেক দায়িত্বেও। এখানে অল্প ঝগড়া, অল্প বিবাদে বিচ্ছেদ ঘটানো টা এত সহজ নয়। মানিয়ে নিতে হয়। এতগুলো কথা আমি এজন্যই বলছি যে আমার ছেলেটার কান্ড কারখানা দেখে তুমি আবার সম্পর্ক টা ভেঙে না চলে যাও। মেয়েদের সব কিছুতেই মানিয়ে নিতে হয়। জন্মই হয় যেন মানিয়ে নেয়ার জন্য। ছেলেটার মনে আসলে অনেক কষ্ট যার জন্য হয়তো তোমার সাথে উল্টো পালটা কাজ করে ফেলতে পারে। তুমি একটু সামলে নিও মা”। বলেই অথৈয়ের হাত ধরে ফেললেন। অথৈ শাশুড়ীকে আশ্বাস দিয়ে বললো,
“চিন্তা করবেন না মা, আমি জানি সমাজে মেয়েদের অবস্থান কোথায়, তাই আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো আপনার ছেলের সাথে মানিয়ে নেয়ার। আর আমি এ যুগের মেয়ে মা, সহজে হাল ছেড়ে দেয়ার পাত্রি আমি নই। আপনার ত্যাড়া বাঁকা ছেলেকেও সোজা করে দিতে পারি।”
অথৈয়ের কথায় মনোয়ারা বেগম কিছুটা আশ্বাস পেলেন। যদিও জানেন উনার ছেলের সাথে পেরে উঠা এত সহজ নয়, যতটা অথৈ ভাবছে। তবু তিনি অথৈয়ের ভুল ভাঙাননি। তার মনে হলো অথৈ কিছু না জেনেই যেন চেষ্টা করে মানিয়ে নিতে। সব কিছু জেনে গেলে হয়তো এই চেষ্টা টা না করে হাল ছেড়ে দিবে। তিনি অথৈয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন বললেন,
“আমি জানি মা, তুমি চেষ্টা করলে পারবে আমার ছেলেটার সাথে মানিয়ে নিতে”।
অথৈ হাসি দিয়ে বললো, “ইনশাআল্লাহ মা”।
অথৈয়ের হাসির জবাবে তিনিও মুখটা হাসি হাসি করলেন। অথৈ তখন তার শাশুড়ীকে জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা মা, আপনার ছেলে কি আমাকে আগে থেকে চিনতো?”
অথৈয়ের প্রশ্ন শুনে উনি কয়েকসেকেন্ড অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর চোখ নামিয়ে বললেন,
“আমি জানিনা। আমাকে তো বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর আগে বলেছে”।
শাশুড়ীর ওর দিকে তাকানোর ধরনে ও বুঝতে পারলো কিছু একটা গন্ডগোল আছে। সেটা ওর শাশুড়ী মাও জানেন। কিন্তু বলবেন না। আর গন্ডগোল আছে বলেই বুঝি এভাবে ওকে ডেকে বোঝালেন। নাহলে উনার তো জানার কথা নয়, আবেগ ওর সাথে কি করেছে, আর না জানলে এভাবে বলারও কথা নয়। তাই অথৈ শাশুড়ীর কথা জবাবে শুধু ” ওহ আচ্ছা” বললো। শাশুড়ী মা একটা মলিন হাসি দিয়ে বললেন, “যাও মা তোমার ঘরে যাও, কাল তো বউভাত তোমার বাসার সবাইও আসবে, অনেক আত্নীয় স্বজনরাও আসবে।”
অথৈ মনে মনে বললো, “আর আমার ফ্যামিলির মানুষ! হাতের কাছে পাই একবার কি যে করবো ওদেরকে আমি নিজেই জানিনা। আমাকে স্বর্গ বলে নরকে পাঠিয়ে দিলো”। আর শাশুড়ীর রুম থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
আবেগ বাসায় নেই, সকালের নাস্তা করে করে অথৈকে থ্রেট দিয়েই বাড়ির বাইরে চলে গেছে। অনন্যা নিজের রুমেই রয়েছে। অথৈ ভাবলো অনন্যা বুঝি কিছু জানে তাই উঠে অনন্যার রুমে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো অনন্যা বিছানায় শুয়ে পায়ের উপরে পা তুলে মোবাইল ঘাটাঘাটি করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। অথৈ দরজাতে নক করতেই ভয়ে লাফ দিয়ে উঠলো, তাকিয়ে দেখলো অথৈকে। আর অথৈও বুঝতে পারলো ও ভয় পেয়েছে তাই আশ্বস্ত করতে বললো,
“আমি অনন্যা”।
অনন্যা উঠে বসে বললো, “হ্যাঁ আসো ভাবি ভিতরে আসো। আসলে ফোনে মগ্ন হয়ে ছিলাম তো তাই হঠাৎ আওয়াজে ঘাবড়ে গিয়েছি।”
“তুমি এমন অল্পতেই ঘাবড়ে যাও?”
” না – মানে – হ্যাঁ ওই একটু আধটু”
“কিছু কি করছিলে? যার জন্য আমি আসায় ভয় পেয়েছো”।
” আ আ রে এ না ফেসবুকিং করছিলাম। দাড়িয়ে আছ কেনো বসো”।
অথৈ বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো, “তোমার ভাইয়া কোথায় গেছে?”
“মনে হয় বন্ধুদের সাথে আড্ডা ফাড্ডা দিতে গেছে। বলে যায় না তো কাউকে। শুধু অফিসে গেলে জানতে পারি যে অফিস যাচ্ছে, মানে ফর্মাল ড্রেস পরে বের হয় তো।”
অনন্যার কথা বলার ধরনে অথৈ হেসে ফেললো।
তারপর হেসে হেসেই জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা, তোমার ভাই আমাকে কবে থেকে চিনে??”
#ঋণশোধ
#পর্ব৪
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা
অথৈয়ের প্রশ্নটা শুনে অনন্যা সাথে সাথে ই জবাব দিলো যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার আগে থেকে।
অনন্যার উত্তর দেয়ার ধরনে অথৈ বুঝতে পারলো অনন্যা কিছু জানে না। তাই আর কথা বাড়ালো না।
অনন্যাকে বললো যে “আচ্ছা তুমি ফোন ইউজ করো আমি যাচ্ছি, ডিস্টার্ব করে ফেললাম তোমাকে”।
অনন্যা জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে বললো, “আরে না না ভাবি বসো তুমি, আমি একটুও বিরক্ত হইনি। বসো দুজন মিলে গল্প করি।”
“আচ্ছা”
“তুমি শুরু করো”
“উমম! কি বলবো? কিছু ই তো মনে পড়ে না”
“ভাইয়ার ব্যাপারে বলো, কবে থেকে চিনো, কবে থেকে ভালোবাসো”
ভালোবাসার কথা শুনে অথৈ মনে মনে হাসলো কারণ ও তো আর ভালোবেসে বিয়ে করে নি। আবেগের ঢং-এর ভালোবাসাতে একপ্রকার বাধ্য হয়ে ই বিয়ে টা করেছে। সেটা তো আর বলতে পারছে না কাউকে। অনন্যার প্রশ্নের জবাবে অথৈ বললো,
“তোমার ভাইয়ার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছে আপার বাসায়। সেদিন বাসায় কেউ ছিলো না। শুধু তোমার ভাই ছিলো। আমি ভার্সিটি থেকে ফিরে বাসায় না গিয়ে আপার বাসায় গিয়েছিলাম।”
অথৈয়ের কথা এইটুকুতে থামাতে হলো কারণ যখন অথৈ বললো যে, “আবেগ আর ও-ই ছিলো শুধু” তখন অনন্যা মুখটা লাজুক করে দুহাত দিয়ে মুখ ডেকে বললো,
“আহা! হাম তুম এক ঘর মে একলে থি।” তারপর হেসে জিজ্ঞেস করলো, “তারপর কি হয়েছে ভাবি?”
অথৈ অনন্যার এমন কান্ডে অবাক হলো, প্রথম বুঝতে পারেনি অনন্যা কি মিন করেছে। কিন্তু যখন বুঝতে পারলো তখন মনে মনে লজ্জা পেলো এটা ভেবে যে, “হায় হায় মেয়েটা তো ভীষণ পাঁজি। কোথা থেকে কোথায় যায়।”
আর অনন্যাকে বললো, ”
তারপর আর কি বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো বিয়ে হয়ে গেলো”
অনন্যা হতাশ হয়ে যাওয়া গলায় বললো, “ব্যস! এখানে ই শেষ? কিন্তু আমি তো ভাইয়া তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে।”
অথৈ মনে মনে বললো, “ভালোবাসা না ছাই! কোন জন্মের প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করেছে আল্লাহ মালুম।” কিন্তু এটা তো আর জোরে জোরে বলা সম্ভব না তাই জন্য অনন্যাকে তো অন্যকিছু বলতে হবে। অনন্যাকে বললো,
“হতে পারে তোমার ভাই আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে কিন্তু আমার দিক থেকে এটা এরেঞ্জ ম্যারেজ ছিলো। আমার ফ্যামিলির কথায় আমি বিয়ে করেছি”।
“ওহ আচ্ছা” টা নিস্প্রান ভাবে বলে, উৎফুল্ল গলায় বললো, “সে যাই বলো না কেনো আমি তো জানি আমার হ্যান্ডসাম ভাইয়ের প্রেমে তুমি হাবুডুবু খাবেই।”
অথৈ অনন্যার কথায় হালকা একটা হাসি দিলো, আর মনে মনে বললো,
“কি একজন সুদর্শন ভাই তোমার যার প্রেমে পড়ে আমাকে হাবুডুবু খেতে হবে। উল্টো দেখবে তোমার কুদর্শন ভাই আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।”
আরও কিছুক্ষন অনন্যার সঙ্গে সময় কাটিয়ে অথৈ নিজের ঘরে চলে গেলো। আবেগ রাত ১০ টার দিকে বাসায় এলো। ততক্ষণে অথৈ গিয়ে খেয়ে ধেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। আবেগ এসে রুমে ঢুকেই প্রথম অথৈকে টেনে তুললো। টেনে তুলে বললো,
“পাটরানী এ বিছানা আপনার জন্য নয়, আপনার জন্য আমার রুমের মেঝে অপেক্ষা করছে, যান গিয়ে মেঝেতে ঘুমান।”
অথৈ ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে ছিলো। আবেগ ধরে বসিয়ে দেয়ার পরও আবার শুয়ে যাচ্ছিলো তখন আবেগ আবার ঝাকানি দিলো। তখন অথৈ ঘুম জড়ানো গলায় বললো, “আপনি আমার সাথে এমন কেনো করছেন, কি করেছি আমি”।
অথৈয়ের ঘুম জড়ানো গলায় আওয়াজ শুনে কি জানি হলো আবেগ ওকে ছেড়ে দিলো। ছেড়ে দিয়ে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে গেলো।
খেয়ে এসে বিছানায় শুয়ে ঘুমন্ত অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বললো, “আমার সঙ্গে এমন টা না করলেও পারতে অথৈ”।
*
সকালে অথৈয়ের আগে আবেগ উঠে গেলো। অথৈয়ের চোখে তীব্র আলো আসায় ওর ঘুম ভেঙে গেল। আড়মোড়া ভেঙে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে গেলো। তখন মোটামোটি আটটা বাজে। গিয়ে দেখলো শাশুড়ী মা রুটি বানাচ্ছেন। সেটা দেখে অথৈয়ের মনে পড়লো আবেগ কি বলেছে। তাই তাকে সাহায্য করতে গেল। প্রথম এ তিনি নিষেধ করছিলেন বলছিলেন, “তুমি নতুন বউ তোমার এখন কাজ করতে হবে না। তাছাড়া আজকে বউভাত। সব আত্নীয় স্বজন আসবে তুমি বরং গিয়ে রেডি হতে শুরু করো।”
অথৈ বললো, “এখন না খেয়ে তো আর যাবো না তৈরি হতে তারচেয়ে আপনাকে হেল্প করি তাতে করে আপনার সুবিধা হবে, তারাতাড়ি হয়ে যাবে।
বাকি কাজ করারও সময় পাবেন”।
অথৈয়ের কথা শুনে তিনি আর বাধা দিলেন না।
তিনি রুটি বেলে দিচ্ছিলেন আর অথৈ সেটা ভাজছিল। সকালের নাস্তা করে অথৈ নিজের রুমে চলে গেলো। আবেগ কোথায় জানতে চাইলো তখন ওর শাশুড়ি মা বললেন,
” সকাল সকাল ই উঠে চলে গেছে। বলেছে নাস্তা বাহিরেই করবে। আসলে আমাদের ঘরে ওই তো একমাত্র পুরুষ মানুষ, আত্নীয় স্বজন আসবে সামলাতে হবে তো। ওর বাবা তো..!”
অথৈ কিছু বললো না, জানে আবেগের বাবা নেই।
ওর মা ই সব। মহিলার জন্য অথৈয়ের কেনো জানি মায়া লাগলো। ওর বাবা- মা দুজনেই আছে, দুজন মিলে কত মজা আর খুনসুটি করে বেড়ায়। ও আর ওর বোন খুব ইনজয় করতো। তাদের মধ্যে ঝামেলা খুব কম হতে দেখেছে। হঠাৎ নিজের কথা মনে করলো ওর কপালে কি আছে!। অথৈ বেশ শক্ত সামর্থ্য মেয়ে এজন্যই হয়তো ওর খারাপ লাগছে না। ওর জায়গায় নরম মনের কেউ হলে তার কি অবস্থা হত!
*
শাশুড়ী মার কথামতো অথৈ সাজতে বসে গেলো।
পার্লার থেকে সাজানোর জন্য আসার কথা ছিলো কিন্তু অথৈ আসতে বারণ করে দেয়। বলে ও নিজেই সাঁজতে পারবে। অথৈয়ের খুব বেশি সাজগোজ একদম ই পছন্দ না। পার্লার থেকে সাজাতে এলে দেখা যাবে তিন গুন মেকাপ করে ওর আসল চেহারাটাই ঢেকে দিয়েছে। বিয়ের সময়ও নিজের সাজ নিজেই সেজেছে। তখন অবশ্য ওর বন্ধু বান্ধবিরা হেল্প করেছে। এবার একা একাই সাজলো। সাদা রঙের একটা ল্যাহেংগা পরে সাজতে বসে গেলো। বেশ অনেকটা সময় নিয়ে বসে সাজলো। অথৈ তৈরি হতে হতে অনেক টা সময় পার করে ফেললো। অনন্যা এসে দরজায় ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ভাবি আর কতক্ষন লাগবে? মা ডাকাডাকি করছে তো। ওদিকে যেতে দেরি হয়ে যাবে।”
“এইতো আর পাঁচ মিনিট”
“আচ্ছা ভাবি তাড়াতাড়ি আসো”
“আসছি”
অথৈ দরজা খুলে বের হয়ে অনন্যাকে ডাক দিলো। ডাক শুনে অনন্যা দৌড়ে এসে অথৈকে দেখে হা হয়ে গেলো। মুখ টা হা করে রেখে ই বললো,
“ভাবি! কি লাগছে তোমাকে! আজকে তো আমার ভাইয়া শেষ”।
অনন্যার কথা শুনে অথৈ ওর কান মুলে দিলো আর বললো, ” তুমি ভীষণ পাজি”।
অনন্যা এটা শুনে হেসে দিলো, অনন্যার হাসি দেখে অথৈও হেসে ফেললো। তখনই ওর শাশুড়ী এসে বললেন, “কিরে হলো তোদের”
অনন্যা সাথে সাথে ই জবাব দিলো
“হ্যাঁ মা আসছি এখুনি। ভাবি চলো, আধ ঘন্টা ধরে গাড়ি ওয়েট করছে।”
শাশুড়ীর সামনে গেলে আরেক দফা প্রসংশা পেয়ে অথৈ লজ্জা পেলো।
সময়মতোই ভ্যেনুতে পৌঁছে গেল। অথৈয়ের চোখ দুটো আবেগ কে খুঁজছিলো কারণ এত কষ্ট করে ওর জন্য ই সেজেছে। অথৈ আবেগের রিএকশ টা দেখতে চাচ্ছিলো।
অথৈয়ের মনের ইচ্ছে যেন পুরণ করার জন্যই সেই মুহূর্তে অনন্যা এসে অথৈকে আবেগের সামনে নিয়ে দাঁড় করায়। আবেগ ওর এক ফ্রেন্ড এর সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো তখন অনন্যা গিয়ে পিছন থেকে ডাক দিলো, “ভাইয়া দেখ কাকে এনেছি”।
অনন্যার ডাক শুনে আবেগ পিছনে ফিরে তাকালো……
চলবে..
চলবে