#একই_সুতোয়_বাঁধা
পর্ব-১৮
সপ্ত শীখা
আজ অফিস ছুটির দিন। সায়ন বাসায় ফিরেছে ভোরে। কাল রাত থেকে দুচোখের পাতা এক করতে পারছে না ও। কি বলবে জান্নাতুল কে ?
রাজু কে ডেকে কড়া একটা কফি দিতে বলল ও। মাথাটা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে… সে সাথে মেজাজ ও খিচড়ে আছে প্রচণ্ড রকম। মা বাবার উপর রাগ লাগচ্ছে। তার জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কি আছে তাদের ?
❤️💛💚💙💜
পুষ্প মায়ের দেয়া শাড়িটা বের করল। চোখ জুড়িয়ে যাবার মত শাড়িটা। বেবি পিঙ্ক আর সাদার মিশ্রনে জর্জেট শাড়ি। নীরাও অবাক হয়েছে…
— খালাম্মার চয়েস তো লাজবাব ! এত হট লাগবে তোকে এটায় ! আজকে দুলা মিয়া ফিদা হবেই হবে। চল চল পড়ে নে…
কাল থেকেই লজ্জায় শিহরিত হচ্ছে পুষ্প। ও কেবল এটাই লুকিয়েছিল যে ওই পুষ্প… সায়নের খেলার সাথী। কিন্তু সেই সাথে যে ওর জীবন সঙ্গিনীও তা তো ও বোঝেনি!
সায়নের জন্য কিছু রান্না বান্না করেছে আজ পুষ্প। সব সেরে শাড়িটা পড়েছে। সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে !! মনে হচ্ছে ওর জন্যই বানানো শাড়িটা। মন একটু খারাপ হল পুষ্পর… ও যদি শ্যামলা না হয়ে ফর্সা হত তাহলে এই বেবি পিঙ্ক কালারটা একেবারে মিশে যেত গায়ের সাথে। থাকুক… এখনি বা কম কি ? ভাল দেখাচ্ছে ! শাড়ির উপর বোরখা টা পরে মা কে ফোন করল পুষ্প।
— আম্মা ! আমি যাচ্ছি… উনার কাছে।
— যা মা। আমাদের দোয়া আছে তোর উপ্রে… যা।
💙💙💙💙💙
মেজাজ খিচড়ে কফি খেতে খেতে শুনল বেল বাজছে দরজায়। হয়ত পেপার দিতে এসেছে। রাজু খুলে দিল… তাও শুনল ও। একটু পরেই শরীর শক্ত হয়ে এল ওর রুমের দরজায় জান্নাতুল কে দেখে।
— জা…জান্নাতুল…
— সরি না বলে এসে পড়লাম। ওই ছেলেটা বলল আপনি এখানে তাই…
— জান্নাতুল… আপনি এত সকালে এখানে কেন?
— আসতে পারি না ?
— না না।। তা নয়…
— আসুন নাস্তা এনেছি আপনার জন্য। আসুন না !
মানা করতে পারেনি ও। চুপচাপ এসেছে পেছন পেছন। পুষ্প সযত্নে চেয়ার টেনে ওকে বসিয়ে সব খাবারের ঢাকনা তুলছে। সকালে উঠে ও আজ খিচুড়ি, মুরগির মাংস, চিকেন সালাদ বানিয়েছে। সায়ন কে স্বামী হিসেবে আজ প্রথম বার যত্ন করে বসিয়ে খাওয়াবে ও।
খাবার বেড়ে দিয়ে একটু বকে দিতেই সায়ন আস্তে আস্তে খেতে শুরু করল। পুষ্প লক্ষ্য করেছে ও তেমন খেতে পারছে না। খাবার নাড়াচাড়া করছে। পুষ্প নরম গলায় জিজ্ঞেস করল,
— কি হয়েছে ? খাচ্ছেন না… রান্না খারাপ হয়েছে?
— না… আসলে আমার খুব লজ্জা লাগছে জান্নাতুল। আপনি এভাবে…
— লজ্জা করবেন না। আপন মানুষের কাছে কিসের লজ্জা ?
— না… তা নয়। জান্নাতুল, আমি যে আপনাকে বিয়ে করতে পারব না ! কাল জানলাম ছোটবেলায় নাকি আমার বিয়ে হয়ে গেছিল…
— আপনি খাবারটা শেষ করুন তো। ঠান্ডা খিচুড়ি ভাল লাগবে না।
এমন নির্লিপ্ততায় হতবাক হয়ে গেল সায়ন। এতবড় কথাটা শুনে কোন রিএকশন দেখালো না ! তবু পুষ্পর বারবার তাড়া দেয়ায় খাবার টা শেষ করে নিলো ও। নিজের রুমে গিয়ে দুহাতে মাথা চেপে বসে রইল ও। বাইরে পুষ্প সব গুছিয়ে রাজু কে আস্তে করে বলল বাজার থেকে কিছু জিনিস আনতে। রাজু বেরুলে দরজা লাগিয়ে এসে বোরকা টা খুলল। নিজেকে পরিপাটি করে লজ্জানম্র পায়ে এলো সায়নের ঘরে।
সায়ন মাথা নিচু অবস্থাতে দুখানা সুন্দর পা দেখে মাথা তুলে তাকাল আর বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। কি মিষ্টি মেয়েটা ! নীল শাড়িতে এত মোহময়ী লাগছে কেন ! এ কি জান্নাতুল ? কিন্তু… দেখতে অনেকটাই পুষ্পর মত নয় কি ? বারো বছর আগে দেখা চেহারার সাথে মিলিয়ে নিচ্ছে ও…
— আপনি…
— জান্নাতুল ফেরদৌস… আপনি জান্নাতুল ডাকেন। আর… ছোটবেলায় পুষ্পি বলে ডাকতেন।
— ইউউউ…
রেগে অস্থির সায়ন উঠে দাড়িয়ে পড়েছে। এ মেয়েটা এত ভাল… অথচ এতটা ছলনাময়ী ! ভাবতেও পারেনি সায়ন।
— তুমি… তুমি জানতে যে তুমিই পুষ্প। এটাও জানতে যে তোমার সাথে আমার নামেমাত্র একটা বিয়ে হয়েছিল। সেটা আমি সহজে মানব না তাই ছদ্মবেশে এসে আমায় বশ করতে চাইছিলে তাই তো ?
— আমি… আমি কিচ্ছু জানতাম না-
— এটাও জানতে না যে তুমি পুষ্প আর আমি সায়ন? আমি তোমায় দেখিনি। তুমিতো দেখেছ !
— হু… জানতাম-
— ইউ ফ্রড ! অন্য মেয়ে সেজে আমায় সিডিউস করতে এসেছিলে !
— সিডিউস ! আমি !
— তো আর কে ? আই হেইট ফ্রডস। জাস্ট গেট আউট অফ মাই হাউজ… প্লিজ !
— আপনি আমার কথাটা শুনবেন তো !
— না শুনব না ! ফ্রড মেয়ের আবার কাহিনির অভাব ! মিথ্যা একটা বানিয়ে বলবে এখনি-
— ছি !
— ঢং না করে এই মুহুর্তেই আমার বাসা থেকে বের হও। মা বাবার আক্কেল কই যে ছিল যে এমন মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছে… যাচ্ছ না কেন ?
— মা বাবা কেন… তখন আপনার আক্কেল ও ছিল না। এমন মেয়ের রাগ ভাঙ্গাতেই তো কত সাধনা করতেন !
— আউট !
পুষ্প বাইরের ঘরে এসে বোরকা পরে বের হয়ে গেল। বাইরে এসে রিকশায় চড়ে বসে কেঁদে কেঁদে অস্থির হল ও। এত খারাপ ভাবল সায়ন ওকে ! ফ্রড ভাবল !
❤️💛💚💙💜
— নীরা… কি করব এখন আমি ?
— হারামজাদার সাহস কত… আমার ইচ্ছে করছে এর চুল ধরে পানিতে চুবাই। ফ্রড বলে !
— আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে !
— চুপ ! গাধি মেয়ে… তোর কি দোষ? পরিচয় ছাড়া আর তো কিছু লুকাস নি তুই ? আমাকে জিজ্ঞেস করিস তো বলব ব্যাটাকে এক লাথি দিয়ে ছেড়ে দে… এর মানসিক সমস্যা আছে। নিজে নিজেই ভেবে নিলো সব-
— নীরা !
— কিন্তু আমার কথা তোর শোনার দরকার নেই। আমি মাথা গরম মানুষ। আমি এখন খালাম্মা আর দাদি কে ফোনে সব বলব। তারা যে সলিউশন দেন সেটা মেনে নেয়াটাই উত্তম হবে।
— না না… ওদের এখন কিচ্ছু বলবি না। আম্মা খুব মন খারাপ করবে।
— খালাম্মা অনেক শক্ত মানুষ। আচ্ছা যা বিকালে কল দেব। তুই কান্না টা বন্ধ কর না বাবা ! একটা মানুষ বকেছে তাতে কি এমন হাতি ঘোড়া হল !
— তোকে তোর ভালবাসার মানুষ বকলে… ফ্রড বললে তুই বুঝতি কেমন লাগে। হবে তো বিয়ে কদিন পর…
— যা অসভ্য। বদ দুয়া দিচ্ছিস !
— আস্তাগফিরুল্লাহ !
নীরা বান্ধবি কে কোনক্রমে শান্ত করে রান্না ঘরে গেল কফি বানানোর বাহানায়। এই সময় চুপি চুপি কল দিল আছিয়া কে। সব জানালো আর সমাধান ও জেনে নিলো। ও জানে… পুষ্প কক্ষনো এই ঘটনা বাসায় জানাবে না। মা বাবার কষ্ট হয় এমন কিছু সে জান গেলেও করবেনা। এত ভাল মেয়েদের জন্য একটু নীরা টাইপ বান্ধবি তো লাগেই !
[ ]