একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব -৪৭+৪৮

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
৪৭+৪৮
#WriterঃMousumi_Akter.
ছোঁয়ার ওই করুণ কান্নায় আমার ভেতরটা জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।আমার শুধু মনে হচ্ছে এক্ষুনি আমি ছোঁয়াকে এখান থেকে বের করি।প্রতিটা সেকেন্ড ছোঁয়ার জন্য মৃত্যু যন্ত্রণার সমান।ওই দিকে তন্ময়ও প্রতিটা সেকেন্ড অসহনীয় যন্ত্রনায় ছটফট করছে।ভালোবাসায় এমন কী আছে? কেউ কাউকে হারিয়ে দমবন্ধ কষ্টে ছটছট করছে কেউ কাউকে বাঁচাতে নিজের জীবনের সব থেকে নিকৃষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে।একজন আরেকজনের কষ্ট অনুভব করতে পারে না।তাই ছোঁয়া আর তন্ময়ের কষ্টটাও কেউ অনুভব করতে পারবে না।আমার এক্ষুনি ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে,“পৃথিবীতে আমি অনেক ভাগ্যবতী যে তোদের মতো এমন বন্ধু পেয়েছি।ছোঁয়া, তুই সবার থেকে আলাদা, সবাই তোকে ভুল বুঝছে খারাপ ভাবছে অথচ তোর মতো করে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারবে না,কেউ কারো কথা এইভাবে ভাবতে পারবে না।না জেনে ওশানের সাথে রিলেশনে গিয়ে তরীর সাথে হওয়া অন্যায়ের জন্য তুই কত গিলটি ফিল করিস।এই যে তুই রেগুলার আমার কাছে তরীর খবর নিস রোজ অশান্তিতে পুড়িস এটা তো কেউ জানেই না।তরীর প্রতি তোর যে এত মায়া এটা কারো জানাই হলো না।অথচ আমাদের সমাজে আমরা বেশিরভাগই ভিন্ন জিনিস দেখি।এক মেয়ের সংসার ভাঙার কারণ ঠিকই অন্য মেয়েই হয়।তুই তো না জেনে সব করেছিস;অথচ প্রায় মেয়েরা বউ বাচ্চা আছে জেনেও একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়ায়।আগের বউকে তাড়িয়ে নিজে ঘর বাঁধার চেষ্টা করে।তোকে দেখেও অন্তত শেখা উচিত মানুষের। পৃথিবীতে লাখ লাখ তরী আছে যারা ভুক্তভোগী তাদের পাশে কেউ নেই।স্বামীরা পরনারীতে আসক্ত।কোনো মেয়ে যদি এসব ছেলেদের পাত্তাই না দিত তাহলে এরা বাধ্য হয়ে নিজের ঘর সংসারে মনযোগী হতো।খুব ইচ্ছা করে এসব মানুষের বিরুদ্ধে কঠিন কোনো আইন প্রয়োগ করতে।খুব খুব প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা করে।এসব মানুষদেরকে আমি সহ্য করতে পারি না।”

বেশ কিছুক্ষণ পর আমি চোখের পানি মুছে নিজেদের রুমে প্রবেশ করলাম।ওশান অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছে।রুমের দরজা লাগিয়ে লাইট অন করলাম।ফোনটা বিছানায় ফেলে রোশান স্যারের পায় বরাবর বসলাম ফ্লোরে।উনার পায়ের উপর মাথা রেখে আমি কাঁদছি।উনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। উনার পায়ের উপর মাথা রেখে বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর উনি পা নাড়ালেন।হঠাৎ জেগে উঠলেন।বালিশ থেকে মাথা তুলতে গিয়ে ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলেন আর তন্দ্রাচ্ছন্ন কন্ঠেই বললেন, “সারাহ তুমি ওখানে কেন?”

আমি এলোমেলো চুল আর ফোলা চোখে উনার দিকে তাকালাম।চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।ঠোঁট দুটো কাঁপছে।উনি হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না।ব্যাথায় কুঁকিয়ে কোনমতে উঠে বসলেন।বেশ সন্দিহান ভাবে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন,
“ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলে মন খারাপ করেছ?কী ওষুধ যে খেয়েছিলাম দু’চোখের পাতা আর খুলে রাখতে পারিনি।স্যালাইন,ব্যাথার ওষুধ, ঘুমের ওষুধ, আর ক্লান্তি সব মিলিয়ে আমি অচেতন হয়ে গিয়েছিলাম।”

‘এসব নিয়ে না।’
‘তাহলে এমন অবস্থা কেন তোমার?কেউ কিছু বলেছে?’
‘না।’
‘তাহলে কী হয়েছে তোমার?প্লিজ বলো।’
‘ওশান!’
‘ওশান কিছু বলেছে তোমাকে?ও যদি তোমাকে কিছু বলে আজ কোনো ক্ষমা পাবে না।’
‘ওশান বিয়ে করেছে জানেন না?’
‘করুক,ওর বিয়ে, ভালো-মন্দ কোনো কিছুতেই আর কিছু যায় আসে না আমার।আমার ভাই যে বেয়াদব আর চরিত্রহীন হবে সেটা আমার কল্পনাতেও ছিল না।তরী যাওয়ার পরে দেখেছ আমি ওর সাথে কথা বলেছি বা আম্মার সাথে ভালো করে কথা বলেছি?আম্মা তো নিজের মা,মায়ের বিচার তো করা যায় না।অনেক বুঝিয়েছি আমার কথা শোনেনি তাই ছেড়ে দিয়েছি।আর ওশান আমার কাছে ঘৃণিত ব্যক্তি।মন থেকে ওকে আমি মুছে দিয়েছি। তাই ওর ব্যাপারে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।আমি ধমকে, মাথায় হাত দিয়ে বহুভাবে বুঝিয়েছি। আমার কথা যখন মানেনি তখন ও আমার মন থেকে উঠে গিয়েছে।যে একবার আমার মন থেকে উঠে যায় আমি ফিরেও তাকায় না তার দিকে।তুমি মাথা ঘামিয়ো না।আমরা বাসা নিয়েছি বুঝলে।কলেজের পাশেই বাসা নিয়েছি।কালই চলে যাব।এই নোংরা পরিবেশে আর এক সেকেন্ডও নয়।আজই বিকালে যেতাম কিন্তু কপাল খারাপ আমি অসুস্থ তাই থেকে যেতে হচ্ছে।’
‘ছোঁয়া আছে না আমার বেষ্টি?’

‘হুম আছে তো,ওই যে অনেক সুন্দর দেখতে মেয়েটা?’

‘ওশান ওকে নিয়ে এসেছে।’

‘ওকে নিয়ে এসেছে মানে!’

‘ওই যে বিয়ের কথা বলছে না? ওটা বিয়েই না।’

‘কী বলছ এসব?’

‘আপনাকে আমি আগে বলিনি।ওশান ছোঁয়ার সাথে রিলেশন করত।কিন্তু ছোঁয়া জানত না যে ও বিবাহিত।কিন্তু যখন জেনেছিল ছোঁয়া আর কথা বলেনি।কিন্তু ওশান ছোঁয়াকে বিভিন্ন ব্লাকমেইল করে নিয়ে এসেছে।বিয়ে ছাড়াই নিয়ে এসেছে।’

‘তুমি আমাকে আগে বলবে না ছোঁয়ার ব্যাপারটা।আমাকে যদি আগে বলতে আমি অনেক আগেই এই ব্যাপারটার বিরুদ্ধে স্টেপ নিতাম।ওশানকে পুলিশ দিয়ে ওয়ার্নিং দিয়ে রাখতাম।এসব করার সাহস আর সুযোগ কোনটাই পেত না।’

‘আপনি প্লিজ কিছু করুন।আমার কাছে প্রমাণও আছে।’
‘কই দেখি? দাও তো।’

বিছানা থেকে ফোনটা নিয়ে ভিডিয়োটা প্লে করলাম।প্রায় আধাঘন্টার ভিডিয়ো।উনি ভিডিয়োটা দেখা শেষ উদ্বিগ্ন হয়ে আমার দুই গালে হাত রেখে বললেন,“ওরা তোমাকে আ’ গু’ নে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল?”

উনার চোখ-মুখে অদ্ভুত একটা পরিবর্তন লক্ষ করা গেল।এই যে এত এত ঘটনার মাঝে আমাকে মা’ রার ঘটনাটুকুতে যেন উনি ভীষণ আহত হয়েছেন।চোখ দু’টো রাগে ছুটে যাচ্ছে।অগ্নেয়গিরির মতো জ্বলছে।রা’গে কাঁপছেন উনি।উনার চোখে যে আগুন! এখনি ভস্ম করে দিবেন সব কিছু, তছনছ করে দিবেন সব।
উনার গায়ে হাত দিয়ে বললাম, “দেখেছেন ছোঁয়ার সাথে কী করেছে?”

উনি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “আমার ফোনটা দাও।”
উনাকে ফোনটা দিলাম।উনি কোথায় কোথায় যেন ফোন করলেন।আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি।উনি কতটা সিরিয়াস হয়ে গিয়েছেন।

ফোনে কথা শেষ করে প্লে স্টোর থেকে ভিডিয়ো কাটার অ্যাপ ডাউনলোড করে ভিডিয়ো ছোট করে করে কোথায় যেন পাঠালেন।
এভাবে কেটে গেলে অনেক সময়।ঘড়িতে সময় রাত তিনটা। ঘরের পেছন দিয়ে শুকনো পাতার মড়মর শব্দ হচ্ছে।জুতার নিচে শুকনো পাতা পড়লে যে শব্দ হয় অমন শব্দ।আমি ঘরের দরজা খুলে দেখি সিম্পল পোশাক পরা একজন লোক উঠানে এসে দাঁড়াল।লোকটা এসেই উনাকে ফোন দিল।

উনি আমাকে বললেন, “গেটটা খুলে দাও।”

ঘরের গেট খুলে দিতেই লোকটা সোজা ঘরে প্রবেশ করে আমাকে বলল, “আপনি কে?”
‘জি আমি…..’
‘ভ*য় পাবেন না আমরা পুলিশের লোক।’
‘ওহ।আমার স্বামীই ফোন দিয়েছিলেন।’
‘ঘরটা কোনদিকে?’

আমি আঙুলের ইশারায় ওশানের ঘর দেখিয়ে দিলাম।

লোকটা গিয়ে ওশানের ঘরে ক্রামগত লাথি মারা শুরু করল।
বেশ কিছুক্ষণ দরজা ধাক্কাধাক্কির ফলে ছোঁয়া ওর রুমের দরজা খুলল।শ্বশুরেরও ঘুম ভেঙে গেল সাথে শাশুড়িরও।উনারা দুজনের বেরিয়ে এলেন।ওশান রুম থেকে চিৎকার দিয়ে বলল, “এই কে?”

লোকটা বাবাকে বলল,“আপনি কী হন?’
‘ বাবা।’
‘আপনি কথা বলুন আর আপনার ছেলেকে বাইরে আসতে বলুন।’
বাবা বললেন, “দরজা খোলো ওশান।”
‘কেন কী হয়েছে?’
‘তোমার শ্বশুর বাড়ি থেকে লোক এসেছে।’

ওশান হয়তো কিছুই বুঝে উঠতে পারল না।ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলতেই অফিসার ওর মাথার চুলের মুঠি ধরে চোখে-মুখে ক্রমাগত ঘু’ ষি মেরে যাচ্ছে।ওশান হঠাৎ কিছুই বুঝতে পারল না।ওশান নিজের আত্মরক্ষার চেষ্টা করতেই বাইরে থেকে আরও ১০-১৫ জন পুলিশ তরতর করে ভেতরে প্রবেশ করল।সাথে ছয় জন মহিলাও আছে।ওশানের চুল ধরে ওয়ালের সাথে কয়েক ঘা মেরে ক্রামাগত লাথি আর ঘুসি দিয়েই যাচ্ছে।পুলিশের হাতের মারে কি কোনো কমতি থাকে?

শাশুড়ি এগিয়ে গিয়ে বললেন, “আপনারা মারছেন কেন?”
‘আপনি কী হন?পরিচয় কী?’
‘ওর আম্মা আমি।’
অফিসার মহিলাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,“এই বেয়াদব মহিলাকে আগে গাড়িতে তোলো।যেমন বজ্জাত মহিলা তেমনি পয়দা দিয়েছে।একই গর্ভে একজন বিসিএস ক্যাডার আর একজন অপকর্মের রাজা।’

মহিলা পুলিশরা শাশুড়িকে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল।শাশুড়ি এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলছেন, “স্যার আমি কিছু করিনি।”

মহিলা পুলিশ বলল, “লাল ঘরে কিছুদিন থাকলে টের পাবি বুড়ি।”

অফিসার ওশানের অন্ডকোষ বরাবর লা* থি মেরে বলল,
“তোর বি*চি ফা*টায় ফেলব,শু** য়া** রে**র বাচ্চা।বল ভিডিয়ো কোথায়?”

ওশান ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে বলল, “কীসের ভিডিয়ো?”

রোশান স্যার খুব কষ্টে এদিকে এগিয়ে এসে বললেন, “ভালো ভাবে রিমান্ডে ঝুলান,বুঝে যাবে কীসের ভিডিও।ওকে রিমান্ড সহ যাবতীয় শাস্তি দিতে যা করতে হয় আমি করব।আপনারা শুধু ব্যবস্থা করুন।সব প্রুভ তো আপনাদের কাছেই আছে।আইন নিজ হাতে তুলে অন্যায় করতে চাই না বলে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম।”

‘অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।কেউ কখনো মা-ভাইকে আইনের হাতে তুলে দিতে রাজি হয় না।আপনি যা করলেন সত্যি প্রশংসনীয়।এসব অপরাধীদের খুঁজে পাওয়া যায় না।কারন মেয়েরা ভ**য়ে এদের নামে মামলা করতে রাজি হয় না।’

‘কীভাবে রাজি হবে।এমন সমস্যায় পড়া কোনো মেয়ে যদি তার ফ্যামিলিতে ঘটনাটি জানায় তাহলে ফ্যামিলির লোক সবার আগে বলবে, “তুমি গিয়েছিলে কেন?এসব অপকর্ম না করলে তো আজ সমস্যায় পড়তে না।”সমাজ-পরিবার কেউ আইনের সহায়তা নিতে দেয় না।কারন লোকজানাজানি হবে। আমাদের সমাজে সম্মানটাই মেইন।সম্মান নষ্ট হবে।ফ্যামিলির মানুষ এসব বিষয়ে আরও মেয়েদেরকে হুমকি দেয় যাতে এসব কথা দু’কান না হয় মানুষ ছিঃ! ছিঃ!করবে এই ভয়ে।মেয়েটিকে সমস্যা থেকে রক্ষা করার পরিবর্তে আরও তাকে নানা ধরণের প্রশ্ন করা হয়।ভুল তো সে করেই ফেলেছে। সে ভুল কেন করল এটা নিয়েই প্রেশার দেওয়া হয়।তাই আমাদের সমাজের বহু মেয়ে এসব সমস্যায় ফেঁসে আ*ত্ম*হ*ত্যার পথ বেছে নেয়। কেউ এসব থেকে বেরোতে পারছে না এভাবেই অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

‘মেয়েগুলোকেও বলি এরা এত বোকা কেন? কেন যে এসব ছেলেদের পাল্লায় পড়ে!ছেলেরা এসব প্রস্তাব দিলেই ডাইরেক্ট জুতা মা** রা উচিত।’

‘মেয়েদের মন নরম,ভীষণ আবেগী এরা।সূক্ষ্ম অভিনয়ে হারিয়ে যায়।’

অফিসার ওশানকে আবারও চুল ধরে কয়েক ঘা ম* রে বলল,
“মেয়েদের ব্লাকমেইল করার শাস্তি জানিস?”
‘আমি কাউকে ব্লাকমেইল করিনি।’
‘তাহলে তোর বাড়ির মেয়েটি কে?’
‘আমি বিয়ে করেছি।’
‘প্রুভ দে বিয়ের।’
‘কাছে নেই।’
‘কোন কাজি বিয়ে পড়িয়েছে?’
‘বিশ্বাস না হলে ওর কাছে শুনুন।’
‘ওঁর কাছে কী শুনব?মেয়েটি ভীতু ভ*য় পেয়েছিল।যেভাবে মেয়েটিকে ব্লাকমেইল করেছিস যে কোনো মেয়েই ভ**য় পাবে।ওঁর কাছে তো শুনবই তার আগে ভিডিয়োটা ডিলিট কর।কোথায় রেখেছিস আর কার কার কাছে রেখেছিস,কে কে জড়িত?’
‘কোনো ভিডিয়ো নেই।’
‘তোর জন্য সব ব্যবস্থা করে এসেছি এখানে।তুই কেন তোর বাপ দিবে ভিডিয়ো।’

অফিসার আরেকজন পুলিশকে বলল, “গাড়িতে বড়ো ফ্ল্যাক্স রাখা আছে।ওগুলো নিয়ে এসো।”

আমি ছোঁয়াকে শক্তকরে জড়িয়ে ধরে বললাম, “বেবি আই লাভ ইউ।কোনো চিন্তা নেই।কিচ্ছু ভাইরাল হবে না।জাস্ট সত্যটা পুলিশকে বলে দে।কোনো ভ* য় পাবি না।বোকা মেয়ে কেউ এসব ভ**য় পায়?”

ছোঁয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বলল,
“আমি হুট করে কিছু করার সাহস পাচ্ছিলাম না ।শুধু ভাবছিলাম এসব ভাইরাল হলে বাবা মানুষের মাঝে মুখ দেখাবে কী করে।আমার বাবা এসব দেখলে সু*ই*সা*ই*ড করত সারাহ।বাবার কথা ভেবে আমি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি।কিন্তু তুই কীভাবে এসব জানলি?”

‘আমার সন্দেহ হচ্ছিল কিছু একটা গড়মিল আছে।তাই আমি সারাক্ষণ ওঁত পেতে ছিলাম কখন তুই আর ওশান কথা বলবি।আমি জানতাম কিছু না কিছু সত্য বের হবেই।’

‘আমাকে চরিত্রহীন মনে হচ্ছে তাইনা?’
‘একদম এসব কথা তুলবি না কিন্তু।অতীত নিয়ে কোনো কথা তুলবি না।’
‘আমি জানি সারাহ,আমাকে দেখলেই তোদের মনে হবে আমার চরিত্র ভালো নয়।’
‘এসব কারো মনে হবে না।তন্ময়ের কথা কেন ভাবলি না তুই?একবারও ভাবলি না তুই এখানে চলে এলে তন্ময় ম*রে যাবে।’

‘আমি তন্ময়ের সাথে গেলে ওশান এসব ভাইরাল করলে তন্ময় আমাকে আর ভালবাসত না।ওর চোখে আমার জন্য ভালবাসা সম্মান কিছুই থাকত না।’
‘তাহলে তুই এখানে সংসার করতি?’
‘দশদিনের সময় নিয়েছিলাম শুধু ভিডিয়ো ডিলিট করিয়ে নিজে পরপারে যাওয়ার জন্য।’
‘খুব মা’ র খাবি তুই।খুব মারতে ইচ্ছা করছে তোকে।’
‘কিছুই ভালো লাগে না আমার।সারাক্ষণ নিজেকে পাপী মনে হয়।তরীর জীবন নষ্ট হওয়ার জন্য নিজেকে দায়ী মনে হয়।বিষন্ন লাগে সব কিছু।’
‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’

এরই মাঝে গাড়ি থেকে গরম পানি আর মরিচের গুড়া আনা হলো।ওশানকে শুইয়ে নাকে-মুখে ঢালা হলো।ওশান চেঁচিয়ে সব ভিডিয়ো ক্লিপ কোথায় আছে বলে দিল।রোশান স্যার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব ডিলিট করলেন।পুলিশ ওশানকে থানায় নিয়ে গেল।

বাবা বললেন, “যেমন কর্ম তেমন ফল।”

এত ঝামেলার মাঝে ছোঁয়া খেয়ালই করেনি রোশান স্যারই আমার জামাই।ছোঁয়া এবার রোশান স্যারকে দেখে আমার পিছনে গিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়াল।রোশান স্যার আমাকে বললেন,
“ওকে নিয়ে রুমে চলো।ওর উপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে।”

ছোঁয়া লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।
বাবা উনার এক হাত ধরে আস্তে করে রুমে নিয়ে এলেন।আমি ছোঁয়াকে ধরে রুমে গেলাম।আমি ফোন দিয়ে মৃন্ময়কে সব ঘটনা খুলে বললাম।মৃন্ময় ফোন কানে রেখেই লাফিয়ে উঠে তন্মকে ডাকল।নিমিষেই ধেয়ে আসা তুফান থেমে কেমন আনন্দ প্রসারিত হলো চারদিকে।

বাবা আর রোশান স্যার কিছুক্ষণ কথা বলার পর বাবা তার রুমে চলে গেলেন।ছোঁয়া চুপটি মেরে বসে রইল।ওর বাবা অনেক জেদী কিছুতেই এখন আর ওকে বাড়ি ঢুকতে দিবে না।এই মুহূর্তে বাড়িতে যাওয়াটাও সম্ভব নয়।
রোশান স্যার ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমাকে দেখে তুমি সংকোচবোধ করো না।ভ**য়ও পেয়ো না।বড়ো ভাইয়ের মতো ভাবতে পারো।যা হয়েছে এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও।কোনো কিছুই আমাদের জীবনে চিরস্থায়ী নয়।দুঃখ,খারাপ সময় কোনটাই নয়।সব কিছুই পরিবর্তনশীল।আমার ভাইয়ের জন্য তোমার এই অবস্থা এর দায়বদ্ধতা আমারও আছে।তোমার ভালোর জন্য আমি সব করব।”

ছোঁয়া এবার চোখ তুলে উনার দিকে তাকাল।

আমি উনাকে তন্ময় আর ছোঁয়ার বিষয়টা খুলে বললাম।তন্ময় উনার খুব প্রিয় একজন ছাত্র।উনি সবটা শুনে বললেন, “নিঃসন্দেহে তন্ময়ের মতো একটা ছেলেকে বিয়ে করা যায়।কিন্ত মুশকিল ছাত্র জীবন!দুজনেই স্টুডেন্ট। কীভাবে পারবে সব সামলাতে?

‘পারবে।আপনি ব্যবস্থা করুন।’
‘আমি তো অসুস্থ এখন তো কোথাও যাওয়াও মুশকিল।ওদের ফোন করো। ওদের দিয়ে কাজ করাব।বাসা নিয়েছি আলাদা।সকাল ৫ টায় গাড়ি আসবে জিনিসগুলো তুলতে হবে।ওরা আবার নতুন বাসায় সব জিনিস সাজিয়ে দিবে।তারপর তন্ময় আর ছোঁয়ার বিয়ে হবে।’
‘ওরা জীবনেও আপনার সামনে আসবে না।আপনাকে ভ**য় পায়।’
‘ভ**য় তো আমি ওদের পায়।ওরা যেসব বলে।আসতে বলো।যতই হোক আইনে ওদের দুলাভাই আমি।আর কতদিন আড়ালে থাকবে।’

‘কীহ! নিজেকে দুলাভাই দাবি করছেন!ভাবা যায় আপনার মতো মানুষ নিজেকে দুলাভাই দাবি করে!’

‘সত্য তো অস্বীকার করা যায় না।এটাই সত্য তুমি আমার বউ ওরা আমার শালা-শালী।’

মৃন্ময়কে ফোন দিয়ে বললাম, “কাল ভোর ৫ টায় রোশান স্যার মানে আমার শ্বশুর বাড়ির সামনে হাজির হবি।”

মৃন্ময় এক বাক্য বলে দিল, “ছোঁয়ার বিষয়ে আর কী ঝটকা খাইছি তুই যে ঝটকা দিলি!শেষ মেষ কি না রোশান স্যার তোর জামাই!না মানে আমাদের এইভাবে ফাঁসাতে বিবেকে বাঁধল না তোর?কোন জন্মের শত্রুতা ছিল?দ্বীপ তো বলতেছে আর লেখাপড়াই করব না।তুই কীভাবে আমাদের সাথে এই অন্যায় টা করলি সারাহ?”

এরই মাঝে রোশান স্যার আমার কান থেকে ফোনটা নিয়ে বললেন,
“কাল তোমাদের দু’জন ক্লোজ ফ্রেন্ডের বিয়ে।সো অনেক কাজ বাকি। ভোরে হাজির হয়ে যেয়ো।তোমাদের এতদিনের বিচার কাল হবে।”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here