একটুখানি ভালোবাসা পর্ব -১৪+১৫

#একটুখানি_ভালোবাসা
#পর্ব_১৪
#লেখনীতে_মুগ্ধ_ইসলাম_স্পর্শ
আমার গাড়িটা সোজা খাদে পড়ে যায়।
মুহূর্তের মধ্যে এটা ভেবে থমকে গেলাম যে গাড়িতে তো মাধবীলতা ছিল? তাহলে কী মাধবীলতা,,,,,? এক মুহূর্তের জন্য আমার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিল।
এতক্ষণে ট্রাক’টি পালিয়ে গেছে। চোখের সামনে থেকে ট্রাক’টি সরে যেতেই দেখতে পেলাম রক্তাক্ত অবস্থায় মাধবীলতা মাটিতে পড়ে রয়েছে। তারমানে মাধবীলতা ট্রাক’টি দেখে গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করেছিল আর তখনই ট্রাকটি আমার গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। যার ফলে গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে মাধবীলতা চোট পায়। আমি ছুটে গেলাম মাধবীলতার কাছে। চোখের সামনে মাধবীলতার নিথর দেহটা পড়ে রয়েছে। মাধবীলতার মাথা’টা কোলে নিয়ে কয়েকবার ডাকলাম কিন্তু সাড়া দিল না। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে। কী করবো বুঝতে পারছিনা। তৎক্ষণাৎ আবীর এসে মাধবীলতার নাকের সামনে হাত ধরে দেখল নিশ্বাস নিচ্ছে না। তারপর পালস চেক করে বলল
‘ ভাইয়া, মাধবীলতা আপু তো এখনো বেঁচে রয়েছে! তাড়াতাড়ি তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে যখন তখন সে আমাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে পারে।
আমি কিছুটা চিৎকার করে বললাম,
‘ নাহ আমার মায়াবতী’র কিছু হবে না। ওর কিছু হতে দেব না আমি। তুমি তাড়াতাড়ি ওকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা কর।
‘ একটা গাড়ি নষ্ট হয়ে কিন্তু আরেকটা গাড়ি তো একদম ঠিক আছে। আমরা সবাই একসাথে ফিরবো বলে যাইনি। আপনি আপুকে নিয়ে গাড়িতে উঠুন আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।
আবীর দৌড়ে গিয়ে গাড়ি নিয়ে এলো। আমি মাধবীলতাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। সঙ্গে সাগর আর সুবর্ণাও উঠলো। বাকি সবাই সেখানেই রয়ে গেলো।
আমি আবীরকে মিনতির কণ্ঠে বললাম,
‘ ভাই, আবীর? আমার তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাও। আমার আমার মায়াবতী’র যেন কিছু না হয়।
আবীর গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিল। কয়েক মুহূর্ত পর মাধবীলতা চোখ খুলে তাকালো। আমার দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো।
‘ মায়াবতী তোমার কিছু হবে না। চোখ দুটো খোলা রাখার চেষ্টা করো। আর কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা হাসপাতালে পৌঁছে যাব।
মাধবীলতার মুখে এখনো সেই পুরোনো হাসিটা লেপ্টে রয়েছে। মাধবীলতা আমার গালে হাত রাখলো। ওর হাতে লেগে থাকা রক্ত আমার গালে লেপ্টে যায়।
আমার চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে মাধবীলতার মুখের উপর পড়ল।
আমার জীবনে আজ সহ দু’দিন কাঁদলাম।
মাধবীলতা তার কোমল হাত দিয়ে আমার চোখের অশ্রু মুছে দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল যেন আর চোখের পানি না ফেলি।
কিছুক্ষণ পর আমরা সবাই হাসপাতলে এসে পৌঁছলাম। মাধবীলতাকে কোলে নিয়ে ভিতরে ছুটে গেলাম। আবীর দৌড়ে গিয়ে ডক্টরকে ডেকে নিয়ে আসে।
মাধবীলতাকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ পর একটা নার্স বেরিয়ে এসে বলল,
‘ ম্যাডামের শরীর অনেক রক্ত ঝরে গেছে। সুপার ডোনার লাগবে। এই মুহূর্তে এতো রেয়ার রক্ত আমাদের হাসপাতালেও নেই। যত দ্রুত সম্ভব এ’বি পজিটিভ রক্তের ব্যবস্থা করুন।
কথাগুলো বলেই নার্স চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। নার্সকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
‘ রক্ত নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ভাগ্যক্রমে ওর রক্তের সাথে আমার রক্তের মিল রয়েছে। আমি দেবো রক্ত।
‘ এ’তো অনেক খুশির খবর। তাড়াতাড়ি আসুন আমার সাথে।
নার্স আমাকে ভিতরে নিয়ে যায়। মাধবীলতা শুয়ে রয়েছে। আর ডক্টর’রা চিকিৎসা করছে। আমাকে মাধবীলতার পাশের বেডে শুইয়ে দিল। যতটা সময় ধরে রক্ত নিয়েছে ততটা সময়ই তাকিয়ে ছিলাম মাধবীলতার মুখের দিকে। মেয়েটা কতটা কষ্ট সহ্য করছে।
অবশেষে রক্ত দিয়ে বের হলাম।
স্থীর হয়ে বসে রইলাম। চোখের কোণে অশ্রু। আবীর আমার পাশে এসে শীতল কণ্ঠে বলল,
‘ ভাইয়া আপনার চোখে পানি?
আবীরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললাম। আবীরের কাঁধে হাত রেখে বললাম,
‘ জানো আবীর! ছোটবেলা থেকেই আমার কোনো প্রিয় জিনিসকে আমি আমার কাছে বেশিক্ষণ রাখতে পারতাম না। হয়তো কোনোভাবে সেই জিনিস টা ভেঙে যেতো নাহয় সেটা নিজের বেখেয়ালিতে হারিয়ে ফেলতাম। তেমনিভাবে আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলোও আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে। প্রিয় জিনিসগুলোর মতো হারিয়ে ফেললাম প্রিয় মানুষগুলোকেও। আর আজ দেখো নিজের মতো করে যখন মাধবীলতা’কে ভালোবাসলাম। যখন সেও আমার প্রিয় হয়ে উঠলো তখন সেও আমার সাথে লুকোচুরি খেলতে শুরু করল। কী এমন অপরাধ করেছি যার ফলে প্রতিটি মুহূর্তে এভাবে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমায় বলতে পারো? আল্লাহ যখন কেড়েই নেবে তাহলে কেনো কাউকে প্রিয় করে পাঠায় আমার জীবনে? আচ্ছা আবীর বলতে পারো আমার জীবনে কী কখনো এক টুকরো সুখের সন্ধান মিলবে না? যখন মাধবীলতার একটুখানি ভালোবাসায় সিক্ত হলাম তখনই সেও এভাবে আমাকে পরীক্ষা মুখে ফেলে দিল।
কথাগুলো বলেই আবীরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। এদিকে আমার কথাগুলো শুনে সুবর্ণা তো নীরবে চোখের পানি ফেলেই চলেছে।
আবীর আমায় শান্তনা দিয়ে বলে,
‘ ভাইয়া! আপনার মতো এতো শক্তিশালী ব্যক্তি যদি এতটা ভেঙে পড়ে তাহলে আমাদের মতো এতো কমজোরি মানুষেরা কী করবে বলুন?
আবীরকে ছেড়ে দিয়ে দু’পা পিছিয়ে বললাম,
‘ আরে পাগল সব সময় নিজেকে স্ট্রং রাখা যায়না। যে মানুষটা অন্যকে গড়ে তোলে! একটা সময় আসে যখন সে নিজেই ভেঙ্গে যায়।
‘ ভাইয়া আমার একটা বিষয় নিয়ে খটকা লাগছে। কেন জানি না আপনাকে কেউ মারতে চায়। ট্রাক’টি আপনার দিকেই ছুটে আসছিল। কিন্তু আপনি সরে যাওয়ায় সে ব্রেক করে।
‘ দুর্ঘটনা’টি আমার হলেও হয়তো ভালো হতো। আমার কষ্ট’টা এখন মাধবীলতা সইছে।
কিছুক্ষণ পর ডক্টর বেরিয়ে এলো।
‘ আপনার রোগী এখন সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত। বিশেষ করে স্পর্শ সাহেব আপনার জন্য সে বেঁচে রয়েছে। তার শরীর এতটাই রক্ত বেরিয়ে গেছে যে রক্ত না পেলে হয়তো তাকে বাঁচানো’টা মুশকিল হয়ে যেত।
রোগীকে কেবিনে দেওয়া হবে। আপনারা সবাই দেখা করতে পারেন।
কেবিনে প্রবেশ করলাম। নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে রয়েছে আমার মায়াবতী। মাথায়, হাতে, পায়ে শরীরের অনেক জায়গাতেই ব্যান্ডেজ।
মাধবীলতার মাথার পাশেই বসলাম। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ডাক দিলাম। আমার ডাক শুনে মাধবীলতা চোখ খুলে চাইলো।
‘ এখন কেমন লাগছে তোমার শরীর?
মাধবীলতা মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল অনেকটাই ভালো।
বাকি সবাই টুকটাক কথা বলে বাইরে গেল।
মাধবীলতা হাত দিয়ে ইশারা করে আমার বুক দেখিয়ে দিল।
‘ আমার বুকে কী হয়েছে?
‘ আমাকে তোমার বুকে তুলে নাও।
‘ একদম এটা করা যাবে না। তোমার বেশি নড়াচড়া করলে সমস্যা হবে। দেখছো না তোমার শরীরের কী অবস্থা? ব্যথা পাবে।
‘ আমি কোন কথা শুনতে চাই না। আপনার বুকে মাথা রাখবো মানে রাখবো। যদি আমার কথা না শুনেন তাহলে ঔষধ খাবো না। আর কখনো ঠিকও হবো না এই আমি বলে দিলাম।
এই মেয়ের জিদ গেল না। যেটা বলবে সেটাই করেই ছাড়বে। সাবধানে ধরে মাধবীলতাকে বসিয়ে বুকে জায়গা করে দিলাম। অমনি আমার বুকে টুপ করে মাথা লুকিয়ে চুপটি করে বসে রইলো। আমিও আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম আমার মায়াবতী’কে।
এভাবেই কিছুক্ষণ চলার পর মাধবীলতাকে ডাকলাম। কিন্তু সাড়া দিল না। পাগলিটা বুকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। এতটাই আরাম পায় সে আমার বুকে। মাধবীলতা একটু বেশিই ভালোবাসা কাতুরে। বিড়ালছানা যেমন সুযোগ পেলেই কোলে উঠে আদর পেতে চায় তেমনিভাবে মাধবীলতাও যখন ইচ্ছে হয় তখন আমার বুকটা খুঁজে নিজের ক্লান্তি দূর করতে।
কিছুক্ষণ পর আবীর তরল জাতীয় খাবার নিয়ে এলো। ডক্টর এসে এরকম দৃশ্য দেখে একটা হাসি দিয়ে বলল,
‘ আপনাদের দেখে কী মনে হচ্ছে জানেন?
আমি শুধু প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালাম।
‘ দেখে মনে হচ্ছে না যে আপনার উনি অসুস্থ। যেভাবে আপনার বুকে শান্তির ঘুম দিচ্ছে, মনে হচ্ছে সে একেবারেই সুস্থ। এখন খাবার খাইয়ে ঔষধ দিন।
‘ ঘুমোচ্ছে যখন, তখন ঘুমোক না। যখন ঘুম ভাঙবে তখন নাহয় খাবে।
‘ বেঁচে থাকুক আপনাদের ভালোবাসা।
চলে গেলেন তিনি। এরই মধ্যে বাকি সবাই চলে এসেছে। সবাই একসাথে বসে আছে। সাগর সুবর্ণার বলে,
‘ কয়েকদিন আগেও কতো ব্যবসায়ীরা তার মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল স্যারের কাছে। কিন্তু স্যার কোনো কথা না বলেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিতো। কতো সুন্দরীরা স্যারকে অফার করতো। কিন্তু স্যার কখনো সেসবে জড়ায়নি। সবসময় নিজের মনকে পাথরের মতো শক্ত করে রাখতো। কে জানে সেই পাথরেই ফুল ফুটবে? আজ একটা মেয়েকে এতটাই ভালোবাসে যে তার জন্য স্যারের চোখে পানি। একটা মানুষকে কতটা ভালোবাসতে পারলে ভালোবাসার মানুষটির চোখে পানি চলে আসে।
‘ ঠিকই বলেছেন। স্যারও যে কাউকে এতটা ভালোবাসবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।
‘ কেউ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে ভালোবাসার মূল্য আবার কেউ হারিয়ে গেলে। আচ্ছা সুবর্ণা একটা প্রশ্ন করব?
‘ হ্যাঁ বলুন।
‘ কেউ যদি চিৎকারের ভাষা বুঝতে না পারে! তাহলে কী অভিমানের ভাষা বুঝবে আদৌ?
‘ আপনার কথা’র ঠিক মানে বুঝলাম না।
‘ বেঁচে থাকলে অনেকেই মূল্য দিতে জানে না। হারিয়ে গেলে ঠি’কি হারিয়ে যাওয়া মানুষ’টার অভাব অনুভব করে একাকিত্বে কাটিয়ে পাড়ি দেয় বাকি’টা জীবন।
সাগর বাইরে চলে যায়। এদিকে সুবর্ণা ভাবুক হয়ে ওঠে।
সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙে মাধবীলতার। কয়েকঘণ্টা বুকেই ছিল। এতটা সময় একইভাবে থাকার পরও আমার মনে এক’ফোঁটা বিরক্তি লাগেনি। খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলাম। রাতে সবাই মাধবীলতার সঙ্গেই ছিল। এত করে বললাম রিসোর্টে ফিরতে। কিন্তু কেউ যেতে রাজি হয়নি।
সবার এক কথা!
‘ মাধবীলতা আপুর খারাপ সময়ে আমরা কোথাও যাব না।
সবার এতো ভালোবাসা পেয়ে মাধবীলতার মুখের হাসি যেন বেড়েই চলেছে।
পরদিন সকালে একটা বাচ্চার কণ্ঠে ঘুম ভেঙে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,, #একটুখানি_ভালোবাসা
#পর্ব_১৫
#লেখনীতে_মুগ্ধ_ইসলাম_স্পর্শ
মিহির কণ্ঠস্বর শুনে আমার ঘুম ভেঙে যায়। মিহি আমাকে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে বারবার করে ডেকে বলছে,
‘ ভাইয়া ওঠো এই দেখো আমি এসেছি।
মিহি’কে দেখে একটু চমকে উঠলাম. এখানে কী করছে ও? আর কী করেই বা আসলো?
‘ তুমি এখানে কীভাবে বুড়ী? কার সাথে এসেছো তুমি?
‘ আমাকে নানু’ভাই নিয়ে এসেছে। আমরা সবাই এসেছি আপুকে দেখতে।
সামনে তাকিয়ে দেখলাম, নানু ভাই আর বড় মামি মাধবীলতা’কে প্রাণভরে আদর করছে।
নানু কে উদ্দেশ্য করে বললাম,
‘ নানু ভাই তোমরা এখানে কী করছো? মাধবীলতা অসুস্থ তোমরা জানো কীভাবে?
নানু কপট রাগে উত্তর দিল,
‘ কেউ মরে গেলেও তো কখনো খবর দিস না তুই! আবীর আমাদেরকে ফোন দিয়ে বলেছে মাধবীলতার এক্সিডেন্টের বিষয়ে। তুই কেমন ছেলে বল তো! একটা মেয়েকে দেখেশুনে রাখতে পারিস না। এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কবে থেকে হয়েছিস তুই?
‘ আরে আমি কেন দায়িত্বজ্ঞানহীন হবো? কেউ যদি আমাকে মা,,,,!
বাকিটুকু বলতে গিয়ে থেমে গেলাম। কোনভাবেই বাড়ির লোকজনকে আমাকে মারার বিষয়ে বলা যাবে না। তাহলে অযথা চিন্তা করবে সবাই।
নানু প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘ কী হলো থেমে গেলি কেন? তোকে কী?
‘ ও তেমন কিছু না নানু। এখন তো মাধবীলতা সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত। এরপর থেকে আর কখনো মাধবীলতার কোন বিপদ হতে দেব না আমি কথা দিলাম তোমাকে।
‘ কথাটা যেন মাথায় থাকে!
‘ মাথায় থাকবে নানু। কত প্রিয় মানুষ জীবন থেকে চলে গেল, সচেতন হইনি। এখন অন্তত সচেতন হতে হবে। নাহলে জীবনে প্রিয় বলতে আর কিছুই থাকবে না।
দু’দিন পর মাধবীলতা কে নিয়ে আমরা সবাই বাড়ি চলে আসি। নানু ভাইয়েরা কয়েকদিন মাধবীলতার দেখাশোনা করে চলে যায়। এখন মাধবীলতা মোটামুটি সুস্থ। তবে হাঁটতে পারেনা ঠিকমত। তবে মিহি থেকে গেছে। মাধবীলতা সুস্থ হলে মিহিও চলে যাবে।
সন্ধ্যায় ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে ভাবছি আমার জীবন’টাকে।
আমার জীবন’টা কী এভাবেই কেটে যাবে? স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারি না কখনো। প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয় এই বুঝি কোনো ঝর এসে সবকিছু কেঁড়ে নিয়ে গেল।
প্রতিটি মানুষের জীবনে শান্তি থাকলে, থাকে না শুধু স্বস্তির কোনো চিহ্ন।
হটাৎ কারো পায়ের শব্দ পেয়ে পিছু ফিরে চাইলাম। মিহি’কে ধরে মাধবীলতাও ছাদে এসেছে।
ছুটে গেলি মাধবীলতা’কে ধরলাম। মাধবীলতা মিহি’কে ইশারা দিয়ে চলে যেতে বলল।
মাধবীলতা’কে ছাদে পাতানো দোলনায় বসিয়ে দিলাম। আমিও ওর পাশে বসে পড়ি। মাধবীলতা আমার কাঁধে মাথা রাখে।
‘ তোমাকে এত কষ্ট করে কে আসতে বলেছে ছাদে? সুস্থ হতে না হতেই পাকনা গজিয়েছে তাই না!
মাধবীলতা কাঁধ থেকে সরে মাথা টা বাঁকা করে মিষ্টি করে একটা হেঁসে দেয়৷
মেয়ে’রা পারেও বটে। কীভাবে রাগ ভাঙাতে হয় এই ক্ষমতা এরা জন্মের পরেই আয়ত্ত করে নেয়৷
‘ আপনার মন কেন খারাপ?
‘ তুমি কীভাবে বুঝলে আমার মন খারাপ?
‘ ভালোবাসি! তাই হয়তো বুঝতে পারি আপনার মন কখন ভালো থাকে আর কখন খারাপ।
‘ সুখের নাগাল কবে পাবো বলতে পারো মায়াবতী?
‘ এরকম কথা কেন বলছেন? আপনি কী সুখে নেই।
‘ আমার না খুব ভয় হয় জানো। আমি প্রিয় জিনিস আর প্রিয় মানুষ খুব তাড়াতাড়ি হারিয়ে ফেলি। তুমি নিজেকেই দেখো। কতবড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেলে।
মাধবীলতা আমার গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
‘ এইযে দেখুন আমি একদম সুস্থ। কিচ্ছু হয়নি আমার। আপনি থাকতে কী আমার কিছু হতে পারে বলুন?
‘ পাগলের মতো কথা বলছো তুমি! যেটা আল্লাহর ইচ্ছে সেটা’কে আমি আটকাতে পারবো কখনো? কখনোই নয়।
‘ ভয় পাবেন না। আমি কখনো আপনার জীবন থেমে হারাবো না।
আমি মাধবীলতার সামনে হাত বাড়িয়ে দিলাম। মাধবীলতা ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো।
‘ কথা দিলে কখনো ছেড়ে যাবে না?
মাধবীলতা আমার হাত ধরে বলল,
‘ হুম। আচ্ছা আপনি বললেন না তো আপনার গল্প’টা?
‘ এখন ভালো লাগছে না। পরে কোনো সময় বলব।
মাধবীলতাও আর জোর করল না।
আমি মাধবীলতার কোলে মাথা রেখে ওর পেটে মুখ লুকিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।
এভাবে কিছুটা সময় কাটিয়ে মাধবীলতাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে ফিরলাম। মিহি বসে পড়াশোনা করছে। আমি খাবার টেবিল থেকে দু’জনের জন্য খাবার নিয়ে গিয়ে দু’জনকেই খাইয়ে দিলাম। এখন সময়’টা এমন হয়ে গেছে যে। মনে হয় আমার বুকের দু’পাশে দু’টো কলিজা। একদিকে মাধবীলতা আর অন্যদিকে মিহি। আমি নিজেকেও বিশ্বাস করতে পারছি না যে অচেনা, অজানা দু’টো মেয়ে আজ আমার সবথেকে প্রিয় মানুষ হয়ে উঠবে। ওদের খাইয়ে দিয়ে আমিও খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে এসে মাধবীলতা’কে ঘুম থেকে তুললাম। তারপর ওকে ধরে বাথরুম নিয়ে নিয়ে নিজে ব্রাশে টুথপেষ্ট মেখে ব্রাশ করিয়ে দিয়ে ফ্রেশ করে নাশতার টেবিলে বসালাম। সকালেও নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম। শেষে নিজে খেয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলাম। এমন সময় মাধবীলতা বায়না করে বসে, সেও নাকি অফিসে যাবে। সারাদিন বাড়িতে শুয়ে-বসে কাটাতে ভালো লাগে না।
‘ এই অবস্থায় অফিসে গিয়ে তুমি কী করবে?
‘ আমি জানি না কী করব। তবে এটা জানি গিয়ে আপনার কাজের বারোটা বাজাবো।
‘ কিন্তু তুমি চলে গেছে মিহি একা বাড়িতে কী করবে।
‘ মিহি’কেও নিয়ে যাব।
কী আর করার। সবাইকে নিয়েই অফিসে এলাম। আমার তো তেমন কাজ নেই তাই বসেই কাটাতে হয়।
এদিকে টিফিন টাইমে সাগর সুবর্ণার কাছে এসে বলল,
‘ সুবর্ণা তোমার সাথে একটু কথা ছিল?
‘ আরে স্যার আপনি অনুমতি কেনো চাইছেন। নিঃশঙ্কোচে বলুন আমায় কী বলতে চান আপনি।
‘ আসলে ছুটির পরে তোমার হাতে একটু সময় হবে? বেশিক্ষণ লাগবে না। শুধু অল্প কিছু সময়ের জন্য থাকলেই হবে।
‘ কেন নয়? অবশ্যই। আমি ছুটির পর অফিসের বাইরে আপনার জন্য অপেক্ষা করব।
সাগর মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। অফিস ছুটি হওয়ার পর সুবর্ণা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সাগরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সাগরও চলে আসে। সাগর একটা শুঁকনো হাসি দিয়ে বলল,
‘ চলো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।
সুবর্ণাও পাল্টা হেঁসে হাঁটা শুরু করে।
কিছুটা পথ হাঁটার পর সুবর্ণা জিজ্ঞেস করে,
‘ স্যার আপনি কিছু বলবেন বলেছিলেন?
‘ সুবর্ণা! বাড়ি থেকে মেয়ে দেখছে আমার জন্য!
সাগরের কথা শুনে সুবর্ণার হাস্যজ্বল মুখটা মলিন হয়ে গেল। শীতল কণ্ঠে বলল,
‘ এ’তো অনেক খুশির খবর স্যার। আপনার বিয়েতে আমরা সবাই কত মজা করব।
‘ তোমার সত্যিই খুব আনন্দ হচ্ছে তাই না?
‘ কী স্যার অবাক করার মত কথা বলছেন আপনি। আনন্দের সংবাদ পেলে আনন্দিত হবো না?
এবার সাগর কিছুটা রেগে গিয়ে সুবর্ণার সামন-সামনি এসে দাঁড়ায়। সুবর্ণার হাতদুটো শক্ত করে ধরে বলে,
‘ আচ্ছা তুমি কী সত্যিই আমাকে বুঝো না নাকি বুঝতে চাও না?
‘ আপনার কথার মানে বুঝতে পারছি না স্যার।
‘ তোমাকে কতবার আমার অনুভূতির কথা বলেছি সুবর্ণা! তোমাকে আর কীভাবে বোঝাবো তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি? একটা কথা বলো তো। তোমার মনে কী আমার জন্য এতটুকুও অনুভূতির সৃষ্টি হয়নি?
‘ আমি কিছু জানি না।
‘ শুধু হ্যাঁ বা না বলো।
‘ বললাম তো আমি কিছু জানি না। কিছুটা চিৎকার করে বলে উঠলো। চোখ দিয়ে পানিও গড়িয়ে পড়ছে।
‘ স্যার আমার ব্যাথা লাগছে।
সাগরের চেপে ধরার কারণে সুবর্ণা কেঁদেই ফেলেছে।
সাগর মলিন কণ্ঠে বলল,
‘ স্যরি। ক্ষমা করে দিও। আমি বুঝতে পারিনি তুমি ব্যাথা পাবে। আসলে কী বলো তো! আমি সত্যিই বোকা। জোর করে যে ভালোবাসা হয় না এটা আমার মাথাতেই ছিল না। শুধুশুধু তোমাকে বিরক্ত করি আমি। তুমি যে আমাকে ভালোই বাসোনা এটা আমি ভুলে গিয়ে বারবার জোর করে তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কাঙ্গাল হই। কথা দিলাম আজকের পর থেকে আর তোমাকে বিরক্ত করব না। ভালো থেকো।
সাগর চোখের কোণে থাকা দু’ফোঁটা অশ্রু মুছে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল।
সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে সুবর্ণা চিৎকার করে বলে উঠলো,
‘ আমিও আপনাকে ভালোবাসি।
বাক্যটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে সাগর সুবর্ণার কাছে ছুটে আসে।
‘ আপনি আমাকে যতটা ভালোবাসেন আমি তারথেকেও বেশি ভালোবাসি আপনাকে।
‘ তাহলে কেন শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছো আমাকে? কেন বলোনি আমায়?
‘ কোন মুখে বলব? একটা ডিভোর্স হয়ে যাওয়া মেয়ে কীভাবে, কোন মুখে ভালোবাসার কথা বলবে কাউকে? মানুষ তো তখন আমায় বেশ্যার সাথে তুলনা করবে! বলবে একটা যেতে না যেতেই আরেকটা ধরেছি। প্রথম সংসার তো টেকাতে পারিনি আমি। আমি তাকে সুখী করতে পারিনি বলেই সে অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেললো। তারপর ডিভোর্স। আর তাছাড়াও আপনি কতবড় একজন অফিসার। আপনার বেতন কোথায় দেড় লাখ টাকা আর কোথায় আমার বেতন মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা। সবদিক ভেবে দেখলে আমি আপনার পায়ে পড়ে থাকারও যোগ্য নই। তাহলে বলবে আমায় কোন মুখ নিয়ে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে বলতাম যে আমি আপনাকে ভালোবাসি? এই কথাগুলো শুনলে আপনি আর আপনার পরিবার মেনে নিতো আমায়? কখনোই না। এবার তো বুঝুন আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতো বুক ফুলিয়ে কাউকে বলতে পারি না তাকে আমি ভালোবাসি।
সুবর্ণার কথাগুলো শুনে সাগর বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। একটা মেয়ের জীবনে এতকিছু ঘটে গেছে। অথচ তার চলাফেরা, হাসিখুশি মুখ দেখলে বুঝাই যায় না তার মধ্যেও এতটা কষ্ট লুকিয়ে আছে।
সাগরের নিশ্চুপতা দেখে সুবর্ণা আবারও বলে,
‘ এখন চুপ করে রইলেন কেনো? মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আমার সাথে আর কথা বলার রুচি নেই তাই তো? আমি জানতাম এমনটাই হবে। এটা হওয়ারই ছিল যে।
সাগর সুবর্ণার চোখের পানি আলতো করে মুছে দিয়ে গালে হাত বুলিয়ে বলল,
‘ আজ বাড়িতে গিয়ে মা’কে বলব যেন ঘটক’কে না ডাকে। বলব তাদের বউমা পেয়ে গেছি।
সাগরের কথায় সুবর্ণা তাজ্জব বনে যায়।
‘ তারমানে আপনি এতক্ষণ মিথ্যে বলেছেন! বাড়ি থেকে মেয়ে দেখেনি?
‘ না। শুধুমাত্র তোমার মনের কথা মুখ দিয়ে বের করানোর জন্য এই কষ্ট’টা করা। বের করে ফেললাম না কথাগুলো!
‘ কিহ! আপনি একটা খবিশ, শয়তান, সজারু, কালা হাতি, গণ্ডার, বাদর, আপনি আপনি,,,,,
‘ আর কী বলো। মনে পড়ছে না? আচ্ছা পড়ে মনে পড়লে বলবে নাহয়। এখন চলো তোমাকে নিয়ে এই রাতের শহর’টা ঘুরবো।
দু’জন দু’জনার পাশাপাশি হাতে হাত দেখে হারিয়ে যায় এই কোলাহলপূর্ণ শহরে।
কেটে গেল একমাস। মাধবীলতা এখন পুরোপুরি সুস্থ। আমি অফিসে কিছু ফাইলের কাজ করছিলাম। এমন সময় আবীর ফোন দিল। ফোন রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গেই হাঁপানোর শব্দ পাচ্ছি।
‘ কী হয়েছে আবীর? তুমি এভাবে হাঁপাচ্ছ কেন?
‘ ভাইয়া সবশেষ হয়ে গেছে।
‘ সবশেষ হয়ে গেছে মানে?
‘ আমি মাধবীলতা আপু আর মিহি’কে নিয়ে কেনাকাটা করছিলাম। কেনাকাটা শেষ হয়ে গাড়িতে উঠবো এমন সময় কতগুলো লোক এসে আমাকে অজ্ঞান করে দিয়ে মাধবীলতা আপু আর মিহি’কে নিয়ে চলে যায়।
আবীরের কথা শুনে আমার মাথা ভনভন করতে শুরু করল।
‘ এই আবীর তোমার মাথা ঠিক আছে তো? কীসব ভুলভাল বকছো তুমি! আশেপাশে দেখো কোথাও রয়েছে হয়তো।
‘ ভাইয়া আমি সত্যি বলছি ওরা আপুকে নিয়ে চলে গেছে। আমি জানি তারা কে ছিল।
আমি ফোন কেটে দিয়ে বাইরে বের হবো এমন সময় আবারো ফোন আসে। তাকিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার। রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গেই একটা বিশ্রী হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।
‘ কষ্ট হচ্ছে মি. গুড্ডু? কষ্ট তো হবেই। কেননা তোমার প্রাণভোমরা যে এখন আমার হাতে বন্দি রয়েছে।
‘ কে তুই? তোকে যদি একবার,,,,
‘ উহুম রেগে গেলে চলবে না গুড্ডু ভাই। তোমাকে সামনে কতটা লড়াই করতে হবে বলো না। ইশ তোমার কথা ভেবে আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে। যদি নিজের প্রেমিকা’কে জীবিত অবস্থায় দেখতে চাও তাহলে ****** এই ঠিকানায় চলে এসো। আর ভুলেও যদি পুলিশ, ওহ স্যরি স্যরি স্যরি। তোমার তো পুলিশের প্রয়োজন হয় না তোমার চ্যালা আবীরকে নিয়ে আসতে পারো। তাড়াতাড়ি চলে এসো। নাহয়,,,
মিহির চিৎকারের শব্দ পেলাম।
‘ শুয়ো*****র বাচ্চা ওদের কিছু কোনো ক্ষতি হয়। তাহলে তুই যে পৃথিবীতে আর টিকে থাকতে পারবি না এটা জেনে নে।
‘ হা হা হা।
আবারও সেই বিশ্রী হাসির শব্দ।
ফোনটা কেটে দিল।
আমি সঙ্গে সঙ্গে আবীরকে ফোন দিলাম।
‘ আবীর তুমি ***** এই ঠিকানায় চলে এসো। আর হ্যাঁ তুমি পৌঁছে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে আমি না আসা পর্যন্ত।
‘ ঠিক আছে ভাইায়া।
তারপর আমি আর আবীর মিলে পৌঁছে গেলাম তার দেওয়া ঠিকানায়। নির্জন এরিয়ায় একটা গোডাউনের ভিতরে মিহি আর মাধবীলতা’কে বেঁধে রেখেছে।
আমাদের দেখেই একসঙ্গে পাঁচটা লোক দৌড় এলো। আমি আর আবীর সব’কটাকে শুইয়ে দিলাম। আস্তে আস্তে প্রায় অর্ধেক লোককে মেরে ফেললাম। তখনই সামনে আসে এক চিরচেনা মুখ।
‘ খবরদার আর একটা লোকের গায়েও হাত দিবি না। নাহলে তোর প্রাণপাখি’কে মেরে ফেলবো।
ছেলেটাকে দেখে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।
‘ তুমি?
‘ অবাক হয়ে গেলি গুড্ডু ভাই? সেদিনের সেই ছোট্ট ছেলেটা আজ তোর সামনে দাঁড়িয়ে। মনে আছে সেদিনের কথা? যেদিন আমার চোখের সামনে তুই আমার বাবা মা’কে নিজের হাতে মেরে ফেলেছিস? তুই হয়তো ভুলে যেতে পারিস সেদিনের কথা। কিন্তু আমি ভুলিনি রে। আমারই চোখের সামনে তুই আমার বাবা মা’কে নির্মমভাবে হত্যা করলি। অথচ আমি কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু আজ আমি প্রতিশোধ নেবো। তোর এই প্রেমিকা আর তার বোনকে মেরে। হা হা হা।
আমি ওকে হাতজোড় করে বললাম,
‘ না না ভাই তুমি এরকমটা কোরো না। তোমার শত্রুতা তো আমার সঙ্গে তাই না। তুমি আমাকে আমাকে মেরে ফেলো। তবুও ওদেরকে ছেড়ে দাও। এই দেখো আমি তোমার সামনে নত হচ্ছি। ওদের তুমি ছেড়ে দাও ভাই।
‘ আচ্ছা? এতো মায়া হচ্ছে এদের জন্য। ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম তোর প্রেমিকা’কে। এই বড়টাকে ছেড়ে দে।
একটা লোক এসে মাধবীলতার বাঁধন খুলে দেয়। মাধবীলতা দৌড়ে আমার কাছে চলে এলো। ভয়ে আমার পিছনে লুকিয়ে পড়লো। আমি লক্ষ্য করলাম মিহির থেকে ছেলেটা অনেকটাই দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তাই দৌড় দেওয়ার জন্য এক’পা বাড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে কেউ আমার পিঠে ছুরি ঢুকিয়ে দিল। শরীর থেকে ঝরঝর করে রক্ত বেরোতে থাকলো। কোনোমতে পিছনে ঘুরে দাঁড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গে পেটেও ছুরি ঢুকিয়ে দিল।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here