#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩২
—‘ভাইয়া! আদ্রর অবস্থা একদমই ভালো না, জলদি হসপিটালে যা…’
হঠাৎ আনাজের রুমে কড়া পড়ায় খুলতেই দেখে আনজানার বিধ্বস্ত রূপ। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আনজানা তাকে জানান দেয় আদ্রর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। বড় বড় দম ছাড়ছে আনজানা। আনাজ কিছু একটা বলার জন্য ঠোঁটযুগল প্রসারিত করতেই ফোনটা ভো ভো করে নেচে উঠে। রাতে বেলা ফোনটা ভাইব্রেটই রাখতে হয়। নতুবা ফোনের রিংটোনে ইয়ানার সমস্যা হয়ে যায়।
আনাজ সন্তপর্ণে ফোনটা রিসিভ করে নেয়।
–‘হ্যালো, ডক্টর আনাজ স্পিকিং…. ‘
–‘ হ্যালো স্যার, একটা পেশেন্টের অবস্থা ভালো না। ওই যে রক্তক্ষরণ হওয়ায় হাতে স্যালাইন লাগিয়ে দিলেন। পরে তার ভালোবাসার মানুষটাকে খুঁজে না পেয়ে স্যালাইনটা টেনে ছিড়ে ফেললো। এখন প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছিলো। ‘
–‘তা তোমরা ড্রেসিং করাও নি?'[অস্থিরতার সাথে]
–‘জ্বি স্যার। আমরা করে দিয়েছি। তবে তার অবস্থা ভালো না। রক্ত লাগবে এবি পজিটিভ। তার চেনা পরিচিতরা খোঁজ করেও রক্ত খুঁজে পায়নি!’
–‘হোয়াট? এবি পজিটিভ রক্ত? আচ্ছা তোমরাও চেষ্টা করো কাউকে পাও কি না। আর একটু চেক করো আমাদের স্টকে রক্তটা মিলবে নাকি। বলা যায় না থাকতেও পারে। আর আমি আসছি।’
ফোনের লাইন কেটে যায়। একটা শার্ট পরে চটজলদি তার উপর সাদা এপ্রনটা জড়িয়ে নেয় আনাজ।
বেডে বসে বসে দেখছিলো ইয়ানা। মুখে কৌতুহলের ছাপটা বিদ্যমান। কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই আনজানা বলে,
–‘ভাইয়া ব্লাড গ্রুপ এবি পজিটিভ হতে হবে? ‘
–‘হ্যা কিন্তু তোকে ওই থার্ড ক্লাসটার জন্য অভারপ্রটেকটিভ না হলেও চলবে। আই নো তোর রক্ত এবি প্লাস। কিন্তু এসবে মত দিচ্ছি না।’
ফটাফট হাতের ঘড়িটা পড়তে পড়তে বলে আনাজ।
তেতিয়ে যায় আনজানা। আবারও জোড়ালো গলায় বলতে চেষ্টা করে,
–‘ এই তোর ডাক্তারির দৌড় ভাইয়া? একটা পেশেন্ট যদি ব্লাডের অভাবে মারাও যায় তাও তোর আফসোস হবে না, ফর শিওর।’
–‘মাইন্ড ইয়োর ল্যাংগুয়েজ আনজু’
–‘ইউ মাইন্ড ইওর ন্যাচার ভাইয়া!’
মুখে মুখে জবাব দেয় আনজানা। হাতের ঘড়িটা বাধতে বাঁধতে আনজানার কাছে এগিয়ে আসে আনাজ।
–‘তাহলে তোর প্রেমিকের জন্য আমাদের খারাপও বানিয়ে দিলি? এই দিন দেখানোর জন্য বড় হয়েছিস? ‘ (আনাজ)
–‘সেটা নয় ভাইয়া তুমি বুঝছো না। আমি দেখেছি তার কেমন ব্লিডিং হয়েছে। এখন যদি রক্ত না পাওয়া যায়, তবে নির্ঘাত আদ্র মারা যাবে।’
–‘কি বোঝাতে চাচ্ছিস তুই? স্ট্রেটকাট বল!’
–‘আমি আদ্রকে রক্ত দিতে চাই’
–‘তার মানে এতো রাতে তোকে নিয়ে যেয়ে আমি রক্ত দেওয়াবো? ইম্পসিবল টাস্ক হেহ!’
চলে যেতে ধরে আনাজ। মুহূর্তের মধ্যেই আনজানার বাজখাঁই কন্ঠ তার কর্ণকুহরে বাড়ি খায়।
–‘ভাইয়া, তুই যদি আমাকে রক্ত না দিতে দিস তাহলে আমার ডেডবডি পাবি! ‘
আনজানার কথায় থমকে যায় আনাজ। নিজেকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না আর। চোয়াল শক্ত করে কঠোর গলায় বলে,
–‘তুই কি কথা বলার লাইসেন্স পেয়ে গেছিস? কি যাতা বলছিস ‘
–‘আমি কোনো ইয়ার্কি করিনি ভাইয়া। আদ্র মারা যাক সেটা আমি চাইনা। ও মরে গেলে আমি নিজেকে তিলে তিলে কষ্ট দিতে থাকবো, তারচেয়ে বরং মরে যাওয়াই শ্রেয়!’
আনাজ আর বাঁধ সাধতে চাইলো না। থমথমে গলায় বলে,
–‘তাহলে তুই রক্ত দিবি? মা ববা যদি জানতে পারে? ‘
–‘এক ব্যাগ রক্ত দিলে আমি ফিট হয়ে যাবো না। চিন্তা করিও না। ‘
–‘আচ্ছা চল’। ইয়ানার দিকে একবার অসহায় দৃষ্টি দেয় আনাজ। ইয়ানার ইয়ানার বুকে কৌতূহলের মাদল বাজছে। ভাবনার রেশ কাটিয়ে বলে,
–‘কি হয়েছে তোমাদের ভাইবোনের? ‘
‘এসে বলবো’ একসাথে গলা মিলিয়ে বলে তারা। বেড়িয়ে পড়ে মাঝরাতের স্যাতস্যাতে চৌরাস্তায়। রাস্তাগুলোয় কেমন আঁধারের ছড়াছড়ি। তারই মধ্যে টিমটিমে ড্রিম লাইটগুলো জ্বলছে।
দ্রুত ড্রাইভিং করছে আনাজ। মনে ভীতির সঞ্চারণ ঘটছে তার। ভয়ার্ত কন্ঠে আনজানার দিকে তাকায়। আনজানা নির্বিঘ্নে বসে রয়েছে। বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার।
–‘আমার ভয় করছে তোর কোনো সমস্যা হবে না তো? ‘
–‘উহু হবে না। ব্লাড দেওয়ার পর তুই আমাকে পানি, ডাব এসব ড্রিংক দিস ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। আর টেনশান নিস না।’
শুকনো ঢোক গিলে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভিং এ মন দেয় আনাজ।
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩৩
–‘ম্যাম আপনি অনুগ্রহপূর্বক ১০৭ নম্বর রুমে যান। রক্ত নেওয়ার আগে আপনার রক্ত একবার পরীক্ষা করতে হবে।’
নার্সের কথায় একশ সাত নম্বর রুমের দিকে পা বাড়ায় আনজানা। আনাজ আদ্রর কাছে রয়েছে। আদ্রর অবস্থা পড়ি কি মরি! হসপিটালের স্টকে এবি পজিটিভ গ্রুপের কোনো রক্ত নেই। তাতে আনজানাকেই দিতে হচ্ছে। আদ্রর অবস্থা নাজেহাল। অবশ্য সেটা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে আনজানা। বারংবার তার মুখে দোয়া-দরুদ আওড়াচ্ছে। আদ্র ছেলেটাও কেমন পাগল আনজানাকে না পেয়ে পই পই করে পাগলামো বাড়িয়ে দিয়েছে। আনাজ ফোনেই বলে দিয়েছিলো তাকে অবশ করে দিতে। তাই করা হয়েছে। নতুবা এতোক্ষণ আরো তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলতো বলা যায় না!
আদ্রকে না দেখে আনজানাও কেমন হাসফাস করছে। মনটা ভয়ে কুকড়ে আছে। খানিকবাদেই নার্স আসলো।
–‘ম্যাম আসুন আমার সাথে। আপনার ব্লাড ম্যাচ করেছে।’
মুখে ম্লান হাসি বজায় রেখে রক্ত দিতে যায় আনজানা। ভেতরে ভেতরে ভয় করছে তার। এই প্রথম কাউকে রক্ত দান করছে। ভয় থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে আনাজের সামনে একদম স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছে।
–‘এই বেডে শুয়ে যান। স্যালাইন লাগানো হবে।’
–‘জ্বি’
–যাকে রক্ত দিচ্ছেন তার কে হন আপনি?
–‘ওই__ওই উনার শুভাকাঙ্ক্ষী! ‘
জ্বিভ কামড়ে ধরে আনজানা। এটা ছাড়া মুখে আর উত্তর আসে নি তখন। ভয়ের কাটা গুলো এখনও তার শরীরে এসে বিঁধছে।
–ভয় লাগছে আপনার?
–‘একটু নার্ভাস ফিল হচ্ছে’
–‘সমস্যা নেই কিছু হবে না’
—————————
আনজানার জ্ঞান ফিরতেই আনাজকে ছুটে আসতে দেখে। আনাজ এসে তার মাথায় হাত রেখে বলছে,
–‘আনজুপাখি! ঠিক আছিস তুই? ‘
–‘ হ্যা ভাইয়া। আমার কথা চিন্তা করিস না। আদ্র! কি অবস্থা তার? ‘
বড় দম ছাড়ে আনাজ। আনজানার চুলে হাত দিতে দিতে বলে,
–‘ হ্যা। তোর রক্তে বেঁচে আছে সে।’
আনজানার হাস্যজ্জ্বল মুখ চিকচিকিয়ে উঠে। মনে মনে শুকরিয়া আদায় করে। আনজানা উঠতে নিলেই আনাজ তার বাহুদ্বয় ধরে সোজাসুজি শুইয়ে দেয়।
–‘উঠে কই যাচ্ছিস? প্রেমিককে দেখতে? তা দেখবি। ও তোকেও দেখবে। এখন একটু বেড রেস্টের প্রয়োজন তোর। শুন বাসায় ঠিকঠাক মতো খাওয়া দাওয়া করবি। এখন বেশি বেশি ফ্রুটস খেতে হবে নয়তো উইক হয়ে পড়বি গট ইট? ‘
সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায় আনজানা। আনাজ আবার গাঢ় স্বরে বলে।
–‘তোদের ভালোবাসার কাছে আমরা হার মানতে বাধ্য রে! চিন্তা করিস না। আদ্রর মা বাবার সাথে আমি কথা বলে দেখবো। আর মা বাবাকে আমিই ম্যানেজ করে ফেলবো।তুই তো এবার অনার্স ফাইনাল দিবি। তোর অন্তত রেজিস্ট্রি হয়ে থাকবে’
আনাজের কথায় মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে আনজানার। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে আনাজের দিকে। সিরিয়াসলি? তার ভাইয়া তাকে এসব বলবে?
কথা বলার শক্তিটুকু পাচ্ছে না আনজানা। খালি ভাবছে আদ্র তার হাবি? দুচোখে অন্ধকার দেখে আনজানা।
————————- ❀
ইয়ানা ফোনটা হাতে নিয়ে বারবার আনাজের নম্বরটা ডায়াল করছে। বারবারই বিজি পাচ্ছে। ঘটনাটা এতো জলদি ঘটেছে যে ইয়ানা বুঝে উঠতে পারেনি। মাথায় সেই এক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, আনজানা কাকে রক্ত দিতে চাচ্ছিলো?
ইতি মধ্যে আনাজকে বারোটা টেক্সট করে ফেলেছে। আনাজ সিন করছে না।
একবার ভাবছে মা বাবাকে ডাকবে না কি। তো একবার ভাবছে আনাজ যদি নিষেধ করে এসব তাদের না জানাতে? সাহস কুলাতে পারছে না ইয়ানা। ফোনটা হাতে নিয়ে সাগ্রহে বসে রইলো সে।
এক সময় তার কাঙ্খিত সময় এসে যায়। আনাজের নম্বারে চোখ পরতেই রিসিভ করে কানে তুলে নেয় ফোনটি।
–‘হ্যালো! আনাজ কি হয়েছে? কই আপনারা? আর আনজু কাকে রক্ত দিচ্ছে? ‘
–‘কাম ডাউন ইয়ানা। আমি বলছি। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ওই আসলে আনজানা একজনকে ভালোবাসে…….
আনাজের কাহিনী শুনে থ হয়ে যায় ইয়ানা। এই মুহূর্তে চোখের সামনে ভাসছে আনজানার সেদিনের বলা কথাটা। যেদিন একটা ছেলে তাকে টিজ করেছিলো। তবে, চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে হয় তার। এসব বলা এখন নেহাতই বোকামি! আনাজ এখন এমনি অস্থির এসব শুনলে….
–‘আচ্ছা তাই!’
–‘হ্যা, শুনো মা বাবাকে জাগিয়ে দিও না আবার। তাদের ঘুমোতে দাও। বাবা এসব জানলে প্রেসার বেড়ে যাবে।’
–‘আচ্ছা। তোমরা কখন আসবে? রাত একটা বাজতে চললো তো’
–‘হ্যা ফিরবো, ঘন্টাখানেক লাগতে পারে। তুমি শুয়ে পড়ো। ফোনটা কাছে রেখো। আমরা আসলে খুলে দিও।’
আর কিছু না বলেই ফোন রেখ দেয় আনাজ। অগত্যাই শুয়ে পড়তে হয় ইয়ানাকে। নিশুতি রাত। কিন্তু চোখ বুছতে চাইছে না একটুকুও। তাকেও কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। তার উপর এতো রাতে পাশে আনাজ না থাকায় ভয়গুলো এক সাথে হানা দিচ্ছে। আর এই ভয়ই সর্বদা কৌতূহলকে মৃত করে ফেলে! বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে একাংশ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এসে আছড়ে পড়লো….
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩৪
আনজানার বাহুদ্বয় চেপে ধরে আদ্রর কাছে নিয়ে যাচ্ছে আনাজ। আদ্রকে দেখাতে। এতো রাত হয়ে গেছে তাও আদ্রর কোনো গার্ডিয়ান আসেনি। শুধু মাত্র কয়েকটা বন্ধু তার পাশে আছে। বিষয়টা ভাবতেই খটকা লাগে আনাজের। আদ্র ছেলেটা কেমন যেনো রহস্যময়।
আনজানা আনাজের কাছে পৌছুতেই আনজানা ইশারায় তাকে ছেড়ে দিতে বলে। আনাজ প্রথমে অসম্মতি দিলেও তার জোরাজুরিতে ছাড়তে বাধ্য হয়। আদ্রর মুখে অপার বিষ্ময়! এসব সে স্বপ্ন দেখছে কিনা বুঝতে পারছে না একদমই।
–‘ভাইয়া! ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, একটু বাহিরে যাবি? প্রাইভেটলি কিছু আলাপ করতে চাই’
কথা না বাড়িয়ে ইতস্তত বোধ করে আনাজ বাকি নার্স দের নিয়ে বের হয়ে যায়। আদ্রর গালে হাত রাখে আনজানা।
–‘খারাপ লাগছে?’
–‘পরোয়া করছো?’
–‘উপায় আছে এছাড়া?’
–‘নাহ খারাপ লাগছে না।’
–‘আচ্ছা, স্যালাইনটা খুলে পাগলামো করার মানে কি? ‘
–‘প্রেয়সীকে দেখার সুপ্ত বাসনা! ‘
–‘পাগল লোক!’ (হেসে ওঠে আনজানা)
–‘রক্ত দিয়েছো? ‘
–‘তো? কি করতাম? আপনি এভাবে মরে…
কথা শেষ না করতেই চুপ হয়ে যায় আনজানা। কি থেকে কি বলছিলো সে।
–‘মরে গেলে খুব কষ্ট হতো বুঝি? ‘ (আদ্র)
–‘উহু মোটেও না’
–‘তোমার চোখ বলছে তুমি মিথ্যে বলছো!’
–‘ধেত! শুনেন আমি এখন চলে যাবো। হোপ দ্যাট পাগলামো করবেন না। ‘
–‘আমার শরীরে যখন প্রেয়সীর রক্ত তখন কি আর পাগলামো করা যায়? ‘
–‘কথা তো যেভাবে বলছেন যেনো কতটাই না সুস্থ হুহ!’
হেসে ওঠে আদ্র। কি অমায়িক হাসি। পাশে থাকা গজ দাঁতটা বেরিয়ে আসে৷ সেখানে চেয়ে থাকে আনজানা। নাহ, আজ মানতে হবে শুধু মেয়েদের নয় ছেলেদেরও গজ দাঁতে অন্যরকম সুদর্শন লাগে।
আনাজ ডোর-নক করে। আনজানাকে ডাক দিতেই চলে যায় সে। আদ্রর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে। এতোক্ষণ আদ্র তার হাতটা ধরে ছিলো। আপত্তি করে নি আনজানা। সে চায়নি আদ্র আর কষ্ট পাক। তাই কোনো রুড বিহেভ করে নি।
আনাজের কাছে যেতেই আনাজ তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে।
-‘নিজেরও একটু খেয়াল রাখতে শেখ! তুই রক্তদাত্রী। শরীর প্রচুর উইক থাকবে। এখন একটুতেই পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাসায় যেয়ে বেড থেকে তিনদিন নড়বি না, গট ইট? ‘
–‘হু’
আনজানাকে ধরে ধরে নিচে গাড়িতে এসে বসায় আনাজ। ভালো মতো সিটবেল্টটা পড়ে ড্রাইভিং স্টার্ট করে। আনজানা তার হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে পরখ করতেই দেখে দুটো বাজতে চলেছে।
আনাজের দিকে তাকায় সে। তার ভাইটা কতো কষ্ট করছে তার জন্য। খারাপ লাগে আনজানার।
–‘ভাইয়া তুই আপসেট? ‘
–‘হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলি যে?’ (ড্রাইভিং করতে করতে)
–‘উহু বলোই না!’
–‘নাহ, তা হতে যাবে কেন? ‘
–‘ওইযে রক্ত দিলাম!’
রেসপন্স করলো না আনাজ। আনজানাও কথা বাড়ায়নি আর।
একসময় বাসায় পৌছে যায় তারা। কিছু বাদেই ইয়ানা দরজাটা খুলে দেয়। আনজানার রুম পর্যন্ত পৌছে দেয় আনাজ। তারপর নিজের রুমে চলে যায়। ইয়ানা কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলেও আনাজের জন্য তা পরেনি।
আনাজ ফ্রেশ হতে যায়। শুয়ে পড়ে ইয়ানা। আনাজ কিছু বাদে এসেই তার পাশে শুয়ে পড়ে। সেদিকে পাশ ফিরে ইয়ানা।
–‘এতো রাত হলো যে? ‘
–‘হুম, ওই কথা টথা বললো তো তাই’
–‘আনজু আদ্রকে সত্যি ভালোবাসে? ‘
–‘তাই তো দেখছি। একবার তো আমাদের অন্তত আমাকে বলা দরকার ছিলো তার।’
–‘কি করবেন এখন? ‘
আনাজের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। চশমাটা খুলে রেখে সটান হয়ে শোয়। গালে থাকা চাপ দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
-‘ভাবছি বিয়ে করিয়ে দেই।’
–‘হোয়াট? জানা নেই শুনা নেই একটা অচেনা ছেলে হুট করে এমন পাগলামি শুরু করলো আর আপনারও টনক নড়লো?’
–‘আনজানাও ওকে ভালোবাসে, এটা বুঝতে হবে তোমাকে’
–‘রাখেন আপনার বুঝাবুঝি। তা ছেলেটা আবার সাইকো টাইকো নাকি? ‘
–‘দেখতে শুনতে কথা বার্তায় তো ভালোই। কিন্তু ছেলেটার ড্রিংক করা দেখে থার্ড ক্লাস মনে হলো’
–‘সে কি! ছেলেটার আবার নেশাও আছে? ‘
–‘ধরতে পারছি না। তার গায়ে দীর্ঘদিন ড্রাগস নিলে যে সিমটম পাওয়া যায়, তা পাওয়া যায় নি৷ আমার মনে হয় আনজুর জন্যই ও ড্রাগস নিয়েছে ‘
–‘আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ছেলেটা একটা ফেরেশতা! যাকগে আনজানা ঠিক ছিলো তো? ‘
–‘হ্যা ঠিক ছিলো। তুমি ঘুমিয়ে যেতে পারো। অলরেডি আড়াইটা বেজে গেছে। ‘
ল্যাম্পটা অফ করে দেয় আনাজ। সেলফোনটা ভাইব্রেট করে দেয়। ইয়ানার দিকে তাকাতেই দেখে সে ঘুমে তলিয়ে! তার এলোমেলো চুল ওয়ালা কপালটায় একটা চুমু একে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
চলবে,
চলবে,
চলবে,,,