#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(৮)
********************************
সাদাত বাসায় ফিরেই চাকরি পাওয়ার কথাটা মা’কে জানালো না । খাওয়াদাওয়া শেষে তিনজন মিলে যখন আড্ডা দিতে বসবে তখন বলবে সুখবরটা । খেতে বসে সাদাত দেখলো টেবিলে আজ বেশ ভালো খাবারের আয়োজন । সাধারণত ছুটির দিনে মা পোলাও কোরমা রান্না করেন । আজকে হঠাৎ এমন আয়োজনের কারণটা খুঁজে পেলো না সাদাত । প্লেটে খাবার নিতে নিতে মা’কে জিজ্ঞেস করলো সে –
আজ কী স্পেশাল কিছু না-কি মা ?
কেন রে?
পোলাও রান্না করলে যে ? তুমি তো শুধু ছুটির দিনে পোলাও রাঁধো ।
নিলুফার ছেলের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন তারপর বললেন –
এমনিই রাঁধতে ইচ্ছে হলো ।
পাশ থেকে সানজিদা বললো –
এমনিতে না ভাইয়া , আজকে আব্বার জন্মদিন তাই মা পোলাও রেঁধেছে ।
আব্বার জন্মদিনের কথা সাদাতের মনেই ছিলো না অথচ মা’র ঠিক মনে আছে । আব্বার কথা মনে হয়ে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল । বললো –
সরি মা , একদম মনে ছিলো না আজকের দিনটার কথা ।
সরি কেন বলছিস , সবসময় কী সবকিছু মনে থাকে ?
এটা তো সবকিছুর মধ্যে পড়ে না মা । এটা বিশেষ একটা দিন ।
আরে কেন মন খারাপ করছিস খামোখা ? খা তো, খেয়ে নে ।
সাদাত আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো ।
মা’র রুমে এসে দুই ভাইবোন কতক্ষণ গল্পে ব্যস্ত থাকলো । নিলুফার রুমে আসার পর সাদাত মা’কে পাশে বসিয়ে দু’একটা কথা বলার পর চাকরির কথাটা তুললো –
মা তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি ।
কোন কথা রে ? আচ্ছা তুই আজকে কোথায় গিয়েছিলি বল তো ? আমি তো ভাবলাম তোর অফিস খুলে গেছে । অফিস খুলবে কবে কিছু জানিসনি এখনো ?
মা তোমার কাছে একটা মিথ্যে বলেছি আমি ।
নিলুফার খুব অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন –
কী মিথ্যে বলেছিস ?
মা আজকে আমি নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি ।
নতুন চাকরি ! মাত্রই তো শুরু করেছিলি চাকরিটা, এর মধ্যে আবার নতুন চাকরি কী রে ? সেই চাকরিটা কী চলে গেছে ? তাহলে তুই যে বললি কী সব ঝামেলা হয়ে অফিস বন্ধ । চাকরি চলে গেলে তুই যে আমার হাতে বেতনের টাকা দিয়েছিলি, সেটা কোথায় পেলি ?
মা থামো থামো, বলছি সব । তুমি এতো টেনশন করবে বলেই তো তোমাকে তখন বলিনি । ঐ চাকরিটা আমার তখনই চলে গিয়েছিল মা । আমার জায়গায় অন্য কারো আসার কথা ছিল । উনি চলে আাসায় আমাকে চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়েছে ।
এটা কেমন কথা ?
থাক মা সেই সব কথা এখন আর দরকার নেই, বাদ দাও ওগুলো । আর ঐ অফিস থেকে তো আমাকে দুই মাসের বেতন দিয়েই দিয়েছিলো । তখন তোমাকে এক মাসের টাকাটা দিয়েছিলাম আর এই নাও আরেক মাসের বেতন ।
নিলুফার টাকাটা নিচ্ছেন না দেখে সাদাত টাকাগুলো মা’র হাতে দিয়ে হাতটা মুঠ করে দিলো । তারপর বললো –
ছোট খালুর ওখানে চাকরিতে জয়েন করেছি আজকে ।
কায়সারের ওখানে !
হুম, সেদিন ছোট খালার বাসায় গেলাম না, তখনই খালাকে বলেছিলাম চাকরি চলে যাওয়ার কথা ।
তাবাসসুম জানতো ! শুধু আমি জানতে পারিনি ?
খালাকে বলেছি কারণ খালা নিজ থেকেই খালুর অফিসের চাকরির কথাটা আমাকে বলেছিলেন আর খালা নিজেই তোমাকে বলতে নিষেধ করেছিলেন চাকরি চলে যাওয়ার কথাটা । আচ্ছা মা এখন তো আর কোনো সমস্যা নেই, চাকরি তো পেয়ে গেছি । আগের চাকরি নিয়ে আর কোনো টেনশন কোরো না প্লিজ ।
নিলুফার চাকরি নিয়ে আর কোনো কথা জিজ্ঞেস না করে বললেন –
থাকগে যা হয় ভালোর জন্যই হয় । আচ্ছা শোন এবার যখন বেতন পাবি তখন দুই খালাকে দু’টো শাড়ি কিনে দিস ।
শাড়ি !
হুম, ওরা দু’জনেই আমাকে সবসময় কতোকিছু দিয়েই যাচ্ছে , আমার আর কিছু দেয়া হয় না ওদের ।
আচ্ছা ঠিক আছে ।
.
.
আগের মতো আর ঘন ঘন দেখা করে না জারা আর আদিত্য । বুদ্ধিটা আদিত্যর । সে-ই জারাকে বলেছে তাদের সম্পর্কটা সবার কাছে কিছুদিন অস্বীকার করতে । সবাই একটু ঠান্ডা হলে, পরিস্থিতি অনুকূল হলে আদিত্য নিজেই যেয়ে কথা বলবে সবার সাথে । তবে ম্যাসেঞ্জারে আর ফোন কলে তাদের যোগাযোগ হয় সারাক্ষণ । জারা’ও আগের চেয়ে চালাক হয়ে উঠেছে আদির সাথে থাকতে থাকতে । সে সুন্দর করে বাবা-মা আর বোনকে বিশ্বাস করিয়েছে নিজের মিথ্যেটা । তাবাসসুম সরল মনে মেয়ের সব কথা বিশ্বাস করেছেন । জারা ঠিক মতো ক্লাস করে, ক্লাস শেষে সোজা বসায় চলে আসে । আগের মতো ছুটে বেড়ায় পুরো বাড়িতে, বাবা’র সাথে গল্প করে, আবদার করে । বাড়িতে যে অশান্ত পরিবেশ বয়ে যাচ্ছিল, সেটা কেটে যাওয়ায় তাবাসসুম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ।
প্রায় বিশ দিন পর জারা আর আদিত্যর দেখা হলো । আদিত্য বেশ কিছুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিল জারা’র জন্য । জারা এসে বসে বললো –
কখন এসেছো ?
ঘন্টা খানেক ।
কেন ! আমি তো মাত্র দশ মিনিট লেট করেছি ।
তুমি কখনো আমার জন্য অপেক্ষা করবে না, সবসময় আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো, সারাজীবন ।
মানে কী ?
মানে হলো , অপেক্ষা করা খুবই কষ্টের কাজ । অপেক্ষার সময় তো কাটতেই চায় না, খুব অস্থির লাগে । আমি চাই না তুমি কোনোভাবে এতোটুকুও কষ্ট পাও । কষ্টগুলো সব আমার ভাগে নিয়ে ভালোবাসা সব তোমায় দিলাম ।
বাব্বাহ, তুমি এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারো !
আমি আরো অনেক কিছু পারি ।
আর কী পারো ?
বলবো বলবো, সব বলবো তোমাকে । কেমন ছিলে বলো ?
কেমন থাকবো আবার ! ভালো ছিলাম । তোমার সাথে শুধু অনেক দিন পরে দেখা হয়েছে, কথা তো আজ সকালেও হলো আর এখন তুমি এমন ভাবে জানতে চাইছো যেন বহুদিন আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই ।
তোমাকে না দেখতে পেলে আমি তো এমনই পাগল পাগল হয়ে যাই, জানো না তুমি ?
জারা হেসে বললো –
আচ্ছা তুমি যেন কী কাজ শুরু করবে বলেছিলে সেটার কী অবস্থা ?
হুম তানভীরের সাথে ব্যবসা করবো ।
একটা কথা বলবো ?
কী ?
নতুন করে কিছু শুরু করার চেয়ে তোমার বাবা’র ব্যবসায় যদি ইনভলভ হও সেটা কী বেশি ভালো হয় না ? কারণ ওনার বিজনেস তো ভালো পজিশনে আছে । সেটা কী তোমার জন্য বেশি সহজ হয় না ?
তোমাকে তো অনেকবার বলেছি জারা, আমি নিজের মতো করে কিছু করতে চাই ।
হুম কিন্তু নিজের ব্যবসা শুরু করে সেটাকে ভালো একটা পজিশনে নিয়ে আসতে তো অনেক সময় লেগে যাবে ।
আরে তুমি এতো টেনশন করো না তো । এতোদিন পর তোমার কাছে আসলাম, এখন ভালোবাসার কথা বলো । টেনশনের কথা শোনার জন্য বাকি জীবন পড়ে আছে । বাসায় সব ঠিকঠাক ? কেউ আর কিছু বলে না তো ?
না এর মধ্যে কেউ কিছু বলেনি আমাকে । তবে……
কী তবে ?
এভাবে সবাইকে বোকা বানানো কী ঠিক হচ্ছে আদি ?
আরে এই বোকা মেয়েটাকে নিয়ে আর পারলাম না । প্রেম করলে এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা জারা । প্রেমের জন্য হাজারটা মিথ্যা বলা যায় । আমি নিজেই কতো বলি ।
তুমি বলো ! তুমি কাকে মিথ্যা বলো ?
জারা দেখো এখন কিন্তু আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে । এখন শুধু আমাদের দু’জনের কথা হবে, আর কারো না ।
তুমিই তো জানতে চাইলে ।
ওকে সরি সরি, আর বলবো না ।
আদি জানো আব্বু আর মা ভাইয়ার ওখানে যাচ্ছে । আমিও যাবো ।
তুমি কেন যাবা ? তোমার তো ক্লাস আছে ।
না না এখন না । আগামী মাসের শেষের দিকে । তখন তো আমার সেমিস্টার শেষ হয়ে যাবে । অনেক দিনের ব্রেক আছে তো ।
তোমার কী খুব যাওয়ার ইচ্ছা না-কি ? ঐ সব যাওয়া টাওয়া হবে না ।
কেন যাওয়া হবে না ? তুমি আমাকে না করছো কেন ? আমার তো যাওয়ার কথা শোনার পর থেকেই এত্তো খুশি লাগছে । ভাইয়াকে কতোদিন দেখি না ।
তাঁদের যদি অন্য কোনো প্ল্যান থাকে ?
কাদের প্ল্যান থাকবে ?
তোমার আব্বুর । ধরো ওখানে নিয়ে যেয়ে তোমার বিয়ে দিয়ে দিলো ।
এই তোমার কী মাথাটা সত্যিই খারাপ হয়ে গেল ? আব্বু আমাকে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে বিয়ে দেয়ার জন্য ? মাঝে মাঝে তুমি খুবই ফানি কথা বলো ।
না তুমি যেতে পারবা না ।
কেন ?
এখন তোমাকে অনেক দিন পর পর দেখলেও এটা ভেবে শান্তি পাই যে তুমি কাছাকাছি আছো , ইচ্ছা হলেই দেখা করা যাবে । এতো দূরে চলে গেলে আমি তোমাকে না দেখে থাকবো কী করে ?
না না, এটা কোনো ব্যাপারই না আর আমরা তো বেশিদিন থাকবো না । মাত্র পঁচিশ দিন থেকে চলে আসবো । আমি তো ভাইয়াকেও বলে দিয়েছি যাওয়ার কথা ।
আদিত্য কোনো কথা না বলে কফির মগ হাতে নিয়ে চুপ করে বসে রইলো । সে মনে মনে খুব ভয়ে থাকে সব সময়, কোনোভাবে জারা যদি তার কাছ থেকে চলে যায় তাহলে তার কী হবে ?
আরেকবার সে চেষ্টা করলো জারাকে বুঝাতে –
সত্যিই কী যেতে হবে জারা? না গেলে……
আচ্ছা তুমি বারবার একই কথা বলছো কেন ? ট্রাভেলিং আমার খুব পছন্দের আর যেহেতু ভাইয়ার সাথে দেখা হবে তাই ওখানে তো আমি যাবো ই ।
আদিত্য বলার মতো আর কোনো কথা খুঁজে পেল না । হঠাৎ কফিটা খেতে কেমন তেতো লাগছে তার কাছে ।
মা বলেছিল বেতন পেলে দুই খালার জন্য শাড়ি কিনতে । বেতনটা হাতে পেয়ে সাদাত কেনাকাটা করার জন্য মার্কেটে গেল । সুতির মোট তিনটা শাড়ি কিনে ফেললো সে, দুই খালার জন্য আর মা’র জন্য । সানজিদার জন্য একটা ড্রেস নিলো । কেনাকাটা শেষে মার্কেট থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ খুব ইচ্ছে করলো জারা’র জন্য কিছু কিনতে । কী কিনবে কিছুই মাথায় আসছে না । একবার মনে হলো শাড়ি কিনবে, পরক্ষণেই ভাবলো জারা তো কখনো শাড়ি পরে না । কী কিনবে বুঝতে না পেরে এলোমেলোভাবে কিছুক্ষণ দোকানগুলোর সামনে ঘুরে বেড়ালো সে । হঠাৎ একটা গিফট শপ চোখে পড়তেই ওটাতেই ঢুকে পড়লো সে । অনেকক্ষণ ঘুরে ঘুরে অবশেষে খুব সুন্দর একটা চেইন কিনলো সে । চেইনের মধ্যে নীল হার্ট শেপের পাথর বসানো যে লকেটটা ঝুলছে সেটা বেশি পছন্দ হলো তার । ছোট্ট একটা হ্যান্ডব্যাগও নিয়ে নিলো পছন্দ হওয়ায় ।
বাসায় এসে মা আর সানজিদাকে কেনাকাটার জিনিসগুলো দেখালো সে । শাড়ি দেখে নিলুফার খুব খুশি । সবসময় বোনদের কাছ থেকে নিতে কেমন যেন লজ্জা লাগে তাঁর । যদিও তাঁর দুই বোনই অন্য রকম মানুষ । নিলুফারের অবস্থাটা তারা বুঝতে পারে বলেই কারণে অকারণে শুধু তাঁকেই না, তাঁর বাচ্চাদেরও দিয়ে যায় ওরা । বড় আপার যদিও একটু পাগলাটে খেয়াল আছে, পীর ফকির, ঝাড়-ফুঁক নিয়ে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে তবে বড় আপার মনটা খুব ভালো আর তাবাসসুম তাঁর ছোট হলেও মাঝে মাঝে আচরণে মনে হয় ও-ই যেন বয়সে বড় । নিলুফার ছেলেকে বললেন –
সামনে শুক্রবার নিয়ে যাবি আমাদের তাবাসসুমের বাসায় ?
হ্যাঁ চলো না, সমস্যা নেই । ছুটির দিনই তো ।
সানজিদা ড্রেস পেয়ে ভিষণ খুশি । হঠাৎ আরেকটা ব্যাগের ওপর চোখ পড়তেই বললো –
ওটার ভেতর কী আছে ভাইয়া ?
জারা’র জন্য কেনা গিফটগুলো কী এক লজ্জায় সে দেখাতেই পারছিলো না । সানজিদা জিজ্ঞেস করাতে বললো –
ওহ এটা, এটাতে একটা ব্যাগ কিনেছিলাম জারা’র জন্য । দেখবি ?
হুম ।
সাদাত চেইনের ছোট্ট বক্সটা আড়াল করে ব্যাগটা বের করে সানজিদার হাতে দিলো ।খুব লজ্জা লাগছে সাদাতের, যেন মা আর সানজিদার সামনে এখনই ধরা পড়ে যাবে সে ।
ব্যাগ দেখে নিলুফার বললেন –
শুধু জারা’র জন্য এনেছিস ? রোজা আর জাফরিন তো রাগ করবে তোর ওপর । আচ্ছা ঠিক আছে এক মাসে তো সবাইকে দিতে পারবি না । ওদের দুজনকেও কিছু কিনে দিস । ব্যাগটা তো অনেক সুন্দর হয়েছে ।
হ্যাঁ ভাইয়া ব্যাগটা অনেক সুন্দর । এরপর আমাকেও একটা কিনে দিও ।
শুধু জারা’র জন্য কেনায় এখন খুব লজ্জা লাগলো তার । মা কী বুঝে ফেললো তার অবস্থাটা ? ইশ, অন্যদের জন্য না কিনে শুধু জারা’র জন্য কিনে ফেলাটা খুব বোকামি হয়েছে । সে সানজিদাকে বললো –
তুই নিবি এটা? নে না ।
না না এটা তুমি জারা আপুকেই দিও । আমাকে পরে একটা কিনে দিও ।
সাদাত তাড়াতাড়ি জিনিসগুলো নিয়ে নিজের আলমারির ভেতর রেখে দিলো ।
পরের সপ্তাহে যখন ছোট খালার বাসায় গেল ওরা সাদাতের মনে দারুণ উত্তেজনা । একবার মনে হচ্ছিল মা আর সানজিদাকে পৌঁছে দিয়ে সে চলে আসবে বাইরে থেকে । পরক্ষণেই মনে হলো সে তো তার খালার বাড়িতেই যাচ্ছে , কোনো কিছুর আশায় তো যাচ্ছে না , সে তো জারাকে জানতেও দেবে না তার মনের ভেতর কী চলছে ।
তাবাসসুম আর কায়সার বাসায়ই ছিলেন । অনেকদিন পর বোন তাঁর বাসায় আসাতে তাবাসসুম মন খারাপ করে বললেন –
আপা তুমি জানো তুমি কতোদিন পরে আমার বাসায় এসেছো ?
কেন সেদিনই তো দেখা হলো , তুই যে গিয়েছিলি বাসায় ।
হ্যাঁ আমিই তো শুধু যাই । বারবার আমিই যাই, তুমি তো আর আসো না । নিজেকে এভাবে ঘরের মধ্যে আটকে ফেলো না আপা । অন্তত আমার এখানে, বড়’পার ওখানে চলে এসো মাঝে মাঝে । গাড়ি পাঠাতে চাইলেও তুমি না করো । এতো তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যেয়ো না তো আপা ।
শাড়ির ব্যাগটা বোনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নিলুফার বললেন –
সাদাত এনেছে এটা তোর জন্য ।
সাদাত এনেছে ! কেন ?
সাদাত তাড়াতাড়ি বললো –
সেদিন মা’র জন্য শাড়ি কিনতে গিয়ে তোমার আর বড় খালার জন্যও কিনে ফেললাম শাড়িগুলো । আমি তো শাড়ি চিনি না, চোখে দেখে যেটা ভালো লেগেছে কিনে ফেলেছি । তোমার পছন্দ হয়েছে খালা ?
খুব পছন্দ হয়েছে । এই বেগুনি রঙটা আমার খুব পছন্দের আর ছেলেমেয়েরা বাবা-মা’র জন্য যখন শখ করে কোনো কিছু কিনে আনে সেটা এমনিতেই অনেক সুন্দর আর দামী হয়ে যায় । থ্যাংক ইউ সাদাত ।
শাড়িটা খালার পছন্দ হওয়ায় সাদাত খুশি হলো । জারা’র ব্যাগটা সানজিদার কাছে দিয়েছে জারাকে দিয়ে দেয়ার জন্য । চেইনটা সে কিছুতেই আনতে পারেনি । ভিষণ সংকোচ লাগছিল । ওটা দেখলে জারা যদি অন্য কিছু মনে করে ? অন্যেরাও হয়তো হাসাহাসি করবে তাকে নিয়ে । বক্সটা সে আলমারির ড্রয়ারে ভেতর রেখে দিয়েছে যত্ন করে । কখনো জারাকে দেয়া হবে কি-না জানে না সে ।
নিলুফার জিজ্ঞেস করলেন –
জারা কোথায় রে তাবাসসুম, ওর রুমে না-কি ?
না আপা, জারা তো কাল রোজার সাথে ওর বাসায় গিয়েছে ।
কথাটা শুনেই সাদাতের মনটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল । জারা বাসায় নেই , জারাকে সে একবার দেখতেও পারবে না ?……………………