এক প্রহরের খেলা, পর্ব:২৩

0
305

#এক_প্রহরের_খেলা
মোর্শেদা হোসেন রুবি

২৩||

বেলা বারোটায় বেরুনোর কথা থাকলেও বেরোতে বেরোতে দুপুর পার করে ফেললো আজাদ। ঘরে ঢোকার পর থেকে আর বাইরেই যায়নি সে। বলতে গেলে পুরোটা দুপুর ঘরেই কাটিয়েছে সে। মাঝে দু’বার ফোনে কথা বলেছে কার সাথে যেন। বাকিটা অদিতির সাথে খুনসুটিতেই কেটেছে। এই সময়ে অদিতি কমপক্ষে একশটা প্রশ্ন করেছে আজাদকে। আজাদ প্রায় প্রতিটা প্রশ্নই পাশ কাটিয়ে গেছে। অদিতি যখন ধারনা করে নিচ্ছিলো যে আজ হয়তো আর বেরোনো হচ্ছে না ওদের। ঠিক তখনই আজাদ ঘড়ি দেখে ঘোষণা করলো, ” ব্যাগ গুছাও। হারি আপ।” বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো সে। হয়তো অদিতির প্রশ্নবৃষ্টির ভয়েই।

মাত্র আধাঘন্টার মধ্যেই অদিতিকে সাথে নিয়ে চেকআউট করে সোজা বাস কাউন্টারে চলে এলো আজাদ। টিকিট কাটলো দুটো। কুয়াকাটা টু চট্টগ্রাম। অদিতি ওর পাশেই ওর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সেই আগের মতো বোরকা আর নিকাব। সুবোধ বালিকার মতো দেখাচ্ছে ওকে।
আজাদ কাউন্টার থেকে সরে আসার পরপরই ওর কলার ধরে টান দিলো অদিতি। আজাদ অন্যমনস্ক থাকায় প্রথমে ব্যপারটা খেয়াল করলো না, পরে চাপা স্বরে ধমক দিলো।
-” কী হলো , কলার ধরে টানছো কেন ? ”
-” আমাদের না দুপুরে ট্রলারে যাবার কথা ছিলো ? তাহলে আমরা এখানে কী করছি ? ” অদিতিও চাপা সুরেই বললো। আজাদ টান মেরে ওর হাত থেকে শার্টের কোনা ছাড়িয়ে বললো,
-” কথাটা তো আর দুপুরে জিজ্ঞেস করোনি। তখন তো ঠিকই…!”
-‘ আহ্, চুপ।’
-” তাহলে তুমিও চুপ। এ নিয়ে পরে কথা বলবো। ”

অদিতি আর কোন কথা বাড়ালো না। চুপচাপ সেঁটে রইলো আজাদের সাথে। বাস না আসা পর্যন্ত অদিতিকে নিয়ে কাউন্টার রুমের একটা কোনে গিয়ে বসলো আজাদ। বিরাট রুমটা প্রচুর মানুষজনে ভর্তি। এই পড়ন্ত বিকেলেও জায়গাটা গমগমে। ওরা বসতেই হঠাৎ একজন লোক এসে তার বিরাট বস্তা রাখলো অদিতিদের সামনে । সেদিকে তাকিয়েই আজাদ বুঝতে পারলো ওটা শুটকি। কারণ কয়েকটাই বস্তা ফুঁড়ে উঁকি দিচ্ছে বাইরে। সে নাক কুঁচকে অদিতিকে টান দিয়ে উঠে পড়লো। আজাদের শুটকী পছন্দ নয় কিন্তু সেটা এখন বলে বেড়ানোর কোনো মানে হয়না। তার নিজেকেই সরে পড়তে হবে।
খুঁজে পেতে আরেকটা সুবিধাজনক জায়গা বের করলো আজাদ। অদিতিকে দেয়ালের দিকে বসিয়ে নিজে ওর পাশে বসে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখলো। সবাই নিজের ধন্ধে ব্যস্ত। জায়গাটা একেবারেই আনহেলদী। তারপরেও আত্মগোপনের সুবিধার্থে এটাকেই বেছে নিয়েছে আজাদ। কারণ ওর পরিচিত জনেরা কখনও কল্পনাই করবেনা আজাদ মুনতাসীর এখানে লোকাল বাসের কাউন্টারে গাদাগাদি করে বসে আছে বাসের আশায়। আর এটাই আজাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট । তাছাড়া গাড়ীর মায়া করে লাভ নেই। আজাদ ইচ্ছে করলে লাক্সারী বাসগুলোর যে কোনো একটাতে যেতে পারতো কিন্তু সে ইচ্ছে করেই একটা সাধারণ বাস চয়েস করেছে । এতে করে ওর অনুসরণকারী লোক দুটোকে ধাপ্পা দিতে পারবে সে। আর এই কথাটা অদিতিকে বলেনি সে। অযথা ভয় পাবে। আর ওর আচরণও তখন বদলে যাবে। তারচে এখন আজাদের উপর ক্ষেপে টং হয়ে আছে এটাই ভালো।
আজাদ হোটেল থেকেই লোকট দুটোকে অনুসরণ করতে দেখেছে। সন্দেহ হওয়ায় তখনি মাত্র বিশ মিনিটের নোটিশে হোটেল বদলে কটেজে উঠেছে। কোনো ঝুঁকি নেয়নি। কিন্তু তাতেও স্বস্তি মেলেনি ওর। একটা বড়সড় ধাক্কা দেবার জন্য ইচ্ছে করেই হোটেল রিসেপশন থেকে ম্যানেজারের সাহায্য নিয়ে ট্রলার ভাড়া করেছে। ট্রলারের সকল সুব্যবস্থা করে দিয়েছে ঐ হোটেলের ম্যানেজারই। আজাদ তার হাতেই ট্রলার ভাড়া দিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং এমন ভাব করেছে যেন ট্রলারে যাবার সুযোগ পেয়ে বর্তে গেছে। হাত ধরে তাকে অনুরোধ করেছে যেন সে ফিরে না আসা পর্যন্ত গাড়ীটা দেখাশোনা করে । এতে তার বিশ্বাস জেতার সাথে সাথে এমন একটা ধারণা তৈরী করে দেয়া হয়ে গেছে যে, আজাদ বৌ নিয়ে ট্রলারে পারি দিতে যাচ্ছে। গাড়ী তাদের জিম্মায় রেখে। এতে কিছু টাকা আর সময় গচ্চা গেলেও আজাদ ঐ ম্যানেজারের মাধ্যমেই অনুসরণকারীদের ব্লাফ দিতে পারবে। কারণ সে জানে অনুসরণকারীরা ঠিকই ঐ কটেজ খুঁজে বের করবে আর ম্যানেজারের কাছে আজাদের ব্যপারে জানতে চাইবে। তখন স্বাভাবিক ভাবেই ম্যানেজার যা সত্য তাই বলবে। তারা কেউই ঘুণাক্ষরে ভাববে না যে আজাদ সবরকম ব্যবস্থা করার পরেও সম্পূর্ণ উল্টোপথে একটা লোকাল বাসে করে চট্টগ্রাম যাচ্ছে। কাজটা আজাদ ইচ্ছে করেই করেছে। এখন অন্তত এই যাত্রায় ফলোয়ারদের টেনশন নেই। ওদের টের পেতে পেতে আজাদ হাওয়া হয়ে যাবে। কারণ জার্ণিটা খুব একটা দীর্ঘ না। মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টার যাত্রা।

অভ্যাসমতো চারপাশে হালকা চোখ বুলালো আজাদ। গত দুদিনে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ওর। তবে এবার আর সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লো না। এখানে বাসে যারা আছে তারা বেশীরভাগই নিম্ন মধ্যবিত্ত গোছের খেটে খাওয়া মানুষ। ঘাড় ফিরিয়ে অদিতির কানের কাছে মুখ রেখে বললো, ” হম, এখন বলো। কী যেন বলছিলে তখন ? ”
-” জানিনা। লাগবেনা। ” মৃদু ঝামটা দিলো অদিতি। শুনে মুচকি হাসলো আজাদ।বলল, ” কী লাগবেনা ? ”
অদিতি জবাব দিলোনা একথার। বোঝা গেলো সে বেশ রেগে আছে। আজাদ ওকে আর ঘাটালো না। দুজনেই নিরব রইলো। অবশেষে বাস এলে দুজনেই উঠে পড়লো। এবারও অদিতি জানালার পাশে। কাউন্টার থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অদিতি আর একটা কথাও বলেনি।
বাস ছাড়ার পর আজাদ মৃদুশব্দে বললো, -” রেগে আছো কেন ? ”
অদিতি এবারও জবাব দিলো না। আজাদ একবার ওর দিকে তাকালো। অদিতি জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।আজাদ চাপা স্বরে বলল,
-” তোমাকে আমি বুদ্ধিমান মেয়ে বলে জানতাম। কিন্তু বোকার মতো পাবলিক প্লেসের অতো ভীড়ে তুমি এই কথাগুলো জানতে চেয়েছো বলেই জবাবটা দেইনি।”

অদিতি তাকালো। আজাদ ওর হাতে মৃদু চাপ দিয়ে বললো, ” এতোটুকু জেনো, আমি যা করছি নিজেদের ভালোর জন্যই করছি। নইলে গাড়ী থাকতে বাস হায়ার করতাম না। আমাকে কী এতোটাই বোকা মনে হয় তোমার ? ”
-” না। কিন্তু তোমার ধারণা ভুলও তো হতে পারে। ওরা কিভাবে জানবে যে তুমি এখানে?”
-” মা বলে দিয়েছে।” প্রায় অস্পষ্ট স্বরে বললো আজাদ। “ওরা এতোক্ষণে জেনে গেছে যে আমি নতুন বউ নিয়ে কুয়াকাটা হানিমুনে। আর নতুন বউটা কে তা নিশ্চয়ই ওদের বলে দিতে হবেনা। হোটেলের লোকটা আমাদের ফলো করছিলো। হতে পারে সে লিটনের লোক। ধারণা করছি ওরা দুই কী তিনজন। আই থিঙ্ক ওরা আমাকে সামনে পেলে বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে স্যুট করবে। তুমি তাদের সমস্যা না। তাদের সমস্যা আমি।”
-” তা তো বুঝলাম। কিন্তু এভাবে কতদিন?”
-” যতদিন না লিটনের সাথে রফা করছি।”
-” তুমি লিটনকে ফেস করবে কিভাবে? তাছাড়া ও তো কেবল টাকার জন্য তোমাকে ধাওয়া করছেনা।”
-” এই তো বুঝেছো। বাট ওর টাকাটা তো ওকে ফেরত দিতে হবে।”
-” সেটা তো অন্যভাবেও হতে পারে।”
-” তা পারে। তবে ওর মনোভাবটা জানতে পারলে ভালো হতো। কেবল পাঁচ লাখ টাকার জন্য যে ও এরকম করছেনা এটা তুমিও জানো। ওর মূল জেদ আমার ওপর। কারণ তোমার সমস্ত দায় এখন আমার। তোমাকে ফেস করা ওর জন্য ডালভাত ছিলো কিন্তু আমি ওর জন্যে ভারী। এখন ও চাইলেই তোমার প্রপার্টি গিলতে পারবে না। ওর রাগটা এখানেই।”
নিরবে চুপচাপ কথাগুলো শুনে আজাদের কাঁধে মাথা রাখলো অদিতি। নিঃশ্বাসের শব্দে বলল, ” লাগবেনা আমার প্রপার্টি। এখন তুমিই আমার প্রপার্টি। ”
-” তাই ? ফোন লাগিয়ে দেব?”
-” কাকে ? ” মুখ তুললো অদিতি।
-” ওমা, তুমিই না বললে প্রপার্টি লিটনকে দান করে দেবে। কথাটা সরাসরি লিটনকেই বলে দাও।” বলে হালকা চালে চোখ মারল আজাদ।
অদিতি কোনো জবাব না দিয়ে আস্তে করে আজাদের বাহুতে মুখ গুঁজতেই ‘আউ’ বলে প্রায় লাফিয়ে উঠলো আজাদ। নিঃশব্দে ওর বাহুতে কামড় বসিয়ে দিয়েছে পাজি মেয়েটা। দাঁতে দাঁত চেপে কামড়টা হজম করে বললো, ” এটা কী হলো? ”
-” লাভ বাইট। বেশী লেগেছে? ” বলে মুচকি হেসে আজাদের বাহু ম্যাসাজ করতে নিলে সে টান মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, ” আমারও সময় আসবে।”
-” তোমার টম এন্ড জেরী খেলা শেষ হবার পর, ঠিক না? ”
-” তোমার জন্যই এসব করছি আর তুমিই রাগ করছো। কী করবো আমি? ”
-” আচ্ছা, স্যরি। এসো, ম্যাসাজ করে দেই।”
-” হম, আর বাসভর্তি লোক তামাশা দেখুক। ”
-” আমার না খুব ভয় হচ্ছে আজাদ।” মুড বদলে বললো অদিতি। আজাদও এবার গম্ভীর হলো।
-” আমারও…!”
-” তোমারও…? ” বলে আজাদের মুখের দিকে ভালোভাবে তাকালো অদিতি। ” আমার তো তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। আর তোমার ভয় কিসে?”
আজাদ কিছুক্ষণ নিরব থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ” সত্যি বলবো না মিথ্যে? ”
-” মিথ্যেটা।”
-” তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়।”
অদিতির চোখের কোণে পশ্চিমাকাশের কালো মেঘের ঘনঘটা। রুদ্ধশ্বাসে উচ্চারণ করলো, ” সত্যিটা কী রুমকি ? ”
আজাদ এবারও কোনো জবাব দিলো না।

=====

ছেলেকে নিয়ে সরাসরি ঢাকার নামকরা ক্লিনিকে উঠলেন মহিউদ্দিন কাদের। এম্ব্যুলেন্সে বসেই বাড়ীতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলেন তাদের আসার খবরটা। খবর পেয়ে রূপমের মা সাথে সাথেই ওর মামাদের মাধ্যমে ক্লিনিকে রুম বুক করে রেখেছে। মহিউদ্দিন এম্ব্যুলেন্স নিয়ে সরাসরিই সেখানে গিয়ে উঠলেন। বেলা তখন প্রায় একটা। উনি রওনা দিয়েছিলেন সেই সকাল সাতটায়। এম্ব্যুলেন্স রীতিমত উড়ে এসেছে বলা চলে। সত্যি বলতে, মহিউদ্দিন দেরী করতে চান নি। তাঁর একটু কষ্ট হলেও ছেলের সুচিকিৎসার স্বার্থেই তাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। গতরাতটা তিনি বড় কষ্টে পার করেছেন। এক ফোঁটা ঘুমাননি। আজ সকালে উঠেই বড়ভাই আর আব্দুল্লাহকে নিয়ে গিয়েছেন সোজা সদর হাসপাতালে। গিয়েই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি তার রুগী নিয়ে যাবেন। তিনি তার ছেলেকে এই সস্তা হাসপাতালে আর রাখবেন না। ছোট ভাইয়ের কথা শুনে বিস্মিত হলেও তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন নুরুদ্দিন। কিন্তু বহু বুঝিয়েও কোনোভাবেই তাকে দমাতে পারেন নি। মহিউদ্দিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, এখানে রূপমের প্রপার চিকিৎসা হচ্ছেনা। আর এসব দেখে শুনেও তিনি চুপচাপ হাত পা তুলে বসে থাকতে পারবেন না। তাঁকে যে করেই হোক তার ছেলে বাঁচাতে হবে। ফলে তাকে বলে কয়ে নিবৃত্ত করতে না পেরে তার জেদের কাছে একরকম হার মেনে ভোরবেলাতেই তাদের বাপ ছেলেকে মাইক্রোতে তুলে দিয়েছেন নুরুদ্দিন। সাথে দিয়েছেন একজন ওয়ার্ড বয় আর একজন ডাক্তার। ফলে আইসিইউ এম্ব্যুলেন্সের খরচটা সাধারণ এম্ব্যুলেন্সের প্রায় কয়েক গুন বেশী গুনতে হয়েছে।
ঢাকার হাসপাতালে পৌঁছানোর পরপরই চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে রূপমের। সংবাদ পেয়ে রূপমের মামারা সবাই ছুটে এসেছেন সাথে বন্ধুরাও। সেখানে ওরই এক ঘনিষ্ট বান্ধবী নায়লার যার চাচাতো ভাই এ্যাপোলোর ডাক্তার। রূপমের অবস্থা দেখে সে তৎক্ষণাৎ তার কাজিনকে ফোন করে৷ ওর একান্ত অনুরোধে সেই কাজিনটি স্পেশাল ভিজিটে এসে রূপমকে দেখলেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলেন। নায়লাকে ওর কন্ডিশনস বুঝিয়ে বলে চলে গেলেন তিনি। জানালেন প্রয়োজনে যেন তাকে জানাতে দ্বিধা না করে নায়লা।
তিনি চলে যাবার পর নায়লা নিজেই মহিউদ্দিনের হাত ধরে বললো,” রূপম আমার অনেকখানি আঙ্কেল। ওকে এভাবে বেঘোরে মরতে দেবো না আমি। আপনি একদম ভাববেন না। ”

মহিউদ্দিন কেবল শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। দেবার মতো কোনো জবাব তার মুখে এলো না। মাত্র চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে দু দুবারের জার্নি তাকে রীতিমত কাবু করে ফেলেছে। মাথা সমানে ঘুরাচ্ছে তার। ঐ অবস্থাতেই তার মনে হলো নুরুদ্দিন ভাইকে ফোন করা দরকার। রুমকি মেয়েটার কোনো খোঁজ না নিয়েই চলে এসেছেন তিনি। যদিও কাজটা স্বার্থপরের মতো হয়ে গেছে কিন্তু এ ছাড়া কোনো উপায়ও ছিলো না । ক্লান্ত ভঙ্গিতে মোবাইলের জন্য পকেট হাতড়াতে লাগলেন তিনি ।

=====

রূপম আর মহিউদ্দিনকে এম্ব্যুলেন্সে তুলে রওনা করিয়ে দিয়েই নুরুদ্দিন আব্দুল্লাহকে নিয়ে সোজা থানায় ছুটলেন । গতরাতে রুমকির খবরটা পাবার পরেও তার খোঁজে বেরোনো সম্ভব হয়নি কারণ মধুর খোঁজ কেউ দিতে পারছিলো না। কিন্তু এখন দিনের আলোয় এটা খুঁজে বের করা অসম্ভব হবেনা। থানা থেকে সাহায্য না পেলে প্রয়োজনে নিজেরাই সোজা এক্সিডেন্টস্থলে চলে যাবেন। সেখানে স্থানীয়দের ধরলেই তারা মধুর খবর দেবে। সে যেভাবেই হোক। আজ যে করেই হোক তারা রুমকিকে খুঁজে বের করবেনই। আব্দুল্লাহ হুজুর গতরাতেও কাঁদছিলেন। কিন্তু এখন নিরব। এই মুহূর্তে তাঁকে দেখাচ্ছে পাথরের মতো। তিনি কেবল চাবি দেয়া পুতুলের মতো নুরুদ্দিনের পেছন পেছন চলছেন।
একপর্যায়ে আব্দুল্লাহ স্থবিরের মতো বলে উঠলেন, ” আমার মেয়েটা তো তার ছেলের বৌ ছিলো নুরুদ্দিন ভাই । ছিলো না ? ”
নুরুদ্দিন তাৎক্ষণিক ভাবে কী জবাব দেবেন ভেবে পেলেন না।
আব্দুল্লাহ উদভ্রান্তের মতো করেই বললেন, -” তিনি কি করে পারলেন আমার মেয়েটাকে এভাবে অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে ফেলে নিজের ছেলেটাকে নিয়ে চলে যেতে? ”
নুরুদ্দিন থমকে গিয়ে আব্দুল্লাহর কাঁধে হাত রাখলেন। ধীর স্থির কণ্ঠে বললেন, ” মনে কষ্ট নিওনা আব্দুল্লাহ। এটা একটা বাবার মন। স্বার্থপর হলেও তাকে দোষ দেয়া যায়না। ভুলে যেওনা, রূপম বাঁচলে তোমার মেয়ে সধবা আর মরলে বিধবা। মহিউদ্দিনের স্বার্থপরতা এক অর্থে তোমার পক্ষেই গেছে আব্দুল্লাহ। তুমি নিজেই তো দেখলে, রূপমটার অবস্থা কতটা সঙ্গীন। এখানে ওকে ঠিকমতো অক্সিজেনও দেয়া হচ্ছেনা। এদের চিকিৎসার লিমিটেশন অনেক। রূপমের যা অবস্থা তাতে ওর ভালো চিকিৎসা দরকার, এটা তো মানো ?”

আব্দুল্লাহ এবারও কোনো জবাব দিলেন না। নুরুদ্দিন ভাইয়ের সাথে সোজা থানায় চলে এলেন। কর্তব্যরত কনস্টেবল জানালেন ইতোমধ্যেই তার একজন রিলেটিভ তার খোঁজে এসেছিলেন। এস.আই সাহেব তাদেরকে নিয়ে মধুর বাড়ীতে গিয়েছিলেন ওখানকার আহতদের বুঝিয়ে দেবার জন্য।
নুরুদ্দিন সবশুনে আব্দুল্লাহর দিকে তাকালেন, ” তোমাদের আর কোনো রিলেটিভ পাঠিয়েছিলে নাকি রুমকির খোঁজে ? ”
-” না তো..!” আব্দুল্লাহ বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে কনস্টেবলের দিকে তাকালেন। বললেন, ” -” কে সে ? তার নাম কী ? সে কি বলেছে সে আমাগের আত্মীয় ? ”
-” অত কথা তো জানিনে। এটা ওসি সার কতি পারবি। ”
-” তিনি কী রুমে আছেন ? ” নুরুদ্দিন নিজেই এবার প্রশ্ন করলেন।
-” জি, না। সার এখনও আসেন নি। আপনারা বাইরে ওয়েট করতি পারেন। ”
-” কখন আসবেন উনি ? ”
-” এমনিতে তো দশটার দিকে তো চলি আসেন। আজকের কথা জানিনে। ”
-” ওহ্। তা এখন বাজে সবে মাত্র সাড়ে আটটা। ইয়ে মধুর বাসার ঠিকানাটা দিতে পারো বাবা? ” বলতে বলতেই পকেটে হাত দিলেন নুরুদ্দিন। কিছু টাকা বখশিশ দেয়া দরকার ছেলেটাকে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here