এক মুঠো গোলাপ
Sinin Tasnim Sara
১২-১৩
১২
___
বড় খালামণি আমাকে একদমই পছন্দ করেন না। আমাকে দেখলেই ওনার মাথায় অদ্ভুত এক রাগের আর্বিভাব ঘটে। সেই রাগটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা অবশ্যি তিনি করেন না বরং সুযোগ খোঁজেন আমাকে হিউমিলিয়েট করার।
ফাঁকে পেলেই ওনার সবচাইতে প্রিয় কিছু শব্দ দিয়ে আমায় আঘাত করেন। তার মধ্যে বহুল ব্যবহৃত “জারজ একটা”
এছাড়াও, ছোটোলোক, লোভী, অমানুষ, বেয়াদব ইত্যাদি ইত্যাদি তো আছেই।
আমি ওনাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি খুব করে।
নানু বাড়ি পক্ষের অকেশান গুলিতে কদাচিৎ পা রাখি। যদিওবা তা সম্পূর্ণই মায়ের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের কারণে।
তবে প্রোগ্রাম আ্যাটেন্ড করার কথা শুনলেই আপু তার সর্বাত্মক চেষ্টা করে আমায় প্রোটেকশন দেয়ার। এক মুহুর্ত কাছ ছাড়া হতে দেয়না। মাঝেমধ্যে তার ওড়না কিংবা আঁচল আমার কড়ে আঙুলে বেঁধে সাথে করে ঘুরে নিয়ে বেড়ায়।
ছোটো মামী আর বড় খালামণি পেছন থেকে “আদিখ্যেতা” বলে টন্ট করতে ভোলেন না।
সব শুনেও না শোনার ভান করে থাকে আপু।
আমাকে বারবার বলে, “মানুষের কথায় যেন কান দিবিনা। পাছে লোকে কিছু বলে”
আ্যাজ ইউজুয়াল আজও আপু আমায় সাথে নিয়ে ঘুরছে। আমাদের দু বোনের পরণে গোল্ডেন বর্ডারের ধবধবে সাদা রাজশাহী সিল্ক। যদিওবা আমি সাদা রঙ পরতে একদমই রাজি ছিলাম না কিন্তু আপু বলেছে এটা একজন স্পেশাল মানুষের থেকে পাওয়া গিফট। স্পেশাল মানুষটা খুব করে রিকোয়েস্ট করেছে আমরা যাতে এই শাড়ি দুটোই পরি।
শাড়ি পরার মুহুর্তে কয়েকবার ভেবেছি স্পেশাল মানুষটা কে? বাপি, দুলাভাই নাকি নিদ্র!
বাপি হলে উনি আগেই বলে দিতেন কারণ বাপির পেটে কোনো কথা চাপা থাকেনা। সারপ্রাইজ বিষয়টা ওনার দ্বারা সম্ভব না। দুলাভাই সারপ্রাইজ দিলে ঘটনা টা অন্যভাবে সাজাতো, হুট করে এসে আমার হাতে ব্যাগ ধরিয়ে বলতো “বুঝলে সুপ্ত রাস্তা দিয়ে আসছিলাম, দেখি হাতের বা দিকে একটা শপিং মল। কাঁচের দেয়াল ভেদ করে ভেতরে চকচকে দুটো ম্যানিকুইনের গায়ে জড়ানো চকচকে দুটো শাড়ি। শাড়িগুলো দেখে কেবলই মনে হলো, আমার জীবনের স্পেশাল দুটো মানুষকে এই ছোট্টো উপহারটা না দিতে পারলে আমার জীবনটা বৃথা হয়ে যাবে। একটা আবদার রেখো তোমার এই ভাইয়ের থেকে, শাড়িটা অবশ্যই পরবে সুপ্ত এবং তোমার রাগী বোনটাকেও পরতে বাধ্য করবে”
রইলো বাকি নিদ্র, তার তো আপুর সাথে এতটা সখ্যতা গড়ে ওঠার কথা না। তাহলে কে দিলো এই উপহার?
আমার ভাবনা সুদুরপ্রসারি হবার পূর্বেই আপু সযত্নে শাড়ি পরিয়ে দিলো। শাড়িটা গায়ে জড়াবার পর মুহূর্তে অদ্ভুত একটা অনুভূতি আমার মনকে নাড়া দিতে লাগলো। মনে হচ্ছিল এক অন্যরকম স্নেহ, মায়া-মমতার স্পর্শ এই শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে জড়ানো।
এমন স্নেহ ভালোবাসা নাড়ির টানে পাওয়া যায়।
আমার এই অনুভূতি আমি কারো সামনেই প্রকাশ করলাম না কেবল নিজের মধ্যে চেপে রাখলাম।
অদ্ভুত ভাবে বড় খালামণি ছাড়া কারোরই আমাদের এমন সাজগোজে সমস্য ছিল না। বরং সবাই কেমন স্নেহভরা, ছলছল নয়নে তাকিয়ে ছিলো আমাদের দিকে।
আমার বারবার মনে হচ্ছিল আমি আমার জীবন সম্পর্কে যতটুকু জানি ততটুকু পর্যাপ্ত নয়। আরো অনেক কিছু জানতে বাকি, আরো অনেক রহস্যের মায়াজাল কাটানো বাকি।
___
অফিসারস ক্লাবে পৌঁছুনোর পর সবাই ছন্নছাড়া মত হয়ে গেলো। কাজিনরা গেইট ধরবে বলে সরঞ্জাম জোগাড় করছে, মা আর বাপি জুয়েলারি শপে গিয়েছে। এক্সামের কারণে দুলাভাই আসতে পারেনি, আপু তার সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে আর সব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে ।
শিউলি আপুকে বড় খালামণি আর তার মেয়েরা পার্লারে নিয়ে গিয়েছে এখনো আসেনি।
আমি একা একা কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। লাস্ট মোমেন্টে আভা আর জেরিন দুটোরই জ্বর এসে গিয়েছে, ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। আমি ড্যাম শিওর বাসা থেকে বেরুতে দিচ্ছে না বলে অমন বাহানা শুরু করেছে। ওকে ফাইন, আমিও কথা বলবো না কারো সাথে। আজ থেকে ওদের সাথে আমার কাট্টি।
পুরো দোতলা চোখ বুলিয়ে দেখলাম নিদ্র এক কোনে বসে মোবাইল চাপছে । এইতো পেয়েছি একজন সঙ্গী ।
কালবিলম্ব না করে শাড়ির কুঁচি চেপে ধরে দিলাম এক ছুট।
হুড়মুড় করে তার পাশে বসা মাত্রই সে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো।
আমি দাঁত বের করে হেসে প্রশ্ন করলাম_
— হাই। হাউ আর ইউ?
— আই আ্যাম ফাইন।
— আমাকেও জিজ্ঞেস করো আমি কেমন আছি।
— “তুমি!” এক্সকিউজ মি তুমি কি আমায় “তুমি” সম্বোধন করলে?
— ইয়েস অফকোর্স।
— আমার ধারণানুযায়ী আমি তোমার টিচার হই সুপ্ত। তুমি একজন টিচার কে তুমি সম্বোধন করছো!
— তুমি কি শুধুই আমার টিচার? তুমি হলে আমার টিচার জামাই, তোমার সাথে বিয়ে হলে গেইটে বড় বড় করে লেখা থাকবে “আইসিটি স্যার হয়ে গেলো বর”
জামাই কে কেউ আপনি বলে সম্বোধন করে?
— সুপ্ত একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছেনা? তুমি কিন্তু মাত্রা ছাড়া মজা করছো।
— হু সেইড আই আ্যাম জোকিং? আমি তো সিরিয়াসলি বলছি। এইচএসসি টা পার হতে দাও তোমার গলায় টুপ করে ঝুলে পড়বো।
চোখ মেরে বললাম আমি। আমার এমন দ্বিধাহীন স্বীকারোক্তি দেখে যারপরনাই বিষম খেলো নিদ্র। ফোন ফেলে চোখ বড় বড় করে তাকালো আমার দিকে। আমি নিচু হয়ে ফোনটা তুলে নিয়ে ওর হাতে দিলাম। স্বাভাবিক ভাবেই বললাম_
— আসো সেলফি নিই। আমাকে সুন্দর লাগছে তাইনা?
নিদ্র বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বুঝতে পারছি। ওর হতভম্বতা আমাকে দারুণ আনন্দ দিচ্ছে ।
আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই ওর কাছাকাছি মুখ নিয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম।
উঠে আসবো ঐ মুহুর্তে আমার ডান হাত চেপে ধরলো নিদ্র। চোখমুখ শক্ত করে আমায় বললো_
— এসব কোন ধরনের বেয়াদবি সুপ্ত? তুমি লিমিটলেস কাজকারবার করে যাচ্ছো। বলবো তোমার বাবাকে? যে তুমি ডিরেক্ট বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছো আমায়।
— হ্যাঁ বলে দাও। আরো ভালো হবে আমি তোমার গলায় আরো জলদি ঝুলে পড়তে পারবো।
— সুপ্ত!
ধমকে উঠলো নিদ্র। ওর ধমক শুনে আমার কান্না পেয়ে গেলো, ওর না বোধক উত্তর আমি মানতে পারবো না। তাই নিজেকে দূর্বল করা যাবেনা।
আমি নিজের কান্না নিয়ন্ত্রণ করে চারিদিক ভালোভাবে লক্ষ্য করে টুপ করে নিদ্রর ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললাম_
— রেগে যাচ্ছো কেনো? ভালোবাসা কি অপরাধ!
শোনো আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি এবং আমার জীবনে শুধু তোমাকেই চাই। তুমি আমৃত্যু আমার নিদ্র হয়েই থাকবা। তোমাকে আমার হতেই হবে। এখন রাগ করে থেকো না তো, একটু হাসো।
নিদ্র আমার হাত ছেড়ে দিলো। নিজের চুল খামচে ধরে মাথা নিচু করে বললো_
— দিস ইজ নট রাইট সুপ্ত, দিস ইজ নট রাইট।
আমি নিদ্রর কথায় কান দিলাম না। সুপ্ত কখনোই রঙ ডিসিশান নেয়না। সুপ্ত ইজ অলওয়েজ রাইট এন্ড নিদ্র শুধুই সুপ্তর।
____
পুরো প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে নিদ্র আমায় ভীষণ ভাবে এড়িয়ে গেলো। আমিও এক চুল ছাড় দিলাম না তাকে। ডিস্টার্ব করতে করতে অতিষ্ঠ করে ফেললাম তাকে।
ওর বিরক্তির এক্সপ্রেশনও কি সুন্দর!
বিদায়ের সময় বউয়ের সাথে কাজিনরাও যাবে এমন বায়না ধরলো সবাই। মেজো খালু তার গাড়ি ছেড়ে দিলেন আমাদের ভাই বোন দের জন্য। শিউলি আপু নিদ্রকে জোর করলো যাওয়ার জন্য কিন্তু সে যাবেনা, চাকরির ইন্টারভিউ আছে এমন বাহানায় না করে দিলো। নিদ্র যেখানে যাবেনা সেখানে আমি যাই কি করে?
আমিও না করে দিলাম। আমার নাবোধক উত্তর কারোরই কাম্য ছিলো না। সবাই চেপে ধরলো আমাকে যেতেই হবে। আমি বাপিকে বললাম আমার পরীক্ষার কথা বলো । বলা বাহুল্য বাপি আমার যাওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন , আমারও আগ্রহ নেই এটা শুনে উনি খুশি হলেন।
বাপির মুখের ওপর কেউ কথা বলতে পারেনা। বাপি না বলার পর কেউ আর টু শব্দ করার সাহস পেলো না।
অবশেষে বিদায় হয়ে গেলো। তিনটে গাড়ি করে আমাদের ফ্যামিলি মেম্বার রওয়ানা হয়ে গেলো তাদের বাসার উদ্দেশ্যে । আমি বুদ্ধি করে নিদ্রর গাড়িতে ওঠার বন্দোবস্ত করলাম।
আমায় দেখেই নিদ্র আর গাড়িতে উঠলো না, মুখ ফিরিয়ে হাঁটা ধরলো। আমি নিদ আপু আর ওর বন্ধুদের আমাদের ব্যাপারটা৷ সত্য মিথ্যে মিলিয়ে বুঝিয়ে বললাম সাথে এটাও বললাম আমি আজ ওর সাথেই ফিরবো।
আপুর কপালে চিন্তার ভাজ পড়লেও তাকে আশ্বস্ত করে বেরিয়ে এলাম আমি।
নিদ্র ততক্ষণে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে গিয়েছে। তার দেখা পেতে আমায় জুতো খুলে দৌড়োতে হচ্ছে ।
এই ভালোবাসা কি করে ছাড়বে আমায়!
___
রাত্রি দশটা। ফাঁকা রাস্তার ফুটপাত ধরে আমরা হেঁটে চলেছি। নিদ্র আমার থেকে বেশ দূরেই অবস্থান করছে। আমার খুব ইচ্ছে করছে ওর পাশাপাশি হাঁটতে। আমি নিশ্চুপ তার পিছুপিছু এগোচ্ছি।
হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম বেশ কয়েকটা ম্যানহোল পর কিছু পেরেক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
আমি যদি সামহাউ আহত হয়ে যাই তাহলে পাশাপাশি কি, নিদ্রর কোলেই তো ওঠা সম্ভব । আমার চোখজোড়া খুশিতে চকচক করে উঠলো। নিদ্র ধীর গতিতে হাঁটছে, চিৎকার দিলে অবশ্যই শুনবে।
এমনি এমনি আবদার করলে তো কোলে নিবে না তাই আহত হয়েই মনোবাসনা পূর্ণ করি নাহয়!
মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে জুতো জোড়া পুনরায় খুলে ফেললাম। এক সেকেন্ড দেরি না করে দানবীয় পেরেকগুলোর ওপর পা রাখলাম। শরীরের ওজন পায়ে পড়া মাত্রই ভয়ংকর ব্যাথা দিয়ে একটা পেরেক ঢুকে গেলো আমার পায়ে।
যন্ত্রনায় গলা ফাটিয়ে দিলাম চিৎকার ।
এতেই কাজ হয়ে গেলো। নিদ্র ছুটে এলো আমার কাছে। পেরেক ঢুকে গলগলিয়ে রক্ত বের হচ্ছে পা থেকে।
নিদ্র কতক্ষণ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে হতভম্ব গলায় জিজ্ঞেস করলো_
— এটা কীভাবে হলো?
ব্যাথায় নীল হয়ে আমি ফোঁপাচ্ছি বলে শুনতে পেলাম না ঠিকঠাক । সে ধমকে উঠলো_
— কি করে হলো এটা সুপ্ত?
আমি উত্তর দিলাম না, ফোঁপাতে ফোঁপাতে ইশারায় পেরেকটা বের করতে বললাম।
ও চোখ গরম করে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে ফট করে আমায় কোলে তুলে নিলো। অদূরে রাস্তার বাঁকে একটা কাঠের বেঞ্চ। দ্রুত সেখানটায় বসালো। তারপর আমার পায়ের কাছে বসে কোমল কণ্ঠে বললো__
— এক্ষুনি ব্যথা সেরে যাবে সুপ্ত ডোন্ট ক্রাই।
আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। ও আলতো ভাবে আমার পা টা টেনে নিলো, আমার চোখে চোখ রেখেই হুট করে পেরেকটা টেনে বের করে ফেললো।
আমি চোখ বড় বড় করে গলা ফাটিয়ে দিলাম চিৎকার । ও তড়িঘড়ি করে উঠে আমার মাথাটা বুকে চেপে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো_
— ডোন্ট ক্রাই সুপ্ত। আমরা এক্ষুণি ডক্টরের কাছে যাবো।
ঝটপট ফোন বের করে কাকে যেন একটা কল করে বললো হসপিটালেই থাকতে। এনজিওরড পেশেন্ট নিয়ে আসছে।
আমি ধারণা করে নিলাম ফোনের ওপাশে তার কোনো বন্ধু ।
ওদিকে পাত্তা না দিয়ে দু হাতে ওর কোমর জড়িয়ে বললাম _ “ব্যথা করে”
ও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে আমায় পায়ে বেঁধে দেয়।
আমি আবদারের সুরে বলি_ কোলে নাও?
নিদ্র বিনাবাক্য ব্যয়ে পুনরায় কোলে তুলে নেয় আমায়। আমি শক্ত করে ওর গলা জড়িয়ে ধরি। খুশিতে আমার কান্না থেমে যায়।
ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় ঝলমল করছে রাস্তা, চারিদিকে সুনসান নীরবতা । থেকে থেকে বাতাসের ঝাপটা আসছে আমাদের শরীরে। দু’জনারই পারফিউমের সুগন্ধ মিলে মিশে অদ্ভুত সুবাসের সৃষ্টি করছে। আমি অপলক তাকিয়ে আছি নিদ্রর পানে। মানুষটা এত সুন্দর কেন! ছেলে মানুষ এত সুন্দর হলে কীভাবে হবে? বাকিটা জীবন তো আমার পোজেসিভ পার্টনার হয়েই কাটাতে হবে মনে হচ্ছে ।
হসপিটালের পথে হাঁটতে হাঁটতে নিদ্র বলে ওঠে _
— সামান্য কোলে ওঠার জন্য পায়ে পেরেক ফুটিয়ে অসুস্থ হবার দরকার ছিলো সুপ্ত? আমায় বললেই তো কোলে নিতাম।
ওর কথা শুনে আমি চকিতে তাকাই। সবটা বুঝে গেছে?
ওর দৃষ্টি এখনো সামনে। আমি লজ্জা মিশ্রিত গলায় বলি_
— আমি বললেই তুমি আমায় কোলে তুলে নিতে?
ও কোনো উত্তর করে না। আমি অধৈর্য্য গলায় প্রশ্ন করি_
— ভালোবাসো?
সে এবার আমার চোখের দিকে তাকায়। তার দৃষ্টি কিছু বলছে।
আমি শুকনো ঢোক গিলে মিনমিন করে বলি_
— ভালোবাসার স্বীকারোক্তি করলে বুঝি পাপ হবে!
নিদ্র মৃদু হাসে। আমার নাকের ডগায় চুমু খেয়ে বলে_
— তুমি একটা পাগল এটা কি জানো?
আমি অবাক-বিস্মিত এবং হতভম্ব । চোখ বন্ধ করে ওর গলায় মুখ গুঁজি।
–“তুমিও এই পাগলের প্রেমে পড়ে গেলে নিদ্র সাহেব”
নিদ্র ফিসফিসিয়ে বলে_
“তুমি আমার এক মুঠো গোলাপ ”
এক মুঠো গোলাপ
১৩
_____
ডিপ ইনজুরির কারণে আমাকে পুরো ১ মাস বেড রেস্ট দেয়া হলো। ইট মিনস আমি টেস্ট-আফটার টেস্ট একটা এক্সামেও বসতে পারবো না। প্রাইভেট কলেজ হওয়ার ঘন ঘন পরীক্ষা রাখা হতো আমার কলেজে। শুধুমাত্র ভালোবাসার খাতিরে ক্যারিয়ারকে এক প্রকার হুমকির মুখে রেখে দিয়েছিলাম আমি।
যদিওবা বাপি অনেক রিকোয়েস্ট করে বাসাতেই পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বাট আমি পড়াশোনাটাই কমপ্লিট করতে হিমশিম খেতাম। আমার স্কিন ভীষণ সেনসেটিভ হওয়ায় জং ধরা পেরেক আমার ইনজুরিতে ঘায়ের সৃষ্টি করে ফেলেছিল। রাত্রিবেলা করে ব্যথায় গা কাঁপিয়ে জ্বর আসতো আমার।
ঘর ভরে গিয়েছিল আ্যান্টিবায়োটিক ঔষধে। ঘা টা যাতে খারাপ পর্যায়ে না যায় এজন্য বাপি-মা খুব করে খেয়াল রাখতো এক বেলাও যাতে ঔষধ মিস না যায়।
ইচ্ছার বিরুদ্ধে পনেরো ষোলোটা ঔষধ গলাধঃকরণ করতে হতো আমাকে।
অসুস্থতায় আমার কনফিডেন্স হুট করে কমে গেলো। দিন যত যাচ্ছিল ততই পরীক্ষা ভীতি মাথায় চেপে বসতে শুরু করছিলো৷
প্রায় প্রতিদিনই নিদ্রকে কল করে কান্নাকাটি করতাম আমি। আমার কান্না দেখে কখনো ধমক দিতো কখনোবা সাহস জোগাতো সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি যেহেতু টিউশন ক্লাসে যেতে পারতাম না তাই সে নিজেই বাসায় এসে পড়াবে জানালো।
অন্য সব টিউটর কে নিষেধ করে দেয়া হলো। সব সাবজেক্ট নিদ্রই পড়ানো শুরু করলো।
বাপি মায়ের সামনে খুব রিজার্ভ থাকার চেষ্টা করতো সে, অপরদিকে আমি হয়ে গেলাম নির্ভীক এক প্রকার নির্লিপ্ত।
পড়তে পড়তেই তাকে দু’হাতে জড়িয়ে দুষ্টুমি করছি, কখনোবা জোর করে চুমু খেয়ে ফেলছি।
আমার স্পর্ধা দেখে সে হতভম্ব হয়ে যেত, আমাকে শাসাতো; এভাবে জ্বালাতন করলে পড়াতে আসবে না।
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে থাকতাম। দিন দিন আমার অবসেশন বেড়েই যাচ্ছিলো, আমি বুঝে পারছিলাম এবং আমি আমার অবসেশন কেও ভালোবাসতাম৷
বন্ধুদের আনাগোনা শুরু হলো বাসায়। দেখতে দেখতে পরীক্ষার ডেইটও পড়ে গেলো। রুদ্ধশ্বাস পড়াশোনা।
আমার প্রথম পরীক্ষার আগেরদিন যথারীতি নিদ্র পড়াতে এলো। কিছু সাজেশন দিয়ে সিলেবাস শর্টকাট করে দিবে আরকি।
আমার মাথায় কিছু উল্টোপাল্টা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সেদিন প্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম নিদ্রকে এত বেশীই ভালোবেসে ফেলেছি যে ও এই মুহুর্তে চাইলে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে দিতে পারবো।
নিত্যদিনের মত খোঁজ খবর নিয়ে ও পড়া দাগিয়ে দিতে বসে গেলো। আমি কতটা সময় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ও বুঝতে পেরেছিল হয়তো। বইয়ের দিকে চোখ রেখেই জিজ্ঞেস করলো_
— তাকিয়ে আছো কেন সুপ্ত?
— তুমি আমাকে একটু আদর করে দিবে নিদ?
সাবলীলভাবে বললাম আমি৷ ও এতদিনে আমার পাগলমোর সাথে পরিচিত হয়ে গিয়েছে । স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর করলো _
— উল্টোপাল্টা কথা ছেড়ে পড়ার দিকে মন দাও। কাল তোমার পরীক্ষা ।
আমার রাগ লাগলো ওর না বোধক উত্তরে। আমি হুট করে ওর কলার চেপে ধরে কাছে টেনে নিলাম। ও ত্রস্তে সরে গিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ভীষণ রেগে বললো_
— সুপ্ত ডোন্ট বি সো ডেস্পারেট। কন্ট্রোল ইওর সেল্ফ। আদারওয়াইজ আই হ্যাভ টু টেইক আ্যান আ্যাকশন।
এন্ড আজকের পর থেকে তোমায় বাসায় পড়াতে আসবো না আমি। পড়াশোনা তো অলমোস্ট কমপ্লিট। কোনো সমস্যা হলে কল করবে।
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গিয়েছিল সে।
এদিকে আমি দু হাতে মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলাম।
___
নিদ্র সাহেব যে এক কথার মানুষ এটা আমার জানা ছিলো না। আমি ভেবেছিলাম অযথাই হুমকি দিচ্ছে কিন্তু না আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে সে দু’দিন পড়াতে এলো না। ফোন নেই বলে খোঁজ খবরও নিতে পারছি না৷ তখন আমার এক্সাম রানিং, এক্সাম যাতে খারাপ না হয় এজন্য ফোন নিয়ে নিয়েছেন বাপি।
আর দু’দিন বাদে পরিসংখ্যান এক্সাম। মাঝখানে বন্ধ । আমি পরিকল্পনা করলাম সরাসরি নিদ্রর বাসায় যাবো। কিন্তু মা-বাপি আছেন, তারা তো আ্যালাও করবেন না এই অবস্থায় বাইরে যাওয়া!
এক মুহুর্তের জন্য ভাবলাম সব জানিয়ে দিবো কি? তারপর মনে হলো নাহ্, হুটহাট ডিসিশনে এরকম বোকামি করা মানায় না।
বেশ কিছুক্ষণ ভাবনাচিন্তা করে আইডিয়া পেলাম আভার থেকে নোটস নেবার বাহানায় যাওয়া যায়।
লাঞ্চের পর পরই বাপিকে ডেকে বললাম, আজ বিকেলে আমি আভাদের বাসায় যেতে চাই কিছু ইম্পর্ট্যান্ট নোটস কালেক্ট করতে।
বাপি শোনামাত্রই না করে দিলেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে যেতে দেবেন না। দরকার পড়লে আভাকে নোটস নিয়ে বাসায় ডাকা হবে।
আমি বুঝতে পারলাম আমার এই আইডিয়া ভীষণ উইক। এখন লাস্ট একটা অস্ত্র হলো কান্নাকাটি । বাপিকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলেই সে রাজি হয়ে যাবে।
শুরু হলো আমার নাকে কান্না। কান্নাকাটি করে যত রকমের ইমোশনাল কথা বলা যায় সব বলতে শুরু করলাম।
আমার চোখের পানি সহ্য করতে পারেন না বাপি। এক নিমেষেই গলে গেলেন।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন_
–“ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ঠিক করলেনা বাবু। ওকে ফাইন বিকেলে যাবে বাট আমিও তোমার সাথে যেতে চাই”
— নাহ্ বাপি আমি একা যাবো। গাড়ি করে যাবো
— কিন্তু..
— কোনো কিন্তু নয়। আমার কথা না শুনলে আমি মেডিসিন নেয়া বন্ধ করে দিবো।
— না না। তোমার কথাই রাখা হবে। যেও বাট কেয়ারফুল থাকবে।
সম্মতি পেয়ে আমি খুশি হয়ে বাপির বাহু জড়িয়ে ধরে বললাম_
— আই লাভ ইউ বাপি। তুমি পৃথিবীর সবচাইতে ভালো বাপি।
বাপি একটুখানি হাসবার চেষ্টা করে বললেন_
“পাগল মেয়ে একটা”
,
এক সপ্তাহ হলো আমাদের বাসায় একজন কাজের মহিলা এসেছেন, দাদু বাড়ির এলাকা থেকে। নাম তার চামেলি। মহিলা বেশ লাজুক স্বভাবের। এক হাত ঘোমটা দিয়ে কাজকর্ম করে। ইনফ্যাক্ট সে খুব রিজার্ভ হয়ে চলাফেরা করে। সিলেক্টেড রুমে তার বিচরণ দেখা যায়।
বাপি যখন বাসায় থাকে তখন সে শুধুমাত্র কিচেন কিংবা আমার রুমেই ক্লিনিং ডাস্টিংয়ের কাজ করে।
আজ বৃহস্পতিবার। বাপি সারাদিন বাসায়। মিস.চামেলি কিচেনেই ব্যস্ত। মাঝেমধ্যে কিচেন থেকে বের হয়ে আমার রুমে এসে জিজ্ঞেস করছে_
“বেবী আপনার কিছু চাই?”
আমার প্রয়োজন হলে বলছি নয়তো না।
নিদ্রর জন্য কিছু রান্না করে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। রান্নাবান্নার দিকে বিশেষ ঝোঁক নেই আমার যদিওবা আমি অনেক ডিশই পারি, আপুর বদৌলতে শিখেছি বাট শখ করেও কখনো প্রিপেয়ার করা হয়নি।
কিন্তু আজ রান্না করবো নিদ্রর জন্য। বাপি-মা রুমে আছেন, এই সময়টাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
ব্যান্ডেজ লাগানো পা নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে কিচেনে গিয়ে উপস্থিত হলাম আমি।
চকলেট কেক বানানো যেতে পারে। বেকিং জিনিসটা সহজ, সময়ও কম লাগবে।
কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে । এক পায়ে সমস্ত প্রেশার দিয়ে দাঁড়ানো পসিবল হয়না। একজন হেল্পিং হ্যান্ডের প্রয়োজন। মিস.চামেলিকেই মনে হয় ডাকতে হবে।
কিচেনের পাশের রুমেই উনি থাকেন। গলা উঁচিয়ে ডাকা সম্ভব নয় তাই কষ্ট করেই ওনার রুমে গিয়ে ডেকে আনতে হলো।
আমাকে হাঁটাহাঁটি করতে দেখে উনি ভীত গলায় বললেন_
“বেবী আপনি হাঁটাহাঁটি করতেছেন কেন? আমারে ডাকলেই তো আমি আইসা যাইতাম”
আমি ওনাকে হাতের ইশারায় চুপ করতে বললাম।
শুধু বললাম, কেক বানাতে হবে আপনি প্লিজ হেল্প করুন।
উনি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।
ভদ্রমহিলা বেশি একটা কথাও বলে না। পুরোটা সময় আমিই জোর করে করে কথা বললাম।
কেক বানানো যখন শেষ, উনি সবকিছু পরিষ্কার করছেন তখন আমি ওনাকে একটা থ্যাংক্স দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম_
“আপনি আমাকে বেবী সম্বোধন করেন কেন?”
উনি কিঞ্চিৎ হেসে বললেন_
“এর আগে আমি চেন্নাইতে কাজ করতাম। ঐ খানে বাড়ির ছোটো ছেলে/মেয়েরে আমরা বেবী/বাবা বইলা ডাকতাম। এইজন্য আপনারেও ডাকি”
ওনার উত্তরে আমি খানিক বিস্মিতই হলাম, বাংলাদেশ থেকে চেন্নাই! ব্যাপারটা বিশ্বাস করা কষ্টকর । ওনার কথার টোন টাও ঠিক কাজের মহিলাদের মত নয়। বাপি হুট করে কাজের লোক রেখে কোনো ভুল করলো না তো!
__
নিদ্রদের বাসার উদ্দেশ্যে বেরুলাম বিকেলের দিকে। নর্মাল শার্ট প্যান্ট পরে এলোমেলো অবস্থায় বেরুতে হলো।
বাপি মনে করে ফোনটা দিয়ে দিলেন আর ড্রাইভার মামাকে বিশেষ খেয়াল রাখতে বললেন আমার।
পথেই আমি আভাকে কল করে বললাম গেইটে দাঁড়িয়ে থাকতে, আমি আসছি। হুট করে আসবো শুনে ও তো অবাক।
পরে ওকে সবটা খুলে বলতে হলো। ও হালকা ধমক দিয়ে বললো_”তোরা দুটোই হলি পাগল”
,
আভা জোর করা সত্বেও ওদের ফ্ল্যাটে না গিয়ে সোজা নিদ্রদের ফ্ল্যাটে চলে গেলাম। নিদ্রর বাবা-মা তখন বাসায় নেই। ও নাকি রাগারাগি করে ওনাদেরকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে শিফট করে দিয়েছে। বুঝতে পারলাম স্টেপ মম কে ও মেনেই নিতে পারেনি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আভার সাহায্যে নিদ্রর রুম পর্যন্ত যাই । ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছেন মহাশয় । দুদিন থেকে জ্বর আমাকে বলেইনি। মনে মনে ভীষণ রেগে গেলাম ওর উপর।
আভাকে বললাম নক করতে। আভা ভয়ে ভয়ে দু তিনবার নক করতেই ওপাশ থেকে অস্পষ্ট গলা ভেসে আসলো_
— কে? বলিনি আমায় ডিস্টার্ব না করতে!
— ভাইয়া আমি, একটু দরজা টা খোলো না প্লিজ?
ভীত গলায় বললো আভা।
নিদ্র ধমকে উঠলো_
— তুই কি যাবি এখান থেকে?
আমি বুঝলাম এভাবে কাজ হবে না। আভাকে বললাম এক্সট্রা চাবি নিয়ে আয়।
এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে বললাম, আমি এসেছি এই কথা যাতে কাউকে না বলে। আভা মাথা নেড়ে চলে গেলো।
দরজা জানালা বন্ধ করে শুয়ে আছে নিদ্র। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বিছানায় ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। ওর কপালে আলতো করে হাত রেখে ভেজা গলায় বললাম_
–“তোমার এত শরীর খারাপ, আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না নিদ্র?”
ও চকিতে তাকালো। অবিশ্বাস্য চাহনিতে আমায় দেখছে। আমি ওর সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ব্যালকনির থাইয়ে আলোর প্রতিফলন ঘটছে। কিঞ্চিৎ আলোতেই নিদ্রর রক্তিম মুখটা বুঝতে পারছি আমি।
ও আমার ডান হাতটা চেপে আমাকে কাছে টেনে নিলো। আমি ওর বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠলাম।
ও ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করলো_
— অসুস্থ শরীর নিয়ে আসতে গেলে কেন সুপ্ত?
— আগে তুমি বলো এত জ্বর নিয়ে শুয়ে আছো আমাকে একবার জানালে না কেন? খাবার ঔষধ কিছুই ঠিকমত খাওনি। কিসের এত জিদ তোমার!
নিদ্র মৃদু হাসলো । আমার কোমরে হাত বোলাতে বোলাতে ফিসফিসিয়ে বললো_
— রাগী বউ হয়ে গিয়েছে আমার সুপ্ত!
ওর তপ্ত নিঃশ্বাস আর উষ্ণ ছোঁয়ায় আমার তনু মনে অজানা শিহরণ বয়ে গেলো। ও যে প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করছে তা বুঝতে এক মুহুর্ত দেরি হলো না আমার।
আমি ওর হাত সরিয়ে উঠে বসলাম। চোখের পানি মুছে বললাম_
— এক বেলাও ঔষধ খাওনি?
ও মাথা নেড়ে না বললো।
— দেখি একটু ওঠো। আমি তোমার জন্য কেক বানিয়ে এনেছি একটু টেস্ট করে বলো তো কেমন হয়েছে?
ও ধীরে ধীরে উঠে বসলো।
— তুমি এনজিওরড পা নিয়ে কেক বানিয়েছো?
— হ্যাঁ। তোমার তো আমার প্রতি কোনো টান নেই কিন্তু আমার তো আছে। তুমি দু’দিন যাবৎ আসছো না, কল করছো না এজন্য আমাকেই আসতে হলো তোমায় এক পলক দেখে চোখের তৃষ্ণা মেটাবো বলে।
— আমার প্রেয়সী এত তৃষ্ণার্থ, এক পলক চোখের আড়াল হলেই অস্থির হয়ে যাচ্ছে !
ঠোঁট কামড়ে হাসছে নিদ্র। আমি রেগে ওর গলায় গায়ের জোরে একটা কামড় বসিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম_
— তুমি তো শুধু মজা নিতেই পারো। আমার ভালোবাসা তোমার কাছে মজাই।
ওর হাসি বেড়ে গেলো। পুনরায় আমায় কাছে টেনে নিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে প্রশ্ন করলো_
— আমি কি তোমায় ভালোবাসিনা?
— উঁহু একদমই না। সবসময় আমার থেকে দূরে দূরে থাকো।
— দূরে দূরে না থাকলে তোমার যে পাগলামি বেড়ে যাবে। সামলাবো কি করে এই জিদ্দি মেয়েটাকে!
— সামলাতেই হবে?
— আমার শুভ্র গোলাপটাকে অপবিত্র করতে ভীষণ বাঁধবে যে..
আমি ছলছল নয়নে তাকালাম ওর দিকে। ওর চোখের কোনেও পানি।
— ভালোবাসার অনুভূতিটা এত অদ্ভুত কেন নিদ?
— ভালোবাসা শব্দটাই তো রহস্যময় সুপ্ত। আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। এত ভারী শব্দের রহস্য উদঘাটন আমার দ্বারা হয়তো সম্ভব নয়।
চলবে,