#এক_রক্তিম_আলো
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৪
ধ্রুব হো হো করে হেসে অবনিকে বললো ‘ তোর এই শার্ট আমি পড়বো সিরিয়াসলি?
অবনি তখন ভ্রু কুচকে বললো ‘ কেনো পরবে না?
রাহি ধ্রুবের রুমের দিকে আসতেছিলো হঠাৎ অবনির কথা শুনে রাহি বললো ‘ ওকে আমি শার্ট দিয়েছি সেই জন্য তোর শার্ট পরবে না। তুই এই শার্ট কাজের লোককে দে।’
রাহির কথা শুনে অবনি শান্ত কন্ঠে বললো ‘ ধ্রুব ভাইয়া তুমি কি এই শার্টটা নিবে?
ধ্রুব রাহির দিকে তাকিয়ে অবনির থেকে শার্টটা নিয়ে একটু ভেবে বললো ‘ আমার ইচ্ছা হলে পরবো।’
অবনি মুচকি হাসলো। রাহি বিরক্ত কন্ঠে অবনিকে বললো ‘ তুই বাহিরে যা তো ধ্রুবের সাথে আমার কথা আছে।’
রাহির কথায় অবনি আড়ালে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
রুম থেকে বের হয়ে গেলো। অবনি যেতেই রাহি কিছুটা রেগে ধ্রুবকে বললো ‘ ধ্রুব তুমি কিন্তু ওর দেওয়া শার্ট পরবে না বুঝেছো?
ধ্রুব তখন শান্ত চাহনিতে বললো ‘ ঠিক আছে।’ ধ্রুবের কথায় রাহি রাগ কে নিয়ন্ত্রণ করে বললো ‘ হুম। শুনো?
ধ্রুব বললো ‘ হুম।’ রাহি চিন্তিত কন্ঠে বললো ‘ অবনিকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করবে কবে?
আমি কিন্তু অবনি কে তোমার পাশে জাষ্ট নিতে পারছি না।’
ধ্রুব কথা ঘুরিয়ে বললো ‘ এইগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করি? আমি প্রচুর টায়ার্ড এখন।’
ধ্রুবের কথা ঘুরাতে দেখে রাহি তেতে উঠে বললো ‘ আমি চাই অতি তাড়াতাড়ি যেনো তুমি অবনিকে ডিভোর্স দাও ঠিক আছে? দিন দিন অবনির জন্য আমাদের দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে।’
এই বলে রাহি রেগে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ধ্রুব রাহির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশার দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
অবনি ধ্রুবের রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় বসে কি মনে করে জেনো টিভি অন করলো। টিভ অন করতেই শুনতে পেলো দুই ঘন্টা আগে দ্যা বিজনেস ম্যান আর্থিককে খুব বাজে ভাবে খু’ন করা হয়েছে। কথাটা শুনেই অবনি চমকে গেলো। অবনি চিন্তিত কন্ঠে বিরবির করে বললো ‘ কি হচ্ছে কি দেশে? বিজনেস ম্যান আর্থিক আহমেদ খু’ন এইগুলো কে করতেছে?
এই বলে অবনি মাথায় হাত দিলো। এক দিকে আশ্রমের বাচ্চাদেরকে কিডন্যাপ করা হচ্ছে আরেকদিকে বিজনেস ম্যান আর্থিক আহমেদ খু’ন।’
অবনি এইগুলো ভাবতেছে হঠাৎ ধ্রুবের মা অবনিকে মাথায় হাত দেওয়া দেখে বললো ‘ কি হয়েছে অবনি?
অবনি মাথা থেকে হাত সরিয়ে শ্বাস নিয়ে বললো ‘ বিজনেস ম্যান আর্থিক আহমেদ কে খু’ন করা হয়েছে।’
অবনির কথা শুনে ধ্রুবের মা অবাক হয়ে বললো ‘ মানে? ওনাকে খু’ন করলো কে?
অবনির মা সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো ‘ হয়তো ওনার কোনো বড় শ’ত্রু ওনাকে খু’ন করেছে।’
অবনির মায়ের কথা শুনে ধ্রুবের মা চিন্তিত কন্ঠে বললো ‘ কি বলছিস তুই? আর তুই কিভাবে জানলি ওনাকে খু’ন করা হয়েছে?
অবনির মা তখন বললো ‘ ফেসবুকে দেখলাম।’
রাহি এসে বললো ‘ কি হয়েছে আম্মু?
অবনির মা তখন বললো ‘ বিজনেস ম্যান আর্থিক আহমেদ কে খু’ন করা হয়েছে।’
রাহি বিরক্ত হয়ে বললো ‘ ওনাকে নিয়ে এইখানে এতো কথা হচ্ছে কেনো শুনি?
অবনি সন্দেহ চোখে রাহির দিকে তাকিয়ে বললো ‘ বিরক্ত হচ্ছিস কেনো? ওনি একজন বিজনেস ম্যান ছিলো সেই জন্য ওনার মৃত্যুর কথা শুনে সবাই অবাক হচ্ছে।’
রাহি তখন বললো ‘ আমি তা বলতে চাইনি। আমরা তো জানি ওনি মা’রা গেছে সেই জন্যই,
রাহিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ধ্রুবের মা বললো
‘ আচ্ছা বাদ দে। রাহি আজকে পাশের বাসার লোকরা আসবে তোরা তো জানিস।’
রাহি বললো ‘ হুম।’ ধ্রুবের মা বললো ভালো ভাবে ওনাদের সাথে কথা বলিস। কোনো ঝামেলা করিস না প্লিজ।’
রাহি তখন পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো ‘ চিন্তা করো না তুমি।’
এই বলে রাহি নিজের রুমে চলে গেলো। অবনির ফোনে কল বাজতেই অবনি ফোন নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে নিজের রুমে এসে কল ধরতেই অপর পাশ থেকে আনিসুল আহমেদ চিন্তিত সুরে বললো ‘ অবনি আর্থিক আহমেদ কে খু’ন করা হয়েছে।’
অবনি বললো ‘ হুম। চিন্তা করবেন না স্যার আমি তো আছি। যারা এই কাজ করেছে তাদেরকে এর পাপের ফল আমি দিবোই।’
আনিসুল আহমেদ তখন শ্বাস নিয়ে বললো ‘ তোমার উপরে আমার ভরসা আসে। রাহি চৌধুরীকে ধরে আনবে কিভাবে?
অবনি কিছু একটা ভেবে আনিসুল আহমেদ কে কিভাবে রাহিকে ধরবে সেই প্লান বললো। সব শুনে আনিসুল আহমেদ মুচকি হেসে বললো ‘ অসাধারণ প্লান।’
অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ স্যার এখন রাখি?
আনিসুল আহমেদ আচ্ছা বলে কল কেটে দিলো। অবনি ফোন রেখে রেগে বললো ‘ আমার ধারনা যদি ঠিক হয় তাহলে আমি ওদেরকে ছাড়বো না। পাপের শা’স্তি দিবো।
‘ কাকে শা’স্তি দেওয়ার কথা হচ্ছে শুনি?
দরজার পাশ থেকে অবনির মা বলে উঠলো। অবনি পিছন ঘুরে মুচকি হেসে বললো ‘ আমাদের বাড়ির বিড়ালটা প্রচুর দুষ্টু সেই জন্যই ওকে শা’স্তি দেওয়ার কথা বলছি।’
অবনির মা রূঢ় কন্ঠে বললো ‘ অবনি তুই বুনো বিড়ালের মতো থাকিস কিন্তু তুই হচ্ছিস গভীর জলের মাছ।’
অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ কে বুনো বেড়াল আর কে গভীর জলের মাছ সেটা পরে জানতে পারবে।’
এই বলে অবনি রাহির মায়ের পাশ কেটে চলে গেলো।
বিকেলে বেলা
অবনি ধ্রুবের দেওয়া কালো শাড়ি পরেছে। অবনি ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে আছে কখন ধ্রুব নিচে নামবে। ধ্রুবের মা অবনিকে দেখে হেসে বললো ‘ অবনি তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।’
ধ্রুবের মায়ের কথায় অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ সেন্টি জামাইয়ের দেওয়া শাড়ি পরেছি ভালো তো লাগবেই শাশুড়ি মা। ধ্রুবের মা হেসে দিলো। পায়ের শব্দ পেয়ে অবনি সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ধ্রুব আসতেছে আর ওর পাশেই রাহি আসতেছে। ধ্রুব আর রাহি নিচে আসলো। অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বললো ‘ ধ্রুব ভাইয়া আমার দেওয়া শার্টটা তুমি সত্যিই পরলে না?
অবনির কথায় ধ্রুব মাথা নিচু করে নিলো। আসলে ধ্রুব অবনির দেওয়া শার্টটাই পরতে চেয়েছিল কিন্তু রাহির জোড়া জড়িতে ধ্রুব রাহির সাথে ম্যাচিং করা শার্টটাই পরেছে।
অবনির কথা শুনে রাহি পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো ‘ ধ্রুবের এই শার্টে মানিয়েছে সেই জন্য পরেছে। ‘
রাহির কথা শুনে অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ কথায় আছে না মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। ধ্রুব ভাইয়া আমার বর তোর না। ওনি আমার দেওয়া শার্ট পরবে তোর দেওয়া শার্ট না।’
রাহি তখন শয়তানি হাসি দিয়ে বললো ‘ ও কিন্তু তোকে ভালোবাসে না ভুলে যাস না সেটা?
রাহির অবনির কথায় ভেজা কন্ঠে বললো ‘ আমি তোর বোন হয় রাহি। আমার সাথে এমন আচরণ করিস না প্লিজ।’
রাহি তেতো কন্ঠে বললো ‘ তোকে আমি বোন মানি না বুঝেছিস?
অবনি মলিন কন্ঠে বললো ‘ একদিন আমাকেই তোর প্রয়োজন হবে দেখিস।’
এই বলে অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আকুল কন্ঠে বললো ‘ আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমার দেওয়া শার্টটা পরবে আজ। অনেক আশা নিয়ে তোমাকে দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি পরলে না। আমার ভুল হয়েছে তোমার থেকে আশা করা।
এই বলে অবনি চোখের পানি মুছে উপরে চলে গেলো।
অবনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ধ্রুব চুপ করে রইলো। ধ্রুবের নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। ধ্রুব কিছু না বলে বাসার বাহিরে চলে গেলো। রাহি মনে মনে বললো ‘ ধ্রুব একটু একটু করে অবনিকে ভালো বাসতে শুরু করেছে। আমি যে করেই হোক ধ্রুবকে অবনির মায়ায় পরতে দিবো না। ধ্রুবই এখন যে আমার হাতের পুতুল আছে। ধ্রুব হাত ছাড়া হয়ে গেলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে যেটা আমি কোনোকালেই হতে দিবো না।’
এই বলে রাহি ধ্রুবের পিছনে পিছনে গেলো। রাহি রাস্তায় এসে আশেপাশে দেখতেছে ধ্রুব আছে নাকি কিন্তু হঠাৎ কেউ এসে রাহির মুখে রুমাল বাধলো। ঘটনাটা তাড়াতাড়ি ঘটাই রাহি কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। কিছু লোক রাহিকে ধরে গাড়িতে উঠালো। রাহি হাত নেড়ে বললো,,
#চলবে…
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ্যাপি রিডিং।)