এক রক্তিম আলো পর্ব -০৩

#এক_রক্তিম_আলো
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৩

অবনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাহি কিছুটা অবাক হয়ে বললো ‘ ধ্রুব ও কোথায় গেলো?

ধ্রুব বিরক্ত কন্ঠে বললো ‘ শুনলেই তো এক জায়গাই যাবে, হয়তো আশ্রমে যাবে।তুমি এখন গাড়িতে উঠো আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।’

ধ্রুবের কথায় রাহি তখন সন্দেহ সুরে বললো ‘ আমার মনে হচ্ছে ও আশ্রমে না অন্য কোথাও যাবে।’

ধ্রুব রাহির কথায় কিছু না বলে গাড়িতে উঠলো। রাহি আর কিছু না ভেবে ধ্রুবের পাশের সিটে বসলো। ধ্রুব গাড়ি চালাচ্ছে হঠাৎ রাহি ধ্রুবের এক হাত ধরে ধ্রুবের উপরে মাথা রাখলো। রাহির কাজে ধ্রুবের আগের মতো ভালো লাগছে না কেমন যেনো অস্বস্তি কর লাগতেছে। ধ্রুব হাত ছাড়িয়ে নিতেই রাহি ধ্রুবের উপর থেকে মাথা উঠিয়ে অবাক হয়ে বললো ‘ হাত সরিয়ে নিলে কেনো ধ্রুব? আগে তো কখনো এই রকম করোনি এখন কেনো এই রকম করলে?

ধ্রুব থমথমে গলায় বললো ‘ ভালো লাগছে না সেই জন্যই।’ রাহি রাগান্বিত কন্ঠে বললো ‘ ভালো লাগছে না নাকি আমার ছোয়ায় তোমার কাছে ভালো লাগছে না?

ধ্রুব রাহির হাত ধরে শান্ত কন্ঠে বললো ‘ সব সময় নেগেটিভ চিন্তা করো কেনো? আমি তোমাকেই ভালোবাসি। আর সারাজীবন বেসে যাবো।’
ধ্রুবের কথায় রাহি মুচকি হেসে মনে মনে বললো ‘ এইটাই তো চেয়েছি আমি।’

ধ্রুব ভ্রু উল্টে বললো ‘ কি বিরবির করতেছো মনে মনে?

রাহি বললো ‘ কিছু না।’ ধ্রুব আচ্ছা বলে গাড়ি ড্রাইভ করতে মনোযোগ দিলো।

এদিকে
অবনি ওইখান থেকে একটা রিক্সা নিয়ে থানায় আসলো। অবনিকে দেখে পুলিশ অফিসাররা সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। অবনি সালামের উত্তর নিয়ে একটা রুমের ভিতরে আসলো। অবনিকে দেখে রুমে থাকা এক পুলিশ অফিসার বলে উঠলো ‘ এসে গেছো তাহলে?

অবনি শান্ত চাহনিতে বললো ‘ ইয়েস স‍্যার।’
অবনির কথায় পুলিশ অফিসার আনিসুল আহমেদ চেয়ারে বাধা একটা লোকের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ‘ ওর কাজ থেকে সব তথ্য বের করো?

অবনি মাথা নাড়িয়ে বললো ‘ ওকে স‍্যার।’ অবনির কথায় আনিসুল আহমেদ হুম বলে চলে যাবে তার আগেই আরেকজন অফিসার বললো ‘ স‍্যার আমি থাকি?

অবনি শ্বাস নিয়ে বললো ‘ না কাজের সময় আমি কাউকে রাখিনা আপনি আসতে পারেন।’ অবনির কথায় আনিসুল আহমেদ মুচকি হেসে চলে গেলো ওনার সাথে সাথে আরেকজন অফিসার ও চলে গেলো। ওনারা যেতেই অবনি রুমের দরজা আটকালো। দরজা আটকানোর শব্দে সামনে চেয়ারে বসে থাকা লোকটা অবনির দিকে তাকালো। অবনি লোকটার দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বললো ‘ কে আশ্রমের বাচ্চাদের কে কিড’ন্যা’প করেছে বল?

চেয়ারে বসে থাকা লোকটা বললো ‘ আমি জানিনা।’

অবনি রেগে টেবিলে থা’প্প’ড় মা’রলো। টেবিলে থা’প্পড় মা’রাতে টেবিলে অনেক জোরে আওয়াজ হলো। লোকটা ভয় পেয়ে গেলো। অবনি রেগে চেচিয়ে বললো ‘ মিস্টার জয় শেখ ভালো ভাবে বলছি আশ্রমের বাচ্চাদেরকে কে কি’ড’ন্যা’প করেছে?

জয় শেখ চোখ মুখ শক্ত করে বললো ‘ বললাম তো আমি জানিনা তারপরও কেনো প্রশ্ন করতেছেন?

” এই হচ্ছে জয় শেখ ধ্রুবদের বিজনেসের ম‍্যানেজার।”

অবনি রেগে কিছু বলবে তার আগেই রাহি ফোন দিলো। অবনি ফোনটা ধরে বললো ‘ হ‍্যাঁ রাহি বল?

অপর পাশ থেকে রাহি বললো ‘ তুই কি ড্রেস গুলো নিজে দিবি না আমি দিবো?

অবনি তখন বললো ‘ না গাড়িতে রাখতে বল আমি এসেই সবাই কে দিবো।’
এই বলে অবনি কল কেটে দিলো। জয় শেখ বলে উঠলো ‘ রাহি চৌধুরী ওনাকে এইখানে ধ’রে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করুন তাহলেই জানতে পারবেন।’

মিস্টার জয় শেখের কথায় অবনি কিছুটা অবাক হয়ে বললো ‘ মানে? ওকে কেনো ধ’রে আনবো?

জয় শেখ মুচকি হেসে বললো ‘ নিজের বোনকে ধ’রে আনার কথা বললাম বলে অবাক হয়ে গেলেন মিসেস অবনি চৌধুরী?

অবনি জয় শেখের কাছে এসে রাগী কন্ঠে বললো ‘ কি বলতেছিস তুই?

জয় শেখ সিরিয়াস মুখ করে বললো ‘ আগে তো ওকে ধ’রে এনে জিজ্ঞেস করুন তারপর সব জানতে পারবেন।’

অবনি তখন শান্ত চাহনিতে বললো ‘ ঠিক আছে আমি ওকে ধ’রে আনবো।’
কথার মাঝেই আনিসুল আহমেদ দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে এসে বললো ‘ বলেছে কিছু?

অবনি শান্ত কন্ঠে বললো ‘ হুম স‍্যার। রাহি চৌধুরীকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলেছে।’

আনিসুল আহমেদ তখন বললো ‘ ওকে তাহলে কালকেই ওকে আমাদের লোক যেয়ে ধরে আনবে।’

অবনি দ্রুততার সঙ্গে বললো ‘ না স‍্যার। কালকে ও নিজেই এইখানে আসবে।’

আনিসুল আহমেদ মুচকি হেসে বললো ‘ আচ্ছা।’

অবনি চিন্তিত কন্ঠে বললো ‘ স‍্যার আমাকে একটু বাসায় যেতে হবে।’

আনিসুল আহমেদ তখন বললো ‘ আচ্ছা এখন যাও।’ অবনি আচ্ছা বলে মুচকি হেসে ওইখান থেকে বের হয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওনা হলো।

” অবনি একজন সিআইডি অফিসার এইটা কেউ জানে না। অবনি পরিবারের কারো কাছেই বলেনি কারন অবনি চাই না এই কথা কেউ জানুক। এই কথা কেউ জানলে অবনির পরিবারের অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে। যার জন্য কাউকেই বলেনি।

অবনিদের একটা আশ্রম আছে। যেখানে ছোট শিশুদেরকে রাখা হয়। যাদেরকে মা বাবা না পালেন তাদেরকে সেই খানে রাখা হয়। অবনি দুই দিন পর পরেই ওই আশ্রমে এসে বাচ্চাদের সাথে খেলা করে। বেশ কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই ওই আশ্রম থেকে পাঁচটা বাচ্চাকে পাওয়া যায় না। অবনি আর ওর টিম তদন্ত করে পাই এই কাজের সাথে ধ্রুবদের বিজনেসের ম‍্যানেজার জয় শেখ এর সাথে জড়িত আছে তবে এইটা এখনো শিউর নয়। অবনি জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ওনাকে ধরে এনেছে। জয় শেখ সবার থেকে লুকিয়ে থাকে”

——-

অবনি বাসায় এসে গাড়ি থেকে ব‍্যাগ গুলো নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাতেই ধ্রুবের মা দরজা খুলে দিলো। অবনি কে দেখে ধ্রুবের মা ভ্রু কুচকে বললো ‘ তুই ওদের সাথে আসলি না কেনো? কোথায় গিয়েছিলি?

ধ্রুবের মায়ের কথা শুনে অবনি তখন মুচকি হেসে ভিতরে এসে বললো ‘ গিয়েছিলাম এক জায়গাই।’

ধ্রুবের মা বললো ‘ কোন জায়গাই গিয়েছিলি?

অবনি কথা ঘুরাতে বললো ‘ শাশুড়ি মা তোমাদের সবার জন্য শপিং করে এনেছি।’
এই বলে ধ্রুবের মায়ের হাতে একটা শাড়ির ব‍্যাগ দিলো। ধ্রুবের মা হেসে ব‍্যাগ থেকে শাড়িটা বের করে খুশি হয়ে বলে ‘ অনেক সুন্দর হয়েছে তো।’

অবনি কিছুটা ভাব নিয়ে বললো ‘ দেখতে হবে তো কে চয়েস করেছে।’
অবনির কাজ দেখে ধ্রুবের মা ফিক করে হেসে দিলো। অবনি তার মাকে, বাড়ির কাজের মাসি রিহানাকে ডাক দিয়ে তারপর একে একে ওদেরকে দিলো। অবনি ওর মায়ের কাছে এসে হাসি মুখে বললো ‘ কেমন হয়েছে শাড়িটা মা? অবনির মা বিরক্ত মুখ করে বললো ‘ ভালো।’
এই বলে তিনি চলে গেলো। অবনি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। রিহানা খুশি হয়ে বললো ‘ অবনি আপা শাড়িটা এক্কারে সুন্দর হইছে।’

রিহানার কথা শুনে অবনি হেসে দিলো। রিহানা অবনির থেকে কিছুটা বড়। অবনিকে রিহানা আপা বলেই ডাকে।

ধ্রুবের মা অবনির হাতে আরেকটা ব‍্যাগ দেখে বললো ‘ এইটা কার জন্য?

অবনি তখন বললো ‘ এইটা আমার জন্য।’ ধ্রুবের মা বললো ‘ ধ্রুবের জন্য কিছু আনিস নাই?

অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে দেখে ধ্রুব সোফায় বসে ফোন চালাচ্ছে। অবনি বললো’ না।’

ধ্রুব ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে বললো ‘ আমার জন্য আনবে কেনো? আমার ওর জিনিসের প্রয়োজন নেই, এই বলে চোখ মুখ শক্ত করে নিজের রুমে চলে গেলো। ধ্রুবের মা মন খারাপ করে বললো’ ধ্রুব দেখেছিস রেগে গেলো।’

অবনি মুচকি হেসে রুমে চলে গেলো। অবনি রুমে এসে দেখে ধ্রুব বিছানায় শুয়ে আছে। অবনি ব‍্যাগ থেকে শাড়িটা বের করে ধ্রুবের জন্য আনা শার্টটা ধ্রুবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো ‘ এই নিন আপনার গিফট।’

ধ্রুব অবনির হাতে শার্ট দেখে ভ্রু উল্টে বললো’ তুই আমার জন্য কিছু আনিস নাই বললি তো এখন,,
ধ্রুবকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অবনি শয়তানি হাসি দিয়ে বললো ‘ একটা মাত্র সেন্টি জামাই আমার তার জন্য কিছু আনবো না এইটা কি হয়? সবার সামনে দিতে লজ্জা লাগছিলো যার জন্য রুমে এসে দিলাম। যাইহোক বলুন তো কেমন হয়েছে?

ধ্রুব শার্টটা দেখে যা বললো তা শুনে অবনির চোখ দিয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।

#চলবে…
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ‍্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here