এক রক্তিম আলো পর্ব -১০

#এক_রক্তিম_আলো
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:১০

অবনি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো ‘ ওহ্ শিট এই অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত ছিলো?
অনিতা মাথা নিচু করে অবনিকে বললো ‘ হুম। ওকে কেমন যেনো লাগতো। ওর ব‍্যবহার পাল্টে গিয়েছিলো।’

অবনি অনিতার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো ‘ যেমন?

অনিতা শ্বাস নিয়ে বললো ‘ সকাল দশটায় অফিসে উদ্দেশে বাসা থেকে বের হতো রাত এগারোটা বা বারোটায় আসতো। সব সময় চিন্তাই থাকতো। আমরা কিছু জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে চলতো। ওকে মা’র্ডা’র করার দুইদিন আগে আমাদের বলে ও অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত আছে। আমি মা ওকে বলি যে তুমি এইগুলো করো না। এইগুলো থেকে সরে আসো কিন্তু ও চিন্তিত কন্ঠে বলতো ‘ আমি যদি এই পথ থেকে বের হতে চাই তাহলে আমি বাঁচবো না। এর থেকে সরে আসার কোনো পথ খোলা নেই।’

অনিতা আবার বললো ‘ আমি ওকে বলেছিলাম যে তুমি আজকেই থানায় যেয়ে পুলিশ কে সব বলে আসো। ও আচ্ছা বলেছিলো। তারপরের দিন ওর অফিস শেষ করে বিকেলে থানায় যাওয়ার কথা কিন্তু তার আগেই ওকে মে’রে ফেললো কেউ।’
এই বলে অনিতা কেদেঁ দিলো। অবনি অনিতার কাছে গিয়ে হাত ধরে মুচকি হেসে বললো ‘ তুমি চিন্তা করো না আমরা আছি তো। ওনাকে মা’র্ডা’র যে করেছে তাকে খুজে বের করবো।’

অনিতা চুপ করে রইলো। অবনি আনিসুল আহমেদ কে বললো ‘ স‍্যার ওনাকে তো অফিসেই খু’ন করা হয়েছে তাই না?

আনিসুল আহমেদ বললো ‘ হ‍্যাঁ।’
অবনি তখন সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বললো ‘ স‍্যার ওনাকে যদি অফিসে খু’ন করা হয় তাহলে তো অফিসে সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাবে কে খু’ন করেছে।’

আনিসুল আহমেদ তখন গম্ভীর কন্ঠে বললো ‘ আমরা চেক করেছিলাম সিসিটিভি ফুটেজ কিন্তু ওখানে অন্ধকার দেখা যাচ্ছিলো। যে ওনাকে মে’রে’ছে সে আগে থেকেই সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট করেছে।’

অবনি বললো ‘ ওহ আচ্ছা। ‘
আনিসুল আহমেদ বসা থেকে উঠে বললো ‘ আমাদের এখন যেতে হবে। অবনি অনিতাকে বললো ‘ এইবার তাহলে আমরা আসি, এই বলে অবনি আর আনিসুল অনিতাদের বাড়ি থেকে বের হলো। অবনি গাড়ির কাছে এসে আনিসুল আহমেদ কে বললো ‘ স‍্যার কালকে আমাদেরকে আর্থিক আহমেদর অফিসে যেতে হবে।’

আনিসুল আহমেদ শান্ত চাহনিতে বললো ‘ হ‍্যাঁ।’ আচ্ছা অবনি রাহি চৌধুরীর বিষয়ে কোনো তথ্য পেয়েছো?

অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ স‍্যার পেয়ে যাবো। এইবার তাহলে আমি যায় ওদিকে বাড়ির সবাই চিন্তা করবে বলে আসিনি।’

আনিসুল আহমেদ হেসে বললো ‘ আচ্ছা যাও।’
অবনি মুচকি হেসে সিএনজিতে উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। অবনি বাড়িতে আসতেই ধ্রুবের মা অবনির কান টেনে রেগে গিয়ে বললো ‘ এই মেয়ে কই যাস তুই? বলে যাবি তো? তোর জন্য কি আমার চিন্তা হয়না হ‍ে?

অবনি কান্নার ভান করে বললো ‘ লাগছে শাশুমা।’

ধ্রুবের মা তখন আরো জোরে ধরে বললো ‘ লাগুক লাগার জন্যই তো ধরছি।’

অবনি ঠোট উল্টে বললো ‘ আমি কিন্তু সেই ছোটোটি আর নেই আমার বিয়ে হয়েছে।’

ধ্রুবের মা কান ছেড়ে ঝাঝালো কন্ঠে বললো ‘ তোর বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে আমার কাছে তুই সেই ছোটটিই আছিস।’

অবনি ধ্রুবের মায়ের কথায় মুচকি হেসে ধ্রুবের মাকে জড়িয়ে ধরে বললো ‘ আমি অনেক লাকি তোমার মতো শাশুড়ি প্লাস কাকি পেয়ে।’

ধ্রুবের মা মুচকি হেসে বললো ‘ আমিও লাকি তোর মতো মেয়ে পেয়ে।’

অবনির মা সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মুখ বাকা করে বললো ‘ ওকে আরো মাথায় চড়াও যেদিন তোমাদের মাথার উপরে নাচবে সেই দিন বুঝবে এই মেয়ে কি

অবনির মায়ের কথায় নিমিষেই অবনি মুখ থেকে হাসি চলে গেলো। ধ্রুবের মা বিরক্ত কন্ঠে বললো ‘ তুই কিরে? যে মেয়েটার তোকে মায়ের মতো ভালোবাসে। তোকে মা বলে। যেখানে ওকে মাতামাতি করা তোর উচিত সেই খানে তুই ওকে এই রকম বলছিস?

অবনি মন খারাপ করে ধ্রুবের মাকে বললো ‘ থাকনা মা বাদ দাও।’

রাহির মা তখন বললো ‘ ওকে নিয়ে মাতা মাতি করার টাইম আমার নেই। নিজের মাকে তো ছোটবেলাতেই খেয়েছে এখন আমাকে খাচ্ছে।’

রাহির মায়ের কথায় অবনির চোখ দিয়ে দু -ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। অবনি ভেজা কন্ঠে বললো ‘ তুমি কেনো সব সময় এই রকম বলো?

রাহির মা বললো ‘ যা সত্যি তাই বলেছি।’
এই বলে তিনি সোফায় গিয়ে বসলো। ধ্রুবের মা অবনির চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো ‘ মন খারাপ করিস না।’
অবনি হুম বললো।

কিছুক্ষন পর
অবনি ড্রয়িং রুমে বসে ধ্রুবের মায়ের সাথে আড্ডা দিচ্ছে হঠাৎ কলিং বেল বাজার শব্দে অবনি সোফা থেকে উঠে দরজা খুলে দিতেই দেখে ধ্রুবের হাতে ব‍্যান্ডিজ করা। অবনি অবাক হয়ে বললো ‘ তোমার হাতে কি হয়েছে?

ধ্রুব ভিতরে এসে বললো’ তেমন কিছু না, সামান্য চোট পেয়েছি।’

ধ্রুবের মা ধ্রুবকে দেখে বললো ‘ কি হয়েছে তোর? কিভাবে চোট পেলি?

ধ্রুব নিশ্বাস নিয়ে বললো
‘ কিছুক্ষন আগে আমি অফিসের পাশেই পার্কে গিয়েছিলাম। তখন দেখি কিছু বখাটে ছেলে একটা অন্ধ লোকের থেকে টাকা নিচ্ছে সেই জন্য আমি ওই ছেলেগুলোকে বারন করতে গিয়েছি দেখে তাড়া আমাকে মে’রে’ছে।’

ধ্রুবের কথা শুনে অবনির চোখ মুখ রাগে লালচে রুপ ধারন করলো। অবনি ধ্রুবকে বললো ‘ চলো আমার সাথে, এই বলে অবনি ধ্রুবের হাত ধরে বাইক এর কাছে আনলো। এদিকে ধ্রুবের মা অবনিকে বললো ‘ তুই কোথায় যাচ্ছিস ওকে নিয়ে এখন?
কিন্তু অবনি ধ্রুবের মায়ের কথায় কান দিলো না। অবনির এই রূপ দেখে ধ্রুব ভরকে গেলো। ধ্রুব বাইকে উঠলো। অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ তুমি পিছে বসো আমি চালাবো।’

অবনির কথা শুনে ধ্রুব অবাক হয়ে বললো ‘ চালাতে পারবি?

অবনি স্বাভাবিক কন্ঠে বললো ‘ পারবো।’
এই বলে অবনি সামনে বসলো আর ধ্রুব পিছনে। অবনি বাইক ফুল স্পিডে দিয়ে চালাতে লাগলো। ধ্রুব অবনির কাধে হাত রেখে বললো ‘আরে আস্তে চালা।’
অবনি ধ্রুবের কোনো কথা শুনলো না। কিছুক্ষন পর অবনি সেই পার্কে এসে দেখে ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে আছে। অবনি বাইক ফুল স্পিডে দিয়ে ছেলেগুলোর সামনে এসে জোরে গাড়ি থামাতেই ধ্রুব ছিটকে গিয়ে পরলো বাইক থেকে কিছুটা দূরে। অবনি বাইক থেকে নেমে সামনে থাকা ছেলেগুলোকে বললো ‘ ওই তোরা আমার সেন্টি জামাইকে মে’রে’ছি’স কেনো?

ছেলেগুলো অবনির কথায় হাসি দিয়ে বললো ‘ আমাদের কাজে বাধা দিতে আসলে আমরা এই রকমই করি।’

ছেলেগুলোর কথায় অবনি মুচকি হাসলো। ছেলেগুলো অবনির চারপাশে ঘুরে বলে উঠলো ‘ তুই তো সুন্দরী আছিস।’
নানা বাজে কথা অবনিকে বলতে লাগলো। অবনি রেগে একটা ছেলেকে থা’প্পড় দিতেই আরেকটা ছেলে রেগে অবনিকে থাপ্পড় দিতে যাবে তার আগেই অবনি হাতটা মুচড়ে ধরে ছেলেটার পেটে ঘু’সি দিতেই ছেলেটা মাটিতে পরে গেলো।

এদিকে
ধ্রুব মাটিতে বসেই অবাক হয়ে অবনির কাজ দেখতেছে। একটা ছেলে রেগে অবনিকে বললো ‘ তোকে তো আমি, এই বলে অবনিকে মা’র’তে আসবে তার আগেই অবনি ছেলেটার বুকে লা’থি দিলো।অবনি পাশে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে চোখে চশমা পরে দাঁড়িয়ে আছে। অবনি ছেলেটার থেকে চশমা নিয়ে নিজে পরে ধ্রুবের দিকে চোখ টিপ দিয়ে ছেলেগুলোকে এক এক করে মা’র’তে লাগলো। ছেলেগুলো অবনির পা জড়িয়ে ধরে কান্না করে বললো ‘ আমাদের ক্ষমা করে দেন। আমরা আর কখনো এই রকম করবো না আমাদের কসম।’

অবনি ধমক দিয়ে বললো ‘ সেন্টি জামাইয়ের কাছে বল ওনি যদি ক্ষমা করে দেয় তাহলে আমিও দিবো।’
অবনির কথায় ছেলেগুলো ধ্রুবের কাছে এসে ক্ষমা চাইলো। ধ্রুব ক্ষমা করে দিলো। অবনি ধ্রুবের কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দিতেই ধ্রুব মাটি থেকে দাঁড়িয়ে অবনিকে বললো’ তুই বাড়ির বাহিরে সেন্টি জামাই বলবি না লজ্জা করে আমার।’

অবনি তখন হেসে বললো ‘ ওরে আমার লজ্জাবতী জামাইরে।’

ধ্রুব তখন সন্দেহ চোখে তাকিয়ে অবনিকে বললো,,

#চলবে…
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ‍্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here