এক রক্তিম আলো পর্ব -০৮

#এক_রক্তিম_আলো
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৮

অবনি হেসে বললো ‘ কিরে অবাক হয়ে গেলি বুঝি? তোর থার্ড ক্লাস বোনকে এই রূপে দেখে চমকে গেলি?

অবনির কথায় রাহি তখন চেচিয়ে বলে উঠলো ‘ তুইই এতোদিন আমাদেরকে ধোকা দিয়েছিস? এর জন্যই তো তোকে আমার কেমন যেনো লাগতো। সেই দিন সি আইডি অবনি চৌধুরীর কন্ঠ শুনেই আমার সন্দেহ হয়েছিল।’

অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ ধোকা তো আমি দেয়নি দিয়েছিস তুই? তোর লজ্জা করে না এই রকম অনৈতিক কাজ করতে? নিজে একজন মেয়ে হয়ে শিশুদের কে তুলে এনে পাচার করতে? তোর তো টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই তারপরও কেনো এই রকম কাজে যুক্ত হলি? তোর সাথে আর কে কে আছে?

অবনির কথায় রাহি রেগে বললো ‘ আমার ইচ্ছা হয়েছে আমি করেছি তোর কি তাতে।’

অবনি রাগী কন্ঠে বললো ‘ তুই জানিস না এর ফল কি হতে পারে।’

রাহি পৈশাচিক হাসি দিয়ে আস্তে করে পাশে থাকা এক পুলিশের প‍্যান্টের পকেট থেকে বন্ধুক নিয়ে একটা পুলিশ অফিসারের মাথায় ধরে অবনিকে বললো ‘ আমার থেকে দূরে থাক।’

রাহির এই রকম কাজ দেখে অবনি তখন অবাক হয়ে বললো ‘ কি করছিস তুই? ছাড় ওনাকে?

রাহি মুচকি হেসে বললো ‘ এক পাও এগোলে ওকে আমি শেষ করে দিবো এই বলে আস্তে আস্তে ওইখান থেকে চলে যাবে তার আগেই অবনি রেগে রাহির উপরে বন্ধুক তাক করে বললো ‘ Stop.! না হলে গু’লি করতে বাধ্য হবো।’

অবনির কথায় রাহি অবনির দিকে বন্ধুক তাক করলো। অবনিও রাহির উপরে বন্ধুক তাক করে আছে। অবনি রেগে বললো ‘ বন্ধুক নামা রাহি।’

রাহি পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো ‘ তুই আমার শ’ত্রু তোর জন্য আমি ধ্রুবকে পাইনি। তোকে আজ আমি নিজে হাতে মা’রবো, এই বলে অবনিকে গু’লি করতে যাবে তার আগেই কেউ রাহির বুকে গু’লি করতেই রাহি ফ্লোরে লুটিয়ে পরলো। সবাই অবাক হয়ে অবনির দিকে তাকিয়ে আছে। অবনি অবাক হয়ে বন্ধুকের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে রাহির কাছে এসে কান্না করে বললো ‘ স‍্যার প্লিজ ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান।’

অবনি কথায় আনিসুল আহমেদ তাড়াতাড়ি করে রাহিকে গাড়িতে উঠিয়ে পাশের একটা হাসপাতালে নিয়ে আসলো।

কিছুক্ষন পর
রাহিকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কান্না করতে করতে অবনির চোখ মুখ ফুলে গেছে। আনিসুল আহমেদ অবনির কাছে এসে চোখ মুখ শক্ত করে বললো ‘ অবনি তুমি ওকে গু’লি করলে কেনো?
ওনি যদি মা’রা যায় তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছো?

অবনি ভেজা কন্ঠে বললো ‘ স‍্যার আমি তো শুধু ওর উপরে বন্ধুক তাক করেছি কিন্তু কিভাবে যে গু’লি লাগলো ওর,

আনিসুল আহমেদ চিন্তিত কন্ঠে বললো ‘ শুনো রাহি চৌধুরীর কথা কাউকে বলিও না এখন ঠিক আছে।
অবনি মাথা নিচু করে বললো’ আচ্ছা স‍্যার।’

কিছুক্ষন পর
ডাক্তার অবনিদের কাছে এসে থমথমে গলায় বললো ‘ ওনি আর বেঁচে নেই।’

ডাক্তারের কথা শুনে অবনি চিৎকার করে বললো ‘ কি বলছেন ডাক্তার?

ডাক্তার ঘামতে ঘামতে বললো ‘হ‍্যাঁ ঠিকই বলছি।’
এই বলে ডাক্তার চলে গেলো।

অবনি কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পরলো। আনিসুল আহমেদ দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে অবনিকে বললো ‘ অবনি উঠো বুঝতে পারছি তোমার অবস্থাটা কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। নিজের মনকে শক্ত করো।’

অবনি কান্নারতো কন্ঠে বললো ‘ স‍্যার আমার জন্য আমার বোন মা’রা গেছে। আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।’
এই বলে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো।

আনিসুল আহমেদ মেয়ে পুলিশ অফিসারকে বললো ‘ ওকে ধরো।’

মেয়ে পুলিশ অফিসারটা অবনির কাছে এসে বললো ‘ ম‍্যাম প্লিজ উঠুন সন্ধ্যা হয়ে আসছে আপনাকে বাসায় যেতে হবে।’

মেয়েটার কথায় অবনি ফ্লোর থেকে উঠলো। আনিসুল আহমেদ বললো ‘ কালকে তুমি অফিসে আসবে।’ অবনি মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বললো।

তারপর অবনি নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলো। অবনি বাড়িতে এসে দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল বাজাতেই ধ্রুবের মা দরজা খুলে দিলো। অবনি বাড়িতে আসার আগেই শপিংমল থেকে ড্রেস চেঞ্জ করছে কারন সি আইডির ড্রেস দেখলে সমস্যা হবে সেই জন্য। ধ্রুবের মা দরজা খুলে অবনিকে দেখে অবাক হয়ে বললো ‘ কি হয়েছে তোর চোখ মুখের অবস্থা এই রকম কেনো?

ধ্রুবের মাকে দেখে অবনি কান্না করে দিলো। ধ্রুবের মা অবনির হাত ধরে ভিতরে এনে সোফায় বসিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো ‘ কান্না করছিস কেনো? চোখ মুখ ফুলে গেছে কেনো?

অবনি মনে মনে বললো ‘ আমি যে তোমাদের কে বলতে পারবো না রাহি আর নেই। আমাকে ক্ষমা করো তোমরা আমি রাহিকে খু’ন করতে চাইনি।’

ধ্রুবের মা অবনির হাত ধরে বললো ‘ কথা বলছিস না কেনো?

অবনি চোখের পানি মুছে বললো ‘ কিছু হয়নি। আসার সময় এক্সিডেন্ট হয়েছে সেই দেখেই কান্না করতেছি।’

ধ্রুবের মা শ্বাস নিয়ে বললো ‘ পাগলি মেয়ে একটা এই রকম ভাবে কেউ কাঁদে? যা রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।’

অবনি আচ্ছা বলে নিজের রুমে এসে আসলো। অবনি দরজা আটকে আয়নায় নিজের প্রতিছব্বির দিকে তাকাতেই ডুকরে কেদেঁ উঠলো। অবনি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেয়ালে ঘু’সি দিয়ে বললো ‘ যে বোনকে লালন পালন করেছি সেই বোনকে কিভাবে মা’রতে পারলাম আমি?
এই বলে অবনি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।

এদিকে
ধ্রুব নিজের রুমে বসে আছে। আজকে অবনি দেখেনি বেশি সেই জন্য কেমন একাকিত্ব অনুভব করছে। এতো কিছুর মাঝেও অবনির শূন্যতা অনুভব করছে। সব কিছু থেকেও যেনো কিছু নেই।
ধ্রুব মুখ গুমড়া করে বললো ‘ এই মেয়েটার প্রতি কখন যে মায়া চলে আসছে বুঝতেই পারলাম না। এই রকম কিউট ফ্রেস করে থাকলে মায়া তো হবেই।’
ধ্রুব অবার বলে উঠলো
‘ অবনি একবারো আমার রুমে আসার প্রয়োজন মনে করলো না?
এই বলে ধ্রুব অবনির রুমের দিকে আসতে লাগলো।

এদিকে
অবনি ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসেলো। অবনির হঠাৎ একটা পিকের দিকে তাকালো যেখানে অবনি আর রাহির পিক। অবনি কেদেঁ দিলো। অবনি দাঁড়িয়ে ওই পিকটার কাছে আসলো।

অবনি কান্না করতেছে হঠাৎ ধ্রুব অবনির কাধে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে বললো ‘ কি হয়েছে অবনি? কান্না করছিস কেনো?

অবনি ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে কেদেঁ বললো ‘ ধ্রুব আমি রাহিকে মে’রে ফেলেছি। বিশ্বাস করো আমি ওকে মা’রতে চাইনি আমি শুধু ওর উপরে বন্ধুক তুলে ছিলাম কিন্তু কিভাবে যে গু’লি বের হয়ে গেলো আমি বুঝতে পারিনি?

ধ্রুব অবনির কথা শুনে রেগে নিজের থেকে অবনিকে ঝাটা দিয়ে বললো ‘ ছিহ্ অবনি তুমি কিনা নিজের বোনকেই..

অবনি তখন হাউ মাউ করে কেদেঁ বললো ‘ প্লিজ আমায় ভুল বুঝো না। আমি নিজ ইচ্ছায় ওকে গু’লি করিনি। আমি তো রাহিকে অনেক ভালোবাসি। আমি ওর বড় বোন কিভাবে পারবো ওকে মে’রে ফেলতে?

ধ্রুব তখন অবনি হাত মুচড়ে বলে উঠলো ‘ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তোমার জন্য আমার মনে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু তুমি সব শেষ করে দিলে?

অবনি কান্না করে বললো,,

#চলবে…..
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। রাহি কি সত্যি মা’রা গেছে নাকি এর পিছনে রহস্য আছে? অনুমান করুন। পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ‍্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here