#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
গম্ভীর পরিবেশের ইতি ঘটিয়ে ভিপি আশিক বললেন,
–তোমার বড়ো বোনের সাথে যা ঘটেছে তা যে তোমার ছোটো বোনের সাথেও ঘটবে এটার কোনো ভিত্তি নেই। তারপরেও তুমি বলবে, সাবধানতা অবলম্বন করতে সমস্যা কী? তাইতো? তোমার কনসার্ন আমি বুঝি। ভিপি অনেকটা রা*জ*নী*তিতে যুক্ত হওয়ার প্রথম ধাপ। তুমি ফার্স্ট ইয়ার থেকেই এসবে জড়িয়ে অনেক এক্টিভিটিতে ছিলে তাই তোমার উপর অনেকের ভরসা আছে আবার ক্ষোভও আছে। তোমাকে জুনিয়ররা বেশি ভরসা করে। আহনাফ যে যোগ্য না তা কিন্তু না। আহনাফ সবটা সামলাতে অবশ্যই পারবে কিন্তু তোমার উপর যাদের ক্ষোভ আছে তারা তোমাকে ক্ষমতাহীন দেখে আরও ফুলে-ফেঁপে উঠবে। তখন তারা যে তোমার ফ্যামিলি ফ্রেন্ডসদের ক্ষ*তি করবে না তার গ্যারান্টি কিন্তু তুমি দিতে পারবে না। আমার সাথে সাগরেরও যোগাযোগ হয়। সে কেমন প্রকৃতির তা আমি জানি। স্টুডেন্টরা তাকে চায় না কিন্তু সে কার্যসাধন করতে পারবে যেকোনো মূল্যে। আমিও যে সম্পূর্ণ ভালো তাও কিন্তু না। খারাপ ভালো সবার মধ্যেই আছে। সাগর ভিপি হোক এটা টিচররাও চান না। এখন কী করা যায় বলো?
মারসাদ টেবিলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকে। পুরোনো সব তার স্মৃতিতে ভাসছে। আহনাফ মারসাদের পিঠে হাত রাখে। আহনাফ মারসাদের ভাবনা বুঝতে পারে। মারসাদের বোনের সাথে কী হয়েছিল….
ফ্ল্যাশব্যাক ——-★
মারসাদের বড়োবোন মিলি। যে কী-না মারসাদের চার বছরের বড়ো। মারসাদ ওর বোনকে আপিলি বলে মিলি নামের শেষ অক্ষরটা সাথে যুক্ত করে। মিলি ছিল খুব শান্তশিষ্ট স্বভাবের। খুবই মিষ্টি একটা মেয়ে ছিল। মারসাদ কেবল তার বড়োবোনের সাথেই চঞ্চল ছিল তার কারণ হলো মিলি ও মারসাদের মায়ের মৃ*ত্যুর পর সাত বছরের বাচ্চা মিলি তার তিন বছরের ছোটো ভাইকে চোখের আড়াল করতেই চাইতো না।
মারসাদের মা মীরার চাচাতো বোন মনিকা, মারসাদের বাবা আরসাদকে ভালোবাসতেন কলেজ লাইফ থেকে। কিন্তু তিনি জানতেন না তার কাজিন বড়োবোন মীরার সাথে তার কিশোরী বয়সের ভালোবাসার মানুষটার প্রণয় চলছিল। মীরা ও আরসাদ অনার্স কম্পিলিট করে তাদের পরিবারকে জানিয়েছিলেন তাদের প্রণয়ের কথা। দুইজন ক্লাসমেট ও বেষ্টফ্রেন্ড। দুজনের ব্রাইট ফিউচার। দুই পরিবারের মধ্যেও ভালো সম্পর্ক। মেনে নিয়েছিল মীরা ও আরসাদকে। মনিকা তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়তেন। যৌথ পরিবার বসবাস তাদের। মনিকা নিজের ভালোবাসার অকাল মৃত্যুর একমাত্র সাক্ষী ছিল। মীরা ও মনিকা দুইজনেই তাদের পরিবারের সবার কাছে নিজেদের ভালোবাসার কথা অপ্রকাশিত রেখেছিল।
মীরা ও আরসাদের বিয়ের দুই বছর পর মিলির জন্ম। মীরার ফার্স্ট প্রেগনেন্সিতেও কিছু কম্পিলিকেশন ছিল তারপর মারসাদের সময় সেটা আরও বৃদ্ধি পায়। মারসাদের জন্মের পর মীরা প্রায়ই অসুস্থ থাকতো। মীরার জরায়ুতে খুবই খারাপ আকারে ক্যান্সার ধরা পরেছিল তাও সাথে কিডনি ও ইউরিনারি ইনফেকশন। মীরা একদিন তার বাবার বাড়িতে গিয়ে মনিকার স্টাডি টেবিলের ড্রয়ারে একটা ডায়েরি পেয়েছিল যা মনিকা সবসময় আড়াল রাখতো। সেদিন মীরার হঠাৎ ব্যাথা শুরু হওয়াতে মনিকার টেবিলের ড্রয়ার থেকে পেইনকি*লার মেডিসিন নেওয়ার জন্য এসেছিল তখন ডায়েরিটা দেখেছিল। মনিকার মাস্টার্স শেষ করে বছর গড়িয়ে গিয়েছিল কিন্তু সে বিয়ে করতে আগ্রহী ছিল না। মীরা কারণ জানার জন্য ডায়েরিটা নিজের কাছে রেখেছিল। মীরা মনিকার ব্যাপারে জানার পর খুব কস্ট পেয়েছিল। নিজের ক্ষুদ্র জীবন যে কারও জন্য আশীর্বাদ হতে পারে ভেবেই সে নিজে জীবিত থাকা অবস্থায়ই আরসাদের সাথে মনিকার বিয়ে দিয়েছিল অনেকটা আরসাদকে জোরপূর্বক। আরসাদ কোনো অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করতে রাজি ছিল না কিন্তু মীরার জেদ ও ওয়াদার কারণে বাধ্য হয়েছিল। মীরা তার স্বামী ও সন্তানদের কথা চিন্তা করে বিয়েটা করিয়েছিল। সে ভেবেছিল মনিকা তার চাচাতো বোন, নিশ্চয়ই সে তার বোনের এই সেক্রিফাইজের মূল্য দিবে। মীরা যদি জোর না করতো তবে আরসাদ কখনওই মীরার মুত্যুর পরেও দ্বিতীয় বিয়ে করতেন না। কিন্তু মনিকা বদলে যেতে শুরু করেছিল বিয়ের ছয় মাস পেরিয়ে যাবার পর থেকেই। আরসাদ মনিকার কাছে যেতেন না বলতে গেলে। মীরা জোর করে পাঠালে তখন যেতেন কিন্তু মনিকাকে নিজের কাছে ঘেষতে দিতেন না। মীরাকে যে সে খুব ভালোবাসে। মীরা তখন অনেকটা অসুস্থ কিন্তু মনিকা তার সাথে প্রায়ই রুড ব্যাবহার করতেন। কারণে অকারনে মীরাকে পিঞ্চ করতেন। মীরা তাও আরসাদকে জানতে দিতেন না। মনিকার সাথে আরসাদের বিয়ের এক বছরের মা*থায় মীরার মৃ*ত্যু হয়।
আরসাদ মীরার মৃ*ত্যুর পর খুব ভেঙে পরেছিল সে নিজেকে সময় দিতে সিঙ্গাপুর চলে গিয়েছিল। তখন আরসাদের কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যেতো না। মনিকার তখন থেকে আরও বদল ঘটে। মারসাদ ও মিলির কোনো কেয়ার তিনি করতেন না। ওদের দাদী ওদের দেখাশোনা করতেন। আরসাদ ছয় মাস পর দেশে ফিরে এসব দেখে মনিকাকে অনেক কিছু বলেছিল ও তাদের মাঝে অনেক ঝামেলাও হয়েছিল। আরসাদ মীরার শেষ সময়ের ডায়েরিটা নিয়ে সিঙ্গাপুর গিয়েছিল। ডায়েরি থেকে সবটা জানতে পেরেছিল মনিকার ব্যাবহার মীরার প্রতি। তাই তিনি চাইছিলেন মনিকা একা থেকে নিজেকে শোধরাক। মনিকাকে আরসাদ বিয়ের আগেও মানা করেছিল যাতে মীরার প্রস্তাবে রাজি না হয় কিন্তু মনিকা সেটা মানেন নি কারণ তখন মনিকা আরসাদকে নিজের করে পাওয়ার চেতনায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
মারসাদের দাদী তার ছেলেকে ডেকে মনিকার সাথে সম্পর্ক ভালো করতে বলার পর আরসাদও ভাবলেন তাই করবেন কারণ আরসাদ চান না মনিকা মিলি ও মারসাদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করুক। মনিকা তখন দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছিলো। আরসাদের নরম ব্যাবহারে মনিকাও কিছুটা নরম স্বভাবের হচ্ছিলো কিন্তু মাহির জন্মের পর থেকে মনিকা আবারও বদলে গিয়েছিলেন। মারসাদ ও মিলিকে সে ট*র্চার না করলেও আদরও করতেন না। মাহি মারসাদের পাঁচ বছরের ছোটো। মারসাদ ও মিলি দুজনেই মাহিকে খুব ভালোবাসে কিন্তু তাও মনিকার কাছে মারসাদ ও মিলি মাহির মতো আদরের ছিল না।
সময়ের পরিক্রমায় ওরা বড়ো হয়। মিলির অনার্স শেষ হওয়ার পর অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসতো। ওই সময় মিলির বাবা সিটিকর্পোরেশনে কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছিল। মারসাদ তখন ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে। মিলির বাবার কাছে একজন এক ছেলের কথা বলার পর তিনি ছেলের স্টাডি ব্যাকগ্রাউন্ড অনেক ভালো ও কিছু খোঁজখবর নিয়ে ভালোই জানতে পারেন। শেষমেশ খুব জলদি মিলির বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের কয়েকমাসের মধ্যে ওই ছেলে নিজের আসল রূপে দেখাতে শুরু করে মিলিকে। সেই ছেলে মিলির বাবার অপোজিট পার্টির একজনের দুঃসম্পর্কিত আত্মীয় হয় এবং বিয়েটা তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য করিয়েছিল। মিলিকে টর্চার করতো ও বলতো যেনো ওর বাবাকে পদত্যাগ করতে বলে। আর প্রায়ই টাকার জন্য পাঠাতো। টাকা দিলে কিছুদিন শান্ত থাকতো। মিলির বাবা ট*র্চারের ব্যাপারে জানতেন না। তিনি নিজের মেয়েকে চাইলে সবই দিতেন কিন্তু মাহির মা মিলির টাকা নেওয়া পছন্দ করতেন না। মিলিকে তিনি একদিন ডেকে খুব কড়া করে নিষেধ করে দিয়েছিলেন টাকা নিতে। মিলি কাউকেই ট*র্চারের বিষয়ে বলতে পারতো না কারণ মিলি তখন প্রেগনেন্ট ছিল আর মিলির স্বামী মিলির আদরের ভাই মারসাদের ক্ষতি করার হুমকি দিতো। সে বুঝাতে চেষ্টা করতো তার স্বামীকে কিন্তু মিলির সব প্রচেষ্টা বৃথা। মিলির বাচ্চা ডেলিভারির সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও শরীর অনেক দুর্বল থাকার কারণে বাচ্চাসহ মিলির মৃ*ত্যু হয়েছিল।
মিলির না বলা সকল কথা মিলি নিজস্ব ডায়েরিতে লিখে রাখতো। ডায়েরিটা মিলি তার বাবার বাড়িতে আলমারির একদম নিচে এক কোনে রেখেছিল। মিলি মৃ*ত্যুর আগে মারসাদের হাত ধরে বলেছিল,
“সাবধানে থাকবি ভাই। অনেক কিছু বলার ছিল তোকে কিন্তু আমার হাতে সময় নেই। ওই লোকগুলো মানুষ না। একেকটা প*শু!”
মারসাদ সেদিন চিৎকার করে কেঁদেছিল। নিজের মায়ের মৃ*ত্যুর পর বড়োবোন ও দাদীই তাকে মায়ের ভালোবাসা দিয়েছিল। মারসাদ মিলিকে চিরনিদ্রায় ক*বরে শায়িত করে সেদিনই মিলির রুমের সবকিছু তন্নতন্ন করে ডায়েরিটা পায়। সেখানে মিলির বিয়ের পর থেকে আট মাসের সময়ের অনেক কিছু লিখা ছিল। মারসাদ সারারাত ডায়েরিটা পড়ার পর পরেরদিনই ডায়েরিটা সবার সামনে রেখে তাচ্ছিল্য স্বরে বলেছিল,
–পর সত্যি আপন হয় না। যেমনটা মিসেস মনিকা খানও হননি। আপনাকে আমার মা নিজের কস্ট তোয়াক্কা না করে নিজের স্বামীর ভাগ দিয়েছিলেন কিন্তু আপনি আমার মাকেই মূল্য দিলেন না। থাকুন আপনি আপনার সাম্রাজ্যে। আমার বোন যে আপনায় আপন ভেবে মা মনে করে কিছু শেয়ার করবে সেটারও অবস্থা রাখেন নি নিজের মানসিকতার পরিচয় দিয়ে। সুখে থাকুন আপনি। আর মিস্টার আরসাদ খান, নিজের শত্রুর কাছেই মেয়েকে বিয়ে দিলেন! আমার বোনের ব্যাপারে বড্ড তাড়াহুড়ো করে ফেলেছিলেন আপনি। অবশ্য আপনার স্ত্রীরই তো বড্ড তাড়া ছিল আমার বোনকে তাড়ানোর। ভালো থাকবেন আপনারা।
মারসাদ সেদিন তার দাদী, বাবা ও মাহি কারও কাকুতিমিনতি কানে তোলে নি। সে বেরিয়ে এসেছিল সেই বাড়ি থেকে। মারসাদের মায়ের নামে যা ছিল সেগুলো তিনি তার দুই ছেলে-মেয়ের নামে মৃ*ত্যুর আগে লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন। মারসাদ নিজের প্রয়োজনে সেগুলোই ব্যাবহার করে।
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড—-★
#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১০
মারসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। আঁখিজোড়া তার মলিন। বদ্ধ ছাদের দিকে নজর সরিয়ে মুদন করে নেয় নয়নযুগল। তারপর হতাশ কন্ঠে বলে,
–আমি আপনাকে আপডেট জানাবো ভাই। আই নিড সাম টাইম টু থিংক।
ভিপি আশিক লম্বা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মারসাদের মুখোমুখি দাঁড়ায় তারপর মারসাদের কাঁধে হাত রেখে বলে,
–টেক ইউর টাইম। সময় এখনও আছে। ভেবে চিন্তে যা ভালো মনে হয় জানাও।
মারসাদ ও আহনাফ বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। কিছু দূর এসে ওরা দুইজনে মাঠের ঘাসের উপরে বসে। মারসাদ ঘাসের উপর গা এলিয়ে দিয়ে কপালে হাত ঘষতে ঘষতে বলে,
–মা*থা ব্যাথাতে ছিঁড়ে যাচ্ছে। স্লিপিং পি*ল লাগবে কয়েকটা।
আহনাফ বিরক্ত হলো মারসাদের কথায়। বিরক্তি নিয়ে বলে,
–সবকিছুতে তোর স্লিপিং পি*ল না নিলে হয় না? তুই তো এ*ডিক্টেড হয়ে যাচ্ছিস এটাতে। মাথাব্যথা দূর করার অনেক ইফেক্টিভ উপায় আছে। লো ডোজের পেইনকি*লারও নিতে পারিস।
মারসাদ হতাস কন্ঠে বলে,
–ওই তিক্ত স্মৃতি থেকে মুক্তি পেতে ঘুম জরুরী আমার। দিন রাত পরে পরে ঘুম জরুরী। ইট হার্টস মি ভেরি ব্যাডলি। যতোদিন ওই জানো*য়া-র গুলোকে নিজেদের আসল জায়গা দেখাতে পারবো ততোদিন আমার এই অস্থিরতা নির্মূল হবে না। সবে তো শুরু ওদের ব*র্বাদীর!
আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মারসাদের সবটাই তার জানা। মারসাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করলেও সে বারবার শিউড়ে উঠে। কিছুক্ষণ বসে থেকে ওরা ক্যান্টিনের উদ্দেশ্য যায়। পরের ক্লাসটা মারসাদ করবে না তবে আহনাফ করবে। মারসাদ কিছু খেয়ে হোস্টেলের দিকে যেতে থাকে। পথিমধ্যে দেখে মাহি, আদিরা সাথে আরও দুটো মেয়ে সাবিহা ও রিন্তি বসে বসে হেসে হেসে লাঞ্চ করছে। মারসাদ আলতো হেসে চলে গেলো। সে খাবারের পরপরই দুইটা স্লিপিং পি*ল খেয়ে নিয়েছে। রিন্তি মারসাদকে যেতে দেখে মাহিকে ডাক দিয়ে বলে,
–দোস্ত তোর ভাই!
মাহি তাকিয়ে দেখে মারসাদ বাঁক ঘুরে চলে গেছে। মাহি বলে,
–দাভাইয়ের তো এখন ক্লাস থাকার কথা। আহনাফ তো তাই বলেছিল। হঠাৎ কি হলো?
সাবিহা মাহির কথাতে পিঞ্চ করে বলে,
–সে যাইহোক কিন্তু আহনাফ ভাইয়ার সাথে না তোর শ*ত্রুতা? তাহলে এতো কিসের যোগাযোগ? তাও নিজের ভাইয়ের তথ্য ভাইয়ের বন্ধুর থেকে! কুছ কুছ তো হ্যায় মেরি জান!
সাবিহার কথায় আদিরা ও রিন্তি হেসে উঠলো। মাহি সাবিহার পিঠে কিছু উত্তম-মাধ্যম দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল,
–কী শুরু করেছিস তোরা? সকাল থেকে এসবই করছিস। আমার মনে ওসব কিছু নেই যা তোরা মিন করছিস। ওকে!
আরেকদফা হাসির রোল পড়লো। মাহি এবার মুখ ফুলিয়ে রাগ করে উঠে চলেই গেলো।
_________
–ভাই! ভাই! মারসাদ ভাইরে দেখলাম আশিক ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেছিলো।
সুমন নামের এক ছেলে সাগরকে দৌঁড়ে এসে হড়বড়িয়ে খবর জানালো। সাগর ছেলেটার মুখ নিঃসৃত বুলি শুনে রেগে ছেলেটার গালে কষে এক চ ড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
–তুই এই খবর আমাকে এখন দিচ্ছিস!
সাগর ছেলেটাকে কিছুক্ষণ অশ্রাব্য গালাগাল করে। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে সবটা সহ্য করে নিলো। সাগর ছেলেটিকে আবার বলল,
–কী বিষয়ে কথা হয়েছে কিছু জানতে পেরেছিস?
সুমন ছেলেটা ঐ অবস্থায়ই ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়িয়ে না জানায়। সাগর রেগে আরেকটা চ ড় বসিয়ে দিয়ে রেগে বলল,
–অর্ধেক খবর নিয়ে আসিস কেনো অকর্মা গুলো? আমার সামনে থেকে দূর হ। নয়তো তোর রক্ষে নেই।
ছেলেটা তৎক্ষণাৎ দৌঁড়ে স্থান ত্যাগ করে। সাগর রাগে সামনের বেঞ্চ ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তারপর রাগে কটমট করে বলে,
–মারসাদ! মারসাদ! মারসাদ! এই ছেলেটা আমার পথের কাঁ*টা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সেচ্ছায় ভিপি নির্বাচন থেকে সরে গিয়েও এর বেষ্টফ্রেন্ডকে রেখে গেছে। একে পুরোপুরি ক্ষমতাহীন করতেই হবে। আমার সকল কর্মকান্ডে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় সে। কিছু একটা করতেই হবে। নিলয় এদিয়ে আয়।
নিলয় এগিয়ে আসলে সাগর বলে,
–তোর কাজ কতটুকু? পরিকল্পনা মোতাবেক চলছে তো?
নিলয় শ*য়*তানি হেসে বলে,
–নো টেনশন দোস্ত। পাখি খাঁচার ভিতরে অলরেডি ঢুকে গেছে। এখন পাখিকে আরও দুর্বল করতে হবে। এতোটাই দুর্বল যে পাখি আমার ইশারায় সব করতে রাজি হয়ে যায়। আমি এখন তার কাছে খুব ভালো একজন মানুষ। তোর বন্ধু হয়েও যে আমি এতো ভালো তা তাকে বিশ্বাস দিতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয় নি বস!
সাগর বিশ্রি হাসলো। তারপর বিশ্রি ভাবে বলল,
–তা সাধুপুরুষ কী পাখির রূপের সুধা পান করবে না?
নিলয় কুৎসিত হেসে বলে,
–আরেকটু সবুর করতে হবে যে। নিলয় নিজের ইম্প্রেশন নষ্ট করবে না এখনই।
আরেকটা ছেলে এসে সাগরদের বলল,
–ভাই, সামিরা আপু আসছে।
সাগর সামিরাকে ভেতরে আসতে দিতে বললে সামিরা ভেতরে এসেই সাগরের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
–তুমি না বলেছিলে আদিরার ব্যাবস্থা করবে? কী হলো সেটার? সে এখনও ফিট এন্ড ফাইন! হোয়াই?
সাগর সামিরার চারপাশে ঘুরে সামিরার কাঁধ জরিয়ে বলে,
–কুল সামিরা বেবি। ওই মেয়েকে আপাততো বাদ দেও। ওই পুচকে মেয়েকে যেকোনো সময় ধরাশায়ী করা যাবে। তুমি এটা বলো, মারসাদের কারও সাথে তুখড় শ*ত্রুতা আছে?
সামিরা সাগরের হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিয়ে কপাল কুঁচকে সন্দিহান কন্ঠে বলে,
–তা জেনে তোমার কী কাজ?
সাগর বাঁকা হেসে বলে,
–আমরই তো কাজ। মারসাদকে দুর্বল করতে পারলে তোমারও লাভ। তুমি ইজিলি তোমার পথের কাঁটা উপড়ে ফেলতে পারবে। মারসাদ তখন কোনো বাঁধা দিতে পারবে না।
সামিরা ভাবলো। মারসাদকে তার পদতলে দেখতে তারও ভালো লাগবে। কথায় কথায় অপমানে জর্জরিত করা থামবে তখন মারসাদ নিজে এসে তার কাছে ধরা দিবে। সামিরা বাঁকা হেসে বলে,
–মারসাদদের সবচেয়ে বড়ো শত্রু এমপি রুহুল শিকদার ও তার দুঃসম্পর্কের ভাতিজা রাদিব। রাদিব হচ্ছে মারসাদের বড়ো বোনের হাজবেন্ড। রাদিবের ট*র্চারের কারণে মারসাদের বড়োবোন আজ পৃথিবীতে নেই। মারসাদ রাদিব ও রুহুল আমিনকে সহ্য করতে পারে না। তবে রাদিব গা ঢাকা দিয়ে আছে কোনো একটা দেশে। কেউ বলে ইন্ডিয়াতে আছে রাদিব। মারসাদ রাদিবকে পেলে আর ছাড়বে বলে মনে হয় না। রাদিবের নামে থানায় মা*র্ডা*র কেসের মা*মলা চলছে।
সাগর সামিরা হাতে চু*মু দেয়। সামিরা সাগরের কাজে রেগে সাগরকে ধা*ক্কা দিয়ে নিজের সামনে থেকে সরায় তারপর বলে,
–আমাকে বাজে টাচ করার চেষ্টাও করবে না। আই এম নট ইউর টয়!
সামিরা সেখান থেকে চলে গেলে সাগর অট্টহাসিতে ফেটে পরে।
–ইউ আর জাস্ট এ টয় সামিরা বেবি। আমার হাতের পুতুল তুমি। নিজের অজান্তেই তুমি আমার কথায় সব করো।
সাগরের সাথের সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে।
________
কয়েকদিন পর,,
আদিরা ক্লাসে একা বসে বসে পড়ছে। আজ একটা ক্লাস টেস্ট আছে। খাতায় যা লেখা সেগুলো পড়ছে। পুরো ক্লাসে কেউ নেই। পড়তে পড়তে সামনের দিকে নজর গেলে দেখে টিচারের লেকচার টেবিলে মারসাদ কনুইতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে ঝুলছে বাঁকা হাসি আর চোখে রম্যতার ছাঁপ। আদিরা একটু অবাক হলো। আশেপাশে নজর বুলিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না। মারসাদ রম্য স্বরে বলে,
–কী খুঁজছো মনোহারিণী!
আদিরা মারসাদের সম্বোধনে চমকে গেলো। মারসাদ আদিরার দিকে এগিয়ে এলো। তারপর আদিরার দিকে ঝুঁকে বলল,
–অবাক হচ্ছো? হতে পারো। তোমার তো স্বভাব এটা। আমি কিছু পরীক্ষা করতে এসেছি এখানে।
আদিরা মারসাদের ঝুঁকে আসা দেখেই তৎক্ষণাৎ পেছোনে মাথা সরিয়ে নিয়েছিল। মারসাদের দিকে জিজ্ঞাসু নয়নে চাইলো। মারসাদ প্রতিউত্তরে চমৎকার হেসে বলল,
–সবাই আমার মন পড়তে পারে জানো? সবাই বলে আমি তোমাতে মন হারিয়েছি। আদৌতেও কী তা সত্যি? সেটাই পরীক্ষা করতে এসেছি। আমি যদি সত্যি তোমাতে মন হারিয়ে বসি তবে আমার হারানো মন সুদে-আসলে ফেরত চাই। বুঝতে পেরেছো? তখন কার্পণ্য করলে কিন্তু চলবে না! মারসাদ ইশরাকের মন নিজের কাছে রাখার দায়ে তোমাকে হা*জতেও যেতে হতে পারে মেয়ে!
আদিরা হতবাক হয়ে বোকার মতো মারসাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখাবয়বের অভিব্যক্তি দেখে যে কেউ বলতে পারবে, মারসাদের বলা প্রতিটা শব্দ ও বাক্য তার মস্তিষ্কের উপর দিয়ে গেছে। তার যে কিছুই বোধগম্য হয় নি তা তার মুখশ্রীতে স্পষ্ট। মারসাদ আদিরার থুতনিতে হাত দিয়ে ঠেলে মুখের অল্পবিস্তর ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে দিলো। আদিরা আরও দূরে সরে যায়। মারসাদ হেসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
–ক্লাসের পর মিনারের কাছে চলে আসবে। একটুও যেনো দেড়ি না হয়। নয়তো তুলে নিয়ে আসবো। তুমি আমাকে যতোটুকু চিনো তাতে আমার কাজ সম্পর্কে তোমার ধারণা থাকার কথা।
চলবে ইন শা আল্লাহ্,