এখানে কোনো বৃষ্টি নেই
পর্ব ১০ এবং ১১
লেখিকা: তৃধা আনিকা
এরপরের সময়টা অামি নিয়মের মাঝে ফেলে দিলাম। অভির সাথে দেখা, কথা বলা একটা লিমিটেশন্সে নিয়ে এলাম।সম্পর্কটা অামার দিক থেকে মৃত ছিলো, যতটুকু বেঁচেছিলো; অভির দিক থেকে। অামি মুক্তি চাইছিলাম সবকিছু থেকে। কিন্তু সম্ভব ছিলোনা, খেলা তো সময়ের অাগে থামবেই না। এই সবকিছুতে অভি কখনোই অভিযোগ করেনি অামাকে।।
এই কয়েকটা বছর অামার কাছে জেলে থাকার মত ছিলো।
অভি মাঝে মধ্যে রাগ করে বলতো,
———অার দেখা করার দরকার নেই পরী, অরুচি এসে গেছে অামার। তুমি তো সত্যিকারের পরী হয়ে গেছো, মানুষই মনে হয়না তোমাকে।ইউ নিড এ পরা, নট মি। ইউ অার এ রোবট পরী।
অামার কাছে দেবার মত উত্তর থাকতো না তখন! অভির সাথে সম্পর্কটা অামি এতটাই তরল অবস্থায় নিয়ে এসেছিলাম, যে, অভি না পারতো বলতে না পারতো….. বুঝাতে । দিন কাটছিলো এভাবেই।
প্রথমবার অভির পছন্দের ক্যাডারে হলোনা। সেকেন্ডটাইমে অভি অারও মনোযোগী হয়ে গেলো পড়াশোনায়, অামারও পড়াশোনার চাপ বাড়তে লাগলো।
অভির চাকরির জন্য পড়াশোনার এই কয়েকবছরের সময়টা অামি যন্ত্রের মত পার করছিলাম। সেকেন্ড টাইমে
অভির ফরেন ক্যাডারে হয়ে গেলো।
ততদিনে অভি অার অামার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ কম, দুরত্বে বেশি পৌঁছে গেছে।
অভি জয়েনের অাগে অামাদের পরিবারে অানুষ্ঠানিক বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো।
তবে অামাকে কিছু বললোনা।
বাসা থেকে তাই বলা হলো, যা অামি বলতে বলেছিলাম।
বাবা বললেন,
———–ওর ফাইনাল ইয়ার, এখনি বিয়ে নয়। পরী হায়ার এডুকেশনে বিদেশে যাবে, তারপর এসে বিয়ের কথা ভাববে।
অভি এ ব্যাপারে অামাকে কিছুই বললোনা। ঠান্ডা মাথায় জয়েন করলো, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ট্রেনিং এ চলে গেলো ! সমস্যা শুরু করলো ও’র বন্ধুরা। একের পর এক অাসতে লাগলো, অামার কাছে। অামার প্রমিস নিয়ে বলতে লাগলো, বুঝাতে লাগলো, জোর করতে লাগলো।অবস্থা এমন যে, কোনোরকম ফাইনাল এক্সামটা দিতে পারলেই অামি দেশ ছেড়ে পালাই।
অভির জীবনে অভির বন্ধুরা যে কি, অামি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম। দেখা যেতো, রোজ কোনো না কোনো বন্ধু অামাকে মিট করতে অাসছে, কথা শুনাচ্ছে, বকাঝকা করছে। অামি এতে ইমিউনড হয়ে পড়ছিলাম। অামার মনে মনে ছিলো, এক্সাম দিয়েই অামি বিদেশ পালাবো। অভির ট্রেনিং দু-ধাপে ছিলো।প্রথমবারের
ছয়মাসের ট্রেনিং শেষে অভি যখন ফিরলো, তখন অামি অারও ভয়ে। কোনোভাবে পরীক্ষাটা শেষের অপেক্ষা করছি।
অামার তখন মাত্র কয়েকটা পরীক্ষা বাকী।
অভি অামাকে ফোন করে ও’র এক বন্ধুর বাসায় ডাকলো।
অামি পড়াশোনায় ব্যস্ত বলে স্ট্রেট না করে দিলাম। সেদিন রাতে প্রায় বারোটার দিকে অভি অামার হোস্টেলের কাছাকাছি এসে অামায় ফোন করে ডেকে পাঠালো, ও’র কণ্ঠে এমন কিছু ছিলো যে,,অামি দেখা করতে রাজি হলাম।
অামি নেমে এসে দেখি অভি গাড়ির উপরে শুঁয়ে অাছে।
অামি কাছে এসে দাঁড়াতেই অভি কথা বলা শুরু করলো, কিন্তু ওর’মুখে কথা বেঁধে বেঁধে যাচ্ছিলো,
———অামার জীবনটা শুরু থেকেই খুব অদ্ভুত পরী। অামাকে প্রথমে কেউ ভালোবেসে তাঁকে ভালোবাসার দায়িত্ব চাঁপিয়ে দিয়ে দেয়, মজা না?? এই যেমন অামার পরিবারকে দেখো, তারাই প্রথমে অামাকে খুঁজে এনেছে, অামি বলিনি কিন্তু। এনে কি করলো, অামায় নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসলো, ব্যস। অামার কাঁধে চেঁপে গেলো ভালোবাসা শোধের দায়িত্ব। বাবার পছন্দে পড়ো, মায়ের পছন্দে চাকরি করো….. এখন অাবার গুছিয়ে সংসার করো…. এটসেট্রা, এটসেট্রা…
এই যে দেখো তুমি, প্রথমে অামার স্বপ্নের অাঁকা মুখটা হলে, এবং পরবর্তীতে কি করলে???
অামি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটুও কান্না পাচ্ছিলো না অামার!
———–অাপনার কথায় মনে হচ্ছে,, অাপনি ড্রিংক করেছেন! ও মাই গড…..
অভি এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলো।
———তোমার এমবিবিএস এ ভর্তি হবার পর থেকে তুমি অন্য রকম হয়েছিলে পরী। যে পরীকে অামি পছন্দ করেছিলাম, সেটা তুমি ছিলেনা। তাও অামি নিজেকে ঠিক রেখেছি। রাতের পর রাত দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুমিয়েছি, ভোরের পর ভোর দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠেছি। এর কিছুই কিন্তু আমার প্রাপ্য ছিল না। তারপর ও ভয়ে তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিনি। ভেবেছি, এবার বোধহয় অামার দায়িত্ব ভালোবাসার। কিন্তু এতদিন পর এসে অামার সত্যি সত্যিই জানতে ইচ্ছে করছে, তুমি কি ভেবে অামার জীবনে এসেছিলে, কেনো এসেছিলে???? সেটার কি খুব দরকার ছিলো???
কেনো বিয়ে করতে চাও না অামায়??
অামি জানতাম, অভির কাছে জবাবদিহিতার একটা সময় অামার অাসবে, দিনের পর দিন অামি কিভাবে তা ফেইস করবো, সেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।
কিন্তু সেদিন অভির সামনে দাঁড়িয়ে শুধু বললাম,
———অামি অাপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। যাস্ট পারবোনা….
অভি শোয়া থেকে সোজা হয়ে বসলো, তাঁর শরীর টলছে। অভি যে নেশায় মাতাল হয়ে ছিলো, অামি বুঝতে পারছিলাম। ও’র হাতের সিগারেট বারবার পরে যাচ্ছিলো।অভি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে থেকে বললো,
———-অামি কি করবো, তাহলে পরী???
———-অাপনার বিয়ে করা দরকার, অাপনি বিয়ে করবেন। অাপনার মা অামার সাথে কথা বলেছেন, তিনি অন্য মেয়ে দেখছেন! অাপনার মা অাপনার জীবনের অসংখ্য ইচ্ছে পূরণ করেছেন, অাপনি যদি তাঁর এই একটি মাত্র ইচ্ছে পূরণ না করেন.. তিনি হয়তো বেঁচে থাকবার অানন্দটুকু হারিয়ে ফেলবেন।
অভি সিগারেটটা গাড়িতেই নেভালো।
———তুমি কেনো অামাকে বিয়ে করতে পারবেনা ?? এনি অাদার চয়েস??
অামি হাসার চেষ্টা করলাম।
———অামি শুধু অাপনাকেই না, অামি কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না। অামি যে কাউকেই বিয়ে করতে পারি না, এই ব্যাপারটা অামি অাপনাকে পছন্দ করার অাগে, জানতে পারিনি, পরে বুঝতে পেরেছিলাম।
অভি গাড়ির উপর থেকে নেমে সোজা হয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করছিলো , কিন্তু স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছিলো না।
অাবারো এক দৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে থেকে বললো,
——–হোয়াট ডু ইউ থিংক এবাউট মি পরী?? এম অাই এ কিড?? তুমি কি অামায় লেসন দিচ্ছো??
অামার পজিশন তোমাকে ব্যাখ্যা করতে হবে না। তুমি নিজের সম্বন্ধে কোনো ব্যাখ্যা থাকলে বলো।
অামি অভির পাশাপাশি এসে দাঁড়ালাম।
অভি সিগারেট ধরালো অাবার ।
———ফেলুন এটা। অাপনি ঠিকমত দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছেন না। ক’ পেগ নিয়েছেন বলুনতো??
অামি অভির সিগারেট নিয়ে ফেললাম। অভিকে গাড়ির সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে, নিজে পাশে দাঁড়ালাম।
———ইউ অার টোটালি এ অাননোন উইমেন ফর মি নাউ। কিন্তু , একটা মজার ব্যাপার কি জানো?? অামি কিন্তু সবসময়, ভর্তি কোচিং এর পরী ই ভেবেছি তোমাকে। অাই হেইট দিস পরী…… দিস…. অভি মাথায় হাত রাখলো অামার।
———–অামি নাহয় এডোলেসেন্স পিরিয়ডে ঝোঁকের মাথায় অাপনার পিছু নিয়েছিলাম, অাপনি কেনো???
অামি কিন্তু এত স্পেশাল নই!!
অভি খুব কাছে এলো অামার খুব কাছে। অনেকদিন পর, প্রায় অনেকবছর পর।
অামার কাঁধে হাত রেখে ঘনিষ্ঠ হয়ে বললো,
———-অামি সবসময়ই মনে করতাম, ভালোবাসার ব্যাপারটা জাহির করে বলতে হয়না। ওটা বুঝা হয়ে যায় এমনি এমনি, অাজ কেনো জানি, অামার খুব বলতে ইচ্ছে করছে, মনে হচ্ছে তোমাকে কনভিন্স করতে একটা চেষ্টা অন্তত করি। না, হলে রিগ্রেট করবো, সারাজীবন।
তুমি যখন বদলে গেলে না পরী,( অভি তখন অামার ঘাড়ে গাল ঠেকিয়েছে তাঁর… অামি নিজেকে ছাড়াবার অাপ্রাণ চেষ্টা করছি,) অভি বলতেই থাকলো,
———-তুমি যখন বদলে গিয়ে নিষ্ঠুর পরী হয়ে গেলে না, তখন প্রায় রাতে অামি তোমার হোস্টেলের সামনে গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড়াতাম, দুটো সিগারেট খেতাম, তারপর চলে যেতাম। অনেকক্ষণ পড়াশোনা করার পর যখন বিছানায় শুতে যেতাম, হাই ভলিউমে মিউজিক ছেড়ে, শব্দ করে কাঁদতাম। অামার মনে হতো, অামার সবথেকে প্রিয় খেলনাটা অার অাগের মত অামার সাথে খেলছেনা। অামার সমস্ত বন্ধুদেরকে অামি তোমার জন্মদিন, ভালো রেজাল্ট, এসব দিনে ট্রিট দিতাম।প্রতিটা মুহূর্তে অামি তোমার অনুপস্থিতি অার নির্লিপ্ততার কথা ভেবে কষ্ট পেয়ে কাটিয়েছি… অার তুমি এতদিন পর এসে অামায় বলছো……,
এসব বলছো…
অভি কথাটা রিপিট করতে করতে মাটিতে বসে পড়লো,
অামি চোখ বন্ধ করে বললাম,
——–অামার সমস্যা হলো অামি কখনোই মা হতে পারবোনা। ফার্স্ট ইয়ারে উঠে অামার জরায়ুতে টিউমার ধরা পরে, অপারেশন হয়……. অামি তখন থেকেই ঠিক করি অাপনাকে ভালবাসবোনা অার! অাপনাকে অাঁকারে ইঙ্গিতে তাই বারবার দূরে ঠেলেছি অামি। অাপনার মা’কে ব্যাপারটা বলেছিও অামি! অামার পক্ষে…… অাপনাকে বিয়ে করা মানে, একটা স্বপ্নকে মেরে ফেলা…..
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে অামি থামলাম।
অভি নিরুত্তাপ!
অাগের চেয়েও ঠান্ডা গলায় বললো,
———-অামি সন্তান চাই না। অামি তোমাকে চাই। শুতে চাই তোমার সাথে। স্বাভাবিক সেক্সুয়াল লাইফ লিড করতে চাই। ইন শর্ট অাই ওয়ান্ট টু…..
———–অাপনি এভাবে ভাবতে পারেন না, অাপনার পরিবার এই রাইট অাপনাকে দেয়নি। অাপনার অনেক দায়িত্ব কাঁধে,
———-অামি এতকিছু বুঝি না পরী। ইন স্ট্রেইট, সাদা-কালো বুঝি। তুমি আমার বৌ হবে, এরপর অামরা সব ঠিক করে ফেলবো। অন্য কাউকে বিয়ে করলে তো শুতে পারবোনা অামি, বুঝোতো…. সেক্সুয়াল……
….
নেশার ঘোরে অভি খুব খোলামেলা কথা বলছিলো। লিখার মত নয় বলে লিখছি না। হি ওয়াজ কমপ্লিটলি অাউট অফ সেন্স!
———-অামি বিয়ে করবো না। স্পষ্ট হয়নি অাপনার কাছে?? অাপনার জীবন অালাদা। অাপনি সেভাবে সব করবেন। অামাকে জড়াবেন না, প্লিজ! এই বিষয়টা ভেবে ভেবে, অাপনার কথা চিন্তা করে করে অামি ও তো দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছি। অামারও মুক্তি দরকার! প্লিজ….. অাই অলসো ওয়ান্ট টু কুইট দিস গেইম।
অভিকে টেনে তোলে গাড়িতে বসানো, অসম্ভব জোর করতে হলো। এত ফিউরিয়াস হয়েছিলো ও….
ড্রাইভ করলে নির্ঘাত এক্সিডেন্ট করবে।। অামি নিজেই ড্রাইভ করে ও’কে বাসায় নিয়ে এলাম, পুরোটা পথ সে তাঁর মাতাল অবস্থায় রাগের চূড়ান্ত প্রতিফলনটা দেখালো।অামাকে খাবলে -খুবলে একাকার করে দিচ্ছিলো। কোনো ব্যাথাই তখন অামার কাছে ব্যাথা না।
অভিকে এতদিনে সত্যিটা বলতে পেরেছি,, সেটাই অামায় অনেক স্বস্তি দিয়েছিলো তখন। একসময়
অভি গাড়িতে অাধো অচেতন হয়ে চোখ বন্ধ করে শুলো। তারপর ঘুমিয়ে পড়লো। নেশার ঘোরে অাচ্ছন্ন,
অভিকে রুমে পৌঁছে দিতে ও’র ঘরে গিয়ে অামি অাটকে গেলাম। অভি অাগের চেয়েও অারও অস্বাভাবিক অাচরণ করতে লাগলো।বুঝতে পারছিলাম, এতদিনের জমে থাকা রাগের অভি। এটা অন্য রকম অভি। অামি নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার বৃথা চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ, এরপর হাল ছেড়ে দিলাম। কোথাও না কোথাও অামিও তো তৃষ্ণার্ত ছিলাম, অভির জন্য, অভিতে মিশে যাবার জন্য। অভির হিংস্রতা অামার মনকে হারিয়ে দিলো। অামি সেইরাতে গভীর অাগ্রহে অভির সুযোগ নিলাম……..
ফিরে অাসার সময়,
সিঁড়ির গোঁড়ায় এসে অামার অান্টির সাথে দেখা হয়ে গেলো। তিনি কিছুটা বিব্রত, কিছুটা প্রশ্নবোধক, অার কিছুটা হতাশ হয়ে অামার দিকে একটু তাঁকিয়ে থেকে বললেন,
———–বিয়ে করতে পারোনা, অথচ রাত-বিরেতে লুকিয়ে ও’র কাছে অাসছো… ইজ নট ইট অড???ছেলেটাকে এতদিন ধরে কষ্ট দিয়েছো, সেটাই কি যথেষ্ট নয়???
অামি জবাব না দিয়ে দ্রুত চলে এলাম।সেই রাতে অভিকে সব বলে, অভিকে সব দিয়ে অামি যেনো, মনখুলে কাঁদার একটা দরজা পেয়েছিলাম৷ একদিকে অভিকে একেবারে হারানো, অার এক দিকে অামার এত সাঁধের অনুভূতি…… জীবন অামাকে একটা সরু সুতোয় দাঁড় করিয়ে যেনো কঠিন পরীক্ষা নিচ্ছিলো। একটু অাগেও যেই অভিকে বিয়ে করবো না বলতে অামার যে পরিমাণ মনের জোর ছিলো, সেই সময়ের পর তা হারিয়ে গেলো একদম।
কিন্তু এই ভাবে অভিকে অামি অামার জীবনে চাইনি। সুস্থ অার সাধারণভাবে চেয়েছি।
অভির কাছ থেকে সেদিন এসে অামি বাকী রাতটা মেঝেতে বসেই কাটিয়েছি।জীবনের অসংখ্য দুঃসময়ের রাত অামি মেঝেতে বসেই পাড় করেছি।মা যেদিন মারা যান, সেদিন রাতে ও অামি সারারাত হসপিটাল প্যাসেজে শক্ত হয়ে বসেছিলাম, একটুও কাঁদিনি। অভির সাথে কথা বলে,অামার সব বিলিয়ে দিয়ে এসে অামার মনে হলো, অাবার অামার মা মারা গেছেন!
সকালে উঠে একটু বই খুলেছিলাম।
পরীক্ষা ছিলো অামার। পরীক্ষা শেষে বেরিয়েছি,দেখি
,অঞ্জন ভাই দাঁড়িয়ে অাছেন।
অামি দেখেও না দেখার ভান করলাম।যথেষ্ট হয়েছে। এই চাপ্টার ক্লোজ। অার অামি নিতে পারছিলাম না। অভিকে সব বলা হয়ে গেছে তো….সব খোঁয়াও গেছে অামার।
দ্রুত যখন পাশ কাটিয়ে চলে অাসছি, অঞ্জন ভাই এসে অামার হাত চেঁপে ধরলেন,
———অভির একটা মেসিভ হার্ট অ্যাটাক করে গেছে পরী, সকালের দিকে, । অভির ক্রিটিকাল কন্ডিশন। এরপরে অারেকটা এক্সিডেন্ট, অাংকেলও……..
অান্টি একা পারছেন না।
তোমাকে যেতে হবে……পরী।
অামার তখন কি অবস্থা তাঁর ব্যাখ্যা অামি দিতে পারছিনা।
শূন্য অবস্থানে দাঁড়ালে কি হয়??? এরকম কিছু বোধহয়…….
(চলবে)
(একটা কমেন্ট তো আশা করতে পারি সকলের কাছ থেকে)