এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব -০৮

#এটা_গল্প_হলেও_পারতো
পর্ব—০৮
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

“একটু পরে রাত্রির মা তার মাথায় ভীষণ যন্ত্রনা অনুভব করতে লাগলো,সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো তার।হাঁত থেকে চায়ের কাপটা পড়ে যায়।সোফোর ওপরে ঢলে পড়লো সে।যদিও ততক্ষনে জ্ঞান হারায়নি সে।রাত্রি চায়ের কাপটা টেবিলের ওপরে রাখলো।এরপর তাকে অবাক করে দিয়ে ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।কানের কাছে এসে অত্যন্ত নিচু স্বরে ফিসফিস করে বলতে লাগলো :

—কি ভেবেছিলে আমাকে চায়ের সাথে ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে দেবে,দেখলে তো আমার কিন্তু কিছু হয়নি,আমি ঠিক আছি।কিন্তু তুমি আর এখন ঠিক থাকবে না।কারণ ওষুধ দেয়া কাপটা আমি না তুমি নিয়েছো,
আমাকে ফাঁসাতে গিয়ে তুমিই ফেঁসে গেলে মা!!”

হঠাৎ রাত্রির মায়ের কল্পনার ঘোর কেটে গেলো।

—ধূর,এসব আমি কি ভাবছি।মাথাটা কি পুরোপুরি গেছে আমার(মনে মনে বললো সে)

ইতিমধ্যেই রাত্রির চায়ে মেশানো ওষুধ কাজ শুরু করে দিয়েছে।ধীরে ধীরে চারপাশটা অন্ধকার দেখতে লাগলো সে।তারপরে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে ঢলে পড়ে।

ক্রিং ক্রিং করে ফোনটা বেজে উঠলো।

—-হ্যাঁ,ম্যাডাম‌।আমি পৌঁছে গেছি।কাজ হয়েছে তো?

—হ্যাঁ,কাজ হয়ে গেছে।তুমি বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ো।আমি দরজা খোলাই রেখেছি।

লোকটা একটু পরে এসে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো।এসে দেখে রাত্রি অজ্ঞান হয়ে মেঝের ওপরে পড়ে আছে আর সামনে ওর মা দাঁড়িয়ে।

—বাড়াবাড়ি কিছু হয়ে গেলো না তো আবার?

—আরে না,সেরকম কিছুই হয় নি।তুমি যা করার তাড়াতাড়ি করো,

লোকটা রাত্রির কাছে গেলো।ওর পাশে হাঁটু গেড়ে বসলো।

—-আচ্ছা,বাড়িতে কেউ নেই তো,বলছি কোনো ঝামেলায় ফেঁসে যাবো নাতো আবার,

—না,কেউ নেই বাড়িতে।আর তোমার কি আমাকে এতোটাই বোকা মনে হয় যে আমি এরকম একটা মূর্খের মতো কাজ করবো,

—ঠিক আছে।ওকে এখান থেকে গাড়িতে তুলতে হবে আগে।আপনি হেল্প করুন।

এরপর সেই লোকটা আর রাত্রির মা রাত্রিকে অজ্ঞান অবস্থায় ধরে নিয়ে গাড়ির কাছে নিয়ে গেলো।তারপর গাড়ির ভেতরে সিটের ওপরে শুইয়ে দেয়া হয়।জ্ঞান ফিরে এলে যেন ঝামেলা করতে না পারে তাই রাত্রির মা একটা রুমাল দিয়ে তার মেয়ের মুখটা শক্ত করে বেঁধে দিলো।

—যাক,এবার আর চিন্তা নেই,তুমি নির্বিঘ্নে নিয়ে যেতে পারো ওকে।

—হুমম,ধন্যবাদ।

—শুধু ধন্যবাদ দিলে হবে।আমার টাকাটা এবার কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দিন,

লোকটা গাড়ি থেকে একটা টাকার ব্রিফকেস বের করে ভদ্রমহিলার সামনে ধরলো,

—টাকা না দিয়ে কোথাও যাচ্ছি না আমি,এই নিন আপনার টাকা।গুনে নিন।

রাত্রির মা টাকাগুলো ভালো করে গুনে নিলো।নাহ,কোথাও কোনো গরমিল মনে হলো না তার।সব ঠিকঠাকই আছে।

—হ্যাঁ,ঠিক আছে।আপনি যেতে পারেন এবার, আর শুনুন আপনার জিনিস আপনি ভালো করে বুঝে নিন,আমি যেন কোনো ঝামেলায় না পড়ি,

—নাহ,আপনি যে উপকার করলেন আমার।এমন কিছু করবো না যাতে আপনার প্রবেলেম হয়।

লোকটা গাড়িতে উঠতে যাবে ঠিক তখন আবারো পেছনে ফিরে তাকালো,ততোক্ষনে রাত্রির মা তার ঘরের দিকে পা বাড়িয়েছে।

—একটা কথা বলি ম্যাডাম।যদিও এটা আমার এখতিয়ারের ভেতরে পড়ে না,তারপরেও জিজ্ঞেস না করে পারলাম না,

—কি কথা?

—আচ্ছা,রাত্রি আপনার নিজের মেয়ে তো,মানে আপনি তো ওর মা তাহলে মেয়েকে অন্যের কাছে….কিছু টাকার বিনিময়ে….

—এতো জেনে তোমার কি কাজ বাপু,যা চেয়েছে পেয়েছো তো,এবার মানে মানে কেটে পড়ো,

—আপনি চাইলে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন,নির্ভয়ে দিতে পারেন।বললাম না অপনার কোনো ক্ষতি হয় এমন কাজ করবো না আমি,

—হ্যাঁ,আমার মেয়ে।আমি নিজের ইচ্ছেতেই মেয়েকে বিক্রি করে দিচ্ছি।এতে যদি তোমার মনে হয় আমি অনেক খারাপ মা,তাহলে মনে রেখো তুমিও কিন্তু সাধু পুরুষ নও।

—ঠিক আছে এবার আসি তাহলে,ভালো থাকবেন,

রাত্রির মা আর কোনো কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে হনহন করে ঘরের ভেতরে চলে গেলো।মেইন দরজা বন্ধ করার আগে একবার বাইরের দিকে উঁকি মেরে তাকালো সে।ততক্ষণে লোকটার গাড়িটা ছেড়ে দিয়েছে।

সে তিয়াশ নামে নিজের পরিচয় দিয়েছে।তাছাড়া তার দাবি ছিলো সে একজন পুরাতন ক্লাইন্ট।অথচ একে রাত্রির মা কোনোদিন দেখেছে বলে বা আলাপ হয়েছে বলে একটিবারের জন্য হলেও মনে হলো না।তার থেকেও বড়ো কথা লোকটার চেহারা আচার আচরণ দেখে মোটেও বোঝা যায় না সে এই লাইনের মানুষ।পুরো ব্যাপারটাই বেশ বেখাপ্পা লেগেছে।যদিও এই খটকাগুলো যে প্রথমবারের মতো রাত্রির মায়ের মনে উদয় হচ্ছে এমন নয়,এর আগেও হয়েছে।কিন্তু এতোগুলো টাকার কাজে সমস্ত খটকা,মনের প্রশ্ন পাত্তা পায়নি তখন।এখন যেহেতু টাকা নেয়া হয়ে গেছে সব সংশয় এসে একে একে জমা হচ্ছে।লোকটা যা বলছে সত্যি তো,কি তার পরিচয়।এতোগুলো টাকা দিয়ে রাত্রিকে কিনে নেবার উদ্দেশ্য কি তার।যদি মনে ভোগ করার লালশা থেকে থাকতো সেটা সে যখন তখন এসে মিটিয়ে নিতে পারতো তাই বলে মানুষটাকেই কিনে নিলো সে।

এদিকে তিয়াশ সাহেবের গাড়ি এগিয়ে চলছে আপন গতিতে।তার পেছনের সিটে রাত্রির দেহ অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে এখনো।বার বার কল আসছে তার ফোনে।সেগুলো ইগনোর করে মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো সে।

এক পর্যায়ে সে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে গেলো।সেখানে তার জন্য কেউ অপেক্ষা করে আছে।
তিয়াশকে দেখে সে একটা মুচকি হাসি দিলো,

—বাহ,কাজটা করে ফেলেছো তাহলে?

—হ্যাঁ,এই দেখুন।

—আচ্ছা টাকাগুলো যে নকল বুঝতে পারেনি তো,বা সন্দেহ করে নি তো,

—নাহ,কিছু সন্দেহ করে নি।আমি যতটা চালাক ভেবেছিলাম তাকে ভদ্রমহিলা ততোটাও চালাক নন।

—এবার গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নামাও ওকে,না জানি বেচারী কতো কষ্ট পাচ্ছে…

তিয়াশ আর লোকটা রাত্রিকে ধরে একটা ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়।একটা বিছানার ওপরে শুইয়ে দেয়া হলো তাকে।

এরপর তারা অপেক্ষা করতে থাকে কখন ওষুধের প্রভাব কাটবে….একটু পরে তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রাত্রির ওষুধের প্রভাব কাটতে লাগলো।ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো সে…

এই দৃশ্য দেখে আমান সাহেবের মুখে হাসি ফুটে উঠলো,তিয়াশ লক্ষ্য করলো তার চোখের কোনায় দুই-এক ফোঁটা জল জমা হয়ে আছে।

এদিকে রাত্রির মায়ের ফোনে একটা কল আসলো।ফোনটা রিসিভ করতেই চমকে উঠলো সে…

—হ্যালো,ম্যাডাম।আমি চলে এসেছি আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে বের হন,

কথাটা শোনামাত্র ভদ্রমহিলার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।

—আপনি কি মজা করছেন আমার সাথে,একটু আগে মোটা টাকার ব্রিফকেস ধরিয়ে দিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে,এখন নাটক করতে এসেছেন,

—হোয়াট ননসেন্স!!আপনি কি পাগল হয়েছেন?কে টাকা দিলো আপনায় আর কেই বা আপনার মেয়েকে নিলো,আমি এতো এইমাত্র আসলাম।

—তার মানে আপনি আসেন নি?

—না,আমি তো আপনাকে আগেই জানিয়ে দিলাম আসতে আসতে রাত দশটা বাজবে।আর এখন পৌনে দশটা!!

ভদ্রমহিলার বুঝতে আর বাকি রইলো না কেউ চোখে ধূলো দিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।ফোনটা ছুড়ে ফেলে টাকার ব্রিফকেসের দিকে ছুটে গেলো সে।
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here