#এ_কেমন_ভালোবাসা
পর্ব-০৩
লেখিকা-#খেয়া
চিঠিতে কী লেখা আছে, রাত।
রুদ্ধ ভাইয়া চিৎকার করে বলে উঠল কথাটা।আমার তো ভয়ে অলরেডি গলা শুকিয়ে গেছে।
—- বিশ্বাস করেন রুদ্ধ ভাইয়া,আমি সত্যি এসবের কিছু জানিনা।
—- তুমি কী একজনের সাথে অন্যজনের প্রেম করিয়ে দিয়ে কমিশন পাও।
—- না মানে,আসলে ফারহান দীপাকে পছন্দ করে। আর দীপার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। তাই আমাকে বলেছিল যেন ওর সাথে দীপার একটু সেটিং করিয়ে দেয়।
—- এই ইডিয়েট মেয়ে, সেটিং কী ধরনের ল্যাংগুয়েজ।
—- সরি,সরি ভাইয়া। আর বলব না।
—-ওকে, গিয়ে পড়ায় মন দাও।এভাবে পড়লে মেডিকেলে চান্স পাওয়া হবেনা,বুঝেছো।
—- হুম।
অনেকক্ষণ ধরে বই নিয়ে বসে আছি।অনেক পড়েছি।আর পড়তে ইচ্ছে করছেনা।এবার তো মাথায় সব পড়া তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
একটু পরে দীপ্ত আমার রুমে এলো।এসে আমার সামনে চেয়ার টেনে বলল
—- কী ব্যাপার বলোতো।তোমার আর ভাইয়ার মাঝে কী চলছে,হুম।
—- কী চলছে মানে? একটু ক্লিয়ার করে বলবা প্লিজ।
—- কাল নিহা আপুর কথায় তোমার খারাপ লেগেছে, তাইনা।খারাপ লাগারই কথা।কাল তোমাকে এসব কথা বলার জন্য ভাইয়া নিহা আপুকে অনেক কথা তো শুনিয়েছে সাথে একটা থাপ্পর ও মেরেছে তাকে।
—- কীহহহহ,,
—- আরে লাফাও কেন।আমি সিরিয়াসলি বলছি।আর আজ তো ভাইয়া ফারহানকেও নিষেধ করেছে তোমার আশে পাশে আসতে।ভাইয়া তোমার ওপর এত প্রোটেকটিভ কেন বলোতো?
—- আমি কী করে জানবো।আচ্ছা তুমি কী জানো রুদ্ধ ভাইয়া কাকে ভালোবাসে।
—- না, সেটা তো জানিনা।তবে ভাইয়া আমাকে একবার বলেছিল যে,তার লাইফে এমন একজন এসেছে যার মায়ায় সে পুরোপুরি ডুবে আছে।এখন ভাইয়ার এমন কথার কী মানে হতে পারে বল।
“দীপ্তর এমন কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো।রুদ্ধ ভাইয়া সত্যি কাউকে ভালোবাসে।”
—- এই যে, রাত।কী ভাবছ।
—- না কিছু না।
—- তোমার নামটা কে রেখেছিল বলোতো। মানে তোমার নামে রাতও আসে আবার রাত্রিও আসে।আরাত্রি! কিউট নেম।
—- হুম।বাবা রেখেছিল নামটা।
—- ওহ।তুমি পড়ো, ভাইয়া আবার পড়া না পারলে কিন্তু খুব রেগে যায়।
—- হুম।
একটু পর রুদ্ধ ভাইয়া এলো।আমিও ভালোমতো সব পড়া দিলাম।একদম বেশি কথা বললাম না।রুদ্ধ ভাইয়াও চুপচাপ পড়িয়ে চলে গেলো।
—————–
সবকিছু নরমালি চলছে।দিন চলেছে তার আপন নিয়মে। আমার এডমিশন টেস্টের আর বেশি দেরি নেই।একদিন মন প্রাণ দিয়ে পড়েছি।রুদ্ধ ভাইয়াও যথেস্ট হেল্প করেছে।তবে একদিন আমি রুদ্ধ ভাইয়াকে যথাসম্ভব এড়িয়ে গেছি।তাকে একতরফা ভালোবেসে কষ্ট পেতে চায়না আমি।
তবে একদিন একটা জিনিস আমি প্রায়ই খেয়াল করেছি রুদ্ধ ভাইয়া কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।সে চাহনিতে শুধু একরাশ মুগ্ধতা থাকে।
আজ আমার এডমিশন টেস্ট।কাল বাবা এসেছে।আজ আমার সাথে হলে বাবা আর রুদ্ধ ভাইয়া এসেছে।তারা আমায় একদম টেনশন ফ্রি থাকবে বলছে।কিন্তু আমি একদম শান্ত হতে পারছিনা।খুব টেনশন হচ্ছে আমার।
মেডিকেলে পড়ার শখটা আমি গত দশ বছর ধরে নিজের মধ্যে পুষে এসেছি।সে ইচ্ছেটা পূরন হবে তো?
পরীক্ষা দিয়ে এসেছি অনেকক্ষণ।পরীক্ষা খুব বেশি ভালো না হলেও যথেষ্ট ভালো হয়েছে।বাবা দুপুরেই চলে গেছে।এখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে।অথচ আমার টেনশন এখনও কম হয়নি।রেজাল্ট পাবলিশ না হওয়ার পর্যন্ত ঘুম আসবেনা।
আর ওদিকে দীপ্ত খুব চিল মুডে আছে।ওর নাকি মেডিকেলে পড়ার কোনো শখ নেই।
কিছুক্ষণ পর রুদ্ধ ভাইয়া এসে বলল
—- রেডি হয়ে যাও, রাত।চলো বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।তোমার মাইন্ড ফ্রেশ হয়ে যাবে আর টেনশনও কমে যাবে।
—- আপনি সত্যি আমায় ঘুরতে নিয়ে যাবেন?
—-হুম।
—- রাত,তুই যা।তোর মনটাও ভালো হয়ে যাবে।
—- আচ্ছা মামনি।
আমিও লাফাতে লাফাতে রেডি হতে চলে গেলাম।রুদ্ধ ভাইয়া যেই শাড়িটা দিয়েছিলেন সেটা পড়ে সুন্দর মতো তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলাম।আজ সিরিয়াসলি আমায় খুব সুন্দর লাগছে।যদিও নিজের সুনাম নিজের করা উচিত নয়।
—-আরে, আমার রাত মাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।একদম পরীর মতো।
—- ধন্যবাদ মামনি।
—- তুই যা,রুদ্ধ বাইরে গাড়ির কাছে আসে।
—- হুম।
বাইরে এসে দেখি রুদ্ধ ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে মোবাইল স্ক্রলিং করছে।আমাকে দেখা মাত্রই উনি খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।তার চোখে এত মুগ্ধতা আমায় মেরে ফেলতে যথেষ্ট।
—- চলেন, ভাইয়া।
—- হুম চলো।
—-কোথায় যাবে বলো?সন্ধ্যার টাইমে হাতিরঝিলে যাওয়া যায়।তোমার ভালোলাগবে জায়গাটা।
—-আচ্ছা সেখানেই চলুন।
অনেকক্ষন পর আমরা হাতিঝিলে এসে পৌঁছালাম।সত্যি জায়গাটা খুব সুন্দর।চারিদিকে এত রংবেরঙের আলো এত মানুষ দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেলো।
রুদ্ধ ভাইয়া আর আমি বেশ খানিক্ষন ঘুরলাম।আজকের দিনটাকে নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা দিন মনে হচ্ছে।নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে সময় কাটানোর আনন্দটাই অন্যরকম।
ইদানিং কেন জানি রুদ্ধ ভাইয়ার ব্যবহারে আমার সন্দেহ হয়।উনি কী আমায় পছন্দ করেন।তাহলে উনার লাইফে অন্য একজন আছে।
—- এই যে চিন্তামনি এত কী ভাবো সারাদিন।
—- কিছুনা।
—-ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত না।
—- মানে?
—- আজ রাতে আমার কাছেও একটা রাত আছে।আমার রাত।
—- আমার রাত? মানে?
—- হুম,এই রাত একান্তই আমার।তবে তোমার পিচ্চি মাথায় এটা ঢুকবেনা, পিচ্ছি।
—- আমাকে আপনার কোন এঙ্গেলে পিচ্চি মনে হয়।
—- তা নয় তো কী।তুমি সত্যি পিচ্চি।তাহলে এতদিন কবে আমার মনের কথা বুঝে যেতে।
—- কিছু বললেন।
—- না।অনেক রাত হয়ে গেছে চলো বাসায় যায়।আম্মু টেনশন করবে।
—- হুম চলেন।
—————–
আজ এডমিশন টেস্টের রেজাল্ট দিবো।প্রচন্ড টেনশনে আছি।সকাল থেকে বাবা- মা কম হলেও দশবার ফোন দিয়ে বলেছে টেনশন ফ্রি থাকতে কিন্তু আমি পারছিনা।জানিনা কী হবে।
ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছি।আজ আংকেলও হাসপাতালে যায়নি।
রুদ্ধ ভাইয়া রেজাল্ট দেখার চেষ্টা করছে।আর আমি বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি।কিছুক্ষন পর রুদ্ধ ভাইয়া বলল
—- রাত, তুমি আসলে মেডিকেলে চান্স,,,
রুদ্ধ ভাইয়ার কথা শুনে বুঝেনিলাম যে আমি মেডিকেলে চান্স পায়নি। আমি এবার কেঁদেই দিলাম।রুদ্ধ ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বলল
—- আরে পাগলি, কাঁদছ কেন? তুমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছো।তোমার চান্স হয়ে গেছে।
এবার আমি আরো বেশি কেঁদে দিলাম।তবে এ কান্না আনন্দের। হয়ত এবার আমার স্বপ্ন আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে।
আংকেল এসে আমার পাশে বসে বললেন-
—- তোমার এত ভালো রেজাল্টের জন্য আমাদের কাছ থেকে একটা গিফট কিন্তু তোমার পাওনা রইল।তবে রেজাল্ট ভালো হয়েছে তোমার। কিন্তু গিফট কিন্তু আমাদের চায়।
—- আচ্ছা,আংকেল। কী গিফট চায় তোমাদের।
—- সেটা সময় এলেই বলল।তুই আমাকে কাল বলেছিলি না তুই বাসায় যেতে চাস। কাল আমি তোর বাবা আর মাকে এখানে আসতে বলেছি।কাল ওরা এলে তুই তারপর ওদের সাথেই যাস, কেমন?
—- আচ্ছা,আংকেল।
আমার কথা শেষ না হতেই রুদ্ধ ভাইয়া উত্তেজিত হয়ে বলল
—-চলে যাবে, মানে।তো সামনে কিছুদিন পর থেকে রেগুলার ক্লাস শুরু যাবে।
—- হ্যা, তখন ভালোমতো একটা হোস্টেল দেখে উঠে
যাবে।
রুদ্ধ ভাইয়াকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই কথাটা উনার মনমতো হয়নি।কিন্তু আংকেল আর আন্টির মুখে এখনো মুচকি হাসি বিদ্যমান।যার অর্থ খুব অন্যরকম।
আজ আমার মনটা খুব ভালো।আমি রুমে গিয়ে বাবা- মায়ের সাথে কথা বলে নিলাম।এখন খুব শান্তি শান্তি লাগছে।আমি বাসায় যাবে বলে এখন থেকেই ব্যাগ গোছানো শুরু করেছি।গুনগুন করে গান গায়ছিলাম আর জামা কাপড় গোছাচ্ছিলাম।তখনই রুদ্ধ ভাইয়া আমার রুমে এসে বলল
—- ব্যাগ গোছানো লাগবেনা তোমার।বাসায় যাওয়াও হবেনা তোমার।কারণ,,,,
—- কী কারণ?
—- না কিছুনা।
রুদ্ধ ভাইয়া কিছু না বলেই চলে গেলেন।আমি নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম।আচ্ছা আমি চলে গেলে কী উনি আমায় মিস করবেন?
এতদিনে কী আমার প্রতি উনার একটুও ফিলিংস জন্মায়নি?
দুপুরে আন্টিকে টুকটাক রান্নার কাজে হেল্প করে এসে গোসল করে নিলাম।বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি দীপ্ত আর ক্যান্ডি বিছানায় সে আছে।আমি দীপ্তর দিকে তাকিয়ে বললাম
—- কী চায়?
—- তোমার একটা ওড়না।যেটাতে তোমার গাঁয়ের গন্ধ আছে।তুমি তো কাল চলে যাবে।তাই ক্যান্ডির জন্য চাইছিলাম, আরকি।
নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম।কোনো একজন তো আমায় এত পছন্দ করে।
(চলবে)#এ_কেমন_ভালোবাসা
পর্ব-০৪
লেখিকা-#খেয়া
সকাল থেকেই মামনি রান্নাবান্না নিয়ে খুব ব্যস্ত।আংকেল তো বন্ধু আসবে বলে পুরো বাজার উঠিয়ে এনেছে।
আমিও মামনিকে টুকটাক রান্নার কাজে সাহায্য করছিলাম।
রুদ্ধ ভাইয়া হাসপাতালে গেছেন।আংকেলেও একটু আগেই গেছেন।
আমি আর মামনি সবজি কাটছিলাম তখনই রুদ্ধ ভাইয়ার ফোন এলো।উনি নাকি কী কাগজ রেখে গেছে।দীপ্তকে দিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে বললেন।
মামনি আমাকে বলল
—- রাত মা,রুদ্ধর আলমারিতে একটা নীল ফাইল আছে।একটু নিয়ে আসবি।
—- হুম।নিয়ে আসছি।
আমি রুদ্ধ ভাইয়ার ঘরে এসে আলমারি খুলতেই একটা লাল ওড়না চেখে পড়ল।এটা তে আমার ওড়না।এটা আমি কাল দীপ্তকে দিয়েছিলাম।কিন্তু এটা রুদ্ধ ভাইয়ার কাছে কেন।তাও আবার এত যত্ন করে তুলে রেখেছে।
আমি বেশি কিছু না ভেবে ফাইলটা নিয়ে দীপ্তর রুমে গেলাম।
গিয়ে দেখি মহারাজ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে আর নিজেও গুনগুন করে গান গাইছে।
—- এই যে, মিস্টার।
আমায় দেখে কান থেকে হেডফোন খুলে বলল
—- কিছু বলবে?
—- আপনার খারাপ লাগছেনা, আমি যে মেডিকেলে চান্স পেলেন না।
—- শোনো মেয়ে,ওসব ডাক্তার হওয়ার শখ আমার কোনো কালেই ছিলনা।শুধু বাবার কথায় পরীক্ষাটা দিয়েছি।তাছাড়া আমাদের বাড়িতে দুটো ডাক্তারতো আছেই।
—- দুটো ডাক্তার মানে?
—- কেন আমার ভাই আর ভাবীও তো একদিন ডাক্তার হবেই, তাইনা।
—- ভাবীও ডাক্তার হবে মানে?
—- না, মা মানে,,,ভাইয়া যখন ডাক্তার তখন তো সে বউ হিসেবে কোনো ডাক্তারকেই চাইবে।বাই দ্যা ওয়ে তুমি এখানে কেন এসেছিলে।
—- ওহ। এই যে ফাইলটা রুদ্ধ ভাইয়া আপনাকে হসপিটালে দিয়ে আসতে বলেছে।
—- আচ্ছা দাও।
—- হুম,নিন।
—————-
বাবা মা এলো এগারোটার দিকে।তারা আজ থেকে কাল যাবে।
আংকেল আর বাবা তে এসে থেকেই গল্পে মজেছেন।আমি মামনি আর মা দুপুরের খাবার সাজাচ্ছিলাম টেবিলে। তখনই দরজায় বেল বাজলে আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।
রুদ্ধ ভাইয়া ছিলেন দরজায়।দরজা খুলে দেওয়া মাত্রই উনি ভেতরে ঢুকে গেলেন।কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগছিল তাকে।
দুপুরে সবাই একসাথে খেলাম।কিন্তু রুদ্ধ ভাইয়া তেমন কিছুই খেলেন না।মামনি সবাইকে রেস্ট করতে বললেও আংকেল বললেল তার নাকি কী জরুরী কথা আছে।
সবাই একসাথে বসে আছি।নিরবতা ভেঙে আংকেল বলে উঠলেন
—- রাহাত ( আমার বাবা) তোর মেয়েকে যে এতদিন আমাদের বাড়িতে থাকতে দিলাম,খেতে দিলাম তার বদলে তো আমাদের ও কিছু পাওনা থাকে।
আংকেলের এমন কথায় আমি, মা, বাবা,রুদ্ধ ভাইয়া চরম অবাক হলেও বাকি সবাই নরমাল ছিল।বাবা আংকেলকে উদ্দেশ্য করে বলল
—- বল তোর কী চায়।তোরা এতদিন আমার মেয়ের খেয়াল রেখেছিস, তোরা যা চাইবি তাই দিবো।
—- যদি তোর মেয়েটাকেই চায়।
আংকেলের কথা শুনে আমি অবাক হলেও বাবা উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলল
—-আমার মেয়েকে তো অনেক আগেই তোদের দিয়ে দিয়েছি।
আমাকে অবাক হতে দেখে আংকেল আমাকে তার কাছে ডেকে বসিয়ে বললেন
—- রুদ্ধরর দিকে একবার তাকা।তুই শুধু কাল চলে যাবি শুনে নিজের কী হাল করেছে।তুই যদি চলে যেতি তাহলে কী হতো, বল।
—- আজব তো! আমি চলে গেলে রুদ্ধ ভাইয়ার কী হবে।
—- তুই এখনো পিচ্ছি থেকে গেলি।আমার ছেলেটা যে তোকে কতটা ভালোবাসে সেটা তুই এখনো বুঝলিনা।
আংকেলের কথায় আমি একদম বিষম খেলাম।মামনি তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে এসে আমায় খায়িয়ে দিলো।রুদ্ধ ভাইয়া কী সত্যি আমায় ভালোবাসে?
আমি আর ওখানে না থেকে ঘরে চলে এলাম।
ওখানে পরে আর কী কথা হয়েছে সেটা আর আমার শোনা হয়নি।
সন্ধ্যাবেলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম।পাশে তাকিয়ে দেখি দীপ্তর বেলকনিতে রুদ্ধ ভাইয়া ছিলেন।
কৌতুহলি মন নিয়ে উনাকে প্রশ্ন করলাম
—- আমাকে সত্যি ভালোবাসেন?
রুদ্ধ ভাইয়া খানিক চুপ থেকে বললেন
—- হুম।
—- কতটা ভালোবাসেন?
—- জানিনা
—- তাহলে আমি যেদিন আপনাকে বলেছিলাম ভালোবাসি তখন না করে ছিলেন কেন?
—- তখন যদি হ্যা বলতাম তাহলে তুমি এসব নিয়েই পড়ে থাকতে।তখন মেডিকেলে চান্স কেন এডমিশন টেস্টে পাশ মার্ক ও পেতে না।
—- কীহহহ,,,
—- ঠিকই বলেছি আমি।তুমি যে শুধু জেদের বশে এত ভালো পরীক্ষা দিয়েছো সেটা আমি জানি।
—- আমি চলে গেলে কী আপনার মন খারাপ হবে।
—- জানোতো রাতপাখি,রোজ রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে তোমায় দেখা, তোমাকে কোচিংয়ে ছাড়তে যাওয়া,তোমার দুষ্টুমিতে রাগ দেখানো আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।মানুষ অভ্যাসের দাস।আমিও তাই তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবনা।
তোমার ঐ হাসি দিয়ে যে আমার দিনশুরু হয়।তোমাকে না দেখে দিন শুরু হলে ঐ দিনটা আমার বড্ড খারাপ যায়।
আচ্ছা তুমি কী কালোযাদু জানো বলোতো?
—- এসব কী কথা।
—- তাহলে আমাকে তোমার মাঝে বন্দি করলে কীভাবে।
আমি রুদ্ধ ভাইয়ার কথার কোনো উত্তর না দিয়েই চলে এলাম।আসলে উনি রোমান্টিক মুডে কথাগুলো বলছিলেন নাকি উনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে সেটাই বুঝতে পারিনি এখনো।
ভাবলাম মামনি আর আম্মুর সাথে গিয়ে গল্প করে আসি।আবার দুপুরের কথাটা মনে পড়তেই লজ্জায় গেলাম না।
শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছিলাম তখনই দীপ্ত এলো আমার রুমে।বলল
—- তোমার কী ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে। নাকি আমি গুছিয়ে দিবো,,,ভাবীইই,,
—- কী সমস্যা।এখন আবার কী চায়।
—- আরেকটা ওড়না।কালকেরটা তো ভাইয়া নিয়ে নিলো এখন ক্যান্ডি আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।
—- তোমার কী মনে হয়, আমার ওড়নার ফ্যাক্টরী আছে।
—- এখন একটা দিয়ে দাও। পরে ভাইয়ার টাকায় দশটা কিনে নিও।দাও না,, ভাবী।
—- এই ছেলে আমি তোমার কোন জন্মের ভাবী লাগি।
—- দেখো,,আগের জন্মের কথা আমার মনে নেই। ভবিষ্যতের কথা আমি জানিনা। সো তুমি আমার এজন্মের ভাবী লাগো।গট ইট।
আমি কোনো কথা না বলে দীপ্তকে আরেকটা ওড়না দিয়ে দিলাম।
রাতেও সবাই একসাথে খেলাম।টেবিলে বসে একবারও রুদ্ধ ভাইয়ার দিকে তাকায়নি।
কাল সকাল সকাল আমরা বেরিয়ে পড়বো।
খাওয়ার পর খানিকক্ষণ গল্প করে সবাই ঘুমাতে চলে গেলো।
——————-
এখন সকাল এগারোটা বাজে।আমি বাবা- মায়ের সাথে বাড়ি চলে এসেছি।এতদিন নিজের গ্রামে এসে মনটা ভালো হয়ে গেলো।তবে আসার আগে একবারও রুদ্ধ ভাইয়ার সাথে দেখা হয়নি বলে মনটা খারাপ।উনার নাকি কাজ ছিল তাই সকালেই চলে গেছেন।
আজও কী উনি একটাবার আমার সাথে দেখা করতে পারতেন না।
অনেকদিন পর বাসায় এসেছি বলে কাজিনদের সাথে আড্ডা দিয়েই দিন পাড় করে দিলাম।রাতে আম্মু আমার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছিল।অনেকদিন পর মেয়ে বাড়ি এসেছে বলে বাবা- মায়ের যেন আনন্দ ধরছেনা।
আজ জার্নি করে এসেছি তাই খুব ক্লান্ত থাকায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম।মাঝরাতে ফোন বাজার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।রুদ্ধ ভাইয়ার ২২৩ টা মিসকল দেখে খুব অবাক হলাম।
এখন রাত একটা বাজে।তারমানে উনি অনেকক্ষন ধরে কল করছেন আমায়।আমিও দেরি না করে কলটা ধরলাম।
—- রাত! কী হয়েছে তোমার।কখন থেকে ফোন করছি।ফোন ধরোনা কেন? কী করছিলে বলোতো।
—- মানেটা কী? রাত একটার সময় মানুষ কী করে হ্যা।ঘুমাচ্ছিলাম আমি।
—- ওহ,সরি।ফোন ধরছিলে না বলে টেনশন হচ্ছিল।আচ্ছা তুমি ঘুমাও। আমি সকালে ফোন দিব।
—- হুম।
রুদ্ধ ভাইয়া ফোনটা রেখে দিলেন।আমিও আর জিঙ্গেস করলাম না এতবার কল করার কারণ।এখন কিছু বললেও আমার মাথায় ঢুকতোনা।আমার এখন প্রচুর ঘুম দরকার।
———————
সকালে একটু দেরিতেই ঘুম থেকে উঠলাম।রুম থেকে বেরিয়েই দেখলাম বাড়িতে বেশ তোড়জোড় চলছে।মেহমান আসবে হয়ত।
আমি আবার রুমে চলে গেলাম।একটু পর আমার কাজিন মাহি দুটো শাড়ি নিয়ে গিয়ে আমার সামনে রেখে বলল
—- কোনটা সুন্দর বল।তুই বরং আজ লালটা পড়।খুব সুন্দর লাগবে তোকে।
—- আমি হঠাৎ শাড়ি পড়তে যাবো কেন
—-তুই জানিস না আজ তোকে দেখতে আসছে।সব ঠিকঠাক থাকলে খুব দ্রুতই বিয়েটা দিয়ে দিবে।
—- কীহ।আমায় দেখতে আসছে আর আমি কিছু জানি না।আমাকে আম্মুর সাথে কথা বলতে হবে।
আমি রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম আম্মু খুব বিজি।আমার দুই ফুফুও সাথে আছে।আমি আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম
—- এসব কী, আম্মু। তোমরা আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো।এত কম বয়সে কেউ বিয়ে করে।
—- আমার তো ১৭ বছরে বিয়ে হয়েছিল।
—- আমার এখনো পড়াশোনা বাকি।তুমি বলো আমার কী বিয়ের বয়স হয়েছে?
—- বিয়ের বয়স হয়নি মানে।১৮ বছর তো হয়ে তোর।এখন বিয়ে দিলে কোনো সমস্যা হবেনা।
—- আজব তো! আজ আঠারে হলে কী কালই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।আমি কিছুতেই এবিয়ে করব না।তুমি বাবাকে বলো , ওদের না করো দিতে।
—- সম্ভব না।তোর বাবা ওদের কথা দিয়েছে।আর তোর বাবা যে কথার খেলাপ করেনা সেটা তুই জানিস।
—-কিন্তু মা,,,
—- কথা না বলে কাজে হেল্প কর নয়তো এখান থেকে যা।
আমি রেগে চলে এলাম ওখান থেকে।আচ্ছা বাবা এমন কেন করল? বাবা তো রুদ্ধ ভাইয়ার ব্যাপারে সব জানে।বাবার কী রুদ্ধ ভাইয়াকে পছন্দ হয়নি তাই এমন করল নাকি,,,,,
( চলবে)
(