ওই_আকাশটা_আমার_ছিল পর্ব ১০

#ওই আকাশটা আমার ছিল
#রোকসানা আক্তার
পর্ব-১০

১৫.
পুরো শহরের অলিগলিতে অয়ন তার বাহিনীকে মোতায়েন করে দেয়!মিডিয়া,বিলবোর্ড এবং পত্রিকায় পৃথীর একটা বড় ছবি ছেপে দেওয়া হয়।অয়ন এসব করেই একান্ত নিশ্চিন্তে যে বসে তা নয়।সে তার অফিস রুমে বসে থেকে সবার সাথে যোগাযোগ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এই তার বাহিনীদের কল করে,তো এই মিডিয়া লোকদের!পৃথীকে খোঁজ করতে সে তিন ঘন্টা হলো নেমেছে।এই আশি মিনিটে সে কতশ কল যে মিডিয়া, তার বাহিনী এবং অন্যান্যদের করেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।তার ফোন কলে সবাই বিরক্ত তবুও আদেশ পালন করতে বাধ্য।উপায় নেই।গ্যাংস্টার অয়নের আদেশ বলে কথা!আদেশ না পালন করলে পরে আবার গুলি খেয়ে মরতে হবে।তাই বিরক্তি চেপে হলেও অয়নের কল রিসিভ করে আপডেট জানায়। অয়ন এবার রিফাতকে কল করে।দুইবার বাঁজার পর রিফাত কল রিসিভ করে।

“জ্বী,ভাই?বলুন!”
“কোথায় তুমি?”
“অফিসে ভাই।”
“কাম ইন মাই রুম ফাস্ট।”
“জ্বী!”
তার কয়েক সেকেন্ড বাদেই রিফাত রুমে এসে হাজির হয়।
“ভাই বলুন?”
“পৃথীর মাকে কল করে বলো এখুনি যেন আমার অফিসে আসে।আর উনাকে আমার অফিসের ঠিকানা দিয়ে দাও।বলবে এই ঠিকানায় আসতে।”

“জ্বী,ভাই।”
বলেই রিফাত রুম থেকে বেরিয়ে রহিমাকে কল করে।তার আধা ঘন্টা পরই রহিমা অয়নের অফিসের কক্ষে এসে হাজির হয়।

“বাবা ডেকেছিলে?”
অয়ন ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল।ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে দৃষ্টি রেখেই জবাব দেয়,
“জ্বী,আন্টি।প্লিজ সিট…!”

রহিমা ব্যাগটা কোলে উপর রেখে আলতোভাবে চেয়ারে বসেন।তারপর বলেন,
“হ্যাঁ বাবা, বলো?”

অয়নের ল্যাপটপে আর কিছু কাজ বাকি..দ্রুত তা সেরে নিয়ে ল্যাপটপের সাটান বন্ধ করে তা একসাইডে রেখে এবার রহিমার দিকে তাকায়,

“আন্টি আপনাকে ডাকার কারণ হলো পৃথীর ব্যাপারে আমাকে কিছু তথ্য দিতে হবে।”
“হ্যাঁ বলো কী তথ্য লাগবে?”

অয়ন তার চেয়ারে এবার ফর্মালিভাবে কিছুটা হেলে বসে বলে,
“আপনার জানামতে আপনাদের এলাকায় পৃথীকে এমন কোনো বখাটে, বা কোনো ছেলে ডিস্টার্ব করতো?”
“নাহ বাবা, আমার জানামতে পৃথীকে তেমন কেউই ডিস্টার্ব করতো না।ডিস্টার্ব করবেই বা কিভাবে মেয়ে ত আমার কারো সাথে কথা বলতো বা।আর যদি ডিস্টার্ব করেও থাকতো মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা আমাকে বলতো।”
“হয়তো আপনি জানতেন না।পৃথীর বান্ধবী নুহা জানতো এই ব্যাপারটা…।”
“নাহ নুহাও বলছে ডিস্টার্ব করে না।”
“ওহ।আর আপনাদের কারো সাথে কোনো শত্রুটত্রুতা আছে?”
“নাহ বাবা,আমাদের কোনো শত্রুও নেই।টাকাপয়সা নেই।গরিব মানুষদের শত্রু থাকবে কেন।”
বলেই রহিমা হাসার চেষ্টা করেন।

অয়ন এ’কথার আর জবাব না দিয়ে কপালে উপচে পড়া সিল্কি চুলগুলো বামহাত দিয়ে এক টানে পেছনে নিয়ে তপ্ত একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।অয়নের ভাবভঙ্গিমা ভীষণ চিন্তাকর।রহিমার তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক তা বুঝে ফেলে।বলে,

“বাবা আমার মেয়ের জন্যে খুব করতেছো তাই না?”
“তেমন কিছু না।এইটুকু আমার জন্যে স্বাভাবিক!তা কফি খাবেন নাকি ঠান্ডা কিছু?”
“কিছু না বাবা।আজ আর কিছু খাবো না।বাসায় ফিরবো।আমার খালাতো ভাইটা আসবে গ্রাম থেকে।সেও পৃথীকে খুঁজতে নামবে।”
“অন্তত এক কাপ চাপ খেয়ে..!”
“নাহ বাবা।আরেকদিন আসলে ইনসাল্লাহ! ”

বলেই রহিমা ব্যাগ হাতে নিয়ে উদগ্রীব মনে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলেন,
“তোমার যদি আবার প্রয়োজন হয় জানাবে।আমি চলে আসবো।”
“জ্বী,আচ্ছা। ”

রহিমা চলে যাবার পর অয়ন ব্যর্থ মনে চোখজোড়া বুঁজে আনে।কিছুতেই কিছু তার মাথায় ধরছে না।
কত তথ্য বের করলো অথচ মেয়েটি উধাও হবার কোনো সোর্চ খুঁজে পেলো না।তাহলে সে হঠাৎ এভাবে উধাও হয়ে যাওয়া এটা কি কোনো কাকতালীয়?নাকি অন্যকিছু?মানুষ উধাও হবার পেছনে এগজ্যাক্ট কোনো কারণ থাকে।কিন্তু পৃথীর কোনো কারণই দেখছে না অয়ন।তাহলে কী এমন কারণ যা সে এই মুহূর্তে মনে করতে পারছে না!ভেবেই কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকে অয়ন।হুট করে তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কে কিছু একটা টনকে উঠতেই অয়ন ধক করে চোখের পাতা মেলে ফেলে।চেয়ার থেকে সামান্য টেবিলের দিকে ঝুঁকে-কাল সে দুই দুটো বখাটে কে গুলি করে মেরেছে।সেই দুটো বখাটের সাথে পৃথীর উধাও হয়ে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে নয়তো??হ্যাঁ!হ্যাঁ!।নাহলে পৃথী উধাও হওয়ার আর কোনো কারণ দেখছে না অয়ন। এধরনের বখাটেদের শুধুমাত্র ফুটপাত বখাটে ভাবলে ভুল হয়।একটা সময় দেখা যায় ওই ফুটপাতের বখাটেদেরই ইয়া বড় বড় গ্যাং থাকে!যারা মানুষ খুন করে।মেয়েদের ধরে নিয়ে নিয়ে ধর্ষণ করে।ড্রাগ ব্যবসা করে আরো কত কি!এখন পৃথীও যদি সেই গ্যাংদের হাতে গিয়ে পড়ে থাকলো ভাবতেই অয়ন ধপাস করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।এক সেকেন্ডও দেরী না করে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে রিফাতকে বলে,

“রিফাত?কাল যেই দুইটা বখাটেকে মেরে ফেললাম দুই ঘন্টার মধ্যে ওই দুইটা বখাটের এ টু জেড তথ্য আমার চাই!ওদের কোনো গ্যাং ছিল কিনা?গ্যাং যদি থেকে ওদের সবগুলার এড্রেস, আস্তানার ঠিকানা আমার চাই ই চাই।জাস্ট টু আওয়ারস!”
“জ্বী,ভাই!”

১৬.
পৃথী একটা বদ্ধ রুমে বসে আছে।বদ্ধ রুমের চারপাশে চারজন লোক দাঁড়িয়ে তাদের হাতে বন্দুক ধরা।তারা
সবাই বন্দুকগুলো পৃথীর দিকে তাঁক করে।পৃথী যাতে কোনোভাবে পালানোর চেষ্টা করতে না পারে।পৃথী সামনে তাকিয়ে।কারণ তার সামনে আরেকটা লোকও দাঁড়িয়ে আছে।লোকটির গাঁয়ে কালো জ্যাকেট।মাথায় কালো ক্যাফ,চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা।লোকটির মুখ ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।লোকটির বেশভূষায় বুঝা যাচ্ছে সে সবার বস হবে!লোকটি ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে একটা জনসন বিড়ি ঢুকিয়ে হাত দিয়ে দিয়াশলাইয়ের কাঠি ধরাতে ধরাতে পৃথীকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“অয়নের সাথে সত্যিই তোর কোনো সম্পর্ক নেই?”
“কতবার বলবো একই কথা!?”
“ও তোর বয়ফ্রেন্ড! মিথ্যে বলতেছিস তুই আমাকে!”
“যদি তাই ই হয়ে থাকে তাহলে কি করবেন?মেরে ফেলবেন!?”

ওমনি লোকটি মুখে একটা পিচাশ হাসি টানে।তারপর দুই ঠোঁটের ফাঁকরে থাকা বিড়িটায় লম্বা করে একটা টান মেরে সামনের চেয়ারটায় ধপাস করে বসে পড়ে। সবগুলো ধোঁয়া একসাথে ছেড়ে পৃথীর দিকে কিছুটা ঝুঁকে এসে অত্যন্ত তীক্ষ্ণ গলায় বলে,

“অয়ন আমার চিরজন্মের শত্রু!ও আমার খুব লস করেছে। ও ড্রাগস বিজনেসে নামার পর আমার ড্রাগস বিজনেস লাটে উঠেছে।লোকজন ওকে দেখে আমাকে ভয় পেতে কমিয়ে দিয়েছে!ও আমার মান-খ্যাতি-দাপট সব এবং সব শেষ করে দিয়েছে!এখন আমার শুধু বদলা নেওয়াটা বাকি!সেক্ষেত্রে তোকে দিয়ে আমার বদলা নেওয়ার রাস্তা একদম ইজি!”

“দেখুন আপনি ভুল ভাবতেছেন সব!আমি উনার গার্লফ্রেন্ড না!খামোখা আমাকে দিয়ে কারো বদলা নেওয়ার ভাবনাটা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলুন!”
“একটা ছেলের বুকের উপর থুবড়ে গিয়ে পড়ামাত্রই সে সাথে সাথেই আমার দুই দুটো লোককে মেরে ফেললো।আর এটাকে তুই এখনো বলতেছিস অন্যকিছু, তারসাথে তোর সম্পর্ক ই নেই?!খুব বোকা ভাবছিস আমাকে ?”
“আপনি আসলেই বোকা।চালাক হলে আমার কথা ঠিকই বিশ্বাস করতেন!”
“নিজের প্রাণ ভোমরার প্রাণ সংশয়ের কথা ভেবে তার প্রিয় মানুষটি তার শত্রুকে কখনোই সত্য কথা বলবে না।সো তোর কথা বিশ্বাস করার মানেই হয় না!”
“না বিশ্বাস হলে আমার কিছুই করার নেই।”

লোকটি খানিক্ষন চুপ থেকে তারপর আবার বলে,
“তোকে একটা কাজ দিচ্ছি।তুই অয়নের সাথে রুমডেট করবি।সোঁজা বাংলায় হলো পরপুরুষের সাথে রাতে শুবি।সেই রাতে শেয়ার মুহূর্তটা ভিডিও রেকর্ড করবি অয়নের দৃষ্টি অগোচরে যাতে অয়ন এ ব্যাপারে কিছুতেই টের না পেতে পারে।তার পরদিন রেকর্ডটা এনে আমার হাতে দিবি।এখন তুই আমার এই কাজটি করতে যদি সহজভাবে মেনে নিস তাহলে তোর কোনো ক্ষতি করবো না!আর যদি না মেনে নিস তাহলে ওই দ্যাখ তোর চারপাশে চারজন লোক বন্দুক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে।সঙ্গে সঙ্গে ওই বন্দুকগুলো দিয়ে তারা তোর মাথার খুলি উড়িয়ে দিবে।আমার ওই দুইটা লোকের মতো তুইও মাটির নিচে চেপে যাবি।এবার বল মানবি কি মানবি না!”
“যদি বলি না!”

লোকটি ওমনি পৃথীর চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে!পৃথী “আআআআ” করে একটা আর্তনাদ করে উঠে।
“সময় থাকতে রাজি হ!নাহলে ওয়ান,টু বলার পরপরই তোর দিকে বন্দুক ছুঁড়বে!”
“বললাম ত না!”

লোকটি এবার পৃথীর চুলের মুঠি ছেড়ে দেয়।এই মেয়ের সাথে এভাবে মাথা গরম করে লাভ হবে না।অয়নের আসল রূপ লোক সমাজে খুলে দিতে এই মেয়েটিই যথেষ্ট।অয়ন শুধুমাত্র এই মেয়েটির সাথেই রুমডেটে যাবে।অন্য কোনো মেয়ের সাথে যাবে না।তাই মাথা ঠান্ডা রেখে এই মেয়েটিকে আরো সুযোগ দেওয়া উচিত।তাকে ভাবতে দেওয়া উচিত।ভাবতে ভাবতে কাজটি করতে হয়তো রাজিও হয়ে যেতে পারে ভেবেই লোকটি এবার গলা ছেড়ে বলে,

“আমি তোকে তিনঘন্টা সময় দিলাম।জাস্ট তিনঘন্টা।এই তিন ঘন্টায় তুই খুব ভাববি।গভীরভাবে ভাববি!নিজের প্রাণ সংশয় যদি থেকে থাকে তাহলে আপত্তি করবি না।আগে নিজের প্রাণের কথা ভাব।প্রাণ অনেক দামী।পৃথিবীর সবকিছু থেকে দামী।বুঝাতে পেরেছি?”

কথা শেষ করেই লোকটি আর এক মুহূর্তও দাঁড়লাে না।হুড়মুড় রুম থেকে বেরিয়ে যায়!

চলবে…..

(আমার ফোনের গ্লাস ফেঁটে গেছে।আপুর ছেলে এই কাজটা করেছে😥!এখন আপুর ফোন দিয়েই গল্ক দিলাম!আর দুঃখিত পর্বটা ছোট্ট হয়ে গেল!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here