ওগো বধু সুন্দরী পর্ব ৫

#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-০৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

জ্ঞান ফেরার পরে দেখতে পাই আমি একটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।মাথায় একটা মোটা ব্যান্ডেজ করা,ভেতরে প্রচুর যন্ত্রনা হচ্ছে।

আমার জ্ঞান ফিরতে দেখে নার্স বাইরে ছুটে গেলেন।তার একটু পরে বাবা,ভাই আর শ্রেষ্ঠা তড়িঘড়ি করে ভেতরে প্রবেশ করলো।

শ্রেষ্ঠা আর মিছিল আমাকে এই অবস্থায় দেখে রীতিমত কান্না শুরু করে দিলো।বাবা তাদের শান্ত করে এগিয়ে আসলেন আমার দিকে।

—-সৃষ্টিকর্তার কাছে অসংখ্য শুকরিয়া, তিনি বাঁচিয়ে দিয়েছেন তোকে!

বাবার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আমি,কী হচ্ছে এসব আমার সাথে।মনে হচ্ছে আমি আর বাস্তবে নেই,ভিন্ন একটা অভিনয়ের চলে এসেছি।নিজের চোখে বাবাকে আঘাত করতে দেখেছি আমাকে!সেটা তো আর মিথ্যা নয়।

আমি নিশ্চিত বাবা ভুলেও ভাবতে পারছেন না, আমি দেখে ফেলেছিলাম তাকে।কিন্তু আমাকে আঘাত করে, আবার হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করে তোলার অর্থ কি….???
নাহ!এবার দেখছি টেনশনে মাথা ছিড়ে যাবার উপক্রম আমার।

একটু পরেই ভেতরে একটা লোক এসে ঢুকলো,সাথে একজন পুলিশ।পুলিশ আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন :

—ইনি গোডাউনের দারোয়ান,গতকাল রাতে ইনি যথাসময়ে না আসলে হয়তো বাঁচানো যেতো না আপনাকে।

—উনি আমায় বাঁচিয়েছেন মানে,বুঝলাম না আমি??

—কেন বাবু, আমি যখন নিজের স্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে বের হচ্ছিলাম,তখন হঠাৎ কাউকে গোডাউন থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে দেখলাম।হয়তো আমাকে দেখে ফেলেছিলেন উনি।তারপর একটু এগিয়ে যেতেই আপনার সেন্সলেস বডি দেখতে পাই।ততক্ষণে লোকটা পালিয়ে যায়,কিন্তু আপনার কথা ভেবে আমি আর পিছু নিলাম না তার।

দারোয়ানের কথা শুনে আরো ভয় হতে লাগলো আমার,তারমানে বাবা ইচ্ছে করে বাঁচায় নি আমায়,আমায় খুন করা উদ্দেশ্য ছিলো তার!!!হে…. সৃষ্টিকর্তা…এ কোন কঠিন পরিস্থিতির মুখে দাড় করালে আমায় তুমি??আমার নিজের বাবা খুন করতে চাইছে আমায়।আমি কি এমন ক্ষতি করেছি তার, বাবা কেন এটা করলো আমার সাথে!তার মানে মায়ের ফিরে আসা,ফোনকল এইসবকিছু বাবার ষড়যন্ত্র ছিলো।কিন্তু বাবার এসব করে কি লাভ?কেন সে এসব করছে?

একটু পরে পুলিশ আর সেই দারোয়ান বেরিয়ে গেলো।বাবা আবারো আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো!

—-এখন কেমন লাগছে বাবা?শরীরটা ভালো লাগছে তো।

এই মুহুর্তে বাবার সাথে কথা বলতেও ঘৃনা হচ্ছে আমার।ভাবতেই অবাক লাগছে ইনি আমার নিজের বাবা।যাকে আমি এতোটা সম্মান করি, ভালোবাসি সে কিনা আমার বিরুদ্ধে এতো বড়ো ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, তাও পেছন থেকে।কিন্তু এই মুহূর্তে কিছুতেই বুঝতে দিলে চলবে না তাকে,আমি তার চালাকি ধরতে পেরেছি।যাই হোক,এখন কিছু না জানার ভান করে থাকতে হবে।নয়তো সত্যটা পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো না কোনোদিন।

পুলিশের ডাকে বাবা কেবিনের বাইরে বেরিয়ে গেলেন।ভেতরে মিছিল আলর শ্রেষ্ঠা।শ্রেষ্ঠা এসে আমার পাশে বসলো।মিছিল দাঁড়িয়ে আছে।

—আমি যেতে বারণ করেছিলাম আপনাকে!তারপরেও কেন গেলেন?

—আমি তো কেবল আমার মাকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলাম!

—আচ্ছা,আপনিই বলুন মৃত মানুষ ফিরে আসে কখনো।আমার তো শুনেই সন্দেহ হয়েছিলো কেউ ফাঁসাতে চাইছে আপনাকে,তাই তখন বারণ করি। কিন্তু আপনি যে আমার কোনো কথা কানে নিলেন না।

শ্রেষ্ঠার কথাগুলো সত্যিই ভীষণ যৌক্তিক,আমি নিজেও এতোটা ডিপলি ভাবিনি।কিন্তু শ্রেষ্ঠাও তো আমার সন্দেহের তালিকার বাইরে নয়।বাবার বিরুদ্ধে প্রমান আমি নিজেই,কিন্তু শ্রেষ্ঠা।ওর আসল রুপ কিকরে সামনে আনবো আমি।ও কি সত্যিই আমার ভালো চায়,নাকি এটা ওর একটা মুখোশ।ঠিক বাবার মতো।
এই পৃথিবীতে আমিই বোধহয় একমাত্র হতভাগ্য মানুষ যাকে কিনা তার জন্মদাতা পিতা খুন করতে চাইছে,যাকে কিনা নিজের স্ত্রীকে প্রতিক্ষণ আর প্রতিমুহূর্তে সন্দেহর চোখে দেখতে হচ্ছে।এই যন্ত্রণাদায়ক জীবনের থেকে মৃত্যু অনেক অনেক শ্রেয়।কিন্তু মায়ের খুনির পরিচয় না জেনে,আমার বাবা কেন খুন করতে চাইছে আমায় এটা না জেনে মরেও শান্তি পাবো না আমি।তাই আমাকে যেকরেই হোক সমস্ত প্রতিকূলতার সমুক্ষীন হতে হবে।এর থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো রাস্তা নেই আমার।

—কি হলো,কি ভাবছেন এতো?
(শ্রেষ্ঠার কথায় ভাবনার ঘোর কাটলো আমার)

—না,কিছু না।

—ডাক্তার বলেছে কাল সকালে রিলিজ দেয়া হবে আপনাকে।ততক্ষণ এই হাসপাতালেই থাকতে হবে।

—ওহ,তা তুমি কি সিধান্ত নিলে?

—কি সিধান্ত?

—এখানেই থাকবে নাকি,বাসায় যাবে?

—বাহ রে,,আপনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে পড়ে আছেন।আর আমি কিনা আপনার স্ত্রী হয়ে বাড়ি গিয়ে আরাম করবো।এটা হতে পারে।

—তুমি তো বড়োদের মতো কথা বলা শিখে গেছো দেখি,

শ্রেষ্ঠা আমার কথার প্রত্যুত্তরে একটা লজ্জামিশ্রিত হাসি দিলো।আর কিছুই বললো না।


সারাদিন কেটে গেলো,,শ্রেষ্ঠা আমার কথায় সন্ধ্যার পরে শ্রেষ্ঠা মিছিলকে নিয়ে বাসায় চলে গেছে। বাবার কথা জানি না।আজকে একটু তাড়াতাড়িই আমি মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।


রাতেরবেলা হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।ঘুমকাতুরে চোখে দেখতে পাই কেউ একটা আমার কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।মাথার ব্যাথা অনেকটা কমেছে আমার।আর কিছু না ভেবে উঠে পড়লাম আমি।তারপর তার পিছু নেই।

একটা মেয়ে বোঝাই যাচ্ছে,পুরো সেদিনের রাস্তায় দেখা সেই মেয়েটার মতো বেশভূষা।যাকে দেখতে কিনা হুবহু শ্রেষ্ঠার মতো।এমনকি আমি এটাও জানি না,ওটাই শ্রেষ্ঠা কিনা।যাই হোক না কেন,আজ আর একে ছেড়ে দিলে চলবে না।এতো রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার কাছে কি এমন কাজ ওর,সেটা ওর মুখ থেকে বের করতে হবে।তাছাড়া ওকে ধরতে পারলে ওই শ্রেষ্ঠা কিনা সেটাও জানতে পারবো আমি।

মেয়েটা আমার থেকে মাত্র কয়েকগজ দূরে,হাসপাতালে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। আর আমি সমস্ত নিরবতা ভেঙে অজ্ঞাতনামা মেয়েটার পিছু নিলাম।এক পর্যায়ে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে পড়ে সে।তারপর রাস্তা ধরে এগিয়ে যায়।আমিও আপ্রান চেষ্টা করছি তাকে পাকড়াও করবার।

তাড়াহুড়োতে ঘড়ি দেখা হয়নি,তবে রাত দেড়টা কি দুটো বেজেছে এইটুকু আন্দাজ করতে পারছি, লোকজন তো দূর রাস্তায় কোনপ্রকার যানবাহন পর্যন্ত চোখে পড়ছে না,চারদিকে কেবল শুন্যতা আর শুন্যতা।

মেয়েটা ছুটতে ছুটতে এক পর্যায়ে হোঁচট খেয়ে পড়লো,সৃষ্টিকর্তা যেন আজ একটু বেশিই সহায় আমার,তা না হলে এর থেকে বড়ো সুযোগ আর কি হতে পরে।সর্বশক্তি দিয়ে ছুটে যাই আমি,সে উঠে পা বাড়াতে না বাড়াতে হাতটা খপ ধরে ফেললাম আমি।তারপর ওর মুখ থেকে ওড়নার পর্দাটা সরিয়ে নিলাম।

যা অনুমান করেছিলাম তাই,রাস্তায় দেখা হওয়া সেই মেয়েটা।নিজের সামনে যেন শ্রেষ্ঠাকেই দেখেছি আমি।মেয়েটা নিজেকে ছাড়িয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে,কিন্তু আমার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করা যে এতো সহজ নয় তার জন্য।

—কোথায় পালাচ্ছো,তোমার সব খেলা শেষ।ধরে ফেলেছি তোমায় আমি…..
(তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম আমি!)

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here