#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_১৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
আভার কাধে থুতনি রেখে আহনাফ আভার দিকে চেয়ে আছে। আভার দৃষ্টি ছটফটে। বারবার আহনাফের কোল থেকে উঠে যাওয়ার জন্যে জোরাজোরি করছে। কিন্তু আহনাফের ওমন শক্তপোক্ত হাত থেকে ছাড়া পাওয়া ততটা সহজ না। আহনাফ আভার ছটফটানি দেখে মুচকি হাসলো। আভার অস্বস্তি বুঝতে পেরে নিজেই ছেড়ে দিলো ওকে। আহনাফ ছেড়ে দিতেই আভা ধড়ফড়িয়ে দাড়িয়ে গেলো। আহনাফের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আভার চোখ গেলো আহনাফের নাকের দিকে। নাকের নীচে রক্ত জমে আছে। রক্ত দেখেই আভা স্তব্দ হয়ে গেলো। জলদি আহনাফের দিকে এগিয়ে এসে আহনাফের নাকের দিকে ঝুঁকে বললো,
— ” রক্ত..! রক্ত কোথা থেকে আসলো? আপনি ব্যাথা পেলেন কি করে? ”
আভার ব্যাকুল কণ্ঠ শুনে আহনাফ চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে নিজের নাকে হাত দিলো। রক্ত মুছে ফেলেছিলো তো। আবার রক্ত এলো কোথা থেকে? আহনাফ নাকটা কিঞ্চিৎ টেনে বললো,
— ” আরে, ছাড়ো। কিছু না এসব। সামান্য একটা চোট।”
আভা চোখ রাঙিয়ে বললো,
— ” এটা সামান্য চোট? হুঁ? ”
হঠাৎ আহনাফ আভার কোমরে হাত দিয়ে আভাকে নিজের দিকে টেনে নিলো। আভা ভরকে গেলেও চোখ মুখ থমথমে করে বললো,
— ” সবসময় আপনার মাথায় এসব ঘুরে? ছাড়ুন এখন। ফার্স্ট এইড বক্স কই? ”
আহনাফ আভার নাছোড়বান্দা কথা শুনে আভাকে ছেড়ে দিলো। বাচ্চাদের মত করে মুখ ফুলিয়ে বললো,
— ” বকছো কেনো? সামান্য একটা চোট। এত হাইপার হওয়ার কিছু নেই। ”
আভা আহনাফের কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিলো। রাগ উঠছে তার। নাক থেকে রক্ত পড়া মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। তারমধ্যে রক্ত নাকে জমে গেছে। নিশ্চই অনেক আগেই এই চোট পেয়েছেন। আর এই লোকটা সেটার কেয়ারও করেনি। কি অদ্ভুত..! আভা এবার নিজেই ব্যাগ রেখে কেবিনে থাকা ড্রয়ারের দিকে এগিয়ে গেলো। ড্রয়ার সবগুলো তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো ফার্স্ট এইড বক্স পেলো না। ডাক্তারের চেম্বারে ফার্স্ট এইড বক্স নেই? বিরক্ত লাগছে আভার।
হঠাৎ আহনাফ আভার দিকে একটা ফার্স্ট এইড বক্স এগিয়ে দিলো। আভা আহনাফের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স হাতে নিলো। থমথমে মুখে বললো,
— “যান। চেয়ারে গিয়ে বসুন। ”
আহনাফ মিটমিটিয়ে হেসে চেয়ারে গিয়ে বসলো। আভার ওমন ব্যস্ততা তার খুব ভালো লাগছে। নিজের জন্যে আভার মুখে চিন্তিত ভাব দেখে অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করছে। আর যায় হোক আভা তার অসুস্থতা নিয়ে চিন্তা করছে? এটাও তো এক বড় পাওনা। আভা গটগট করে আহনাফের সামনে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
আভা তুলোয় স্যভলন নিয়ে আলতো করে আহনাফের নাকে ছুয়ালো। সঙ্গেসঙ্গে নাকের জায়গাটা জ্বলে উঠতেই আহনাফ ভ্রু কুঁচকে ফেললো। আভা ভয় পেয়ে তুলো সরিয়ে বললো,
— ” জ্বলছে? ”
আহনাফ মুচকি হেসে মাথা নেড়ে না বোধক উত্তর দিলো। আভা আবারও নাকে তুলো ছুয়ালো। রাগী গলায় বিড়বিড় করলো,
— ” জ্বলুক। বেশি করে জ্বলুক। আপনার দোষেই হয়েছে। জ্বলুক বেশি করে। ”
আহনাফের আভার কথা শুনে হাসি পেলো। তবুও মুহূর্তে হাসাটা হলো গুরুতর অন্যায়। যেকোনো সময় ম্যাডাম ক্ষেপে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। তাই আহনাফ হাসি চেপে মুখখানা নিষ্পাপ করে বললো,
— “মায়া লাগে না তোমার? আস্তে করো। উফফ! ”
আহনাফের কাতর কণ্ঠ শুনে আভা সঙ্গেসঙ্গে হাত থামিয়ে ফেললো। আহনাফের দিকে তাঁকিয়ে ব্যাকুল কণ্ঠে বললো,
— ” সরি, সরি। বেশি ব্যাথা পেয়েছেন? ”
আহনাফ মুচকি হেসে আভার দিকে চেয়ে রইলো। আচানক আহনাফ আভার ঘাড়ের পিছন দিকটা শক্ত করে ধরে আভার মুখ নিজের দিকে টেনে আনলো। আভা থতমত খেয়ে আহনাফের দিকে চেয়ে আছে। আহনাফ আভার দিকে তাকিয়ে হিড়হিড় কণ্ঠে বললো,
— “তুমি আমার। প্রতিটা মুহূর্ত আমারই থাকবে। আমি তোমার ভাগ কাউকে দিবো না। কাউকে না। বুঝলে? ”
আভা চোখ ছোটছোট করে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ এমন কথার কারণ কি? আভা ধরতে পারলো না। আভা শুধু এটুকু বললো,
— ” ছাড়ুন। আগে ড্রেসিং শেষ করতে দিন। ”
আহনাফ ছেড়ে দিলো না। বরং আভার ঘাড়টা আরো শক্ত করে ধরে গভীর গলায় বললো,
— ” ছাড়বো না। আগে বলো ” তুমি শুধুই আমার। ”
আহনাফের কণ্ঠে জেদের আভাস। আভা আহনাফের ওমন বাচ্চাদের মত জেদ দেখে হেসে ফেললো। তারপর আঙ্গুলে থাকা আহনাফের দেওয়া এনগেজমেন্টের আংটি দেখিয়ে বললো,
— ” আপনার দেওয়া রেজিস্ট্রিশন আংটি নিয়ে ঘুরছি। তো অবেসলি আমি আপনারই। সো, এত ইন্সিকিউর হওয়ার কিছু নেই। কাম ডাওন। ”
আহনাফ আভার কথা শুনে শান্ত হলো। আভাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো ও। আভা মুচকি হাসলো। বাকিটা ড্রেসিং শেষ করেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো।
আভা ফার্স্ট এইড বক্স ড্রয়ারে রেখে টেবিল থেকে সাইড ব্যাগ কাধে ঝুলালো। আহমদের দিকে চেয়ে বললো,
— ” সো, ডাক্তার সাহেব। এখন আপনি রোগী দেখুন।আমার যেতে হবে। বাই। ”
আহনাফের আভার সাথে আরো সময় কাটাতে মন চাচ্ছে। মন চাচ্ছে আভার সাথে ও নিজেই বেরিয়ে যেতে। কিন্তু তাতো সম্ভব না। ও একটা দায়িত্বশীল প্রফেশনে আছে। যেই দায়িত্ব হেলা করা ওর দ্বারা সম্ভব না। তাই আহনাফ মুচকি হেসে আভাকে বিদায় দিলো।
____________________
তপ্ত দুপুর আজ। সূর্য মনে হয় আজ প্রচন্ড রেগে আছে। রোদের সে কি তীব্রতা..! এই মুহূর্তে মাটিতে যদি খালি পায়ে হাঁটা যায় তবে নির্ঘাত পা দুটো জ্বলে অঙ্গার হয়ে যাবে। তবে আভার পায়ে জুতো। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে রিকশা খুঁজছে ও। আজ হয়তো রিকশার মামারাও পণ করেছে। কাউকে ভাড়া নিবে না। দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আভার পা ধরে এলো।
আভা এবার হাটা ধরলো। হাঁটতে গিয়ে রিকশা পাওয়া যেতে পারে..! খালি রিকশা খুঁজতে হঠাৎ আভার চোখ গেলো একটা হুডতোলা রিকশার দিকে। আভা রিকশায় বসে থাকা দুজন কপোত কপোতীর দিকে তাকিয়েই থমকে গেলো। ও কি ঠিক দেখছে? চোখে ছানি পড়লো না তো? আভা ওড়নার অগ্রাংশ দিয়ে চোখ মুছে আবারও তাকালো। মিনহাজ ভাইয়া?
আভা আরো দু একটা কথা চিন্তা করবে তার আগেই মিনহাজের রিকশা আভাকে পেরিয়ে চলে গেলো। আভা এখনো শক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মিনহাজ ভাইয়া প্রেম করছেন? আভা তরিগরি করে ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো। ফোনে মিনহাজের নাম্বার ডায়াল করে কানে ধরলো।
বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর মিনহাজ ফোন ধরলো আভা সালাম দিয়েই জিজ্ঞেস করলো,
— ” কই তুমি ভাইয়া? ”
ওপাশে মিনহাজ কিছুক্ষণ নীরব থাকলো। তারপর একদমে বললো,
— ” অফিসে। কেনো? কোনো দরকার? ”
আভা অবাক হলো ভাই তার মিথ্যে কথা বলছে? হায় আল্লাহ..! প্রেমে পড়ার প্রথম লক্ষণ হলো মিথ্যে বলা। তার মানে আভার সন্দেহই ঠিক? আভা নিজেকে সামলে মিনহাজের উদ্দেশ্যে বললো,
— ” না। মা ফোন করতে বলেছেন। তাই ফোন দিলাম। রাখছি এখন। ”
আভা ফোন কেটে দিলো। ফোন আবারও ব্যাগে পুড়ে রাস্তায় হাটা শুরু করলো। এলোমেলো পা রাস্তায় ফেলে নিজেই নিজেকেই প্রশ্ন করলো,” মিনহাজ ভাই প্রেম করছেন? ”
#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_১৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
সন্ধ্যা নেমেছে শহর জুড়ে। সেই সাথে নেমেছে রিমঝিম বৃষ্টি। বৃষ্টির ফোঁটা কাঁচের জানালার গড়িয়ে পড়তেই শব্দ হচ্ছে” টিপটপ। ” আভা পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিলো। টেবিল জুড়ে বই খাতার ছড়াছড়ি। আভার কানে বৃষ্টির শব্দ যেতেই আভা উঠে জানালার কাছে গেলো। মুখে মুচকি হাঁসি তার। পৃথিবীতে বৃষ্টির মতো পবিত্র কিছু নেই। বৃষ্টি জিনিসটা বরাবরই আভার খুব প্রিয়। তার থেকে বেশি প্রিয় বৃষ্টির শব্দ। মন ছুঁয়ে যায় শুনলে।
আভা জানালায় মাথা ঠেকিয়ে নিচে তাকালো। আভাদের বিল্ডিংটা একদম চৌরাস্তার মাথায় হওয়ায় নিচ থেকে গাড়ি-ঘোড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ আভার চোখ নিচে একটা বাইকের দিকে যায়। মিনহাজ ভাই এসেছেন। আজকে তো তার খবর আছে। আভা জলদি ওড়না গায়ে দিয়ে সদর দরজার দিকে এগুলো।
মিনহাজ কলিং বেল বাজানোর সাথেসাথে আভা দরজা খুলে দিলো। বোনের এমন তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলতে দেখে মিনহাজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো আভার দিকে। আভা দাত কেলিয়ে মিনহাজের উদ্দেশ্যে বললো,
— ” ভিতরে আসো না, ভাইয়া। ”
মিনহাজ মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে আভাকে পাশ কাটিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলো। মিনহাজ নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে চিৎকার করে ডাক দিলো,
— ” মা, মা। আমাকে এক কাপ চা দিও। ঠাণ্ডা লাগছে অনেক। ”
মিনহাজ রুমে প্রবেশ করেই কাবার্ড থেকে জামা কাপড় নিতে শুরু করলো। বৃষ্টিতে ভিজে খুব ঠাণ্ডা লাগছে। গোসল করে ঝটপট কম্বলের নিচে ঢুকে যেতে হবে। কাথায় ঠান্ডা মানবে না মনে হচ্ছে। এখন জ্বর না আসলেই ভালো। আভা মিনহাজের পিছু পিছু রুমে আসলো। আভা মিনহাজের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে হাসিহাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,
— ” ভাইয়া, আমি চা করে দিবো? ”
মিনহাজ কানে কথাটা যেতেই ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। এ তো ভূতের মুকুর রাম নাম। মিনহাজ কাপড় হাতে ঝুঁলিয়ে কাবার্ডের দরজা লাগিয়ে ফেললো। আভার মুখোমুখি হয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— ” তুই চা করে দিবি? ”
— “হ্যাঁ।আজ ভাবলাম ভাইয়ের একটু সেবা করি। আফটার অল ভাই আমার কত কাজ করে এসেছে। খুব টায়ার্ড হয়ে গেছে। ”
মিনহাজ আভার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে কাপড় হাতে চেয়ারে এসে বসলো। পা থেকে মোজাজোড়া খুলতে খুলতে বললো,
— ” যা। বানিয়ে আন। কিন্তু যদি চা-টা খেতে খারাপ হয় তাহলে আমি তোকে কাঁচা চিবিয়ে খাবো। ”
মিনহাজের কথা শোনে আভার কোনো হেলদুল হলো না। গুটিগুটি পায়ে মিনহাজের পাশে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কিছু জিজ্ঞেস করবে করবে বলেও করা হচ্ছে না। বাক্যটা কেমন করে সাজাবে তাই ভেবে উঠতে পারছে না। মিনহাজ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আভার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
— ” কিছু বলার হলে বল, না হলে ফুট এখান থেকে। ”
আভা একটু হাসলো। ভাইয়াকে আজ জব্বর পঁচানো যাবে। আভা তাই ঠোঁট চেপে হেসে জিজ্ঞেস করলো,
— ” ভাই, মেয়েটা কে ছিলো? ”
মিনহাজ কিছুক্ষণ থমকে দাড়িয়ে গেলো। শার্টের বোতামে থাকা হাত দুটো থেমে আভার দিকে তাকালো। চোখে প্রশ্ন তার, “এ কি করে জানলো? “আভা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
— ” বলো,বলো। মেয়েটা কে ছিলো? আমি কিন্তু কাউকে বলবো না। মাকেও না। ”
মিনহাজ হাসলো। শার্টের সবগুলো বোতাম খুলে ভিজে ছিপছিপে শার্টটা শরীর থেকে ছাড়িয়ে আভার মুখের দিকে ছুঁড়ে ফেললো। আভা সঙ্গেসঙ্গে নাক কুঁচকে শার্ট এক ছিটকে বিছানার উপর ফেলে দিলো। ছিঃ! ভিজে শার্ট তার মুখের উপর ফেলে দিলো। জঘন্য! মিনহাজ বাথরুমে যেতে যেতে বাঁকা হেসে বললো,
— ” তোর ভাবি ছিলো।”
আভার কানে কথাটা যতক্ষণে গেলো ততক্ষণে মিনহাজ বাথরুমের দরজা আটকে দিয়েছে। আভা ভ্রু কুঁচকে বাথরুমের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি নির্লিপ্ত উত্তর..! কোনো লুকোচুরি নেই। মাকে তবে বলতে হচ্ছে, কুমার ভাইয়ের বিয়ের লাড্ডু জলদি বানিয়ে ফেলা উচিৎ। আভা মিনহাজের ভিজে শার্ট নিয়ে ওয়াশিং মেশিনে রেখে দিলো। তারপর নিজের চুলগুলো নেড়েচেড়ে মায়ের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। খুশির খবর দিতে দেরি কিসের ?
_____________________
মায়ের রুমে দরজার সামনে যেতেই ভিতর থেকে মা বাবার গম্ভীর কথাবার্তা ভেসে আসলো। হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা চলছে। আভা একনজর রুমে উকি দিলো। বাবা চেয়ারে ফোন হাতে বসে আছেন। মা পালঙে বসে বাবার দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন। আভা সেখানে আর দাড়ালো না। রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। বিয়ের ব্যাপারটি পরেও বলা যাবে। এখন সেই বিশেষ মুহূর্ত আসেনি।
মিনহাজ ভাইকে চা দিয়ে আভা রুমে বসে পড়ছিলো। একটু পর দরজা খোলার শব্দ পিছন ফিরলো আভা। মা এসেছেন। চোখ মুখ গম্ভীর তার। আভার মা এসে বিছানায় বসলেন। ফ্যানের নিচে বসে মাথার উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে চুলগুলো খুলে দিলেন। ভিজে চুল এতক্ষণ খোঁপা করে রেখেছিলেন।
মায়েদের নিজের দিকে তাকানোর সময় কই? সংসারের যত্ন নিতে গিয়ে তারা নিজেদের কথাই ভুলে যায়। অযত্নের কারণে চোখের নিচে এক ইঞ্চি জুড়ে কালি লেপ্টে যায়, বার্ধক্যের দাগ পড়ে মুখের আনাচে কানাচে। তবুও মায়েরা সুন্দর। অতুলনীয় সুন্দর সকল মায়েরা।
আভা চেয়ার ছেড়ে মায়ের পাশে এসে বসলো। কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে অতঃপর আলতো গলায় ডাক দিলো,
— ” মা..? ”
আভার মা আভার দিকে তাকালেন। কতক্ষণ শান্ত থেকে তারপর বললেন,
— ” তোর দাদুমনি অসুস্থ। ”
দাদুমনি অসুস্থ কথাটা কান গহ্বরে প্রবেশ করতেই আভা চমকে গেলো। তার ছোট্ট জগতের শ্রেষ্ঠ এক মানুষকে হারানোর ভয় গ্রাস করলো মনের সর্বত্রই। আভা কাপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— “কখন? কালই ত কল দিলাম। ভালো আছেন বললেন। ”
— ” আজ সকাল থেকে প্রেসার নিল হয়ে, ডায়বেটিস বেড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেছিলেন। হাত মচকে গেছে। হাঁটুর অসুখ টাও বেড়েছে বললেন। কতবার বললাম এখানে চলে এসো। একসাথে থাকবো। অসুস্থও কম হবে। শুনলে তো আমার কথা। সেই এক কথা মরার ঘর ফেলে কোথায় আসবো আমি। ”
আভা মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। বিয়ের পর থেকে শাশুড়ির প্রতি তার দায়িত্ববোধ বেশি ছিলো। এক ছেলের বউ তিনি। সেই কারণে শাশুড়ির বড্ড মায়ার ছিলেন। আভার মা হঠাৎ বললেন,
— ” তোর দাদুমনি আহনাফকে দেখতে চাইছেন। এখন তো তোদের বিয়ে সম্ভব না। তাই নাত জামাইকে সচক্ষে দেখেই মরতে চান। কি করি বলতো এখন? গাড়ি করে ঢাকা শহরে উনাকে আনাও মুশকিল। হাঁটুর ব্যাথা যা বেড়েছে। এখন তো আহনাফকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ”
— ” উনাকে বলে দেখো একবার। রাজি হলেও হতে পারেন।”
— ” কোন মুখে বলবো? ও ডাক্তারি রেখে যাবে কি করে ওতো দুর? তোর বাবা এই নিয়ে খুব চিন্তায় আছেন।”
আভা মায়ের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। ব্যাপারটা সত্যিই অনেক জটিল। আভা মায়ের কাঁধে হাত দিয়ে ভরসা দিলো সব ঠিক হয়ে যাওয়ার। মেয়ে সন্তানই মায়ের সবথেকে কাছের।মেয়েরাই মায়ের কষ্ট সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারে। আভাও ঠিক তদ্রুপ।
#চলবে