#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৩১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
রাত নেমেছে শহরে। রাতের প্রতীক হিসেবে আকাশে উঠেছে বিশাল এক চাঁদ। ঈষৎ হলদে রং তার! রাতের হিম আভার গায়ে ছোঁইয়ে দিতেই আভার ঘুম ভাঙ্গলো। আহনাফের রাগের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে এসেছিল, বলা মুশকিল! আভা চোখ খুললো। আড়মোড়াও ভাঙ্গলো।
— ” বসে থাকা অবস্থায় কেউ ঘুমিয়ে পড়ে, ডাফার? ”
পাশ থেকে এক ভরাট কণ্ঠস্বর শুনে আভা হুড়মুড়িয়ে পাশ ফিরলো। আহনাফ সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। হাতে নতুন এক ফোন। এই ফোনটা কবে কিনলেন? আগে তো দেখেনি। যায় হোক, উনি কখন আসলেন? আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর? হবে, হয়তো। আভা কোনো কথা বললো না। বরং, সকল ভয়কে প্রশ্রয় না দেওয়ার ভয়ংকর এক পণ করে চুপ করে রইলো। মুখে বিশাল এক কুলুপ এঁটে ভাবলো, ‘ এই নিষ্টুর মানুষের সাথে কথা বলাই উচিৎ না। মোটেও না! ‘
কিন্তু, এতে আহনাফের মধ্যে কোনো ভাবাবেগ’ই লক্ষ্য করা গেলো না। সে ধীরে-সুস্থে হাতের ফোনটা পকেটে রেখে উঠে দাঁড়ালো। বেডের লাগোয়া টেবিল থেকে আভার মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতে নিয়ে আভার পাশটায় বসলো। ফাইলটা খুলে উল্টে-পাল্টে দেখলো। ভ্রুযুগল কুঁচকানো, দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে সে। এই গম্ভীর অবস্থায় আহনাফকে পাক্কা এক চকলেট বয় লাগছে। যা দেখে, আভার ছোট্ট মনটা হাঁসফাঁস করে উঠলো। বুকের ভিতর ভয়ংকর ঝড় সবকিছু তছনছ করে দিতে লাগলো। ইশ! মানুষটা এত সুন্দর কেন? একটু বদসুরুত হলে কি এমন দোষ হতো? উফ! আর তাকানো যাচ্ছে না! মনে হচ্ছে, তাকালেই একটা-দুটি ভুল করা যাবে অনায়াসে। হয়তো, এ কারণে আভা নিজের পণ রক্ষা করতে পারবে না। তখন? না, না! তাকানো যাবে না। আভা চোখ ফেরালো। আহনাফ ফাইল বন্ধ করে বালিশের পাশে রাখলো। আভার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো,
— ” কোমর আর পায়ের ব্যথা কেমন এখন? ”
আভা ছোট্ট করে বললো,
— ” ভালো। ”
আহনাফ একটু পিছিয়ে পায়ের কাছে বসলো। পায়ের ফ্র্যাকচার হওয়া জায়গায় আস্তে করে আঙ্গুল চেপে ধরলো। আভা কিছুটা ব্যথা পেলো। তবে, ব্যথাটা সহনীয়! আহনাফ জিজ্ঞেস করলো,
— ” ব্যথা হচ্ছে? ”
আভার হঠাৎ করেই রাগ উঠলো। মনকে ক্ষতবিক্ষত করে, এখন বাহ্যিক ব্যথার কথা জিজ্ঞেস করছে? আশ্চর্য! আভা দাত খিঁচিয়ে বলে উঠলো,
— ” আমার ব্যথার কথা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। ছাড়ুন আমার পা। ”
আভা কথাটা বলে পা বটে নিতে চাইলো। কিন্তু আহনাফ হাত দিয়ে পা আটকে নিলো। আভার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
— ” যেটুকু জিজ্ঞেস করেছি, সেটুকুর উত্তর দাও। বেশি কথা বলো কেন? ”
আভা মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে তাকালো। ফ্র্যাকচার হওয়া জায়গায় আহনাফ দুটো আঙ্গুল আরো একটু চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
— ” এবার ব্যথা করছে? ”
আভা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলেও, মাথা ডানে-বায়ে নাড়ালো। যার অর্থ, ও হার মানবে না। তবে, আভা মানা করলেও আহনাফ সেটা বুঝতে পারলো। আভার রন্ধ্র-রন্ধ্র ওর চেনা! আহনাফ এবার বাঁকা হেসে আরো জোরে আঙ্গুল চেপে ধরলো। আভা এবার সজোরে চিৎকার করে উঠলো। রেগে বলে উঠলো,
— ” মেরে ফেলতে চান, নাকি? মেরেই ফেলুন। একটা গেলে আরেকটা আসবে। তাইনা? ”
আহনাফ পা থেকে আঙ্গুল সরালো। এগিয়ে এসে আভার পাশে বসলো। আভা এখনো চোখ খিচে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে, ওর দুচোখ দিয়ে আহনাফকে ভস্ম করে দিলেই ওর শান্তি! আহনাফ আভার চোখের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে হাসলো। নরম গলায় বললো,
— ” মেরেই তো ফেলতে চাই। তাহলে, আর জ্বালাবে না আমাকে। স্বপ্নেও এসে ধরা দিবে না। চোখ খুললেও তুমি হাসবে না। মেরেই ফেলবো একদিন! ”
আভা কি বলবে, কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে, খুঁজে পেলো না। তবে কি, ওর মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া বাটন নষ্ট হয়ে গেলো? আভা চোখ সরালো। তাকালো, অন্যপাশে। আহনাফের ওমন স্থির চোখের দৃষ্টিতে আভাকে মেরে ফেলছে। আভা নিজের মনের ধ্বংস দেখতে পায়, ওই দুচোখে! আহনাফ বেড ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ড্রয়ার থেকে ঔষুধের বক্স বের করে আবারও বেডে বসলো। ঔষুধের বক্স থেকে দেখে শুনে ঔষধ বের করতে করতে জিজ্ঞেস করলো,
— ” এত জেলাসির কারণ কি? আগে তো এমন ছিলে না।হুট করে এত পরিবর্তন? কাহিনী কি? ”
আভা আহনাফের প্রশ্নে থতমত হয়ে গেলো। সে কি, সত্যিই জেলাস? কিন্তু, কেনো? আহনাফকে নিয়ে তার জেলাসির কারন কি? আভা আমতা আমতা করে বললো,
— ” কে জেলাস? ”
আহনাফ ইতিমধ্যে ঔষধ বের করে আভার দিকে এগিয়ে দিয়েছে। চোখের ইশারায় ঔষধ নিতে বললো। আভা আহনাফের হাত থেকে ঔষুধ নিলো। আহনাফ পানি এগিয়ে দিতে দিতে উত্তর করলো,
— ” তুমি খুব ভালো করে জানো, আমি কার কথা বলছি। ”
আভা একদমে ঔষধ খেয়ে ফেললো। আহনাফের কথায়, তার বড্ড অস্বস্তি লাগছে। সে জেলাস, ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে। এক অদ্ভুত অনুভূতি! যেই অনুভূতির সাথে ও মোটেও পরিচিত নয়। আভা মিথ্যে বললো,
— ” হুহ! আমি মোটেও জেলাস না। আর আপনাকে নিয়ে জেলাসির কি আছে? ”
আহনাফ হাসলো তার প্রটিউত্তরে! তবে, এর বিপরীতে কোনো কথা বললো না। পকেট থেকে ফোন বের করে কাকে কল দিলো। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতে আহনাফ বললো,
— ” ৩১৪ নাম্বার রুমের রোগীর ডিসচার্জের ব্যবস্থা করো। ”
— ” ওকে, স্যার। ”
আহনাফ ফোন কেটে দিলো। আভা একটা জিনিস লক্ষ্য করলো, আহনাফ যখন ওর সাথে কথা বলে, তখন মনে হয় আহনাফ খুব উচ্ছল মনের ছেলে। কিন্তু,যখন বাইরের মানুষের সাথে কথা বলে, তখন মনে হয় ও খুব গম্ভীর প্রকৃতির। এক মানুষের দুই রূপ? বড়ই অদ্ভুত!
আহনাফ আভার ঔষধ পত্র গুছাতে গুছাতে এক ভয়ঙ্কর কথা বললো,
— ” আমার শাস্তি কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। সো, বি প্রিপায়ার্ড বেবী। ”
আহনাফের কথা শুনে আভার আত্মারাম লাফিয়ে উঠলো। একটু আগে হেসেহেসে কথা বলা দেখে আভা ভেবেছিল, আহনাফ সব ভুলে গেছে। কিন্তু, এ তো দেখছি খুব শেয়ানা!
________________________
আভা বাসায় এসেছে, প্রায় দুঘন্টা হলো। ওদের বাসার অবস্থা রমরমা। আভার অসুস্থতার খবর শুনে অনেকেই দেখতে এসেছে আভাকে। আভা বিছানায় বসে ফল খাচ্ছে। আম, নাশপাতি, আপেল টুকরো টুকরো করে কেটে থালাভর্তি করে আভার সামনে রাখা হয়েছে। আভা একটা একটা করে ফল খাচ্ছে আর সবার কথা শুনছে। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে তার। কড়া ডোজের ঔষধের ফলস্বরূপ! কিন্তু, বাসায় ঘুমানোর কোনো পরিবেশ নেই। তার রুমে কয়েকজন বসে আছে। সবাই গল্প গুজবে মগ্ন। এদের ফেলে আভা ঘুমাবে কি করে?
হঠাৎ রুমে আভার মা প্রবেশ করলেন হন্তদন্ত হয়ে। এসেই সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
— ” ভাবি, আপনারা আমার রুমে চলে আসেন। আভা একটু রেস্ট নিক। জার্নি করেছ তো। ”
আভার মায়ের কথা শুনে সবাই একে একে রুম থেকে চলে গেলেন। আভার মা যাওয়ার আগে আভাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আস্তে করে বললেন,
— ” আহনাফ না বললে আমি তো জানতেই পারতাম না , তোর যে এখন ঘুমের সময়। তুইও তো একবার বলতে পারতি। ”
আভা মায়ের দিকে চেয়ে বললো,
— ” তুমি তো রান্নাঘরে ছিলে। কিভাবে বলতাম? ”
আভার মা হাসলেন। আভার মাথায় আরো দুবার হাত চালিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আভা মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে হাসলো। থাক! তার জীবনে নিজের পরিবার ছাড়াও আরো একজন যত্ন নেওয়ার মানুষ আছে। আচ্ছা, আহনাফের পারেন কিভাবে? এতদিক তার খেয়াল থাকে কি করে? ক্লান্ত হন না উনি? সবদিক সামলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেন না?কিন্তু আভা এটা জানলো’ই না, ভালোবাসলে সবই পারা যায়। ভালোবাসার শক্তি, পৃথিবীর সকল শক্তিকেও হার মানায়!
#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৩২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
রাতের আঁধার কেটে সকাল হলো। কালো আকাশ সাদা রঙে সাজলো। আভা মাত্রই ঘুম ছেড়ে উঠলো। ফ্রেশ হতে হবে এখন। কিন্তু, আভা কারো সাহায্য ছাড়া একা হাঁটতে পারে না। আভা বিছানা থেকে সজোরে ডাক দিলো,
— ” মা, মা! ”
আভার ডাক দেওয়ার প্রায় এক মিনিট পর আভার মা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করলেন। আভার পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
— ” ফ্রেস হবি? ”
আভা মাথা নাড়লো। হ্যাঁ, ফ্রেস হবে। আভার মা আভার হাত ধরে বিছানা থেকে নামতে সাহায্য করলেন। বাথরুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
— ” একা পারবি? আমি আসবো ভিতরে? ”
আভা মানা করলো। বললো,
— ” না, লাগবে না। পারবো আমি।তুমি রুমেই থেকো কিন্তু। ”
আভার মা সম্মতি দিলেন। আভা বাথরুমে চলে গেলো।
পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে বের হলো আভা। আভার মা মেয়েকে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে আসলেন। আভা বিছানায় বসলো। আভার মা জিজ্ঞেস করলেন,
— ” নাস্তা নিয়ে আসি? ”
— ” আচ্ছা! ”
আভার মা চলে গেলেন। আভা দু হাত দিয়ে পা বিছানার উপরে তুললো। বাম পায়ে ফ্র্যাকচার বেশি হয়েছে। সে পায়ে হাঁটু অব্দি লম্বা সাদা রঙের ব্যান্ডেজ। যা ধীরে ধীরে ঈষৎ হলদে রঙ ধারণ করেছে। পায়ের দিকে তাকিয়ে আভার তুমুল মন খারাপ হলো। নিজেকে পঙ্গু, পঙ্গু মনে হচ্ছে। কবে নাগাদ ওর পা ঠিক হবে, বলা মুশকিল! কিন্ত, এভাবে অক্ষম হয়ে বসে থাকতেও বিরক্ত লাগছে। কিন্তু, ওই যে, কপাল! কপালে না থাকলে ঘি, ঠকঠকালে হবে কি?
আভার মা রুমে আসলেন। এক হাতে প্লেট, অন্য হাতে পানির গ্লাস। পানির গ্লাস টি টেবিলে রেখে আভার মা আভার পাশে বসলেন। আভা প্লেটের দিকে তাকালো। প্লেটে একটা ডিম অমলেট আর পরোটা। আভার মা আভাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে লাগলেন। আভা খেতে খেতে প্রশ্ন করলো,
— ” আমার ফোন কোথায়, মা? ”
আভার মা কঠোর কণ্ঠে বললেন,
— ” ভেঙে গেছে। ”
‘ ফোন ভেঙে গেছে ‘ শুনে আভার রাগ লাগলো। এই ফোন কতশত অনুরোধ আর কাকুতি-মিনতির ফল ছিলো! কিন্তু ভেঙে গেলো। ধ্যুর! আভা মাকে আদুরে কণ্ঠে বললো,
— ” নতুন ফোন কিনে দিবে না? ”
— ” না। ”
আভার মায়ের স্পষ্ট উত্তর। আভার দুঃখ দুঃখ লাগলো। ফোন না পেলে ওর মৃত্যু নিশ্চিত। ফোন ছাড়া আজকাল চলা যায় নাকি? আভা মাকে মাখন দিতে লাগলো। বললো,
— ” মা, দেখো আমার অনলাইন কত কাজ থাকে। সেগুলো করবো কিভাবে? তাছাড়া, একবার অভ্যাস হয়ে গেলে, ফোন ছাড়া চলা যায় নাকি? তুমিই বলো। ”
প্লেটের খাবার প্রায় শেষের দিকে। আভার মা, আভার দিকে পানি এগিয়ে দিলেন। আভা পানি খেয়ে আবারো মায়ের দিকে তাকালো। আভার মা উঠে দাঁড়ালেন। থমথমে গলায় বললেন,
— ” অ্যাডমিশনের রেজাল্ট দিক। মেডিক্যালে চান্স পেলে, ভালো মোবাইল কিনে দিবো। এখন এভাবেই থাকো। ”
আভার মা বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। আভা কপাল চাপড়ালো। মা একবার যা বলেছেন, সেটা হাজারবার বললেও পরিবর্তন হবে না। কিন্তু, যদি চান্স না পায়? তবে?
__________________
বিকেল হয়ে এসেছে। আভা বিছানায় বসে মায়ের মোবাইল দেখছে। মায়ের মোবাইল হচ্ছে আস্ত এক মসিবত! মায়ের ভাই-বোনের কলের যন্ত্রণায় ফোন ব্যবহার করা মুশকিল। কিন্তু, ঐ যে, উপায় নেই!
— ” হ্যাই ননদিনী..! ”
আরোহীর গলা শুনে আভা মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো। দরজায় আরোহীকে দেখে আভা একপ্রকার লাফিয়ে উঠলো। মোবাইল একপাশে রেখে উচ্ছাস নিয়ে বললো,
— ” আরে ভাবী। তুমি? আসো, আসো। ”
আরোহী রুমে প্রবেশ করলো। আভার পাশে বসে আভাকে জড়িয়ে ধরলো। আভা জিজ্ঞেস করলো,
— ” কতদিন পর তোমাকে দেখলাম। তুমি তো আসোই না আমাদের বাসায়। ”
আরোহী হেসে জবাব দিলো,
— ” বিয়ের আগে শশুরবাড়ি বেশি আসতে নেই, ননদিনী। নজর লাগে। ”
আভা মুখ ফুলালো। বললো,
— ” আমার জন্যে তোমাদের বিয়েটা পিঁছিয়ে গেলো। খারাপ লাগছে। ”
আরোহী হাসলো। উজ্জ্বল ফর্সা মুখে হাসিটা ভারী সুন্দর দেখালো। ঠোঁটের হাসি বজায় রেখে বললো,
— ” একদিন থেকে ভালোই হয়েছে। আমারও এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। ”
আভা অবাক হলো। বললো,
— ” কেনো? কেনো? ”
— ” ফ্যামিলিকে ছেড়ে আসতে মন চাইছে না। ”
— ” আরে, চিন্তা করো না তো। আমাদের ফ্যামিলিও তো এখন থেকে তোমার ফ্যামিলি। আর, তোমার প্রেমিকপুরুষ আছে না। সে থাকতে, এত চিন্তা কিসের? ”
মিনহাজের কথা শুনেই আরোহী লজ্জা পেলো। তবে, বাইরে সেটা প্রকাশ করলো না। বরং, আড়াল করলো। আভা আবারও বললো,
— ” তুমি জানো, আব্বু যখন তোমাদের ব্যাপারটা মেনে নিয়েছিল, ভাইয়া তো রীতিমত আব্বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো। কেঁদেও ছিলো একটু। বুঝতে পারছো, কত গভীর প্রেম তোমাদের। আহা! জিও হোক এমন প্রেমের! ”
আরোহী লজ্জায় মিঁইয়ে গেলো। মিনহাজ কেঁদেছিলো ওর জন্যে? অসম্ভব ব্যাপার-স্যাপার, বটে। আরোহী আভার কাধে একটা চাপর দিয়ে হেসে বললো,
— ” দিন দিন পাজি হচ্ছো তুমি। দাঁড়াও, আহনাফকে বলে তোমার বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। তখন বুঝবে, প্রেম কাহাকে বলে! ”
আরোহীর কথা শুনে আভা হেসে দিলো। কে বলবে, আজই তাদের প্রথম কথা বলা? প্রথম একত্রে বসা? প্রথম মন খুলে গল্প করা? সবটাই সম্ভব হয়েছে, দুজনের মধ্যকার সরল মনের জন্যে। মন পরিষ্কার, তো সব ভালো। মন কুলষিত, তো সব খারাপ। এটাই সত্যি!
— ” আরোহী, তোমাকে মা ডাকছেন। ”
দরজা থেকে মিনহাজের কণ্ঠ শুনে আভা আরো আরোহী দুজনেই সামনে তাকালো। মিনহাজের এক হাতে ফোন মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা, ওপর হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকানো। চুলগুলো ভিজে কপালে লেপ্টে আছে। শরীরে মিষ্টি পারফিউমের গন্ধ, যা শুঁকে আরোহী মাতাল হয়ে উঠলো। মিনহাজের কথা শুনে আভা ভ্রু কুঁচকালো। বললো,
— ” বলে দাও,আমরা গল্প করছি। পরে আসছে। ”
মিনহাজ মানলো না। বরং, ত্যাঁছরাভাবে বললো,
— ” বেশি কথা বলিস কেন? মাকে আমি এসব বলতে পারবো না। আরোহী, যাও। দেখে আসো, মা কি
বলেন। ”
মিনহাজের কথায় আরোহী কালবিলম্ব না করে দাঁড়াতে চাইলো। কিন্তু সঙ্গেসঙ্গে আভা হাত দিয়ে আটকে আরোহীকে বসিয়ে ফেললো। আরোহী অবাক হয়ে আভার দিকে তাকালে, আভা মিনহাজের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
— “ভাই, সত্যিই কি মা ডাকছেন? হুঁ? ”
আভার কথায় মিনহাজ ভ্যাবেচেকা খেয়ে গেলো। থতমত হয়ে বলে উঠলো,
— ” বড় ভাইয়ের সাথেও ফাজলামি করিস, বেয়াদব। ওকে ছাড়। দেখে আসুক, মা কি বলে। ”
মিনহাজের এমন শক্ত কথায় আরোহী ভরকে গেলেও একবিন্দুও ভরকালো না আভা। আরোহী আভার দিকে চেয়ে বললো,
— ” আভা, আমি গিয়ে দেখে আসি। মা পরে খারাপ ভাববেন। ”
আভা আরোহীর দিকে তাকিয়ে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বললো,
— ” আরে আমার ভোলাবালা ভাবী। তোমাকে কেউই
ডাকছে না। এসব ভাইয়ার প্ল্যান। তাইনা, ভাইয়া? ”
মিনহাজ কাঁচুমাঁচু হয়ে গেলো। আভার দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
— ” তোরে আমি পরে দেখছি। ”
অতঃপর আরোহীর দিকে চেয়ে এক শক্তপোক্ত চাহনি দিলো। যার ভঙ্গিমা এমন ‘ একবার হাতের নাগালে পাই, খবর আছে তোমার। ‘ মিনহাজ চলে গেলো। মিনহাজের ওমন চাহনী আরোহী খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো। ও ভয়ও পেলো। আভা আরোহীর ছটফটানি দেখে আলতো হাসলো। আরোহীর হাত ছেড়ে দিয়ে হেসে বললো,
— ” যাও, শুনে আসো তোমার পাগল প্রেমিক কি বলে। ”
আরোহী লজ্জা পেয়ে হেসে ফেললো। আভাকে আরো একবার জড়িয়ে ধরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মিনহাজ আর আরোহীর কাণ্ড দেখে আভা জোরেই হেসে ফেললো। ভাবলো,’ ভাই তার ফেঁসে গেছে। হায়! ‘ হঠাৎ আভার মায়ের ফোন কল এলো। হয়তো, মামাদের মধ্য থেকে কেউ দিয়েছেন। আভা বালিশের কাছ থেকে ফোন হাতে নিলো। অচেনা নাম্বার। আভা ভ্রু কুঁচকিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে সালাম দিলো। কিন্তু কেউ সালামের উত্তর দিলো না। বরং, ওপাশ থেকে কেউ ভরাট কণ্ঠে বললো,
— ” আপনার রেজাল্ট দিয়েছে, মিস আভা। ”
আহনাফের কণ্ঠ! আভা অবাক হলো। কিন্তু, তার থেকেও বেশি অবাক হলো, রেজাল্টের কথা শুনে। বুকের ভিতরে ধকপক করছে। আভা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— ” রেজাল্ট কি এসেছে? ”
আহনাফ আগের থেকেও দ্বিগুণ থমথমে গলায় বললো,
— ” দুঃখজনকভাবে, আপনি মেডিক্যালে চান্স পান নি। ”
#চলবে