কথা দিলাম পর্ব -৩৬+৩৭

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৩৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আধভিক বারে বসে নেশায় বিভোর হয়ে আছে। তবুও সে গ্লাসের ড্রিংক শেষ হতে না হতেই আরেকটা ড্রিংক ঢেলে নিচ্ছে। একসময় সেটা না পোষালে আধভিক বোতলটাই ধরে চুমুক দেয়।

সিয়ারা: ব্যাস আধভিক! অনেক হয়েছে। আর কতো ড্রিংক করবে তুমি? তুমি আমাকে “কথা দিয়েছিলে” তুমি আর এসবে নিজেকে জড়াবে না। ছেড়ে দেবে নেশা করা।

সিয়ারা আধভিকের হাতটা ধরে বাঁধা দিয়ে বললো। আধভিক বোতলটা হাতে নিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

আধভিক: যাঁকে কথা দিয়েছিলাম সে কি নিজের “কথা রেখেছে?” সেও তো আমাকে “কথা দিয়েছিলো” সে আমাকে ছেড়ে যাবে না, যাই হোক না কেন। সব জানার পরেও সে এখন আমাকে দূরে সরিয়ে রাখছে যেখানে সে চাইলেই পারে সবটা ঠিক করতে। কিন্তু না, সে তো এখন আর আমাকে চায় না। আমি তাঁকে ভুল বুঝেছি দেখে, তাঁর কথা শুনিনি দেখে সেও এখন সেটাই করছে।

আধভিকের কথায় সিয়ারা কোনো উত্তর দিতে পারে না দেখে আধভিক টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ালো।

সিয়ারা: কোথায় যাচ্ছো? তুমি এখন ঠিক নেই আধভিক। এইসময় বেরোলে তোমার ক্ষতি…

আধভিক: আর কোনো ক্ষতি হওয়া বাকি নেই আমার জীবনে। শুধু জীবনটুকুই আছে, তাই ক্ষতি হিসেবে এই জীবনটা যাওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না।

সিয়ারা: আধভিক!! কেন এসব বলছো তু..

আধভিক: ঠিক আছি আমি। এইসবে এখন আমি অভ্যস্ত। এই জিনিসটাও এখন আমার সঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। (হাতের বোতলটার দিকে তাকিয়ে)

আধভিক সিয়ারার হাতটা নিজের হাতের দ্বারা আলতো করে ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকলো। হোঁচট খেয়ে পরে যেতে নিলেও একটা চেয়ার ধরে নিজেকে সামলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। সিয়ারা নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে বাইরে যেতেই দেখলো আধভিক এগিয়ে যাচ্ছে নিজের বাইকের দিকে। বাইকে স্টার্ট দিয়ে কিছুটা দুর এগিয়ে যেতেই সিয়ারা দৌঁড়ে সেই জায়গায় এসে দাঁড়ায়। সামনে তাকাতেই দেখে আধভিক বাইক নিয়ে এগোচ্ছে এবং ওর দিকে একটা দুরন্ত গতিতে একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে। নিমিষের মধ্যেই সেটার সাথে আধভিকের বাইকের সংঘর্ষ হয় আর…

সিয়ারা: না!!!! আভি!!!!

সিয়ারা চিৎকার করে উঠে বসে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে নিজের ঘরে বিছানায় বসে আছে। অর্থাৎ সে একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছে। সকালে আধভিক বেরিয়ে যাওয়ার পর চিন্তা করতে করতে একটা সময় কখন চোখ লেগে গেছিলো ও বুঝতে পারেনি। সিয়ারা পাশের টেবিল থেকে জলের গ্লাসটা ঢক ঢক করে গলায় ঢেলে নিলো।

সিয়ারা: ও..ও কোথায়? ও কি, ও কি এখনও ফেরেনি?

সিয়ারা এই শীতের মধ্যেও ঘেমে গেছে। ও উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে বেরানোর উদ্দ্যেশ্যে পা বাড়াতেই দিয়ারা ওর ঘরে আসে।

সিয়ারা: দিয়া!! তুই? তুই জানিস আভি কোথায়? আভি ফিরেছে হোটেলে?

দিয়ারা নিজের দিদিকে এতটা প্যানিক করতে দেখে নিজে আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পরলো। সে জানাবে কি না এটা ভাবতে না ভাবতেই সিয়ারা রেগে ওকে ধমক দিলো।

সিয়ারা: চুপ করে আছিস কেন? আভি হোটেলে এসেছে কি না বল? ছাড় আমিই দেখে নি…

দিয়ারা: ভিকিদা এখনও ফেরেনি দি। সেই সকালে বেরিয়েছে আর এখনও কোনো খবর নেই। আমি এটাই জানতে এসেছিলাম তুই কোনো খবর জানিস কি না?

সিয়ারা: সেই সকালে বেরিয়েছে, এখনও ফেরেনি মানে? এখনও ফেরেনি মানে কি বোঝাতে চাইছিস? কটা বাজে এখন? (অবাক হয়ে)

দিয়ারা: দি দুপুর হয়ে গেছে। দুটো বাজে এখন।

সিয়ারা: কি? আমি, আমি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম?

দিয়ারা: হ্যাঁ। বাইরের আবহাওয়া একদম ভালো না। তাকিয়ে দেখ। আকাশে ঘন মেঘ করছে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তো এখনই শুরু হয়ে গেছে। হয়তো এরপর গতি বাড়বে। এই সময় বাইক নিয়ে ড্রিংক করে পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালালে যদি কোনো দুর্ঘটনা…

সিয়ারা: চুপ কর! কি আজে বাজে কথা বলছিস? একদম চুপ! মুখেও আনবি না এসব কথা।

সিয়ারা অতিরিক্ত রেগে কথাটা বললে দিয়ারা ভয়ে চুপসে যায়। সে বুঝতে পারেনি তাঁর দিদি এতটা রেগে যাবে। সে তো নিজেও ভয় পেয়ে আছে। নিজের দিদির দিকে তাকাতেই দিয়ারা দেখলো সিয়ারা ভীষণ পরিমাণ প্যানিক করছে। এই শীতে সে ঘামছে রীতিমতো। সিয়ারা মনে মনে আওড়াতে থাকলো কিছু শব্দ বারবার, “আভির কিচ্ছু হবে না। কিচ্ছু না! ওর কিছু হতে পারে না। কিছু হতে পারে না।”

দিয়ারা: দি, তুই শান্ত হ। এতটা প্যানিক করিসনা। ভিকিদার কিচ্ছু হবে না। ওর অভ্যেস আছে পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালানোর। ও আগেও এমনটা করেছে, তবে ফোন রিসিভ করেনি এমনটা হয়নি। সেইজন্যেই চিন্তা হচ্ছে। কিন্তু তুই বিশ্বাস কর, ও খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে।

সিয়ারা: ও, ও ফোন রিসিভ করছে না? (কান্না মিশ্রিত গলায়)

দিয়ারা না বোধক মাথা নাড়লে সিয়ারা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। মুখে হাত চেপে জোরে কাঁদতে শুরু করলে দিয়ারা জড়িয়ে ধরে সিয়ারাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে।

সিয়ারা: আ..আমাকে ফোন দে। আমি ফোন করবো ওকে।

সিয়ারাকে দিয়ারা ওর ফোনটা বিছানা থেকে নিয়ে ওর হাতে দিলেই ও সাথে সাথে আধভিককে ফোন করতে শুরু করে। ফোন বেজে যেতে থাকে কিন্তু সিয়ারা থামে না। অনবরত ফোন করতে থাকে। নিজের দিদিকে এই অবস্থায় দেখে দিয়ারা বুঝতে পারে না তাঁকে কীভাবে সামলাবে।

অন্যদিকে,

“মৌসম, মৌসম থা সুহানা বারা
মৌসম মৌসম মেইনে দেখা উসে
হুয়ান মেইন পাগাল, বাস পাল ভার মেইন”

আধভিক নিজের বাইকের উপর বসে আছে রাস্তার ধারে। সামনে পাহাড়, মেঘলা আকাশ, ঝিরি ঝিরি বৃষ্টির সাথে সাথে হালকা মৃদু শীতল বাতাস। সব মিলিয়ে এই মনোরম পরিবেশে হঠাৎই তাঁর মনটা এই গান গেয়ে উঠলো।

“হান…মৌসম, মৌসম থা সুহানা বারা
মৌসম মৌসম মেইনে দেখা উসে
হুয়ান মেইন পাগাল, বাস পাল ভার মেইন”

চোখ বন্ধ করে মাথাটা উপরে রেখে গানের লাইনগুলো গাইতে গাইতে হঠাৎই সিয়ারার কথা মনে পরতেই আধভিক মাথা নীচু করে হেসে ফেললো। ওর মনে পরে গেলো যখন ও প্রথম সিয়ারাকে শুটিং সেটে দেখেছিলো এবং তারপর বৃষ্টিতে দেখে পুরোপুরিই নিজের মন দিয়ে বসেছিলো সিয়ারাকে।

“আঁকে বাসি হো ভো মেরে মান মেইন
উসকি কামি হেইন আব জীভান মেইন
ওভো দুর হ্যান মেরি নাজরন সে
কিউ উসে মেইন চাহুনননন”

আধভিক পাশে তাকাতেই দেখলো সিয়ারা তাঁর দিকে দৌঁড়ে আসছে আর সে বাইক থেকে নেমে গেলো। তাঁর চোখের সামনে সেই দৃশ্যটা ভেসে উঠলো যখন সিয়ারা তাঁকে নিজের জীবনে গ্রহণ করেছিলো। প্রথমবারের মতো তাঁকে শক্ত করে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলো।

আধভিকের ঘোরটা কেটে যেতেই সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ কোথাও নেই। সে মাথা নীচু করে নিজের ঘাড়ে হাত ঘষতে ঘষতে হাসলো। তারপর পকেটে দু হাত গুঁজে উপরের দিকে মাথা তুলে স্বস্তির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরলো যখন সে দেখলো তাঁর থেকে কিছুটা দূরে এক জোড়া প্রেমিক যুগল নিজেদের মধ্যে প্রেমালাপ করছে এই পরিবেশ উপভোগ করার সাথে সাথে। আধভিক ভীষণ ভাবে নিজের একমাত্র কাছের মানুষটাকে মিস করতে শুরু করলো তাই ওদের দিকে তাকিয়ে থেকেই নিজের ফোনটা বার করলো। তারপর ফিঙ্গাপ্রিন্ট দ্বারা লক খুলে সর্বপ্রথম নিজের গ্যালারিতে গিয়ে সিয়ারার ছবি দেখতে লাগলো।

আধভিক: (ছবিটা জুম করে) সিয়ু, ভীষণ মিস করছি আমি তোমাকে। এই দুবছরে এমন কোনো মুহুর্ত নেই যেই মুহুর্তে আমার তোমাকে মনে পরেনি। তুমি অন্যকাওর এটা জানার পরেও আমি তোমাকে মনে করতাম। আমার মনে হতো সব মিথ্যে।

আধভিক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর আবারও সিয়ারার হাসজ্বল ছবির দিকে তাকিয়ে বললো,

আধভিক: তুমি মোটেও ঠিক করনি প্রথম দিন আমার কাছে নিজের পরিচয় বিবাহিত দিয়ে। তোমার ধারণা নেই আমার কতটা কষ্ট হচ্ছিলো সেই সময়। দুবছর ধরে যেটুকু আশায় আমি বেঁচে ছিলাম সেটুকু এক নিমিষে তুমি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলে। তাই তো তোমার কোনো কথা শুনতে আমি রাজি ছিলাম না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি সিয়ু, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে একটা সুযোগ দাও?

আধভিক সিয়ারার ছবি থেকে ব্যাক করে হোমে চলে আসে আর তখনই ওর চোখে পরে কল আইকনের উপর লাল গোল আকৃতির মধ্যে সাদা রং দিয়ে ১০০+ নাম্বারটা জ্বল জ্বল করছে।

আধভিক: ওহ মাই গড! এতবার কে…সিয়ু?? ওর কি আবার শরীর খারাপ করেছে? দিয়া আর ড্যাডও তো অনেক বার কল করেছে। শিট!

আধভিক সাথে সাথে নিজের ফোনটা পকেটে ভরে বাইকে উঠে বসে, ঘুরিয়ে নিয়ে হোটেলের উদ্দ্যেশ্য রওনা দিলো। তাড়াহুড়াতে সে যে নিজের ফোনটা জেনারেল মডে করতে হবে সেটাই ভুলে গেলো।

এদিকে,

সিয়ারা: আমি, আমি আরেকবার ফোন করি?

দিয়ারা: দি, ইতিমধ্যে তুই অনেকবার ফোন করে ফেলেছিস। একবারও কি রিসিভ করেছে?

সিয়ারা: অনেকক্ষণ হয়ে গেছে ফোন করিনি। এখন একবার করি।

দিয়ারা: মোটে দশ মিনিট…

দিয়ারার কথা শেষ হওয়ার আগেই সিয়ারা আবার ফোন করলো আধভিককে। এতোটা সময় ধরে সিয়ারা অনবরত ফোন করে গেছে আধভিককে। সিয়ারার মনের ভিতর যে কি চলছে সেটা ও কাওকে বোঝাতে পারছে না। বলতে চাইছে না, এই ভেবে যদি দুঃস্বপ্নটা সত্যি হয়ে যায়? না না না! সিয়ারার মতে, এমনটা কিছুতেই হতে পারে না।

দিয়ারা: দি, দি তুই শান্ত হ তো। এদিকে তাকা আমার দিকে, কি হয়েছে বল আমায়? এতো কেন প্যানিক করছিস তুই?

দিয়ারা সিয়ারার দু বাহু ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। তারপর ওর দু গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো কথাটা। সিয়ারা কন্নামিশ্রিত গলায় বললো,

সিয়ারা: আমার জন্যেই হচ্ছে এসব। আমি খামোখা ওর উপর রাগ দেখাতে গেলাম। ওকে আরও রাগিয়ে তুললাম, কষ্ট দিলাম। ও যখন বোঝেনি তখন আমার বোঝা উচিত ছিলো এসব একটা ষড়যন্ত্র। এতটা বোকামি কীভাবে করলাম আমি?

দিয়ারা: বোকামি তুই আগে নয় এখন করছিস দি। কি বোকার মত কথা বলছিস? তুই বা ভিকিদা তোরা কীভাবে বুঝবি তোদের পিছনে কেউ ষড়যন্ত্র করছে? এটা কীভাবে সম্ভব দি?

সিয়ারা: ওই ঘটনাগুলো…

দিয়ারা: যেই ঘটনাগুলো তোর সাথে ঘটেছে সেগুলো ভিকিদা জানতো না আর যেটা ভিকিদার সাথে ঘটেছে সেটা তুই জানতিস না। দুজন যখন দুজনের দিকটা জানতে পেরেছিস তখন গিয়ে বুঝতে পারছিস যে হয়তো কেউ ষড়যন্ত্র করছে। এখনও এই বিষয়ে সিওর না কারণ আমাদের হাতে কোনো প্রমাণ নেই। আমাদের সামনে সে আসেনি এখনও। আমাদেরকে খুঁজে বার করতে হবে এসবের পিছনে কে আছে।

সিয়ারা: হ্যাঁ কিন্তু এখন যখন আমরা দুজনেই সবটা জেনে গেছি তখন আমি এরকম রাগ না দেখালেও পারতাম।

দিয়ারা: আমার মনে হয় এতে তোর কোনো হাত নেই। ভিকি দা যেমন না জেনে বুঝে তোকে কষ্ট দিয়েছে সেটাই হয়তো সময় ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আল্টিমেটলি আমরা ততক্ষণ কাওর কষ্ট বা অবস্থা বুঝতে পারি না যতক্ষণ না সেইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা হচ্ছি। আর দি, আমি তোদের দুজনের দিকটা শুনেছি তাই বুঝতে পেরেছি কেউ ষড়যন্ত্র করছে। আমার জায়গায় যে থাকবে সেই বুঝতে পারবে যেমন তোরা একে অপরের বিষয়টা নিয়ে অবগত হতেই ধরে ফেলেছিস বিষয়টা। এখন এসব নিয়ে ভাবিস না তো।

সিয়ারা দিয়ারার গালে হাত দিয়ে হালকা আদর করে বললো,

সিয়ারা: আমার বোনটা সত্যি অনেক বুদ্ধিমতি হয়ে গেছে। আজকাল সে নিজের দিদিকে সব কিছু ভালো ভেবে বুঝিয়ে দিচ্ছে।

দিয়ারা: (হাসিমুখে) তুই যেভাবে ছোটো থেকে আমাকে আগলে এসেছিস, আমাকে সবকিছু বুঝতে শিখিয়েছিস। এখন যখন তুই বিভ্রান্ত হয়ে আছিস তখন আমার উচিৎ তোকে হেল্প করা।

সিয়ারা নিজের বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দিয়ারাও অনেকদিন পর দিদিকে কাছে পেয়ে তাঁকে আকড়ে ধরে ভালোবেসে। কিছুক্ষণ পর,

দিয়ারা: দি, অনেক বেলা হয়ে গেছে। আমি নীচে যাচ্ছি তোর জন্য খাওয়ার নিয়ে আসছি।

সিয়ারা: ও আসুক তারপরেই খাবো। নাহলে আমার গলা দিয়ে কিচ্ছু নামবে না। (অসহায় ভাবে)

দিয়ারা: আচ্ছা আগে আমি খাওয়ার নিয়ে আসি তারপর দেখছি তোর গলা দিয়ে খাওয়ার নামে কি নামে না। (শাসিয়ে)

দিয়ারা নীচে চলে গেলে সিয়ারা পায়চারি করতে শুরু করে ফোন হাতে নিয়ে। বারবার সে দেখছে আধভিক কল ব্যাক করে কি না। ফোনও করছে কিছু সময় অন্তর অন্তর। একটা সময় গিয়ে দিয়ারাকে সে বুঝতে দেয়নি তাঁর ভিতরে কি চলছে নাহলে দিয়ারাও চিন্তিত হয়ে পরত। কিন্তু এখন আর নিজেকে সামলাতে পারছে না সিয়ারা, ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর। মুখে এক হাত চাঁপা দিয়ে ও কেঁদেই ফেললো। এমন সময় ধরাম করে দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে ফিরে তাকাতেই দেখলো আধভিক দাঁড়িয়ে আছে। সিয়ারার হাত পা জানো কাঁপছে আধভিককে সুস্থ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।

এদিকে আধভিক একপ্রকার হাঁপাচ্ছে। ওর নিজেরও হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে অত গুলো ফোন কলস দেখে। ঘাম ছুটে গেছে সারা শরীর দিয়ে বেচারার। কিন্তু সিয়ারাকে ঠিকঠাক, স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আধভিকের শরীর প্রায় ছেড়ে দিচ্ছে। তাও সে শক্তি সঞ্চয় করে ভিতরে এক দু পা এগিয়ে যেতে যেতে বলল,

আধভিক: কি হয়েছে সিয়ু? তুমি ঠিক…

আধভিক আর কিছু বলবে তাঁর আগেই ঝড়ের গতিতে সিয়ারা ওর শরীরের উপর একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পরে ওর সাথে মিশে গেলো। আধভিক রীতিমতো পিছিয়ে গেলো সিয়ারার হঠাৎ আক্রমণে। সিয়ারা শক্ত করে আধভিকের গলা জড়িয়ে ধরেছে দু হাত দিয়ে। আরও বেশি কাছে টেনে নিতে চাইছে সিয়ারা ওকে। আধভিক একপ্রকার ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গেলো সিয়ারার এই কর্ম কাণ্ডে। অতীতে সে যেমন করেছিলো এইবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। আধভিক সিয়ারার কোমড় জড়িয়ে ধরে, ওর পায়ের আঙুলের উপর ভর দেওয়া শরীরটাকে আলতো করে উঁচু করে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো সাপোর্ট দেওয়ার জন্য।

আধভিক সিয়ারাকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মুখ গুঁজতেই সিয়ারা নিজের শরীরে আধভিকের উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করলো। সাথে সাথে সরে এসে আধভিকের জ্যাকেটের কলার দুটো শক্ত করে মুঠোর মধ্যে নিয়ে আধভিকের ঠোঁটজোড়ায় নিজের ঠোঁটজোড়া চেপে ধরলো।

ঘটনাচক্রে আধভিক এতটাই অবাক হয়েছে যে সে কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আর রিয়্যাক্ট করার সময়ও তো সে পাচ্ছে না, সিয়ারাই একের পর এক আক্রমণ করে যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সিয়ারা আধভিকের ঠোঁটের ভাঁজে নিজের ঠোঁট রেখে তাঁর স্বাদ নেওয়া শুরু করলো। আধভিকের মন যখনই বলে উঠলো, এইবার সিয়ারা সজ্ঞানে তাঁকে কাছে টেনে নিয়েছে তখনই সে সিয়ারাকে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করলো। ধীরে ধীরে তাঁরা একে অপরের মধ্যে হারিয়ে গেলো। আধভিক এতটাই মাতাল হয়ে উঠলো সিয়ারার ঠোঁটের স্বাদ পাওয়ার জন্য যে আস্তে আস্তে সে সিয়ারার ঠোঁটের উপর শাসন করতে শুরু করলো। সিয়ারাও আধভিককে, আধভিকের ভালোবাসার ছোঁয়াকে অনুভব করার জন্যে আধভিককে শাসন করতে তো দিলই সাথে আরও কাছে টেনে নিলো ওকে।
‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৩৭||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

নিশ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হলে আধভিক সরে আসে সিয়ারার কাছ থেকে। আধভিক সরে এলে সিয়ারা ধীরে ধীরে নিজের চোখ খোলে, চোখ খুলতেই দেখে আধভিক একভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সিয়ারা এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে আধভিকের বুকে মুখ গুঁজে, সে অনুভব করতে চায় আধভিককে। প্রতিটা মুহুর্তে অনুভব করতে চায়।

আধভিক সিয়ারাকে কিছুক্ষণ নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে আস্তে করে পিছিয়ে এসে সিয়ারাকে কোলে তুলে নেয়। বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে আসতে করে সিয়ারাকে বসিয়ে নিজে ওর পাশে বসলে সিয়ারা আধভিকের বুকে মাথা রাখে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে। আধভিক মৃদু হেসে ব্ল্যাঙ্কেটটা দিয়ে ভালো ভাবে সিয়ারাকে ঢেকে দেয়। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ধীরোজ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

আধভিক: কি হয়েছে? এতো ভয় কেন পেয়ে আছো তুমি?

সিয়ারা: কোথায় ছিলে তুমি আভি? আমার, আমার খুব চিন্তা হচ্ছিলো। (বুকে নাক ঘষে)

আধভিক: (মৃদু হেসে) আমি তো জাস্ট একটু ঘুরতে বেরিয়ে ছিলাম।

সিয়ারা: তাই বলে ড্রিংক করে বাইক নিয়ে বেড়াবে? (সোজা হয়ে বসে)

আধভিক: আমি ড্রিংক করিনি সিয়ু। বিশ্বাস করো আমায়। (সিয়ারাকে কাছে টেনে)

সিয়ারা: তবে আংকেল যে বললো? আর আমিও তো দেখেছি তোমার চোখটা লাল হয়ে ছিলো। তার উপর তুমি এই ঠাণ্ডায় এতো পাতলা জ্যাকেট পরে আছো। ঠাণ্ডা লাগছে না কেন তোমার? আমরা কিছু বুঝি না নাকি? (আধভিকের বুকে আলতো করে ঘুষি মারতে মারতে বলে) তুমি সবসময় এমন করো, আমাকে চিন্তায় ফেলে দাও। খুব মজা লাগে তাই না?

আধভিক: জান আগে আমার কথাটা তো শোনো? কেন কাঁদছো এভাবে?

সিয়ারা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলে আধভিক ওকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সিয়ারার দু গালে হাত রেখে সিয়ারার মুখটা নিজের সামনে এনে আধভিক বলে,

আধভিক: আমি ড্রিংক করিনি জান। বিশ্বাস করো আমায়। আমার মাথা যন্ত্রণা করছিলো ভীষণ তাই জন্যে চোখ লাল হয়েছিলো আর কিছুই না। মাথা যন্ত্রণা করছিলো বলেই সকাল থেকে কফি খাচ্ছিলাম তাই অতটা ঠাণ্ডাও লাগছিল না। এছাড়া তুমি জানো তো আমার ঠাণ্ডায় থেকে অভ্যেস আছে, এর থেকেও বেশি ঠাণ্ডায় আমি থেকেছি বছরের পর বছর।

সিয়ারা আধভিকের কথা শুনে শুধু নাক টানতে থাকে নীচের দিকে তাকিয়ে। আধভিক স্পষ্ট বুঝতে পারে সিয়ারা বিষয়টা নিয়ে খতিয়ে দেখছে। প্রশ্ন তৈরী হলেই এক্ষুনি তাঁর দিকে সেটা তীরের গতিতে ছুটে আসবে।

সিয়ারা: মাথা যন্ত্রণা নিয়েই বা বেড়ানোর কি দরকার ছিলো হ্যাঁ?

আধভিক: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) মাইগ্রেনের ব্যাথার জন্য আমার ওষুধের দরকার ছিল, কফিতে হতো না কিছুই। ওষুধ নিয়ে আসা হয়নি তাই বেরিয়ে ছিলাম। ফোনটা ডু নট ডিস্টার্ব মোড প্লাস সাইলেন্ট করা ছিলো বাইক চালাচ্ছিলাম দেখে। তাই কাওর ফোন এসেছে বুঝতে পারিনি। পরে যখন তোমার এতগুলো মিসড কলস দেখলাম, ড্যাড আর দিয়ার মিসড কলস দেখলাম তখন চলে এলাম।

সিয়ারা: তোমার, তোমার মাইগ্রেন কবে হলো?

আধভিক সিয়ারার প্রশ্নে চুপ করে গেলে সিয়ারা আবারও আধভিকের বুকে মাথা রাখে। নিজেই বলে,

সিয়ারা: আসার দিন প্লেনেও মাইগ্রেনের ব্যাথাই করছিলো তাই না? (হতাশ হয়ে)

আধভিক: হম। তখন, তখন ওরকম খারাপ বিহেভ করার জন্যে স্যরি সিয়ু। ইভেন সব কিছুর জন্য স্যরি।

সিয়ারা: ভুল শুধু তোমার হয়নি আমারও হয়েছে। আই অ্যাম অলসো স্যরি। বাট তুমি যদি আমার কথা আগে শুনতে তাহলে এত কিছু হতোই না। কিন্তু পরিস্থিতিই এমন ছিলো যে…

আধভিক: পরিস্থিতি এমন ছিলো না, এমন তৈরী করা হয়েছে। যাতে আমরা একে অপরকে ভুল বুঝি আর সত্যিটা কখনও জানতে বা জানাতে না পারি।

সিয়ারা অবাক চোখে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলো। ও মনে মনে ভাবছে আধভিক সব জানে? মানে ওর সাথে সাথে আধভিকও সব বুঝে গেছে?

আধভিক: (সিয়ারার হাত ধরে) ট্রাস্ট মি সিয়ু, আমি সেদিন তোমাকে অতোগুলো খারাপ কথা শুনতাম না। আমি, আমি দেখেছিলাম অভ্রকে তোমার ঘর থেকে বেরাতে কিন্তু সেই জন্য আমি অতটা রিয়্যাক্ট করিনি। আমি রিয়্যাক্ট করেছি অভ্রর শার্টে, বুকে লিপস্টিকের দাগ দেখে যেটা তোমার ঘরে যাওয়ার আগে ছিলো না। এখন আমি জানি না ও তোমার ঘরে যাওয়ার আগে অন্য কোথাও গেছিলো কি না। ওখানেই আমি ভুল করে ফেলেছি। (মাথা নীচু করে)

সিয়ারা: তুমি ভুল করনি আভি। অভ্র যখন আমার ঘরে এসেছিলো তখন সত্যি ওর শার্টে বা বুকে কোনো লিপস্টিকের দাগ ছিলো না। ও আমার ঘরে এসে, আমার দিকে নিজের শার্টের দুটো বোতাম খুলে যখন এগাচ্ছিল তখন আমি সত্যি ভয় পেয়ে গেছিলাম। কিন্তু ও কিছু না করে বেরিয়ে গেছিলো ওখান থেকে।

কথাটা শুনতেই আধভিকের চোয়াল শক্ত হয়ে যেতে লাগলো। যা দেখে সিয়ারা ঘাবড়ে গিয়ে আধভিকের কাছে এগিয়ে বললো,

সিয়ারা: আমাদের কাছে কোনো সলিড প্রমাণ নেই আভি। আমরা এভাবে সন্দেহের বশে কাওকে কিছু বলতে পারি না। তুমি মাথা ঠাণ্ডা রাখো প্লিজ?

আধভিক: (তাচ্ছিল্য হেসে) আমার কোনো প্রমাণের দরকার নেই অভ্রকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। আমি চাইলেই ওকে নিমিষে উধাও করে দিতে পারি, জাস্ট উধাও! কেউ জানতেও পারবে না ও কোথায় গেলো।

সিয়ারা: আভি না। এভাবে মাথা গরম করো না। (ভয় পেয়ে)

আধভিক: তোমার মনে হয় আমি তোমার সাথে কথা বলার পর এই কাজটা করবো? আমার এটা করার হলে এতক্ষণে করে ফেলতাম। আমি কিছু করছি না কারণ ও আমার ড্যাডের প্রাণপ্রিয় ছোটো ছেলে।

আধভিক দাঁতে দাঁত চেপে শেষের বাক্যটা বলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। সে রাগে ফুঁসছে কিন্তু যতটা সম্ভব নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

সিয়ারা: আচ্ছা, অভ্র তো এখানে ছিলো না। হঠাৎ করে কীভাবে কি..??

আধভিক: আমাদের বিয়ে উপলক্ষ্যে বিয়ের দিন ও আসে। তারপর চলে গেছিলো কিন্তু তুমি চলে যাওয়ার কিছু দিন পর আবার এসেছিলো আর সেটা স্থায়ী ভাবে। আমি দেখেও কিছু বলিনি ড্যাডকে। সেই মুহুর্তে ওকে নিয়ে ভাবার সময় ছিলো না, আমি তোমাকে খুঁজছিলাম হন্য হয়ে। আর তারপরেই খবর পেলাম যে…

সিয়ারা: যে…আমি বিয়ে করে নিয়েছি আর হ্যাপি আছি?

আধভিক: বিয়ে না, বিয়ের কথাটা বলেনি। শুনেছিলাম তুমি অন্যকাওর সাথে আছো। কয়েকটা ছবি দেখেছিলাম তোমার আর দেবাংশুর।

সিয়ারা: আমার মনে হয় এটাও…

আধভিক: অবভিয়াসলি। নাহলে কেন আমাকে বললো তুমি হ্যাপি আছো, তোমাকে বললো আমি হ্যাপি আছি যেখানে আদতে আমরা হ্যাপি ছিলাম না। আর এটা তখনই সম্ভব যখন নিজের কেউ এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত।

সিয়ারা: আমাদের প্রমাণ জোগাড় করা উচিত?

আধভিক সিয়ারার কোমর জড়িয়ে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে নিল। ওর চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বললো,

আধভিক: উম, আপাতত প্রেম করা উচিৎ।

সিয়ারা রাগী ভাব করে ভ্রু কুঁচকে আধভিকের দিকে তাকালে আধভিক নিজের হাতের বাঁধন আলগা করে দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই সিয়ারা আধভিককে জড়িয়ে ধরে ওর গলায় মুখ গুঁজে দেয়। আধভিক হেসে বলে,

আধভিক: আমাকে ভয় দেখাতে তোমার ভীষণ ভালো লাগে তাই না?

সিয়ারা: যেমন?

আধভিক: প্রথম যেদিন দেখে ছিলাম সেদিনও আমাকে ভয় দেখিয়েছিলে নিজেকে ম্যারেড বলে। আর আবার যখন ফিরে এলে তখনও? ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া আমার ঠিক কেমন অনুভব হয়েছিলো? কোথাও না কোথাও আমার মনে আশা ছিল যে আমাকে যেটা বলা হয়েছে সেটা মিথ্যে। বাট তুমি ওভাবে বলে…

সিয়ারা: আ’ম স্যরি। আসলে আমি যেহেতু শুনেছিলাম তুমি বিয়ে করে নিয়েছো তাই আমি বলেছিলাম। ভেবেছিলাম আমাকে দেখার পর যদি তোমার ম্যারেড লাইফে এফেক্ট পরে তাই…

আধভিক: হ্যাঁ সেই! যখন তোমার বোনের প্রশ্ন আসে তখন তো তুমি আমাকে এক মিনিটে ভুলে যাও। (অভিমান করে)

সিয়ারা: (দু গালে হাত রেখে) এমন না আভি। আমি যখন জেনেছিলাম তুমি বিয়ে করে নিয়েছো তখন আমি খুব ভেঙে পরেছিলাম। তোমার মত আমার মনেও এটাই ছিলো যে তুমি বিয়ে করবে না। তারপর তো তুমিও বোনের কথা যখন জিজ্ঞেস করলাম এমন ভাবে বললে জানো তুমি সত্যি বিয়ে করে নিয়েছো।

আধভিক: কারণ আমিও তো তোমার মতই ভেবেছিলাম যে তোমার ম্যারেড লাইফে এফেক্ট হতে পারে।

আধভিক আর সিয়ারা দুজনেই চুপ করে গেলো। তারপর একে অপরের দিকে তাকাতেই হেসে ফেললো। আধভিক সিয়ারার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। সিয়ারা আধভিকের বুকে মাথা রেখে বলে,

সিয়ারা: এর থেকেই প্রমাণ হয় আমাদের একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ছিলো আভি।

আধভিক: আর নিজেরা কষ্টে থাকলেও অন্যজনকে খুশি দেখতেই চেয়েছিলাম।

সিয়ারা প্রতিউত্তরে আধভিককে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ধীরে ধীরে সিয়ারা আধভিকের শার্টের দুটো বোতাম খুলে, আধভিকের বুকের বাম পাশে নিজের নামটার উপর আঙুল রাখে।

সিয়ারা: আভি!

আধভিক নিজের শরীরে সিয়ারার স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় আবেশে। একটা শিহরণ বয়ে যায় ওর সারা শরীর জুড়ে।

সিয়ারা: কবে করেছো এটা? (বিনয়ী সুরে)

আধভিক: আমাদের বিয়ের দিন। তোমাকে সারপ্রাইজ দেব ঠিক করেছিলাম আমাদের ফার্স্ট নাইটে।

সিয়ারা না দেখেই বুঝতে পারে আধভিকের কষ্টটা আবারও মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। ওর নিজেরও একই অবস্থা। ও চুপচাপ আধভিকের বুকে, নিজের নামের উপর আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। আধভিকের শরীর শিউরে ওঠে। একটা লম্বা নিশ্বাস ছাড়ে সে।

সিয়ারা: আমি আর কখনও তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববো না। আমি কখনও তোমাকে ছেড়ে যেতে চাইনি কিন্তু…

আধভিক সিয়ারা মুখ নিজের দু হাতের মাঝে নিয়ে সিয়ারার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় আলতো করে। সরে এসে বলে,

আধভিক: শশশ! আমি আর এই নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না। আল্টিমেটলি আমাদেরকে কেউ আলাদা করতে পারেনি। এখন থেকে আমরা সবসময় একসাথে থাকবো, সবসময়। ওকেই?

আধভিক সিয়ারাকে বুকের মাঝে টেনে নিলে, একে অপরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওরা। সিয়ারা মনে মনে ভাবে,

সিয়ারা: (মনে মনে– শুধু অভ্র নয় আভি, এর পিছনে অনেক বড়ো কেউ আছে। যদি শুধু অভ্র হতো তাহলে আমি পার্টির দিনের রেকর্ডটা শুনিয়ে আংকেলকে প্রমাণ দিয়ে দিতাম। কিন্তু এক্ষেত্রে এত বড় একটা মাস্টার প্ল্যান করা ওর একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাকে তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করার পিছনেও হয়তো তাঁরই হাত রয়েছে। ওদের উদ্দেশ্য অনেক বড়ো কিছু। যেটা আমাকে জানতে হবে।)

আধভিক: (মনে মনে– বিষয়টা শুধু তোমাকে আর আমাকে আলাদা করা নিয়ে নয় সিয়ু। আমাদের আলাদা করাতে ওদের অনেক বড়ো কোনো স্বার্থ আছে। হ্যাঁ ওদের! আমার ভাইয়ের মাথায় এতো বুদ্ধি নেই যে ও একার প্ল্যানে আমাদেরকে এতো সব প্ল্যান করে আলাদা করবে। ওকে কেউ একটা নিয়ন্ত্রণ করছে, কোনো একটা মাস্টার মাইন্ড। কারণ তোমাদের প্রোডাকশন হাউজসহ তোমাদের বাড়ি ঘর সবকিছু এভাবে হঠাৎ বিক্রি হয়ে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনা হয়ে পারে না। বার করতে হবে আমাকে সবটা।)

সিয়ারা: আভি? আমরা এরপর কি করবো? মানে, সবাইকে কি বুঝতে দেবো যে, আমাদের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে? নাকি অভিনয়…

আধভিক: তুমি খুব ভালো ভাবে জানো আমি অভিনয় জিনিসটা পছন্দ করি না। আর মিথ্যে অভিনয় করা মানে তোমার থেকে দূরে সরে থাকা, তোমার সাথে জেনে বুঝে খারাপ বিহেভ করা যেটা আমার পক্ষে ইম্পসিবল। জাস্ট ইম্পসিবল। এমনিতেই তোমার সাথে যা বিহেভ করেছি তার জন্য নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে গেছি, কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না। তার উপর আরও যদি করতে হয় সেটা আমি মেনে নিতে পারবো না।

সিয়ারা: আমি বুঝতে পারছি কিন্তু তাতে তো আমরা ওদের ধরতে পারবো না। আমরা যদি বোঝাই ওরা জিতছে, ওদের ফাঁদে আমরা পা দিয়েছি তবেই তো ওরা সামনে আসবে।

আধভিক: আমিও এইটাই ভেবেছিলাম। ওদেরকে ধরাটাও একটা কারণ ছিল তোমার সাথে গাড়িতে খারাপ বিহেভ করার। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি সিয়ু, বরং ঘুরে ফিরে ওরাই জিতে যাচ্ছিলো।

সিয়ারা: (সোজা হয়ে) তখন আমরা সবটা জানতাম না তাই জন্য। এখন আর সেটা হবে না। আমার মনে হয় যেমন চলছিলো, আমাদের তেমনই অভিনয় করে যাওয়া উচিৎ আর…

আধভিক: ফাইন! তুমি চাইছো আমি যাতে তোমার থেকে দূরে থাকি। আমাদের মধ্যে যে দুরত্ব আছে এখনও সেটাই প্রুফ করতে চাও তাই তো? ঠিক আছে সেটাই হবে। বাট আমি কোনো মিথ্যে অভিনয় করতে পারবো না। আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে তোমাকে আমার কাছে আসা তো দূর আমার মুখ অবধি দেখতে না হয়।

আধভিক কথাটা বলে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে এগিয়ে গেলো। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো যে সিয়ারা রিয়্যাক্ট করার সময়ই পেলো না। আধভিককে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে ও বিড়বিড় করে বললো,

সিয়ারা: এই ছেলেটার এতো রাগ কেন?

সিয়ারা বিছানা থেকে নেমে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে করিডোরে গিয়ে পিছন থেকে আধভিককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

সিয়ারা: রাগ করো না আভি প্লিজ! তুমি যেমনটা চাও তেমনই হবে। ভুল হয়ে গেছে আমার।

আধভিক সিয়ারার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

আধভিক: আমি নিজের ডিসিশন তোমার উপর চাপাতে চাই না। জোর করে কোনো কিছু করবো না আমি।

সিয়ারা: আমিও চাই না সেটা। আমি শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই, তোমার কাছে থাকতে চাই। ভুল হয়ে গেছে আমার বলছি তো? প্লিজ, যেও না। যেও না আভি!

আধভিক সিয়ারার দিকে ফিরতেই দেখলো সিয়ারার চোখ দিয়ে জল গাল গড়িয়ে পরছে। সিয়ারার চোখের জল মুছে আধভিক ওর কপালে কপাল ঠেকালো। ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নীচের ঠোঁটে আঙুল বুলাতে বুলাতে বললো,

আধভিক: আই লাভ ইউ সিয়ু!

সিয়ারা: আই লাভ ইউ টু আভি!

মুহুর্তেই আধভিক সিয়ারার ঠোঁটজোড়ায় আক্রমণ করে বসলো। সিয়ারা হয়তো জানতো এমন কিছুই হতে চলেছে তাই দু হাত দিয়ে আধভিকের গলা জড়িয়ে আরো কাছে টেনে নিলো আধভিককে। ততক্ষনে আধভিকের দুই হাত সিয়ারার কোমরে বিচরণ করছে। দুজন একে অপরের সাথে মিশে যেতে চাইছে, হারিয়ে যেতে চাইছে একে অপরের মাঝে। যার দরুন ওদের স্থান, কাল, সময় কোনো কিছুর জ্ঞান নেই। ওরা শুধু একে অপরে মগ্ন হয়ে আছে।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here