কথা দিলাম পর্ব -৭১+৭২+৭৩

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৭১||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

দেবাংশু ঝট করে ফোনটা কেটে দিলো। দিয়ারা ভয় পাচ্ছে, আধভিককে বিয়ের দিন জানিয়ে ফেলেছে সে। দেবাংশু ছুরিটা হাতে নিলেই দিয়ারা আঁতকে ওঠে। দেবাংশু ছুরিটা হাতে নিয়ে একভাবে তাকিয়ে থেকে দিয়ারার দিকে ঝুঁকতে লাগলে দিয়ারা পিছিয়ে না গিয়ে স্থির ভাবে তাকিয়ে থাকে দেবাংশুর দিকে। হঠাৎ করেই দিয়ারার পিছন থাকা ফ্রুট বোল থেকে একটা আপেল তুলে নিয়ে দেবাংশু সরে আসে। আপেলটা দু ভাগ করে এক ভাগ দিয়ারার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

দেবাংশু: এই নাও তোমার পারিশ্রমিক।

দিয়ারা মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলে দেবাংশু নিজের হাত গুটিয়ে নেয় এবং কামড় বসায় হাতে থাকা আপেলে। দিয়ারা আড় চোখে দেখে দেবাংশুর কোনো হেলদোল নেই সে নিজের মনে আপেল খাচ্ছে বসে বসে।

দিয়ারা: আমাকে নিজের ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করার খুব কি দরকার ছিলো? তুমি যখন প্রথম থেকেই দি কে বিয়ে করতে চাইতে তাহলে আমাকে মাঝে টেনে আমার কি প্রয়োজন ছিলো? আমাকে বলে দিতে আমি নিজেই সরে যেতাম।

এটুকু বলেই দিয়ারা উঠে যায় কিন্তু তার আগে লক্ষ্য করে দেবাংশুর চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। পরোয়া না করে চলে যেতে নিলেই পিছন দিক দিয়ে হাতে টান পরে দিয়ারার। দিয়ারাকে নিজের জায়গায় দাঁড় করিয়ে রেখে দেবাংশু দিয়ারার পাশে এসে দাঁড়ায় আর বলে,

দেবাংশু: এই বিয়েটা একটা নাটক দিয়ু।

দিয়ারা দেবাংশুর দিকে তাকায় কিন্তু ওর চাহুনি দেখে মনে হয় না ও খুব একটা অবাক হয়েছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে দিয়ারা জিজ্ঞেস করে,

দিয়ারা: বুঝলাম। আর কিছু? আর কি কি করতে হবে বলে দাও আমাকে আমি চেষ্টা করবো ঠিক করে করার।

দেবাংশু: (দিয়ারাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে) আমি তোমাকে ঘুটি বানাইনি দিয়ু। আজকেই আমি প্ল্যানটা করেছি আর আজকেই আমাকে তোমাকে পুরো বিষয়টা জানালাম। আমি জানতাম তুমি কষ্ট পাবে…

দিয়ারা: তারপরেও তুমি আমাকে না জানিয়েই প্ল্যানটা করে ফেললে? আমার সাথে আলোচনা করলে তোমার মনে হয় আমি বাঁধা দিতাম? (শান্ত ভাবে)

দেবাংশু কিছু বলতে গিয়েও চেপে গেলো। দিয়ারা নিজেকে দেবাংশুর হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলে দেবাংশু শক্ত করে দিয়ারার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো।

দিয়ারা: ছাড়ো আমাকে ভালো লাগছে না আমার।

দেবাংশু: প্লিজ রাগ করো না। হ্যাঁ আমি প্ল্যানটা করার আগে তোমাকে জানাইনি কিন্তু এটা যে একটা নাটক এটা সবার আগে আমি তোমাকেই জানিয়েছি। আর কেউ কিচ্ছু জানে না এই বিষয়ে।

দিয়ারা: আর এই কয়দিনে তুমি যেই ব্যবহারটা আমার সাথে করেছো সেটা?

দেবাংশু আবারও চুপ করে মাথা নীচু করে নিলে দিয়ারা ধাক্কা মেরে দেবাংশুকে সরিয়ে দেয় যার ফলে দেবাংশু টেবিলে গিয়ে ধাক্কা খায়। টাল সামলাতে গিয়ে দেবাংশু টেবিল শক্ত করে ধরতে যায় কিন্তু সেখানে ছুরিটা থাকায় সেটা ধরে ফেলে আর হাতটা একটু কেটে যায়। এসব কিছুই দিয়ারা দেখতে পায় না কারণ ধাক্কা মারার পরেই দিয়ারা পিছন ফিরে যায়।

দিয়ারা: আমি তোমার সাথে আর কোনরকম কোনো কথা বলতে চাই না। আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছি বিয়েটা নাটক যখন তুমি এসে আমাকে বললে ভিকি দাকে বলতে দি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছে। আমাকে অন্তত এই বিষয়ে আগে থেকে সবটা জানানো যেতো দেবদা। তুমি চাইলেই সেটা পারতে কিন্তু তুমি দিনের পর দিন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আমাকে কষ্ট দিলে। … ভালো করেছো। আমার কিছু বলার নেই, যেহেতু প্ল্যান সম্পর্কে জানি তাই কি করতে হবে বলে দিও। প্ল্যান সাকসেসফুল হলে তোমার আর আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক আর থাকবে না।

দেবাংশু দিয়ারার শেষ কথাটা শুনে হাতের মুঠোয় ছুরিটা শক্ত করে চেপে ধরলো যার ফলে টুপ টুপ করে রক্ত মেঝেতে পরতে লাগলো। দেবাংশুর থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে দিয়ারা দেবাংশুর দিকে তাকাতেই দেখলো দেবাংশু এক ভাবে মুখ শক্ত করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দিয়ারার নজর দেবাংশুর চোখ থেকে নীচে নামতেই হাতের উপর পরলো।

দিয়ারা: দেবদা কি করছো টা কি? হাত কেটে গেছে তোমার রক্ত বের হচ্ছে তো!

দিয়ারা দেবাংশুর কাছে আসতেই দেবাংশু ছুরিটা ছেড়ে দেয় আর মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়। দিয়ারা হাতটা দেখতে নিতে চাইলে হাতটা সরিয়ে নিয়ে নিজেও দূরে সরে আসে। গম্ভীর গলায় বলে,

দেবাংশু: ইচ্ছা করে কষ্ট দিইনি আমি তোকে। যা কিছু করেছি ভালোর জন্যেই করেছি। এখন সবটা বলা সম্ভব না, যতটা সম্ভব বললাম। পারলে ক্ষমা করিস।

দেবাংশু বেরিয়ে যেতে নিলে দিয়ারা ওর সামনে দাঁড়িয়ে ও’কে আটকালে দেবাংশু মুখ ফিরিয়ে নেয়।

দিয়ারা: কষ্টও পাবো আমি? আর রাগ সহ্য করবোও আমি তাই তো? (কাঁপা গলায়)

দেবাংশু: তো তোর মনে হয় আমি কোনো কষ্ট পাইনি? বলছি তো ইচ্ছা করে কিচ্ছু করিনি আমি।

দিয়ারা কিছু না বলে ফার্স্ট এইড বক্স এনে দেবাংশুকে সোফায় বসিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। ব্যান্ডেজ যখন প্রায় শেষ করে দিয়ারা উঠে যাওয়ার আগে বলে,

দিয়ারা: কষ্ট যখন দিয়েছো তখন মানানো উচিৎ। না কি উল্টে রাগ দেখানো উচিত। সবসময় যদি আমাকে বুঝে চলতে হয় তাহলে আমাকে কে বুঝবে?

দিয়ারা উঠে গেলে দেবাংশু দিয়ারার হাত টেনে ও’কে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়। দিয়ারার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে,

দেবাংশু: আই অ্যাম স্যরি জান। তুই তো জানিস আমি ইচ্ছা করে কখনও তোকে কষ্ট দেবো না। এখনও অনেক কিছু সামনে আনা বাকি। তাই জন্যেই আমি এসব করেছি, করছি। আমি জানি তুই আমাকে বুঝবি। আমি যদি তোকে সবটা বলতে পারতাম তাহলে এখনই বলে দিতাম। কিন্তু সেটা সম্ভব না এখন।

দিয়ারা: তুমি নিজের লাইফ রিস্ক নিয়ে কিছু করছো না তো? (ঘাবড়ে গিয়ে)

দেবাংশু: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) সবটা ঠিক করার জন্য যা করার করছি আমি। তাই তো বলছি, রেগে থাকিস না আমার উপর। আজ আছি, কাল না ও থাকতে…

দিয়ারা: (মুখে হাত রেখে) কি আজে বাজে কথা বলছো এসব? (দেবাংশুর গলা শক্ত করে জড়িয়ে) কিচ্ছু হবে না তোমার।

দেবাংশু: (দিয়ারার কাঁধে থুতনি রেখে) যাক মানানো গেলো তাহলে। (হাসিমুখে)

বর্তমান……………………

সিয়ারা: দুই বন্ধুর রাগ দেখেছিস? ভুল নিজেরা করবে আর রাগও নিজেরাই দেখাবে। (রাগ করে)

দিয়ারা: আর কি! আমাদেরকেই শুধু বুঝে চলতে হয়। আচ্ছা এসব থাক এখন, তুই নীচে আয় আমি এগোলাম।

দিয়ারা ঘর থেকে বেরিয়ে যায় একটু স্বস্তি নিয়ে। কিছুটা এগোতেই ওর হাতে টান পরে আর কেউ ও’কে একটা ঘরে টেনে নেয়।

দিয়ারা: আরে…

দিয়ারা কিছু বলার আগেই কেউ নিজের ঠোঁটজোড়া ওর ঠোঁটজোড়ার উপর চেপে ধরে। দিয়ারা মানুষটাকে চিনতে পেরে তাঁর কাঁধ খামচে ধরে এক হাত দিয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দিয়ারাকে ছেড়ে দিয়ে সে ওর কানে বলে,

__এটা সাবধানে নিজের কাছে রাখবি। আই লাভ ইউ!

ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো দেবাংশু। দিয়ারা কিছু বুঝতে পারলো না শুধু নিজের হাতের দিকে তাকালো আর একবার দেবাংশুর যাওয়ার দিকে তাকালো।

দিয়ারা: পুরোই পাগল!

দিয়ারা নীচে নেমে এসে দেখলো আধভিক চুপচাপ সোফায় বসে আছে। আভাস বাবু আর উকিলবাবু কথা বলছেন একে অপরের সাথে। আধভিক আড় চোখে আভাস বাবুর দিকে তাকালেও আভাস বাবু তাকাচ্ছেন না আধভিকের দিকে। দিয়ারা গিয়ে আধভিকের পাশে দাঁড়ালে আধভিক দিয়ারার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,

আধভিক: তুইও ঠিক করে কথা বলবি না আমার সাথে?

দিয়ারা: তুমি যেটা করেছো সেটা ঠিক করনি ভিকিদা। দি কতটা কষ্ট পেয়েছে এই কয়দিন সেটা আমরা সবাই নিজের চোখে দেখেছি। আভাস আংকেলের নিজেকে অপরাধী মনে হতো দিয়ের কাছে। তাই তোমার উপর একটু বেশিই রেগে আছে।

আধভিক: তোরও মনে হয় আমি ভালো ছিলাম? (তাচ্ছিল্য হেসে)

দিয়ারা: একদমই আমি এটা বলছি না। তোমরা দুজনেই কষ্ট পেয়েছ তোমার চলে যাওয়ায়। এইটাই আমাদের কথা, তুমি কেন চলে গেলে? কি লাভ হল এতে? দুজনেই কষ্ট পেলে শুধু শুধু এতগুলো দিন।

আধভিক: হম।

আধভিক আর কথা না বাড়ালে দিয়ারা আভাস বাবুর দিকে তাকায়। আভাস বাবুও এখন ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। দিয়ারা ইশারা করে জানো একটু ম্যানেজ করে নেয়। আভাস বাবু উকিলবাবুকে বলে আধভিকের দিকে এগিয়ে গেলো। আধভিকের পাশে এসে আভাস বাবু এসে বসলে আধভিক আড় চোখে একবার দেখে নিয়ে আবার নীচের দিকে তাকায়।

আভাস বাবু: কোথায় ছিলে এতদিন?

আধভিক: না থাকলে ভালো হতো তাই না?

আভাস বাবু: ভিকি!

আভাস বাবু ধমক দিতেই আধভিক চোখ বন্ধ করে নেয়। কিছুক্ষণ আগে সিয়ারার কথাগুলো এমনিতেই আধভিকের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধভিক কিছু বলতে পারছে না, চিৎকার করে কাঁদতে পারছে না তাই জন্য ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে ওর। সব কিছু ভুলে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে আধভিক বলে,

আধভিক: বাইরে ছিলাম।

আভাস বাবু: কেন করলে এমনটা? নিজেও তো কষ্ট পেয়েছো। এখনও পাচ্ছো। তুমি এমনটা না করলে এত কষ্ট পেতে হতো না তোমাদের।

আধভিক: হম।

আভাস বাবু বুঝতে পারলেন তাঁর ছেলের মনের অবস্থা। উনি আন্দাজ করেছেন সিয়ারার সাথে সবটা মিটিয়ে আসতে পারেনি আধভিক। ওর মনের ভিতর যেই ঝড়টা চলছে সেটার অনুমান আভাস বাবু করতে পারছেন। আভাস বাবু আধভিকের কাঁধে হাত রাখতেই আধভিক কিছুটা সময় নিয়ে আভাস বাবুর দিকে তাকালো। তাতেই আভাস বাবুর বুকটা কেঁপে উঠলো। আধভিকের চোখ জোড়া রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে আভাস বাবু বললেন,

আভাস বাবু: সব ঠিক হয়ে যাবে ভিকি। সিয়া মা তোর উপর কতক্ষন আর অভিমান করে থাকবে? তোদের বিয়েটা আজকে হয়ে যাক, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

আধভিক: আমার ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে ড্যাড!

আভাস বাবু: এতদিন যখন নিজেকে শক্ত রেখেছিস। এখনও পারবি। হয়তো সিয়া মা কয়েকটা খারাপ কথা শুনিয়েছে কিন্তু দেখ গিয়ে ও নিজেও কষ্ট পাচ্ছে এখন সেই ভেবে।

আধভিক মাথা নাড়লো শুধু। একটু সময় পর সুধাংশু বাবু সেখানে উপস্থিত হতেই দিয়ারা সরে গেলো কিছুটা দূরে। সুধাংশু বাবু দিয়ারাকে একবার দেখে নিয়ে আভাস বাবুদের কাছে গিয়ে বসলেন।

সুধাংশু বাবু: সিয়া মা তোর চলে যাওয়াটা মানতে পারছিলো না। ও নিশ্চয়ই তোকে বারণ করেছিলো যেতে আর তুই শুনিসনি। তাই জন্যেই ওর অভিমান।

আধভিক: আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না স্যার।

সুধাংশু বাবু: আজ অবধি আমি তোকে অহেতুক, বোকার মতো কোনো কাজ করতে দেখিনি। তাই আমার বিশ্বাস ছিল তুই ফিরে আসবি এবং তুই যা করছিস কোনো কারণেই করছিস। চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

দেবাংশু: সিয়া কোথায়? আর কত দেরী করবে, এইবার বিয়েটা সেরে ফেলা যাক?

দেবাংশু এসে সবাইকে দেখতে পেলো কিন্তু সিয়ারাকে দেখতে না পেয়ে কথাটা বলতেই দিয়ারা বলে উঠলো,

দিয়ারা: দি ঘরে আছে। আমি ডেকে নিয়ে আসছি।

দিয়ারা সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলে দেবাংশু একবার আধভিকের দিকে তাকায়। আধভিক সিয়ারার ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ সরাতেই দেবাংশুর সাথে চোখে চোখ পরে যায় আধভিকের। কিছুক্ষণ পর,

দেবাংশু: এত সময় লাগছে কেন দিয়ুর আসতে?

আভাস বাবু: সত্যি তো, অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো। ডাকার জন্য এতক্ষণ তো লাগার কথা নয়।

সেই মুহুর্তে দিয়ারা হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে সবার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে সবাইকে জানালো,

দিয়ারা: দি, দি নিজের ঘরে নেই…ভি..ভিকিদা।

সবাই কথাটা শোনা মাত্রই উঠে দাঁড়ালো। আভাস বাবু বলে উঠলেন,

আভাস বাবু: খুঁজেছিস ঠিক ভাবে তুই?

দিয়ারা: কো..কোথাও পেলাম না আমি ও’কে।

সুধাংশু বাবু: পুরো বাড়ি নিশ্চয় খোঁজা হয়নি। আর ও যাবেই বা কোথায়?

__স্যার! বাড়ির পিছন দিকের গেটের তালা ভাঙা হয়েছে। আওয়াজ শুনে আমি ওখানে পৌঁছে দেখলাম কেউ কোথাও নেই।

এমন সময় সিকিউরিটি গার্ডের কথা শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেলো। আভাস বাবু নিজের মত করে বিড়বিড় করে উঠলেন,

আভাস বাবু: তাহলে কি সিয়ারা আবার…??

আধভিক: না ড্যাড! আমি বিশ্বাস করিনা এটা। আগেও একবার আমি ভুল করেছিলাম বিষয়টা খতিয়ে না দেখে, এইবার আমি সেই ভুল করবো না। আর যদি সত্যিই সিয়ারা পালিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলেও ও’কে খুঁজে বার করবো আমি। সেটা যেখান থেকেই হোক আর যেভাবেই হোক!

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৭২||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আভাস বাবু: তাহলে কি সিয়ারা আবার…??

আধভিক: না ড্যাড! আমি বিশ্বাস করিনা এটা। আগেও একবার আমি ভুল করেছিলাম বিষয়টা খতিয়ে না দেখে, এইবার আমি সেই ভুল করবো না। আর যদি সত্যিই সিয়ারা পালিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলেও ও’কে খুঁজে বার করবো আমি। সেটা যেখান থেকেই হোক আর যেভাবেই হোক!

আধভিক এগোনোর জন্য পা বাড়াতেই ওর নিজের নামের চিৎকার ওরসহ সবারই কানে ভেসে এলো।

“আভিইই!!”

আধভিক চিৎকারটা শুনেই উপরের দিকে তাকালো কারণ ওর কান অনুমান করছে চিৎকারটা উপর থেকে এসেছে। আধভিক এবং উপস্থিতি সবাই উপরে তাকাতেই দেখলো ব্যালকনির সামনে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে সিয়ারা। সিয়ারাকে দেখতেই আধভিকের মুখ ও হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেলো। কারণ কেউ একজন পিছন থেকে সিয়ারার গলায় ছুরি ধরে আছে।

আধভিক: সিয়ু..!!

আধভিক সিঁড়ির দিকে এগোতেই আরেকটা গলার স্বর ভেসে এলো।

“প্লিজ, এগিয়ে আসার ভুলটা করো না।”

আধভিক নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলে সিয়ারার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি সিয়ারার পাশে এসে দাঁড়ায়। হাসিমুখে আধভিককে অপর হাত দিয়ে হাত নেড়ে বলে,

“হ্যালো ব্রাদার! কেমন আছো?”

আধভিক: অভ্র! সিয়ুকে কেন এভাবে ধরে রেখেছিস। ছেড়ে দে ও’কে, লেগে যাবে ওর।

অভ্র: একদম লাগবে না ব্রাদার। শুধু তোমাকে তার জন্য আমার একটু কথা শুনে চলতে হবে। ব্যাস তাহলেই তোমার সিয়ু ঠিক থাকবে। (সিয়ারার গালে আঙুল ছুঁয়ে)

সিয়ারা মুখটা সরিয়ে নিলে অভ্র আরেকটু শক্ত করে হাত ধরে যার জন্য সিয়ারা কুঁকিয়ে ওঠে। সেটা শুনে আধভিক তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,

আধভিক: ফাইন! কি চাই তোর? বল আমাকে, আমি সব দিয়ে দিতে রাজি। শুধু সিয়াকে ছেড়ে দে। প্লিজ অভ্র!

অভ্র: বেশি কিছু না, যা যা তোমার আছে? সেগুলোই চাই আমার। (হাসিমুখে)

আধভিক: তোর সম্পত্তি চাই তাই তো? ঠিক আছে। আমি লিখে দিচ্ছি সব কিছু তোর নামে।

অভ্র: শুধু সম্পত্তি আছে তোমার? আরো একটা জিনিস আছে তোমার, যদিও সেটা এখন আমার কব্জায়। (সিয়ারার হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরে)

সিয়ারা: অভ্র লাগছে আমার, ছাড়ো! তুমি যেটা চাইছো সেটা কখনও তুমি পাবে না। তোমার হওয়ার থেকে তোমার হাতে মরতে বেশি পছন্দ করবো আমি। তাও তোমার হতে রাজি হবো না কারণ সিয়ারা শুধু আধভিকের।

আধভিকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে সিয়ারার কথাটা শুনে কিন্তু নিমিষে তা মলিন হয়ে যায় যখন অভ্র সিয়ারার গলায় ছুরিটা আরেকটু চেপে ধরে। সিয়ারার গলা বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছে সেটা দেখতেই আধভিক বলে ওঠে,

আধভিক: অভ্র সিয়ার লাগছে ছাড় ও’কে।

অভ্র: দেখেছো তো সিয়া বেবি! তুমি রাজি হলেও তোমার লাভার যে রাজি না। সে তোমাকে নিজের চোখের সামনে মরতে দেখতে পারবে না আর যাই হোক। সো আগে সম্পত্তিটা আমি পেয়ে যাই, তারপর তুমি না হলে তোমার বোন তো আছেই। সেটা দিয়েও কাজ চালিয়ে নিতেই পারি আমি।

দিয়ারা: ভিকিদার হাত থেকে বাঁচবি কি না সন্দেহ, এখন আবার তাঁর বন্ধুকেও নিজের ধ্বংসের জন্য আহ্বান করছিস? সাহস আর শখ দুটোই, কম না দেখছি (হেসে)

অভ্র: এক্সাকটলি, আমার সাহস আর শখ দুটোই খুব বেশি। চলো সিয়া বেবি, নীচে চলো। কতক্ষণ আর ওদের মাথার উপর দাঁড়িয়ে থাকবো, একটু ওদের সমান সমানে গিয়ে দাঁড়াই। তাহলেই না খেলা জমবে, কি বলো?

অভ্র সিয়ারার হাত ধরে টানতে টানতে নীচে নিয়ে আসতে থাকলে সবাই নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেও দেবাংশু দিয়ারার কাছে এসে পাশে দাঁড়ায়। অভ্র নীচে এসে সিয়ারার গলায় আবার ছুরিটা ঠেসে ধরে যার ফলে সিয়ারার গলা থেকে রক্তের ধারা বইছে ধীর গতিতে। আধভিক সেটা আর সহ্য করতে না পেরে বলে,

আধভিক: আমি আমার সব কিছু তোর নামে করে দিচ্ছি তুই প্লিজ, প্লিজ ও’কে ছেড়ে দে।

অভ্র: ছেড়ে তো দেবই, নাহলে ও’কে হাসিল করবো কি করে মাই ডিয়ার ব্রাদার?

আধভিক: (চোখ একবার বন্ধ করে নিয়ে) ঠিক আছে। আমি তোর সব কথায়…আমি তোর সব কথায় রা…

দেবাংশু: এক মিনিট!

অভ্র দেবাংশুর দিকে তাকায় এবার। দেবাংশু সেটা দেখে হাসিমুখে বলে,

দেবাংশু: এতো তাড়াহুড়ো করছিস কেন? একটু ধীরে সুস্থে এগো। দাঁড়া, তুই তো এত কিছু দেখালি। এইবার আমিও তোকে কিছু দেখাতে চাই।

দেবাংশু দিয়ারার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে অভ্র ভ্রু কুঁচকে নিয়ে আবারও সিয়ারার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে। সিয়ার ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে অস্পষ্ট স্বরে “আভি” বলে ওঠে। দিয়ারা দেবাংশুর হাতে একটা ফোন দিলে অভ্রর হাতটা একটু আলগা হয়।

দেবাংশু: দেখ তো অভ্র, চিনতে পারিস নাকি?

দেবাংশু অভ্রের সামনে একটা ভিডিও খুলে ফোনটা চোখের সামনে ধরে। সেটা দেখতে আধভিক একটু এগিয়ে যায় আর অভ্রের মতো আধভিকের চোখও বড়ো বড়ো হয়ে যায়।

দেবাংশু: দেখ ভাই, যথেষ্ট ভালো ক্যামেরা দিয়ে শুট করেছি। একদম হাই কোয়ালিটির ভিডিও আছে বস! (বাঁকা হেসে)

অভ্র: মম!

আধভিক: দেব, ইনি..ইনি তো…

দেবাংশু: রঞ্জিতা রায় চৌধুরী! ঠিক বলছি তো অভ্র?

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটা চেয়ারে রঞ্জিতা দেবীকে হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে এবং মাথায় ধরা রয়েছে পিস্তল। অভ্র সিয়ারার গলা থেকে হাত নামিয়ে নিতে নিতে বলে,

অভ্র: আমার মমকে কোথায় পেলি তুই? আমার মম…

দেবাংশু অভ্রকে হাত নামাতে দেখেই পিছনে কাওকে কিছু ইশারা করে যার ফলে কেউ পিছন থেকে অভ্রকে ধাক্কা দেয় আর সেই সুযোগ বুঝে আধভিক সিয়ারাকে নিজের বুকে টেনে নেয়। সিয়ার ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও আধভিকের বুকের সাথে লেপ্টে যায় পুরোপুরি। এদিকে দেবাংশু সাথে সাথে অভ্রকে ধরলে অভ্র ছুরি চালাতে যায় ওর উপর কিন্তু দেবাংশু অভ্রের হাত মুড়িয়ে ছুরিটা ফেলে দেয় আর অভ্রকে ধাক্কা মারে। অভ্র হুমড়ি খেয়ে আধভিকের পায়ের কাছে পরলে দেবাংশু পিছন থেকে বলে ওঠে,

দেবাংশু: বলেছিলাম না? সবার সামনে তোকে ভিকির পায়ের কাছে এনে ফেলবো। দেবাংশু গাঙ্গুলি নিজের কথার খেলাপ করে না। আমি তোকে নাচালাম আর তুইও নাচলি। আরে কুলুর বলদ, আমি আধভিকের বন্ধু। তাও আবার যে সে নয়, শ্রেষ্ঠ বন্ধু। তোর ভাবনা যেখানে শেষ হয় সেখান থেকেই আমাদের ভাবনা শুরু হয়, মাই ডিয়ার ব্রাদার! (নকল করে)

দেবাংশুর কথা শেষ হতেই দিয়ারা দেবাংশুর কাছে চলে আসে। এসে ওর হাতটা দেখে দিয়ারা আস্তে করে বললো,

দিয়ারা: লাগেনি তো তোমার কোথাও?

দেবাংশু: (দিয়ারার হাতের উপর হাত রেখে) ঠিক আছি।

আধভিক এক হাত দিয়ে অভ্রর কলার ধরে টেনে তুললো আর পিছন দিকে ধাক্কা মারলো। অভ্র পিছিয়ে যেতেই ও’কে ধরে নিলো পুলিশ ইন্সপেক্টর রুদ্রিক। সে’ই অভ্রকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে ছিলো দেবাংশুর ইশারায়। আধভিক সিয়ারাকে সোজা করে ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তারপর দিয়ারার দিকে তাকাতেই দিয়ার দেবাংশুর দিকে তাকায় আর দেবাংশু ইশারা করে দিয়ারাকে যেতে বলে। দিয়ারা আধভিকের দিকে এগিয়ে গিয়ে সিয়ারাকে সরিয়ে আনতে চাইলেও পারে না। সিয়ারা শক্ত করে আধভিককে ধরে আছে এখনও।

আধভিক: সব ঠিক আছে সিয়ু। তোমার গলা থেকে রক্ত বের হচ্ছে, ওষুধ লাগাতে হবে তো? আমি এখানেই আছি। এখন সবাইকে সবটা জানানোর পালা। যাও, ওষুধ লাগিয়ে নাও।

আধভিকের কথা শুনে সিয়ারা একবার অভ্রের দিকে তাকায় তারপর দিয়ারার সাথে সরে আসে। দিয়ারা দিদিকে সোফায় বসিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসে ওষুধ লাগিয়ে দিতে শুরু করে।

দিয়ারা: ঠিক আছিস তো তুই?

সিয়ারা শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। আধভিক সেটা দেখে অভ্রর দিকে ফিরলো আর ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

আধভিক:হ্যালো ব্রাদার! কেমন আছিস? (বাঁকা হেসে)

অভ্র রাগে চোখ মুখ শক্ত করে নিলে আধভিক ভুল বলে ফেলেছেন এমন ভান করে বলে,

আধভিক: স্যরি, স্যরি! মাই ব্যাড! ইউ আর নট মাই ব্রাদার। সব জানার পরেও আমি তো তোকে নিজের ভাই বলতে পারি না। যাও এতদিন সৎ ভাই বলতাম, এখন তো সেটাও বলা চলে না। তাই তো ড্যাড?

আধভিক আভাস বাবুকে প্রশ্নটা করলে আভাস বাবু হতভম্ভ হয়ে আধভিকের দিকে তাকিয়ে থাকেন। সিয়ারার দিকে তাকালে দেখেন সিয়ারাও অবাক চোখেই তাকিয়ে আছে। সিয়ারা আভাস বাবুর দিকে তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়তেই আধভিক বলে,

আধভিক: সিয়ু আমাকে কিছু বলেনি ড্যাড। যা বলার তুমিই বলেছো। হ্যাঁ আমার জায়গায় সিয়ুকে বলেছো আর সেটা আমি শুনে নিয়েছি এটাই বিষয়।

কথা শেষ করে আধভিক অভ্রর দিকে ফিরে ওর কাঁধে হাত রেখে বলে,

আধভিক: আমি তো অনেক কিছুই জেনেছি। এইবার যা জানার তুই জানবি। কীভাবে তোর চালে তোকে মাত দিলাম, জানতে হবে তো নাকি?

আধভিক রুদ্রিককে ইশারা করলে সে অভ্রকে একটা চেয়ারে ধরে বসায়। আধভিক সিয়ারার কাছে চলে যায়, গিয়ে পাশে বসতেই সিয়ারা আধভিকের বাহু জড়িয়ে ধরে ধরে। দিয়ারা উঠে আসলে দেবাংশু ওর পাশে দাঁড়িয়ে ও’কে একহাতে জড়িয়ে নেয়।

আধভিক: তো বল, কোথা থেকে বলা শুরু করবো?

অভ্র: সবটা নাটক ছিলো তাই না? এই যে তোর চলে যাওয়া, এই হয়ে সবটা নাটক তাই তো? (রেগে)

আধভিক: নাটক ঠিক নয় আবার সব যে না ভেবে করেছি তাও নয়। কিন্তু বিয়েটা যে নাটক সেটা তো তুই ভালো ভাবেই জানতি। (বাঁকা হেসে)

অভ্র: (দাঁতে দাঁত চেপে) তোকে মেরে দেওয়াই উচিৎ ছিলো সেদিন রাতে।

আধভিক: সো স্যাড! কি আর করবি বল? যখন যুদ্ধটা নিজেদের মধ্যে লেগে যায় তখন এটাই হয়। এই স্টেপগুলোই ভুল নিয়ে ফেলেছিস তোরা মা-ছেলে মিলে। আর শুধু যে মা ছেলে তেমন তো নয়, আরেকজনকে ভিড়িয়ে ছিলি তোরা তোদের গ্রুপে।

অভ্র: মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?

আধভিক: (বাঁকা হেসে) এটাই যে, সিয়ারাকে অ্যাসিড অ্যাটাক তোর মায়ের লোক নয়, রিনার লোক করেছিলো। যেটা তুই বুঝতেই পারিসনি।

সিয়ারা: রিনা? (অবাক হয়ে)

দেবাংশু: হ্যাঁ রিনা। রিনার প্রথম থেকেই ভিকিকে পছন্দ ছিলো কিন্তু যখন ও বুঝতে পারলো ভিকি তোকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে অ্যাকসেপ্ট করবে না নিজের লাইফে তখন ওর রাগটা তোর উপর গিয়ে পরেছিলো। ওর টার্গেট হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো যেকোন মতে তোর ক্ষতি করা। সেই জন্যেই ও তোর উপর অ্যাসিড অ্যাটাক করায়। এদিকে অভ্র ভেবেছিলো ওর মা কাজটা করেছে।

আধভিক: কারণ ওর মা অভ্রকে বলেছিলো সিয়ারাকে আমার থেকে দূরে করতে হবে। সিয়ারার ক্ষতি করলেই আমি নিজেকে শেষ করার মতো কাজটা করবো। আর আমি নিজেকে শেষ করলেই আমার সব সম্পত্তি পেয়ে যাবে অভ্র, সম্পর্কে আমার ছোট ভাই যে কি না এই বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী।

দিয়ারা: তুমি নিজেকে শেষ করলে কেন পাবে?

আভাস বাবু: আমি বলছি। আমার মা এই বাড়ি, সম্পত্তি সব আধভিক ও আমার নামে করে গেছিলো। আমি যখন বুঝলাম রঞ্জিতা এসব সম্পত্তির লোভে করছে, ও চাইলে আমার ছেলের ক্ষতি করতে পারে তখনই আমি সম্পত্তির পেপার অন্য ভাবে তৈরী করি। ওখানে এটা লিখে দি যে, ভিকি যদি কখনও সুইসাইড করে তাহলেই এই সম্পত্তি ওর পরে যে থাকবে সে পাবে। নাহলে এই সব সম্পত্তি সরকারের কাছে চলে যাবে।

আধভিক: এটা জানা মাত্রই রঞ্জিতা দেবী নানা ভাবে সিয়ারাকে আমার থেকে আলাদা করার চেষ্টা করতে শুরু করে। প্রথম, সিয়ারার মাকে বাধ্য করে যাতে সিয়ারা বিয়ের আসর ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যায়। দ্বিতীয়, সিয়ারা চলে যাওয়ার পর সিয়ারার মা জানো আমাকে আর কিছু বলতে না পারে তাই ওনাকে শেষ করার চেষ্টা। তৃতীয়, সিয়ারার নামে আমাকে ভুল বোঝানো এবং আমার নামে সিয়ারাকে ভুল বোঝানো যাতে আমরা কখনও এক না হতে পারি আর।

সিয়ারা: মানে আমি যে জানতে পেরেছিলাম তুমি বিয়ে করে নিয়েছো আর তুমি জেনেছিলে আমি বিয়ে করে নিয়েছি এটা আমাদেরকে ওনার লোক জানিয়েছিল?

আধভিক: এক্সাক্টলি। এরপরেই অভ্র নিজের গেম খেলে। তোমাকে পাওয়ার জন্য সুধাংশু স্যারের পি এ কে হাত করে তোমাদের প্রোডাকশন হাউজ অন্য প্রোডাকশন হাউজকে বেচে দেয়। বাধ্য করে তোমাদেরকে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে যাতে সেই সময় অভ্র এন্ট্রি নেবে আর তোমাকে বলবে তুমি যদি ও’কে বিয়ে করো তাহলে সব কিছু ও তোমাকে ফিরিয়ে দেবো। কিন্তু, কিন্তু, কিন্তু … সেটাতেও ও সাফল্য পায় না। মাঝখানে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ায়……..

[#ফিরে_হাসবো_আগামী_পর্বে🥀]’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৭৩||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আধভিক: এক্সাক্টলি। এরপরেই অভ্র নিজের গেম খেলে। তোমাকে পাওয়ার জন্য সুধাংশু স্যারের পি এ কে হাত করে তোমাদের প্রোডাকশন হাউজ অন্য প্রোডাকশন হাউজকে বেচে দেয়। বাধ্য করে তোমাদেরকে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে যাতে সেই সময় অভ্র এন্ট্রি নেবে আর তোমাকে বলবে তুমি যদি ও’কে বিয়ে করো তাহলে সব কিছু ও তোমাকে ফিরিয়ে দেবো। কিন্তু, কিন্তু, কিন্তু … সেটাতেও ও সাফল্য পায় না। মাঝখানে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ায় আমার ড্যাড!

সিয়ারা: আংকেল? (অবাক হয়ে)

দিয়ারা: এক মিনিট, আংকেলই তো প্রোডাকশন হাউজটা কিনে নিয়েছিল কেসিবি প্রোডাকশনের থেকে। কিন্তু সেটা ত আংকেল নিজের অজান্তেই করেছিল তাই না?

আধভিক: নাহ। পুরোটা প্রী প্ল্যানড ছিলো ড্যাডের। ড্যাড খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিল ওই প্রোডাকশন হাউজ সুধাংশু স্যারের। আরেকটু খোঁজ নিতেই জানতে পেরে গেছিলো ওই প্রোডাকশন হাউজের আন্ডারে যে সিরিয়ালটা চলছিলো সেটায় সিয়ারা ডেবিউ করছে। ব্যাস, অভ্রকে না জানিয়েই ড্যাড কিনে নিলো প্রোডাকশন হাউজটা আর আমাকে সেটে কথা বলতে পাঠালো। ড্যাড জানতো আমি ঠিক কোনো না কোনো ভাবে বিষয়টা ব্যালেন্স করার চেষ্টা করবো। বেশ ভালো অভিনয় করো কিন্তু তুমি ড্যাড!

অভ্র: ওয়াও! আমার পিছনেই তাহলে ছুরিটা বসিয়েছো তুমি পাপা?

আভাস বাবু: আমার ছেলের পিছনে যে ছুরি বসাতে চাইবে তাঁর পিছনে হোক বা সামনে আমি ছুরি বসানো তো কি তলোয়ার চালাতেও দ্বিধা বোধ করবো না। (আধভিকের দিকে তাকিয়ে যে ইতিমধ্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছে) আব, ইয়ে মানে…তু..তুমি এইসব কীভাবে জানলে?

আধভিক: খোঁজ নিলাম। অফিসে তোমার বিশ্বস্ত লোকের তো অভাব ছিল না? আর আমার কাছে আমার বিশ্বস্ত লোক হিসেবে সোহম ছিলো। ওই আমাকে খবর দিলো যে তুমি তোমার লোক দ্বারা জানতে পেরেছিলে অভ্র একটা প্রোডাকশন হাউজ কিনছে তাও তোমাকে না জানিয়ে। তাই জন্যেই তুমি খোঁজ নাও সেই বিষয়ে আর সবটা জেনে অভ্রকে না জানিয়ে কিনে নাও।

অভ্র: তুমি তো কখনও আমাকে ছেলে মনেই করনি ড্যাড, এই জন্যেই এতো বড় বেইমানিটা আমার সাথে করলে তাই না?

আভাস বাবু: বেইমানি? ওইটা তোমার রক্তে আছে। তুমি আমার রক্তের নও অভ্র। তারপরেও আমি তোমাকে নিজের ছেলের মতোই বড়ো করেছি। তুমি তার কি মর্যাদা দিয়েছো? নিজের মায়ের সাথে হাত মিলিয়ে আমার ছেলের ক্ষতি করতে চেয়েছো সম্পত্তির জন্য। এইসব যদি না করতে তাহলে আমি তোমার জন্যেও সম্পত্তি লিখে দিতাম।

আধভিক: আরে তুই এত তাড়াহুরো করিস না। আসল বেইমানি তোর সাথে যে করেছে তাঁর নামটাই তো জানলি না আর এখনই অধৈর্য্য হয়ে যাচ্ছিস?

অভ্র: মা..মানে?

আধভিক: মানে এটাই যে তুই যে আজকে এখানে আসবি। এইটা আমি কার থেকে জানতে পেরেছি সেটা জানবি না?

অভ্র: র..রিনা? (অস্ফুট স্বরে)

আধভিক: ও ছাড়া আর কেই বা হতে পারে। আমি যাতে সিয়ারাকে ভুল বুঝি তার জন্য ওর সাথেই তো হাত মিলিয়েছিলিস তাই না? যখনই জানতে পেরেছিলি রিনা আমার নাম করে সিয়ারাকে শাড়ি পাঠিয়েছে ও’কে হেনস্থা করার জন্য তখনই ও’কে দলে টেনে নিতে চেয়েছিলি। কারণ ও আমাকে চায় আর তুই সিয়ারাকে। সব ঠিক ছিলো কিন্তু গন্ডগোলটা হলো যখন অ্যাসিড অ্যাটাক হলো।

অভ্র: রিনা কেন করবে অ্যাসিড অ্যাটাক? ও আমাকে বলেছিলো ও সিয়ারার কোনো ক্ষতি করবে না।

রুদ্রিক: অ্যাসিড অ্যাটাকটা রিনার লোকেরাই করিয়েছে। আমাদের কাছে সেটার প্রমাণ আছে।

আধভিক: (বাঁকা হেসে) রিনা পার্টির দিনই ঠিক করে নিয়েছিলো সিয়ারার ক্ষতি করবে। আর সেটার নাম গিয়ে পরবে তোর মায়ের উপর। কারণ ও’কে তুই জানিয়ে দিয়েছিলি তোর মা সিয়ারাকে সরাতে চায়। যেটা তুই চাস না, এমনটা হলে তুই আমাকে দেখাবি কীভাবে যে তুই আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নিয়েছিস। সেই জন্যেই রিনা অ্যাসিড অ্যাটাক করায় আর ও যেমন ভেবেছিলো, তুই তেমনই তোর মাকে সন্দেহ করিস আর কোনো কিছু না জানিয়েই আমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখাস অ্যাক্সিডেন্ট করিয়ে। যেহেতু সিয়ারার কিছু হয়নি আর সেটা না জানিয়ে করেছেন তাই তুইও না জানিয়ে করলি আর সুযোগ থাকার পরেও আমাকে প্রাণে মারলি না।

অভ্র: রিনা আমার সাথে বেইমানি করলো শেষমেষ? (নীচের দিকে তাকিয়ে)

আধভিক: তোর নিজেরই কর্মফল এটা। তুই যদি তোর মায়ের সাথে বেইমানি করতে পারিস সিয়ারার জন্য তাহলে রিনা কেন পারবে না আমার জন্য তোর সাথে বেইমানি করতে? আমার কথাতেই রিনা তোকে জানিয়েছিলো যে দেবাংশু একটা নাটক করছে আমাকে ফিরিয়ে আনার জন্য।

দেবাংশু: ওয়েট আ মিনিট! তোর কথাতে মানে? রিনার সাথে কথা বলেছিস তুই? আমি তো ইচ্ছা করে রিনার কাছে কথাটা বলছিলাম যাতে রিনা অভ্রকে জানায়।

আধভিক: হ্যাঁ কিন্তু আমার সাথে কথা হওয়ার পরেই রিনা অভ্রকে জানিয়েছে।

দেবাংশু: কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? তুই কীভাবে জানলি আমি প্ল্যান করেছি?

ওদের দুজনের কথা শুনে সবাই একপ্রকার অবাক। দিয়ারা দেবাংশুকে জিজ্ঞেস করে,

দিয়ারা: তোমরা দুজন মিলে প্ল্যান বানাওনি? আমি তো ভিকিদার এখানে আসার পর কথা শুনে ভাবলাম তোমরা দুজন একসাথে প্ল্যান বানিয়েছো।

দেবাংশু: না। আমি আমার মত করে রুদ্রিকের সাথে প্ল্যান করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম এমন একটা প্ল্যান করতে যাতে ভিকিও এখানে আসে আর অভ্রও। তখনই রুদ্রিক আমাকে এই প্ল্যানটা দেয়।

রুদ্রিক: ওটা আমার আইডিয়া নয় দেব। ওটা ভিকির আইডিয়া। ভিকিই আমাকে বলেছিলো যাতে তোকে আমি এই আইডিয়াটা দি। তুই যেমন আমাকে ভিকির অ্যাকসিডেন্টের দিন ভিকিকে জানাতে বলেছিলি অ্যাসিড অ্যাটাকটা রিনার করানো তেমনটাই আমি বলেছিলাম। তারপরই ভিকি আমাকে জানায় ও থাকবে না কিছুদিনের জন্য। ওর খোঁজ জানো কেউ না জানে। মাঝে একদিন ফোন করে আমাকে এই প্ল্যানটার বিষয়ে সবটা জানিয়ে বলে যে তোকে জানো আমি প্ল্যানটা জানাই।

দেবাংশু: (মাথায় হাত দিয়ে) যাহ তেরি! ভেবেছিলাম আমি ক্রেডিট নেবো এতো পুরো পাশা পাল্টে গেলো। ধ্যাত!

দিয়ারা জোরে হেসে ফেললে দেবাংশু চোখ সরু করে ওর দিকে তাকায় আর সাথে সাথে দিয়ারা হাসি চেপে নেয় মুখে হাত ঢাকা দিয়ে। আধভিক হেসে বলে,

আধভিক: আসল ক্রেডিট তো তোর দেব। আমি চলে গেছিলাম তার কারণ ঠাণ্ডা মাথায় পুরো হিসেব মেলাতে চেয়েছিলাম আমি। এতদিন ধরে যা যা হয়ে আসছে সবকিছু একসাথে একের পর এক মিলাতে লাগলাম ড্যাডের থেকে সত্যিটা জানার পর।

সিয়ারা: সেদিন তুমি সবটা শুনেছিলে যখন আভাস আংকেল আমাকে বলছিলো?

আধভিক: হ্যাঁ, যেতে গিয়েও নিজের ঘরে যাইনি আমি। যার কারণে সবটা জেনে গেছিলাম আমি। সেই সময়ও মনে হচ্ছিলো সিয়ারার ক্ষতি উনিই করছেন কিন্তু অ্যাকসিডেন্টের পর যখন রুদ্রিক আমাকে জানালো ওটা রিনার কাজ তখনই আমার খটকা লাগলো। খুব ভালো ভাবে বুঝে গেছিলাম আমি যে এখানে সবাই যে যাঁর নিজের স্বার্থ দেখছে। প্রথমত, মিসেস রায় চৌধুরী! উনি চেয়েছিলেন আমি যাতে সুইসাইড করি তাহলেই উনি সব সম্পত্তি পাবেন। তাহলে উনি কেন আমাকে অ্যাকসিডেন্ট করে মারতে চাইবেন? বুঝে যাই কাজটা ওনার নয়।

সিয়ারা: থ্যাংক গড আংকেল সম্পত্তির কাগজটা অমন ভাবে তৈরী করেছিলেন। নাহলে কবেই হয়তো তোমাকে শেষ করে দিতেন ওনারা।

আধভিক শুধু আভাস বাবুর দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। সত্যি তো, যদি এমনভাবে না বানাতেন পেপার্স তাহলে আধভিককে ওরা শেষ করে দিতেই পারতো কারণ আধভিকের ঠাকুমা সম্পত্তির কাগজে লিখেছিলেন ওনার অবর্তমানে সব সম্পত্তি আভাস বাবু আর আধভিকের। আভাস বাবু চাইলে নিজের সম্পত্তি লিখে দিতে পারেন কিন্তু আধভিক পারবে না। একমাত্র ওর মৃত্যু হলেই এই সম্পত্তি যদি কোনো উত্তরাধিকারী থাকে সে পাবে নাহলে সরকারের অধীনে চলে যাবে। এমনটা তিনি করিয়েছিলেন তার কারণ আভাস বাবুর আধভিক ও তাঁর মায়ের সাথে বেঠিক আচরণের জন্য। উনি ভেবেছিলেন যদি ওনার ছেলে আধভিকের থেকে লিখিয়ে নিয়ে ওদের দুজনকে তাড়িয়ে দেয় ওনার অবর্তমানে? তাই এই ব্যবস্থা। রঞ্জিতা দেবী প্রথমে জানতেন এইসব সম্পত্তি আভাস বাবুর নামে আছে। সেই সময়ই রঞ্জিতা দেবীর মতলব বুঝে রাতারাতি উকিলকে বলে আভাস বাবু পেপার্স চেঞ্জ করান। নিজের ভাগের ও নিজের সব সম্পত্তি তিনি আধভিকের নামে করে দেন ওর ঠাকুমার সম্পত্তির সাথে যোগ করে। আর বদলিয়ে দেন মৃত্যুর ধরন। মৃত্যু নয়, স্বেচ্ছা মৃত্যু বরণ করলেই সব সম্পত্তি বংশের অন্য কেউ পাবে নাহলে না। অবশ্য এসব জানতে রঞ্জিতা দেবীর অনেক সময় লেগেছিলো। উনি জানতেন না আধভিককে আভাস বাবু কোথায় পাঠিয়েছেন, যখন আধভিককে আভাস বাবু নিজের কাছে নিয়ে আসেন তখনই সম্পত্তির ব্যাপারেও উনি জেনে জান আর অন্য ফন্দি কষতে থাকেন।

আধভিক: দ্বিতীয়ত, রিনা সিয়ারার অ্যাসিড অ্যাটাক করিয়েছে এটা আমার কাছেও খুব অবাক করা বিষয় ছিল। আমিও এটাই ভেবেছিলাম যে কাজটা মিসেস রায় চৌধুরীর। এরপরেই আমি বুঝলাম আমার অ্যাকসিডেন্ট কে করিয়েছে। রিনা অভ্রের সাথে হাত মিলিয়েছিলো তার কারণ ওর আমাকে চাই আর অভ্রের সিয়ারাকে। যেহেতু রিনা অ্যাসিড অ্যাটাক করিয়েছে তাই অভ্র আমার অ্যাকসিডেন্ট করালো এমনটাই ভেবেছিলাম আমি। ঠিক সেই সময় আমাকে সোহম জানালো অফিসের বিষয়টা। ব্যাস, বুঝে গেলাম আমি সবটা।

সিয়ারা: কী বুঝলে?

আধভিক: কি আবার? অভ্রর মা চায় তোমাকে শেষ করে আমাকে মেন্টালি টর্চার করতে। দ্যান আমি নিজেকে শেষ করে দিলে সম্পত্তি ওনার ছেলের। এদিকে অভ্র সবদিকে সায় দিলেও তোমাকে শেষ করার ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে না। ওর তোমাকে চাই। সব হিসেব মেলার পর আমার একমাত্র টার্গেট ছিল রঞ্জিতা রায় চৌধুরীকে খুঁজে বার করা। তাই অভ্রের পিছনে স্পাই লাগিয়েছিলাম আমি। সেখান থেকেই জানলাম যে আমার ধারণা সঠিক, অভ্রের মায়ের সাথে অভ্র যোগাযোগ বন্ধ করেছে তোমাকে মারতে চাওয়ার চেষ্টার কারণেই।

আভাস বাবু: এগুলো তো আমাদের জানাতে পারতে তুমি ভিকি?

আধভিক: হ্যাঁ ভেবেছিলাম সবটা জানাবো তোমাদের কিন্তু তারপরেই মাথায় একটা বুদ্ধি এলো আমার। মনে হলো মাথাকে যখন খুঁজে পাচ্ছি না তাহলে কান ধরে টানলে কেমন হয়? প্ল্যান রেডি করে ফেললাম। আমি জানতাম দেব খুব তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যাবে প্ল্যানটা শুনতেই। দেব প্ল্যান এক্সিকিউট করেছে রুদ্রিকের থেকে খবর পেতেই ফোন করলাম রিনাকে। বললাম, দেব বিয়ে করছে সিয়ারাকে এটা ও’কে জানাতে হবে অভ্রকে।

দেবাংশু: ও তোর কথা শুনে জানালো কিন্তু আমার কথা শুনে জানালো না এমন কেন? আর ও যদি তোকে এতই ভালোবাসতো তাহলে তোকে ভুলে কীভাবে আমার সাথে রিলেশনে যেতে রাজি হয়ে গেল? আমি সিয়াকে বিয়ে করছি শুনে খুব রিয়্যাক্ট করেছিলো তখনই আমি ও’কে জানালাম এটা নাটক, যাতে ও জানায় অভ্রকে।

আধভিক: আমি জানতাম না তুই রিনাকে জানাবি। আমি ভেবেছিলাম ও ঠিক জানতে পারবে বিয়ের খবরটা আর অভ্রকে জানতে দেবে না। কারণ অভ্র বিষয়টা জানলেই ও দেবাংশুর নাটক চলতে দেবে যাতে আমি আসি আর আমার থেকে সম্পত্তিসহ সিয়াকেও কেড়ে নিতে পারে। কিন্তু এমনটা হতে গিয়ে ওর অ্যাসিড অ্যাটাকের বিষয়টি সামনে এসে গেলে? তখন তো অভ্রও ও’কে বাঁচাবে না। এই কারণেই ও তোর কথা শুনেই অভ্র কে জানায়নি। তাই সেই অনুযায়ী প্ল্যান করেছিলাম।

দেবাংশু: তাহলে তুই কি এমন বললি যাতে ও অভ্রকে জানালো?

আধভিক: (বাঁকা হেসে) দিয়াকে ফোন করার একদিন পরেই আমি রিনাকে ফোন করে বলি, ও যদি অভ্রকে না জানায় তাহলে আমি ওর পুরো ফ্যামিলিকে গায়েব করে দেবো। তখন যদি আমি ওকে জানিয়ে দিতাম ওর অপরাধ সম্পর্কে আমি জানি তাহলে ও ভাবতেই পারতো দুদিকেই যখন ও ফাঁসবে তাহলে কেন আমার সাথে সিয়ারার মিল হতে দেবে? কিন্তু ফ্যামিলির ভয় দেখাতেই ও রাজি হয়ে গেল কারণ অভ্রের সামনে যে ওর সত্যিটা আসবেই তার কোনো নিশ্চয়তা নেই আর প্রমাণ করতেও তো সময় লাগবে। সেই সময়ে ও না হয় পালিয়ে যাবে তাই ও একপ্রকার বাধ্য হয়ে অভ্রকে সবটা জানায়। আর রিনা কখনও আমাকে ভালোবাসেনি, ওর প্রবলেম সিয়ারাকে নিয়ে। ও বুঝে গেছিলো আমাকে পাবে না তাই ওর টার্গেট ছিলো ও সিয়ারাকেও আমাকে পেতে দেবে না কিন্তু নিজের ফ্যামিলির উপর বিষয়টা আসায় ও আর কিছু করতে পারেনি।

দেবাংশু: ওয়াও! তাই তো বলি, আমার বন্ধু হঠাৎ করে গায়েব কেন হয়ে গেলো? ভাবিনি সেই যে এসবের মাস্টারমাইন্ড। (হেসে)

আধভিক: আমি বেশি কিছু করিনি যা করার তো অভ্র করেছে।

আধভিক উঠে অভ্রের কাছে এগোলে অভ্র মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয় রাগে। আধভিক ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

আধভিক: তুই দার্জিলিং গিয়ে ইচ্ছা করে আমাকে জানিয়েছিলি আমি সিয়ারার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে তুই ওকে কিডন্যাপ করাবি নিজের লোকেদের দিয়ে। যাতে আমি আসল মাথাটাকে ধরার জন্য সিয়ারার সাথে খারাপ ব্যবহার করি। সেটা হলোও কিন্তু তুই ওখানে ছিলি না। এতে কি হলো? আমার আর সিয়ারার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিটা বেরে গেলো। আমিও ঠিক তোর চালটাই তোকে ফেরত দিলাম। ইচ্ছা করেই তোকে জানালাম যে দেব নাটক করছে আমাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। তুই ঠিক করে নিলি আমার থেকে সম্পত্তি আর সিয়ারা দুজনকেই কেড়ে নিবি আর তারপর? তারপর কি হলো? আমি যেমন তোকে সেদিন পাইনি তুইও না সম্পত্তি পেলি আর না সিয়ারাকে। সো স্যাড!

অভ্র: আমার থেকে আমার প্রাপ্য জিনিসটাও কেড়ে নিবি তুই তাই তো?

আভাস বাবু: কোনটা তোমার প্রাপ্য অভ্র? এসব কিছুই তোমার প্রাপ্য নয়। তারপরেও আমি তোমাকে নিজের ছেলের মতোই দেখেছি। জানো তোমার মা আমার কত ক্ষতি করেছে? আমার পুরো জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। … তোমার মা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে আমার স্ত্রী হয়েছিল, বাধ্য করেছিলো তোমাকে পিতৃ পরিচয় দিতে। তোমার মায়ের জন্য আমি আমার স্ত্রীকে, আমার ভালোবাসাকে হারিয়েছি। আমার মা কে হারিয়েছি, আমার ছেলেকেও…

আভাস বাবু অভ্রর প্রশ্ন শুনে উত্তেজিত হয়ে পরেন। উঠে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলতে বলতে তাঁর গলা কেঁপে গেলে আধভিক ওনার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলতে যায়,

আধভিক: ড্যাড তুমি আমাকে…

আভাস বাবু: ভিকি সরে যাও….

হঠাৎ করেই গুলির শব্দ আসে। আধ ভিক অবাক হয়ে নিজের বাবাকে ধরে ধীরে ধীরে বসে পরে। চোখের নিমিষে কি হয়ে গেল সেটা বুঝে উঠবে তাঁর আগেই আরেকটা গুলি চলে যার কারণে চিৎকার করে ওঠে সিয়ারা আধভিকের নাম ধরে। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা গুলি চলে। রুদ্রিকের গলার আওয়াজ আসে,

রুদ্রিক: অ্যারেস্ট হার!

আভাস বাবু: ভ..ভিকি! …. আমি বেঁচে থাকতে তোমার ক..কোনো ক্ষতি হ..হতে দেবো না। এ.. এমনটাই কথা দিয়েছিলাম ত..তোমার মা কে আর ন..নিজেকে। ভালো ছ..ছেলে, ভ..ভালো স্বামী হতে ন..না পারলেও ভ..ভালো বাবা হওয়ার চেষ্টা ক..করেছি। হয়তো হ.. হতে পারিনি। নিজের ভালোবাসা, নিজের ম..মাকে হারিয়েছি ত..তবে আমার প্রাণ থ..থাকতে আমি ন..নিজের ছেলেকে হ.. হারাতে পারবো ন..না।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here