কথা দিলাম পর্ব -৭৪+৭৫ ও শেষ

‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৭৪||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আভাস বাবু: ভ..ভিকি! …. আমি বেঁচে থাকতে তোমার ক..কোনো ক্ষতি হ..হতে দেবো না। এ.. এমনটাই কথা দিয়েছিলাম ত..তোমার মা কে আর ন..নিজেকে। ভালো ছ..ছেলে, ভ..ভালো স্বামী হতে ন..না পারলেও ভ..ভালো বাবা হওয়ার চেষ্টা ক..করেছি। হয়তো হ.. হতে পারিনি। নিজের ভালোবাসা, নিজের ম..মাকে হারিয়েছি ত..তবে আমার প্রাণ থ..থাকতে আমি ন..নিজের ছেলেকে হ.. হারাতে পারবো ন..না।

আধভিক: ইউ আর দ্যা বেস্ট ড্যাড! তোমার ছেলেও তোমাকে সবসময় খুব ভালোবাসতো আর এখনও বাসে, সারাজীবন বাসবে। তুমি না থাকলে আমাকে আগলে কে রাখবে ড্যাড? আমি তোমার কোনো ক্ষতি হতে দেবো না। ড্যাড! ড্যাড!! ড্যাড!!!!

আভাস বাবু আধভিকের কথা শুনে হাসিমুখে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলেন। আধভিক সেটা দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোয়াল শক্ত করে সামনের দিকে তাকায় যেখানে রঞ্জিতা দেবীকে ধরে রাখা হয়েছে।

সিয়ারা: আভি তোমার হাত থেকেও তো রক্ত বের হচ্ছে। দেব, আংকেলকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে।

দেবাংশু: আমি ফোন করে দিয়েছি অ্যাম্বুলেন্সে এসে যাবে এক্ষুনি।

রুদ্রিক: ভিকি অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরী হবে তুই আমার গাড়িতে আংকেলকে নিয়ে চল। আমরা হেল্প করছি।

সবাই ধরাধরি করে আভাস বাবুকে নিয়ে গেলে আধভিক যাওয়ার আগে রঞ্জিতা দেবীর সামনে দাঁড়ায় যে ইতিমধ্যে ভয়ে পিছিয়ে গেছে। গম্ভীর গলায় আধভিক ওনাকে বলে,

আধভিক: আপনাকে আমি এত সহজে ছাড়বো না রঞ্জিতা রায় চৌধুরী। প্রথম থেকে আপনি আমার ভালোবাসার মানুষদের আঘাত করে এসেছেন। এইবার আমার পালা। এতদিন যেমন আপনার ছেলে একের পর এক চাল চেলেছে তাও আমার থেকে আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে পারেনি। এদিকে আমি খেলা শুরু করতেই এক মিনিটে আপনাদের এতদিনের প্ল্যান ধূলিসাৎ করে দিয়েছি ঠিক তেমন আপনাকেও ধ্বংস করে দেবো আমি। এটা আধভিক রায় চৌধুরীর প্রমিজ।

আধভিক বেরিয়ে যায় ওখান থেকে। আধভিকের সাথে সাথে সিয়ারাও চলে যায়। অভ্র ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই দেবাংশু এসে ওর সামনে দাঁড়ায়।

দেবাংশু: সেদিন অফিসেই তোকে সাবধান করেছিলাম আমি, ভালো ভাবে “ভাই” বলে সম্বোধন করে ভাইয়ের মতো বুঝিয়ে এসেছিলাম। বলেছিলাম, “পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। যেখানে আছিস সেখানেই থাক, লোভ করতে যাস না তাহলে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছিস সেই মাটিটাও থাকবে না দাঁড়ানোর জন্য। শুনলি না আমার কথা।

দেবাংশু অভ্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে এক হাতে ওর কলারটা শক্ত করে ধরে একবার রঞ্জিতা দেবীর দিকে তাকালো তারপর মুখ শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,

দেবাংশু: ভিকি তোদের সাথে যা করবে সেটার জন্য আমি অপেক্ষা করতে পারবো না। কারণ তারপরে তুই কি অবস্থায় থাকবি আমি জানি না। আমি সময় মত আমার হিসেবটা বুঝে নেবো। আমার ভালোবাসার দিকে নজরের সাথে সাথে হাত বাড়িয়েছিস তুই। তোর এমন অবস্থা করবো যাতে মেয়েদের দিকে তাকাতেও ভয় পাবি।

দেবাংশু ধাক্কা মেরে পিছনে ঠেলে দিলো অভ্রকে আর স্বাভাবিক ভাবে বললো,

দেবাংশু: কথাটা মাথায় রাখিস! … সেদিন যাওয়ার আগে বলেছিলাম আমার কথা না শুনলে ভিকির পায়ের সামনে এনে ফেলবো তোকে। পাত্তা দিসনি। আজ নিজের অবস্থাটা দেখেছিস? এর চাইতেও খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে তোর জন্য।

সেই সময় দিয়ারা এসে দেবাংশুর সামনে এসে দাঁড়ালে দেবাংশু দিয়ারার হাত ধরে বেরিয়ে যায়। সবার একটাই গন্তব্য, হসপিটাল।

আধভিক যখন আভাস বাবুর দিকে এগিয়ে গেছিলো সেই সময়ই হঠাৎ করে সেখানে রঞ্জিতা দেবী হাঁপাতে হাঁপাতে উপস্থিত হয়। এসে দাঁড়িয়ে এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে হাতে থাকা রিভলভার দিয়ে আধভিকের দিকে নিশানা তাক করে। আভাস বাবু সেটা দেখতে পায় কিন্তু আধভিক পিছন ফিরে থাকায় দেখতে পায় না। আভাস বাবু সামনে এসে গেলে গুলিটা তাঁর লেগে যায় আর এটা দেখে রঞ্জিতা দেবী ঘাবড়ে যান। কিন্তু আধভিককে আভাস বাবুর পাশে দেখতেই আবারও গুলি করেন যেটা আধভিকের বাহুতে গিয়ে লাগে। এরপর আর কোনো কিছু করার সুযোগ পান না রঞ্জিতা দেবী, ওনার হাতে গুলি করে আটক করা হয় ওনাকে।

হসপিটালে,

আভাস বাবুকে হসপিটালে আনতেই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সবাই আশা করছে গুলিটা হৃদযন্ত্রে বিঁধে যায়নি। এমনটা হলে হয়তো আভাস বাবুকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। ডাক্তার বাবুরা আধভিকেরও চিকিৎসা করছেন।

দেবাংশু: সিয়া শক্ত হ প্লিজ, সব ঠিক হয়ে যাবে। ভিকিকে সামলাতে হবে তোকে। (সিয়ার কাঁধে হাত রেখে)

সিয়ারা চুপচাপ বসে ছিলো মূর্তির ন্যায়। সেই সময় দেবাংশু কথাগুলো বলে শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। বেশ কিছুক্ষণ পর আধভিক সেখানে এসে উপস্থিত হলে নার্স ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

নার্স: আপনার রেস্ট নেওয়া উচিত এখন। এইভাবে স্ট্রেস নেবেন না।

আধভিক: ঠিক আছি আমি, আপনি আমার ড্যাডের খবর এনে দিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। যান!

আধভিক একটু জোরে কথাটা বললে নার্স একবার উপস্থিত বাকিদের দিকে তাকায়। দেবাংশু চোখ দিয়ে নার্সকে ভরসা জানালে নার্সও মাথা নাড়িয়ে চলে যায় ওখান থেকে।

আধভিক: দেব! ড্যাড?

দেবাংশু: এখনও কিছু জানায়নি।

আধভিক আর কিছু বললো না। আধভিকের উপস্থিতির পর থেকেই সিয়ারা একদৃষ্টিতে আধভিকের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথম থেকে উপেক্ষা করলেও শেষে গিয়ে আধভিক আর এই চাহুনি উপেক্ষা করতে পারলো না। চোখে চোখ পরেই গেলো কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব আধভিক চোখ সরিয়ে নিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই নার্স এসে বললো,

নার্স: আপনাদেরকে ও পজিটিভ ব্লাড জোগাড় করতে হবে। আমাদের ব্লাড ব্যাংকে স্টক শেষ।

সুধাংশু বাবু: আমার ও পজিটিভ ব্লাড গ্রুপ। আমি দেবো।

নার্স: কিন্তু স্যার আমাদের অনেকটা ব্লাড প্রয়োজন। আপনার স্বাস্থ্য দেখে আমরা অতটা ব্লাড নিতে পারবো না।

সুধাংশু বাবু: কিচ্ছু হবে না। আমি পার…

দিয়ারা: আমি ব্লাড দেবো নার্স। আমার ও পজিটিভ ব্লাড গ্রুপ। চলুন।

নার্স: ঠিক আছে আসুন।

দিয়ারা একবার সুধাংশু বাবুর দিকে তাকিয়ে দেবাংশুর দিকে তাকালো। তারপর যাওয়ার সময় আধভিকের বাহুতে হাত রেখে ভরসা জানিয়ে চলে গেলো।

দেবাংশু: রুদ্রিক আমাকে ডেকেছে, আমি দেখছি ওই দিকটা।

সুধাংশু বাবু: আমিও যাবো তোমার সাথে।

দেবাংশু সম্মতি জানাতেই সুধাংশু বাবু আর দেবাংশু চলে গেলো। আধভিক একমনে ওটির দিকে তাকিয়ে ছিলো এমন সময় নিজের পাশে একজনের উপস্থিতি টের পেলো। আধভিক জানে এই একজন সিয়ারা, তাই সরে গিয়ে চেয়ারে বসলো। সিয়ারা আধভিকের ব্যবহারে কষ্ট পেলেও প্রকাশ করলো না। আধভিক দুরত্ব বজায় রাখতে চায় ভেবে ওর থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চেয়ারে বসে সিয়ারা। আড় চোখে বারবার আধভিকের দিকে তাকাচ্ছে সিয়ারা কিন্তু কি বলবে বুঝতে পারছে না।

আধভিক: এটা অভিনয় ছিলো না … আর না কোনো প্ল্যান ছিলো তোমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার।

সিয়ারা: আভি আমি…

আধভিকের কথাটা শুনে সিয়ারা কিছু বলতে গিয়েও ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। আধভিক সিয়ারার দিকে না তাকিয়েই ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। সিয়ারা সেটা দেখে আধভিকের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ওর হাতে হাত রাখতেই টেনে কাছে নিয়ে আসে আধভিক সিয়ারাকে। আধভিকের কাছে গিয়ে বসতেই আধভিক এক হাত দিয়ে নিজের বুকে টেনে নিল সিয়ারাকে যায় ফলে সিয়ারা শব্দ করে কেঁদে উঠলো আধভিককে জড়িয়ে ধরলো।

আধভিক: আমি তোমার সাথে অমন ব্যবহার করতে চাইনি বিশ্বাস করো। আমি তোমাকে ভালো ভাবে মানাতে পারতাম সবটা বলে কিন্তু সেটা করিনি কারণ সেখানে অভ্র থাকলেও থাকতে পারতো। আমি নিজে দোষ করে কখনও তোমার উপর রাগ দেখিয়েছি?

সিয়ারা: (না বোধক মাথা নেড়ে) আই..আই অ্যাম স..স্যরি!

আধভিক: শশ! তোমার কোনো দোষ নেই। আমি জানি এই কয়েকটা দিন অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। তাই তোমার আমার উপর অভিমান করাটা স্বাভাবিক। আমি জানি এখন তুমিই সবথেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছো আমাকে কথাগুলো বলার পর।

সিয়ারা: তুমি, তুমি খুব..খুব বাজে! স..সব জেনে বুঝে..জেনে বুঝে আমাকে ক.. কষ্ট দিয়েছো। (নাক টেনে)

আধভিক: হম ঠিক বলেছো! ড্যাডকে বলা কথাটা আমার জন্য প্রযোজ্য। না ভালো ছেলে হতে পেরেছি আর না ভালো প্রেমিক।

সিয়ারা আধভিকের বুকে কিছুক্ষণ মাথা রেখে যথাসাধ্য নিজেকে শান্ত ও স্বাভাবিক করে নেয়। তারপর বলে,

সিয়ারা: না আভি! পরিস্থিতিটাই এমন যে আমাদের কিছু করার নেই। তুমি তোমার জায়গায় ঠিক আর আংকেল আংকেলের জায়গায় ঠিক। আংকেল প্রথম থেকেই বাধ্য হয়েছিলেন, দোটানায় পরেছিলেন এসব তুমি না জেনেও ওনাকে কখনও সেই নিয়ে কিচ্ছু বলনি। হয়তো ক্ষমা করতে পারছিলে না কিন্তু দূরে ঠেলেও তো দাওনি যেখানে অন্য কেউ থাকলে হয়তো সেটাই করতো। তুমি এখন সবথেকে ভালো বুঝতে পারছো, বাধ্য হয়েও মানুষ অনেক সময় ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট দেয়। আংকেল জেনে বুঝে তোমার মা কে কষ্ট দেয়নি আর তুমিও জেনে বুঝে আমাকে কষ্ট দাওনি।

আধভিক: (হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে) আমি শুধু আমার ড্যাডকে ফিরে পেতে চাই সিয়ু। তারপর তাঁকে তাঁর ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে চাই যেমনটা উনি সবসময় চেয়েছেন। ড্যাডকে কিছুতেই হারাতে প..পারবো না আ..আমি।

সিয়ারা: (আধভিককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে) সব ঠিক হয়ে যাবে আভি। আংকেল খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে আমাদের মাঝে।

কিছুক্ষণ পর,

দিয়ারা এসে দেখে আধভিক আর সিয়ারা বসে আছে একে অপরকে আকড়ে ধরে। সেটা দেখে দিয়ারার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। দিয়ারা ধীর পায়ে ওদেরকে ক্রস করে বেরিয়ে যায়। একটু এগিয়ে যেতেই দেখে দেবাংশু আর সুধাংশু বাবু কথা বলছেন। দিয়ারা আর কিছু না বলে উল্টোদিকে ঘুরে এগোতে নিলেই ওর মাথাটা একটু ঝিমঝিম করে ওঠে। সাথে সাথে দেয়াল ধরে ভারসাম্য বজায় রাখে। সেসময়ই নিজের কোমরে পরিচিত একটা স্পর্শ পায় দিয়ারা। পাশে তাকাতেই দেবাংশুকে দেখতে পায় ও, যে মুহুর্তেই ও’কে নিজের বুকে টেনে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

দেবাংশু: ঠিক আছিস তুই? তোর রেস্ট নেওয়া উচিত ছিল দিয়ু, এভাবে বেরিয়ে এসেছিস কেন? আমি তোর জন্য কিছু খাওয়ার নিয়ে আসছি, আয় বসবি আয়।

দিয়ারা: (নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে) আমি ঠিক আছি। এত চিন্তা করার কিছু হয়নি, একটু মাথাটা ঘুরে উঠেছিলো।

দিয়ারা ছাড়ানোর চেষ্টা করেও যখন সরে আসতে পারে না তখন চোখ দিয়ে ইশারা করে দেবাংশুকে যে এখানে সুধাংশু বাবু আছেন। দেবাংশু সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেয় দিয়ারাকে। দূর থেকে দিয়ারাকে ওভাবে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পরতে দেখে দেবাংশু একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলো, ভুলেই গেছিলো তাঁর বাবাও এখানে উপস্থিত।

দেবাংশু: তুই একটু রেস্ট নে, আমি তোর জন্য কিছু খাওয়ার নিয়ে আসছি।

দেবাংশু সরে যায় ওখান থেকে। দিয়ারা ঠিক কি বলবে, কি দিয়ে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না। একটা নীরবতা বিরাজ করছে দুজনের মাঝে। হঠাৎই নীরবতা ভাঙলেন সুধাংশু বাবু।

সুধাংশু বাবু: তোমার মা কেমন আছেন? আমি শুনেছি উনি অসুস্থ ছিলেন অনেকদিন ধরে।

দিয়ারা: আব, ভালো আছে। দি দেখা করার পর থেকেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলো এখন পুরোপুরি সুস্থ আছে।

সুধাংশু বাবু: আচ্ছা। কোথায় থাকছে এখন?

দিয়ারা: আমার সাথেই থাকছে, আমার অ্যাপার্টমেন্টে।

সুধাংশু বাবু: তুমি একটু বসো। এতটা ব্লাড ডোনেট করেছো, তোমার রেস্টের প্রয়োজন।

দিয়ারা: (হাসিমুখে) আমি ঠিক আছি আংকেল।

সুধাংশু বাবু: বসো, বসো।

সুধাংশু বাবু একপ্রকার জোর করেই দিয়ারাকে বসিয়ে দিলেন, তারপর নিজেও ওর পাশে বসলেন। কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলে সুধাংশু বাবু নিজে থেকেই বলে ওঠেন,

সুধাংশু বাবু: তুমি আর তোমার দিদি যখন ছোটো ছিলে তখন থেকেই আমার তোমাদের বাড়ি যাওয়া আসা ছিলো। মনে আছে নিশ্চয় তোমার।

দিয়ারা: হ্যাঁ আংকেল। বিলাতি চাম্পু…ইয়ে না মানে দেবদা! দেবদা আর দি একসাথে খেলা করতো তখন। (জিভ কেটে)

সুধাংশু বাবু হেসে উঠলেন, যা দেখে দিয়ারাও হেসে ফেললো। সুধাংশু বাবু হাসিমুখে বললেন,

সুধাংশু বাবু: দেবু বেশিরভাগ সময় তো ভিকির সাথেই কাটাতো, অন্য কোথাও যেতে চাইতো না। কিন্তু তোমাদের বাড়ি যাওয়ার নাম করলে ওর মুখে কখনও না শুনতাম না। ছোটো থেকেই আমি দেখেছিলাম সিয়া আর দেবু ভালো বন্ধু হলেও তোমার সাথে শুধু ঝগড়া হতো। এমনই একদিন আমি ও’কে বলেছিলাম যে, তুমি বাড়িতে নেই আজকে আর ওর সাথে কেউ ঝগড়া করবে না। ভেবেছিলাম খুশি হবে কিন্তু না, আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রথমবারের মতো ও যাবে না বলে দিলো।

সুধাংশু বাবু দিয়ারার মাথায় হাত রাখতেই দিয়ারা অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালো। সুধাংশু বাবু হাসিমুখে বললেন,

সুধাংশু বাবু: আমি তোমাকে ছোটো থেকেই দেবুর জন্য পছন্দ করেছিলাম। … মাঝে অনেক কিছু ঘটে যাওয়ায় সে চিন্তা মাথাতে আর আনিনি। কিন্তু আমি ভাবিনি আমার ছেলে কখনও প্রেমে পরবে, বলা ভালো পাগলের মতো ভালোবাসবে কাওকে।

দিয়ারা: আমি জানি আপনার মনে কি নিয়ে ভয় রয়েছে। ওর ক্ষেত্রেও একই ছিলো আর এটা স্বাভাবিক। …. আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আংকেল, আপনার ছেলেকে আমি ইচ্ছা করে কোনো কষ্ট দেবো না। তাতে আমাকে যা করতে হয় আমি করবো। আপনার যদি আমার পেশা পছন্দ না হয়, তাহলে আমি ছেড়ে দেবো কাজ সম্পূর্ণভাবে।

সুধাংশু বাবু: কিছুক্ষণ আগে জানলাম আমার ছেলে তোমাকে কতটা ভালোবাসে আর ওর মুখেই তুমি ও’কে কতটা ভালোবাসো। এখন বুঝতে পারছি খুব একটা ভুল বলেনি আমার ছেলে। আসলে, আমিই বরাবর মানুষ চিনতে ভুল করে এসেছি।

দিয়ারা: এমন বলবেন না আংকেল। ভালোবাসা জিনিসটাই এমন, অনুভূতি কখন, কীভাবে, কার জন্য তৈরী হবে তা জানা বা বোঝা বড়ো মুশকিল। একেক সময় তো আমরা নিজের মনকে নিজেরাই বুঝতে পারি না। এটা আমাদের দোষ নয় যে আমরা ভুল মানুষকে ভালোবেসেছি। ভালোবাসা কখনও ভুল নয় আংকেল, ভুল শুধুমাত্র সময় বা মানুষ হয়। ঠিক সময়ে ভুল মানুষকে বেছে নিয়ে ঠকে যাওয়ার পর ভুল সময়ে ঠিক মানুষকে পেয়ে হারিয়ে ফেলে মানুষ। সবটাই ভাগ্যের উপর, আমাদের কাজ তো নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসা। আপনি সেটাই করেছেন। ভুল দেখেও মেনে নেননি, ত্যাগও করেছেন।

সুধাংশু বাবুর চোখটা জলে ভরে উঠেছে ইতিমধ্যে। দিয়ারা বুঝতে পেরে সুধাংশু বাবুর কাঁধে হাত রাখে।

দিয়ারা: আমার কথা হয়েছিলো ওর মায়ের সাথে। সেদিন পার্টিতে এসেছিলেন ওর সাথে কথা বলতে কিন্তু ও বলেনি। তখন আমার সাথে কথা বলতে এসেছিলেন।

সুধাংশু বাবু: নিজের ভুল কি বুঝতে পেরেছে? আমার সাথে যা করেছে, করেছে কিন্তু নিজের ছেলেটার সাথে যা করেছে সেটার জন্য কি কোনো অনুশোচনা নেই?

দিয়ারা: হয়তো আছে কিংবা নেই। এখন আর সেসব নিয়ে ভাববেন না আংকেল।

সুধাংশু বাবু: তোমার মা কে বলো আমি খুব শীঘ্রই ওনার সাথে দেখা ও কথা বলতে যাবো।

দিয়ারা প্রশ্ন বোধক অভিব্যক্তি নিয়ে তাকালে সুধাংশু বাবু হেসে বলেন,

সুধাংশু বাবু: ওনার মেয়েকে নিজের মেয়ে করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে তো? আমার ছেলেকে আর খাটনি করে ঝগড়া করতে যেতে হবে না, সারাদিন ঘরে বসে ঝগড়া করবে।

সুধাংশু বাবু আর দিয়ারা দুজনেই হেসে উঠলো। সুধাংশু বাবু দিয়ারার মাথায় হাত রেখে বললো,

সুধাংশু বাবু: আমি জানি তুমি জানো আমার ছেলেটা ছোটো থেকে মায়ের ভালোবাসা পায়নি তাই ও’কে কষ্ট পেতে দেবে না। আমিও তোমাকে আশ্বস্ত করছি, আমার ছেলেও তোমাকে কখনও জেনে বুঝে কষ্ট দেবে না। সারাজীবন দুজন দুজনকে আগলে রেখো ভালোবাসা দিয়ে।

দিয়ারা: আপনার ছেলের ব্যাপারটা তো বুঝলাম। আমি জানতে চাই, আপনি আমাকে বাবার ভালোবাসাটা দিতে পারবেন? আমিও তো ছোটো থেকে বাবার ভালোবাসা পাইনি।

সুধাংশু বাবু দিয়ারাকে বুকে টেনে নিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

সুধাংশু বাবু: আজ থেকে আমাকে বাবা বলেই ডাকবি, কোনো আপনি আজ্ঞে না। ঠিক আছে?

দেবাংশু: বাহ! ভালোই তো আমার পাপার আদর খাচ্ছিস বসে বসে। থ্যাংক ইউ বলবি ঠিক আছে? আমার জন্যেই রাজি হয়েছে।

দিয়ারা: সখ কত! আমি ভালো তাই রাজি হয়েছে। খুব ভালো ভাবেই জানে আমি ছাড়া তোমাকে কেউ সোজা করতে পারবে না। হুহ!

দেবাংশু: সোজা করতে পারবে না মানে টা কি? আমি কি বাঁকা নাকি যে আমাকে সোজা করবি।

দিয়ারা: (হাসি চেপে) গোটা মানুষটাই বাঁকা তুমি।

দেবাংশু: পাপা! তোমার সামনে আজে বাজে কথা বলছে, কিছু বলো!

সুধাংশু বাবু: (উঠে দাঁড়িয়ে) উফ! ছোটোবেলায় না হয় এভাবে আমার কাছে এসে নালিশ করতিস এখন তো বড়ো হয়েছিস নাকি? নিজের ঝগড়া নিজে মেটা। আগের মত সব থাকলে না হয় আমার দোষ হতো, পাপা কি মেয়ে পছন্দ করেছো? এখন তো আমার কোনো দোষ নেই। নিজেরটা নিজে বুঝে নাও আমি চললাম।

সুধাংশু বাবু হাসতে হাসতে চলে গেলে দেবাংশু হাঁ করে চেয়ে থাকে ওনার যাওয়ার দিকে। দিয়ারা সেটা দেখে হেসে উঠলে দেবাংশুকে বলে,

দেবাংশু: আমার পাপাকে একদম নিজের দিকে টানবি না।

দিয়ারা: (দেবাংশুর কলার ধরে নিজের দিকে টেনে) তোমাকেই যখন নিজের দিকে টেনে নিয়েছি তখন তোমার পাপাকেও নিজের দলে টেনে নেবো এটা তো জানা কথা বিলাতি চাম্পু! (হেসে ফেলে)

দেবাংশু: উফ! আবার এই একটা বিরক্তিকর নাম। এইবার মনে হচ্ছে সারাদিন শুনতে হবে। নে, এটা খেয়ে নে।

দিয়ারা না বোধক মাথা নাড়তেই দেবাংশু গম্ভীর মুখে ওর দিকে তাকায় যা দেখে দিয়ারা নেতিয়ে গিয়ে করুন মুখে দেবাংশুর হাত থেকে খাবারটা নিয়ে খেতে শুরু করে। দেবাংশু যেমন সেটা দেখে হেসে ফেলে দূরে দাঁড়িয়ে সুধাংশু বাবুও হেসে ফেলেন।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৭৫||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

সুধাংশু বাবুকে দেখতেই সিয়ারা আধভিকের থেকে দূরে সরে বসলো। আধভিক চোখ বন্ধ করে ছিলো, সিয়ারা সরে যেতেই চোখ খুলে সিয়ারার দিকে তাকাতেই সিয়ারা ইশারা করলো সুধাংশু বাবুর দিকে। আধভিক সুধাংশু বাবুকে দেখে আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণ পর দেবাংশু দিয়ারাকে নিয়ে এসে সিয়ারার পাশে বসিয়ে দিলো।

সিয়ারা: ঠিক আছিস?

দিয়ারা: হ্যাঁ দি, আমার আবার কি হবে? একদম ঠিক আছি।

দেবাংশু: তাই জন্যেই বুঝি মাথা ঘুরছিলো তোর আর তুই দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়েছিলি তাই না?

দিয়ারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেবাংশুর দিকে তাকালে দেবাংশু আমতা আমতা করে বলে,

দেবাংশু: আমি আসছি একটু!

দেবাংশুর পরিবর্তন দেখে সবার মুখে আপনাআপনি হাসি চলে আসে কিন্তু পরক্ষণেই ডক্টর আসতেই আধভিক চট জলদি উঠে দাঁড়ায় মুখে আতঙ্ক নিয়ে।

আধভিক: ডক্টর আমার ড্যাড? কোনো ভয়ের কারণ নেই তো?

ডক্টর: কাম ডাউন আধভিক। তোমার ড্যাড ঠিক আছে, গুলিটা বার করে দিয়েছি আমরা। ভাগ্য ভালো হৃদযন্ত্রে বিঁধে যায়নি সেটা। কিন্তু অনেক ব্লাড লস হওয়ায় একটু দুর্বল আছেন। আর আমার মনে হয় উনি হয়তো ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করেন না। তাছাড়া শুধু তো মানুষ শারীরিক ভেবে দুর্বল হয়না, মানসিক দিক থেকেও দুর্বল হয়। উনি হয়তো মানসিক দিক থেকেই দুর্বল।

আধভিক কথাটা শুনে মাথা নীচু করে নেয়। সিয়ারা আধভিকের বাহুতে হাত রেখে ডক্টরকে বললো,

সিয়ারা: আজকের পর থেকে উনি আর কখনওই দুর্বলবোধ করবেন না ডক্টর। আমি আশ্বস্ত করছি আপনাকে। আমরা কি ওনাকে দেখতে যেতে পারি?

ডক্টর: হ্যাঁ। ওনাকে কিছুক্ষণ পরেই কেবিনে শিফ্ট করা হবে আর আশা করছি তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরে আসবে। তখন দেখা করতেই পারেন কিন্তু স্ট্রেস নিতে দেবেন না বেশি।

ডক্টর চলে যাওয়ায় সুধাংশু বাবু আধভিকের কাঁধে হাত রেখে বলে,

সুধাংশু বাবু: সব ঠিক হয়ে গেছে ভিকি। এইবার আর কোনো সমস্যা হবে না।

সুধাংশু বাবু কথা শেষ করতেই সেখানে আরো একজন উপস্থিত হলো যাকে দেখে এবং তাঁর কথায় সবাই অবাক হলো।

__দেব, আংকেল কেমন আছে? তোরা সবাই ঠিক আছিস?

দিয়ারা: অর্জুন? তুমি এখানে কি করছো?

দেবাংশু: আরে চিন্তা করিস না। ঠিক আছি আমরা সবাই। আংকেলও ঠিক আছে। তুই এভাবে হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে আসতে গেলি কেন? আমি তো তোকে জানালাম সব ঠিক আছে।

অর্জুন: চিন্তা হচ্ছিলো গুলি লাগার বিষয়টা শুনে। আধভিক? ঠিক আছো তো তুমি?

আধভিক: হ..হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি।

দেবাংশু অর্জুনকে নিয়ে সাইড হয়ে গেলে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে শুরু করে। দেবাংশু আর অর্জুনের বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ দেখে মনে হচ্ছে ওদের দুজনের মধ্যে কোনো সমস্যাই ছিলো না কখনও, প্রথম থেকেই ওরা ভালো বন্ধু।

সিয়ারা: দিয়া, দেব আর অর্জুন এতো ভালো বন্ধু হয়ে গেছে জানাসনি তো আমাকে?

দিয়ারা: ধুর! আমি জানবো তারপর তো জানাবো তোকে। আর..এই কয়েকদিন আমার ওর সাথে কথাবার্তা হয়নি তাই যা মনে হয় এই কয়েকদিনেই সব মিটে গেছে হয়তো।

আধভিক: যা হয়েছে ভালোর জন্যেই হয়েছে।

সুধাংশু বাবুর দিকে তাকালে সবাই দেখতে পায় উনি চুপ করে নীচের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেই সময় নার্স এসে জানালো আভাস বাবুকে কেবিনে শিফ্ট করা হয়েছে।

কিছুক্ষণ পর,

আভাস বাবুর কেবিনে, ওনার হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে আধভিক। একভাবে তাকিয়ে রয়েছে আধভিক আভাস বাবুর মুখের দিকে। এখনও জ্ঞান ফেরেনি আভাস বাবুর। সিয়ারা এসে আধভিকের কাঁধে হাত রাখলে আধভিক নিজের অপর হাত দিয়ে আধভিকের কাঁধে হাত রাখে।

আধভিক: ড্যাড আমাকে আগের মত ভালোবাসবে তো সিয়ু? আমার উপর অভিমান করে থাকবে না তো?

সিয়ারা: আংকেল জানে তোমার কোনো দোষ নেই। বরং উনি খুশি হবেন যে তুমি আর ওনাকে ভুল বুঝবে না।

আধভিক মাথা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লে সিয়ারা একটু কিছু খাইয়ে দেয় আধভিককে। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যায় তারপর। আভাস বাবুর জ্ঞান ফিরে এলে সবার প্রথম উনি আধভিককে দেখতে পায়। একটু শরীরে জোর পেতেই আভাস বাবু আধভিককে আলতো গলায় প্রশ্ন করে ওঠেন,

আভাস বাবু: ভিকি…ঠিক আছো তুমি?

আধভিক: আমি একদম ঠিক আছি ড্যাড। তুমি স্ট্রেস নিও না, ডক্টর তোমাকে স্ট্রেস নিতে বারণ করেছে।

আভাস বাবু ছেলেকে নিজের জন্য চিন্তিত দেখে সিয়ারার দিকে তাকালে সিয়ারা হালকা হেসে ভরসা দেন ওনাকে। আভাস বাবু হালকা হেসে চোখ বুজে নেন আবার।

বেশ কিছুদিন পর,

আভাস বাবু এখন যথেষ্ট সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আজকে ওনাকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হবে তাই আধভিক আর দিয়ারাসহ সবাই উপস্থিত আছে সেখানে। আধভিক ফর্মালিটিস সম্পুর্ণ করে এলে আভাস বাবু ও’কে জিজ্ঞেস করলো,

আভাস বাবু: তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ভিকি?

আধভিক: হ্যাঁ ড্যাড, করো।

আভাস বাবু: তুমি, তুমি রঞ্জিতার খোঁজ কীভাবে পেলে? আসলে আমি জানতাম ও নিখোঁজ। তাই জন্যেই তো ভয়ে আমি তোমাকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিলাম খবরটা পাওয়া মাত্র। ও তোমার ক্ষতি করতে চাইছিলো সেটা বুঝেও ও’কে ধরতে পারছিলাম না কারণ ও আড়ালে ছিলো সবার।

আভাস বাবুর কথা শুনে আধভিক দেবাংশুর দিকে তাকালো। দেবাংশু চোখের ইশারায় সম্মতি জানালে আধভিক বললো,

আধভিক: আসলে ড্যাড, ওনাকে আমি নিজেও খুঁজে পাইনি। আমি নিজে আড়াল হয়ে ওনার খোঁজ অনেক করেছি অভ্রের সাহায্যে কিন্তু অভ্র যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় ওনার খোঁজ আমি পাইনি। তাই তো তোমাদের জানাবো ভেবেছিলাম কিন্তু তখনই ভাবলাম যদি কান টানলে মাথা আসে। মানে অভ্র যে আসবে বিয়ের দিন সেটা নিশ্চিত করেছিলাম এইজন্যেই যাতে ছেলের জন্য উনি বাইরে আসেন। কিন্তু…

সিয়ারা: কিন্তু? কিন্তু কি আভি?

আধভিক: কিন্তু সেটা আর করার দরকার পরেনি। আমি যখন তোমার ঘরে গেছিলাম তার আগেই দেব আমাকে জানায়, “আমার অসম্পূর্ণ কাজ ও সম্পুর্ণ করে দিয়েছে।” এর মানে আমি বুঝতে পারি যখন অভ্রকে দেব রঞ্জিতা রায় চৌধুরীর ভিডিও দেখায়।

দিয়ারা: তার মানে রঞ্জিতা দেবীকে ভিকি দা নয় তুমি খুঁজে বার করেছো অংশু? (অবাক হয়ে)

সকলের দৃষ্টি এইবার দেবাংশুর উপর গিয়ে পরলো। দেবাংশু মাথা নীচু করে সবটা খুঁজছিলো। দেবাংশু মাথা তুলতেই আধভিক বললো,

আধভিক: হ্যাঁ, এই জন্যেই সেদিন আমি বলেছিলাম যে অভ্রকে আনার পুরো প্ল্যান আমার হলেও, ওই নাটকের ক্রেডিট আমার হলেও আসল কাজের ক্রেডিট দেবের।

দেবাংশু: শুধু আমার না ভিকি। আমি একা কিছুই করিনি। আমার মাথায় হয়তো সবার প্রথম এসেছিলো যে রঞ্জিতা রায় চৌধুরীকে খুঁজে বার করতে হবে কিন্তুখুঁজতে সাহায্য করেছে আমাকে আরো একজন। সে না থাকলে আমি ওনাকে খুঁজে বার করতে পারতাম না।

আধভিক: কে? কে তোকে এই বিষয়ে সাহায্য করেছে? আর কে জানে আমরা ছাড়া ওনার বিষয়ে?

দেবাংশু: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) অর্জুন!

সিয়ারা: অর্জুন? ও কীভাবে? (অবাক হয়ে)

দেবাংশুর উত্তরে সবাই অবাক হয়ে গেলো। অর্জুন কীভাবে রঞ্জিতা দেবী সম্পর্কে জানতে পারে এটা কাওর বোধগম্য হচ্ছে না। দেবাংশু সেটা বুঝে বললো,

দেবাংশু: রিনা যে অ্যাসিড অ্যাটাক করিয়েছিল সেটা আমি রুদ্রিককে প্রমাণ দিয়ে বলেছিলাম ভিকিকে জানো বিষয়টা জানায়। তারপরেও যখন ভিকি চলে গেছিলো তখনই আমি বুঝেছিলাম ও কোনো না কোনো কারণে গেছে। সেদিন অ্যাকসিডেন্টের আগে আমাকে সিয়া সবটা খুলে বলেছিলো সেটাও আমার মাথায় স্ট্রাইক করে যখন ভিকি চলে যায়। মাথায় আসে ওনাকে খুঁজে বার করতে হবে, হয়তো সেই চেষ্টা ভিকিও এবার করবে।

দিয়ারা: তার মানে তুমি সেই কয়েকদিন ওনাকে খুঁজতেই ব্যস্ত ছিলে?

দেবাংশু: হ্যাঁ। আমি আমার স্টুডিওতে ছিলাম সেই সময় সেখানে অর্জুন আসে। ভিকি চলে গেছে সেটা জেনে সিয়ারার বিষয়ে খোঁজ নিতে এসেছিলো। অর্জুন বেরিয়ে যাবে তার আগে ওর কাছে … ওর কাছে ওর মায়ের ফোন আসে আর আমার সঙ্গে সঙ্গে কিছু একটা মনে পরে যায়।

সুধাংশু বাবু: তুমি কি বলতে চাইছো দেবু? (উত্তেজিত হয়ে)

দেবাংশু: তুমি যা ভাবছো সেটাই।

সুধাংশু বাবু: এই জন্যেই তুমি বলেছিলে তুমি নিজের সম্পর্ক নষ্টের কথাও ভাববে না? কিন্তু এটা কীভাবে হতে পারে?

দেবাংশু: কেন হতে পারে না পাপা? এরা সব পারে এটা আর কেউ না জানুক তুমি এটলিস্ট খুব ভালো ভাবে জানো। যাঁরা টাকার জন্য নিজের লোকের কথা ভাবে না তাঁরা সব পারে।

আধভিক: দেখ দেব! আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। তুই কি বলছিস এসব?

দেবাংশু: ভিকি …. রঞ্জিতা রায় চৌধুরী…উনি, উনি আমার মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড।

সুধাংশু বাবু ছাড়া সবার মাথায় বজ্রাঘাত হলো একপ্রকার। সবাই চুপ করে দেবাংশুর আরো কিছু বলার অপেক্ষা করছে। দেবাংশু সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বললো,

দেবাংশু: রঞ্জিতা আণ্টি আমাকে বরাবর খুব ভালোবাসতেন। ওনার সাথে সত্যি বলতে গেলে আমার সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো, মা ভালো না বাসলেও উনি খুব ভালোবাসতেন আমাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই উনি একটা সময় পর গায়েব হয়ে যান। আসলে ঘটনার সূত্রপাত একটা নাইট ক্লাব থেকে।

দিয়ারা: নাইট ক্লাব?

দেবাংশু: হ্যাঁ, এমন নাইট ক্লাব যেখানে সেলিব্রিটিদের আনাগোনা। রঞ্জিতা আণ্টি আর আমার মা বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ায় একসাথে নাইট ক্লাবে এসেছিলো। তখন সেখানে আমার ড্যাড আর তোর ড্যাডকে দেখতে পায়। আমার মায়ের প্রথম থেকে মডেলিংয়ের শখ ছিল এবং সেই সময় অডিশনও দিচ্ছিলো। আমার ড্যাড তখন নাম করা প্রোডিউসারের ছেলে। বাকিটা বুঝতে পারছিস নিশ্চই?

দিয়ারা: (হতাশ হয়ে) ইউজ করেছিলো আংকেলকে চান্স পাওয়ার জন্য। যেটা আংকেল বুঝতেও পারেনি। কিন্তু আংকেল কি ওনার বেস্ট ফ্রেন্ডকে চিনতো না?

দেবাংশু: না। রঞ্জিতা আণ্টি নিজেই পরিচয় দেননি। কারণ সেখানেই উনি প্ল্যান করে ফেলেছিলেন আভাস আংকেলকে ইউজ করবেন। উনি জানতেন আভাস আংকেলের প্রচুর সম্পত্তি, সে যদি প্রোডিউসার নাও হয় তাও কোনো সম্পত্তির অভাব হবে না। তখনই উনি ভেবে নেন যে আভাস আংকেলকে প্রেমের জালে ফাঁসাবেন উনি যেটা আমার মা জানতো না। এই কারণেই উনি কখনও সামনে আসেননি শুধু ভয় দেখিয়েছেন। আমার সামনেও আসেনি ভিকির বাড়ি থাকাকালীন কারণ আমি চিনে ফেলবো তো!

সিয়ারা: তার মানে দুজনের প্ল্যান ছিল শুধুমাত্র ইউজ করা?

দেবাংশু: হ্যাঁ কারণ দুজন ইতিমধ্যেই কমিটেড ছিলেন। আমার আর ভিকির অবস্থাটা একই। এনারা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড। আবার আমাদের বাবারাও বেস্ট ফ্রেন্ড বলে সেই জন্যেই আমরাও বেস্ট ফ্রেন্ড, শুধু বউ গুলো বোন বেরিয়েছে। হে হে!

দিয়ারা এক থাপ্পর দিল দেবাংশুর হাতের মধ্যে আর চোখ রাঙিয়ে তাকালো। যেটা দেখে দেবাংশু হাত ডলতে ডলতে বুঝলো সে ভুল জায়গায় ভুল মজা করে ফেলেছে।

দেবাংশু: এসব কিছুই অর্জুন আমাদের মায়ের থেকে বার করেছে। আর উনিই হেল্প করেছেন রঞ্জিতা আণ্টি কোথায় সেটা জানাতে। উনি যেই জায়গায় বলেছেন সেই জায়গায় রঞ্জিতা আণ্টি অবশ্য ছিলেন না কিন্তু রঞ্জিতা আণ্টিকে ফোন করার পর ফোন ধরতেই সেই লোকেশন ট্র্যাক করে আমরা ওনাকে খুঁজে পাই। আমার সন্দেহ হয়েছিলো তার কারণ আমি যেই আণ্টিকে এতো ভালোবাসতাম, আমার মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ডের নামও রঞ্জিতা আবার ভিকির সৎ মায়ের নামও রঞ্জিতা। এই পুরো ব্যাপারটা অর্জুনকে বলতেই ও মায়ের কাছে গিয়ে সবটা বলে।

সিয়ারা: উনি জেনে বুঝে হেল্প করলেন?

দেবাংশু: হ্যাঁ। কারণ উনি যখন রঞ্জিতা আণ্টির পুরো বিষয়টা জানতে পেরেছিলেন তখন উনি নিজে স্যাটেল হয়ে গেছেন। ভিকির মায়ের মৃত্যুর খবরটা পেয়ে শেয়ার করার জন্য রঞ্জিতা আণ্টিকে ফোন করেছিলেন কারণ উনি শুধু জানতেন রঞ্জিতা আণ্টির আভাস আংকেলকে পছন্দ হয়েছিলো। সেইসময় উৎসাহে, খুশিতে রঞ্জিতা আণ্টি সম্পত্তির জন্য যে এসব করেছেন সবটা মা কে বলে দেয়। তারপর থেকেই মা ওনার সাথে যোগাযোগ রাখেনি। কারণ…

আধভিক: মমের সাথে আণ্টির সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো। আমার মা কে অনেক কিছু শিখিয়ে পড়িয়েছিলেন উনি। আমার মায়ের আধুনিক হওয়া ওনার হাত ধরেই।

দেবাংশু: তাই শ্রীতমা আণ্টির অকালে মৃত্যু তাও আবার নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের জন্য সেটা মা মেনে নিতে পারেনি। মা রঞ্জিতা আণ্টি কে জিজ্ঞেস করেছিলো কেন সে আমার পাপার সাথে দেখা করতে রাজি হয় না কখনও। তখন রঞ্জিতা আণ্টি বলেছিলো উনি পাপার বেস্ট ফ্রেন্ড মানে আভাস আংকেলকে পছন্দ করেন। সেটা শুনে মা কিছু বলেনি কারণ আংকেল তখন ব্যাচেলর ছিলেন কিন্তু শ্রীতমা আণ্টির সাথে বিয়ে হওয়ার পরেই মা রঞ্জিতা আণ্টিকে বারণ করে দেয় ওদিকে এগোতে। রঞ্জিতা মায়ের সাথে তালে তাল মেলালেও মায়ের অজান্তে সব কিছু প্ল্যান করে ফেলেছিলো তারপরেই গায়েব হয়ে যায়।

সবাই সবটা জেনে চুপ করে যায়। আধভিকের চোখ যায় নিজের বাবার দিকে তিনি নীরবে চোখের জল ফেলছে। সাথে সাথেই আভাস বাবু নিজের চোখের জল আড়াল করে নেয় আর বলে,

আভাস বাবু: সব যখন মিটে গেছে। সব সত্যি যখন সামনে চলে এসেছে তখন আর এসব নিয়ে কথা বাড়িয়ে কি লাভ? এইবার আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো, এখানে থাকতে আমার ভালো লাগছে না।

আধভিক: কেন? খুব তো তোমার বউমার সেবা যত্ন নিচ্ছিলে। তোমার না, আমারই চিন্তায় ঘুম হচ্ছিলো না। না জানি কখন পটিয়ে নাও। যেভাবে এখনকার দিনে ছেলেরা নিজের এক্সের কাহিনী শুনিয়ে মেয়ে পটায় সেভাবেই তো দেখি আমার বউয়ের কাছে কাঁদো তুমি। নিশ্চয় পটানোর চেষ্টা করো তাই না?

সিয়ারা আধভিকের দিকে চোখ গরম করে তাকালে আভাস বাবু বলে ওঠেন,

আভাস বাবু: বেশ করবো তোর বউকে পটিয়ে নেবো! সুধুকেও বলছি পটিয়ে নিতে তারপর তোরা দুই বেস্ট ফ্রেন্ড দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াস।

দেবাংশু: এই কি? আমার বউ নিয়ে টানাটানি কেন আবার?

দেবাংশুর রিয়্যাকশন দেখে সবাই হেসে ফেললো। বেচারা এমন অসহায় মুখ করেছিলো যে কেউ না হেসে থাকতে পারেনি। সুধাংশু বাবু বলে ওঠেন,

সুধাংশু বাবু: আভু! বাপের জন্মে ভাবিনি এই দুই ছেলে যাঁদের মধ্যে একজন মেয়েদের থেকে দশ হাত দূরে থাকতো আর একজন প্রেম-ভালোবাসা থেকে দশ হাত দূরে থাকতো তাঁরা এমন বউ পাগল হয়ে যাবে।

আভাস বাবু: যা না বলেছিস! আসলে মেয়ে দুটোই এতো ভালো যে আমাদের ছেলেদের আর কি দোষ?

আধভিক: দেব, তোর কিছুক্ষণ আগে ওই বেস্ট ফ্রেন্ডের কথাটা খুব একটা ভুল বলিসনি। এরা তো আবার বোন, চারিত্রিক দিক থেকে ভালোই মিল বুঝলি? (দেবাংশুর কানে বিড়বিড় করে)

দেবাংশু: তা আবার বলতে? রাগ, জেদ সব এক ভাই। (ফিসফিস করে)

আধভিক: তো? আমরা কি ভয় পাই নাকি? (উত্তেজিত হয়ে পরে, একটু জোরে)

সিয়ারা: কিছু বললে তুমি? (উঁচু গলায়)

আধভিক: কই না তো! কি বলবো? কিছু বলার ছিলো? হে হে! (ক্যাবলা ভাবে)

দিয়ারার হাসি পেলেও হাসলো না হাসি চেপে নিলো কিন্তু সুধাংশু বাবু আর আভাস বাবু না হেসে থাকতে পারেননি। ওদের দুজনকে এভাবে হাসতে দেখে দেবাংশু আর আধভিক একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে এবং সিয়ারা আর দিয়ারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে যে যাঁর পার্টনারের দিকে তাকিয়ে হাসে।

সিয়ারা: হয়েছে, হয়েছে। এবার আংকেল চলো, বাড়ি ফিরতে হবে।

সিয়ারা আভাস বাবুকে উঠতে সাহায্য করলে দিয়ারা ওনার ব্যাগটা নিয়ে নেয়। ধীরে ধীরে সবাই বেড়িয়ে যায় আর সেই সময়ই অর্জুন সেখানে উপস্থিত হয় আর দেবাংশুর সামনে দাঁড়ায়।

অর্জুন: বলেছিস সবটা?

দেবাংশু: হ্যাঁ, বলেছি।

অর্জুন: কি দরকার ছিল? না বললেই পারতি। (মাথা নীচু করে)

দেবাংশু মুখে হাসি নিয়ে অর্জুনের কাঁধে হাত রাখলো। অর্জুন দেবাংশুর দিকে তাকাতেই ও বললো,

দেবাংশু: আমি আমার পুরোনো অতীতকে এমন বানাতে চাই যাতে সেটা আর কখনও আমাকে প্রভাবিত না করতে পারে। আমাকে একজন শিখিয়েছে যে অতীত কে ভোলা যায় না তাই সেগুলো ভেবে বর্তমানকে নষ্ট না করে অতীতের করা ভুলগুলো শুধরে নিয়ে বর্তমান আর ভবিষ্যত দুটোকেই সুন্দর করা যেতে পারে।

অর্জুন: দিয়ারা তাই না?

দেবাংশু: ও ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না। (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আর রাগ করে থাকিস না ওনার উপর। আমিও রেগে নেই। যা হওয়ার হয়ে গেছে। উনি ওনার শাস্তি পেয়ে গেছেন, হয়তো উনাকে শাস্তি দিতেই ভগবান তোকে দিয়ে এমন ব্যবহার করিয়েছেন। এটা ভেবেই উনি আজকে প্রায়শ্চিত্ত করতে আমাদের এতটা সাহায্য করেছেন। তাই এইবার সবটা মিটিয়ে নে অর্জুন। অতীতকে নিজের উপর রাজত্ব কায়েম করতে দিস না।

অর্জুন: চেষ্টা করবো। আমি কখনও..আমি কখনও তোকে আমার শত্রু মনে করিনি। সবসময় ভাইই মনে করেছি।

দেবাংশু অর্জুনের কথা শেষ হতে না হতেই ও’কে জড়িয়ে ধরে। যার ফলে অর্জুনের খুব ভালো লাগে আর সেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দেবাংশুকে।।

দেবাংশু: আমি যেমন নিজের অতীতের কথা ভেবে তোকে কষ্ট দিয়েছি তুই সেভাবে মা কে কষ্ট দিস না। আমি ওই মানুষটার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য একসময় গুমড়ে মরেছি প্রতি মুহুর্তে। তুই সেটা পেয়ে হারাস না ভাই আমার! (সোজা হয়ে) এখন আমারও ভালোবাসার অভাব নেই। মায়ের ভালোবাসা না পেলেও একজন পারফেক্ট জীবনসঙ্গিনীর ভালোবাসা আমি পাচ্ছি, পাবো। শেষ থেকে শুরু কর! সব খারাপের শেষে ভালো থাকে বলেই আমাদের সাথে খারাপ হয় যাতে আমরা ভালোর আনন্দটা খুব বেশি করে উপভোগ করতে পারি। হম?

অর্জুন: (হাসিমুখে) দুই বোন মিলে তোদের দুজনকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে দেখছি। চল এবার!

অর্জুন আর দেবাংশু এগোতে শুরু করলো দিয়ারা দ্রুত গতিতে নিজের পা চালিয়ে এগিয়ে যায় চোখের জল আড়াল করতে করতে। এখন নিজের ভালোবাসাকে ভীষণ স্বার্থক মনে হচ্ছে দিয়ারার।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৭৬|| (অন্তিম পর্ব)
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

আধভিক একটা চেয়ার নিয়ে, পায়ের উপর পা তুলে রঞ্জিতা দেবীর সামনে বসে আছে ইন্টারোগশন রুমে। রঞ্জিতা দেবী একপ্রকার ভয়ে ঠক ঠক করে কাঁপছেন। আধভিক নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে, চোখের দু কোণায় আঙুল রেখে বসে ছিলো, ঝট করে হাতটা সরিয়ে নিয়ে সামনে ঝুঁকে জিজ্ঞেস করে উঠলো,

আধভিক: কি এমন বলেছিলেন আমার মা কে যাঁর কারণে সে আমার কথাটা পর্যন্ত ভাবেনি? এতটা কষ্ট পেয়েছিলো যে নিজেকে শেষ করে দিলো?

রঞ্জিতা দেবী পিছিয়ে গিয়ে মাথা নামিয়ে চুপ করে থাকেন। যা দেখে আধভিক নিজের হাত তুলে কিছু ইশারা করে আর অভ্রের আর্তনাদ শুনতে পাওয়া যায়। দেবাংশু অভ্রের হাতটা ইতিমধ্যে ভেঙে দিয়েছে।

রঞ্জিতা দেবী: বলেছিলাম প্রথম থেকেই আভাস শুধু আমাকে ভালোবাসে। ও কখনও শ্রীতমাকে ভালোবাসেনি। যেকটা দিন আভাস বাইরে ছিলো সেসব দিনেই ও আমার সাথে থেকেছে। তবে আভাস নিজের ছেলেকে কাছে পাওয়ার জন্য কষ্ট পায় কিন্তু শ্রীতমার জন্য কাছে আসতে পারে না।

রঞ্জিতা দেবী একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থেমে গেলেন। আধভিকের কাছে পুরো বিষয়টা জলের মতো স্বচ্ছ হয়ে গেলো। আধভিক নিজে ছোটবেলায় ভীষণ বায়না করতো আভাস বাবুর জন্য আর রঞ্জিতা দেবীর কথায় শ্রীতমা দেবী ভেবেছিলেন উনি সরে গেলে ছেলে বাবাকে পেয়ে যাবে আর বাবা ছেলেকে। ওনাকে তো এমনিতেও আভাস বাবু চান না, আধভিক তো ছোটো ঠিক ভুলে যাবে। তাই ওনার সরে যাওয়াটাই ভালো।

আধভিক: (উঠে দাঁড়িয়ে) আপনার মত মানুষকে নিজের হাতে শাস্তি দিয়ে আমি নিজের হাত নোংরা করতে চাই না। আপনাকে যা শাস্তি দেওয়ার সেটা আইন দেবে। দেব! চলে আয়।

আধভিক কথা না বাড়িয়ে ওখান থেকে বেড়ানোর আগে দাঁড়িয়ে গিয়ে অভ্রের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললো,

আধভিক: আমি বলেছিলাম প্রথম থেকে সবকিছুর ছাড় দিলেও এবার যদি কেউ আমার কাছ থেকে আমার ভালোবাসাকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে তাহলে আমি ছেড়ে দেবো না। তাঁর পুরো জীবনটা দায়িত্ব নিয়ে তছনছ করে দেবো। আমার মনে হয় আমি আমার কথা রাখতে পেরেছি।

দেবাংশু আধভিকের মনের অবস্থা বুঝে সঙ্গে সঙ্গে বেরালো না ওখান থেকে। অভ্রের দিকে ফিরে বললো,

দেবাংশু: ইচ্ছে তো করছে তোর চোখ দুটো তুলে নিই কিন্তু ভিকির জন্য পারলাম না। আইন হাতে নিতে না করেছে ও, নাহলে তোকে তিলে তিলে শেষ করার দায়িত্বটা আমিই নিতাম। এমন অবস্থা করতাম যে নিজের মৃত্যু নিজে প্রার্থনা করতি।

অভ্র ব্যথায় কাতরাচ্ছে কিছু বলার মতো ক্ষমতা ওর নেই তাই দেবাংশু রঞ্জিতা দেবীর কাছে এগিয়ে এলো। ওনার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,

দেবাংশু: এমনটা কেন করলে আণ্টি? কি লাভ পেলে এত লোভ করে? তুমি আর মা দুজনে একেকজনের বেঁচে থাকাটা বিষহ, বিভীষিকা করে তুলেছিলে। আজ সেই কর্মফলে নিজেদের জীবনটা বিষিয়ে গেলো।

রঞ্জিতা দেবী: দেব…

দেবাংশু: একদম আমার নাম মুখে আনবেন না আপনি। যেদিন সব সত্যিটা জেনেছিলাম সেদিন থেকেই আমার কাছে আপনি নিখোঁজ। আমি সেই রঞ্জিতা আণ্টিকে মনে করেই নিজের বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।

দেবাংশু অভ্রর দিকে একবার তাকালো তারপর রঞ্জিতা দেবীর দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। একটা বড়ো নিশ্বাস নিয়ে রুদ্রিকের সাথে দেখা করে আধভিক যেদিকে গেছে সেদিকে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো আধভিক চুপচাপ গাড়িতে হেলান দিয়ে দু হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে নীচের দিকে তাকিয়ে।

আধভিক ইন্টারোগেশন রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই ওর মনে পুরো স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে। চোখে জল আসতেই তা আড়াল করে নিয়ে একবার উপরের দিকে তাকায় আর মনে মনে নিজের মাকে ডাকে। সে শুধু বাবাকে না, বাবা ও মা দুজনকে একসঙ্গে চেয়েছিলো। শ্রীতমা দেবী এমনটা না করলেই পারতেন। আধভিককে এভাবে একা করে না দিয়ে চলে গেলে খুব কি ক্ষতি হতো? আসলে উনি ভেবেছিলেন আধভিকের ঠাম্মি সবটা সামলে নেবেন, উনিও যে… আর ভাবে না আধভিক। মাথা নামিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে দেবাংশুর অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু মন থেকে চিন্তা দুর করা কি এতটাই সহজ? কাঁধে হাতের স্পর্শ পেতেই আধভিক পাশ ফিরে তাকালো।

দেবাংশু: কি ভাবছিস?

আধভিক: এটাই যে, আমাদের মধ্যে হয়তো সবটা ঠিক হয়েছে কিন্তু ড্যাড? মানুষটা কখনও নিজের মত করে বাঁচতেই পারলো না।

দেবাংশু: আংকেলের যা কষ্ট আছে সেগুলো ভোলানোর দায়িত্ব তোর ভিকি। এতদিন তো জানতি না, এখন যখন জেনেছিস তখন…

আধভিক: …তখন ড্যাডকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখবো আমি। ড্যাড যেমন আমাকে কখনও সময় দেয়নি সেটা মনে করে আমিও ড্যাডকে কখনও সময় দিইনি। যে সম্পর্কে ভালোবাসা থাকে সেখানে বিশ্বাসের স্থান সবার আগে, প্রতিশোধের নয়। যেই ভুল করেছি সেটা না জেনে, এখনও যদি এক জিনিস করি তাহলে সেটা ভুল না অপরাধ হয়ে যাবে। আই প্রমিজ মাই সেলফ ড্যাডকে কখনও আমার জন্য, আমার ব্যবহারের জন্য কষ্ট পেতে দেবো না।

দেবাংশু: (হাসিমুখে) অর্জুন ঠিকই বলেছিলো, সত্যি আমাদের দুজনকে দুটো মেয়ে এসে সম্পুর্ণ বদলে দিয়েছে।

আধভিক: (এক গালে হেসে) এবার আমাদের পালা ওদের জীবনটা ভালোবাসা দিয়ে সম্পুর্ণ বদলে দেওয়া। ওরা যেমন আমাদের ভালোবেসে আমাদের জীবনটা বদলে দিয়েছে তেমন আমাদের এটুকু তো করাই উচিত তাই না? কষ্ট ছাড়া কি বা দিয়েছি ওদের এতদিন?

দেবাংশু: (হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে) অবশ্যই। এখন থেকে এটাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য, তাঁদেরকে ভালো রাখা যাঁরা নিঃস্বার্থ ভাবে আমাদের ভালোবেসে এসেছে, সবসময় আমাদের বুঝে আমাদের পাশে থেকেছে।

আধভিক: হম, ওরাও দেখুক ঠিক কেমন আমাদেরকে ভালোবাসার মানে শিখিয়েছে। এতটা ভালোবাসবো যে পুরনো সব ক্ষত ভুলতে বাধ্য হবে।

দেবাংশু: দেখিস, বদ হজম না হয়ে যায় আবার। (হেসে)

আধভিক: (হেসে) এতদিন যখন আমাদেরকে সহ্য করতে পেরেছে, এরপরেও পারবে। ওরা ছাড়া আর কাওর আমাদেরকে সহ্য করার ক্ষমতা আছে বলে মনে হয় না।

আধভিক আর দেবাংশু মজা ঠাট্টা করতে করতে ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো। বেশিক্ষণ থাকলেই আবার মিডিয়া এসে পরবে তখন আরেক ঝামেলা। আর শোন, গাড়িতে একটা পেপার্স রাখা আছে ওটা একটু দেখে নিস।

দেবাংশু: কিসের পেপার্স?

আধভিক: স্যারের প্রোডাকশন হাউজের। ওটা আমি আবার স্যারের নামে লিখে দিয়েছি। তুই দেখে নিয়ে স্যারকে দিয়ে দিস।

দেবাংশু: ঠিক আছে কিন্তু তোর আর পাপাকে স্যার বলা গেলো না। (হেসে)

আধভিক: (হাসিমুখে) ছোটোবেলা থেকেই নিজের শিক্ষক হিসেবে দেখেছি ওনাকে। এত পুরনো অভ্যেস ভোলা মুশকিল। আচ্ছা, চল এখন।

দেবাংশু: হ্যাঁ চল। অনেকটা দেরী হয়ে গেলো।

কয়েক দিন পর,

হোস্ট: আজকে আমরা এমন একটা মুহূর্তের সম্মুখীন হতে চলেছি যা খুব কম সময়েই হয়ে থাকে। আজকে আমাদের এই ন্যাশনাল ফ্যাশন কম্পিটিশনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে তিনটে ফ্যাশন হাউজ। যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারিদের নাম জানানো হয়েছে। এইবার জেনে নেব প্রথম অর্থাৎ আমাদের উইনারের নাম। একইসঙ্গে আমরা আরো দুটো অ্যাওয়ার্ডও দেবো কিন্তু সেটা এখনই বলবো না, সেটাই আজকে আসল চমক। আজকে আমাদের এই কম্পিটিশনের উইনার হয়েছে… লাভ ইন রেইন ফ্যাশন হাউজ!

হোস্টের অ্যানাউন্সমেন্টে হাততালির রোল পরে গেল। আধভিক ও সিয়ারা এবং দেবাংশু ও দিয়ারা খুশিতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছে। হোস্টের আবারও অ্যানাউন্সমেন্টে ওরা একে অপরকে ছেড়ে দাঁড়ালো।

হোস্ট: আমাদের এই কম্পিটিশনে প্রত্যেকবার বেস্ট ফটোগ্রাফার, বেস্ট শোজ টপার এবং বেস্ট ডিজাইনারেরও অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এইবারও তার ব্যতিক্রম হবে না কিন্তু অবাক করা বিষয়টি হলো… এইবার এই সবকটি আওয়ার্ডই একটি মাত্র ফ্যাশন হাউজের ঝুলিতে জমা হয়েছে। … আমি সেই ফ্যাশন হাউজের নাম এখন জানাতে চলেছি। … ফ্যাশন হাউজের নামটি হলো….লাভ ইন রেইন ফ্যাশন হাউজ!!!

আরও একবার চারিদিক হাততালির আওয়াজে ভরে উঠলো। দর্শকের সাথে সাথে বিজয়ীরাও বিশ্বাস করতে পারছে না পুরো বিষয়টা।

হোস্ট: দ্যা বেস্ট ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড গোস টু দেবাংশু গাঙ্গুলি, দ্যা বেস্ট শোজ টপার ইন দিস কম্পিটিশন অ্যাওয়ার্ড গোস টু দিয়ারা সান্যাল অ্যান্ড দ্যা বেস্ট ডিজাইনার অ্যাওয়ার্ড গোস টু সিয়ারা সান্যাল!! দে আর অল ফ্রম লাভ ইন রেইন ফ্যাশন হাউজ! আই উইল রিকুয়েস্ট অল অফ দেম টু কাম অন স্টেজ।

হোস্টের ঘোষণা শেষ হতেই আধভিক দেবাংশুকে জড়িয়ে ধরলো এবং সিয়ারা দিয়ারাকে। আভাস বাবু ও সুধাংশু বাবুও একে অপরকে অভিনন্দন জানালেন তারপর নিজেদের ছেলেদেরকে জড়িয়ে ধরলেন। সবশেষে আধভিক সবাইকে নিয়ে স্টেজে গেলো এবং অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার পর ও’কে হোস্ট প্রশ্ন করলো,

হোস্ট: এভিআর, আপনার ফ্যাশন হাউজের নাম তো প্রথমে এটাই ছিলো তাই না? তাহলে হঠাৎ লাভ ইন রেইন করা হলো কেন রাতারাতি? কোনো বিশেষ কারণ?

আধভিক: অবশ্যই বিশেষ কারণ! ভীষণ ভীষণ বিশেষ কারণ! এই নামটা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে মনে করায়। যেই ঘটনার পর আমি ভালো আছি এবং আগামী দিনেও ভালো থাকবো।

হোস্ট: আমরা কি জানতে পারি সেই ঘটনার বিষয়ে?

আধভিক: খুব তাড়াতাড়ি ডিটেইলসে জানতে পারবেন, এখনের জন্য বলবো… “ভালোবাসা” কি সেটা প্রথম অনুভব করেছিলাম, বুঝতে শিখেছিলাম সেই ঘটনার দ্বারা। থ্যাংক ইউ!

আধভিকসহ সবাই স্টেজ থেকে নেমে যায় অ্যাওয়ার্ড নিয়ে। খাওয়া দাওয়া সেরে একটু তাড়াতাড়িই সবাই বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। দেবাংশু দিয়ারাকে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বেরিয়ে যায় আর আধভিক সিয়ারাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে। আভাস বাবু আর সুধাংশু বাবু একসাথে বেরিয়ে যান।

দেবাংশু ড্রাইভ করছে আর দিয়ারা গাড়িতে বসে নিজের সামনে রাখা অ্যাওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। দেবাংশু মজা করার জন্য বললো,

দেবাংশু: যত মন দিয়ে অ্যাওয়ার্ডটা দেখছো ততটা মন দিয়ে আমাকে দেখতে পারো তো? র্বতে যেতাম তাহলে আমি।

দিয়ারা: বয়েই গেছে তোমাকে দেখতে আমার। হুহ!! (মুখ ভেঙিয়ে)

দেবাংশু কিছু বলতে যাবে দিয়ারার কথার পরিবর্তে তখনই দিয়ারা বলে ওঠে,

দিয়ারা: অংশু গাড়ি থামাও। গাড়ি থামাও প্লিজ!

দেবাংশু: (তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থামিয়ে) কি হয়েছে? গাড়ি থামাতে বললে কেন?

দিয়ারা: চা খাবো!

দেবাংশু: কি? এখন চা খাবে?

দিয়ারা: হ্যাঁ! কি সুন্দর ওয়েদার বলো তো? মেঘলা আকাশ, শীতল হাওয়া সঙ্গে এক কাপ চা! উফ কি দারুন কম্বিনেশন। আমি চললাম, তুমি আসবে কি না তোমার ব্যাপার।

দিয়ারা গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো আর দেবাংশু অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। একটু ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখলো দোকানটা তে অনেকগুলো ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে দেবাংশু নিজের মাস্ক পরে গাড়ি লক করে বেরিয়ে দিয়ারার পিছনে চলে গেলো। দিয়ারা দুহাতে দুটো চায়ের ভাঁড় হাতে নিতেই দেখলো ওর সামনে থাকা ছেলেগুলো যাঁরা ওকে দেখছিলো তাঁরা পিছন দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। দিয়ারা হাসিমুখে পিছন ফিরে দেবাংশুর দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

দিয়ারা: আমি জানতাম তুমি আসবে। নাও ধরো!

দেবাংশু চায়ের ভাঁড়টা হাতে নিয়ে টাকাটা মিটিয়ে দিয়ে দিয়ারাকে নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে এলো হাত ধরে।

দেবাংশু: কতবার বলেছি তোকে এভাবে হুটহাট বেরিয়ে যাবি না? নিজের পরিচয়টা ভুলে যাস না। (রেগে)

দিয়ারা: আমি একজন মানুষ আর এটাই আমার পরিচয়। যাঁরা আমাকে দেখছে তাঁদেরকে আমি আটকাতে পারবো নাকি? না পারবো তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে। তাই এইসব নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে মুহুর্তটা উপভোগ করো!

দেবাংশু দেখলো দিয়ারা চোখ বন্ধ করে বাতাস অনুভব করছে। ওর ঠোঁটে আপনে আপ হাসি ফুটে উঠল। নিজের ফোনটা বার করে মুহুর্তগুলো বন্দী করতে শুরু করলো দেবাংশু।

অন্যদিকে,

সিয়ারা: ভিকি আমরা কোথায় যাচ্ছি? এই রাস্তাটা ত বাড়ির রাস্তা নয়।

আধভিক: গেলেই দেখতে পাবে।

আধভিক নিজের গাড়িটা থামাতেই সিয়ারার দিকে চোখ গেল আধভিকের। ছলছল করছে সিয়ারার চোখ দুটো। সিয়ারার কাঁধে হাত রাখতেই সিয়ারা হেসে আধভিকে দিকে তাকায় আর আধভিক যাওয়ার জন্য ইশারা করে। সিয়ারা গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে, মাঝে মধ্যে দৌঁড়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো। আধভিক গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকাতেই বড়ো বড়ো করে লেখা হেডিং দেখতে পেলো, ” লার্ন টু লাভ এনজিও “।

সিয়ারা নিজের পুরনো স্থানে এতগুলো দিন পর ফেরত এসে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সিয়ারা ভিতরে প্রবেশ করতে অন্ধকার ঘরে লাইট জ্বলে উঠলো আর সব বাচ্চারা একসাথে চিৎকার করে উঠলো, “কনগ্রাচুলেশন দিদি!” সিয়ারা বুঝলো এসব আগে থেকে ঠিক করা। সব বাচ্চাগুলো সিয়ারাকে এসে জড়িয়ে ধরলে সিয়ারাও তাঁদের আগলে নেয়। তারপর চোখ যায় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দিদির দিকে। বাচ্চাদেরকে ছেড়ে দিদির কাছে গিয়ে দিদিকে জড়িয়ে ধরে ও।

দিদি: আমি খুব খুশি তোর জন্য সিয়া।

সিয়ারা: কেমন আছো তোমরা? ওদের, ওদের কোনো অসুবিধা হয়নি তো এই কয়েকদিন? কে শিখিয়েছে ওদের আঁকা? পড়াশোনা?

দিদি: (হাসিমুখে) কে আবার? তোর বর।

সিয়ারা: (অবাক হয়ে) আভি?

দিদি: আজ্ঞে হ্যাঁ। সে নিজে এসে ওদের আঁকা শেখাতো আর পড়াশোনায় সাহায্য করতো। এই এনজিও এখন তাঁর ডোনেশনের মাধ্যমেই চলছে। নতুন নামটাও তাঁর দেওয়া। সত্যি সিয়া, একটা ভালো মানুষ, তোর জন্য সঠিক একটা মানুষ খুঁজে পেয়েছিস তুই।

সিয়ারা চোখে জল নিয়ে সম্মতি জানায় মাথা নেড়ে। সেই সময় একটা বাচ্চা এসে সিয়ারার হাত টেনে জিজ্ঞেস করে,

বাচ্চাটি: দিদি দিদি, আমাদের ড্রেসগুলো দেখো। সুন্দর না?

সিয়ারা বাচ্চাটার কথায় হেসে সবার ড্রেসের দিকে তাকাতেই আরেক দফা অবাক হয়ে যায়। এই ড্রেসের ডিজাইনগুলো তো ওর নিজের বানানো। সবার জন্য একটা করে ও বানিয়ে দিয়েছিলো ওদের বায়না করায়। সিয়ারা সঙ্গে সঙ্গে দিদির দিকে তাকালে দিদি আবারও হাসিমুখে জানায়,

দিদি: ঠিকই আন্দাজ করছিস। আধভিক স্যারের কাজ এসব। আজ তোকে নিয়ে আসবে এটা জানিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে প্ল্যানটাও আমাদের বলে দেয়। ড্রেসগুলো আগে থেকেই আনানো ছিলো। ওরা সবাই বলেছিলো এই ড্রেস তোকে দেখাবে তাই আধভিক বলে ছিলো যেদিন তোকে নিয়ে আসবে সেদিন পরতে।

সিয়ারার মনে আধভিকের প্রতি শ্রদ্ধাটা আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আরো একবার প্রেমে পরে যায় ও আধভিকের, আধভিকের মনুষত্বের।

বাচ্চা: দিদি বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। চলো না আগের মতো ভিজি?

সবাই “প্লিজ দিদি” বলতেই সিয়ারা বাইরে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই বৃষ্টি নেমেছে। বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে হাসতেই ওরা সিয়ারাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো বাইরে। বাইরে এসে ওরা বৃষ্টিতে হইহই করতে শুরু করলে সিয়ারা গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আধভিকের দিকে তাকায় যে ও’কে ইশারা করে বাচ্চাদের সাথে যোগ দিতে। সিয়ারা হেসে ওদের সাথে যোগ দিতেই আধভিকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই দৃশ্য যখন সিয়ারাকে খুঁজতে এসে ও দেখতে পেয়েছিলো। ওদের দ্বিতীয় দেখা।

এদিকে,

বৃষ্টি এসে পরতেই দেবাংশু দিয়ারাকে ভিজতে না দিয়ে একটা বন্ধ দোকানের ছাউনির তলায় নিয়ে এসে দাঁড় করায়। দিয়ারা সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই বৃষ্টির জলে হাত ভেজাতে শুরু করে। পাশ থেকে গান ভেসে আসে,

🎶 “ ক্যায়া হুয়া আসার তেরে সাথ রেহকার না জানে
কি হোশ মুঝে না রাহা
লাফজ মেরে থে জুবান পে আকে রুকে
পার হো না সাকে ওহ বায়ান

ধারকান তেরা হি নাম জো লে
আঁখেন ভি প্যাইঘাম ইয়ে দে
তেরি নাজার কা হি ইয়ে আসার হ্যা
মুঝ পে জো হুয়া

ইস দার্দ-এ-দিল কি সিফারিশ
আব কার দে কোই ইয়াহান
কি মিল জায়ে সে ওহ বারিশ
জো ভিগাদে পুরি তারাহ ” 🎶

দেবাংশু দিয়ারাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিতেই দিয়ারার নজর দেবাংশুর চোখে আটকে যায়। দিয়ারার বুকের ভিতরসহ পুরো শরীরটা একটা অজানা কাঁপুনিতে কেঁপে ওঠে। দেবাংশু দিয়ারার দু গালে হাত রেখে একভাবে ওর চোখের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করে,

দেবাংশু: ইউল ইউ ম্যারি মি দিয়ু? আমি সারাজীবন তোকে ভালোবাসতে চাই আর তোর ভালোবাসায় নিজের শেষ নিশ্বাসটা নিতে চাই।

দিয়ারা দেবাংশুর কথাটা শুনতেই চোখ বন্ধ করে নিজের শাড়িটা দু হাতে আকড়ে ধরে। একটু সময় ওভাবে পার করে নিজের হাত দুটো দেবাংশুর কোমরে রেখে, চোখটা খুলে বলে,

দিয়ারা: ইয়েস, আই উইল!

দেবাংশু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দিয়ারাকে নিজের বুকের মাঝে। দিয়ারাও দুহাতে দেবাংশুর পিঠ আকড়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখে।

অন্যদিকে,

সিয়ারা: আজকে আমি খুব খুব খুব হ্যাপি আভি! থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ ফর এভরিথিং। আমি ভাবতেই পারিনি তুমি এনজিওর বাচ্চাগুলোর খেয়াল রাখবে।

সিয়ারা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আনন্দে আত্মহারা হয়ে আধভিককে বললো। এনজিও থেকে বেরিয়ে আধভিকের কাছে এসে প্রথমে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তারপর কথাগুলো বলে।

আধভিক: যেমন যেটা আমার সেটা তোমারও তেমন যেটা তোমার সেটাই আমার জান! আমি খেয়াল রাখবো না তো কে রাখবে? যাই হোক তুমি এবার গাড়িতে বসো আর ভিজতে হবে না।

সিয়ারা: (কোমরে হাত দিয়ে বাচ্চাদের মত করে) না! (হাত ছড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে) আমি এখনও আরও ভিজবো।

এটা বলেই সিয়ারা রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে। আধভিকও সিয়ারার পিছু পিছু হাঁটা দেয়। আধভিক পকেটে হাত দিয়ে হাঁটছে আর সিয়ারা কখনও লাফিয়ে, কখনও হাত ছড়িয়ে নিজের মতো করে বৃষ্টিতে ভিজছে আর উপভোগ করছে। আধভিক সব কিছু মনে করে হাসিমুখে নিজের অজান্তেই গেয়ে ওঠে,

🎶“ তু জো মিলা
তোহ জিন্দেগি হ্যান বাদলি
মেইন পুরা নায়া হো গায়া
হ্যা বে-আসার দুনিয়া কি বাতেইন বারি
আব তেরি শুনু মেইন সাদা

মিলনে কো তুঝসে বাহানে কারু
তু মুস্কুরায়ে ওয়াজাহ মেইন বানু
রোজ বিতানা সাথ মেইন তেরে, সারা দিন মেরা

ইস দার্দ-এ-দিল কি সিফারিশ
আব কার দে কোই ইয়াহান
কি মিল জায়ে সে ওহ বারিশ
জো ভিগাদে পুরি তারাহ ” 🎶

আধভিকের গান শুনে সিয়ারা আরও খুশি হয়। ওর বাহু জড়িয়ে ধরে ওর পাশে পাশেই হাঁটতে থাকে সামনের দিকে তাকিয়ে। আর আধভিক ওর দিকে তাকিয়ে গাইতে থাকে। গান শেষ হতেই সিয়ারা এগিয়ে যায় এবং বুঝতে পারে আধভিক এগিয়ে আসেনি। পিছন ফিরতেই দেখে আধভিক ওর সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে আছে।

আধভিক: আজ আমরা ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি যেখানে আমি তোমাকে খুঁজতে এসে দেখেছিলাম। আমাদের দ্বিতীয় দেখা।

আধভিকের কথা শুনে সিয়ারা একটু চারিদিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি তাঁরা সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ওই তো পাশেই বাস স্ট্যান্ড, যেখানে বসে আধভিকের সাথে কথা বলেছিল সিয়ারা। ওদের দ্বিতীয় দেখা হলেও সিয়ারার কাছে ওটা প্রথম দেখাই ছিলো এবং নিজের অজান্তেই হয়তো আধভিকের কথা শুনে তাঁকে মন দিয়ে বসেছিলো ও।

আধভিক: এখান থেকেই আমাদের জীবনের একটা নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিলো, সম্পর্কের শুরু হয়েছিলো আর সেইজন্য আজকে আমি এই জায়গা থেকেই আমাদের জীবনের আরো একট নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাই সিয়ু। (আধভিক নিজের পকেট থেকে রিং বার করে সিয়ারার সামনে ধরে বললো) বিয়ে করবে আমাকে? আমি আর পারছি না তোমার থেকে দূরে থাকতে। আমি ভাবিনি তোমাকে কেউ আমার জীবন থেকে সরানোর চেষ্টা করবে, ভাবলে কখনই তোমাকে যেতে দিতাম না। আমি কখনও তোমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথা ভাবিনি জান, আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তোমাকে হারানোর ভয়ে সেখানে আমি কীভাবে এমন কিছু ভাববো? আই অ্যাম স্যরি, সেইদিন আমি তোমাকে মানাইনি বরং আরো বাজে ব্যবহার করেছি তার জন্য, আর যা যা ভুল করেছি আগে, খারাপ ব্যবহার করেছি সেসবের জন্য আই অ্যাম স্যরি! আমি সত্যি তোমাকে আমার পাশে চাই, তোমাকে ভালোবাসতে চাই, তোমার ভালোবাসা পেতে চাই। প্লিজ জান, বিয়ে করবে আমাকে? কথা দেবে সারাজীবন এভাবেই ভালোবেসে আমার পাশে থাকার?

সিয়ারা সম্মতি জানিয়ে মাথা নেড়ে আধভিকের দিকে নিজের বাম হাত বাড়িয়ে দিলে আধভিক হাসিমুখে সিয়ারার অনামিকা আঙুলে আংটিটা পড়িয়ে দেয় এবং উঠে দাঁড়ায়। সিয়ারা আধভিকের অপর হাতটা ধরে, ওর চোখে চোখ রেখে অনেকটা কাছে এগিয়ে আসে। বলে,

সিয়ারা: “কথা দিলাম”, কথা দিলাম সারাজীবন তোমার পাশে থেকে তোমাকে ভালোবাসবো। কখনও তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববো না, আগেও ভাবিনি। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি আভি, আমিও সত্যি তোমাকে নিজের পাশে চাই। তোমাকে ছাড়া নিজেকে বড্ড অসম্পূর্ণ মনে হয় আমার।

আধভিক সিয়ারার কপালে চুমু দিয়ে, সিয়ারার বাম হাতটা ছেড়ে ডানটা শক্ত করে ধরে নিজেদের সামনে তুলে বলে,

আধভিক: আই লাভ ইউ!

কথা শেষ করেই আধভিক নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায় সিয়ারার হাতে। সিয়ারা হাসিমুখে, নির্দ্বিধায় বিনা সময় নষ্ট করে আধভিককে জবাব দেয়,

সিয়ারা: আই লাভ ইউ টু!

সিয়ারাও আধভিকের মতো করেই আধভিকের হাতে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তারপর হাতটা নামিয়ে সিয়ারাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আধভিক। আলতো করে সিয়ারার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতেই সিয়ারা আধভিকের শার্ট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে। আধভিক ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে সরে এসে একবার সিয়ারার মুখটা ভালো ভেবে দেখে নেয়। তারপর সিয়ারার ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্তে নেওয়ার আগে চারপাশে চোখ যায়। রাত হওয়ায় কোনো লোক না থাকলেও এখানে এভাবে থাকাটা ঠিক না। বেশ কয়েকটা গাড়ি যাচ্ছে আশে পাশে দিয়ে। এদিকে, সিয়ারা আধভিকের ছোঁয়ার অপেক্ষা করার পরেও তা না পেলে চোখ মেলে তাকায়। দেখে আধভিক আশে পাশে তাকাচ্ছে। সিয়ারা কিছু বলবে তার আগেই আধভিক নিজের ব্লেজার খুলে নিয়ে সিয়ারার গায়ে জড়িয়ে দেয়। সিয়ারা বুঝতে পারে বৃষ্টিতে ওর শরীর ভিজে যাওয়ায় শাড়িটা ওর গায়ে বসে গেছে, ফলে শরীরের প্রত্যেকটা খাঁজ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই আধভিকের এমন কাণ্ড।

সিয়ারা: আমার ঠান্ডা লাগছে না, এটা কেন গায়ে জড়ালে? (না জানার ভান করে)

আধভিক: তোমার ঠান্ডা না লাগলেও আমি গরম হয়ে যাচ্ছি তোমাকে এভাবে দেখে। (মাথা থেকে পা অবধি চোখ দিয়ে ইশারা করে)

সিয়ারা: (দুষ্টু হেসে) তাই বুঝি? নাকি অন্যরা দেখবে তাই…

সিয়ারার কথা শেষ হওয়ার আগেই আধভিক সিয়ারাকে কোলে তুলে নিলো। সিয়ারা অবাক হয়ে আধভিকের গলা জড়িয়ে ধরলে আধভিক সিয়ারার ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে সরে আসে। বাঁকা হেসে বলে,

আধভিক: অন্যদের দেখা তো দূরের কথা, সুযোগটাই আসতে দেবো না আমি। আর এখন কথা না শুধু কাজ হবে। প্রথমে বিয়ে তারপর…

সিয়ারা: উফ আভি, চুপ!!

সিয়ারা আধভিকের গলায় লাজুক হেসে মুখে গুঁজলে আধভিক হাসিমুখে নিজের গাড়ি যেদিকে আছে সেদিকে এগিয়ে যায়।

সমাপ্ত

যাঁদের বিয়ে খাওয়ার শখ তাঁরা প্লিজ ওদের কন্ট্যাক্ট করেনিন, আমাকে বলতে বারণ করেছে। আসলে ওরা নিজেরা ইনভাইট করবে। 🙆🏻‍♀️ এতদিন “একদিন তুমিও ভালোবাসবে” সবথেকে বেশি পর্বের গল্প ছিলো আমার। এখন “কথা দিলাম” সেটার জায়গা নিলো। আপনারা পাশে থাকলে পরবর্তী সময়ে হয়তো এরথেকেও বেশি পর্বের গল্প বা উপন্যাস লিখতে সক্ষম হবো। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। সবার থেকে একটু গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি, সাথে এটাও জানাচ্ছি এই গল্পের রেসপন্সের ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতে আমার ফেসবুক গল্প দেওয়া। আমি যদি পর্যাপ্ত রেসপন্স না পাই তাহলে এটাই ফেসবুকে দেওয়া শেষ গল্প হবে আমার আর অনেক অনেক ধন্যবাদ এতদিন পাশে থেকে গল্পটা পড়ার জন্য। ❤️
[#ফিরে_আসবো_আগামী_গল্প_নিয়ে🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here