‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৪৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
রাত হয়ে গেছে। সিয়ারা নিজের ঘরে বসে রাজ গজগজ করছে। বার বার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে আর নিজের মনে মনে বলছে,
সিয়ারা: সাহস কত বড়! একে তো ভুল করলো। তার উপর এখন একটা কলও করছে না। কল দূরের কথা একটা টেক্সট অবধি করলো না? সরি বলার কোনো প্রয়োজনই মনে করে না তাই না? ঠিক আছে। থাকুক ওভাবে। আমি না কথা বলবো আর না দেখা করবো। দেখি কত দিন থাকতে পারে। হুহ!!
সিয়ারা রাগে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে। কিছুতেই স্থির হতে পারছে না ও। যতই মনে মনে নিজেকে বলছে, যে না ও আর ভাববে না এই নিয়ে। তত বেশি ওর মনে পরে যাচ্ছে এই বিষয়ে। পায়চারি করতে শুরু করে একটা সময় সিয়ারা। এমন সময় দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজ পেলে সিয়ারা বলে,
সিয়ারা: দরজা খোলা আছে দেব। আসতে পার…তুমি… উমম..??
সিয়ারা দরজার দিকে পিছন ফিরে ছিলো। ও ভেবে ছিলো দেবাংশু এসেছে তাই না দেখেই আসতে বলেছিল। কিন্তু কিছু একটা ভেবেই ও যখন সামনে ফেরে তখন অবাক হয়ে যায় আধভিককে দরজা বন্ধ করতে দেখে। সিয়ারা এগিয়ে গিয়ে আধভিককে আটকাতে গেলে আধভিক সিয়ারাকে কাছে টেনে ওর কথা বন্ধ করে দেয় নিজের ঠোঁটজোড়ার দ্বারা। সিয়ারা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আধভিককে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। সিয়ারা যখন নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা বন্ধ করে শান্ত হয়ে যায় তখন আধভিক সিয়ারাকে ভালোবাসতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর তেষ্টা মিটিয়ে আধভিক যখন সরে আসে তখন সিয়ারা ধীরে ধীরে চোখ খোলে। আধভিক কিছু বলতে যায় তার আগেই সিয়ারা আধভিককে হালকা ঠেলে দিয়ে নিজে পিছনে সরে গিয়ে বলে,
সিয়ারা: সাহস কি করে হয় তোমার ড্রিংক করে আমার কাছে আসার? কেন এসেছ এখানে? এক্ষুনি বেরিয়ে যাও। কোনো কথা বলতে চাইনা আমি তোমার সাথে।
আধভিক: সিয়ু আমার কথাটা একবার শোনো। আমি জানি আমার ভুল হয়েছে কিন্তু…
সিয়ারা: আচ্ছা? তোমার বলা উচিত তুমি জেনে বুঝে ভুল করেছো। আমাকে ওখানে ডাকার কি দরকার ছিলো যখন তুমি তোমার বান্ধবীর সাথে ড্রিংক করবে, গল্প করবে বলে ঠিক করেছিলে? আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ইগনোর করেছো তুমি।
সিয়ারা আর কিছু বলতে পারলো না পিছন ঘুরে গেলো। ওর কথাগুলো কান্নার সাথে মিলে গিয়ে জড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। এতক্ষণ যেই মানুষটার উপর রাগ ছিলো তা মানুষটা সামনে আসায় অভিমানে বদলে যেতে শুরু করেছে। হয়তো ও জানে, এই মানুষটা ঠিক ওর অভিমান ভাঙাবে। একমাত্র ওরই অধিকার আছে এই মানুষটার উপর অভিমান করার। ছোটো ছোটো বিষয়ে অভিমান করার। ওর বিশ্বাস যতই ছোটো বিষয়ে অভিমান করুক ও, এই মানুষটা ঠিক সেটার পরোয়া করবে এবং ওকে মানাতে আসবে।
সিয়ারা নিজের কান্নাটা ঠোঁট কামড়ে আটকে ফেলে। তখনই অনুভব করে আধভিকের একটা হাত ওর কোমর পেঁচিয়ে নিচ্ছে। সাথেই সাথেই সিয়ারা ধাক্কা খায় আধভিকের বুকে। আধভিক একটু ঝুঁকে সিয়ারার ঘাড়ে মুখ গুঁজে নাক ঘষে দিল সিয়ারা একটু মাথাটা সরিয়ে নেয় বিপরীত দিকে।
আধভিক: আই অ্যাম সরি মাই লাভ! আমার একদম উচিত হয়নি ওরকম ভাবে তোমার বসিয়ে রাখা। আমার সত্যি ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু আমি জেনে বুঝে কোনো ভুল করিনি, বিশ্বাস করো আমায়।
সিয়ারা: তুমি..তুমি এখনও ড্রাংক আভি? সিরিয়াসলি? তুমি..
সিয়ারা ভীষণ রেগে গিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় আধভিকের থেকে। আধভিকের থেকে বেশ অনেকটা দূরে সরে গিয়ে বলে,
সিয়ারা: আমি আর তোমার কোনো কথা শুনতে চাইনা। আমি তোমাকে বলেছিলাম ড্রিংক, স্মোক করা থেকে বিরত থাকবে। আমার অনুপস্থিতিতে দুবছর কি করেছো আমার দেখার দরকার নেই, এখন যখন আমি আছি তখন আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার কথা রাখবে কিন্তু নাহ..চলে যাও। চলে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। (রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে)
আধভিক: সিয়ু…
সিয়ারা: মরে গেছে সিয়ু!
সিয়ারার তৎক্ষণাৎ উত্তর দিয়ে দেওয়ায় আধভিক চুপ করে গেলো। দুজনেই কোনো কথা বলছে না। একটা পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে ঘরে। সিয়ারার মাথাটা গরম থাকায় উত্তেজনার বশে কি বলে ফেলেছে এখন ভাবছে সে। এদিকে আধভিক ধীরে ধীরে নীচের দিকে দৃষ্টি রেখেই পিছাতে শুরু করে। সেটা দেখে সিয়ারা ঝট করে বলে ফেলে,
সিয়ারা: কোথায় যাচ্ছো?
আধভিক: চলে যাচ্ছি।
সিয়ারা: ক..কি শুনতে বলছিলে?
আধভিক: এতক্ষণ যখন শোননি, তখন আর শোনার প্রয়োজন নেই।
আধভিক পিছন ঘুরে চলে যাওয়ার আগেই সিয়ারা আধভিকের বুকের সাথে মিশে যায় ওর কোমর জড়িয়ে ধরে। কান্না মিশ্রিত গলায় বলে,
সিয়ারা: তুমি তো জানো আভি আমি পছন্দ করিনা তোমার ড্রিংক করাটা। তুমি আমাকে না জানালেও আংকেল আমাকে সেই প্রথমেই জানিয়েছিলেন এগুলো তোমার শরীরের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক। আমি চাই না তোমার আর কোনো ক্ষতি হোক। এই দুই বছরে তুমি যে এসবের পরোয়া করোনি, শরীর খারাপ করেছো, নিজের ক্ষতি করেছো আমি খুব ভালো ভাবেই জানি। তাই এগুলো স্ট্রিক্টলি বারণ করেছি নাহলে প্রথমে তো পুরোপুরি বারণ করিনি বলো? কেন বোঝো না তুমি আমায়?
সিয়ারা আর বলতে পারে না ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে তা দেখে আধভিক সিয়ারাকে জড়িয়ে ধরে। সিয়ারার হাতের বাঁধন আরো শক্ত হয়ে যায় আধভিক জড়িয়ে ধরলে।
অন্যদিকে,
দিয়ারা ক্লাবের বার সাইডে বসে আছে চুপচাপ। লাউড মিউজিক, সবার আনন্দ করা, ড্রিংক করা সব কিছুর মাঝে দিয়ারা নিজের ভাবনার জগতে হারিয়ে রয়েছে। এতো কি ভাবছে সে?
দিয়ারা: (মনে মনে — আজ অনেক কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি আমি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর না পেলেই ভালো হতো। কেন হলো এমন? কেন নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না আমি? আমি তো ঠিক করেছিলাম কখনও কাওর প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হতে দেবো না। তাহলে কীভাবে..কীভাবে?? কীভাবে আমি দেবদা কে ভালোবেসে ফেললাম? এখন বুঝতে পারছি কেন ও আমার সামনে আসলেই আমার বুকের ভিতরটা ঢিপ ঢিপ করতে শুরু করতো। ও কোনো কিছু বললে আমি কেন এড়িয়ে যেতে পারতাম না। ওর সাথে থাকতে আমার এতো কেন ভালো লাগে। সারাদিন কেন ওকে নিয়েই ভাবছি। আর আজ, আজ যখন ওই মেয়েটা ও’কে জড়িয়ে ধরলো! এক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিলো সময় জানো স্তব্ধ হয়ে গেছে, আমার পুরো পৃথিবীটাই নড়ে উঠেছিলো। আমি, আমি ভালোবেসে ফেলেছি দেবদাকে।….) না না না। এসব কি ভাবছি আমি? হয়তো, হয়তো এগুলো সব ভালো লাগার মধ্যে পরে। আমি ওকে ভালোবাসতে যাবো কেন? কদিনেরই বা পরিচয় ওর সাথে আমার? এই কদিনে ভালোবাসা হয় নাকি আবার? ধুর! কিন্তু…
হঠাৎই দিয়ারার মাথায় নিজের দিদি আর আধভিকের বিষয়টা মাথায় আসে। আধভিক তো প্রথম দেখাতেই মন দিয়ে বসে ছিলো ওর দিদিকে। আবারও সে নিজের মাথা থেকে ভাবনা গুলো ঝেড়ে ফেলে আর নিজেকে বলে,
দিয়ারা: ভিকি দা প্রথম দেখায় ভালোবেসেছে বলে যে আমিও ভালোবেসে ফেলেছি তার কি মানে? আমি বেশি ভাবছি। ও হয়তো আমাকে নিয়ে এসব কিছুই ভাবে না। কিন্তু যদি তাই হয় তাহলে ও এত কেন পরোয়া করে আমি কথা না বললে, ওকে ভুল বুঝলে? উফ ভগবান! আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না। (দু আঙুল দিয়ে কপালের দু পাশ চেপে) ওয়েটার! একটা স্কচ দিন।
ওয়েটার একটা গ্লাসে স্কচ ঢেলে দিতেই দিয়ারা গ্লাসটা নিয়ে নেয়। সামনের দিকে ঘুরে গ্লাসে চুমুক দেওয়ার জন্য ঠোঁট ছোঁয়াতেই কেউ টেনে ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে নেয়।
দিয়ারা: হোয়াট দ্যা…তু..তুমি?? (ভয় পেয়ে রাউন্ড চেয়ার থেকে নেমে) দেবদা, তুমি এখানে কি করছো? (ঢোঁক গিলে)
দেবাংশু: কেন? অর্জুন চ্যাটার্জীকে এক্সপেক্ট করছিলি? অবশ্য করবি না’ই বা কেন? সেই তো তোকে নিয়ে এসেছে এখানে তাই না? (দাঁতে দাঁত চেপে)
দিয়ারা: ইয়ে..না মানে আসলে…
দেবাংশু: আমি যখন আমার সাথে তোকে থাকতে বললাম তুই কি অজুহাত দিলি? না তোকে বাড়ি ফিরতে হবে। এই তোর বাড়ি ফেরা তাই না?
দিয়ারা: আব..ফেরার পথে অর্জুনের সাথে দেখা হয়ে গেছিলো।
দেবাংশু: আমি যদি তোর ফ্ল্যাটে ড্রপ করে দিতাম তাহলে নিশ্চয় ফেরার পথে দেখাটা হতো না তাই না?
দিয়ারা: তোমার সমস্যাটা কোথায় আমাকে বলবে প্লিজ? আমি একজন অ্যাডাল্ট। আমার ইচ্ছা অনুযায়ী আমি যার সাথে ইচ্ছা তাঁর সাথে যেখানে খুশি যেতে পারি।
দেবাংশু: তুই বলতে চাইছিস আমার সাথে থাকতে তোর ইচ্ছা করছিলো না?
দিয়ারা: হ্যাঁ তাই! আমার ইচ্ছা করছিলো না তোমার সাথে থাকতে। প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে দাও। কিসের এত অধিকার বোধ তোমার আমার উপর? কোনো অধিকার নেই আমার উপর তোমার বুঝেছো?
দেবাংশু নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে রাখে। নিজের চোয়াল শক্ত করে সরে যায় ওখান থেকে। দেবাংশু চলে যেতেই দিয়ারা জানো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। মনে মনে প্রশ্ন জাগে ওর,
দিয়ারা: (মনে মনে — সত্যি তো, কিসের এত অধিকারবোধ ওর আমার প্রতি? আমি যেমন তানিশাকে ওর সাথে দেখে মেনে নিতে পারেনি, দেবদাও কি অর্জুনকে….তাহলে কি দেবদাও আমার মত সেম ফীল করছে? আমি ওর জন্য যা ফীল করি, ও’ও কি আমার জন্য…??)
হঠাৎ করেই দিয়ারার একটা ভালো লাগা শুরু হলো। এমন সময় অর্জুন এসে ওকে ড্যান্স করার জন্য অফার করলে দিয়ারা প্রথমে না করে দেয় কিন্তু তারপরে বাধ্য হয় যেতে ড্যান্স ফ্লোরে। হালকা ড্যান্স করতে করতে ওর হঠাৎ চোখ যায় দেবাংশু ড্রিংকের গ্লাস হাতে নিয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। দিয়ারা নিজেকে ছাড়িয়ে ওখানে যাবে ভাবতেই তানিশাকে দেবাংশুর কাছে যেতে দেখে ও। দেবাংশু ওর সাথে কথা বলতে শুরু করলে দিয়ারা আর কিছু না বলে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়।
অর্জুন: কি হয়েছে দিয়া? এনি প্রবলেম?
দিয়ারা: আব, না না। কিছু না।
অর্জুন দিয়ারার চাহুনি অনুযায়ী পিছন দিকে তাকাতেই দেখে দেবাংশু ওদের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। দেবাংশুর চাহুনি, মুখের অভিব্যক্তি দেখে অর্জুন অবাক হয় কিন্তু সবথেকে বেশি অবাক হয় যখন দেবাংশুর হাতে ড্রিংকের গ্লাস দেখে।
অর্জুন: (মনে মনে — দেব ড্রিংক করছে? সিরিয়াসলি?)
অর্জুন মাঝে মধ্যেই তাকাতে থাকে দেবাংশুর দিকে। সে বিশ্বাস করতে পারছে না দেবাংশু একের পর এক ড্রিংক শেষ করছে। একটা সময় গিয়ে যখনই ও দেখলো দেবাংশু একটা বোতল তুলে নিয়েছে হাতে সঙ্গে সঙ্গেই সে দিয়ারার দিকে ফিরতে বাধ্য হলো।
দিয়ারা: অর্জুন আমাকে যেতে হবে। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলে নেবো।
অর্জুন: হ্যাঁ কিন্তু কোথায় যাচ্ছ? আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।
দিয়ারা: আমি চলে যেতে পারবো। থ্যাংক ইউ আজকে কোম্পানি দেওয়ার জন্য। আমি আসছি।
অর্জুন দেখলো দেবাংশু বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই দিয়ারাও বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে। অর্জুন কিছু না বলে সেও ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]
বিঃদ্রঃ ২০১৮ থেকে নিজের সমস্যার সম্মুখীন নিজেই হচ্ছি। নিজেই সার্ভাইভ করছি সবরকম পরিস্থিতির থেকে, নিজেই সা নিজেকে। এইবারও তার অন্যথা হয়নি। অনেকটা সামলে নিয়েছি নিজেকে, আপনাদেরকে পাশে পেলে খুব তাড়াতাড়ি পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবো। ❤️ আগামী পর্বগুলি তে বড়ো কিছু হতে চলেছে, বলা ভালো এখন থেকে আসন্ন পর্বগুলির বেশিরভাগ পর্বে কিছু না কিছু হতেই থাকবে। যেহেতু প্রথম থেকে কষ্ট ছিলো তাই কিছুটা স্বাভাবিক রেখেছিলাম কয়েকটা পর্ব। প্রথমের দিকে অনেকের মিন হয়েছে গতি এক, গল্প ঘুরে ফিরে এক। তাঁদেরকে বলবো বেশিরভাগ পাঠক চেয়েছিলেন গল্পটা বড়ো হোক তাই সেভাবেই আমি গল্পটাকে এগিয়ে নিয়ে এসেছি। আর গল্পের সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্যও সেটা জরুরি ছিলো। এইবার আবার গল্পে গতি আনবো। ধন্যবাদ।’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৪৭||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
সিয়ারা আধভিকের বুক থেকে মাথা তুলে দেখে আধভিক বেডের হেডবোর্ডে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
সিয়ারা: কি হয়েছে? বলবে না আমাকে?
আধভিক সিয়ারার প্রশ্নটা শুনে চোখ খোলে। তারপর মাথা সোজা করে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
আধভিক: বলবো, তার আগে তুমি বলো তুমি রাগ করবে না? ঠাণ্ডা মাথায় পুরো বিষয়টা শুনবে?
সিয়ারা: ঠিক আছে।
সিয়ারা বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়লো যা দেখে আধভিক হালকা হাসলো। তারপর বলা শুরু করলো,
আধভিক: আজকে তানিশা হঠাৎ করেই আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। আমি জানতাম না ও আসবে, এটাও জানতাম না ও কীভাবে জানলে আমি ওখানে আছি। যা মনে হচ্ছে ফলো করেছে আমাকে। তানিশাই হোয়াইন অর্ডার করেছিলো, আমি কিছুই করিনি।
সিয়ারা: তানিশা?
আধভিক: হম। তানিশা…তানিশা দেবকে ফিরে পাওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছে। ও আমাকে এটার জন্যেই রিকুয়েস্ট করতে এসেছিলো যাতে আমি দেবের সাথে কথা বলি এই বিষয়ে।
সিয়ারা: কিন্তু দেব তো তানিশা কে পছন্দ করে বলে মনে হয় না আমার। তবে দেবের ও’কে অপছন্দ করার কারণটা কি? আগে তো ওরা রিলেশনে ছিলো তাই না?
আধভিক: না। ওরা কখনও রিলেশনে ছিলোই না।
সিয়ারা: কি? ওহ হ্যাঁ, দেব তো বলছিলো সেদিন। এটাও বলছিলো যে তোমাদের মধ্যেও ঝগড়া হয়েছে তানিশার কারণে।
আধভিক: হম। সিয়ু, তানিশা এমন একটা মেয়ে যে কি না সব করতে পারে নিজের স্বার্থের জন্য। আমি আর দেব যখন ক্লাসমেট ছিলাম তখন তানিশাও আমাদের ক্লাসেই ছিলো। প্রথম থেকেই ওর টার্গেট হতো সেসব ছেলেরা যাদের টাকা আছে, যাঁরা বড়লোক।
সিয়ারা: ও’কে দেখে তো মনে হলো ও অনেক হায়ার স্ট্যান্ডার্ড বিলং করে।
আধভিক: হ্যাঁ সেই জন্যেই ওর বন্ধু বলো পার্টনার বলো সবাই সেইম স্ট্যান্ডার্ড থেকেই বিলং করুক সেটাই চাইতো ও। টাকা পয়সার দরকার ওর ছিলো না, ও শুধু নিজের স্ট্যাটাস মেইনটেইন করতে চাইতো আর কিছুই না। এতদূর সব ঠিক ছিলো কিন্তু তারপর…(ইতস্তত বোধ করতে লাগলো)
সিয়ারা: তারপর?
আধভিক: তারপর..তারপর আমাদের বন্ধুত্বটা একটু মজবুত হতেই তানিশা আমাকে একদিন জোর করে ওর সাথে ক্লাবে যেতে। আর ওখানে গিয়ে..
আধভিক বলতে চেয়েও আটকে যাচ্ছে। ও যে ভয় পাচ্ছে সেটা সিয়ারা ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে যার কারণে ওর মনেও একটু ভয়ের সৃষ্টি হয়।
সিয়ারা: আভি তুমি আমাকে নিশ্চিন্তে বলতে পারো। যদি অতীতে তেমন কিছু হয়েও থাকে আমি কিছু মনে করব না কারণ তখন আমি ছিলাম না।
আধভিক: তুমি যেমন ভাবছো তেমন কিছুই নয়। আমি যতই নেশা করি না কেন কোনো মেয়ের কাছে কখনওই যাইনি। না আমি আর না দেব।
সিয়ারা: দেব? দেবও তোমার সাথেই গেছিলো সেদিন? (অবাক হয়ে)
আধভিক: না, সেদিন যায়নি। আসলে, তানিশার সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর থেকে রোজই আমাদের ক্লাবে যাওয়া আসা লেগে থাকতো। সত্যি বলতে গেলে স্মোক থেকে নিয়ে ড্রিংক সব কিছুই তানিশা আমাদের ধরিয়ে ছিলো। রোজকার মত সেদিনও আমি ক্লাবে গেছিলাম তবে দেব যায়নি আমার সাথে। কিছুক্ষণ থাকার পর তানিশা আমাকে বলে আমার জন্য কিছু ওয়েট করছে। ক্লাবের উপরের ফ্লোরে একটা ঘরে নিয়ে যায় আমাকে তানিশা সেখানে অনেকগুলো ছেলে মেয়ে ছিলো আমাদের এজের। বেশিরভাগ আমাদের ক্লাসমেট।
সিয়ারা: কি করছিলো ওরা সবাই ওখানে? (আগ্রহী হয়ে)
আধভিক: (কিছুক্ষণ চুপ থেকে) হেরোইন নিচ্ছিলো।
সিয়ারা থ হয়ে যায় কথাটা শুনে। কিছুক্ষণ সময় লাগে ওর বিষয়টা বুঝতে। বুঝে ওঠার পরে শান্ত ভাবেই জিজ্ঞেস করে,
সিয়ারা: তুমি হেরোইন নিয়েছিলে সেদিন?
আধভিক নীরবে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লো। দুজনেই কোনো কথা বলে না। কিছুক্ষণ পর আধভিক নিজেই বলতে শুরু করে আবার।
আধভিক: হেরোইন, কোকেইন সব কিছুই ট্রাই করেছি আমি। কোকেইনটা আমি হোস্টেলে নিয়েছিলাম সবার আড়ালে। হেরোইনটা ক্লাবে। সেদিন আমার হোস্টেলে ফিরতে অনেক দেরী হয়ে গেলে দেব আমাকে জিজ্ঞেস করে কারণ। আমি কোনো মতে এড়িয়ে গেছিলাম বাট কোকেইন যখন নিয়েছিলাম তখন ও বুঝে যায়। আমার হুঁশ ফিরলে ও আমাকে ভালো ভাবে বোঝায় যে তানিশার সাথে মিশতে না। আমি ওকে কোনো উত্তর দিই না।
সিয়ারা: আর সেটা কেন?
আধভিক: কারণ আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম আমি কোকেইন নেবো আর সেটা আমাকে একমাত্র তানিশাই দিতে পারতো। ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া কোকেইন নেওয়ার পর আমার কতোটা ভালো লেগেছিলো। আমি সব কিছু ভুলে গেছিলাম জাস্ট, সব কিছু!
সিয়ারা আধভিকের থেকে দূরে সরে যায় কথাটা শুনে। আধভিক সেটা বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে সিয়ারার দিকে তাকালে দেখে সিয়ারা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আধভিক আশঙ্কা নিয়ে একটা ঢোক গিলে সিয়ারার নাম ধরে জিজ্ঞেস করে,
আধভিক: সিয়ু?
সিয়ারা: গত দু বছরেও কি তুমি..??
আধভিক: নাহ। আমি সেদিনই প্রথম এবং শেষবারের জন্য ওটা নিয়েছিলাম। তবে..
সিয়ারা: (আধভিকের দিকে তাকিয়ে) তবে..??
আধভিক: একদিন দেব ইউনিভার্সিটি চেঞ্জ করে নেয়, জানি না ওর কি হলো ও একদিন এসে হঠাৎ করেই নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। আমাদের ইউনিভার্সিটি যাওয়ার ফার্স্ট দিন ছিলো সেদিন। আমি ওকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম অনেক কিন্তু ও না আমার দিকে তাকাচ্ছিলো না, আমার সাথে কোনো কথা বলছিলো।
সিয়ারা: কেন? তুমি আবার কোকেইন নিয়েছিলে তাই? দেব তখনই রেগে যায় যখন ওর কথা কেউ অমান্য করে।
আধভিক: কিন্তু আমি তো ওর বলার পর আর ওই কাজটা করিনি। হ্যাঁ আমি ওর সাথে কোনো কথা বলছিলাম না ইভেন আমি সবার থেকেই ডিটাচড ছিলাম কয়েকদিন কারণ আমি ভাবতে চেয়েছিলাম। আর এই সময়টা আমার নিজেকে দেওয়া জরুরী ছিল যাতে আমি ঠিক ভুলের বিচারটা করতে পারি।
সিয়ারা: তাহলে দেব এমন কেন করলো?? আর তুমিই বা পরে কেন যোগাযোগ করোনি ওর সাথে??
আধভিক: তানিশার কথায়। তোমার দুটো প্রশ্নের এই একটাই উত্তর সিয়ু। (মাথা নীচু করে)
সিয়ারা: আমাকে ক্লিয়ার করে বলো। আমি বুঝতে পারছি না কিছু। (উত্তেজিত হয়ে)
আধভিক: তানিশা দেবকে বলেছিলো আমি কোকেইন চাই তানিশার থেকে। দেব তাতেই রেগে যায়। আর আমাকে এসে বলে দেব তানিশাকে বলেছে ও আমার মতো একটা ড্রাগ অ্যাডিক্ট ছেলের সাথে কোনো সম্পর্কই রাখতে চায় না বন্ধুত্ত্ব দূরের কথা।
সিয়ারা: মাই গড! (মাথায় হাত দিয়ে)
আধভিক: আমরা দুজনেই তানিশা কে বিশ্বাস করেছিলাম এটা ভেবে যে তানিশার কি লাভ আমাদের মিথ্যে বলে। পরে যখন আমি এখানে এসে দেবকে দেখলাম তখন দেব আমার সাথে কথা বলতে এলে আমি ওকে এটাই জিজ্ঞেস করি, “একটা ড্রাগ অ্যাডিক্ট ছেলের সাথে কথা বলতে এসেছেন যে? আপনি তো কোনো সম্পর্কই রাখতে চাননি।” ও সঙ্গে সঙ্গে বলে “যে দোষ করে তুই আমাকেই কথা শোনাচ্ছিস? আমারই ভুল ছিলো তোর সাথে কথা বলতে আসার। যে আমি কথা তখন শোনেনি, এখন কি শুনবে?” এটার পরে আমি বলি যে আমি শুনেছিলাম ওর কথা। তারপরেই ধীরে ধীরে ক্লিয়ার হয়ে যায় বিষয়টা।
সিয়ারা: কারণটা কি এমন করার?
আধভিক: দেবের উপর তানিশার রাগ ছিলো। ও প্রথম থেকে দেবকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বানাতে চেয়েছিল। প্রথমে আমাকে টার্গেট করেছিলো যখন দেখলো আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই মেয়েদের ব্যাপারে তখন ওর নজর দেবের উপর গিয়ে পরলো। দেব ওকে বলে দিয়েছিলো ও’ও ইন্টারেস্টেড নয় এসবে। যেটাতে তানিশার কোনো প্রবলেমই ছিলো না, ও চেয়েছিলো দেব জানো ওর সাথে থাকে অন্য মেয়েদের সাথে কথা না বলে। তাই তখন ও আমাকে দেবকে বোঝাতে বলে কিন্তু আমি দেবের সাথে দি। এইজন্যেই হয়তো ওর রাগ আমার উপরেও হয় আর ও সিদ্ধান্ত নেয় আমাদেরকে আলাদা করবে। এদিকে ও সবাইকে বলে বেরিয়েছিল ও দেবের গার্লফ্রেন্ড। তাই জন্য দেব আরওই চেঞ্জ করে ইউনিভার্সিটি। যেই ইউনিভার্সিটিতে আমাদের যাওয়ার কথা ছিলো ও যায়নি। ইভেন আমি জানতামও না ও কোন ইউনিভার্সিটি তে গেছিলো, কোথায় ছিল। কিচ্ছু জানতাম না আমি।
পিনপতন নীরবতা আবারও বিরাজ করতে শুরু করে। আধভিক নিজের মুখটা দুহাতে ঢেকে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর সিয়ারা বলে।
সিয়ারা: দেবের রাগের কারণটা জায়েজ আভি। আমি তো বুঝতে পারছি না তুমি কেন তানিশাকে হেল্প করছো? কি দরকার তোমার?
আধভিক: আমি হেল্প করছি না সিয়ু। আমি জাস্ট ওর কথাটা শুনলাম, আমি যদি ও’কে বলে দিতাম দেব রাজি নয় এসবে। ও দেবকে বিরক্ত করতে শুরু করতো যেটা হয়তো দিয়া আর দেবের সম্পর্কের জন্য ঠিক নয় এখন।
সিয়ারা: কিন্তু তুমিই তো চেয়েছিলে দিয়াকে জেলাস ফীল করাতে?
আধভিক: জেলাস ফীল করাতে নয়, দেবের প্রতি যে ওর ফীলিংস আছে সেটা ফীল করাতে। দিয়ার কষ্ট হয়েছে যখন দেবের সাথে অন্য একটা মেয়েকে দেখেছে। জেলাস ফীল তো তখন হতো যখন ওর অধিকার থাকতো। তখন ও দেবকে আটকাতেও পারতো যেটা ও পারবে না যতক্ষণ না অধিকার পাচ্ছে। ও কি সেই অধিকারটা চায়? চাইলেই বা কেন চায়? এটা বোঝাতে চেয়েছিলাম আমি দিয়াকে। আমার মনে হয় ওটাতে আমি সফল হয়েছি তাই এখন যদি তানিশা বাড়াবাড়ি করে তাহলে দিয়া সরেই যাবে দেবের জীবন থেকে।
আধভিক নিজের কথা শেষ করে সিয়ারার মুখের দিকে তাকালে দেখে সিয়ারা হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও সেটা দেখে জিজ্ঞেস করে,
আধভিক: কি দেখছো এভাবে?
সিয়ারা: ভাবছি যে, যেই আধভিক রায় চৌধুরী ভালোবাসার মানে বুঝতো না আজ সে অন্য কাওকে ভালোবাসা বোঝানোর চেষ্টা করছে, অনুভূতি বোঝাচ্ছে? (হাসিমুখে)
আধভিক আলতো হাসে সিয়ারার কথা শুনে। হাসতে হাসতে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারপর একটা দীর্ঘ বিশ্বাস ফেলে সিয়ারার কোমর ধরে কাছে টেনে নেয়। ডান হাত গালে রেখে সিয়ারার চোখে চোখ রেখে বলে,
আধভিক: আর এসবের কারণ তুমি। তুমি আমার জীবনে না আসলে আমি কখনও এই অনুভূতি গুলো অনুভব করতে পারতাম না। ভালোবাসা যে একটা শব্দ নয়, একটা অনুভূতি এটা বুঝতাম না। আজ যা যা আমি বোঝাচ্ছি তা সবই আমি তোমার জন্য অনুভব করেছি সিয়ু। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ সো মাচ!!
আধভিক কথাগুলো বলতে বলতে সিয়ারার কাছে চলে আসে এবং ধীরে ধীরে ওর গলার স্বর পাল্টে যেতে থাকে। শেষের কথাটা একদম স্লো এবং সফ্ট ভয়েসে বলে সিয়ারার ঠোঁটে আলতো ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ায় এবং সেখানেই সেরকম ভাবে স্থির থাকে সরে আসে না। সিয়ারার সারা শরীর জুড়ে একটা অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায় যা আধভিক যখনই ও’কে আন্তরিক ভাবে ছোঁয় তখনই ও অনুভব করে। সিয়ারা আধ ভিকের থেকে সরে এসে বলে,
সিয়ারা: আই লাভ ইউ মোর!
বলে নিজের লজ্জা ভুলে আধভিকের ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসে। আধভিক জানো মনে মনে এটারই আশা করছিলো যা সিয়ারা ব্যর্থ হতে দেয়নি।
অন্যদিকে,
দিয়ারা দেবাংশুর পিছু নিয়ে উপস্থিত হয় দেবাংশুর ফার্ম হাউজে। দিয়ারা ঢুকতে গেলে সিকিউরিটি বাঁধা দেয় কিন্তু ও যখন বলে ও দিয়ারা, সিয়ারার বোন তখন সিকিউরিটি আর আটকায় না। শুধু বলে,
সিকিউরিটি: আমি এখানে অনেকদিন ধরে কাজ করি। দাদাবাবুকে কখনও এভাবে রাগে নেশা করে এখানে আসতে দেখিনি। না কখনও কোনো মেয়েকে আসতে দেখেছি। আমার মনে হয় একমাত্র আপনিই পারবেন দাদাবাবুর রাগ সামলাতে। ভিতরে যান আপনি।
দিয়ারা কিছুটা ভয় পেয়েই ভিতরে গেলো। ভিতরে গিয়ে ও ড্রয়িং রুমে দেখলো কেউ নেই কিন্তু পাশে তাকাতেই দেখলো দেবাংশু একটা রাউন্ড চেয়ারে বসে আছে আর ওর পিছনে যেখানে ওয়ালে অনেকগুলো সেলফ আছে আর সেখানে নানান ধরনের হার্ড ড্রিংকস এর বোতল সাজানো।
দিয়ারা: (মনে মনে — ও এখনও কেন এত রেগে আছে? আমি কি খুব বাজে কিছু বলে ফেলেছি? আমি তো আমার মনে যেটা চলছিলো সেটাই বললাম। ওর যদি আমার প্রতি কোনো ফীলিংস না থাকে তাহলে তো এত মাইন্ড করার কথা নয়।)
দিয়ারা একটু বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দেবাংশুর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো। দেবাংশু নীচের দিকে তাকিয়ে ছিলো যেই না পায়ের আওয়াজ টের পেয়ে দিয়ারার দিকে তাকালো দিয়ারার আত্মা কেঁপে উঠলো। দেবাংশুর ফর্সা মুখটা লাল হয়ে রয়েছে সাথে চোখটাও। দিয়ারাকে দেখতেই দেবাংশু উঠে দাঁড়ালো আর হাতে বোতলটা নিয়েই হালকা টলমল পায়ে ওর দিকে এগোতে শুরু করলো। দিয়ারা তা দেখে একটুও পিছয়নি নিজের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
দেবাংশু: কেন এসেছিস এখানে? সাথে নিজের বয়ফ্রেন্ড কেও নিয়ে এসেছিস বুঝি?
দেবাংশু দিয়ারাকে একপ্রকার স্ক্যান করতে থাকে ওর চারপাশে ঘুরে ঘুরে। দিয়ারা নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে শক্তি সঞ্চয় করে বলে,
দিয়ারা: আমি, আমি একাই এসেছি। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই যে আস…
দিয়ারা আর কিছু বলতে পারে না তাঁর আগেই দেবাংশু ওর সামনে সজোরে হাতের বোতলটা ভেঙে ফেলে। দিয়ারা শুধু চোখ বুজে মাথাটা একটু সরিয়ে নেয় কিন্তু নিজের জায়গা থেকে সরে না।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]