কলঙ্কের ফুল পর্ব ২

#কলঙ্কের_ফুল
#পর্ব_২
#Saji_Afroz
.
.
আদি দেখতে পায় রাস্তার উপরে কোনো মেয়ে শুয়ে রয়েছে। পাগল নাকি মেয়েটা! হবে হয়তো। তবে যাই হোক, এভাবে রাস্তায় কেউ শোবে কেনো! কতো রকমের আপদবিপদ রয়েছে।
.
এসব ভেবে মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে সামনে এগিয়ে যায় আদি। মেয়েটিকে ডেকে তোলার উদ্দেশ্য তার পাশে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে সে। কিন্তু মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আদির ইচ্ছে করছেনা তার ঘুম নষ্ট করতে। কি নিষ্পাপ চেহারা মেয়েটার!
আচ্ছা মেয়েটার গায়ের রঙ কি ফর্সা নাকি গোলাপি! উম্ম বুঝা যাচ্ছেনা। তবে তাকে দেখতে পরীর মতো লাগছে। কিন্তু সেতো কখনো পরী দেখেনি ভেবেই আনমনে হেসে উঠে আদি।
অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকানোর পর আদির চোখ যায় তার পরণের পোশাকের দিকে। ভারী খয়েরী রঙের লেহেঙ্গা গায়ে। কমপক্ষে ৩০-৪০ হাজারতো লেহেঙ্গা টার দাম হবেই। তার মানে মেয়েটি ভালো পরিবারের মেয়ে। তবে রাস্তায় কেনো ঘুমোচ্ছে!
আর না ভেবে আদি ডাকতে থাকে মেয়েটিকে-
এই যে শুনছেন? উঠুন এভাবে রাস্তায় ঘুমিয়ে থাকা ঠিক না।
.
বেশকিছুক্ষণ ডাকার পর সাড়া না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যায় আদি।
এভাবে রাস্তায় ফেলে রাখা ঠিক হবেনা মেয়েটিকে, এই ভেবে সে কোলে তুলে রাস্তার ধারে নিয়ে আসে তাকে।
প্রচণ্ড গরম মেয়েটির শরীর। তার মানে মেয়েটি ঘুমোচ্ছেনা। দূর্বল শরীরের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে!
নিজের কোলে মেয়েটির মাথা রেখে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে হালকা পানি ছিটিয়ে দেয় তার মুখে আদি।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে চোখ খুলে মেয়েটি।
চোখ খুলে আদিকে দেখে তার কিছুক্ষণ বুঝতে সময় লাগে সে কোথায়!
কয়েক সেকেন্ড আদির দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে বলে উঠে সে-
কে আপনি! আমাকে কেনো এভাবে নিজের কাছে….
ওহ বুঝেছি আমি। খারাপ মতলব তাইনা আপনার? মেয়ে দেখলেই মাথা ঠিক থাকেনা আপনাদের মতো ছেলেদের। আরে বাসায় কি মা বোন নাই?
.
এতোগুলো কথা একসাথে শুনে আদি হেসে উঠে হো হো শব্দে।
.
আদির হাসির শব্দটি মেহেরীকার একেবারেই পছন্দ হয়নি। বরং অন্য একজনের হাসির কথা মনে পড়ে যায় তার।
টপটপ করে পানি পড়তে থাকে মেহেরীকার চোখ বেয়ে।
কাঁদো কাঁদো কণ্ঠ নিয়ে আদির দিকে তাকিয়ে বলে-
প্লিজ এভাবে হাসবেন না।
.
তার আতঙ্কিত মুখ দেখে হাসি থামিয়ে আদি প্রশ্ন করে-
আপনার নাম কি?
.
চোখের পানি না মুছেই সে উত্তর দেয়-
কিসের জন্য?
.
মুচকি হেসে আদি বলে-
আচ্ছা বলতে ইচ্ছে না হলে থাক। চোখ মুছেন।
আমি ভালো ফ্যামিলির ছেলে। আপনার কোনো ক্ষতি আমি করবোনা। নির্ভয়ে থাকেন।
.
কেনো যেনো এই ছেলেটিকে মেহেরীকার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো। তবে আবারো কি তার বিশ্বাস ভঙ্গ হবে? সেতো ঠিক করেছিলো আর কোনো ছেলেকে সে বিশ্বাস করবেনা। ছেলেরা বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারেনা। কিন্তু এই রাতে আর কোনো উপায় নেই। মন অন্যকিছু বললেও তাকে সাবধান থাকতে হবে।
.
মেহেরীকাকে চুপ থাকতে দেখে আদি বলে-
আমি তাহলে চলে যাই??
.
ভ্রু-জোড়া কুচকে মেহেরীকা বলে উঠে-
একটা মেয়েকে একা ফেলে যেতে আপনার বিবেকে বাঁধা দিচ্ছেনা?
-মেয়ে নাকি ভূত বুঝতেই তো পারছিনা।
-মানে?
-নামটাম কিছু বলছেনা। ভূতের মতো সেজেগুজে রাস্তার মাঝে ঘুমোচ্ছে। কি অবাক কাণ্ড বাবা। আমার কল্লা মটকানোর প্লান করছেন তাইনা?
.
একরাশ বিরক্তি নিয়ে মেহেরীকা বলে-
থামুনতো। আমার নাম মেহেরীকা। আর আমি রাস্তায় ঘুমোওনি। আমিতো হাটছিলাম, আপনার কোলে কিভাবে এসেছি জানিনা।
আর ভূতের মতো সাজ? ৭হাজার টাকা খরচ করে সেজেছি। বিয়ের সাজ এটা। বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে এসেছি আমি। এসেছি ঈদগাহ থেকে, ভেবেছি বান্ধবীর বাসায় উঠবো। কিন্তু তার বাসায় গিয়ে দেখি তালা লাগানো। আমার ফোনটাও নিয়ে আসতে ভূলেই গিয়েছি। ওর ফোন নাম্বার মুখস্ত নেই। এখানে পরিচিত আর কেউ নেই। তাই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি।
.
একদমে কথাগুলো বলে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছে মেহেরীকা।
এদিকে তার সব কথার অর্থ বুঝতে আদির কাছে প্রায় ৩০সেকেন্ড সময় লাগলো।
মেহেরীকাকে হাঁপাতে দেখে বলে সে-
আপনি না দাঁড়িয়ে বসুন প্লিজ। মনে হচ্ছে শরীরটা খুবই দূর্বল আপনার।
.
কথা বলার শক্তি নেই মেহেরীকার।
মনে হচ্ছে সবকিছু তার চারপাশে ঘুরছে।
.
মেহেরীকার অবস্থা দেখে আদি তার পাশে এগিয়ে যায়।
মেহেরীকা আর স্থীর থাকতে পারছেনা, আবারো সে পড়ে যেতে চাইলে আদি ধরে ফেলে তাকে। কিন্তু এবার সে অজ্ঞান হয়নি।
চোখদুটো মিটমিট করে ভাঙ্গা গলায় বলে-
ছাড়ুন আমাকে।
-এই যে আপনাকে ধরার কোনো শখ নেই আমার। আমি বন্ধুর বাসায় যাবো, আপনি যাবেন? না গিয়ে উপায় নেই। আমি ভালো মানুষটা চলে গেলে খারাপ কোনো মানুষ কিন্তু আসতে পারে।
.
মেহেরীকাকে চুপ থাকতে দেখে আদি এক হাত দিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফোন দেয় সিরাজকে।
বেশকিছুক্ষণ রিং বাজার পরে রিসিভ করে সিরাজ।ঘুমঘুম কণ্ঠে বলে-
-হ্যালো আদি! তুই এতো রাতে?
-বাসায় আছিস?
-হুম।
-ভাবী আছে?
-হুম।
-আমি তোর বাসার পাশেই আছি।
-এতো রাতে!
-এসে বলি?
-আমার বাসায়?
-না তোর শ্বশুর বাসায়।
-আরে রাগ করছিস কেনো! আয় আয়।
.
লাইন কেটে আদি মেহেরীকার উদ্দেশ্যে বলে-
এইযে হাটতে পারবেন? এতো রাতে গাড়িতো পাওয়া যাবেনা।
.
আদির কথা শুনে মেহেরীকা তার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে বলে-
হু।
.
আদির পাশে হেটে চলেছে মেহেরীকা। কোথায় যাচ্ছে, ভাগ্যে কি আছে তার জানা নেই। তবে আদিকে দেখতে মোটেও লাগছেনা খারাপ কোনো উদ্দেশ্য আছে তার।
.
আদি খেয়াল করে মেহেরীকার হাটতে কষ্ট হচ্ছে আর অনেকখানি সময় লাগছে। এই রাতে এতো সুন্দরী একটা মেয়েকে নিয়ে এভাবে হাটা বিপদজনক। কতো রকমের আপদবিপদ রয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিরাজের বাসায় পৌঁছোলেই বাঁচে।
মেহেরীকার দিকে তাকিয়ে আদি বলে-
আপনার হাতটা ধরে হাটি? না মানে আপনার কষ্ট হচ্ছে হাটতে। আমাকে চাইলে লাঠি বানাতে পারেন আপনার।
.
কিছু না বলে মেহেরীকা আদির হাতটা ধরে শক্ত ধরে।
গরম নরম মেহেরীকার হাতের ছোঁয়া পেয়ে আদির কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছে। কয়েকমিনিটের পরিচয়ে মেয়েটিকে তার এতো বেশি ভালো লাগছে কেনো? সুন্দরী বলে? হবে হয়তো।
.
.
.
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেতেই সিরাজ গিয়ে দরজা খুলে দেয়। কিন্তু আদির পাশে একটি মেয়েও আছে দেখে সে চিৎকার করে উঠে-
ও বৃষ্টি তাড়াতাড়ি আসো, দেখো আমাদের আদি বউ নিয়ে এসেছে।
.
তার চিৎকারে আদি আর মেহেরীকা হতভম্ব হয়ে যায়।
রুম থেকে ছুটে আসে সিরাজের স্ত্রী বৃষ্টি। দরজার পাশে গিয়ে বলে-
ওমা ভাইয়া! বউ নিয়ে এসেছেন আপনি!
.
মৃদু হেসে আদি বলে-
ভাবী ঢুকতে দিবেন আগে?
-হ্যাঁ ভাই, আসেন ভেতরে।
.
মেহেরীকার হাত ধরে ভেতরে এসে তাকে নিয়ে সোফায় বসে আদি।
সিরাজ আর তার স্ত্রীও তাদের পাশে গিয়ে বসে।
তাদের কৌতুুহলী মুখ দেখে আদি বলে-
উনি আমার স্ত্রী নন।
.
বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে সিরাজ বলে-
গফ? পালিয়ে এসেছিস! শালা প্রথমে ভাবছিলাম আমাকে না জানিয়ে বিয়ে কি করে করলি এখন আবার শুনলাম গফ! গফ কখন হলো তোর?
-শুনেছিস মানে? বলেছি ও আমার গফ?
-তা কে?
-আমার কেউ না। রাস্তায় পেয়েছি।
-মানে?
-মানে তুইতো সানিয়াকে চিনিস।
-হুম।
-ওর সাথে পরশু বাবা আমার আকদ করিয়ে দিবে বলেছে। আমার ওকে পছন্দ না। কি করবো মাথায় কাজ করছিলোনা, তাই বাসা ছেড়ে পালিয়েছি। তোদের বাসায় আসার পথেই উনাকে পাই রাস্তায় অজ্ঞান অবস্থায়। উনিও নাকি বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে।
যে বান্ধবীর কাছে এসেছে তারা বাসায় নেই।
তাই আমি উনাকে….
-খুব ভালো করেছিস, উনাকে দেখেও খুব দূর্বল লাগছে।
.
বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আদি বলে-
ভাবী উনাকে শোয়ার রুমে নিয়ে যাবা প্লিজ?
গায়ে খুব জ্বরও। জ্বরের ঔষধ থাকলে খায়িয়ে দিও একটা। আছে?
-হুম আছে।।
.
মেহেরীকাকে নিয়ে বৃষ্টি এগিয়ে যায় রুমের দিকে।
.
আদির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সিরাজ বলে-
মেয়েটা কিন্তু সেই সুন্দরী।
-হুম।
-তোর ভাবী না থাকলে আমিতো একে পটাতে ট্রাই করতাম।
-বলবো ভাবীরে?
-এই না, মজা করছিলাম। বৃষ্টি আমার জান, ও আমার প্রাণ। ওকে ছাড়া….
-হয়েছে হয়েছে।
-হেহে। আচ্ছা দোস্ত একটা কথা বলতো?
-কি?
-সানিয়ার বাবারতো সেই টাকা আছে। মেয়েটাও সুন্দরী। তুই কেনো ওরে বিয়ে করতে চাইছিস না? আমাদের বন্ধু তৌহিদের সাথে সম্পর্ক ছিলো বলে?
-মন সাই দিচ্ছেনারে। কতো ছেলের সাথে সানিয়া সম্পর্ক করেছে, শুধু তৌহিদ হলে সমস্যা ছিলোনা। তৌহিদ কি বলেছিলো মনে নেই? অনেক ক্লোজ সম্পর্ক ছিলো তাদের। তৌহিদ কতো ভালোবেসেছিলো সানিয়াকে। কিন্তু সানিয়া! অন্য একটা ছেলের জন্য ওকে ছেড়ে দিয়েছে। এভাবে একটার পর একটা ছেলের সাথে খেলা করেছে সে।
-হুম মনে আছে সব। কিন্তু এসব তোর বাসায় বলবি কিভাবে?
-সেটাই, এসব বলে ওকে আমি ছোট করতে চাইনা। তাই নিজেই পালিয়ে চলে এসেছি।
-ভালো করেছিস।
.
.
বৃষ্টি তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে-
মেয়ের জ্বর, শরীর দূর্বল হলে কি হবে সেন্স ঠিক আছে। সেয়ানা মেয়ে।
.
মৃদু হেসে আদি বলে-
কেনো ভাবী?
-তাকে আমার একটা কামিজ দিলাম। বললাম এটা পরে শুয়ে যাও। আমাকে বলে সে, “আপনি যান। আমি দরজা বন্ধ করে শোবো।”
আরে ওই মেয়ে নিজে বিপদে পড়ে আসছে। এখন সে আমাদের সন্দেহ করছে। কি আজব!
-দিনকাল ভালোনা ভাবী। দেখে মনে হচ্ছে ভদ্র ঘরের মেয়ে।তাই সম্মানের চিন্তা বেশি।
-হুম।
-আর ভাবী ওর একটা নাম আছে। ওই মেয়ে বলা লাগবেনা আর।
-নাম কি?
-মেহেরীকা।
-মেহেরীকা! বাহ খুব সুন্দর নামতো।
-হুম সুন্দর।
-জানেন আদি ভাই এতো সুন্দর মেয়ের নাম শুনলে মন খারাপ হয়ে যায়।
-কেনো?
-আমার আম্মা কি কমন একটা নাম রেখেছে আমার। বৃষ্টি।
-হাহা।
-হাসিয়েন না ভাই।
-আচ্ছা হাসবোনা।
.
চোখে ঘুম নিয়ে সিরাজ বলে উঠে-
তোরা কি গল্প করবি? না মানে আমার ঘুম এসেছে প্রচুর।
-আরেনা। আমিও ঘুমোবো। কোন রুমে থাকবো?
-আয় আমার সাথে। দেখিয়ে দেয় তোকে।
.
.
.
কিচিরমিচির পাখির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে আদির।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে সময় দেখে সে। সকাল ৭টা। তার বাসায় এখন সকলে সকালের নাস্তা করতে ডাইনিং টেবিলে থাকবে। আদিকে না দেখে তারা কি বুঝবে সে বাসায় নেই? নাকি ঘুম ভাববে তাকে?
শোয়া থেকে উঠে পড়ে আদি। তার বাবা তার পালানোর খবর জানলে কি করবে ভেবে মনটা অস্থির হয়ে আছে তার।
সারা রুমে পায়চারী করতে থাকে আদি। হঠাৎ মনে পড়ে তার মেহেরীকার কথা।
মেয়েটার কি অবস্থা এখন? রাতে আর খবর নেওয়া হয়নি। জ্বর কি কমেছে মেয়েটার? এতো না ভেবে একবার দেখে আসলে ভালো হয়।
যে ভাবা সেই কাজ। আদি এগিয়ে যায় মেহেরীকার রুমের দিকে।
.
.
আমজাদ চৌধুরী দেখেন সবাই নাস্তা করতে আসলেও আদি আসেনি। দিবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন-
আদি উঠেনি?
-জানিনা বাবা।
-কাল রাতেও ভাই খায়নি সে। মেয়েদের মতো ন্যাকামি কেনো শুরু করেছে সে! যাও তাকে ডেকে নিয়ে আসো।
-ঠিক আছে।
.
বাবার কথামতো আদিকে ডাকতে দিবা এগিয়ে যায় আদির রুমের দিকে।
.
.
.
কয়েকবার কড়া নাড়ার পর দরজা খুলে দেয় মেহেরীকা। আদিকে দেখে মুচকি হেসে বলে সে-
-আপনি!
-হুম,আপনার শরীর কেমন দেখতে এলাম।
-জ্বর হালকা আছে। তবে আগের চেয়ে ভালো লাগছে। ভালোভাবে ঘুম হয়েছে যতক্ষণ ঘুমোতে পেরেছি।
-আমি বুঝি এখন ঘুম ভেঙ্গে দিলাম?
-আরেনা। আমার ৬টার দিকেই ঘুম ভেঙ্গেছে।
-ওহ।
-আসুন না, ভেতরে আসুন।
.
মেহেরীকার পিছু পিছু ভেতরে এসে আদি খাটের পাশে থাকা চেয়ারে গিয়ে বসে।
মেহেরীকা বিছানায় বসতে বসতে বলে-
ধন্যবাদ আপনাকে।
-কেনো?
-এই যে আমাকে সাহায্য করার জন্য।
.
কিছু না বলে আদি মুখ টিপে হাসতে থাকে।
এমন হাসির কারণ কি মেহেরীকা বুঝে উঠতে না পেরে বলে-
কি ব্যাপারটা কি! এভাবে হাসছেন কেনো?
.
কোনোমতে হাসি থামিয়ে আদি বলে-
আসলে ভাবীর কামিজটা আপনাকে ঢোলা হয়েছে। ভাবীর স্বাস্থ্য আপনার চেয়েও ভালোতো তাই।
-তো?
-তো কি! কেমন যেনো মদন মদন লাগছে আপনাকে।
-মদন! এই যে আমি মেহেরীকা।
-পুরো নাম কি আপনার?
-মেহেরীকা আহম্মেদ।
-এতো বড় নাম! মানুষের এতোবড় নাম সুন্দর লাগেনা।
-আচ্ছা তাই! তা আপনার নাম কি?
.
আমতাআমতা করে আদি বলে-
আদি চৌধুরী।
-হুম।
-দেখেছেন আমার নাম ছোট, সুন্দর।
-হুম।
-আমি আপনাকে মেহের বলে ডাকবো। মেহেরীকা ডাকবোনা।
.
আদির কথা শুনে মেহেরীকার চোখ ছলছল করে উঠে। মেহের! এই নামে ডাকার অধিকার সে কি আদিকে দিবে? কেনো দিবে! শুধু একজনরই আছে এই অধিকার।
.
মেহেরীকাকে চুপ থাকতে দেখে আদি বলে উঠে-
-শরীর খারাপ লাগছে?
-নাহ।
-তাহলে চুপ যে?
-এমনিতেই।
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মেহেরীকার দিকে তাকিয়ে আদি প্রশ্ন করে-
আপনি বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছেন কেনো?
.
আদির মুখ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে চমকে যায় মেহেরীকা। কি উত্তর দিবে সে আদিকে! সত্যটা যে সে বলতে পারবেনা। যে সত্যের জন্য আপনজন তার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে সেই সত্যটা বাইরের একটা ছেলেকে বলা কি ঠিক হবে?
.
মেহেরীকাকে চুপ থাকতে দেখে আদি বলে-
কি হলো বলুন?
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here