#কাঠপুতুল
#লেখনীতে-তানভীন শিলা
#পর্ব-১১
কেন কাছে তুই এলি,
যদি আবার,, চলে যাবি
বল কেন, তাহলে
স্বপ্ন দেখালি..
আমি জানি কোনো এক দিন,
কোনো এক নতুন ভোরে
দেখা হবে আমাদের আবার
এক স্বপ্নের শহরে.-[২ বার]
তোর সাথে ছিল বাকি,
কত কথা বলবো এক দিন,
একাকী নিজের সাথে,
করেছি তোর গল্প সারাদিন.
তোর কথা আসে ফিরে ফিরে,
পথ হারানোর সব কবিতায়,
আমি তোকে নিয়ে যাবো আবার,
রূপকথার সেই বাড়িতে.
আয় ফিরে……..
কেন কাছে তুই এলি,
যদি আবার,, চলে যাবি
বল কেন, তাহলে
স্বপ্ন দেখালি..
আমি জানি কোনো এক দিন,
কোনো এক নতুন ভোরে
দেখা হবে আমাদের আবার
এক স্বপ্নের শহরে.-[২ বার]
তোর সাথে ছিল বাকি,
কত কথা বলবো এক দিন,
একাকী নিজের সাথে,
করেছি তোর গল্প সারাদিন.
তোর কথা আসে ফিরে ফিরে,
পথ হারানোর সব কবিতায়,
আমি তোকে নিয়ে যাবো আবার,
রূপকথার সেই বাড়িতে.
আয় ফিরে…
আমি জানি কোনো এক দিন,
কোনো এক নতুন ভোরে,
দেখা হবে আমাদের আবার,
এক স্বপ্নের শহরে.-[২ বার]
.
দারুণ গান গায় ছেলেটা। গানের কারণে তার নামটা জানতে খুব ইচ্ছে করছে মৃদুর। হঠাৎ তার মনে হলো গানের সাথে তার জীবনেরও মিল আছে। মৃদু আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা। পরশ তো কিছুই জানালো না। পরশের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে সব কথা এখনি শুনতে ইচ্ছে করছে মৃদুর। একবার ইচ্ছে করেছিলো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে, তাতে পরশের সাথে তার ঘুমটাও হাওয়ায় উড়ে যেতো। পরশ মৃদুর অনেক কাছে তো এসেছেই, আবার সে চলেও যাবে তার শহরে। না গেলে কি হয়না? মৃদু জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরে। সবুজের সমারোহে মনটাকে যতই চাইছে উৎসর্গ করে দিতে, ততই পরশের না বলা কথাগুলো কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে মৃদুকে।
.
.
“জুনায়েদ প্লিজ আপনি এসব কথা আর বলবেন না । আমি আপনাকে ভালোবাসি না, আপনার থেকে দূরে যাওয়ার পরে বুঝেছিলাম ওটা ক্ষনিকের মোহ ছিলো।”
“আচ্ছা এখন জোড় করবোনা, তবে আমি আমার ভালোবাসা আদায় করে নিবো। আমার প্রতি তোমার অনুভূতিগুলো মোহ ছিলো কিনা সেটাও বিন্দু বিন্দু করে মহাসিন্ধুতে বুঝিয়ে দিবো। এখন চুপ থাকো তো, বড্ড বেশিই কথা বলো তুমি।”
.
.
“ভালোবাসি তোমায়। বাবা-মায়ের ঠিক করা পাত্রের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসিনি তোমার জন্য। ভুল আমার ছিলো আমি জানি সুমু, কিন্তু তখন আমার কিছু্ বুঝার কিংবা ভাবার মতো মন-মানসিকতা ছিলোনা। খুব বেশিই ভালোবাসি তোমায়। প্লিজ চেষ্টা তো করো আমাকে ক্ষমা করার।”
“আজ ২বছর ৭মাস ১৩দিন পর তোমার এটা মনে হলো, যে তুমি আমায় ভালোবাসো?”
“আমি শুরু থেকেই তোমায় ভালোবাসি সুমু। আমাকে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছিলো তাতে আমি তোমাকে অবিশ্বাস করতে বাধ্য ছিলাম সুমু। তথ্যগুলো দিয়েছিলও তো তোমারি আপনজন।”
“সেসব আমি জানি কুহেলী, পরশ আমায় আসার পরেই সব জানিয়েছে। আর যেখানে বিশ্বাস নেই, সেখানে ভালোবাসাও নেই ।”
“প্লিজ সুমু ফিরিয়ে দিওনা আমায়।”
“আমি তোমায় কখনো ফিরিয়ে দিয়েছিলাম কি কুহেলী? তুমি দিয়েছিলে। আমাকে এক্সপ্লেইন করার সুযোগটাও না দিয়ে তুমি আমার এখানে (বুকের বা পাশ দেখিয়ে) ছুরি দিয়ে আঘাত না করেও ক্ষত-বিক্ষত করেছিলে। আমিই তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি কুহেলী, আমার কাছে ফিরে আসতে চেওনা আমি পারবোনা তোমাকে আপন করে নিতে।”
.
.
যতদূর চোখ যায় সবুজ গাছপালা আর দূরে কিছু পাহাড়। মনে হচ্ছে ছুটে চলা গাড়ির তালে গাছগুলোও দৌড়ে চলছে। প্রকৃতির এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশও যেনো এই ৩জোড়া পাখির মনে আনন্দের ছিটেফোঁটাও সামিল করতে পারছেনা। পারবেও বা কি করে যখন মনে শান্তি থাকেনা, তখন দুনিয়ার সব থেকে সুন্দর জিনিসটাও কুৎসিত লাগে।
.
.
সন্ধ্যা ৭টা
.
মৃদুর মনে হচ্ছে সে হাওয়ায় ভাসতেছে। আধো আধো চোখ খুলে দেখে সে কারো বাহুডোরে-
“আপনি?”
“অন্য কারো আসার কথা ছিল বুঝি?”
“না সেটা না। পরীও তো ঘুমিয়ে আছে আর গেটও বন্ধ, আপনি এলেন কীভাবে?”
“আগে চলো তারপর বলবো।”
“পরশ আপনি….”
“আপনি আপনি করতেছো কেন? পর হয়ে গেছি নাকি?”
“নাহ্ আসলে প্রচন্ড মাথা ব্যথা করতেছে। তুমি কি এমন সত্য বলবে সেটা না জানা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিনা। অন্য কিছু ভাবতেও পাচ্ছিনা।”
.
হোটেল হিল টাউনে অবস্থানরত সকলে। ২টায় পৌঁছানোর পরে খাবার খেয়ে সকলকে রেস্ট নিতে বলা হয়েছে। আগামীকাল থেকে তারা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করবে। মৃদু পরী একই রুমে আছে, আর পাশেরটা পরশের। এক রুম থেকে অন্য রুমে দেয়ালের মধ্যে থাকা দড়জা দিয়ে যাওয়া-আসা করা যায়। ম্যানেজারের সাথে কথা বলে ইচ্ছে করেই এই দুটো রুম নিয়েছে পরশ। মৃদুকে বেডে বসিয়ে দড়জা লাগিয়ে দেয় পরশ। পরশ মৃদুর হাত ধরে চোখে চোখ রেখে বলে-
“প্রমিস করো মৃদুপাখি, কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেনা।”
“প্রমিস করছি তুমি যদি এখনি আমাকে সব না বলো, আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো। কখনো ফিরেও আসবোনা।”
মুহুর্তেই পরশের চোখ লাল হয়ে যায়। মৃদুর গাল চেঁপে ধরে বলে-
“কি বললি তুই? আমাকে ছেড়ে যাবি? এতোটা সহজ মনে হয় তোর আমাকে ছেড়ে যাওয়া?”
“পরশ কি করছো তুমি, আমি ব্যথা পাচ্ছিতো।”
“তো আমি কি করবো বল, তোর কারণে পুরো দেড়টা বছর পুড়েছি আমি, আর সম্ভব না।”
“আমার কারণে মানে?”
“হ্যাঁ তোর কারণে। তোর কারণেই তোকে ছেড়ে যাওয়া আমার। তুই বুঝিসনা কত ভালোবাসি আমি তোকে।”
অনেক কষ্টে পরশের হাত নিজের গাল থেকে ছাড়ায় মৃদু্। দুই গালেই গর্ত হয়ে গেছে আঙ্গুলের চাপে।
“আমি কি করেছিলাম পরশ? আমি কি কোনো ভুল করেছিলাম? প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
মৃদুর ভয়মাখা চেহারা দেখে খুব মজা পায় পরশ। মৃদুকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে অধরযুগল দ্বারা আবদ্ধ করে। পরশের ছোঁয়ায় ভালোবাসা খুঁজে পায় মৃদু, কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া পরশের হিংস্র্রতার ছিটেফোঁটার বিন্দুমাত্র লেশ নেই। কিছুক্ষন পর মৃদুকে ছেড়ে দিয়ে বলে-
“মৃদুপাখি প্লিজ?”
.
.
মাত্রই ক্লান্তির লেশ কেটেছে পরীর। পাশে মৃদুকে না দেখে ভয় পেয়ে যায়, পরক্ষণেই পরশের কথা মনে হতেই ভয় কাঁটে তার। পরীর কিছু খেতে ইচ্ছে করায় গেট খুলে বের হতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে যায় সে।
“হু দ্যা……”-চোখ বড় হয়ে যায় পরীর।
“সরি পরী।”
“তুমি আর তোমার সরি। উফ্ ব্যথা তো পেলাম আমি। হাহ্ সরি মারাইতে আসছে।”
“ইয়াক্ পরী! কিসব বলছো? এগুলো কবে থেকে বলো তুমি?”
“সব তোর জন্য হয়েছে। তোর ধোকার কারণে আমি আজ পর্যন্ত নতুন কোনো বন্ধু পর্যন্ত বানাইতে পারিনাই। পুরাতনদের সাথেও খুব বাজে ব্যবহার করেছি।–কান্না করে দেয় পরী।”
পরীর পাশে বসে জুনায়েদ। পরীকে সত্যিই ভালোবাসে সে কিন্তু একটা ভুলের কারণে এতটা কাছে থেকেও দূরত্ব কমছে না।
“পরী বিশ্বাস করো, আমি তখনও তোমাকে ভালোবাসতাম। সামান্য একটা ডেয়ার পূরণ করতে যেয়ে আমি আমাকেই শেষ করে দিয়েছি। আমি সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি পরী। তুমি সেদিন যখন সত্যিটা জানতে পারলে, আমি ভেবেছিলাম আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে বাধ্য করবে আমার কাছে থাকতে। কত চেষ্টা করেছি তোমাকে বুঝানোর কিন্তু তুমি? আমাকে বুঝার চেষ্টাই করলেনা।”
পরী কান্নার কারণে কিছুই বলতে পাচ্ছেনা। কীভাবে দিবে চান্স? বিশ্বাস একবার ভাঙ্গলে কি সেটা পূনরায় সেই একই মানুষটার উপর করা সম্ভব হয়? সে আবারো ধোকা দিবেনা কোনো গ্যারান্টি আছে কি?
.
.
.
“তোমাকে পূনরায় ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয় কুহেলী।”
“কেন সম্ভব না সুমু?”
“যাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিলে তার সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে কুহেলী।”
“কিন্তু মৃদু তো পরশকে ভালোবাসে।”
“তো? পরশের মা নিজেই আমার মাকে বলেছে মৃদুর সাথে আমার বিয়ে দিবে। আমিও এখন সেটাই চাই। আমি তোমাকে চাইনা।”
কুহেলী চোখ মুখ শক্ত করে গম্ভীর গলায় বলে-
“তুমি কি তোমার সিদ্ধান্তে অটল সুমু? আমি বাঁধা দিবোনা তোমায়। ভুল না করেও শাস্তি পেয়েছ তুমি কিন্তু এবার তোমাকে কোনো কষ্ট পেতে দেবোনা সুমু। আই প্রমিস চলে যাবো আমি।”
“সেটা সম্পূর্ণ তোমার ইচ্ছা। আমি আমার সিন্ধান্তে অটল।”
.
চলবে-
*