#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-৩৫
“এভাবে হয় না বাবু তুই এক জায়গায় বউ আরেক জায়গায়।” কিছুটা রা-গ কিছুটা বিরক্তি মিশিয়ে বললেন ইরিন। ময়ূখ চুপচাপ শুনছে কিন্তু তাতে ভ্রুক্ষেপহীন সে৷ বারবার মাথায় ঘুরছে নোরার মায়ের কথাগুলো৷ কাল রাতে আন্টি কল দিয়ে প্রথমেই তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, বিয়েটা নিয়ে কি ভাবছে সে৷ ময়ূখ দারুণ কোন জবাব দিতে পারেনি তবে জানিয়েছে সে বিয়েটাকে মেনে নিয়েছে।
“বিয়েটা মেনে নেওয়া মানে দুজনে একসাথে থাকা, নিজেদের অস্তিত্ব তৈরি করা তা নিয়ে আজীবন কা-টা-নো৷ কিন্তু নোরা সে কালচারে বড় হয়নি। নোরার বাবাও তো তাঁর সাথে থাকতে চেয়েছেন কিন্তু তিনি যেমন সব সংস্কৃতি, বাধ্যবাধকতা দেখিয়েছেন তা শাইন মানতে পারেনি৷ তার ফলশ্রুতিতে বিশ বছরেরও বেশি সময় একসাথে কা-টি-য়ে আবার যে যার পথে আলাদা। সবাই এক হবে তা কিন্তু নয় তবুও নোরা তার মেয়ে সে জানে নোরাও এমন বন্ধনে আজীবন থাকতে চাইবে না যতোই তার দেহে তার বাবার র-ক্ত থাকুক না কেন! শাইন ময়ূখকে একবার দেখেছিল সামনে থেকে তার একটু হলেও আন্দাজ বলে ময়ূখও তার চাচার মতই জীবন চাইবে একটা সময়। দেশি সংস্কৃতি, ধর্ম, বন্ধন এসবের মাঝে নোরাকে আনতে চাইবে ফলে তাদেরও সংসার ভে-ঙে যাবে৷ নোরার জন্য এ জিনিস খুব বেশি ম্যাটার না করলেও ময়ূখের জন্য যে করে তা শাইন নিজের প্রাক্তন স্বামী আফছারকে দিয়েই উপলব্ধি করেছে৷ এজন্যই যেচে পড়ে ছেলেটাকে সা-ব-ধান করতে চেয়ে ফোন করেছিল।
” কি রে কিছু বলছিস না কেন?” ইরিন প্রশ্ন করলো আবারও।
“আম্মা একটু সময় দাও না মা নোরা মাত্রই গেল। আমারও এদিকে কিছু একটা হোক তারপর না হয় এ নিয়ে ভাবা যাবে।”
“আমি এসব শুনতে চাই না বাবু আমার ভাল্লাগে না এসব৷ বিয়ে করেই ফেলেছিস যখন তখন এভাবে পবিত্র সম্পর্কটাকে হেলা করিস না।” ইরিন ক্লান্তিমাখা স্বরে কথাগুলো রোজ রোজই বলছেন ময়ূখকে। আশপাশে মানুষ কত কি বলে কখনো ভালোটা তো কখনো সমালোচনারূপে। মৈত্রীদের বাড়িতে এখন আর ভাড়া থাকা হচ্ছে না বলে ফখরুল সাহেবের অফিস যাতায়াতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তিনি ঠিক করেছেন আবারও ভাড়া চলে যাবেন তবে এবার বেয়াই বাড়িতে তো সম্ভব না তাই সে এলাকায়ই অন্য কোথাও। ময়ূখকে নিয়ে তিনিও চিন্তিত তাই অনেক ভেবে নিজেও ময়ূখের সাথে কথা বলেছেন। ইরিন জে-দ ধরে আছে বউ দেশে আসবে সংসার করবে। কিন্তু ফখরুলের শুরু থেকেই মন বলছে ময়ূখ কিছু লুকিয়ে আছে। কোন মেয়ের কথাই সে লুকাচ্ছে নোরার সাথে বিয়েটা সে হয়ত সেই মেয়েকে ভুলতেই করেছে। অনেক ভেবে এই প্রথম তিনি ময়ূখের জন্য নিজে একটা সিদ্ধান্ত নিলেন এবং পিতৃ অধিকার খাটিয়ে তাকে জানিয়ে দিলেন। ময়ূখ বিদেশে চলে যাবে নোরার কাছে। সে যেন তার সংসার শুরু করে যেমনটা ইরশাদ করেছে। আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত এক মুহূর্তে ভড়কে দিয়েছিল ইরিন আর ময়ূখ দুজনকেই৷ কিন্তু ইরশাদকে সে কথা জানাতে সেও বাবার সাথে সম্মত হয়ে ময়ূখকে বোঝালো কোথাও এক জায়গায় তো স্যাটেল হওয়া উচিত। হয় দেশে না হয় বিদেশে তবে ময়ূখ যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (BCS) থাকতে চায় তাতো কারও অজানা নয়। যদি তার বিসিএসটা হয়ে যায় তখন! দেশেই ব্রাইট ফিউচার পেলে বিদেশে কে যেতে চায়? এদিকে নোরারও একটা ভালো চান্স আছে। আমাদের দেশে সাইকিয়াট্রিস্টকে যতোটা মূল্যায়ন করে তারচেয়ে দ্বিগুণ ইউরোপ, আমেরিকায় নোরা’ইবা কেন তার সুন্দর ভবিষ্যৎ সেখানে ফেলে আসতে চাইবে! সবাই কেমন বিচলিত হয়ে পড়ে তাদের নিয়ে ভাবতে গিয়ে। এ কেমন জোড়া তাদের! পরক্ষণেই মনে হয় উপরওয়ালা প্রত্যেকের জীবনেই পরীক্ষা রেখেছেন। কেউ কেউ সে পরীক্ষায় ধৈর্য্য আর সততা দ্বারা উত্তীর্ণ হয় কেউবা আবার হে-রে যায় সত্তা, সততা সবেতেই। তাই ময়ূখ নোরার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন আর দুশ্চিন্তা করে লাভ কি! দুজনের একজনকে তো স্যাক্রিফাইস করতেই হবে। সংসার ধর্মই এমন তাতে স্যাক্রিফাইস আর কম্প্রোমাইজ শব্দ দুটো নিবিড়ভাবে জড়িত। ইরশাদ ভাবে, আমাদের বাবা-মায়েরাও স্যাক্রিফাইস করে করেই তো সুন্দর একটা সংসার সাজিয়েছে তবে আমরা কেন পারব না?
“রাজশাহীর চেয়ে শীত এখানে একটু বেশিই তাইনা!” কফির মগে চুমুক দিয়েই ইরশাদ কথাটা বলল। আধঘন্টার মধ্যে সে দু মগ কফি খেয়ে নিচ্ছে এ নিয়ে কিছুটা বির-ক্ত মৈত্রী৷ এই প্রথম সে চমৎকারভাবে আলুর ভর্তা করেছে কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, লবণ আর সরিষার তেল সবকিছু একদম পারফেক্টলি দিতে পেরেছে৷ তাই ভেবেছিল ইরশাদ এলে সাথে সাথেই ডিনার করতে বসবে৷ গরম গরম ভাত আর ভর্তা নিশ্চয়ই এই তীব্র শীতের রাতে ভাল লাগবে খেতে৷ কিন্তু সেসব তো কিছুই হচ্ছে না৷ জনাব ফিরেই বলল, দ্রুত এক মগ কফি দিয়েন ম্যাম একটু কাজ করব।
মৈত্রী কফি নিয়ে বেডরুমে ঢুকে দেখলো লোকটা পোশাক পাল্টে মুখ হাত ধুয়ে তৈরি ল্যাপটপ নিয়ে বসার জন্য৷ সেই থেকেই তার বির-ক্ত লাগছে কিন্তু মুখে তো তা প্রকাশ হয় না তার। দু দিন হলো মৈত্রীকে নিয়ম করে পড়াশোনা করতে হচ্ছে তাই দুজনে সন্ধ্যায় খুব একটা গল্প করতে পারে না। রাতটাই যা আদরে, আহ্লাদে কাটে তবুও ইরশাদের আজকাল ক্লান্তির জন্য দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়তে হয়।
“কিছু বলছো না যে!”
ইরশাদ কফিটা শেষ করে আবার মৈত্রীকে প্রশ্ন করলো।
“কি বলবো?”
“মন খারাপ?”
“না”
“রে-গে আছো?”
“আপনার আরও কফি লাগবে?”
মৈত্রীর এবারের প্রশ্নে ইরশাদ বুঝলো বউ তার রে-গে আছে। কোলের ওপর থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে বিছানা থেকে নামল। মৈত্রী চেয়ারে বসে বইয়ের দিকে তাকানো। ইরশাদ পেছন থেকে দু হাত রাখলো মৈত্রীর কাঁধে। একটু ঝুঁকে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, “ম্যাম দয়া করে বলুন না
রে-গে থাকার কারণটা।”
“আপনি কাজ করুন গিয়ে আর কফি খান৷ পেট ভরে কফি খান ছাড়ুন আমাকে।”
ইরশাদের এবার টনক নড়ল৷ সে অফিস থেকে ফেরার পরই মৈত্রী তাকে বলেছিল, আজ আমরা তাড়াতাড়ি ভাত খাব। নিশ্চয়ই কিছু বিশেষ ছিল এতে৷ এবার আর স্ত্রীকে রে-গে থাকার সুযোগ দেওয়া চলে না। মৈত্রীকে টেনে নিয়ে ডাইনিংয়ে বসল। খিদে পেয়েছে এমন বাহানা করেই বলল, “ভাত দাও জলদি আজ দ্রুত খেয়ে বিছানায় যাব।”
মৈত্রী বাঁকা চোখে ইরশাদকে দেখে চলে গেল রান্নাঘরে৷ ভাত, ভর্তা আর শুকনো করে ডাল রান্না করেছিল তাই নিয়ে এল টেবিলে৷ তার ভর্তা আজ সত্যিই চমৎকার হয়েছে৷ ইরশাদ খেতে খেতে খুব প্রশংসা করল তারপর হঠাৎ মনে পড়েছে এমন ভাবে বলল, অফিস থেকে একটা অফার এসেছে৷ মৈত্রী উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো কি অফার?
“ফয়সাল আঙ্কেল এসেছিলেন আজ অফিসে তিনি কথাবার্তার ফাঁকে জানতে চাইলেন আমার চাকরিটা কেমন লাগছে? তারপর হঠাৎই বললেন নতুন বিয়ে, সেসমেয়ই চাকরিতে জয়েন মানে হানিমুনের সুযোগটাও পাইনি তাই উনার পক্ষ থেকে একটা ছোট ট্রিপ ব্যবস্থা করতে চাচ্ছেন।”
” আজব তো!”
“আজব কেন?”
“আজব নয় তো কি! অফিসের একজন এমপ্লয় বিয়ে করেছে বলেই তাকে হানিমুন ট্রিপ দিবে? সবাইকেই দেয়?”
ইরশাদের খাওয়া প্রায় শেষ সে বোল থেকে মৈত্রীকে ভাত দিল এক চামচ মৈত্রী না করল তারও শেষ৷ প্লেট হাতে রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “সবাইকে দেয়না ইনফ্যাক্ট, কাউকেই দেয়নি সম্ভবত।”
মৈত্রীও প্লেট আর বেচে যাওয়া ভর্তার বাটি তুলে রান্নাঘরে ঢুকলো।
“তাহলে আপনার প্রতি এত সুনজর কেন? সেটাই কি আজব লাগছে না? এখানে আপনার যে জব তাতে স্যালারি একদম ঠিকঠাক দিচ্ছে তারপরও দেখেছি কিছু কিছু সুবিধা একটু বেশি বেশি এমন কেন?”
ইরশাদ নিজেও ভেবেছে এ কথা। সব কিছুতেই তাকে অফিসে কেমন যেন অগ্রাধিকার বেশি দিয়েছে আঙ্কেল। বলেছিলেন বড় মামার জিগরি দোস্ত তাই নাকি ইরশাদ খুব পছন্দের। তারওপর আঙ্কেলের নিজের কোন স্ত্রী সন্তান নেই তবুও বংশধরেরা তো আছে! এ নিয়ে আর ভাবার ইচ্ছে হলো না। ইরশাদ বড় মামাকে একবার এ ব্যাপারে জানাবে ঠিক করে রেখেছে কিন্তু আপাতত হানিমুন ট্রিপ ক্যান্সেল করার কোন মানে হয় না। মৈত্রী রান্নাঘরের কাজ গুছিয়ে গিয়ে আবারও পড়তে বসল। ইরশাদও টুকটাক কাজ ছিল তা করে একেবারে বিছানা গুছিয়ে বসল৷ মৈত্রী অবশ্য বলেছিল সে করবে ইরশাদ শোনেনি। সবসময় বউকেই বিছানা গোছাতে হবে কিংবা সংসার এমনটা কোথাও লেখা নেই৷ মৈত্রী পড়া শেষ করে বিছানায় যেতেই ইরশাদ প্রশ্ন করলো, ” পাহাড় কেমন লাগে তোমার?”
ইরশাদের পাশে শুয়ে পড়ে এক হাতে কম্বল টেনে নিলো মৈত্রী৷ চোখ বুঁজে বলল, ” প্রচণ্ড শীতে ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ে এক চুমুক যেমনটা লাগে।”
হাত বাড়িয়ে খাটের পাশেই ল্যাম্পটা নিভিয়ে মৈত্রীকে দু হাতে বুকে চে-পে ধরে ইরশাদ বলল, “আর সমুদ্র!”
মৈত্রীও আরও গুটিয়ে গেল ইরশাদের বুকের মাঝে৷ খুব চেনা পুরুষালি গন্ধটা নিঃশ্বাসে টেনে নিয়ে জবাব দিল, “ঠিক এমন স্নিগ্ধ আবেশমাখা অনুভূতি।”
“গিয়েছো কখনো সমুদ্রে?”
“হু, কক্সবাজার আর ইনানি বিচ দু বার গিয়েছিলাম৷ পাহাড়ে কখনও যাওয়া হয়নি।”
“তাহলে এবার তোমাকে পাহাড় দেখাবো, সূর্যদয় আর সূর্যাস্তের মনভোলানো মুহূর্ত দেখার জন্য প্রস্তুতি নাও মিসেস শাহরিয়ার।” কথাটা বলেই টুপ করে মৈত্রীর ঠোঁট ছুঁলো ইরশাদ। ধীরে ধীরে ওষ্ঠচুম্বন নেমে এলো গলা, বক্ষবিভাজিকা, ছুঁয়ে গেল দেহ থেকে মন সবটাই। মৈত্রীও উপভোগ করে মিলনের প্রতিটি মুহূর্ত মন পুরুষের সাথে প্রত্যেকটা ক্ষণ। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে দুজনের মাঝে দেহের সাথে মনের টান৷ ভালো না বেসেও সুখের সবটা ইরশাদ দিয়ে চলেছে তার স্ত্রীকে৷ মৈত্রী জানে ঠিক একদিন ইরশাদের মুখে প্রকাশিত হবে ভালোবাসার উক্তিটিও।
“তোমরা চট্টগ্রাম যাবে ভালো কথা আমার আপত্তি নেই কিন্তু পা-হা-ড়ে যেও না। বিপদা-পদ একদম সইতে পারব না।”
” আম্মু বি-পদ হবে কেন?” মৈত্রী অবাক হয়ে শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলো। ইরশাদ সকালে অফিস যাওয়ার সময় বলে গেল আম্মুকে জানিও আমরা চট্টগ্রাম যাব। মৈত্রীও তাই নাশতা শেষে শ্বাশুড়িকে ফোন করল। ইরিন শুনেই চিন্তায় পড়ে গেল পাহাড়ে গিয়ে বি-প-দ হওয়ার ভ-য়ে। তারপর ইরিনই আবার জানতে চাইলো চট্টগ্রাম গিয়ে কোথায় উঠবে বুকিং দিয়েছে কিনা। দিলেও যেন ক্যান্সেল করে তারা কক্সবাজার যায় যেন! মৈত্রী মুখ ভার হলো শ্বাশুড়ির কথায়। তার তো পাহাড়েই যাওয়ার ইচ্ছে। কিন্তু শ্বাশুড়ির সাথে তর্কে যাওয়া যায় না তাই চুপচাপ হু হা তে জবাব দিল সে৷ এরপর কল দিল মামনিকে তিনি উল্টো সব রেখে প্রশ্ন করলেন, “মৈত্রী তোমার এ মাসে পিরিয়ড হয়েছে?”
এ কেমন প্রশ্ন ভেবেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে মৈত্রী৷ কোথায় তার ঘুরতে যাওয়ার ব্যপারে সুন্দর একটা স্যলুশন দিবে যেন শ্বাশুড়িকে ম্যানেজ করবে তা না!
” না মামনি।”
– ডেট কতদিন পার হলো?
খুব আপ্লুত শোনালো রোকসানার কণ্ঠ৷ মৈত্রী জবাব দিল, এখনো আসেইনি।
-ওহ!
“কি হলো মামনি?”
“কিছু না৷ এখন পাহাড়ে না গেলে হয় না?”
মৈত্রী মুখের ওপর কাউকে কিছু বলতে পারে না বলে তার খুব আফসোস হলো এখন। পাহাড়ে বেড়ানো কি এমন ভ-য়ংক-র কাজ? সে কি এভারেস্টে যাবে বলেছে! কি আশ্চর্য দুনিয়ার সব মানুষ আনন্দে পাহাড় ভ্রমণে যায় আর তারা মৈত্রীর যাওয়ার কথা শুনে রিয়াক্ট করছে! ভীষণ রা-গ হচ্ছে তার ভেতরে ভেতরে কিন্তু এমন রা-গ প্রকাশ করার উপায় নেই৷
ইরশাদ সকালে মৈত্রীকে বলে এসেছে বাড়িতে জানিয়ে দিও আম্মুকে আমরা ঘুরতে যাব এদিকে অফিসে এসেও সে ম্যানেজ করে নিয়েছে জানুয়ারিতে ছুটির জন্য৷ অথচ ফোন ঘেঁটে এখন রিশাদ ভাইয়ের নম্বর পাচ্ছে না। লাঞ্চ টাইম হয়ে এসেছে বলে বাড়ির দিকে এগোতে এগোতেই ময়ূখকে কল দিল৷
“হ্যাঁ ভাই কেমন আছো?”
“ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?”
“এই তো আছি৷”
“আচ্ছা শোন, তোর কাছে রিশাদ ভাইয়ের ফোন নম্বর আছে?”
“জানি না ভাই দেখতে হবে৷ বছর খানেকের বেশি হবে কথা হয়নি তো।”
“ওহ, আচ্ছা পেলে আমাকে সেন্ড করিস তো।”
ইরশাদ ময়ূখ দুজনে আরও কিছুটা সময় কথাবার্তা হলো। তারপর ফোন রেখে ইরশাদ বাড়ি গেল লাঞ্চ করতে৷
ময়ূখ রাজশাহীতেই একটা কল সেন্টারে জব পেয়েছে৷ আবরার কিছুদিন ধরেই খুব প্রে-শার দিচ্ছিল তাদের অফিস জয়েন করার জন্য৷ একমাত্র ছেলে ছাড়া আর কে দেখবে এই সম্পত্তি৷ মেহেরকে বিয়ে দিলে না হয় তখন জামাই দেখবে অর্ধেকটা কিন্তু ছেলের ভাগ তো আর মেয়ের জামাইকে দিবেন না। তার ওপর আফছারের কোন ছেলে নেই নোরা আছে সে মেয়ে আজীবন বিদেশীই থাকবে তাতো তার আচরণেই বোঝা যায়। ইরশাদকেও বলা হয়েছিল নিজের মায়ের ভাগ বুঝে নিয়ে কিছু কর সেই ছেলেও রাজী নয় উল্টো শ-ত্রু-র কোম্পানিতে চাকরগিরি করছে। আবরার ইদানীং প্রচুর ক্ষো-ভ নিয়ে চলছে সবার সাথে। ময়ূখকে রোজ রোজ কল করে হয়রান সে শুনছে না কিছু। ময়ূখও এখন বাবার ওপর রেগে ফোন অফ করতে যাচ্ছিল তখনই ইরশাদের কলটা এলো। এখন সে লাঞ্চ না করে বসে বসে ফোন কন্টাক্ট চেক করছে। রিশাদ ভাইয়ের সাথে কারোই তেমন যোগাযোগ নেই বলা যায় ভাই নিজেই সকল আত্মীয়ের থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন৷ অনেক খুঁজেও রিশাদের নাম্বার না পেয়ে ময়ূখ গুগল করে রিশাদের হোটেল ম্যানেজমেন্টের ফোন নম্বর বের করল৷ সেখানেই ফোন করে নিজের পরিচয় দিয়ে জানিয়ে রাখলো রিশাদ যেন একটাবার কল করে।
চলবে
(কেউ কি কিছু বুঝতে পারছেন?)