কৃষ্ণচূড়ার রং লাল পর্ব ৩৩+৩৪

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৩৩.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
ডাঃ ইমরান প্রচন্ড রেগে গেলেন।আলভীর দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে তিনি বললেন,” এসব কেমন অসভ্যতা??বুঝলাম আপনারা চিন্তিত।হয় তো খুব বেশিই।তাই বলে ডাক্তারের গায়ে হাত তুলবেন??”
আলভীর এতোক্ষণে হুশ আসে।সত্যি সে বারাবারি করেছে।যেটা মোটেও উঁচিত ছিলো না।আফসোস ফুঁটে উঠে তার চোখে মুখে।ভারী অস্বস্তি লাগতে শুরু করে তার।নিজের হাতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিললো।বিনিত সুরে বললো,” আমি দুঃখিত।”
এর বেশি আর সে কিছুই বললো না।ডাঃ প্রীতি হাসলেন।গালে সে ভাবেই হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকলেন কিছুসময় আলভীর দিকে তাকিয়ে।আলভী গমগম চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।এলোমেলো চুল,শার্ট তার।প্রীতি এবার একদম পায়ের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়।জুতো একটা আছে পায়ে আর একটা নেই।পাশের নার্সের ডাক পড়তেই তার হুশ আসে।সোজা হয়ে দাঁড়ায়।নাজুক কন্ঠে বলে,” স্যরি বলাটা ফরমালিটি।হয় তো বলা উঁচিত না।তবুও স্যরি।কিন্তু আপনার বোনের অবস্থা সত্যি খারাপ।কোমায় চলে গেছে।আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি।আপনি চাইলে আবার থাপ্পড় দিতে পারেন।আমি কিছু মনে করবো না।”
প্রীতি যেনো গাল পেতে দিয়েছে।আলভী সে দিকে আর লক্ষই করলো না।ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।মিষ্টার রহমান এবার ছুঁটে আসলেন।হোসাইন সাহেবকে দু’হাতে ধরে নিলেন।তারপর রিনরিনে গলায় প্রশ্ন করলেন,” কোমা!!
“ হ্যাঁ কোমা।কোমা হলো এমন একটি অবস্থা, যেখান থেকে মানুষ জেগে উঠতে পারে না বা তার চেতনা কাজ করে না। যখন কেউ পরিবেশের কোনো উদ্দীপনায় (যেমন শব্দ, আলো, ব্যথা ইত্যাদিতে) সাড়া দেয় না এবং তার ঘুম-জাগরণের কোনো চক্র আর অবশিষ্ট থাকে না, তখন সে কোমায় আছে বলে ধরা যায়। মস্তিষ্কের চূড়ান্ত পর্যায়ের ব্যর্থতা বা ফেইলিওরের উদাহরণ হলো এই কোমা।পেশেন্টের মস্তিষ্কে হাইপোক্সিয়া বা অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতি থাকায় এমনটা হয়েছে।অপারেশন সাক্সেসফুল হওয়ার পরেও পেশেন্ট কোমায় চলে যাওয়ার কারণ এটাই।
সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কোমার একটি পরিসমাপ্তি ঘটে। হয় রোগী আবার জেগে ওঠে বা সচেতন হয়, নয়তো মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু বিরল ক্ষেত্রে কেউ কেউ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কোমায় থাকতে পারে।এখন দেখতে হবে আপনাদের রোগীর কখন জ্ঞান আসে।এছাড়া কিছুই করার নেই।আপনাই যদি এভাবে ভেঙ্গে পড়েন রোগীর অবস্থা তাহলে কি হবে??আমি ভেবে পাচ্ছি না।প্লিজ নিজেদের সামলান।”
ইমরান সাহেব আর দাঁড়ালেন না।চলে যাওয়ার সময় তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,” আর একটা থাপ্পড় খেতে চাওয়ার ইচ্ছে কেনো হলো তোমার আমি জানি না।কিন্তু আমি চাই তুমি যাতে আর থাপ্পড় না খাও।ইনজেকশনটা তুমিই দিয়ে দিও।”

হসপিটালটা কেমন গুমুট ধরে আছে।প্রীতি একটা সময় হসপিটাল খুব অপছন্দ করতো।অপছন্দের জায়গা গুলোতেই মানুষকে আবদ্ধ হয়ে থাকতে হয়।মানুষের কান্না,আহা জারি,আতঙ্ক,কষ্ট তাকে খুব পিড়া দেয়।মনে পরে তার মায়ের কথা।তার মা তার হাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।প্রতিদিনই সে কত মৃত্যু দেখে।কত আহত মানুষ এসে ভেঙ্গে পড়ে এই বারান্দায়।নিজের মৃত্যুর চেয়েও মানুষ প্রিয় মানুষের মৃত্যুর আতঙ্কে থাকে বেশি।ভয়ে থাকে হারানোর।সব সে নিজের এই দু’টি চোখ খুলে কত কাছ থেকেই না দেখে!মাঝে মাঝে তারও হতাশ লাগে।ইচ্ছে হয় হারিয়ে যেতে।কিন্তু সে পারে না।শুধু দীর্ঘশ্বাস তার সঙ্গী।আলভী বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে।চুল টেনে।তার বাবা মায়ের অবস্থা আরো খারাপ।আনাস এগিয়ে এসে তাকে ধরছে।সে আবার ছিটকে দুরে সরিয়ে দিচ্ছে।রামিম এসে ধরছে তাকে ঝুড়ে ফেলে দিচ্ছে।আকাশ কাছেই আসতে পারছে না।সবাই কাঁদছে।পৃথিবীটা এতো ভয়ংকর কেনো??যদি মানুষ এসে আর ফিরে না যেতে হতো??মানুষ কত বোকা।মাত্র কয়েক দিনের দুনিয়ায় তারা কত আবেগে ভালোবাসায় জড়িয়ে যায়।তাদের হয় পরিবার,হয় ভালোবাসা,হয় মায়া।এসব ছেড়ে যেতে আবার হয় কষ্ট।পাশের মানুষও পায় তীব্র ব্যথা।কত বিচিত্র সব!!প্রীতি আলভীর পাশে হাঁটু ভেঙ্গে বসে।দূরেই বসে।আলভীকে সে দেখছে।আলভী কান্নায় জড়িয়ে আসা গলায় বলে,” ওর বয়স তখন দুই।আমি আদর করে চকলেট খাওয়াতে গিয়েছিলাম।তখন ওর গলায় আটকে গিয়েছিলো।দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।সবাই ভেবেছিলো ও মারা গেছে।নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো না।তার রক্ত চলাচল করছিলো না।সবাই যখন বলেছিলো সে মারা গেছে আমি তখন বিশ্বাস করিনি।আমি জানতাম ও ভালো হয়ে যাবে।হয়েছেও।আমি এখনো বিশ্বাস করি আমার বোন দ্রুত সুস্থ হবে।ওকে তো এখনো বলাই হয়নি আমি ওকে কত ভালোবাসি।আমি ওকে দেখতে চাই।”
আলভী উঠে যায়।রামিম ধরে।প্রীতি তুতুলের রুমে নিয়ে যায় আলভীকে।বেশি মানুষ এলাউ না।তাই দু’জনই যেতে পারবে।আলভী আর প্রীতি গেলো।তুতুলের শরীরে তখন আকাশী হসপিটালের পোশাক।ঘাড় থেকে কপাল পর্যন্ত সাদা ব্যান্ডেজ,এক হাতে রক্তের নল,অন্য হাতে স্যালাইনের নল।চোখজোড়া সুন্দর করে বন্ধ।গালে রক্তের ছাপ।আলভী আর দেখতে পারলো না।সে কখনো কল্পনাও করেনি তার বোনকে এভাবে নিস্তেজ ভাবে দেখবে।এসব সে দেখতে পারবে না।আলভী বেরিয়ে গেলো।তার দমটা কেমন আটকে আসছে।মিসেস আমিনা ভেতরে ঢুকতে পারলো না।তার আগেই তিনি আবার জ্ঞান হারিয়েছে।তার অবস্থা ভালো না।হোসাইন সাহেবের মাথায় পানি ডালা হচ্ছে।আকাশ আর আনাস তার মাথায় পানি দিচ্ছে।সবার এমন ভয়ংকর অবস্থা দেখে হসপিটালের সবাই হতভম্ভ।
______________________________
আজ প্রায় সাত দিন পরে রিঝের জ্ঞান ফিরেছে।জ্ঞান ফিরতেই সে তুতুলকে দেখতে চেয়েছে।কিন্তু তাকে যেতে দেওয়া হচ্ছিলো না।তাই সে ভাঙ্গচুর করে নিজের অবস্থা আরো খারাপ করে ফেলেছে।এখন তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে। রিঝের রুমটার দিকে তাকিয়ে আছে আয়শা রহমান।বন্ধুত্বের স্বাদ তিনি পেয়েছিলেন কলেজ লাইফে।বিশেষ কারনে সবাইকেই একে একে পর করে দিয়েছিলেন।পর করে দিয়েছেন বললে ভুল হবে।সবাই হারিয়ে গেছে যুগের সাথে।তার কাছে বন্ধু মানেই ছিলো শুধু ফুটকার স্ট্রলে বসে ফুচকা খাওয়া।গরম কফির ধৌঁয়া।আর চায়ের আলাপ।অন্যের সমালোচনা।হাসা হাসি।শপিং।ঘুরাঘুরি।হয় তো কিছু প্রানের বান্ধবী ছিলো।তখনকার সেই যুগে তো ছেলে বন্ধুর তেমন একটা চল ছিলো না।ছেলেদের সাথে কথা বলার সময় মেয়েরা লজ্জায় মিশে যেতো।এখনকার মতো এতো ক্লোজ ছিলো না সব।কিন্তু কম বান্ধুবীও ছিলো না।যা ছিলো সবই ঠুমকো।এরা মুখেই প্রিয় ছিলো।বন্ধুত্বের আসল সৌন্দর্য তো তার ছেলে অর্জন করেছে।সেটার প্রমানই তার সামনে।রিঝের এক পাশে রামিম বসে বসে ছিমচ্ছে।সোফার কোণায় আধশোয়া হয়ে আছে আসমা।মায়শা তার পাশেই বসে আছে।আকাশ রিঝের আর এক পাশে।হিমেল পায়ের দিকটায়।সবাই কত ক্লান্ত।তবুও কেউ রিঝের পাশ ছাড়ছে না।সত্যিকারের বন্ধুত্ব খুঁজে পাওয়া এই পৃথিবীর কঠিন কাজ গুলোর মাঝে একটি।সবাই রিঝের কাছেই ছিলো এতো দিন।রূমাশ্রীকে দেখে সবাই যখন প্রশ্ন করলো এই মেয়ে কে??রূমাশ্রী তখন বলতে চেয়েছিলো আমি আকাশের বউ।কিন্তু আকাশ তার আগেই কথা চেপে বললো, আমারা তো ঢাকা থাকি এদিকের সব চিনি কিন্তু ও চিনে না।আর ও ঢাকায় পড়তে চায়।উথৌয়ের চাচাতো বোন।তাই সে বলেছে ওকে নিয়ে আসতে।একটু শহরটা দেখিয়ে দিতে।সব বুঝে নিতে সাহায্য করতে।তাই আমাদের সাথে নিয়ে এসেছি।”
তারপর রুমাশ্রীকে না পারতে নিজের কিনা বাসায় নিয়ে যায় আকাশ।নিজের বাবা মাকেও সে একুই কথা বলেছে।বিয়ের ব্যাপারটা সবাই চেপে যায়।কাউকে জানানো হয় না।রিঝের দ্বিতীয় বার জ্ঞান ফিরে।আয়েশা রহমান দ্রুত পায়ে ছেলের পাশে বসে।রামিমের তখন ভালো করেই চোখ লেগে এসেছিলো।রিঝের কন্ঠ কানে যেতেই সে ধরফরিয়ে উঠে বসে।রিঝ চাপা কন্ঠে বললো, পানি খেতে চাই।”
আকাশ পানি এগিয়ে দিলো।তারপর রিঝ আবার বললো, আমাকে উঠতে সাহায্য কর।”
আয়েশা রহমান বিচলিত হয়ে বললেন,” আব্বা এখন উঠে কি করবে?তুমি এখনো অনেক অসুস্থ।রেস্ট নেও।”
“ তুতুলের কোনো খবর আমার কানে আসছে না কেনো??আমি জানতে চাই ও কেমন আছে??তোমরা কেউ বলছো না।তাই আমি নিজেই খবর নিতে উঠছি।এবার বুঝলা উঠার প্রয়োজন আছে কি নেই।সরো আম্মু প্লিজ।আকাশ তোরে কি বলছি কানে যায় নাই।ধর আমারে।না নিজে নিজে উঠতাম??”
আকাশ দ্রুত ধরে।রিঝের কন্ঠ ক্রমশ বড় হচ্ছে।রামিমও এগিয়ে আসে।কেউ তাকে এখনো বলেনি তুতুল গত সাপ্তাহখানেক কোমায় আছে।আয়েশা রহমান সব জানে।ভালোবাসা বুঝেন।তিনি ভয়ে আছেন।ছেলেকে সামলাবেন কিভাবে?হৃৎপিন্ডটা যেনো তার হাতের মুঠোয় নিয়ে দাড়িয়ে আছেন তিনি।বাঁধা দিয়ে বললেন,” রিঝ বাবা তুমি অসুস্থ।আগে সুস্থ হও।তারপর সব হবে।”
রিঝ গম্ভীর কন্ঠে বললো,” আমার এই মুহূর্তে তুতুলকে দেখা প্রয়োজন।আর কিছু না আম্মু।”
রামিম আটকায়।আসমা থামাতে চায়।কিন্তু সে কারো কথা শুনে না।একটানে স্যালাইনের নল খুলে ফেলে নিজের হাত থেকে।উঠে গিয়ে বুঝতে পারে তার পিঠে প্রচন্ড ব্যথা।মনে হচ্ছে সব হাড় ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গেছে।আর্তনাদ ভরা একটা শব্দ বেড়িয়ে আসে তার কন্ঠ থেকে।আকাশ রামিম দৌড়ে যায়।শক্ত করে ধরে।শুয়ে দিতে চায়।রিঝ কঠিন গলায় বলে,” ধরে উঠা।”
“ তোর অবস্থা ভালো না।প্লিজ বু..”
রামিম কথা শেষ করতে পারলো না।রিঝের কন্ঠের সাথে আর্তনাদ টের পাওয়া যাচ্ছে।কিন্তু সে নিজের কথা থেকে নড়বে না।আজ সে যাবেই।রিঝ নিজেই উঠে পরে অনেকটা।রামিম পিঠে হাত দিয়ে দাড়ায়।আকাশ একটা হাত কাধে নেয়।বাকিটা রামিম নেয়।রিঝ পায়ের ব্যথায় হাটতে পারছে না।খুঁরিয়ে খুঁরিয়ে হাঁটছে।তুতুলকে রাখা হয়েছে দুই রুম পরেই।তুতুলের রুমে যাওয়ার আগেই আলভীর সাথে দেখা হয়।আলভী চেয়ারে বসেছিলো।রিঝকে দেখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।তারপর চোখ সরিয়ে নেয়।কথা বলে না।জিজ্ঞেস করে না কিছু।রিঝ অবাক হয়।নিজেই প্রশ্ন করে,” তুতুল কেমন আছে??”
কথাটা যেনো আলভীর শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিলো।ধপ করেই সে জ্বলে উঠে।উত্তেজিত গলায় বলে,” তোর যেনে কাজ কি??নিজের কথা ভাব আর আমার সামনে থেকে যা।এটাই তোর জন্য মঙ্গল।”
“ তুই এভাবে কথা বলছিস কেনো??কি হয়েছে? তুতুল ভালো আছে তো??কেউ কিছু বলছে না কেনো??আমি কখন থেকে প্রশ্ন করছি।কানে যাচ্ছে না কারো??রামিম উত্তর চাই।” রিঝ চিৎকার করে।
আলভী দারুন একটা হাসি দিলো।হাসি থামাতেই পারছিলো না।রিঝ ভ্রু কুঁচকে থাকলো।সে কিছু বুঝলো না।একে একে দুই পরিবারের সবাই উপস্থিত হয়।আনাস রিঝকে এভাবে দেখে দ্রুত দৌড়ে এসে সবার উপরে চেঁচামেঁচি করে বললো,” তোরা সবাই ওকে নিয়ে বের হলি কেনো??ওর অবস্থা এখনো ভালো না।ভেতরে নিয়ে যা।”
রিঝ মাঝ পথে থামিয়ে বললো,” আমি নিজেই এসেছি।অসুস্থ বলেই ওরা সাহায্য করছে।করতে না চাইলে ছেড়ে দে।তবুও কেউ উত্তর দেও।ভাই তুই বল।তুতুল কই??আমি দেখতে চাই??”
রিঝের কন্ঠ ধীরে ধীরে নেতিয়ে যাচ্ছে।আলভী কড়া কড়া গলায় বললো,” তুই আমার বোনের কাছ থেকে দূরে থাকবি।আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।যা তুই সামনে থেকে।”
রিঝ রামিমের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।অর্ধেক ঝুঁকে গেলো।তারপর পিঠে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।হোসাইন সাহেব এগিয়ে এসে বললেন,” রিঝ তুমি অসুস্থ।কেবিনে যাও।আলভী ভেজাল করিছ না।যা হয়েছে সব দুর্ঘটনা।”
রিঝের শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে।কন্ঠ কাঁপছে।কাঁপা স্বরে সে বললো,” আমাকে কেউ বলবে প্লিজ কি হয়েছে??”
আলভী এবার ক্ষেপা গলায় বললো,” তুতুল কোমায় আছে।খুশি লাগছে তোর??তোর তো সব সময় আমার বোনের সাথে সমস্যা লেগেই থাকে।এবার খুশি মনে বিদায় হ।”
রিঝের মাথা ঘুরে উঠে।শরীরের ভর ছেড়ে দেয় সে।নিচে পড়ে যায় শরীর।সবাই দৌড়ে এসে ধরে।রিঝের চোখ লাল।নাকটা লাল।রামিম হাত ধরে টানতে চায় কিন্তু উঠাতে পারে না।রিঝ কিছু বলতে পারলো না।তার হৃৎপিণ্ড ভয়ংকর তান্ডব করছে।হাত পায়ের কাপঁনি থামছে না।নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।মনে হচ্ছে পৃথিবী ধ্বংষ হয়ে তার মাথার উপরে ভেঙ্গে পড়ছে।তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।কলিজা টানটান হয়ে ছিড়ে যাচ্ছে।আকাশ রামিম টেনে তুলে।আলভী রিঝের হাতটা ধরে টেনে হিঁচরে নিয়ে আসে গ্লাসের সামনে।তুতুলের নিস্তেজ অবস্থা দেখিয়ে সে চিৎকার করে বলে,” তুই না দায়িত্ব নিয়েছিস??এইভাবে নিয়ে আসবি বলে দায়িত্ব নিয়েছিস??এভাবে নিয়ে আসবি বলে ওকে নিয়ে গিয়েছিলি??তুই বলেছিলি ওকে ঠিক ভাবে ফিরিয়ে আনবি।তুই কি করলি রিঝ??এভাবে কেনো হলো সব।সব এতো এলোমেলো কেনো করলি??কেনো কেনো??তোকে আমি কখনো ক্ষমা করতে পারবো কি না আমি জানি না।”
আলভী হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।আকাশ রামিম বুঝাতে চায়।বলে,” দেখ যা হয়েছে দুর্ঘটনা।এতে কারো হাত নেই।রিঝ নিজের জীবন বাজি রেখে তুতুলকে রক্ষা করতে চেয়েছে।কিন্তু ভাগ্যের কাছে আমাদের কিছুই করার নেই।যা হয়েছে সবই দুর্ভাগ্য।”
“ আর সেই দু্র্ভাগ্য শুধু আমাদের সাথেই কেনো হলো বলবি তোরা??আমি নিষেধ করেছি।তবুও নিয়ে গেলি কেনো তোরা??তুই নিয়ে গিয়েছিস।বলেছিলি দেখে রাখবি।কই রাখলি??কই??এভাবে কেনো দেখতে হচ্ছে আমার বোনকে আমার??কেনো রিঝ বল??”
আলভী জানে এটা দুর্ঘটনা।কিন্তু নিজের দুঃখে সে এতোই দুঃখি যে সব দোষ রিঝের উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে।আনাস এগিয়ে এসে বললো,” আলভী সব কিছুর লিমিট থাকে।তুই একা এভাবে রিঝের উপরে দোষ দিতে পারছনা।এটাকে কেনো তুই দুর্ঘটনা মানতে পারছিস না??”
“ পারছি না।কারণ রিঝ বলেছে ও তুতুলকে সুস্থ ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।ও বলেছিলো দায়িত্ব পালন করবে।ও নিজে দায়িত্ব নিয়েছিলো।ও নিজে আমাকে রাজি করিয়েছিলো।আমি তো যেতে দিতে চাইনি।তাহলে দোষ কার হবে??আমার??না কি ওর??”
মিসেস আমিনা এগিয়ে এসে বললেন,” আলভী তোর এখন এসব না করলে হচ্ছে না।এটা হসপিটাল।রিঝ এখন অসুস্থ বাদ দে।ডাক্তারের সাথে কথা বল।তুতুলের এখন অবস্থা কেমন??আর রিঝ তুমি সামনে থেকে যাও।কেনো যানি না তোমাকে আমারও ভালো লাগছে না।”
রিঝের দম বন্ধ হয়ে আসছে।কারো একটা কথাও তার কানে যায়নি।সে স্তব্ধ হয়ে আছে।বরফের মতো জমে আছে।তার মনে হচ্ছে কেউ তার গলা টিপে ধরেছে।নিঃশ্বাস নিতে বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে।রিঝ আজ অনুভব করছে এই মেয়েটার মাথে অদ্ভুত ভাবে তার অক্সিজেনের কানেকশন আছে।রিঝের পা থেকে মাথা পর্যন্ত তিরতির করে বেয়ে গেলো হিমেল রক্ত।সে আর দাড়িয়ে থাকতে পারলো না।নিস্তেজ হয়ে পড়লো রামিমের গায়ের উপরে।সবাই হন্তদন্ত হয়ে ধরলো।আনাস আলভীর দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বললো,” আলভী সাবধান হ।এতোক্ষণ কিছু বলিনি অবস্থা বুঝে।এবার আমার ভাইয়ের অবস্থা দেখে আমাকে ব্যবস্থা নিতে চেতাইস না।”
প্রীতি মাত্র এসেছে।রিঝের এই অবস্থা দেখে সে আকর্ষিক ভাবে ঝাটকা খায়।দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বললো,” কি হয়েছে উনার।”
তারপর হাত চেক করে বললো,” সেন্সলেস হয়ে গেছে।দ্রুত কেবিনে নিয়ে যান।উনাকে এখানে কে নিয়ে আসতে বলেছে??পাগল না কি আপনারা??ওয়ার্ড বয় হ্যাল্প করো।”
আলভীর সাথে এই কয়েকদিনে তার তেমন দেখা হয়নি।যখনই আসে আলভী হয় বাহিরে থাকে বা বোনের কাছে বসে থাকে।তাই সে কথা বলতে পারেনি।তার খুব গুরুত্বপূর্ন্য কথা ছিলো।এখনের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এখনও বলতে পারবে না।
_____________________________
রাত তখন ১২টা ছুঁই ছুঁই।হসপিটালে বারোটা মনেই অনেক রাত।সবজায়গায় নিরবতা।ভৌতিক একটা পরিবেশ বিরাজ করে।চারপাশের ঘুমুট ভাব।মাঝে মাঝে রাত জাগা নার্সদের উচ্চ হাসি সব শুনতেও ভয়ংকর লাগে।একটা দুইটা হলদে লাইট,সাদা লাইট,বাকি অংশ অন্ধকার সব মিলিয়ে একটা ভীতির তৈরি করে।রোগীরা সাধারনত তাড়াতাড়ি ঘুমায়।এটাই নিয়ম।স্বাস্থের জন্য ভালো।অনেকের ঘুম চলে আসে।অনেককে ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে ঘুম পারাতে হয়।রিঝ নিজের ঘুমের ঔষুধটা গোপনে ফেলে দিয়েছে।যখন চোখ খুলে তাকায় তখন দেখে রামিম আর আসমা,আয়েশা রহমান তার কেবিনে আছে।রিঝ উঠতে পারছিলো না।পিঠের ব্যথায়।অনেক কষ্টে সে উঠে বসে।মাথা একটা চক্কর দিয়ে উঠে।বেডে হাত রাখে শক্ত করে।তারপর ধীরে ধীরে উঠে।ব্যথা পেলে দাঁতে দাঁত চাপে।শব্দ করে না।ঠোঁট কামড়ে ধরে।হাত মুষ্টি বদ্ধ করে।আসমা ফোনে ব্যস্ত ছিলো।তাই সে জেগে আছে।রিঝের হালকা অবয়ব দেখে সে প্রথমে ভয় পায়।ভাবে রামিমকে ডাকবে।কিন্তু পরে ডাকে না।বিছানার দিকে তাকায়,দেখে রিঝ নেই।বুঝে যায় এটা রিঝের ছাঁয়া।গুটি গুটি পায়ে রিঝের মুখে হাত রেখে আস্তে আস্তে করে বললো,” দোস্ত আমি আসমা।ভূত ভাবি চিল্লাফাল্লা করিছ না।পরে তুই ফাসবি।”
হাত সরাতেই রিঝ নাক ছিটকে বললো,” তুই আমারে মাইয়া ভাবছ??যে কথায় কথায় চিৎকার করমু??যা সামনে থেকে।”
“ কই যাছ দোস্ত?”
রিঝ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে থাকে।হাতে হসপিটাল থেকে দেওয়া স্টিক আছে।আসমা আবার এগিয়ে এসে বললো,” বলছ না ক্যান??প্রশ্ন করতাছি তো??”
“ দেখ আসমা আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।প্লিজ লিভ মি।”
“ তুই না বললে আমি সবাইকে ডাকদিমু কইতাছি।পরে আলভী চলে আসলে কি হবে জানছ তো??হেতে কিন্তু হসপিটালেই থাকে।”
রিঝ ভারী অবাক হয়ে বললো,” তুই আমারে ব্লাকমেইল করছ??আলভীরে কি আমি ভয় পাই??”
“ তিনবার তোরে ঢুকতে দেয় নাই।এবারও দিবো না।”
“ জানছই যখন তাহলে প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করছ কেনো??প্লিজ সর।”
আসমা রিঝের একটা হাত ধরে।রিঝ অবাক হয়।আসমা হাত ধরে হাঁটাতে হাঁটাতে বলে,” চল আমি নিয়ে যাবো।কিন্তু এভাবেই যাবি।বেশি কাবিল হইছ না।পরে পড়ে ব্যথা পাবি।চল।”
রিঝ হাসে।তার বন্ধুমহল সত্যি বড্ড উদার।শুধু উপরের জনই তার প্রতি উদার হচ্ছে না।রিঝের কলিজায় কাঁপন ধরে।হাড় ভাঙ্গার মতো ব্যথা হয়।হৃৎপিণ্ডে শব্দ হয়,ধুমধুম শব্দ।শিরশির করছে মাথার রগ গুলো।কাছ থেকে দেখার প্রতীক্ষা!ছুঁয়ে দেখার প্রতীক্ষা!রিঝকে আরো কাতর করে তুলছে।আজ সত্যি রিঝ অনুভব করছে সে প্রচন্ড আবেগ প্রবল কিশোর।১৬ বছর বয়সি কিশোর!প্রথম প্রেমে পড়ার বয়স তার।প্রেমে পড়েছিলো সে।হুট করেই সময় তাকে আবার ষোলোতে নিয়ে এসেছে।প্রচণ্ড দেখার আকুতি যে সময়টা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।ইচ্ছে হয় ব্যালকুনি পাড়ি জমাতে।ইচ্ছে হয় দেয়াল টপকাতে।ইচ্ছে হয় আশেপাশে ঘুরঘুর করা ছেলেগুলোকে দলবল নিয়ে পিটাতে।হ্যাঁ সেই ষোলোতেই সে হাঁটছে।রিঝের চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে।তুতুলের কেবিনের দরজার কাছে আসতেই প্রীতি পরে সামনে।শেষ বার চেক করতে এসেছে সে।রিঝকে দেখে ভারী আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড।রিঝকে থামাতে চেয়ে সে বললো,” আপনার ভেতরে যাওয়া নিষেধ।”
আসমা ফিঁসফিঁস করে বললো,” প্লিজ যেতে দিন।ও একটু করে দেখবে।প্লিজ।”
“ না যেতে দেওয়া যাবে না।মিষ্টার আলভী দেখলে সমস্যা হবে।”
“ আর রিঝরে না যাইতে দিলে তোর সমস্যা হবে।সামনে থেকে সর।এমনও আমি বেশি ফরমালিটি করতে পারি না।তবুও তবে অনেক আঁকিবুঁকি করে বলছি এবার রাস্তা ছাড়।”
আসমা ডাকু একটা লুক দেয়।প্রীতি অবাক হয়ে যায়।এরা না কি ইঞ্জিনিয়ার??আল্লাহ সব তো ডাকাতের দল।কখনো এ এসে ধমকায় তো কখনো ও এসে ধমকায়।কেউ তো আবার থাপড়ায়।ও যে একজন ডাক্তার কেউ বলবে??তার উপরে সে না কি রাগী??সবাই তাকে এতো দিন রাগী হিসেবেই জানতো।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে নিজেও পাগল।এদের মতো।প্রীতি ভাবতে ভাবতে কাঁচের দরজা ঠেলে রিঝ ঢুকে যায়।আসমাও তার সাথে।তুতুলের কপাল,মুখের পাশের রক্তের ছাপ এখনো আছে।গাল গুলো এখনো লাল।ছিলে যাওয়া,থেতলে যাওয়া অংশ গুলো এখনো জীবিত।সাদা হাতটায় ছোঁপ ছোঁপ লাল দাগে দাগী হয়ে আছে।চোখটা বন্ধ।উপরীভাগ ফুলে আছে।লাল ঠোঁটটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।আসমা সরে যায়।রিঝ তুতুলের ডান পাশে বসে।হাতটা দেখে।প্রানহীন দেখাচ্ছে।চোখের নিচেটা ফুলে আছে।সাদা মুখের আনাচে কানাচে লাল দাগ।গলার একটা অংশ খালি।অন্য অংশে ব্যান্ডেজ।নীল রগ গুলো উঠানামা করছে।গভীর চোখে রিঝ তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। চোখ থেকে অবাধ্য পানি গড়িয়ে পরে তুতুলের সাদা হাতের পিঠের উপরে।কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।রিঝ নিজের মুখটা দু হাতে চেপে ধরে।আসমা দূর থেকে লক্ষ্য করছে রিঝ বাচ্চাদের মতো ফুফাঁচ্ছে।এই এতো দিনের বন্ধুত্বে রিঝকে কখনোই সে কাঁদতে দেখেনি।তুতুলের বিয়ের খবর দেওয়ার সময়ও না।রিঝ একটা ঢোক গিলে কান্না দমাতে চাইছে।কাঁপা হাতটা তুতুলের হাতের পিঠে পড়া পানির উপরে রাখে।পানি মুছে দেয়।তুতুলের হাতটা নিজের হাতে নেয়।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে হাতের দিকে।এই হাঁটাই সে ভালো করে ধরে রাখতে পারেনি।নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ হয় তার।হাতটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।চিকন আঙ্গুল গুলো নিষ্প্রান।হাতটার একটা পাশে ব্যান্ডেজ।রিঝ হাতটা নিজের গালের পাশে রাখে।শরীর জুড়ে একটা শান্তির ঝড় বয়ে যায়।এতো শান্তি রিঝ শুধু এই হাতটার ছোঁয়ায় পায়।আর কিছুতে এতো অদ্ভুত শান্তি থাকে না।তুতুলের হাতের পিঠে অনেক গুলো অবাধ্য চুমু খায় সে।একটু উঠতে গিয়ে নিজের পিঠে ব্যথা পায় সে তবুও উঠে তুতুলের কপালে চুমু খায়,গালে চুমু খায়।একটা না অনেক গুলো ঠোঁটের ছোঁয়ায় ভরিয়ে তুলে।গালের লাল পাশ গুলোতে আলতো ঠোঁটের স্পর্শ আঁকে।নাক ডুবিয়ে দেয় নরম তুলতুলে গালের পাশে।আজ তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।রিঝ প্রচুর কাঁদে।ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদে।তুতুলের হাতটা বুকের পাশে ধরে।জোড়ে শ্বাস নেয় কয়েকটা।ভিজা চোখে তাকিয়ে থাকে তুতুলের দিকে।তারপর ঠান্ডা কন্ঠে বললো,” তোমাকে ভালোবেসে আমি কি পেয়েছি??চলো পরিসংখ্যান করি।”
কিছুক্ষণ তুতুলের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার নিজে নিজেই বললো,” আমি একাই বলবো??আচ্ছা আজ আমি বলি তুমি শুনো।সব সময় তো এতো এতো কথা বলো যে আশেপাশের সবাই বিরক্ত হয়ে পরে।আজ আমি বলতে বলতে তোমাকে বিরক্ত করবো।দেখি কে বেশি বিরক্তিকর।চলো করি পরিসংখ্যান।তোমাকে ভালোবেসে আমি আগুন পেয়েছি।বুকের মাঝে উত্তপ্ত আগুন।সে আগুনে আমি ঝলসে যাচ্ছি।পুড়ে ছাড়খাড় হচ্ছি আমি।তোমাকে ভালোবেসে আমি খারাপের তালিকায় নাম লেখিয়েছি।আমি তো কখনোই খারাপ ছিলাম না!অতি ভদ্র ছেলে ছিলাম।যে সবাইকে সম্মান করতে যানতো।যে কখনো কাউকে হিংসা করতো না।মারামারি করতো না।কম কথা বলতো।কম হাসতো।কমের মাঝে সিমাবদ্ধ ছিলো।কিন্তু তোমাকে ভালোবেসে আমি নিম্ন খারাপ হয়েছি।তোমাকে ভালোবেসে আমি মাঝে মাঝে কবি হয়েছি।তুমি যানো আমার সব কবিতায় তুমিময়।”
রিঝ একটু থামলো।পাশের পানির গ্লাস থেকে পানি খেলো।তারপর তুতুলের হাতটা আরো যত্নে আবেগে ভালোবাসায় মাখিয়ে বুকের পাশে ধরলো।প্রীতি অবাক হয়ে শুনছে।সে কিছুই বুঝতে পারছে না।আজ তারা দর্শক।রিঝ বললো,” আমি তোমার জীবনের পাতায় না থাকলেও আমার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় জুড়ে ছিলে শুধু তুমিময় বর্নমালা।তোমাকে ভালোবাসার বিনিময়ে আমি গুন্ডা হয়েছি।লাফাঙ্গা হয়েছি।তোমার মনে আছে তোমাদের বাসার সামনে যে ছেলেটা তোমাকে সুন্দরী ডাকতো??আমি তার মুখ ফাটিয়ে দিয়েছিলাম।তখন বয়স ছিলো ষোলো।প্রথম প্রেমের বয়স।তারপর থেকে আমি বহু ছেলে পিটিয়েছি।মেয়েও পিটিয়েছে।তবে বিশ্বাস করো আমি মেয়েদের গায়ে হাত দি না।মেয়েদের দিয়েই পিটিয়েছি।মজার না।”
রিঝ নিজে নিজে হাসলো।তার চোখে পানি আবার টলমলিয়ে উঠে।সে উপেক্ষা করে আবার বলে,” তারপর তো আমি অনেক কিছু করেছি।ভালোবেসে করেছি।তুমি বলো আমার মতো একটা ছেলে যে তোমাকে ছোট থেকে অপছন্দ করতো।ঘৃন্না করতো।দেখলেই রাগ হতো।ইচ্ছে করতো পিটাই।সেই ছেলে আমিই তোমার প্রেমে পড়ে কত কিছু করেছি।জীবন কত বিচিত্র তাই না? পরিসংখ্যান শেষ হয়নি।ইতিহাস বড় বুঝলে।এখনো অনেক বড় কথাই তোমাকে বলা হয়নি।শুনো ইয়াজকে আমি বরাবরই ছাড় দিয়েছি কারণ ও সবার মতো ভীতু ছিলো না।ওর সাথে একটা চুক্তি ছিলো।আমি ওরে পিটাইলেও তোমারে বলতে পারবে না।শালা হিসাবে পাক্কা।বলে নাই।আমি কিন্তু ওরে অনেক ধোলাই দিছি।” রিঝ উচ্চ শব্দে হো হো করে হেঁসে উঠে।বুকের হাতটা আরো চেপে বলে,”এতে আমার দোষ নেই।আমি কিন্তু ভালোই ছিলাম।তুমি খারাপ করে দিয়েছো।তুমিই সেই ভদ্র,ভালো,জ্ঞানী,ভাবনেওয়া ছেলেটাকে কেমন পাগল করে দিয়েছো।আমি তো তোমাকে ভালোবেসে কিছুই পেলাম না।শুধু নিজের খারাপ সত্তা বাদে তুলতুল??আমি সত্যি কিছু পাইনি??”
রিঝ নিজেই অবাক হলো।বার বার উচ্চারণ করলো এক কথা।সে তো কিছুই পায়নি!
প্রীতি হাতবাক কন্ঠে বললো,” এরা একে অপরকে ভালোবাসে??”
আসমা নিরশ গলায় বললো,” না শুধু রিঝ বাসে।অদ্ভুত ভাবে ভালোবাসে।”
রিঝ মৃদূ গলায় ফিসফিস করে বললো,” তোমাকে ভালোবেসে যদি তোমাকেই পাওয়া না হয় তাহলে আমি কেনো এতো খারাপ হলাম বলবে??”
কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-৩৪.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
ভোরের আলো ফুটেছে।অন্ধকার ধীরে ধীরে কেঁটে যাচ্ছে।চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে মৃদূ মৃদূ আলো।পরিবেশ সতেজ হয়ে উঠছে।আকাশের গায়ে এলোমেলো শার্ট।তাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।সকাল সকাল সে এসে হাজির হয়েছে তার বাড়িতে।এখানে সে তেমন থাকে না।রূমাশ্রী থাকে তাই।কাল সারা রাত অফিসে থেকে সে আজ খুব ক্লান্ত।তাই আর কোনো পথ না থাকায় সে এসে হাজির হয়েছে তার নিজের বাসায়।বাবার বাড়ি এখান থেকে একটু দূরে।যেতে সময় লাগবে।এখন ভালো লাগছে না।তাই সে নিজের বাসায় চলে এসেছে।রূমাশ্রী গভীর ঘুমে ছিলো।কলিং বেলের শব্দ তার কানে আসছিলো না।অনেকক্ষণ পরে সে শুনতে পায়।দরজা খুলে দেখে আকাশ।চমকায়।কিছুক্ষণ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।তাকিয়ে থাকতে দেখে আকাশ বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,” এভাবে ভূতের মতো দাড়িয়ে আছো কেনো??”
রূমাশ্রী দ্রুত সরে যায়।আকাশ দ্রুত পায়ে হাঁটে।রূমাশ্রী পিছনে পিছনে আসে।প্রথম সিঁড়িতে পা দিতেই পিছন থেকে রূমাশ্রী বললো,” আপনি এখানে এসেছেন কেনো??”
আকাশ রাগী একটা দৃষ্টি নিয়ে তাকালো।বললো,” কেনো এসেছি মানে কি??নিজের বাসায় এসেছি।তোমাকে বলতে যাবো কেনো??যতসব।”
রূমাশ্রী মুখ বাঁকা করে।বিড়বিড় করে বললো,
“ রাক্ষস একটা।”
আকাশ কান খাড়া করে।সে শুনতে পায়।তেড়ে আসে।চোখ রাঙ্গীয়ে বলে,” ওই মাইয়া কি বললা তুমি??কি বললা আবার বলো??”
“ কই কি বললাম।”
“ আমি শুনেছি।তুমি রাক্ষস বলেছো।”
“ শুনেই যখন ফেলেছেন তখন প্রশ্ন করছেন কেনো??”
“ এই মেয়ে তোমার এতো বড় সাহস হয় কিভাবে??এটা কিন্তু আমার বাসা।”
“ আমি কখন বললাম আমার বাসা??”
“ আমার সাথে এভাবে ত্যাড়া কথা বলবা না একদম।ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
“ কি করবেন??আপনার বাড়ি থেকে বের করে দিবেন??” রূমাশ্রী স্বাভাবিক কন্ঠ।
“ দিতেও পারি।”
“ তো দেন।আমি কি ভয় পাই না কি??”
“ তাহলে বের হয়ে যাও।”
রূমাশ্রী হকচকিয়ে যায়।সত্যি সত্যি বের করে দিবে??কথা পাল্টে সে বললো,” আমি কেনো যাবো??এটা আমারও বাড়ি কারণ আমি আপনার বিয়ে করা বউ।”
“ সিরিয়েসলি!!হাসালে।এসব ফালতু বিয়ে তুমি মানছো??পাগল না কি??জোর করে বিয়ে দিয়েছে ওরা।আমি এসব মানি না।”
“ সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।আমি তো মানি।এতেই হবে।”
“ দেখো থাকতে হলে আমার মুখে মুখে তর্ক করবে না।”
“ করবো কি করবেন??”
“ এই মেয়ে তুমি এমন কেনো??থেতা টাইপের।”
রূমাশ্রী থেতা মানে বুঝলো না।সে কথার মাঝে প্রশ্ন করলো,” থেতা মানে কি??”
“ থেতা মানে??” আকাশ নিজেও জানে না।তাই সে কতক্ষণ ভাবলো।তারপর কথা ঢাকতে রাগ দেখালো।বললো,” চুপ করো।”
“ পারেন না যে জিনিস সেটা বলেন কেনো??”
“ তুমি এতো বিরক্ত করছো কেনো??”
“ ইচ্ছে করছে তাই।” রূমাশ্রীর কন্ঠে রসিকতা।
“ এই মেয়ে তোমাকে কিন্তু আমি এখন,,” আকাশ রাগী চোখে তাকায়।রূমাশ্রী পাত্তা দেয় না।সে বললো,
“ কি করবেন?”
“ তুমি সামনে থেকে যাও।”
“ আরে ভাই চেতেন কা?”
আকাশ আগুন চোখে তাকায়।রাগে শরীর জ্বলে উঠে।তেলেবেগুনে জ্বলে সে বললো,” ভাই ডাকছো কেনো??”
রূমাশ্রী বুঝে আকাশের রাগ উঠছে।সে মনে মনে হাসলো।ঠোঁট টিপে হাসি থামিয়ে বললো,” ভাইয়া আপনি কি ব্রেকফার্স্ট করবেন??”
“ এই মেয়ে তুমি ভাই,ভাইয়া ডাকছো কেনো??পাগল টাগল হয়ে গেলে না কি??”
“ তো কি করবো??আপনিই তো বললেন বিয়ে মানেন না।মানে আমি আপনার বউ না।তো এখন তো আমি আপনাকে ওগো,জানু,শুনছো টাইপ কিছু বলতে পারবো না।তাই আমি আপনাকে ভাইয়া ডাকছি।”
আকাশ বিপদে পড়ে।ভাইয়া ডাক শুনলেই গায়ে আগুন জ্বলে।অন্যদিকে সে সত্যি বিয়ে মানে না।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে সে বললো,” যাও তো।কিছু ডাকতে হবে না।সামনে থেকে যাও।”
রূমাশ্রী হাসতে শুরু করলো।সামনের সোফায় পা গুঁটিয়ে বসে পড়লো।কমলা রঙ্গের ঠোঁটে হাসি আঁকা।আকাশ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।পাগল বলতে বলতে পাগল হয়ে গেলো না কি??হঠাৎ ঠোঁটের দিকে তাকায়।মেয়েটার ঠোঁট কমলা।প্রথম দিন থেকেই দেখছে।কিন্তু সেভাবে লক্ষ করেনি।ভারী আশ্চর্য তো??রূমাশ্রী হুট করেই কাছে এসে দাড়ায়।পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলের উপরে ভর দিয়ে সে উঁচু হয়।ঠোঁট জুড়ে হাসি।আকাশ ভড়কে যায়।এতো কাছে কেনো মেয়েটা??গলা শুকিয়ে যায়।ভয়ে কপালের একপাশে বিন্দু বিন্দু ঘাম।আকাশ শুকনো ঢোক গিলে নিলো।চোখ মুখ খিঁচে রইলো।রূমাশ্রী আকাশের অবস্থা দেখে হাসছে।মুখের উপরে আলতো একটা ফুঁ দিলো।কপালের উপরে পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো দুলে উঠলো।আকাশ তরিৎ করে চোখ খুলে।রূমাশ্রী উচ্চ শব্দে হেসে উঠে বললো,” এতো ভয় পাওয়ার কি আছে??”
আকাশ হাফ ছেড়ে বাচঁলো।জোড়ে শ্বাস নিয়ে সে বললো,” আমি ভেবেছি তুমি আমাকে,,”
“ কিস করবো??হাসালেন।আমি আর আপনাকে??পাগলা কুকুর কামড়েছে না কি আপনাকে কিস করতে যাবো??”
আকাশ থমথমে মুখ করে বললো,” আমি কি বলেছি তুমি কিস করতে গিয়েছিলে??যতসব ফালতু কথা।”
“ এটাই বুলতে চেয়েছিলেন।”
“ মোটেও না।”
রূমাশ্রী আবার পায়ের উপরে ভর করে দাড়ায়।আকাশ চোখ বড় করে।চারাপশে একবার তাকায়।তার হৃৎপিণ্ড লাফাচ্ছে।রূমাশ্রী ডান হাতের দুটি আঙ্গুল দিয়ে আকাশের মাথার একপাশের ঘাম মুছে দেয়।তারপর হাসতে হাসতে বললো,” আপনি মারাত্নক ভীতু।”
কথাটা শেষ করেই রূমাশ্রী সরে গেলো।দ্রুত পায়ে নিচের বেসিনের সামনে দাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর রান্নাঘরের দিকে গেলো।আকাশ হা করে সব দেখতে লাগলো।তার মনে হচ্ছে মিউজিক বাজচ্ছে।বাতাস হচ্ছে।বাতাসে তার এলোমেলো শার্ট উড়ছে।দৌল খাচ্ছে চুল।যেমনটা মুভীতে হয়।নায়ক যখন প্রেমে পড়ে।তখন যেভাবে মিউজিক বাজে।এখনো বাজচ্ছে।তাহলে কি সে প্রেমে পড়ছে??এই পাহাড়ি কন্যার প্রেমে??আকাশ নিজের প্রতি আশ্চর্য রকমের অবাক।তার চিন্তা ধারণা ভুল।পকেটে তার মুঠোফোন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে।পাশে তাকিয়ে দেখলো পূর্বের কাঁচের জানালাটা খোলা।সেখান থেকেই বাতাস আসছে।তার মানে এসব কিছুই না।সব মনের ভুল।নিজের বোকামিতে আকাশ নিজেই হাসলো।পকেট থেকে ফোন নিয়ে দেখলো তার মায়ের ফোন।কিছুক্ষণ কথা বলার পরে তিনি বললেন,” আজকে কি হইছে জানছ???”
“ আম্মু তুমি কি আমাকে সর্বজান্তা মনে করো?”
“ তা মনে করতে যাবো কেনো??”
“ তাহলে আজ কি হয়েছে আমাকে কেনো প্রশ্ন করছো??আমি কি জানি আজ কি হয়েছে??”
“ তাও ঠিক।দাড়া আমিই বলি।আজ সকাল সকাল তোর বড় মামা এসেছে।আমি তো অবাক।এতো সকালে ভাইজান কখনোই আসে না।তার সাথে কে এসেছে জানোছ??”
আকাশ বিরক্ত গলায় বললো,
“ না বললে কিভাবে জানবো আম্মু??”
“ বলছি বাবু শুন আসল কথা হচ্ছে তোর মামার সাথে মামিও এসেছে।”
“ এটা স্বাভাবিক কথা আম্মু।মামা আসলে মামি তো আসবেই।”
“ সেটাও আসল কথা না।আসল কথা হচ্ছে তোর মামা মামির সাথে তোর মামির ছোট বোন টুম্পা এসেছে।সাথে তার মেয়ে নিকিতাও এসেছে।”
“ ভালো কথা।এখন রাখো তো প্লিজ।আমি খুব টায়ার্ড আম্মু।বিকেলে বাসায় আসবো।তখন কথা বলবো।এখন রাখি।”
“ আরে দাড়া দাড়া আসল কথা না শুনে কই যাছ।আসল কথা হচ্ছে ভাইজান চায় তোর সাথে নিকিতার বিয়ে হোক।”
আকাশ খুঁক খুঁক করে কাশতে কাশতে সোফায় বসে পড়ে।বিয়ের কথা শুনতেই তার মাথা ঘুরতে শুরু করে।সে বিড়বিড় করে বলে,” আবার বিয়ে!!!”
রূমাশ্রী রান্নাঘর থেকে ছুঁটে আসে।হাতে তার পানির গ্লাস।হাঁটু ভেঙ্গে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে উত্তেজিত গলায় সে বললো,” কি হয়েছে আপনার??কাশছেন কেনো??”
রূমাশ্রীর কথা আকাশের আম্মুর কানে যায়।তিনি ওই পাশ থেকে বলছেন,এই বাবু তোর বাসায় মেয়ের গলা কেনো শুনা যাচ্ছে??”
আকাশ রূমাশ্রীর দিকে রাগে গমগম করে তাকায়।এক হাতে চেপে ধরে রূমাশ্রীর মুখ।মাকে উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে ফোনটা রেখে দেয়।গলায় তেজ নিয়ে চিৎকার করে বললো,” এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি? কথা বলতে গেলে কেনো??এখন আমি আম্মুকে কি বলবো??আম্মু কি মনে করবে??বলো?কেনো কথা বলেছো??বলো??”
আকাশের ধমকে রূমাশ্রীর চোখ ছলছল করে উঠে।মুখ দিয়ে সে ইশারা করলো।আকাশ দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো।রূমাশ্রী কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,” স্যরি।”
সে উঠে গেলো।আকাশ বুঝতে পেরেছে সে খুব বাজে ভাবে চিৎকার করে ফেলেছে।এটা উঁচিত ছিলো না।সে রূমাশ্রীর হাত টেনে ধরে।কন্ঠ নিচু করে বলে,” স্যরি আমার এভাবে চিৎকার করা উঁচিত হয়নি।আমি জানি আমি খুব খারাপ ভাবে কথা বলি তোমার সাথে।আমি নরমালি কারো সাথে এভাবে কথা বলি না।কিন্তু তুমি তো জানো এই কয়েকদিনে যা হয়ে গেছে আমি মেনে নিতে পারিনি।”
রূমাশ্রীর ঠোঁটে ফুঁটে এক চিলতি হাসি।সে বললো,” আমি বুঝতে পেরেছি।সমস্যা নেই।শুধু এই মেয়ে ওই মেয়ে টাইপের করে ডাকবেন না।আমার ভালো লাগে না।বাজে লাগে শুনতে।”
আকাশ হেসে বললো,” ওকে বলবো না।বাই দ্যা ওয়ে তুমি কিসে পড়ো??লেখাপড়া করো??”
“ হুম করি।অর্নাস শেষ।”
“ ও তাহলে তো অনেক।তা আর পড়বে না??”
“ পড়বো ভেবেছিলাম।কিন্তু এখন তো থাকারই ঠিক নেই।কি পড়বো।”
“ এভাবে বলার মানে কি??তুমি কি এখানে খারাপ আছো??দেখো এভাবে হার্ট করে কথা বললে আমিও বলতে জানি।আর পড়বে না কেনো।অবশ্যয় পড়বে।আমি সুযোগ করে দিবো।শতো হোক বিয়ে যখন করেছি দায়িত্ব আছে।”
“ আপনি বিয়েটা মানেন??” রূমাশ্রী বাঁকা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।আকাশ কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবে।তারপর মাথা ঝাকিয়ে বললো,” বেশি কথা বলো তুমি।যাও ব্রেকফার্স্ট তৈরি করো।রান্না করতে পারো তুমি??”
“ অবশ্যয় পারি।এবং ভালোই পারি।আমি মার্মা হলেও বাঙ্গালীদের রান্নাও ভালো পারি।”
“ সেটা তো খেলেই বুঝা যাবে।”
“ বুঝিয়ে দিবো।”
রূমাশ্রী সামনে এগিয়ে যায়।হঠাৎ কি মনে করে পিছনে আসে।আকাশ তখন হাসছিলো রূমাশ্রীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে।রূমাশ্রী একটু হেসে উঠে বললো,” আপনার বন্ধুরা খুব ভালো।আর তুতুলও খুব ভালো কিউট একটা মেয়ে।আমি দোয়া করি যাতে ও দ্রুত ভালো হয়ে যায়।আর আর আপনিও খুব ভালো।অনেক ভালো।সাথে আপনার হাসিও দারুন সুন্দর।”
কথাটা বলেই রূমাশ্রী ছুঁটে পালায়।আকাশ কিছুক্ষন থ মেরে তাকিয়ে থাকে।তারপর আবার হাসতে শুরু করলো।শেষের কথাটা তার খুব ভালো লেগেছে।এতো ভালো লাগার কারণ সে জানে না।
________________________
“ জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না।সময়ের কাঁটার সাথে ছুঁটে চলে জীবনের অবাধ্য কাঁটা।ইচ্ছের বিরুদ্ধে সব সময় থাকে এই কাঁটা।সবার জীবন কাঁটার সাথে ছুঁটতে বাধ্য।নদীর জোয়ারের মতো বয়ে চলা এই আনন্দ,বেদনার নামই জীবন।কেউ চাইলেই জীবন থেকে দূরে সরে যেতে পারে না।চাইলেই জীবনটা নিজের মতো করে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে না।জীবনের উপরে কারো হাত থাকে না।বহমার এই পথের পথিক প্রতিটি মানবজাতি।এই দু’মাস সবার জীবন আগের মতো চললেও তুতুলের জীবন সেই একুই জায়গায় থমকে আছে।কিন্তু জীবনের পাতা থেকে সময় গুলো ঠিকই চলে যাচ্ছে।চাইলেও ধরে রাখা সম্ভব না।আমি চেয়েও ধরে রাখতে পারছি না।” আলভী চেয়ারের উপরে বসে কথা গুলো বলছিলো।প্রীতি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো।এবার সে একটু ভারী গলায় বললো,” তুতুলের সাথে তোমাদের কারো রক্ত মিলেনি কেনো?? জানতে পারি?আসলে নরমালি এমন খুব কম হয়।”
আলভী থমথমে মুখ করে বসে থাকে।প্রীতির প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়না সে।প্রীতি বুঝতে পারে এখানে সমস্যা আছে।সে খুব পার্সোনাল কথা জিজ্ঞেস করে ফেলেছে।কথা ঘুরিয়ে প্রীতি বললো,” তুমি আমাকে প্রথম দেখায় চিনতে পেরেছিলে??”
আলভী নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,” না।তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো।তখন অনেক ছোট ছিলে।”
“ মোটেও না।আমি তখনো বড় ছিলাম।উল্টো তুমি বুড়া হয়ে গেছো।দাড়ি টারি রেখে।”
প্রীতি হাসলো।আলভী হাসলো না।একা হাসা অদ্ভুত ব্যাপার।তাই প্রীতি হাসি থামিয়ে বললো,” আমি প্রথমে চিনতে পারিনি।থাপ্পড় খাওয়ার পরে চিনতে পেরেছি।”
“ পরের বার থাপ্পড় খাবে বলায় চিনেছি।এটা তুমিই??”
“ তোমার মনে আছে আমার কথা??”প্রীতির কন্ঠে উদ্বেগ।আলভী এবার হাসলো।বললো,” মনে থাকবে না কেনো??সেই ক্লাস নাইন থেকে পিছনে পড়ে ছিলে।ইন্টারে এসে থাপ্পড় খেয়েছো।জীবনে প্রথম কোনো মেয়েকে থাপ্পড় মেরেছি।মনে থাকবে না কেনো তার কথা।”
“ আমি এখনো আগের কথায় আছি আলভী।”
আলভী চমকে একবার তাকালো।তারপর চোখ ফিরেয়ে বললো,” পাগলামু আবার জেগে উঠেছে দেখছি।তখনো বলেছি হবে না।এখনো বলছি হবে না।”
“ তখন তুমি বলেছিলে সেই সময়টা প্রেম করার বয়স নয়।এখন কেনো না বলছো??”
“ কারণ এখন আর প্রেম করার বয়স নেই।আর তুমি এখন ডাক্তার।একজন ডাক্তারের পাশে ডাক্তারকেই মানায়।ব্যাংকারের সাথে ব্যাংকারকে।ছোট বেলার আবেগ যে কিভাবে এখনো তোমার মাথায় রয়ে গেছে আমি বুঝতে পারি না।”
“ এটা আবেগ না।”
আলভী প্রীতির বরাবর তাকায়।সহজ ভাবে প্রশ্ন করে,” তাহলে এটা কি??”
“ ভ
প্রীতি কথা শেষ করতে পারলো না।তার আগেই নার্স হন্তদন্ত হয়ে ছুঁটে আসলো।প্রীতিকে কিছু একটা বললো।নার্সের সাথে প্রীতিও ছুঁটে গেলো।তুতুল রেস্পন্স করছে।প্রীতি দৌড়ে তার বাবাকে ডেকে নিয়ে এলো।তুতুলের ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরছে।হাত নাড়ছে।পা নাড়ছে।আলভী খুশিতে পাগল প্রায়।বাবা মাকে কল করে সে হসপিটালে আসতে বলে।সবাইকে ফোন করে জানায়।তুতুল যখন চোখজোড়া খুলে তাকায় সব কিছু তখন নতুন নতুন মনে হতে লাগলো।এই আলো ,এই মৃদূ বাতাস,মানুষজন সব কিছুর মাঝেই সে নতুনত্ব খুঁজে পাচ্ছিলো।যেনো সে নতুন ভাবে জন্মেছে।প্রথমে সে কিছুক্ষণ সবার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো।ডাঃ ইমরান ভেবেছিলো তুতুলের কিছুই মনে থাকবে না।কিন্তু এমন কিছুই হলো না।তুতুল সবাইকে চিনতে পেরেছিলো।একটু একটু কথাও বলেছিলো।কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পরে সে আবার সেন্স হারায়।ইমরান সাহেব সবাইকে শান্ত করে বললেন,” ভয় পাওয়ার কিছু নেই।দু’টো মাস তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ,শরীরের টিস্যু ,কোষ নিজেদের কাজ বন্ধ করে রেখেছিলো।তাই হঠাৎ করে সব এক সাথে কাজ করায় এমন হচ্ছে।সুস্থ হতে আরো কিছুসময় লাগবে।
______________________
রাত তখন পৌনে তিনটা বাজে।তুতুল চোখ পিটপিট করে নিজেকে আবিষ্কার করলো হসপিটালের বেডে।ধীরে ধীরে মনে করতে শুরু করলো পুরোনো কথা।সে তো পাহাড় থেকে ছিটকে পড়েছিলো।সেখান থেকে পড়লে তো বাচাঁর কথা না।সে বেঁচে আছে??আগের বার অনেক মানুষ দেখেছিলো।এখন কেউ নেই কেনো??তুতুল অবাক হয়ে ভাবে এটা কবরের হসপিটাল?আচ্ছা কবরে কি হসপিটাল আছে??এতো সুন্দর সাদা ফকফকে।কিন্তু কবর তো অন্ধকার,তাহলে এই হালকা আলো কোথা থেকে আসছে?তুতুল মাথায় ভার ভার অনুভব করে।উঠে বসতে চায়।হঠাৎ বুঝতে পারে কেউ তাকে খুব যত্নে জড়িয়ে রেখেছে।কে??কে হতে পারে??তুতুল চোখ নিচের দিকে দিয়ে দেখতে চায়।মাথার সিল্কি চুল চোখে পড়ে।কে হতে পারে??কোনো ছেলে??কোন ছেলে হবে??আলভী ভাইয়া??সে তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবে কেনো??কিন্তু ভাইয়ার গায়ের গন্ধ তো এমন না মনে হচ্ছে??সে কি সব ভুলে গেছে??এটাই তার ভাইয়া??কালো শার্টের হাতা দেখে তুতুল ভড়কায়।হকচকিয়ে হাতের দিকে তাকায় ভালো করে।বুঝতে চেষ্টা করে।কে এই সুদর্শন হাতের অধিকারী?হঠাৎ মনে পড়তেই চমকায়।ভাবতেই সারা অঙ্গ কাঁপনি দিয়ে উঠে।বুকের শব্দদয় বাড়ে।পুরুষের চাইতে নারীদের হৃৎপিন্ড না কি বেশি শব্দ করে।তুতুলের তা মনে হয় না।তার মনে হচ্ছে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে বলেই তার হৃৎপিন্ড উঠে পড়ে লাগছে ধুকপুক শব্দ করার জন্য।শরীরের উত্তাপ বাড়ে।বুকের ধুকপুকিন শব্দ বাড়ে।রক্ত গরম হয়।কোমড়ে একটা হাতের স্পর্শ অনুভব করে।কোমড় জড়িয়ে আছে!!তুতুলের নিঃশ্বাস দ্রুত বারে।দম বন্ধ হচ্ছে অদ্ভুত অনুভুতিতে।সে সব অনুভব করতে পারছে।শরীরে শিরশির করছে গরম রক্ত।মনে পড়ে আগের কথা।বিয়ে!!হ্যা তার সাথে তো রিঝ ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে।মানে সে বউ!!!তুতুল আরো চমকে উঠে।হাঁসফাঁস করে।বান্দরবান,পাহাড়,সবুজের মাঝে বিয়ে,রাজন,পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়া!সব মুহূর্তের মধ্যে চোখের পর্দায় ভেসে উঠে।তুতুল ভাবতে পারছে না সে বেঁচে আছে।সে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ থ বনে যায়।তার মনে পড়ে রিঝ তার হাত ধরে ছিলো।তারপর কি হয়েছিলো??সে পড়ে যাওয়ার পরে কি হয়েছিলো??কোথায় তারা এখন??দুজনেই কি মৃত??কিন্তু কিছুক্ষণ আগে সে পরিবারের সবাইকে দেখেছিলো।তাহলে সবাই কই??তুতুল আতঙ্কিত হয়ে নড়াচড়া করে।বুকের তুমুল শব্দ,শরীরের কাঁপা অনুভুতি আর নড়াচড়ায় রিঝের ঘুম ছুটে যায়।দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে বেডের কোনা ঘেঁষে শুয়ে ছিলো সে।সারা রাত নির্ঘুমে কাটিয়ে দিয়েছে সে।চিন্তা!!খুব চিন্তা হচ্ছিলো।ভয় সাথে যোগ দিয়ে তার অবস্থা খারাপ হয়ে উঠে ছিলো।তুতুলের জ্ঞান ফিরে ছিলো।ভাবতেই মনে হচ্ছে জীবন ফিরে এসেছে।কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছিলো না।প্রীতি তাকে ফোন করে জানিয়েছিলো।প্রতিরাতের মতো আজ আসেনি সে।আগে এসেছিলো।কিন্তু আলভীর জন্য ভেতরে আসতে পারছিলোনা।যখনই আলভী বাহিরে চলে গেলো তখন থেকেই সে এখানে।দীর্ঘ তিনটি মাস পরে মনে হচ্ছে সে জীবিত।কিন্তু জ্ঞান ফিরার পরে তুতুল অবার যখন সেন্সলেস হয়ে পড়ে তখন খুব ভয় পেয়েছিলো সে।রাতের দিকে তুতুলের শরীরে জ্বর ছিলো খুব তাই নিজেই জড়িয়ে ঘুমিয়েছে।অদ্ভুত এক শান্তি প্রিয় ঘুম হয়েছে তার।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কে নাড়াচ্ছে তাকে??রিঝ মাথা তুলে তুতুলের মুখের দিকে দেখে।তুতুল চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।চোখে চোখ পড়তেই সরিয়ে নেয় রিঝ।উত্তেজিত হয়ে আগের মতো শুয়ে থেকে বললো,
“ তুমি ঠিক আছো??তুমি সব অনুভব করতে পারছো??কোনো সমস্যা হচ্ছে??ডাক্তার ডাকবো??সব ঠিক ঠাকতো??
রিঝের প্রশ্নে তুতুল বিস্মিত হয়ে বললো,
“ আস্তে আস্তে।আপনার মত এমন দামড়া একটা ছেলে গায়ের উপড়ে পরে থাকলে অবশ্যই ব্যথা লাগার কথা।তাই নয় কি??”
“ ও স্যরি স্যরি।”
রিঝ তুতুলের উপর থেকে সরে যেতে চায়।কিন্তু হুট করেই আবার গায়ের উপরে পড়ে যায়।তুতুল মাথা একটু দুরে নিয়ে সংযোত চোখে তাকায়।রিঝও তাকায়।দুজনেই কিছুসময় বিভোর হয়ে তাকিয়ে থাকে।তুতুলের কোঁকড়া চুলগুলো চোখের পাশে এসে পড়েছে।রিঝ হাত বাড়ায়।তুতুল মাথা আরো পিছিয়ে নেয়।রিঝ ঠোঁট কামড়ে হাসে,
“ মাথা সরাচ্ছো কেনো??”
“ আপনি সরছেন না কেনো??” তুতুল মুখের ভেতরে রেখে কথাটা বলে।
রিঝ ভ্রু কুঁচকায়।হঠাৎ শাসনের সুর তুলে বললো,
“ বেশি কথা বলতে বলেছে কে??চুপ থাকবা একদম।যাকে বলে বোবার মত।যেমনটা এই দু’মাস ছিলে।”
“ মানে কি?আমি এই দুই মাস কোথায় ছিলাম??”
“ এখানেই ছিলে।কোমায়।”
“ কি??” তুতুল চিৎকার করে উঠে।রিঝের কান ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম।রিঝ দু হাতে ভড় দিয়ে তুতুলের মুখের ঝুঁকে বললো,” চিৎকার করছো কেনো??”
“ আমি এতো দিন এখানে??কিভাব??”
তুতুল উদ্বেগী হয়ে উঠে।রিঝ নিজের হাতের তালুতে তুতুলের মুখটা নিয়ে বললো,” সব ঠিক আছে।তুমি ভালো আছো।যা হয়ে গেছে শেষ।কুল।”
রিঝ মুখটা এগিয়ে নিতেই তুতুল অবাক হয়ে মাথা সরিয়ে নেয়।রিঝ এক হাতে থুতনি টেনে তুতুলের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।ঠান্ডা ঠোঁটের কোমল স্পর্শে শরীরের সর্বাঙ্গ শিরশির করে কেঁপে উঠে।উষ্ণ স্রত ছড়িয়ে পরে অঙ্গ অঙ্গ।কাণায় কাণায় ভরে উঠে উষ্ণতায়।পায়ের তালু শীতল হয়ে উঠে।তুতুল বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকে।সে স্তব্ধ।রিঝ ঠোঁট উঠায় না।চোখের নোনা জল তুতুলের গালে পড়ে।তুতুল অনুভব করছে সেই পানি গাল বেয়ে পড়ছে।রঞ্জে রঞ্জে অদ্ভুত অনুভুতির জন্ম দিচ্ছে।হুট করেই রিঝ নিয়ন্ত্রন হারায়।দু’হাতে তুতুলকে জড়িয়ে ধরতে চায়।তুতুল ব্যথা পায়।কিন্তু কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে সে নেই।কি হচ্ছে তার সাথে।সে জানে না।এমন অনুভুতি তার আগে কখনো হয় নি।রিঝের স্পর্শ একদম অন্যরকম।কেনো??আজ সে রিঝের বউ বলে??শরীর জুড়ে পবিত্রতা ছড়িয়ে পড়ছে।রিঝ হাতের বাধন আরো একটু শক্ত করে।ছেড়ে দিলেই যেনো হারিয়ে যাবে!তুতুল আর অবাক হতে পারছে না।রিঝ এমন করছে কেনো??এতো সিরিয়েস!!অনেক শক্ত করে জড়িয়ে নিয়েছে রিঝ।তুতুল এবার অনেক ব্যথা পাচ্ছে।মৃদূ শব্দ করে সে বললো,
“ আহ্ রিঝ ভাই এমন করছেন কেনো??হাড্ডি সব গুড়ো হয়ে যাবে তো।”
কথাটা কানে যেতেই লাফিয়ে উঠে রিঝ।উত্তেজিত হয়ে বললো,
“ স্যরি।ডাক্তারকে ডাকছি।তুমি অনেক ব্যথা পেয়েছো তাই না??সরি।”
রিঝ দ্রুত বেরিয়ে যেতে নেয়।তুতুল হাত টেনে ধরে।বিস্মিত গলায় বলে,
“ এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।বাবা আম্মু ভাইয়া সবাই কোথায়??”
“ আছে।সবাই আছে।কিন্তু এখন তো অনেক রাত।তাই তাদের দেখছো না।সকালে সবাই আসবে।”
“ আপনি এতো সিরিয়াস কেনো হচ্ছেন??”
“ কারণ তুমি আমার বউ!!”
“ ওসব এখনো আপনার মাথায় আছে??আমি তো ভেবেছি আপনি সব ভুলে গেছেন।
“ পাগল মনে হয়??”
“ না??ক”
তুতুলের কথার মাঝেই রিঝ আবার কপালে চুমু বসিয়ে দেয়।হতবম্ভ গলায় তুতুল বলল,
“ ছিঃ রিঝ ভাই এমন বাচ্চাদের মতো চুমু দিচ্ছেন কেনো??পাগল টাগল হয়ে গেলেন না কি??”
রিঝ হাসলো।তুতুল ভ্রু তুলে তাকিয়ে আছে।রিঝ সহজ গলায় বলল,
“ ওকে বড়দের মতো চুমু দি??” রিঝ ভ্রু নাচায়।তুতুল আকাশ থেকে পড়ার মতো করে তাকায়।চোখ বড় করে নেয় সে।ঝাঁঝালো গলায় বলে,
“ পাগল হলেন না কি??আপনার স্মৃতি শক্তি চলে গেছে??”
“ না সব ঠিক আছে।এই যে আমি তোমাকে চিনতে পারছি।বড়দের মতো চ”
“ এই এই এসব বাজে কথা বলবেন না।ছিঃ আপনি আসল রিঝ ভাইয়া তো??আমার শতভাগ সন্দেহ আছে।আপনি পাগলের মতো করছেন।”
“ পাগলের মতো কই করলাম?বউকে চুমু দিয়েছি,দিতে চাইছি।এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?এটা তো ভালো।”
“ ওয়েট ওয়েট আপনি আমাকে সত্যি সত্যি বউ ভাবছেন না তো??হায় আল্লাহ্!!দেখেন ওই বিয়ে পুরাই মিথ্যা।ভুলে যান।আর আপনি নিজেও তো মানেন না।তাহলে এমন আজগোবি কাজ করছেন কেনো??”
“ কে বললো আমি মানি না?তোমার স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে বুঝি বউ পাখি??কি বলেছিলাম শেষের দিকে?যা বলেছি সত্যি বলেছি।মনে পড়ছেনা বুঝি??”
রিঝের কথা শুনে তুতুলের মাথা ঘুড়ছে।তুতুলের মাথা আরো ঘুরিয়ে দিয়ে রিঝ বলল,
“ তুমি আমার বউ।এটা শুধু মানি না মনে প্রানে বিশ্বাসও করি।”
“ মাথা খারাপ হয়ে গেলো রিঝ ভাই আপনার??”
“ তুমি যা ভাবার ভাবতে পারো।”
তুতুল উঠে বসতে চায়।রিঝ বাহুতে হাত রাখে।তুতুল ত্যাড়া চোখে তাকায়।রিঝ পাত্তাই দেয় না।চেপে শুয়ে দেয়।বলে,” সবাইকে কখন বিয়ের খবর দিলে ভালো হয়।সকালে না এই রাতেই।রাতে দিলে ইন্টেরেস্টিং হবে।কি বলো??তুতুল রাগি কন্ঠে বললো,
“ ভুলেও না।বাবা আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে।”
“ তুমি তো বাসার বাহিরেই আছো।”
“ আরে একতরফা বিয়ে হয় না কি??কেউ জানে না।এই বিয়ে মানা যায় না।” তুতুল নিজের আঙ্গুল কামড়ে ধরে।
রিঝ শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকালো।কন্ঠে শীতলতা মিশিয়ে বললো,“ প্রেম ভালোবাসা একতরফা হয়।কিন্তু বিয়ে কখনোই একতরফা হয় না।সবার যেমন নিজস্ব মতামত থাকে সে হিসেবে সবাই নাই মানতে পারে এতে আমার কিছু যায় আসে না।আমি এই মুহূর্ত থেকে মানছি তুমিই আমার একমাত্র বউ।না আর কেউ ছিলো , না আর কেউ থাকবে।”

রিঝ দ্রুত পায়ে রুম ত্যাগ করে।তুতুল চোখ বড় বড় করে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।সত্যিই কি পাগল হয়ে গেলো না কি??পরক্ষনেই মনে পরে শেষের কথা গুলো।পড়ে যাওয়ার সময় রিঝ যা যা বলেছিলো।সে তুতুলকে ভালোবাসে!!তুতুল গোলোকধাঁধায় ফাঁসে।সব ভেবে তার অদ্ভুত লাগছে!তার উত্তর কি হবে??কি হওয়া উঁচিত সে জানেনা।কিন্তু সবাই জানলে কি করবে??সেটা ভেবেই তার মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে।তুতুল চিন্তিত মুখ করে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।
_______________________
#চলবে…………
এই গল্পে অনের গুলো গল্প হবে।অনেক গুলো জুটি হবে।নামের সাথে মিল রেখেই শেষ করা হবে।তাই আগে থেকে শেষ কেমন হবে চিন্তা করা উঁচিত না।
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
_______________________

#চলবে…………
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here