#কৃষ্ণবতীর_মায়ায়
#পর্ব_৫
#লেখিকা_সাদিয়া_জান্নাত_সর্মি
হ্যা বলে দিয়েছে। তুই কেন করলি এমন টা?তোর শত্রুতা তো আমার সাথে, তুই আমার কি ক্ষতি করবি কর কিন্তু আমার মেয়ের জীবন টা নষ্ট করে দিলি কেন?
তসলিম আহমেদ হাসতে হাসতে বলল,
তোর কি আমাকে বোকা মনে হয় আমিন? আমি জানি তোর দুর্বলতা হচ্ছে তোর মেয়ে নীর, তোকে কষ্ট দিলে তুই যতো টা না কষ্ট পাবি তার থেকে বেশি কষ্ট পাবি নীর কে কষ্ট দিলে।তাই আমি মেইন জায়গাটা তে আঘাত করেছি।
আমিন চৌধুরী বুঝতে পারলেন নীর কে বোনের বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে এখন কতো বড় একটা ভুল করেছেন।নীর কে ওনার এক্ষুনি আনতে যেতে হবে নাহলে তসলিম নীরের যেকোনো সময় ক্ষতি করতে পারে যেহেতু উনি তসলিমের আসল রুপ জেনে গেছেন। আমিন চৌধুরী কে চুপ করে থাকতে দেখে তসলিম আহমেদ প্রশ্ন করলেন,,
কি হলো আমিন, তুই চুপ কেন?কি ভাবছিস তুই এতো সহজে ছাড় পেয়ে যাবি আমার হাত থেকে। ভুলে যাস না পাপ বাপকেও ছাড়ে না,তোর পাপের শাস্তি তোর মেয়ে পাবে এবার।আর আমি জানতাম আয়ান মুখ বেশিদিন বন্ধ রাখতে পারবে না তাই ওর পরিবার কে আজই ছেড়ে দিয়েছি আমি।
আমিন চৌধুরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
তুই ছেড়ে দিয়েছিস? কিন্তু আয়ান তো বলেছে তুই ওদেরকে তোর কাছে রেখেছিস।
তোর মাথায় সত্যিই কোন বুদ্ধি নেই দেখছি। আমি কি এতোই বোকা নাকি যে ওদের কে আবার আয়ানের কাছে পাঠিয়ে দেবো? আমি তো ওদের কে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি, কি করবো ওদের ছেড়ে দিলে ওরা পুলিশ কে সবকিছু বলে দেবে। এসব বলেই তসলিম আহমেদ জোরে জোরে হাসতে লাগলেন।আমিন চৌধুরী তাড়াতাড়ি করে ফোন কেটে দিয়ে অফিস থেকে বোনের বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন।
_______________________________
বাগানের বেঞ্চে চুপচাপ বসে আছে নীর, একটু আগেই বাগানে এসেছে সে। কেমন জানি লাগছে তার, মনে হচ্ছে খুব আপন কেউ যেন হারিয়ে গেছে তার জীবন থেকে। বিস্বাদ মুখে বসে রইলো সে,নীর কে বাগানে বসে থাকতে দেখে ইয়াদ আবার এলো নীরের কাছে। এসে ওর পাশে বসল,নীরের দিকে তাকালো ইয়াদ।নীর কালো হলেও অদ্ভুত একটা মায়া কাজ করছে নীরের মুখে, তখন ভালো করে খেয়াল করে নি ইয়াদ। এখন মনে হচ্ছে কোন মায়াবীনি হয়তো তার পাশে বসে আছে, তখনকার ঘটনার জন্য নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে তার, কেন যে কোন কিছু না ভেবে মুখ চালাতে শুরু করে কে জানে।ইয়াদ কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীর অবাক হয়ে গেল, পরক্ষনেই রেগে গিয়ে বলল,
এই যে মিস্টার, আপনি আমার পাশে বসে কি করছেন?আশে পাশে কি আর কোথাও জায়গা নেই।
ইয়াদ একটু থতমত খেয়ে বললো, না মানে তুমি একা একা বসে আছো তো তাই তোমার পাশে এসে বসলাম আর কি। তোমার নাম কি?
আমার নাম জেনে আপনি কি করবেন? আপনি এখান থেকে যান।
আরে রাগ করছো কেন? তখন ওইসব বলেছি বলে রেগে আছো তাই তো, আচ্ছা ঠিক আছে আমি সরি বলছি।একচুয়ালি তোমাকে প্রথম দেখলে যে কারোরই এরকম টা মনে হবে তাই আমি বলেছিলাম।সরি এগেইন ওকে?
নীর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, আমার নাম আরাধ্যা চৌধুরী নীর।
ইয়াদ আবার জিজ্ঞেস করল,
তুমি কি করো আই মিন পড়াশোনা করো না কি অন্য কিছু?
নীর কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো, আপনি কি আমার চাকরির ইন্টারভিউ নিচ্ছেন যে এতো প্রশ্ন করছেন?
না মানে তোমার সম্পর্কে কিছু জানতে চাইছি এমনিই।
নীর উত্তর দিলো, আগে পড়াশোনা করতাম, তার পর অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তার পর আর পড়াশোনা করা হয় নি।
ইয়াদ নীরের কথা শুনে একটু অবাক হলো, তাই আবার জিজ্ঞেস করল, বিয়ে হয়ে গিয়েছিল মানে?
মানে টা হচ্ছে আমার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু কালকে আমার হাজব্যান্ড আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিয়েছে।
ইয়াদ কিছু বুঝতে পারলো না, এই মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে এটা ওকে দেখলে বুঝাই যায় না। তার উপর ডির্ভোস ও হয়ে গেছে কিন্তু ওকে কতটা স্বাভাবিক লাগছে, মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি।ইয়াদ কে চুপ থাকতে দেখে নীর জিজ্ঞেস করল, আপনি হয়তো আমার থেকে এই উত্তর আশা করেন নি।
না, তোমাকে দেখে তো বুঝা যাচ্ছে না তাই কিছুটা অবাক লাগছে,আর কিছু না। আচ্ছা আমি এখন যাই, একটা কাজ আছে আমার।
নীর কিছু বললো না,ইয়াদ একবার নীরের দিকে তাকিয়ে চলে গেল।নীর বেঞ্চে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো, আয়ানের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে এখন, মনে হচ্ছে এই আয়ান কে ও সারাজীবনেও ভুলতে পারবে না।
_____________________________
আমিন চৌধুরী হসপিটালে দুই ঘণ্টা ধরে আয়ানের আই সি ইউ এর সামনে পায়চারি করছেন। অফিস থেকে যখন বের হয়ে আমেনা বেগমের বাসার দিকে যাচ্ছিলেন তখন দেখেন রাস্তায় কিছু মানুষের ভিড়।একটু সন্দেহ হলে এগিয়ে গিয়ে দেখেন আয়ান রাস্তায় পড়ে আছে তখন তিনি তাড়াতাড়ি করে ওকে হসপিটালে নিয়ে আসেন।একটু পরেই আই সি ইউ থেকে ডক্টর বের হয়ে এলেন।ডক্টর কে দেখে আমিন চৌধুরী জিজ্ঞাসা করলেন,
আয়ান কেমন আছে এখন,ওর বেশি কিছু হয়নি তো?
ডক্টর আমিন চৌধুরীর প্রশ্ন শুনে চুপ করে রইলেন। তার পর বললেন,পেশেন্টের আপাতত জ্ঞান ফিরেছে। ওনার বেশি কিছু হয়নি বলতে কি উনি আর কখনো হাঁটতে পারবেন না। পায়ের উপর দিয়ে বাস যাওয়ার কারণে পায়ের হাড় ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে,আর মাথায় সামান্য আঘাত লেগেছে ওনার। তবে অল্পদিনেই ঠিক হয়ে যাবে সেটা, মেইন কথা হচ্ছে ওনাকে সারাজীবন হুইল চেয়ারে বসে চলাফেরা করতে হবে নিজের পায়ে আর কখনো হাঁটতে পারবেন না।
(চলবে………….. ইনশাআল্লাহ)