#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_২০
আসসালামু আলাইকুম আমি মেহমেত!! নিশানের দিকে এক জন সুদর্শন পুরুষ ক্লাসের সবার সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে কথা টা বলল মেহমেত!!
সৌজন্যে মূলক হাসি দিয়ে নিশান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,, ওয়ালাইকুম আসসালাম আমি নিশান।
মেহমেত মুচকি হাসলো,, তার পর অপরাধীদের চোখ নিচু করে বললেন,, আমি খুব দুঃখিত নিশান আমার ফ্রেন্ডসরা তোমার সাথে ওমন ব্যবহার করার জন্য। ওদের হয়ে আমি তোমার কাছে মাফ চাচ্ছি,প্লিজ কিছু মনে করো না।আরে কি বলছো কি?? আমি কিছু মনে করিনি ,,মাফ চাওয়ার প্রয়োজন নেই। মেহমেত পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ৬জন ছেলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,আর কখনো যদি কোন স্টুডেন্ট এর সাথে এমন আচারন করেছো তোমরা!! তাহলে একটারো গাল আস্ত থাকবে না। আমার হাতের পাঁচ আঙুল তোমাদের গালে থাকবে। আরে এতো হাইপার হচ্ছো কেন আমি কিছুই মনে করিনি। নিশান সুন্দর করে হেসে বললেন,,মেহমেত তখন বললো,,,তো আমরা কি বন্ধু হতে পারি?? উৎসুক কন্ঠে নিশান উত্তর দেয় কেন নয় নিশ্চয়ই ।
নিশান কে মেহমেত সেই ৬জন কে দেখিয়ে বলল, আমার ফ্রেন্ডস মানে তোমার ও ফ্রেন্ডস। ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে একে একে এই হলো, আকাশ,মুমিন, রায়হান, মিনাল,শান্তা,সামিরা। সবাই শুকনো হেসে নিশানের দিকে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডসাব করছে। মিনাল এর দিকে নিশান হাত বাড়িয়ে দেয় মিনাল কিছু ক্ষন নিশানের দিকে তাকিয়ে হ্যান্ডসাব করলো বিরক্ত নিয়ে। শেষে শাহানা দুষ্টুমি করে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, হেই আমি শাহানা আমাকে তো চিনো না,, আমি তোমার ফ্রেন্ড কি হতে পারি,?? নিশান সহ সবাই হেসে দিল। ওদের কথা বলতে বলতে ক্লাসে স্যার ঢুকে পড়লো। সবাই যে যার মত নিজের সিটে বসে পড়লো।
নিশানের বেশ ভালো লাগলো নিজেকে খুব হালকা লাগছে এখন। সে যতখানি নতুন জায়গা বলে ভয় পেয়ে ছিল। যে এখানে বড় বড় ঘরের ছেলে মেয়েরা থাকবে তাদের সাথে তার মত ছেলে কখনো কি মিশতে পারবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে যত টা জটিল মনে করেছিল সব কিছু ততটাও জটিল নয় এই ভার্সিটি।
ক্লাসে স্যার প্রবেশ করে সবার উপরে নজর দিতে লাগল। নিশান কে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তার পর নিশান কে উদ্দেশ্য করে দাঁড়াতে বলল, এই এই ছেলে দাঁড়াও দেখি। নিশান কাচুমাচু করে দাঁড়ালো। এই ছেলে তোমার নাম কি??
নিশান নতস্বরে জবাব দেয়,,জ্বি আমার নাম নিশান আহমেদ স্যার। তা ভালো!! এর আগে তো ক্লাসে দেখিনি তোমায়?? স্যার আমি আজই নতুন এসেছি, প্রফেসরের মুখের ভঙ্গিমায় বিরক্ত ভাব নিয়ে এসে বলে। দেখো নিশান এটা একটা ভার্সিটি, এখানে কিছু নিয়ম আছে,,এই ধরনের নোংরা পোশাক পড়ে ক্লাসে আর আসবে না তুমি। পরিস্কার পোশাক পরিধান আসার চেষ্টা করবে। বুঝতে পেরেছো??
নিশান মাথা নিচু করে নেয়। অপমান বোধে তার ভিতর টা ভেঙে আসছে ,,মলিন মুখে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল নিশান। শাহানার মোটেও স্যারের এই ব্যবহার টা ভালো লাগলো না ।
একটু পর প্রফেসর আবার নিশান কে আগা গোড়া দেখে বলল,,তা এতো বড় ভার্সিটিতে পড়া শুনা করতে এসেছো,,, পড়া শুনার খরচ বহন করতে পারবে তো?? মেহমেত হাত উঠালো এবং বলল তার কিছু বলার আছে,, প্রফেসর কপালে ভাঁজ টেনে বললেন,কিহ বলার আছে দাঁড়াও। মেহমেত উঠে দাঁড়ালো তারপর বললেন don’t judge a book by its cover.. মেহমেতের কথায় প্রফেসর বিরক্ত হলেন তা তার চেহারাতেই স্পষ্ট। নিশান তখন শুকনো হেসে বললেন,স্যার এখানে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে এসেছি ।
তখন শাহানা বসে থেকেই বলল,, স্যার আপনার প্রশ্ন শেষ হলে আমরা কি ক্লাস শুরু করতে পারি??? প্রফেসর তখন হাত দিয়ে ইশারা করেই মেহমেত আর নিশান কে বসতে বললেন। প্রফেসর বিড়বিড় করতে করতে বই বের করছে। কি দেখে যে সবাই কে স্কলার শীপ দেয় এখন বুঝিনা।
ক্লাস টাইম শেষ হতেই যে যার মত বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়ে। মেহমেত আর শাহানা কে নিশান ছোট করে ধন্যবাদ দেয় প্রথম ক্লাসে তাকে সাপোর্ট করার জন্য। তখন শাহানা কমড়ে হাত দিয়ে বলে,উফফ তুমি এমন কেন?? কেউ তোমায় অপমান করলে তার তুমি প্রতিবাদ কেন করো না?? মেহমেত তখন শাহানার কথায় সহমত দিয়ে বলে হ্যাঁ নিশান তোমার কিন্তু প্রতিবাদী হওয়া উচিত। কেননা এই সমাজে গায়ের জোর না দেখালে সবাই তোমায় পিঁপড়ার মত পিষতে চাইবে। নিশান হাসলো। তার পর বললেন, আমি কি তা সময় বলে দিবে,সব সময় প্রতিবাদী না হলেও চলবে আমার চুপ করে থাকা টাকে যারা দূর্বলতা ভাবলে তারা নিজেরাই এক সময় পরিচয় পেয়ে যাবে আমার যে আমার চুপ করে থাকাটা দূর্বলতা নয় এটাই আমার শক্তি। আমি যেমন তা মেনে নিতে এখান কার সবার কষ্ট হবে তা আমি জানতাম। কিন্তু আমার পোশাক কে আমি অপছন্দ করিনা। আমার বাবা আমাকে তার আয় থেকে যা নিয়ে দিয়েছে এতে আমি খুশি। শাহানা অবাক চোখে নিশানের দিকে তাকিয়ে বললেন তা বুঝলাম তোমার বাবা কি করে?? নিশান গর্বের সাথে বললেন, আমার বাবা এক জন কৃষক। শাহানা অবাক হলো। তার পর বলল ওহহ আচ্ছা। নিশান তখন পাল্টা প্রশ্ন করলেন, তোমার বাবা কি করে?? আমার বাবা পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আর মেহমেতের বাবা?? মেহমেতের বাবা হলেন,AHK কম্পানির মালিক। নিশান অবাক চোখে তাকালো মেহমেতের দিকে। এতো বড় ঘরের ছেলে হয়েও তার মত দরিদ্র ঘরের ছেলের সাথে কত সুন্দর করে কথা বলে। প্রকৃত ধনী কখনো যে অহংকারী হয় না তা মেহমেত কে দেখে সেদিন বুঝেছিল নিশান।
মেহমেত আর শাহানা বাসায় চলে যায়। আর নিশান মেসের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরে।
অনেক কয়দিন ধরেই প্রথম ক্লাসের প্রফেসর নিশান কে যেকোন বিষয় নিয়েই অপমান করতে শুরু করে দেয়। নিশান মাথা নিচু করে সব মুখ বুজে সহ্য করে নেই। আর বাকি স্টুডেন্টরা হেসেই গুটিগুটি ।
মাঝে মাঝে শাহানা আর মেহমেত প্রফেসরের কথার উত্তর দেয়। আবার মাঝে মাঝে নিশান বারন করতে থাকে তাদের কিছু না বলতে।
নিশান আজ ভার্সিটিতে এসে মেহমেত আর শাহানা কাউকেই দেখলো না। পুরো ক্যাম্পাসে খুঁজেও পেল না। অগত্যা নিশান ক্লাসে চলে যায়।
প্রথম ক্লাস শেষ হয়ে যায়। তবুও কেউ আসলো না। নিশান দ্বিতীয় ক্লাসে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো। দ্বিতীয় ক্লাস শেষ হয়েছে। তৃতীয় ক্লাসের স্যার এখানো ক্লাসে আসেনি। নিশান বইয়ের পাতায় মুখ গুজে দিয়ে আছে। তখনি শাহানা এসে নিশান কে ডাকে। শাহানার গলার আওয়াজ পেয়ে বই থেকে মুখ তুলে তাকালো নিশান। শাহানাকে দেখে বেশ খুশি খুশি লাগছে, নিশান শাহানা কে দেখে জিজ্ঞেস করে কেবল কোথায় থেকে আসলে?? শাহানা নিশানের কথার উত্তর না দিয়ে,,হাত ধরে টেনে বলে উঠো বাহিরে চলো তো। নিশান ভ্রু কুঁচকে বললেন, কেন কোথায় যাবো?? ক্লাস শুরু হবে এখন তুমি ও বসো স্যার আসবে। মিস্টার বিদ্যা সাগর অনেক হয়েছে তোমার জ্ঞান অর্জন চলো তো আমার সাথে এখন। শাহানা নিশান কে হাত ধরে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মেহমেত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাথে মিনাল,,শাহানা নিশানের হাত ধরে আছে দেখে মিনালের চোয়াল নিমিষেই শক্ত হয়ে যায়। চোখে রাগ সুস্পষ্ট ,,মেহমেত চল তারাতারি গাড়ি স্টার্ট কর। এই কোথায় যাচ্ছি আমরা?? ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি আমরা মিস্টার বিদ্যা সাগর,!!! মানে আমি কোথাও যাচ্ছি না। একটা ক্লাস মিস মানে এক চ্যাপ্টার মিস হয়ে যাওয়া। মেহমেত তখন চোখ গরম করে বলে হয়ছে হয়ছে,সব সময় পড়া শুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই জীবন চলবে নাকি মাঝে মাঝে রিফ্রেশ রিং ও দরকার। কিন্তু আমরা যাবো কোথায়??? আগে গাড়িতে উঠে বসো। মেহমেত আর মিনাল সামনে সিটে বসে আর নিশান আর শাহানা পিছনের সিটে। মিনাল ড্রাইভ করছে। তার গা রাগে রিরি করছে। কিন্তু কেউ তার রাগ বুঝতে পারলো না। নিশানের দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলো শাহানা। নিশান প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি তে দেখছে ব্যাগ টাকে তার পর শাহানা কে বলছে কি আছে এর ভিতরে?? মেহমেত সামনে থেকে উত্তর দেয় খুলেই দেখ কি আছে?? নিশান ব্যাগ খুলে দেখে বেশ কয়েক টা শার্ট আছে এর মধ্যে। ব্যাগ টা নিশান ফেরত দিয়ে দিল শাহানাকে । আমি নিতে পারবো না এসব । ।।
মেহমেত তখন মিনাল কে গাড়ি থামাতে বলে। মিনাল গাড়ি থামালে মেহমেত নেমে পিছনের সিটে গিয়ে বসে । এখন নিশান মাঝখানে এক সাইটে মেহমেত আরেক সাইটে শাহানা। মেহমেত নিশান কে চেপে ধরলো, তার পর শাহানা নিশানের গায়ের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে। নিশান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখছে এক বার শাহানাকে তার পর যেই চিৎকার করতে যাবে মেহমেত আরেক হাত দিয়ে নিশানের মুখ চেপে ধরে। নিশানের শার্ট পুরোটা খুলে হো হো করে হেসে উঠে সবাই। নিশান অসহায় বাচ্চাদের মত হাত পা ছুটাছুটি করছে। মেহমেত নিশান কে ছেড়ে দিল। তখনি নিশান রাগ মাখা কন্ঠে বলে কি করছো টা কি তোমরা??? শাহানা দুষ্টুমি ভঙ্গিমা করে বলে,,তোমাকে রেপ করা হবে আজ নিশান বাবু😂😂
নিশান চোখ দুটো বড় বড় করে বলে আমি বাড়ি যাবো!! বাবা আমায় বাঁচাও ☹️
শাহানা আর মেহমেত নিশানের কথায় হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।মিনাল নিজেও হেসে ফেলে এবার। নিশান আবার চিৎকার দিতে যাবে তখনই শাহানা নিশানের সামনে ঝুঁকে মুখ চেপে ধরে, নিশানের চোখে ভয় দেখতে পাচ্ছে শাহানা,,ফিক করে হেসে দিয়ে বলে এই চুপ আমরা মজা করছি। এতো ভীতু কেন তুমি হ্যাঁ?? নিশানের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেই কথা গুলো বলছে সে। কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে নিশানের এলোমেলো দৃষ্টিতে। শাহানা নিশান কে ছেড়ে দিলো নিজের সিটে ভালো ভাবে বসলো সে । নিশান হাত দিয়ে শরীর ঢাকার বৃথা চেষ্টা করছে। মেহমেত হেসে ব্যাগ থেকে একটা শার্ট বের করে দিয়ে বলল ধর পড়ে নে। অগত্যা নিশান শার্ট টা পানশে মুখে পড়ে নিলো।
মিনাল লুকিং গ্লাসে এক বার শাহানার দিকে তাকাচ্ছে এক বার নিশানের দিকে তাকাচ্ছে।
গাড়ি প্রায় ঘন্টা খানেক পর এসে থামলো একটা বড় পার্কে। আজ সারাদিন ঘুরবো আমরা!! এটা আমাদের প্লান বুঝলেন বিদ্যা সাগর!!
সবাই নাগর দোলায় উঠার জন্য লাইন ধরে আছে কিন্তু নিশান নাগরদোলায় উঠতে নারাজ। তার মতে নাগর দোলায় উঠলে সে হার্ট অ্যাটাকে মরে যাবে। মেহমেত আর শাহানা মুখ চাওয়া চায়ি করছে । গাড়িতে যেমন চেপে ধরে শার্ট খুলেছিল। ঠিক তেমন ভাবে এখনো তারা নিশান কে জোর করে নাগরদোলা উঠানোর কথা ভাবছে। নিশান তাদের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে দিলো এক দৌড়। মেহমেত আর শাহানা নিশানের পিছনে ছুটতে শুরু করছে।
নাগর দোলায় উঠেছে তারা,, নিশান আর শাহানা এক সাইটে আর মেহমেত মিনাল এক সাইটে। নিশানের অবস্থা এখন থেকেই খারাপ। বার বার নিজেকেই বকাবকি করছে সে শাহানার সাথে আসার জন্য। নাগর দোলা ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে । নিশান চিৎকার করছে ওরে বাবারে বাঁচাও আমারে। ভয়ের চোটে শাহানা কে জরিয়ে ধরেছে সে। নিশানের এমন আচারনে হতভম্ব হয়ে যায় শাহানা। শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে তার। অদ্ভুত এক শিহরণ মনের মধ্যে ছেঁকে ধরেছে।
চলবে ____????
এই পর্যন্ত যারা পড়ছেন তারা অবশ্যই কমেন্ট করবেন।