ক্যাসিনো পর্ব -১৯

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)

#পর্ব_১৯

রহস্য উন্মোচন শুরু

একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে,,নিশান।
বাবা একজন কৃষক,মা গৃহিণী। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করছে সে। স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে এসেছিল ঢাবিতে। আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে। পড়া শুনা করে ভালো কোন চাকরি করবে মা বাবার দুঃখ দূর করবে।

২০১২ সাল,,,,

আজ থেকে ৫দিন আগে অনার্স ১ম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু নিশানের আজ প্রথম দিন ঢাবিতে। ঢিলা ঢালা পোশাক পরিধান করেছে। পায়ে সাধারণ জুতা। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। মাথার চুল এলোমেলো।
নতুন জায়গায় খুব অস্বস্তি বোধ করছে। আশেপাশের ছেলে মেয়ে তার দিকে হা করে চেয়ে আছে আর মিটিমিটি হাসছে,, মনে হচ্ছে কোন ফানি দৃশ্য দেখছে তারা।

দুই হাতে ব্যাগ চেপে ধরে, মাথা নিচু করে হাঁটছে সে। কয়েক জন ছেলে আর মেয়ে এক সাথে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করছে। নিশান কে দেখে ভ্রু নাচিয়ে বলল তাদের মধ্যে থেকে একটা মেয়ে বলল, এই দেখ তোরা এক জন মুরগি পেয়েছি আজ। এবার দেখ entertainment কাকে বলে??? বাকি ছেলে মেয়ে গুলো উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো নিশানের দিকে। তার পর একে অপরকে দেখে হাসাহাসি করতে লাগলো। মেয়েটা হাত উচু করে নিশান কে ডাকতে লাগল এই মিস্টার ক্ষ্যাত?? কাম হেয়ার!!

নিশান আশেপাশে চাওয়াচাওয়ি করে দেখতে পেল একটা মেয়ে তার দিকে ডাকছে। নিশান শুকনো একটা ঢোক গিললো। ইশারাই নিশান বুঝাতে চাইলো তাকেই ডাকছে কিনা???

মেয়েটা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে তারাতারি আসতে বলল। নিশান যাবে কি যাবে না এই নিয়ে ভাবনায় পড়ছে। এতো বড় ভার্সিটিতে এর আগে সে পড়েনি। নিজেকে সার্কাসের জুকার মনে হচ্ছে তার। আশেপাশের ছেলে মেয়ে এখনো হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে।
নিশান গুটিগুটি পায়ে হেঁটে গেলো তাদের কাছে। কাছে যেতেই বাকি আর এক জন মেয়ে নিশান কে জিজ্ঞেস করে। কি নাম বাবু তোমার?? কথার অঙ্গ ভঙ্গি তে রসিকতা মিশানো।

নিশান মাথা নিচু করে চশমা ঠিক করে বলে,ইয়ে মানে আমার নাম নিশান আহমেদ।
ওহহ তো কোন ইয়ারে ?? জ্বি অর্নাস ফাস্ট ইয়ারে। ওহহহ,তো এখন থেকে তাহলে সিনিয়র হলাম আমরা তোমার। তাদের মধ্যে থেকে আর একটা ছেলে নিশানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,তাহলে এখন থেকে সিনিয়র দের সম্মান করবে,যখন যে সিনিয়র যা বলবে সব বিনা বাক্যে শুনবে। ঠিক আছে?? এই বলেই সব ছেলে মেয়েরা হাসতে আরম্ভ করলো। নিশানের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে। তবুও নিজেকে সংযত রেখে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। গুড তাহলে এখন সিনিয়র দের জন্য ক্যান্টিন থেকে খাবার নিয়ে আসো যাও। জ্বি ইয়ে মানে ঠিক আছে বলে নিশান চলে যেতে লাগলো। তার পর আবার পিছন ফিরে ছেলেমেয়ে গুলোর কাছে এসে বলে,,ইমে মানে টাকা টা দেন???

আরেক টা ছেলে তখন চোখে মুখে কাঠামো ভাব নিয়ে এসে বলে,কিহ সিনিয়র দের সম্মান করার জন্য তাদের খাওয়াবে তুমি টাকা আমরা কেন দিবো?? বাকি ছেলে মেয়ে হেসে গড়াগড়ি খেয়ে বলে সহমত সহমত।

নিশান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। পকেটে হাত দেয় সারা মাস তাকে চলতে হবে এখন যদি এমন করে তাদের খাওয়ানো হয় তাহলে পরবর্তী তে মাস শেষে বেপাকে পড়তে হবে। ইয়া আল্লাহ কি করবো এখন। কি হলো কি ভাবছো এতো?? যাও গিয়ে ৬টা কোক নিয়ে আসো। নিশান আমতা আমতা করে ভয়ে ভয়ে বলল ঠিক আছে নিয়ে আসছি।
নিশান হাতে ৬টা কোক নিয়ে হেঁটে আসছে। তখন হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে হাতের কোক গুলো পড়ে যায়। নিশান সামনে তাকাতেই দেখে রাগে আগুন হয়ে একটা মেয়ে তার দিকে চেয়ে আছে। শ্যামবর্নের চেহারা। পোশাকে আভিজাত্য,,দেখে মনে হচ্ছে কোন ভালো পরিবারের মেয়ে। নিশান মনে মনে ভাবছে এখনি তার গালে চোর পড়বে। তবুও মাথা নিচু করে বলে।

দুঃখিত ম্যাম আসলে আমি ইচ্ছে করে করিনি। দয়া করে মাফ করে দিবেন। আশেপাশে অনেক ছেলে মেয়ে আছে দয়া করে থাপ্পর মারবেন না। আমি খুব দুঃখিত।
মেয়ে টা নিশানের ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে নিশান কে অবাক করে দিয়ে বলেন। আরে তুমি এতো হাইপার হচ্ছো কেন?? তোমার কোন দোষ নেই মাফ চাওয়ার দরকার নেই । আমি না দেখায় এমন হয়ে গেছে আই এম রিয়ালি সরি। মেয়েটা তারাতারি করে পড়ে থাকা কোক গুলো নিশান কে তুলে দিল।
নিশান মুচকি করে হাসলো। ধন্যবাদ,,
মেয়ে টার ব্যাবহার তার ভালো লাগলো।

নিশান আর মেয়েটা পাশাপাশি হাঁটছেন, নিশান কোন মেয়ের সাথে এতো ক্লোজ হয়ে কখনো হাঁটেনি তাই তার কেমন অস্থির লাগছে। এনি ওয়ে তোমার নাম টা কি জানতে পারি??? জ্বি নিশান আহমেদ। নাইস নেম। নিশানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে‌ মেয়েটা বলে,,
আমার নাম শাহানা মেহতা !! কোন ইয়ারে পড়ছো?? আপনার নাম টাও অনেক সুন্দর,, আমি অনার্স ফাস্ট ইয়ারে। ওয়াও গ্রেট আমি ও । কোন সাবজেক্ট?? জ্বি হিসাব বিজ্ঞান।
আরে বাহ। গুড,,তাহলে ইউ আর ক্লাস মেট নাও,,আর আমি তোমাকে তুমি বলছি আর তুমি আমাকে আপনি কেন বলছো?? ইউ আর ফ্রেন্ডস নাও। নিশান কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। কি করা উচিত তার এখন?? মেয়েটা ভিষন চঞ্চল,, আর মিশুক নাহলে অপরিচিত কাউকে এমন ভাবে ফ্রেন্ডস হতে বলে?? তাও আবার তার মতো আনস্মার্ট ছেলে কে যেখানে অন্যরা তাকে দেখে হাসাহাসি করছে।নিশান মুচকি হেসে বলল আমার সাথে আপনাকে বন্ধুত্ব করতে দেখলে অন্যরা আপনার মজা উরাবে । রিয়ালি?? আবার তুমি আমাকে আপনি বলছো কিন্তু!! আর অন্যরা হাসবে কেন?? সাধারণ হয়ে থাকা তো দোষের নয় । তাই নয় কি ??

নিশানের শেষের কথা টা অসম্ভব ভালো লাগলো। কেউ তো তাকে ভালো চোখে দেখলো। ঠিক আছে বন্ধু হলাম। শাহানা হাস্যোজ্জল মুখ করে বলে গ্রেট,, কথা বলতে বলতে তারা সেই ছেলে মেয়ের কাছে চলে আসলো। নিশান বলল তুমি একটু এখানে দাঁড়াও আমি এগুলো সিনিয়র ভাই আপুদের দিয়ে আসছি। শাহানা সামনে তাকিয়ে বললেন,কারা সিনিয়র?? নিশান চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো ঐ যে উনারা। শাহানা মুহূর্তে মুখ টা ফ্যাকাশে করে বলল,ওরা??
হ্যাঁ উনারা। তুমি দাঁড়াও হ্যাঁ। এই দাঁড়াও দাঁড়াও,,এসব কি ওরা তোমায় নিতে দিয়েছে?? জ্বি। টাকা কি ওরা দিয়েছে?? ইয়ে মানে নাহ।

নিমিষেই শাহানা চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব নিয়ে এসে বলল। আমি ও যাবে চল। এই না না তুমি যেও না। নয়লে ওরা তোমার সাথেও বেয়াদবি করতে পারে।

শাহানা মুচকি হাসলো। ইশ্ কি সেই হাসি,, চিন্তা করো না ওরা আমার কিচ্ছু করবে না। আসো তুমি আমার সাথে।

শাহানা নিশানের সাথে ছেলে মেয়ে গুলোর কাছে গিয়ে সজোরে কোক গুলো একে একে সবার দিকে ছুঁড়ে মারতে লাগলো। তার পর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, তোরা এতো ফকির হয়ে গেছিস যে অন্যের টাকায় কোক খেতে হচ্ছে?? আমাকে বললেই তো টাকা ভিক্ষে দিয়ে দিতাম কোক খাওয়ার জন্য।

নিশান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে এই মেয়ে করছে টা কি সিনিয়র দের সাথে কি কেউ এমন আচারন করে নাকি?? ঐ ছেলে মেয়ে গুলো শাহানার কথায় অপমান বোধ কাজ করতে লাগলো রেগে আগুন হয়ে একটা মেয়ে বলতে লাগলো,, মুখ সামলে কথা বল শাহানা নয়লে অনেক খারাপ হয়ে যাবে!! কি খারাপ হয়ে যাবে?? আর একটা আওয়াজ যদি করিস তো সোজা প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ দিবো বলে দিলাম। তুই এই ক্ষ্যাত ছেলে টার জন্য আমাদের এভাবে বলতে পারলি?? শাহানা আরো কিছু বলতে নিলে,

নিশান তখন শাহানা কে টেনে একটু দূরে নিয়ে এসে বলল,,এই কি করছো ওরা আমাদের সিনিয়র ওদের সাথে এমন আচারন করছো কেন?? নিশান ওরা সিনিয়র নয় ওরা আমাদের ক্লাসমেট,,তোমাকে গাধা বানিয়েছে। নিশান ওদের দিকে তাকালো অসহায় দৃষ্টিতে। মানুষ এমনো হয়??

শাহানা আবার ছেলে মেয়ে গুলোর কাছে গেল তারপর আঙুল উঠিয়ে ওয়ারনিং দিয়ে বলল,আর এক দিন এমন করতে দেখলে সোজা প্রিন্সিপাল রুমে নিয়ে যাবো। আর আজ শুধু মেহমেত আসুক তার পর আজকের ব্যাবস্থা মেহমেত এসেই করবে। সবাই কেমন ভয়ে চুপসে গেল মেহমেত নাম শুনেই।

শাহানা নিশানের কাছে এসে ব্যাগ থেকে পার্স বের করে ৫০০টাকা নিশানের হাতে দিলো
ওদের আচারনের জন্য আমি সরি বলছি প্লিজ। নিশান তখন হতবাক হয়ে বলে এই টাকা কেন দিচ্ছো!! আমি এটা নিতে পারবো না আর আমি ওনাদের বিষয়ে তেমন কিছুই ভাবিনি বলে নিশান শাহানাকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে। শাহানা তখন টাকাটা হাতে নিশানের বুক পকেট টাকা টা ঢুকিয়ে বলে,অজানা জায়গায় ১০টাকা দিয়ে ও তোমায় কেউ সাহায্য করবে না। তাই নিজের সম্বল রেখে অন্যের কথা ভাবো। ওরা নালায়েক ঐ জন্য ওমন করছে। এতো দয়ালু আর ভীতু হয়ে চললে কি করে টিকে থাকবে এখানে?? ওরা সিনিয়র হলেও তুমি কেন নিজের টাকা দিয়ে খাওয়াবে ওদের?? নিশান হাসলো শুধু কিছু ক্ষনের পরিচয়ে এতো চিন্তা কারো জন্য করতে পারে কেউ??

চলবে _____????

সবাই পেজটা ফলো করবেন। আর যারা গল্পটা এই পর্যন্ত পড়ছেন তারা অবশ্যই কমেন্ট করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here