ক্যাসিনো পর্ব -৩৩

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)

#পর্ব_৩৩

এক্সি*ডেন্টে আমার মাথার পিছনে এসে ভিষন আঘা*ত বেশি পায়। যার কারণে আমি কোমায় চলে যায়। ৩মাস পর জ্ঞান ফিরে। আর ততদিনে সব কিছু আলাদা রূপ ধারণ করেছে। ধরনী তার নিজের মতো ছুটে চললেও, আমার কাছের বন্ধুদের জিবনে করে দিয়েছিল বিষাক্ত থেকে বিষাক্তময়।

হসপিটাল বেডে শুয়ে আছে মেহমেত!! ৫মিনিট আগেও সে ছিল জীবন্ত লাশ ছিল। মেহমেতের মা বাবা বোন সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিল যে কখন ও আবার মেহমেত চোখ মেলে তাকাবে! কিন্তু মেহমেতের হাত পায়ের আঙ্গুল গুলো কেমন তির তির করে নড়ছে, চোখের পাতা গুলো ও কাঁপছে। মাসুমা (মেহমেতের মা) যোহরের নামাজ আদায় করে বেডের পাশেই কান্নারত অবস্থায় মোনাজাত করছিলেন। তার পর মোনাজাত শেষ করে ছেলের দিকে তাকাতেই দ্রুত উঠে মেহমেতের কাছে যায়। মেহমেত চোখ মেলে তাকিয়েছে। মাসুমা চোখের পানি মুছে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করেন। মায়ের দোয়া তিনি কখনো ফেলেন না তা তিনি প্রমান পেলেন।

আমার জ্ঞান ফেরার পর সবাইকে দেখলাম মা বাবা, আরিফা। সবাই এমন ভাবে খুশি হচ্ছে যেন কত যুগ পর তারা আমাকে দেখছেন। কিন্তু এই দিকে আমার মস্তিষ্ক যখন থেকে সচল হতে শুরু করে, তখন থেকে সবাই কে দেখলাম আমার আত্মীয় স্বজনরা সবাই এসেছে,মিনাল, আকাশ, মুমিন,রায়হান । কিন্তু আমার মন শুধু দুই জন কে দেখার জন্য আকুল হয়ে ছিল,সব বন্ধুদের দেখলাম অথচ শাহানা আর নিশান কোথায়?? ওরা কি খবর পায়নি?? আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে??

ডাক্তার আমাকে এসে চেকাপ করে গেছেন আর বলছেন, আমি এখন সুস্থ কিন্তু বেশি স্ট্রেচ নেওয়া যাবে না। বাসায় যাওয়া যাবে তবে ৭দিন বেড রেস্টে থাকতে হবে। হাঁটা চলা খুব একটা করা যাবে না। আমি ভাবছিলাম আমার দূর্ঘটনাতে মাথায় বেশ চোট পেয়েছিলাম,এখনো যেন মাথার পিছনের জায়গায় টায় ব্যাথা করছে। সব ঠিক ঠাক ছিল, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে। মাগরিবের আজান দিবে, কিন্তু এখনো নিশান আর শাহানা আসলো না কেন?? আমার মন টা ওদের এক বার দেখার জন্য ছটফট করছিল। শেষে আরিফা কে জিজ্ঞেস করেই বসি নিশান আর শাহানা কে এক বার খবর দিতে ওরা যেন আসে আমি ওদের একটু দেখবো। নিশান আর শাহানার নাম টা শুনতেই আরিফা ফল কাটা বাদ দিয়ে মায়ের দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো। যেন আমি কোন খুন করার কথা তাদের বলেছি।
তাদের কাছে থেকে তেমন কোন সন্তোষজনক জবাব পাওয়া গেল না। আমাকে ফল খেতে দিলো। আর মা শুধু বলল যেন এখন বেশী কথা না বলে চুপ চাপ ফল খেতে।
পরেরদিন আমাকে রিলিজ দেওয়া হলো,৭দিন খাট থেকে নামতে অব্দি দেয়নি কেউ আমায় !! তখনো আমি জানতাম না যে আমি ঠিক কত টা সময় ধরে হসপিটালে ছিলাম??
এই ৭দিনে আমি একশত বার জিজ্ঞেস করেছি যে শাহানা আর নিশান ওরা আসেনা কেন আমায় দেখতে কি জন্য ওরা একবার ও আসলো ?? আমার মন টা ভিষন কেমন অস্থির লাগছিল ! আমার কাছে কোন ফোন ও ছিল না! যে ওদের একটা ফোন দিবো। শেষে আমার ঘরের ল্যান্ডলাইন থেকে শাহানার বাড়িতে ফোন করি। কিন্তু ফোন লাগছে না‌। আরিফার কাছে থেকে ফোন চেয়ে নিয়ে নিশানের নাম্বারে কল দেয় ফোন বন্ধ বলছে , শাহানার নাম্বার ও ডায়াল করে ও লাভ হয় না ফোন বন্ধ তার ও।

দুপুউ সাড়ে ১২টাম আমি বের হই! ওদের সাথে দেখা না করলে আমি শান্তি পাবো না,সোজা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। মা পিছন পিছন বার বার কোথাও যেতে না করছে। কে শুনে কার কথা। গাড়ি নিয়ে সোজা চলে যায় শাহানার বাসার উদ্দেশ্যে! কিন্তু বাসার গেটে গিয়ে আশাহত হই,সদর গেটে বড় একটা তালা ঝুলছে। কোথাও গেলো সবাই?? যত রকম মন্দ চিন্তা সব যেন ছেঁকে ধরেছিল মস্তিষ্কে! কপালে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ঘুষতে ঘুষতে আবার গাড়ি তে উঠে বসি।
ভার্সিটির বয়েজ মেসে গিয়ে নিজের সেই চিরচেনা রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়। মেসের বাকি স্টুডেন্টরা ভুত দেখার মত তাকিয়ে আছে আমার দিকে মনে হচ্ছে তারা কোন অনাকাঙ্ক্ষিত মুখ দেখছে।
আমি সে সব কিছু পাত্তা না দিয়ে আমাদের রুমের কাছে এসে দরজায় করাঘাত করলাম। মন ভরা এক আশা নিশানের মুখ টা দেখতে পাবো! কিন্তু আমার আশা নিরাশায় পরিবর্তন হয়ে অন্য এক ছাত্র এসে দরজা খুলে দিল। আমি কোন কিছু না ভেবে ঘরে প্রবেশ করলাম। ছেলেটা আমার আচমকা ঘরে ঢোকায় কিছু টা বিরক্ত নিয়ে বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলো আমি কি কাউকে খুঁজছি?? নাকি কিছু খুঁজছি।

নিশান কোথায়??? নিশান এই ঘরে থাকতো ! তুমি কে?? এই ঘরে কি করছো??
ছেলে টা নিশান নাম শুনে বলে উঠে?? আরে কোন নিশানের কথা বলছো?? ঐ নিশান যে একজন ধর্ষক খুনি স্মাগলার?? সে তো জেলে আছে !! কোন দেশে বসবাস করেন মিয়া আপনি.. তিন মাস আগেই যে জেল হাজতে বন্দি পুরো দেশ যার নিউজ জানে আর আপনি আজ এসেছেন ঐ জারজ টা কে খোঁজতে??? নিশানের মাথায় ধপধপ করে রাগ উঠে যায়। সে নিশানের নামে কি বলছে এগুলা?? তার বন্ধুর নামে এমন কুৎসিত কথা কি ভাবে বলতে পারে?? মেহমেত ক্রোধে ফুঁসতে ফুঁসতে ছেলেটাকে একটা ঘুষি মারে নাক বরাবর! আর চিৎকার করে বলতে থাকে
নিশানের নামে এমন কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে তাকে?? জারজ কাকে বলছে সে?? ছেলে টা কে মারতে মারতে রুম থেকে বাইরে বের করে ফেলে দেয়। ততক্ষণে ছেলে কার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে। আবার মেহমেত গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে তাকে মারতে থাকে এলোপাতাড়ি লাথি।
মেসের বাকি স্টুডেন্টরা এসে মেহমেত কে ধরে আটকায়।

ভিসির কাছে নালিশ দেওয়া হয় তার নামে। ভিসি নিজে আসে মেহমেতের কাছে ছেলে টাকে মারার জন্য ক্ষমা চায়তে বলে আর সাথে এটাও বলে ছেলেটি যা বলে তা সব সত্যি । নিশান এখন খুনের দায়ে জেলে আছে। সে শাহানা কে ধর্ষন করে খুন করেছে! এবং স্মাগলার ছিল সে এক জন তার রুম থেকে পাওয়া গেছে অনেক নেশা দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এবং বিভিন্ন ভাবে অন্য মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে। মেহমেতের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যেন। মাটিতে ধপ করে বসে পড়ে শাহানা মারা গেছে?? কি বলছে এসব এরা?? আমি তিন মাস অজ্ঞান ছিলাম?? নিশান জেলে?? নিশানের নামে কি বলছে এরা?? নিশান কে কত টুকু চিনে এরা??? মেহমেতের দুনিয়া পুরো টা অন্ধকার হয়ে আসে। ভিসি চলে যায়. ছেলেটাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।

!
দেবি ম্যাম এসে মেহমেতের পাশে বসে,তখন সে সব খুলে বলে যে দু দিন থেকে শাহানা কে তার পরিবার যখন খুঁজে পায় না তখন মিসিং ডাইরি করে। আর এই দিকে নিশান কেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না.তিন দিনের দিন খবর পাওয়া যায় একটা পুরনো বাড়ি থেকে শাহানার ক্ষত বিক্ষত মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়,তার পাশেই নেশাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল নিশান। পরবর্তী ময়না তদন্তের পর জানা যায় তাকে দুই দিন ধরে লাগাতার ধর্ষন করা হয়। এবং তিন দিনের দিন, অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরনে কারণে তার মৃত্যু হয়। নিশানের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠে পুরো দেশ বাসী.. তার পর নিশানের ব্রেকগ্রাউন্ড চেক করে অনেকে সাক্ষী দেয় যে আসলেই সে এক জন ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে থাকার পিছনে রয়েছে এক কুৎসিত সত্যতা। ভার্সিটির সব চেয়ে ভালো ছাত্র হওয়ায় অনেক মেয়ের সাথে অবৈধ মেলামেশা করার জন্য ফ্রোস করতো। সাথে নেশা দ্রব্য গ্রহণ করতো এবং অন্যান্য স্টুডেন্টদের কাছেও নাকি সে এসব বিক্রি করতো। ।

মেহমেতের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে; তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে শাহানা আর বেঁচে নেই! তার মৃত্যুর দায়ী করা হয়েছে তারই প্রানপ্রিয় স্বামী কে। শাহানার হাস্যউজ্জল মুখ টা ক্ষনে ক্ষনে ভেসে উঠছে চোখের সামনে। আগে পিছে মেহমেত কিছু জানে না কিন্তু সে এটা জানে নিশান নির্দোষ। আর কেউ তাকে কি ভাবে চিনে সে জানে না। কিন্তু চার বছরের সে খুব ভালো নিশান কে চিনেছে। হঠাৎ মেহমেত দাঁড়িয়ে পড়ে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে যে নিশান নির্দোষ! নিশান কিছুতেই ধর্ষক হতে পারে না। কারন নিশান শাহানার বিবাহিত স্ত্রী। মেহমেতের শেষের কথায় সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়। দলে দলে শিক্ষক আসে। মেহমেত বার বার উচ্চারণ করতে থাকে। নিশান নির্দোষ নিশানের শাহানা বিবাহিত স্ত্রী। সবাই ভাবে এক্সিডেন্টে মেহমেতের মাথা খারাপ হয়ে গেছে নয়লে এমন কথা কিভাবে সে বলতে পারে???
কেউ কথা টা বিশ্বাস না করলেও দেবী ম্যাম এর মনে এক ক্ষীন আশা জন্মায় যে মেহমেত সত্যি বলছে। আর মেহমেত পারবে নিশান কে এমন কুৎসিত মিথ্যা অপবাদ থেকে তাকে বাঁচিয়ে জেল থেকে বের করতে। মেহমেত দেবী ম্যাম এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে নিশান কোন জেল হাজতে আছে?? দেবী ম্যাম ঠিকানা দেওয়ার সাথে সাথেই
মেহমেত পাগলের মত ছুটে চলে যায় জেল হাজতের উদ্দেশ্য।

জেল হাজতে গিয়ে নিশানের সাথে দেখা করার কথা বললে তার সাথে দেখা করার অনুমতি কোন পুলিশ দিতে নারাজ। পরিশেষে কমিশনার কাছে গিয়ে অনেক রিকোয়েস্ট করার পরও নিশানের সাথে তারা দেখা করতে দিতে চাচ্ছে না। ওর মত দাগী আসামীর সাথে সকলের দেখা করা বারন তা উপর থেকে অর্ডার এসেছে। মেহমেত পাগলের মত হাত জোর করে এক বার দেখা করার কথা বলে!বার বার মেহমেত বলছে নিশান নির্দোষ অফিসার বিশ্বাস করুন। শাহানা ওর স্ত্রী ছিল কেন সে তাকে ধর্ষণ করবে ওকে ছেড়ে দেন অফিসার প্লিজ,ওর সাথে এক বার দেখা করতে দেন আমায় দোয়া করুন?? কমিশনার বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে মেহমেতের দিকে তাকালো! এতো দিন নিশান এই কথা বলে পাগল করে ফেলেছিল সকল কে এখন তো দেখছি আরো সাথে এক জন আছে এই অবাস্তব কথা বলার জন্য। মেহমেতের এমন পাগলামী কান্ডো না দেখতে পেরে তাকে মাত্র ১০মিনিটের জন্য দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়।

নিশান কে সবার শেষের জেল হাজতে রাখা হয়। যেখানে না যায় কোন আলো আর না যায় কোন বাতাস। এমন এক গুমোট জায়গায় মেহমেতের যেতেই দম বন্ধ হয়ে আসছিল যেন। মনে হয় কবরের ভিতরে তাকে নিয়ে যাচ্ছে। মেহমেত ভাবছে কত কষ্ট করেই না থাকছে নিশান এখানে। মেহমেতের দুই চোখ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে নিশান কে দেখার।

কারাগারের সামনে এসে যখন দাঁড়ালাম!! দেখলাম নিশান এলোমেলো ভাবে মাটিতে শুয়ে আছে। মাত্র তিন মাসে মাথার চুল গুলো কপাল বেয়ে চোখে এসে পড়েছে। ঠিক মতো মুখ দেখা যাচ্ছে না। সেখান কার কারারক্ষী হাতের লাঠি দিয়ে লোহার রডে জোরে আঘাত করে নিশানের উদ্দেশ্য বলে!! এই যে উঠো তোমার সাথে এক জন দেখা করতে এসেছে। নিশান রডের বিকট আওয়াজে চমকে উঠে বসে! পিটপিট করে চোখ মেলে সামনে তাকায় ‌। মেহমেত দেখে নিশানের দাড়ি মোচে এক দম পাগল বেশ চেহারা হয়েছে ‌। কয়েক মাসে নিশান কে দেখে মনে হবে যেন এক জন বয়স্ক লোক বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। মেহমেত ডুকরে কেঁদে উঠে নিশান বলে।
নিশান মেহমেতের কন্ঠস্বর চিনতে পেরে রাগী চোখে তার দিকে এক ধ্যানে মাথা কাত করে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ দৌড়ে এসে মেহমেতের গলা চেপে ধরে শরীরের যত শক্তি আছে সব দিয়ে। আর বলতে থাকে তোর জন্য সব শেষ হয়ে গেছে আমার! তুই সব শেষ করে দিয়েছিস?? আমার সব কিছু শেষ করেছিস তুই! এখন মজা দেখতে এসেছিস?? কোথায় ছিলি এতোদিন?? মেরেই ফেলবো আজ তোকে আমি!!! মেহমেতের জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এমনিতেই তাঁর নিজের শরীরে টাও ভিষন দূর্বল তাই নিশানের এমন হঠাৎ আক্রোমনে শকড হয়ে যায় সে।

চলবে _____?????

কষ্ট করে দুই লাইনের একটা মন্তব্য করে জানাবেন কেমন হয়েছে!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here