#ক্রাশ
#নিহিন_ইলিয়ানা
#পর্ব_৩
আর অর্পন আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আমার সামনে এসে আমার বাম হাত টা শক্ত করে মুঠো করে ধরে।
-হাত ধরলেন কেন আমার?
আজব তো।হাত ছাড়ুন।
-তোরে কি বলছিলাম আমি?দেখা করতে বলি নাই?কেন করলিনা দেখা?
এবার তো আমি তোকে আমার সাথেই নিয়ে যাবো।
এত ক্ষণে আম্মু বলে চিৎকার দেই আমি।
আর আম্মু আসা মাত্রই অর্পন আমার হাত ছেড়ে দেয়।
-কি হয়েছে?এভাবে ডাকছিস কেন?
আর তুমি?
-কাকী আমি অর্পন।
-কিছু বলবে বাবা?
-আসলে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম।হঠাৎ পানি পিপাসা পেয়েছিলোতো তাই এসেছিলাম।
এক গ্লাস পানি দেয়া যাবে?
-কি যে বলো বাবা,এই যাতো নিহিন এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়।
আমি দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি দিয়ে আমার ছোট বোনকে পাঠিয়ে দেই।
সেদিনের মত ও পানি পান করে চলে যায়।
সে চলে যাওয়ার পর আম্মু এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে ও এসেছিলো কেন?
আমি আম্মুকে বলি,আমি দেখা করিনি বলে।
সে চায় আমি তার সাথে দেখা করি।
সে যেনো কি বলবে আমায়।
-কোত্থাও যাবিনা তুই।
আমি কাল ই তোর জন্য পাত্র দেখা শুরু করবো।
বিয়ে না দিলে এই ঝামেলা দূর হবেনা।
আর এই ছেলে যে খারাপ।
আমার মেয়ের জীবন পুরা তামা তামা করে দিবে।
এই বলে আম্মু চলে গেলো।
আব্বুকে বিষয়টা ফোনে জানালো।
আব্বু বল্লেন তুমি ছেলে দেখা শুরু করো।
ভালো ছেলের সন্ধান করো।তবে ছেলে যেন শিক্ষিত হয়।
আব্বু সারাজীবন শিক্ষাকে অনেক মূল্য দিয়েছেন।
আব্বু চায় তার সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষিত হোক।আর তার মেয়ের জামাইরাও উচ্চ শিক্ষিত হোক।
আম্মু পরের দিনই ছেলে দেখা শুরু করলেন,মানে সবাইকে বলতে লাগলেন ভালো ছেলের সন্ধান পেলে যেন জানায়।
ওই দিকে অর্পন আমার যত গুলো বিয়ের কাজ আসে সব ভেঙে দেয়।
আব্বু বলেন,তার এক বন্ধুর ছেলের জন্য নাকি আমার কথা বলেছে।
আর বললেন,আব্বু এসেই যা করার করবে আমরা যেন চুপচাপ বসে থাকি।
মন খারাপ করে এখন বাসায়ই বসে থাকি শুধু।
না যেতে পারি বাইরে,আর না কোথাও।
তাই আমার বান্ধবী বর্ষা আমাকে বল্লো,তুই তো ফেসবুক ইউজ করিস না।একটা আইডি খোল।দেখবি সময় কেটে যাবে।কিন্তু আমি ফেসবুকের তখন কিছুই বুঝিনা।
বর্ষা আমাকে একটা ফেসবুক আইডি খুলে দেয়।
আর ও নিজেই কয়েক জন ফ্রেন্ড এড করে দেয় আইডিতে।
আর সব দূরের দূরের মানুষ।
আমি বললাম, এদের কেন ফ্রেন্ড করলি?আমিতো চিনিইনা তাদের।
ও বল্লো,অচেনা মানুষ লিস্টে থাকলেই ভালো।
কোন ঝামেলা নেই।চিনবেও না,কিছু বলবেও না।
আর চেনা হলে শান্তিতে আইডি ইউজ করতে পারবিনা।
ওর কথা মত বললাম আচ্ছা বুঝলাম।
আমার লিখালিখি করতে খুব ভালো লাগে।তাই ফেসবুকে ঢুকেই আমি ছোট ছোট লিখা পোস্ট করতে শুরু করলাম।
ধীরেধীরে আমার বন্ধুর তালিকা বড় করলাম।ফ্রেন্ড রিকু পাঠালাম এক্সেপ্ট করলাম।
কিন্তু কারো সাথেই আমার ইনবক্সে কথা হতোনা।
ইনবক্সটা আমার কাছে একটা প্যারা মনে হতো।
যা কথা হবার কমেন্ট বক্সেই হতো টুকটাক।
এরমাঝে যারা আমাকে ইনবক্সে নক করতো আমি তাদের এড়িয়ে চলতাম বেশির ভাগ।ওয়ালাইকুম সালাম।ভালো আছি,এসব ছাড়া আর কথা বলতাম না।
কিন্তু হঠাৎ একটা ছেলে আমাকে একদিন রাতে ইনবক্সে নক দেয়।আর আমি তার মেসেজের সব রিপ্লাই না দিয়ে থাকতে পারিনি।
ছেলেটার সাথে এই প্রথম আমার ইনবক্সে কথা।
ছেলেটার আইডি দেখেই ভদ্র শান্তশিষ্ট মনে হতো।
তার লিখার হাত ছিলো খুবই ভালো।কিন্তু সমস্যা একটাই ওর টাইপিং মিস্টেকের কারণে মাঝে মাঝে বানান ভুল যেতো।
আর আমি মনে মনে লিখা পড়ে খুব রাগ করতাম।এত ভালো লিখে অথচ বানান ভুল।
তার সাথে প্রায়ই আমার এখন চ্যাটিং হয়।
কেমন আছি,কি করছি এই সেই কথা হয়।
ধীরেধীরে কথার পরিমাণ বাড়তে থাকে।একটা সময় সে আমাকে মেসেজ না দিলে খুব রাগ হতো।
খারাপ লাগতো।
এক সময় সে আমাকে বন্ধু হবার প্রস্তাব দেয়।
আর আমি তাকে বলি,হতে পারি।তবে কোন দিন সে আমার প্রেমে পড়তে পারবেনা।আমাকে ভালবাসতে পারবেনা।
ভালবাসা চাইতে পারবেনা।
কারণ,আমি শুনেছি কখনো কোন ছেলে মেয়ে নাকি বন্ধু হয়ে থাকতে পারেনা।
একদিন না একদিন তারা নাকি একে অপরের প্রেমে পড়বেই।
সে আমার কথায় রাজি হয়ে যায়।
শুরু হয় আমাদের বন্ধুত্ব।
ও আমাকে মেসেজে লিখে লিখে ওর লাইফের সব কথা লিখে।কখন একেকটা রাত চ্যাট করতে করতে কেটে যায় তার কোন খেয়ালই থাকেনা আমাদের।
ও প্রাবাসী।দেশের বাইরে থাকে।
আর আমি থাকি বাংলাদেশে।
এভাবে আমাদের বন্ধুত্ব আরো মজবুত হতে থাকে।
আর কথায় কথায় ওকে আমি মনে করিয়ে দেই,
খবরদার ভুলেও আমার প্রেমে পড়া যাবেনা।
বেচারা আমাকে চ্যালেঞ্জ করে,সে কোন দিন আমার প্রেমে পড়বেনা।
সে এমন ছেলেই না।তার মনে ভালবাসা বলতে কিচ্ছু নেই।সে ভালবাসার ধারেকাছেও নেই।
আর আমিও তাকে উল্টো চ্যালেঞ্জ করে বলি,জাস্ট ১৫ দিনের ভেতর সে আমার প্রেমে পড়বে।
আর আমাকে ভালবাসবে।
আমি যদি চাই।
ও আমাকে বলে,
ওকে চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করলাম।
যাও ১৫ দিন সময় দিলাম।
করে দেখাও এই অসাধ্য সাধন,আমিও আমার কথায় অটল।জিন্দেগীতেও তোমার প্রেমে আমি পড়বোনা।
আর সব চেয়ে মজার কথা হলো,আমরা তখনো দুজন দুজনকে দেখিনি।
তখন ওর প্রোফাইলে কোন পিক ছিলোনা।
আর আমিও আমার প্রোফাইলে কোন পিক ইউজ করিনি।
তাই দেখাও হয়নি কেউ কাউকে।
আর ও নিজেও আমার কোন পিক চায়নি তখন।আর আমিও চাইনি।
চলছিলো আমাদের অদেখা বন্ধুত্ব।
আর সাথে ওই চ্যালেঞ্জ।
দেখা যাক বাজিতে কে জিতে,
নিহিন,
নাকি নিনিত।
চলবে…