#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২০
#Jhorna_Islam
যুথি চারিদিকে চোখ বুলিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ইরহান যুথির দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রয় সেইদিকে ও যুথির কোনো খেয়াল নেই।
যুথিকে এভাবে ভাবনাতে ম’জে থাকতে দেখে আপনা আপনি ইরহানের ব্রু জোড়া কোচকে যায়।
–” যুথি কি হয়েছে তোমার শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে? দেখি এখানে এসে বসো তারপর পানি খাও একটু ভালো লাগবে।” যুথিকে বিছানায় বসিয়ে ইরহান তারাতাড়ি করে পানি এনে দেয়।
— যুথি ইরহানের হাত থেকে গ্লাস টা নিতে নিতে বলে আমার কিছু হয়নি।আপনি টেনশন নিবেন না। বসেন তো এখানে চুপচাপ।
ইরহান কে কথা টা বলে,,যুথি পানি খেয়ে গ্লাস টা রেখে আসে।তারপর নিজের গায়ে জড়িয়ে যাওয়া পাতলা চাদর টা ভাজ করে চ’কির নিচে রাখা টিনের বাক্সের ভিতর রাখে। চাদর টা রাখার সময় শব্দ করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে।
ইরহান শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে যুথির কাজ দেখছে।
যুথি বিছানায় উঠতে উঠতে দেখে ইরহান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাই মজার ছলে বলে,,কি ব্যাপার বলুন তো আজ কি আমায় একটু বেশিই সুন্দর লাগছে নাকি? আমার বোকা পুরুষ যে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে!
আমার যুথি রানীকে কোনো বিশেষ দিন দেখে সুন্দর লাগে না। আর না লাাগার প্রয়োজন আছে।সে আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দরতম নারী।
হ্যা জানা আছে আমার।ঐ দেশ গিয়ে সুন্দর সুন্দর নারী দেখে এই কা’লির কথা কি মনে থাকবে আপনার?
কি বলো এগুলো? আমি আমাদের সু- দিন ফিরানোর জন্য যাচ্ছি। অন্য নারীতে ম’ত্য হতে না।আর আমার বউ ছাড়া অন্য নারীতে আসক্ত হওয়া ও মুগ্ধ চোখে দেখার আগে যেনো আমার মরণ হয়।
যুথি তারাতাড়ি ইরহানের মুখ চেপে ধরে। ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,,, কি বলেন এগুলো বোকা পুরুষ? আমি মজা করছিলাম বিশ্বাস করুন।আমিতো জানি আমার মানুষ টা কেমন।
তাই নাকি মজা করছিলে তুমি?
বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার?
হচ্ছে তো।তবে এরকম মজা করার জন্য এবার তোমাকে ক’ঠিন শাস্তি পেতে হবে বলেই চোখ টিপ দেয় ইরহান।
ইরহানের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে যুথি তারাতাড়ি ইরহানের কাছ থেকে সরে যায়।শুয়ে পরতে পরতে বলে,,খবরদার না চুপচাপ ঘুমান।আমাকেও ঘুমাতে দেন।কাল কিন্তু আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।
হলে হোক।সকালে উঠার ভয়ে কি আমি আমার বউকে ভালোবাসবো না নাকি? বলেই যুথিকে নিজের কাছে টেনে নেয় ইরহান।
বোকা পুরুষ!
চুপ থাকো মেয়ে আমি এখন আমার বউকে ভালোবাসা দিবো।
এএএ ঢং!
ঢং না তো ভালোবাসা।
———————————
কাজটা ঠিক ঠাক মতো করতে না পারায় দুই ভাইয়ের আফসোসের শেষ নেই।সব থেকে বড় আফসোস ইশানের। হাতের কাছে পেয়েও কাগজপত্র গুলো নিতে পারে নি।
ইমন রাতে রুমে ঢুকে দেখে তার বউ লিমা মোবাইলে মায়ের কাছে শ্বাশুড়ি আর শ্বশুর বাড়ি নিয়ে হাজারো নালিশ দিচ্ছে।
লিমা ইমন কে দেখে কল কেটে দেয়। ইমন কে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।
ইমন লিমার দিকে এগিয়ে এসে বলে,,, সংসারে একটু ঝামেলা হলেই সেটা বাপের বাড়িতে জানাতে হবে তোমার?
স্বামী আর শ্বশুর বাড়ি কে ছোট করতে খুব ভালো লাগে তোমার তাই না?
শ্বশুর বাড়ি? এটা শ্বশুর বাড়ি নাকি।এটা তো শ্বাশুড়ির বাড়ি।
তা অবশ্য ঠিক বলেছো।
শুনুন আপনার মায়ের এসব হুকুম,, ক’টু কথা একদম আমার সহ্য হয় না।আমি বানের জলে ভেসে আসিনি। আমি ফ’কি’ন্নি’র মেয়ে না যে সব চুপচাপ মুখ বুঁ’জে স’হ্য করে নিবো।বা”ন্দি দা”সীর মতো খা’টতেও পারবো না।
এতো বড় সংসার আর আমার ভালো লাগে না। এবার সব কিছু আলাদা করুন।
লিমা তুমিকি পা’গল হয়ে গেছো? এসব তুমি কি বলছো?
কি বলছি মানে? ঠিকই তো বলছি রা’গে জোরে চিললিয়ে বলে উঠে লিমা।
ইমন তারাতাড়ি লিমার মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে,, আরে আস্তে আস্তে। জানিতো ঠিকই বলছো।কিন্তু এখন তো আলাদা হওয়ার সময় না। আগে জায়গা জমি নিজের নামে পাই তারপর তোমার বলতে হবে না আমি নিজেই আলাদা হয়ে যাবো। এখন কিছু দিন সব কিছু স’হ্য করে নাও।আর পারলে মায়ের মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করো।
আপনার মায়ের মন আছে নাকি যে তা জুগিয়ে চলার চেষ্টা করবো? খা”ড়ু”স মহিলা একটা।
সে যাই হোক মায়ের কথা মতো চলবে।ভাগ একটু বেশি পেলেতো আমাদের ই লাভ।
———————————
মাথা গরম ইশানের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।কাজটা করতে না পারায় রা’গে ফোসফোস করছে। ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে।
নিজের রা’গ কমানোর জন্য রুমের ভিতর এদিক ওদিক পায়চারি করছে।
তখনই পাশ থেকে দিনা এসে বলে হাঁ’ড়ি আলাদা করার কথা নয়তো সে বাপের বাড়ি চলে যাবে।থাকবে না এখানে। এতো জনের কাজ সে করতে পারবে না। যদিও ইশানকে এটা বলেছে ভ’য় দেখানোর জন্য।
দিনা কথাটা বলে শেষ করতে দেরি ইশানের হাতের চ’ড় দিনার গালে পরতে দেরি নেই। ঠা’স করে এক চ’ড় মেরে দেয়।শুধু চ’ড় মেরে থামেনি।চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলে উঠে,,,,,, চুপচাপ সংসারের কাজ করে খাবি।মেয়ে মানুষের তে’জ এই ইশান একদম স’হ্য করতে পারে না।
আমার সাথে তুই তে’জ দেখাস? বড় গলায় কথা বলস? আবার দেখি ভ’য় ও দেখাতে পারিস আমাকে। তুই বাপের বাড়ি চলে গেলে আমার কিছুই হবে না।
তোর মতো আর তোর থেকে ভালো ভালো মেয়েদের সাথে আমার উঠা বসা। তোর মতো একটা চলে গেলে আমার কিছুই হবে না। কিন্তু তোর অনেক কিছু হবে।
চুপচাপ মুখ বন্ধ রেখে চলবি।পরবর্তীতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দূরে থাক গলা উচিয়ে একটা কথা বললে জ্যা”ন্ত পুঁ”তে ফেলবো।
তোকে আমি আগেও বলেছি মায়ের মন জুগিয়ে চলবি।সব সময় মায়ের পিছন পিছন ঘুরবি।মায়ের সেবা করবি।আর তুই কি করিস ঝা”মেলা পাকিয়ে বসে থাকিস।
তোর জন্য যদি এক অংশ ও কম পাই জমির ভাগ দেখিস কি করি।তাই আগে থেকেই বলছি মায়ের সেবা কর।সম্পত্তি যেনো একটু বেশি পাই।গয়নার ভাগ যেনো বেশি দেয়।
মেয়ে মানুষ সব সময় মাথা নিচু করে চলবি।আজ শেষ বারের মতো বলছি।নয়তো তোকে ছুড়ে ফেলে আরেকজন নিয়ে আসতে দুইবার ভাববো না। বলেই চুলের মুঠি ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পরে ইশান।
চুল আর গালের ব্যাথায় কুঁ’কড়ে যায় দিনা।চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পরছে।ভিতরে তার আগুন জ্বলছে এখন সব মুখ বুঁ’জে স’হ্য করছে।একদিন সব কিছুর শো’ধ সে নিবে।
ইশানের এই প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে হাত তোলার শাস্তি সে ঠিক দিবে।
শুধু ভাইয়ের বউয়ের জন্য এখনো এসব মার ধর আর ইশানের পর নারীতে আসক্ত সব কিছু সহ্য করে নিচ্ছে নয়তো কবেই এসবের উপর থু থু দিয়ে চলে যেতো।
দিনার বাবার টাকা পয়সা থাকলে কি হবে তার ভাবি এসব কিছুর পিছনে ছু”ড়ি ঘুরায়। দিনার মা তাই বলে দিয়েছে দুঃখ কষ্ট যাই পাস না কেনো ঐ বাড়িতে পরে থাক।টাকা লাগলে টাকা পাঠিয়ে দিবো।কিন্তু এ বাড়িতে একবারে চলে আসার নাম মুখে নিবি না।
তাই দিনা এখনো এখানে পরে আছে।
——————————-
আজ হাট বার।সকাল থেকেই দোকানে প্রচুর ভি’ড় লেগে থাকবে বেচা কেনা নিয়ে। তাই ইরহান খেয়ে আজ সকাল সকাল ই বেরিয়ে গেছে।
যুথি খুব ভোরে উঠে ইরহানের জন্য রান্না করেছে।ইরহান বলে ছিল দরকার নেই এতো সকালে রান্না করার যুথি শুনেনি।সে সুস্থ থাকা অবস্থায় ইরহান কে না খেয়ে থাকতে দিবে না।
যুথির ও স্কুলে যাবার সময় হয়ে এসেছে। তৈরি হয়ে নেয় স্কুলে যাওয়ার জন্য। এমন সময় দাদির ফোন আসে কথা বলতে বলতে দরজা লাগায় ঠিকই কিন্তু তালা লাগাতে ভুলে যায়।
কথা বলতে বলতে ঘরের পিছনের রাস্তা দিয়ে এগোনের সময় ইশান কে দেখতে পায়।
ইশানের দিকে এক পলক তাকিয়ে কিছু না বলে মোবাইলে কথা বলতে বলতে গেইটের বাইরে চলে যায়।
ইশান এতো সময় এদিকেই উঁকি মেরে ছিলো।ওরা বেরিয়ে গেলেই তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পরবে।কিন্তু মনে মনে বেশ ম’জা পেলো এটা দেখে যুথি ঘরে তালা না মেরেই চলে গেছে।
ছিটকিনি টা খুলে ঘরে ঢুকে পরে ইশান।এইবার আর এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা চকির নিচে থেকে বাক্স টা বের করে খুলে ফেলে।
কিন্তু একি বাক্সে কয়েকটা কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই।কাপড় এলোমেলো করে ছুড়ে নিচে ফেলে দেয়। আবার পুরো ঘর ত’ন্ন ত’ন্ন করে খোঁজে। কোথাও একটা কাগজের টুকরো ও নেই।
রা’গে লাথি মেরে টিনের বাক্স টা দূরে ফেলে। এসব যে যুথির চা’লাকি বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় নি ইশানের।
ইশান ঘর থেকে বের হয়ে রা’গে যুথিকে একটা বা’জে গা”লি দিয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে যায়।
ইশান চলে যেতেই যুথি আড়াল থেকে বের হয়ে ঘরে ঢুকে আরাম করে বসে।এতো সময় সবই দেখেছে যুথি।হাসি৷ পেলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। নিজের ছোট হাত ব্যাগ টা বের করে কাগজ গুলো হাতে নেয়।
কাল যুথি ঘরে ঢুকেই বুঝতে পেরেছিলো ঘরে কেউ ঢুকেছে।নিজের গুছিয়ে রাখা জিনিস একটু এদিক ওদিক হলেই তা সহজেই বোঝা যায়। যুথির ও বুঝতে অসুবিধা হয় নি।
সব থেকে বড় কথা,, কাল বের হওয়ার সময় ঘরের বাতি নিভিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু এসে দেখে বাতি জ্বালানো। ওরা চা”লাকি করেছে ঠিকই কিন্তু বড় ভুল করে গেছে। যুথির মন তখনই বুঝে গেছে ওরা এই ঘরে কেনো আসতে পারে।তাইতো কাল বাক্স চে’ক করেছিলো।কাগজ পত্র ঠিক দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলো।
যুথির ধারণা ছিলো আজও ওরা কিছু একটা করবে।তাই হলো।
যুথি মনে মনে আওড়ায় তোরা কি ভেবেছিলি? আমার নাকের ড’গা দিয়ে গিয়ে শ/য়তানি করবি আর আমি টে’র ও পাবো না হুহ!
তোরা চলবি ডালে ডালে আর আমি চলবো প্রতিটি পাতায় পাতায়। তোরা ভুলে গেছিস বাপের ও বাপ আছে।
#চলবে,,,,
কেমন হলো জানাবে🤭#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২১
#Jhorna_Islam
মানুষের শরীরের সাথে মনের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। শরীর ভালো না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না। গত কয়েকদিন ধরে যুথির শরীরটা ও ভালো যাচ্ছে না।
খেলে কিছু সময় পরই আবার প্রচুর খিদে লাগে।যুথির কখনো এমন হয়নি।খাওয়া নিয়ে তার এতো মাথা ব্যাথা ছিলো না। এখন দিনে তিন চার বার ও খায় যুথি।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এতো খেয়ে ও শক্তি পায় না শরীরে।
কোনো কাজে তো এখন মন বসেই না উল্টো শরীর ম্যা’জ ম্যা’জ করে।কাজ করতে গেলে মাথা ঘুরায়। তবে এতো খারাপ লাগার মাঝেও একটা বিষয় হলো যুথির শরীর আগে থেকে বেশ একটু উন্নত হয়েছে।
স্বাস্থ্য টা কিছুটা বেড়েছে।শরীরের রং টা কিছু টা উজ্জল হয়েছে।যুথি এখনো ওর কেমন যেনো লাগে এসব কথা ইরহান কে বলেনি।শুধু শুধু টেনশন করবে।
কিন্তু যুথির শরীরের পরিবর্তন ইরহান ও লক্ষ করেছে। মাঝে মাঝে যুথির দিকে তাকিয়ে বলে দেখেছো আমার ভালোবাসার কতো জোড়? আমার যুথি রানীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
আজ সকাল থেকে যেন একটু বেশি কেমন কেমন লাগছে যুথির তাই ইরহান যাওয়ার পর স্কুলে আর যায়নি বিছানায় শুয়ে আছে।
তারপর কিছু একটা ভেবে দাদিকে ফোন লাগায়।
যুথির দাদি ফোন রিসিভ করতেই ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে। তারপর যুথির কথা সব খুলে বলে।সব শুনে দাদি কিছু সময় চুপ থাকেন।
কিছু সময় পর গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,,, এই তুই আমার বু তো?
— এটা আবার কেমন কথা দাদি? আমি আমার অসুস্থতার কথা বলছি আর তুমি আমার সাথে মশকরা করছো?
— মশকরা করবো কেন? সত্যি কথাইতো বলছি।
— যুথিও এবার বলে,,এইই বুড়ি সত্যি করে বলো তুমি আমার দাদি তো?
— আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস?
— মোটেই না। তুমি আমার দাদি নও।আমার দাদি কোথায় তাকে বের করো বলছি।তার নাতনির অসুস্থতা নিয়ে আমার দাদি কখনো মজা করতে পারে না।
— হয়েছে এবার থাম।আমিতো ভাবতাম আমার নাতনি খুবই বুদ্ধিমতি আর চা’লাক।কিন্তু তুই দেখি আসলেই একটা ব’লদ।
— এএ বুড়ি,,,,,
— আরে থাম ছো’রি।এতো এতো উ’প’স’র্গ দেখে যে বুঝতে পারলো না এসব কিসের ল’ক্ষ’ন সে নাকি আবার বু’দ্ধিমতি হুহ্।
— কিসের ল’ক্ষ’ন দাদি?
— তোর মাথার বু’দ্ধিতে দেখি পুরাই জং ধরেছে। তুই মা হতে চলেছিস ছো’রি।আর আমি বড় মা।
যুথির দাদির কথা টা শুনেই হাতটা আপনা আপনি পেটে চলে যায় যুথির।
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, এসব তুমি কি বলছো দাদি? সত্যি বলছো?
আমার এতো বছরের অভিজ্ঞতা তো তাই বলছেরে।তোদের ছোট্ট ঘর আলো করে কেউ আসতে চলেছে।
আ- আমার বিশ্বাস হচ্ছে না বুড়ি।
— কেন বিশ্বাস হইতেছে না? আমিকি পোলাপান জন্ম দেই নাই নাকি।বয়স কি আমার বাতাসে বাড়ছে নাকি চুল গুলো বাতাসে পা’কছে কোনটা?
তুমি যাই বলোনা কেন দাদি আমার মনে হয় তোমার ধারণা ভুল। এমন না ও তো হতে পারে তাই না?
হ তোরা এখনকার যোগের মানুষ বুড়া মাইনষের কথা বিশ্বাস করবি কেন?
এখন তো কতো কিছু বের হইছে ঐটা দিয়ে পরীক্ষা করে নে তাহলে।তখন বুঝতে পারবি এই বুড়ির ধারণা ঠিক নাকি ভুল।
আরে টেস্ট করার কথা তো আমার মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলো।আহ্ বুড়ি উম্মা! মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।
হ হ বুঝি সবই।এসব মাথায় থাকবো কেন? এখন তো মন প্রাণ মাথা জুড়ে একজনেরই বসতি আমার নাত জামাই।
রাখছি এখন পরে কথা হবে।
আচ্ছা বইন সাবধানে থাকিস।আর ঐসব টেস্ট করে আমারে জানাইস।
হুম।
যুথি ফোন রেখে ভাবতে থাকে কিভাবে জিনিস টা আনবে।ইরহান কে এখন বলা যাবে না।পরে নিশ্চিত হয়ে বলবে।দেখবে ইরহানের প’তি’ক্রি’য়া কি।
তাই অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করে প্রে’গ্ন্যা’সি’র কি’ট টা পাশের বাড়ির সীমা যে তার সাথে স্কুলে পরায় তার হাতে আনাবে।সে কাল মার্কেটে যাবে বলেছিলো।
সীমা কে যুথি ফোন দিয়ে বলে দেয় নিয়ে আসার জন্য। সীমা জানায় কাল আসার সময় নিয়ে আসবে।
যুথি কল কেটে পেটে হাত দিয়ে বসে থাকে। কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছে তার।নিজের ভিতর অন্য প্রাণের কথা ভাবতেই শরীর শি’র’শি’র করে উঠে।
————————————–
অনেক হলো এমন ভাবে আর না। সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদেশ গিয়ে এবার নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করবে।
ইরহান পরশু দিন চলে যাবে। ভোর চারটার ফ্লাইট। মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কেটে নেয় ইরহান। যুথিকে এখনো জানায় নি টিকিট কাটার কথা।দোকানে কাজের ফাঁকেই কাজটা সেরে ফেলে।বাড়িতে গিয়ে বলবে।
রাতে বাড়িতে গিয়ে দেখে যুথি শুয়ে আছে চুপচাপ। কোনোদিন যুথি ইরহান আসার আগে এমন করে শুয়ে থাকেনি। ইরহান যুথিকে আস্তে করে ডেকে তুলে।
যুথি ইরহান কে দেখে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে।
আপনি এসে গেছেন?
তুমি ঠিক আছোতো যুথি রানী?
যুথি কিছু টা ঘাবড়ে যায়।এখন কিছুতেই ইরহান কে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না আর বলা ও যাবে না। তাই এটা ওটা দিয়ে কাটিয়ে যায় কথা।
রাতের শোয়ার সময় ইরহান আমতা আমতা করে যুথিকে জানায় পরশু ভোরে তার ফ্লাইট । আর মাত্র দুইটা দিন তার সাথে আছে।
যুথি কোনো কথা না বলে ইরহান কে ঝাপটে ধরে ইরহানের বুকে মুখ গুঁজে দেয়। ইরহান ও যুথিকে ঝাপটে ধরে রাখে।যুথি যে নীরবে তার চোখের পানি দিয়ে ইরহানের বুক ভাসাচ্ছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই।
দুইজন ই দুইজন কে জড়িয়ে রেখে নির্ঘুম রাত পাড় করে দেয়।
ঐ দিকে ইমন শুনে ফেলে পরশু যে তার ফ্লাইট। কালকের মাঝেই কিছু একটা করতে হবে।প্রতিদিন রাতে ইরহান আসার সাথে সাথে ঘরের কাছে এসে আ’ড়ি পা’তে।
————————
পরের দিন ইরহান যুথির সাথেই সময় কাটিয়েছে।এই সময়টুকু দুইজন দুইজনের সাথে কাটাবে ঠিক করে ইরহান।যুথিকে ইরহান তার দাদির বাড়িতে রাখবে বলে ঠিক করে। এখানে একা রাখা যাবে না।
ইরহান বাড়িতে থাকবে না।তার উপর ঐ লোক গুলোর উপর ইরহানের একটুও বিশ্বাস নেই।যদি কিছু করে বসে যুথিকে।যুথি তো ওদের কম কথা শোনায় নি।
কিন্তু যুথিকে ইরহান কিছুতেই রাজি করাতে পারছে না দাদির কাছে চলে যাওয়ার জন্য। যুথির এক কথা সে তার স্বামীর আর শ্বশুরের ভি’টা ছেড়ে এক পা ও নড়বে না।অনেক বুঝিয়ে ও যুথি কে রাজি করাতে পারেনি ইরহান এখান থেকে যাওয়ার।
তাই যুথির দাদি কে রাজি করাবে এখানে এসে থাকার জন্য। উনার আর কাজ করতে হবে না। যুথির সাথে থাকবে।
তাই বিকেলে ইরহান যুথির দাদি কে পরের দিন যেনো এই বাড়িতে চলে আসে তার জন্য রাজি করাতে যায়।ঐ দিক দিয়ে একটু দোকানে ও যেতে হবে।এই মাস শেষ হয়েছে দুই দিন আগেই।বেতন নিয়ে প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনে দিয়ে যাবে যুথিকে।
অন্য দিকে যুথিকে ইরহান বাড়ি থেকে বের হওয়ার কিছু সময় পরই সীমা এসে প্রে’গ’ন্যা’ন্সি’র কি’ট টা দিয়ে যায়।
যুথি কি’ট নিয়ে পরীক্ষা করে থো’ম মেরে বসে থাকে।চোখের পানি তার ছলছল করছে। দাদির কথাই সত্যি হলো সে তার বোকা পুরুষের সন্তানের মা হতে চলেছে।
যুথির মনের আনন্দ আর দেখে কে তার আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করে। বিকাল টুকু তার উ’ত্তে’জ’না’তেই কেটে যায় কখন তার বোকা পুরুষ বাড়িতে আসবে কখন সে সুখবর টা দিবে।লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম।
সন্ধায় ইরহানের যত্নে তুলে রাখা তার মায়ের শাড়ি বের করে যুথি। এটা পরে আজ সে সাজবে।তার বোকা পুরুষের জন্য সে মন ভরে সাজবে। শাড়ী টা সযত্নে শরীরে জড়িয়ে নেয় যুথি।ইরহানের দেওয়া সেই মালাটা গলায় পরে।হাতে রেশমি চুড়ি। খোপায় কুড়িয়ে আনা বকুলফুলের মালা জড়ায়।চোখে মোটা করে কাজল দেয়।তারপর ছোট্ট একটা আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই লাজুক হাসে।তার বোকা পুরুষ আজ তাকে দেখে পুরাই অবাক হয়ে যাবে।
ইরহান দোকানের মালিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাজার সদাই করে নেয়। রাত অনেক হয়ে যাওয়ায় একটা সি.এন.জি ডেকে উঠে পরে।
ইমন ও পিছনে আছে ইরহান কে এতোসময় পিছনে পিছনে ফলো করেছে। আজ কিছু একটা করবে এটাই শেষ সুযোগ। উদ্দেশ্য ফাঁকা রাস্তায় ইরহানের সি.এন.জি টা কে কোনো ভাবে খা’দে ফেলা।এতে ইরহান ও শেষ আর কেউ সন্দেহ ও করবে না।
মাঝ রাস্তায় অন্ধকারে গিয়ে কিছুর সাথে ধা’ক্কা লেগে সি.এন.জি খা’দে পড়ে যায়।পড়ার আগে শুধু দুই একটা আ’র্ত’না’দ ভেসে আসে।
#চলবে,,,,,,,,,,