খড়কুটোর বাসা পর্ব -২২+২৩

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২২
#Jhorna_Islam

“যা হচ্ছে হতে দিন, আল্লাহ আপনার ভাবনার চেয়ে অনেক বেশিকিছু ভেবে রেখেছে!”

গ্রামের দিকে এখনও সাধারণত রাত আট টা বা নয়টা মানেই অনেক রাত।সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তখন ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।

রাস্তা ঘাট সব কিছুই শুনশান থাকে।যাদের খুব বেশি প্রয়োজন বা কাজ থাকে তাদের ছাড়া অন্য কাউকে বেশি দেখা যায় না।

রাতের অন্ধকারে তখন রাস্তা দিয়ে সি.এন.জি এর আলো দিয়েই যতোটুকু দেখা যায়। অন্য কোনোর আলো নেই।

ইরহান যে সি.এন.জি তে সেটা অনেকটাই দূরে এগিয়ে গেছে। ইমন ও সি.এন.জি করেই ফলো করছিলো ইরহান কে। সামনের সি.এন.জি আগে চলে যাওয়ায় ইমন তার ড্রাইভার কে তাড়া দেয়। সামনের টার কাছাকাছি যেনো যায়।আর সুযোগ বুঝে ঐ সি.এন.জি কে ধা’ক্কা যেনো দেয়। নয়তো কিছু একটা করতে মোটা অংকের টাকা দিবে সে ড্রাইভার কে। শুধু যেনো এ’ক্সি’ডে’ন্ট টা করায়।

ড্রাইভার টাকার লোভে রাজি হয়ে যায়। জোরে গাড়ি চালাতে থাকে। কিন্তু নি’য়তি মনে হয় অন্য কিছুই লিখে রেখেছিলো।

কথায় আছে না “পরের জন্য গ’র্ত খুঁ’ড়’লে সেই গ’র্তে নিজেকেই পরতে হয়।”

ইমনের সাথে ও তেমন কিছুই হয়েছে। হুট করেই এই ফাঁকা রাস্তায় কোথা থেকে একটা ট্রা’ক আসলো কেউ বুঝতেই পারলো না। ট্রা’ক টা হয়তো ভাবছে গ্রামের রাস্তা এখন পুরোই ফাঁকা তাই অনেক স্পি’ডে চালিয়ে যেতে ছিলো।ট্রা’ক ভর্তি ইট হয়তো কেউ ঘর তুলবে তার জন্য। ট্রা’ক ড্রাইভার ফুরফুরে মনে স্পি’ড বাড়িয়ে চালাতে থাকে। হুট করে সামনে সি.এন.জি দেখে গাড়ির স্পি’ড তারাতাড়ি কমাতে যাওয়ার আগেই যা ঘটার ঘটে যায়। ইমনদের সি.এন.জি ততক্ষণে ট্রা’কের ধা’ক্কা খেয়ে খা’দে পরে যায়। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই।

সি.এন.জি ড্রাইভার আর ইমন দুইজন ছিটকে গিয়ে দুইজন দুই দিকে পরে।ইমন শুধু পরেনি মাথা গিয়ে গাছের সাথে বাড়ি খায়।

সি.এন.জি ড্রাইভার তেমন মা’রা’ত্ম’ক ব্যাথা না পেলেও কম ব্যাথা পায়নি। কিন্তু ইমন গুরুতর ভাবে আ’ঘাত পেয়েছে। ইমন শুধু একটা চিৎকার দিয়ে সেখানেই জ্ঞান হারিয়েছে। ড্রাইভারের এখনো জ্ঞান রয়েছে। সে ব্যাথায় চিল্লাতে থাকে।

ট্রা’ক ড্রাইভার ততক্ষণে তার ট্রা’ক নিয়ে উধাও। গ্রামের লোক যদি একবার টে’র পায় তাহলে তার গাড়ির দফারফা তো করবেই।সাথে তাকে ও মেরে আধামরা করবে।

ইরহানদের গাড়ি অনেক টাই আগে ছিলো।চলেও গেছে ইরহান জানতেও পারলো না তার জন্য ফাঁ’দ পেতে সেই ফাঁ’দে ইমনই পরেছে।

ইমন যাকে মারতে চেয়েছিল সে সুস্থ ভাবে বাড়িতে যাচ্ছে। আর সে এখানে খা’দে জ্ঞান হারিয়ে পরে আছে।কেউ তুলে হাসপাতালে নেওয়ার ও মানুষ নাই।

“একেই হয়তো বলে,,, উপরের দিকে থু থু ছুড়ে মারলে সেই থু থু এসে নিজের মুখেই পরে।”

ড্রাইভারের জ্ঞান থাকলেও নিজে থেকে উঠার তার সামর্থ নেই।ব্যাথায় জোরে জোরে কান্না করছে আর ওমা ওমা বলে যাচ্ছে। এতক্ষনে বুঝতে পারছে কি করতে যাচ্ছিলো সে। টাকার লোভে অন্ধ হয়ে সে কিনা অন্য একটা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার চিন্তা করছিলো? এই লোভের শা’স্তি ই এখন সে পাচ্ছে।

প্রায় অনেক সময় যাওয়ার পর কিছু মানুষের আর রিক্সার আওয়াজ শুনতে পায় ড্রাইভার টা।চিললিয়ে ডাকতে থাকে কেউ আছেন বাঁচান। দয়া করে বাঁচান। রিক্সা চালক আর তার পিছনে দুইজন লোক বসেছিলো।কারো কান্না আর চিল্লানোর আওয়াজ শুনে রিক্সা থামিয়ে দেয়। হাতে ট’র্চ ছিলো ট’র্চ এদিক ওদিক মারতে থাকে। তারপর নিচের দিকে টর্চ মারতেই র/ক্তা’ক্ত অবস্থায় ড্রাইভার কে দেখতে পায়।তিনজন ই এগিয়ে যায়। বুঝতে বাকি নেই এ’ক্সি’ডে’ন্ট হয়েছে। ধরাধরি করে ড্রাইভার কে নিয়ে উঠার সময় ইমনের দিকে চোখ যায়।

একজন ড্রাইভার কে ধরে নিয়ে যায়। আর দুইজন ইমনের কাছে এগিয়ে গিয়ে ইমনের নাকের কাছে হাত নেয় দেখার জন্য বেঁচে আছে কি না। শ্বাস চলছে কিনা বুঝতে পারে না। তারপর হাত টেনে নিয়ে না’ড়ি পরীক্ষা করে। তারপর বুঝতে পারে এখনো বেঁচে আছে। দুইজন মিলে পাঁজাকোলে করে ইমন কে উপরে নিয়ে আসে। এখন দুইজন কে কিভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাবে ভাবতে থাকে। এর মধ্যে একটা সি.এন.জি দেখতে পায়। লোকটা হয়তো রাত হওয়ায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

এই সি.এন.জি করেই ইরহান গিয়েছে।ইরহান কে পৌঁছে দিয়েই লোকটা মাত্র এসেছে। এই সি.এন.জি করেই দুইজন কে হাসপাতালে নিয়ে যায় লোকগুলো।

————————————

ইরহান বাজার নিয়ে দরজা একটু ধা’ক্কা দিতেই খুলে যায়। এই মেয়ে টা কে বলেও ঠিক করতে পারলো না ইরহান।কতো বলেছে এভাবে দরজা খুলে রাখবে না।। ভিতর থেকে দিয়ে রাখবে আমি এসে ডাক দিলে তারপর দরজা খুলবে।কতো বিপদ আপদ আছে।কিন্তু এই মেয়ে শুনলেতো দেখো ঠিকই দরজা খুলে বসে আছে।

ঘরে ঢুকে দেখে চারদিকে অন্ধকার।আশ্চর্য যুথি এই সময় বাতি বন্ধ করে রেখেছে কেনো?

ইরহান যুথিকে ডাকতে ডাকতে অন্ধকারে বাতির সুইচের দিকে এগিয়ে যায়। সুইচে টিপ দেওয়ার আগেই হুট করে পিছন থেকে কেউ ঝাপটে ধরে ইরহান কে।

ইরহান ঘাবড়ে গিয়ে ও নিজেকে সামলে নেয়। এটা তার যুথি রানী স্পর্শতেই বুঝে গেছে। বুকের কাছে রাখা নরম তুলতুলে হাত দুটো আঁকড়ে ধরে মুখের কাছে এনে চুমু বসায়।হাতের রেশমি চুরি গুলো তখন মন মাতানো রিনিকঝিনিক শব্দে বেজে উঠে।

কি ব্যাপার ম্যাডাম আজ মনে হয় শাড়ি পরেছে!

হুম।

আমিতো আমার যুথি রানী কে এখনো শাড়ি পরা অবস্থায় দেখতেই পারলাম না।তারপর যুথির হাত ছেড়ে ইরহান বাতি জ্বালিয়ে বলে দেখিতো সামনে এসো কেমন লাগছে দেখি।

যুথি নিজের হাতের বাঁধন শক্ত করে ধরে।

কি হলো ম্যাডাম সামনে আসুন না।এই অ’ধ’ম কে একটু চোখ ভরে দেখার সুযোগ করে দিন।

পরে দেইখেন আগে আপনাকে একটা কথা বলার আছে।

হুম বলো শুনি কি কথা। তোমার কন্ঠের ঐ মিষ্টি সুর শুনে আমার কানটা ধ’ন্য করি।

আপনি আগে চোখ বন্ধ করুন।

কেনো?

আহা করুন না।এতো প্রশ্ন কেন করেন।

আচ্ছা বাবা করলাম বন্ধ।বলেই ইরহান তার দুই চোখ বন্ধ করে।

একদম চি’টিং করবেন না কিন্তু।

ওকে।

যুথি তারপর ইরহান কে ছেড়ে ইরহানের সামনে এসে দাঁড়ায়। তার বোকা পুরুষ কি সুন্দর করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। ইরহান খবর টা পেয়ে কি করবে ভাবতে পারলো না যুথি। ইরহানের গলা জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,,,

আমার বোকা পুরুষ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।সে দূর দেশে যাওয়ার আগে আমাকে একটা উপহার দিয়ে যাচ্ছে। তারপর ইরহানের একটা হাত নিজের পেটের উপর রেখে বলে,, আমার বোকা পুরুষের অ’স্তিত্ব এখানে। আপনি বাবা হতে চলেছেন।কথাটা বলেই ইরহানের গালে একটা চুমু খেয়ে ইরহান কে ছেড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে যুথি।

কিছু সময় পরও ইরহানের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে চোখ খুলে।ইরহান একই ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু এখন ইরহানের চোখ দুটো খোলা। ইরহানের হাত এখনও যুথির পেটেই আর দৃষ্টি ও সেখানেই।

কি হলো আপনি খুশি হননি?

যুথির কথায় ইরহানের ধ্যা’ন ভাঙে। যু-যুথি তুমি কি বলেছো আবার বলোতো।আমি মনে হয় ভুল শুনেছি।

কিছু ভুল শুনেননি।সত্যি শুনেছেন।

ইরহান যুথির চোখের দিকে তাকালে যুথি চোখের ইশারায় বলে হুম।

ইরহান আর এক মুহূর্ত ও দেরি করে না।হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পরে। তারপর শাড়িটা একটু সরিয়ে পেটে অজস্র চুমু আঁকতে থাকে। আর অস্ফুট স্বরে বলতে থাকে যুথি তুমি এটা আমায় কি বললে? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এতো কষ্টের মাঝে ও আমার মন খুশি হয়ে গেলো যুথি।

তারপর দাড়িয়ে যুথিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। কাঁধে চোখের পানির অ’স্তি’ত্ব টে’র পায় যুথি।

ইরহান কিছু টা স্বাভাবিক হয়ে আসলে যুথি বলে উঠে,,, এটা কোনো কথা হলো বলেন তো? আমি কতো কষ্ট করে সাজলাম আর আপনি আমাকে ভালো করে দেখলেনই না হুহ্।

যুথির কথায় ইরহান যুথিকে ছেড়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।তারপর পা থেকে মাথা পর্যন্ত মোহনীয় দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।

আমার খড়কুটোর বাসায় মনে হচ্ছে আজ চাঁদের আলো নেমে এসেছে!

যুথি ইরহানের কথায় আর দৃষ্টিতে ল’জ্জা পেয়ে যায়। কথা ঘুরাতে বলে খাবেন না? অনেক রাত হয়ে গেছেতো।

খাবো তো তবে অন্য কিছু। ভাত খাওয়ার খিদে নেই আজ।মন যে অন্য কিছু চাইছে।বলেই যুথিকে কোলে তুলে নেয়। যুথি লজ্জায় ইরহানের বুকে মুখ গুঁজে।

ছোট্ট ঘরটায় চাঁদের আলো উঁকি দিচ্ছে জানালার ফাঁক দিয়ে। ঘরের ভিতর দুইজন মানুষ একে অপরের ভালোবাসায় সি’ক্ত।

ইরহানের ভালোবাসায় যখন যুথি অন্য দুনিয়ায় বি’চরণ করছে তখন ইরহান যুথির কপালে নিজের অধর ছুইয়ে গেয়ে উঠে,,,,,

“তুই হবি রাত আর আমি হবো চাঁদ!
জোসনায় বাড়ি আমাদের। ”

————————————-

ভোর রাত্রে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ইরহানের। যুথি তার বুকেই মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে।

কান্নার আওয়াজ শুনে ইরহানের কপাল কুঁচকে যায়।এতো সকালে কে কান্না করছে? কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে তাছলিমা বানু।

ইরহান যুথিকে বালিশের উপর আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে নিজেকে ঠিক ঠাক করে বেরিয়ে যায় দেখার জন্য কি হয়েছে।

#চলবে,,,,,,,,,,,,

কেমন হলো ইমনের শা’স্তিটা?🤧#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২৩
#Jhorna_Islam

দাদি ও দাদি দাদি গো আমার বোকা পুরুষ কই? কই গেলো দাদি উনি?

দাদি কোথায় উনি? বোকা পুরুষ আপনি কই? এখনই আমার সামনে আসুন।আপনি আমার সাথে লুকোচুরি খেলছেন তাই না?

এইই বোকা পুরুষ ডাক দিয়েই চিললিয়ে উঠে যুথি।

যুথির দাদির ঘুম ভেঙে যায় যুথির চিল্লানিতে।পাশের রুমেই ঘুমিয়ে ছিলো । এর মধ্যে যুথির চিল্লানিতে ঘাবড়ে যায়।শোয়া থেকে উঠে তারাতাড়ি যুথির কাছে আসে।

কি হইছে বু? শরীর খারাপ লাগতেছে? তুই ঠিক আছিস?

আ-আমার বোকা পুরুষ কই দাদি? কই গেছে দেখতে পাইতেছি না কেন তাকে আমি?

যুথির দাদি যুথির পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,,, নাত জামাই তো মেলা আগে বের হয়ে গেছেরে।এখন মনে হয় বিমান উড়াল ও দিয়া ফেলছে।

আহ্ দাদি একদম মজা করবানা আমার সাথে। আমি মোটেও মজা করার পরিস্থিতিতে নেই।

— মজা করছি না বু।সত্যি নাত জামাই সেই কখন চলে গেছে।

এইটা কিভাবে সম্ভব কিছু সময় আগেও উনি এইখানে ছিলেন আমার পাশে। বলেই কিছু একটা মনে পরায় ধ’র’ফ’রিয়ে বালিশ সরিয়ে নিজের মোবাইল বের করে। মোবাইলে সময় দেখে মাথায় বা’জ পরে যুথির। এতো সময় কোথা দিয়ে চলে গেলো?

এখন সময় ভোর ৪ঃ৩৫। আর ইরহানের ফ্লাইট ৪ টায়।এতো সময় সে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলো।তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার বোকা পুরুষ তাকে না বলেই চলে গেছে। বিছানা থেকে তারাতাড়ি নেমে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।

এই দিকে যুথির দাদি চিল্লাচ্ছে যুথি এই সময় এই অবস্থায় বাইরে যাস নে। আর তুই দৌড়াচ্ছিস কেন? ভুলে গেলি এখন কিন্তু তুই একা না। যুথি যুথিরে।কে শুনে কার কথা যুথি ততক্ষণে গেইটের কাছে এসে উঁ’কি ঝুঁ’কি দিচ্ছে। সব আবছা এখনো দিনের আলো ফোটেনি।

যুথি এক মনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে না বলে এভাবে চলে যেতে পারলো? সে কি এতোটাই পর যে চলে যাওয়ার আগে বলে যাওয়ার ও প্রয়োজন মনে করলো না। তারে ঘুমে রাইখা তার বোকা পুরুষ চলে গেলো?

নানান ভাবনা চিন্তা করতে থাকে যুথি।হুট করে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে যুথি।

পিছনে ঘুরে ছলছল নয়নে দাদির দিকে তাকায়।

যুথির দাদি যুথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। মাথায় স্নেহময় স্পর্শ পেয়ে কান্নারা যেনো বাইরে বেরিয়ে আসার পা’য়’তা’রা করছে।ঠোঁট কামড়ে ধরে ও নিজের কান্না দমাতে পারে না যুথি। ডুকরে কেঁদে উঠে।

দা-দাদি উউনি চলে গেছে আমারে রাইখা।

ও দাদি!

এমন করে কেউ? সে তো আর চিরদিনের জন্য যায়নি।কয়েক বছর পরই ফিরে আসবে। তুই কাঁদলে নাত জামাইর ঐখানে মন টিকবো? তোর চোখের পানি তে তো আরো কষ্ট বাড়বো।এতো দূরের পথ যাচ্ছে তুই না কেঁদে দোয়া কর যেন সঠিক ভাবে পৌঁছাতে পারে।

আর কাদিস না বু।এই সময় এইখানে থাকা তোর ঠিক না ঘরে চল। তোকে সে ইচ্ছে করেই ঘুম পারিয়ে গেছে। নয়তো এই যে এখন কেমন করছিস এর থেকে ও বেশি করতি।আমাকে রাতে আস্তে করে ডেকে আমার দুই হাত ধরে অনুরোধ করে বলে গেছে তোরে যেন দেখে রাখি।আগলে রাখি। তার সন্তানের যেনো কিছু না হয়। নাত জামাই তোরে অনেক ভালোবাসেরে যুথি।তুই সজাগ থাকলে অনেক কাঁদতি তাই না ডেকেই চলে গেছে। বলেই যুথিকে ঘরে নিয়ে যেতে থাকে।

যুথি ও মূর্তির মতো ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

ঘরে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয় যুথিকে যুথির দাদি। তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে নানান গল্প শোনাতে থাকে যেন মেয়েটা একটু ঘুমায়।

যুথির চোখে তো আর ঘুম আসবে না। সে সকাল থেকে সব গুলো ঘটনা এক এক করে স্মৃতিচারণ করতে ব্যস্ত।

_______________________

সকালে ইরহান ঘর থেকে বের হয়ে এসে দেখে তাছলিমা বানু আর সকলে কোথায় যেনো যাচ্ছে। তাছলিমা বানু আর লিমা কান্না করছে।

ইরহান এগিয়ে গিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায়। তারপর সকলের উপর দৃষ্টি দিয়ে জানতে চায় কি হয়েছে। কোনো ঝামেলা বা কারো কিছু হয়েছে কি না।

ইশান রা’গী চোখে তাকায়। এর জন্যই তো এমন হলো।আবার দেখো এসে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে।

ইরহান উত্তরের আশায় সকলের দিকে তাকিয়ে থাকলেও কেউ তাকে কোনো উত্তর দেয়নি।

চুপচাপ চলে যায়। ইরহান এদের ব্যবহারে বেশ অবাক হয় আশ্চর্য এখন এদের রা’গের কারণ টা মাথায় ঢুকলো না।এদের তো সব দিয়ে এসে পরেছে।নিজে কষ্টে থেকে এদের সুখী করেছে।তাও এদের এতো কিসের রা’গ বুঝলনা।

এদের কান্না দেখে এগিয়ে আসাটাই ভুল হয়েছে। কিছু মানুষ দয়া দেখানোর ও যোগ্য না।

ইরহান গেইটের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। তারপর নিজেও ঘরে চলে যায়।

সারাদিন দুইজন এক সাথে ছিলো।ইরহান আর যুথি কেউ কাউকে চোখের আড়াল করেনি। সারাক্ষণ ইরহান যুথির পাশে বসে যুথির হাতটা আঁকড়ে ধরে বসে ছিলো।আর কিছু সময় পর পর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো যুথির দিকে। যুথিকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে।কতো শতো গল্প করেছে। বাচ্চা কে নিয়ে কতো কথা বলেছে।

দুপুরের দিকে ইরহানের ফোনে একটা ফোন আসে।জানতে পারে ইমনের এ’ক্সি’ডে’ন্টে’র কথা।আর এও জানে ইমনের অবস্থা শুরুতে খারাপ ছিলো এখন মোটামুটি ভালোই আছে। এতটুকুই জানতে পারে। ইরহান ইশান কে ফোন করতে নিয়ে ও করেনি।যখন ওরা বলেনি এসবের কথা ইরহান তাই আর যাবেও না দেখতে খোঁজ ও নিবে না হয়তো ভালোই আছে।

যাবে না বলেও যাওয়ার জন্য মন আনচান করছিলো ইরহানের যতোই মা আলাদা হোক।বাবা তো একই।একই বাবার র’ক্ত বইছে তিনজনের শরীরে।যুথিকে ইরহান ব্যাপারটা বললে যুথি বলে যাওয়ার দরকার নেই। বলেছে যখন ভালো আছে নিশ্চয়ই ভালো আছে। যুথি ইরহান কে আর যেতে দেয় নি।

এমনিতেই রাতে চলে যাবে।এগুলোর সামনে গিয়ে এখন লাভ নেই। এক শ;য়তান অসুস্থ হয়েছে।বাকি গুলো না যদি আবার এমন কিছু করে বা বলে যেটাতে ইরহান কষ্ট পায় তাই যুথি আর ইরহান কে যেতে দেয়নি।

বিকেলে যুথির দাদি ও নিজের সব জিনিস পত্র নিয়ে এসে পরে।রাতে যেহেতু ইরহান চলে যাবে তাই বিকেলেই এসে পরে।প্রথমে আসতে চান নি উনি।নাত জামাইয়ের বাড়িতে কিভাবে থাকবে? মানুষ কি বলবে? ইরহানের অনেক অনুরোধের পর রাজি না হয়ে পারেনি।

রাতের খাবার সকলে এক সাথে খায়।যুথির দাদি গিয়ে শুয়ে পরে খাবার খেয়েই।ইরহান ও যুথিকে নিয়ে শোয়। যুথি ইরহানের বুকে মাথা রেখে প্রচুর কাঁদে। একটাই কথা বলে আপনার যেতে হবে না বোকা পুরুষ কোথাও যেতে হবে না। আপনি চলে গেলে আমি থাকবো কি করে? আমার টাকা পয়সা কিছু লাগবে না। আপনি যাইয়েন না।

ইরহান প্রতি উত্তরে কিছু বলেনি বুকের মাঝে আগলে ধরে ছিলো।তারপর বলে আর কাঁদে না এবার একটু ঘুমাও।

না আমি ঘুমাবো না।আমি আপনাকে দেখবো একটুও ঘুমাবো না। আবার কবে এই বুকে মাথা রাখতে পারবো জানি না একটুও ঘুমাবো না।
বলে ইরহানের দিকে তাকিয়ে থাকে ইরহানের বুকে মাথা রেখে। ইরহান যুথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে যুথির চোখ লেগে যায় আর ঘুমিয়ে পরে বুঝতেই পারেনি।এই সুযোগে ইরহান যুথিকে না বলেই চলে গেলো।

যুথির দাদি ঘুমের মাঝে নড়ে উঠায় যুথির ভাবনায় ছে’দ ঘটে।এতো সময় আগের কথা গুলো ভাবতেছিলো।ভোরের আলো ফোটে উঠেছে চারদিকে।

যুথি শোয়া থেকে উঠে কি মনে করে আলমারি টা খোলে।ইরহানের যতগুলো জামা কাপড় ছিল সবই যুথি দিয়ে দিয়েছিল।কিন্তু এই খানে একটা টি-শার্ট দেখতে পায়। এটাও তো যুথি দিয়ে দিয়েছিল। টি-শার্ট এর উপরে ইরহানের মোবাইল রাখা।যুথির কলিজা মো’চড় দিয়ে উঠে। লোকটা কি ভুলে ফোন টা রেখেই চলে গেছে? এখন যোগাযোগ করবে কিভাবে? লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম।

ফোনটা হাতে নিতে গিয়ে দেখে ফোনের নিচে একটা কাগজ ভা’জ করে রাখা।

যুথি কাগজ টা হাতে নিয়ে মেলে দেখে একটা চিঠি। যুথি পড়া শুরু করে,,,,,,,,

এইযে আমার বাচ্চার আম্মু ❤️

খুব রে’গে আছো আমার উপর তাই না? অনেক কান্না ও করেছো ঘুম থেকে উঠে আমাকে না দেখতে পেয়ে। আমি কি করবো যুথি রানী? আমার যে আর কোনো উপায় ছিলো না। তোমাকে কান্নারত অবস্থাতে দেখে আমি কখনো আসতে পারতাম না। আমার যে আসাটা খুব জরুরি এখন তুমি আর আমিতো একা নেই। আমাদের মাঝে আরেকজন আসতে চলেছে তার কথাটা ও তো ভাবতে হবে তাই না? তুমি একদম মন খারাপ করবে না।নিজের খেয়াল রাখবে আর আমার বাবুরও। আমি তোমার থেকে বিদায় নিতে পারতাম না কখনোই।আর না এই কথাগুলো তোমাকে আমি সামনা সামনি বলে যেতে পারতাম তাই চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে গেলাম। অনেক কিছু লিখার ছিল কিন্তু কিছুই আমি লিখতে পারতেছি না যুথি রানী। মোবাইল টা কিন্তু আমি ভুলে ফেলে আসিনি।ঐটা এখন তোমার আমি ইচ্ছে করেই রেখে এসেছি।আমি ঐ দেশে গিয়ে ফোন নিয়ে নিবো।এটা ছাড়া আমার যুথি রানী কে দেখবো কি করে? আর টি-শার্ট টা তোমার জন্যই রেখে এসেছি।আর আমি তোমার একটা ওড়না নিয়ে এসেছি। ওড়নার মাঝে তো আমার যুথির ছোয়া আছে তাই।

আর কেঁদো না।নিজের খেয়াল রেখো।আমি জানি আমার যুথি রানী ঠিক পারবে সে এতোটাও দূর্বল নয়।আমি পৌঁছে তোমায় ফোন দিবো ঠিক আছে? ফোনটা নিজের হাতের কাছে রাখবে সব সময়।

ভালো থেকো বউ।তোমার বর তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসে।

ইতি তোমার এ’কা’ন্ত বোকা পুরুষ।

যুথি চিঠি টা পরে ইরহানের টি-শার্ট টা বুকের মাঝে আগলে ধরে নিচে বসে।চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পরছে।মনে মনে একটা কথাই বলে,,,,

“আপনার যুথী রানী দূ’র্ব’ল খুব দূ’র্ব’ল আপনার ব্যাপারে আমি সবসময়ই দূ’র্ব’ল।”

#চলবে————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here