#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২৬
#Jhorna_Islam
একবার দেখা পাবো শুধু এই আ’শ্বা’স পেলে
এক পৃথিবীর এটুকু দূ’র’ত্ব
আমি অবলীলা’ক্র’মে পাড়ি দেবো।
তোমাকে দেখেছি কবে, সেই কবে, কোন বৃহস্পতিবার
আর এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না।
___ মহাদেব সাহা
যুথির এখন সময় যেন কাটতেই চায় না। শুধু এই আশায় দিন পাড়ি দেয় কখন সময় হবে তার বোকা পুরুষ তাকে কল দিবে আর সে ঐ মুখ খানা দেখে তৃ’ষ্ণা’র্থ হৃদয়ের তৃ’ষ্ণা মিটাবে।
প্রতিদিন নিয়ম করে কথা হয়। দূরত্ব বাড়লে নাকি ভালোবাসা কমে যায় ইরহান যুথির ভালোবাসা এক ফোটা ও কমেনি।দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সত্যিকারের পবিত্র ভালোবাসা গুলো বুঝি এমনই হয়।
আজ শুক্রবার কাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগে কথা বলেছে যুথি ইরহানের সাথে। ইরহান কতো বলেছে ঘুমাও এখন তোমার প্রচুর ঘুমের দরকার নয়তো শরীর খারাপ করবে।
যুথির সেই এক কথা এসবে শরীর খারাপ করবে না আমার।আপনার সাথে কথা না বলতে পারলে আর মন ভরে আপনাকে দেখতে না পারলেই শরীর মন দুটোই খারাপ হবে আমার।
যুথি একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠে। তারপর আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে হাত মুখ ধুয়ে আসে।হাত মুখ ধুয়ে এসে দেখে যুথির দাদি খাবার নিয়ে বসে আছে।
যুথির খাবার দেখেই খুদা লেগে গেছে। তাই দেরি না করে তারাতাড়ি খেতে বসে পরে। খেতে খেতে দাদি কে জিজ্ঞেস করে,, দাদি তুমি খাইছো?
না খাবো তুই আগে খাওয়া শেষ কর।
কি বলো কতো বেলা হয়ে গেছে এখনো না খেয়ে বসে আছো কেন? আমার সাথেই খেতে বসতে পারতে।
আমি খেয়ে নিবো বু তুই টেনশন নিস না তুই ভালো করে খা।
খেয়ে নিও কিন্তু তুমি।
হুমম খেয়ে নিবো।
যুথি খাবার শেষ করে পুকুর পাড়ের দিক থেকে একটু ঘুরে আসে।নয়তো বসে থাকতে থাকতে হাঁটু আর কোমড় ধরে যায়।
হাটাহাটি করে এসে ফোন হাতে নিয়ে বসে।তার মানুষটার কল দেওয়ার সময় হয়ে গেছে।
ঠিক টাইমে ইরহান কল দেয়।যুথি কল রিসিভ করে সালাম জানায়।
ইরহান সালামের জবাব দিয়ে জানতে চায়,,, আমার বাচ্চার আম্মুর শরীর ঠিক আছে?
একদম ঠিক আছি।
সকালের খাবার খেয়েছো?
হ্যা আপনি খেয়েছেন?
এইতো মাত্র খেয়ে তারপর তোমায় কল দিলাম।
ফোন টা একটু পেটের কাছে নাও তো দেখি সে কতটুকু বড় হয়েছে কেমন আছে।
যুথি পেটে হাত দিয়ে দেখায় এখনই কি বড় হবে?আমাকে দেখে বুঝাই যায় না। আর চিন্তা করবেন না সে ভালো আছে।
কিন্তু একটা কথা বলুনতো!
কি কথা?
আপনি এরকম শুকাইতেছেন কেন?
যুথির কথায় ইরহান মুচকি হেসে বলে,, তাই নাকি আমি শুকিয়ে গেছি? কি করবো বলো এখানে তো আর বউয়ের ভালোবাসা আদর কিছুই পাচ্ছি না। আর না বউয়ের হাতের রান্না খেতে পারছি তাই মনে হয় শুকিয়ে যাচ্ছি। ব্যাপার না সব জমিয়ে রাখো দেশে গেলে বেশি বেশি আদর ভালোবাসা দিয়ে মোটা বানায় দিও।
যাহ্ আমি মজা করছি না।
শুকাইনি বাচ্চার আম্মু। আমি আগের মতোই আছি।ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছে এমনই মনে হয়। আমার কথা ছাড়ো তুমি ঠিক সময় খাবার খাবে।
আর কতো খাবো? খেতে খেতে দেখেন না মোটা হয়ে যাচ্ছি!
এসব বলে না। আমি কাজ করি কার জন্য? যখন যেইটা খেতে মন চায় খাইবা।যেইটা পরতে বা কিনতে মন চায় কিনে ফেলবা। যতো মোটা হওয়ার হও আমার কোনো সমস্যা নেই। মোটা হওয়ার ভয়ে খাওয়ায় কোনো অনিয়ম করবা না। টাকার কোনো চিন্তা করবানা।
শুনো আজ বিকেলের দিকে গিয়ে তোমার নামে ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলে এসোতো।আমার দেশে থাকতেই খোলা দরকার ছিলো। কিন্তু মনে ছিলো না। তারপর ঐ দিক দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে একটু চে’ক আপ করিয়ে আসবা।
বাজার সদাই নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। রাস্তার ঐ পাশের লিয়াকত আছে না? ওরে আমি বলে আসছি।প্রতি সপ্তাহে বাজার সে করে দিবে।কি কি লাগবে লিস্ট করে দিবা ও এনে দিবে। আমি এখান থেকে ওকে টাকা পাঠিয়ে দিবো।যা যা লাগবে বলে দিবা এনে দিবে বুঝছো?
ইরহানের কথা মতো যুথি দাদি কে নিয়ে গিয়ে ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলে আসে।চে’ক আপ ও করিয়ে আসে।
রাতে ইরহান কল দিয়ে যখন বলে,, মতো কি লাগবে বলতে কখনো লজ্জা বা সংকোচ পাবে না বাচ্চার আম্মু।
যুথি তখন হুট করে বলে উঠে,, “আমার আপনাকে লাগবে বোকা পুরুষ। ”
———————————–
ইমনের অপারেশন হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আ’ঘাত আর পায়ের জন্য সব মিলিয়ে এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে বলেছে।
এই দিকে তাছলিমা বানু সব জায়গা সম্পত্তি দুই ছেলের নামে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। ইশান তাছলিমা বানুর সাথে ভাব জমিয়ে একটু বেশি চেয়েছিল।
ইশান ছোট। ছোটদের নাকি বেশি দিতে হয়।আরো নানান কতো যুক্তি দিয়েছে। তাছলিমা বানু শুনেও কানে তুলেনি।দুই জন কে সমান ভাগ দিয়েছে।
সব কিছু নিজের নামে পেয়ে ইশানের এখন পাত্তাই পাওয়া যায় না। ইমনের অপারেশনের সময় ও ছিলো না। একবার দেখতেও যায় নি।
তাছলিমা বানু এই বয়সে কি করে একা একা শহরে যাবে? শেষে দিনা কে নিয়ে যায় ইমনের কাছে।
ইমনের আর দুইদিন পর রিলিজ দিবে। লিমা বলে দিয়েছে ইমনকে নিয়ে সে তার বাপের বাড়িতে উঠবে।এই খানে ইমনকে দেখাশোনা করার অনেক লোক আছে।
মোট কথা লিমা আর ঐ বাড়িতে যেতে চাইছে না। যার জন্য এতোদিন ঐ বাড়িতে পরেছিলো সেই কাজ হয়ে গেছে। জায়গা জমি ইমনের নামে পেয়ে গেছে। এখন ঐ বাড়িতে গিয়ে এই বুড়ির মুখ ঝা’মটা শোনার ইচ্ছে নেই। অনেক সহ্য করেছে আর করবে না।
এখন ইমনের পা ঠিক না হলে নাই।লাঠি দিয়ে হাটলেও লিমার সমস্যা নেই। সে এখন বাপের বাড়ি থাকবে।
তাছলিমা বানু আর কি বলবে লিমার কথা তে রাজি হয়ে যায়। এই বয়সে আসলেই সে ইমনের ভালো করে দেখাশোনা করতে পারবে না। এর থেকে ইমন সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত না হয় থাকুক।লিমার মা জো’য়ান আছে ভালো মতো সেবা যত্ন করতে পারবে মেয়ের জামাইর।
তাছলিমা বানু তো আর জানে না তার ছেলের বউ তার মতোই পেয়েছে।
—————————–
ইশান এখন হাসপাতালের ঐ নার্সের পিছনে পরেছে। কাজ নেই সারাদিন মেয়েদের পিছনে ঘুরাই তার স্বভাব। নার্স টা প্রথম কয়েকদিন পাত্তা না দিলেও এখন ইশানের সাথে নানান জায়গায় ঘুরতে যায়।
ইশান কে এখন হাসপাতালের সামনে প্রায় ই দেখা যায়। দুইজন যেমন নতুন প্রেমে পরেছে।
ইশানের অন্য দিকে এখন মন নেই।যে করেই হোক এখন তাকে এই সূচনা নামক সুন্দরী রমনীকে নিজের করে একদিনের জন্য হলেও পেতে হবে।
অনেক ঘুরিয়েছে এই মেয়েটা।তারপর এই মেয়েই ইশানের পিছন পিছন ঘুরবে।
———————————
বিকাল বেলা যুথি ইরহানের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে গেছে। এটা তার প্রতিদিনের অভ্যাস।ইরহান কে কলে রেখে ঘুমানো। মাঝে মাঝে বলে এটা আপনার শাস্তি। আমায় ঘুমের মাঝে রেখে আপনি চলে গিয়েছিলেন না? এখন প্রতিদিন আপনাকে আমি কলে রেখে ঘুমাবো।
ইরহান যুথির আবদার হাসি মুখে মেনে নিয়েছে। বউকে শান্তি তে ঘুমাতে দেখলে ইরহানের ও মনে প্রশান্তির হাওয়া লাগে।
যুথি ঘুমের মাঝে মাথায় কারো আদুরে স্পর্শ টে’র পায়। কেউ সযত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে আস্তে করে তাকে ডাকছে।
কয়েকবার ডাকার পর বুঝতে পারে দাদি তাকে ডাকছে।
চোখ পিটপিট করে তাকায় যুথি।
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে কি হয়েছে দাদি? ডাকছো কেনো?
উঠ উঠে বস।দেখ কে এসেছে। তোর সাথে দেখা করতে।
কে এসেছে প্রশ্ন করে উঠে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় যুথি।
#চলবে,,,,,,,,,
রিচেক করা হয়নি।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।পর্বটা ছোটো হয়ে গেছে জানি।বেড়াতে এসে লিখছি ভেবেছিলাম দিবো না আপনারা অপেক্ষা করে থাকবেন বলে তারাতাড়ি লিখে দিলাম।😪#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২৭
#Jhorna_Islam
কাজটা তুমি একদম ঠিক করোনি তাছলিমা একদম না। এর ফল তোমাকে ভোগতে হবে।চরম ভাবে ভোগবে তুমি। পা’প বাপকেও ছাড়ে না। তুমি আমার সহজ সরল ছেলেটা কে ঠ’কিয়েছো।এর জন্য তুমি কি শাস্তি পাবে তুমি ভাবতেও পারছো না। যাদের জন্য তুমি আমার বড় ছেলের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করা রোজগার নিজের করেছো একদিন তারাই তোমাকে পথে বসাবে।দূর দূর করে তাড়াবে।তোমাকে পথে বসতে হবে তাছলিমা। তুমি শান্তি পাবে না কোনোদিন শান্তি পাবে না। বলেই উচ্চ স্বরে হাসতে থাকে।
তাছলিমা বানু ভীত স্বরে বলে নাহ্ কখনো না এমন কোনোদিন হবে না। আমার সোনার টুকরো ছেলেরা কখনো এমন করবে না।
করবে করবে।স’বুর করো।সবার ক্ষেত্রে সবুরের ফল মিষ্টি হলেও তোমার ক্ষেত্রে তার উল্টো হবে। মাত্র তো একছেলে শাস্তি পেলো আরেকটা ও ঠিক শাস্তি পাবে দেখে নিও বলে আবার হাসতে থাকে।
লজ্জা করছে না এমন কথা বলতে? ভুলে যেওনা ইরহান যেমন তোমার সন্তান ইমন আর ইশান ও তোমার সন্তান। বাপ হয়ে নিজের ছেলেদের শাস্তি, কষ্ট পাবার কথা তুমি বলছো?
হতে পারে ওরা আমার ছেলে আমার র/ক্ত কিন্তু ওরা আমার মতো হয়নি।হয়েছে তোমার মতো।আর অপরাধী রা শাস্তি পাবার যোগ্য। নিজের ছেলে বলে যে সাত খু/ন মাফ তা তো নয়। সবাই তোমরা পা’পের শাস্তি পাবে।
তাছলিমা বানু নাআআআ বলেই লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে পরে। এই দিক ঐদিক তাকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেতে থাকে। হাত কাঁপতে থাকায় কিছুটা পানি নিজের শরীরেও পরে।পানি খেয়ে কিছু সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে।
এতোসময় স্বপ্ন দেখেছে।আর কথা গুলো ইরহানের বাবা ই বলেছে তাছলিমা বানুকে।
বুড়োটা মরেও শান্তি দিচ্ছে না আমাকে। ঘুমের মধ্যে এসেও জ্বা’লাচ্ছে। বেঁচে থাকতে কি জ্বালানো কম পরে গিয়েছিল নাকি? জীবন টা শেষ করে দিচ্ছে। বেঁচে থাকতে আ’ল্লা’দী করে কতো কিছু করে সম্পত্তি গুলো নিজের নামে করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি।ঠিক নিজের আগের বউয়ের ছেলেকে অর্ধেক সম্পত্তি দিয়ে গেছে। এজন্য বুড়ো টা দুই চোখের বি/ষ ছিল তাছলিমা বানুর।
স্বপ্ন কে বেশি পাত্তা না দিয়ে আবার শুয়ে পরে বিছানায়।মাত্র মনে হয় ভোর চারটা কি পাঁচটা বাজে।আরো অনেক সময় ঘুমাতে পারবে।
——————————–
ঐদিন যুথি ঘুম থেকে উঠে সীমা কে দেখতে পায়। সীমা কে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায় যুথি।
না বলে হুট করে চলে আসায় কিছু টা চিন্তিত ও হয় কিছু হয়েছে কি না।
সীমাকে বসতে বলে,,বিস্কুট, চানাচুর দিতে বলে দাদিকে।দাদি সব আনতে গেলে সীমা বলে,,আরে কি বলো কিছু লাগবে না।
— যুথি বলে তা হয় নাকি বান্ধবীর বাড়িতে এসেছো খালি মুখে যেতে দিব না।
— সে যাই হোক এটা বলো যুথি তোমার শরীর ঠিক আছে?
— হুম আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কিছু কি হয়েছে সীমা? না মানে হুট করে এলে যে সব ঠিক আছে তো?
— সব ঠিক আছে। তারপর লাজুক হেসে বলল আমিতো একটা বিশেষ কারণে এসেছি।
— কি কারণ?
— সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ের অনুষ্ঠান করবে।তার দাওয়াত দিতে এসেছি। তোমার শ্বাশুড়িদের বাবা ই দিয়েছে। তোমাকে ও তিনি দিতে চেয়েছিলেন আমি না করেছি।বলেছি আমার বান্ধবী কে আমিই দিবো।
না করতে পারবে না কিন্তু যুথি তোমাকে যেতেই হবে। এটা আমার অনুরোধ। আশা করছি রাখবে।দাদি কে নিয়ে যাবে সাথে।
যুথি হাসি মুখে সীমার দাওয়াত গ্রহন করে। বলেছে ইরহান যেতে বললে অবশ্যই যাবে।
তারপর দুইজন আরো নানান কথা বলে। বেশ কিছু সময় সীমা যুথির কাছে থেকে বাড়ি চলে যায়।
—————————————–
দেখতে দেখতে সীমার বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন এসে পরে।যুথি ইরহান কে বলেছিল তার যেতে কেমন যেনো লাগছে।যাবে কি না।
ইরহান বলেছে দাদিকে নিয়ে যাও।একটু ভালো লাগবে ঘুরে এসো। সব সময় এক জায়গায় থাকতে থাকতে মানুষের মাঝে একঘে’য়ে’মি চলে আসে। একটু ঘুরে আসলে ভালো লাগবে।
যুথি কি পরে যাবে ভেবে পাচ্ছে না। দাদির কাছে জানতে চাইলে দাদি বলে তুই বউ মানুষ শাড়ি পরে যা।
যুথি ভেবে চিন্তে ঠিক করে নেয় শাড়িই পরবে।তারপর সুন্দর করে শাড়ি পরে নেয়। নরমালি একটু সাজুগুজু করে।বিয়ে বাড়িতে তো আর এতো সাধারণ ভাবে যাওয়া যায় না। নয়তো মানুষ কি বলবে।শাড়ির সাথে হিজাব বেধে নেয় সুন্দর করে।
তারপর দাদি নাতনি তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরে সীমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
অন্যদিকে তাছলিমা বানু, লিমা,আর দিনা ও তৈরি হয়ে যায়। লিমা এখানে এসেছিলো তার আর ইমনের জিনিস পত্র নিতে। ইমনের পায়ের কোনো উন্নতি নেই। এখানে আসার পর জানতে পারে বিয়ের দাওয়াতের কথা।লিমা আবার এসব অনুষ্ঠান খুব পছন্দ করে। তাই শুনেই রাজি হয়ে গেছে যাওয়ার জন্য। লিমা আর দিনা উড়াধুরা সাজ দিয়েছে। তাছলিমা বানু ও বেশ দামী পোশাক পরে গয়না পরেছে।তিনজনই প্রচুর গয়না পরেছে। ইশানের কোনো খবর নেই। তাই তিন বউ শ্বাশুড়ি মিলে বেরিয়ে গেছে দাওয়াত খেতে।
বিয়ে বাড়িতে গিয়ে যুথির সাথে দেখা হয় ওদের। তিনজনই কেমন করে তাকিয়ে আছে।
দিনা যুথির পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে হাসতে হাসতে বলে,,বাহ্ কি কমদামী একটা শাড়ি।কয় টাকা দিয়ে কিনেছো?
নাকি কেউ কয়েকদিন পরে দা’ন করে দিয়েছে তোমায়?
দিনার কথা শুনে তাছলিমা বানু আর লিমা হেসে উঠে।
আহ্ ছোটো ঠিক বলেছিস।আমিও তাই ভেবেছিলাম। কেউ হয়তো দিয়েছে নয়তো ধার এনেছে। এমন ও হতে পারে রাস্তার পাশে ফুটপাতে পুরোনো জামা কাপড় নিয়ে বসে থাকেনা? ঐখান থেকে কিনেছে।কথাটা লিমা বলে তাচ্ছিল্যের সাথে।
হ্যা গো তাই হবে হয়তো।আর দেখোনা মাথায় হিজাব লাগিয়েছে।আহারে কি আর করবে বেচারি আমার খুব মায়া হয়। কি দেখে বিয়ে করেছিলো আর কোথায় থাকতে হচ্ছে আর কি পড়তে হচ্ছে। আহারে বেচারি। তবে বুদ্ধি টা কিন্তু দারুণ গয়না নেই বলে হিজাব পরে এসেছে। আহারে একটা বিশ ত্রিশ টাকা দামের চেইন ই কিনে নিতা।নয়তো আমাদের কাছে বলতা টাকা না থাকলে দিতাম।
এদের দুই জা এর কথা শুনে রা’গে ফুসতে থাকে যুথি।এতোসময় তার দাদি হাত ধরে আঁটকে ছিলো। চোখের ইশারায় না করেছিলো কিছু বলার জন্য। কিন্তু এইবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না।
কি যেন বলছিলেন আমার শাড়িটা কমদামি? হ্যা কমদামি তো? আমার স্বামীর নিজের হালাল পরিশ্রমের টাকায় কিনা। দাম টা আসল না কে কিনে দিয়েছে কিভাবে কিনে দিয়েছে সেটাই আসল।তাও তো আমি আমার স্বামীর নিজের রোজগার করা টাকায় পরতে পারছি।কারো কারো তো সেই ভাগ্য ও নেই।অন্যের করুণায় চলে।
নিজের স্বামীর রোজগার করা টাকায় একটা সুতো কিনার যাদের সামর্থ্য নেই তাদের আবার বড় বড় কথা।
আমি গয়না পরিনি তো কি হয়েছে? ” আমার স্বামীর ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় গয়না।” আমার আলাদা করে আর গয়নার প্রয়োজন নেই।
আর হ্যা মানুষের দান করা জিনিস আমি পরে আসিনি আমার স্বামীর দান করা ধুর দান বলছি কেনো? আমার স্বামীর ভি’ক্ষা দেওয়া জিনিস ই মানুষ পরে এসেছে। কথা গুলো বলেই যুথি দাদিকে নিয়ে অন্য দিকে চলে যায়।
খাবার টেবিলে আবার সবাই মুখোমুখি হয়। যুথি আর তার দাদি যেই টেবিলে বসতে যাবে।গিয়ে দেখে উল্টো পাশে তারাতাড়ি গিয়ে লিমা আর দিনা বসে পরেছে।তারপর যুথির দিকে তাকিয়ে লিমা বলে একদম আমাদের সাথে বসার চেষ্টা করবে না। তোমার সাথে কে বসবে নোংরা!
আমি আপনাদের সাথে বসবো ও না।আমার রুচিতে বাঁধে। আপনাদের তো আবার দান নেওয়ার স্বভাব আছে। আমার আবার বড় মন দান করতে ভালোই লাগে। এই টেবিল টা তো সামান্য ব্যাপার ছেড়ে দিলাম না হয়।
আসলে আপনাদের লজ্জা বলতে কিছু নেই।যাকে নোংরা বলছেন সাথে বসতে সমস্যা তার স্বামীর টাকায় কিনে আনা গয়নাই পরে আছেন।নি’র্ল’জ্জ মহিলা। ঐ গয়নায় ও নোংরা লেগে আছে ফেলে দেন।
দাদি চলো এখান থেকে এদের দিকে আমার তাকাতে ও রুচিতে বাঁধে।
তারপর যুথি আর তার দাদি অন্য টেবিলে গিয়ে খেয়ে নেয়। খাবার ফাঁকে যুথি তার দাদি কে বারণ করে এসব কথা ইরহানকে জানাতে নয়তো কষ্ট পাবে বেচারা।
দাদি ও বলে তুই চিন্তা করিস না আমি নাত জামাই কে কিছুই বলবো না।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সীমার পাশে গিয়ে বসে যুথি।একটু আকটু কথা বলে। এর মধ্যে ইরহানের ভিডিও কল আসে।সীমাকে বলে যুথি সো’র’গো’ল থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর কল রিসিভ করে। ইরহান জিজ্ঞেস করে খেয়েছে কিনা।
যুথি জানায় খেয়েছে।
শাড়ি পরেছো?
হুম।
আমায় ছবি তুলে দিও কয়েকটা।আর ভালো করে ক্যামেরার সামনে আসোতো দেখি আমার যুথি রানী কে।
যুথি একটা চেয়ার টেনে এনে আরাম করে বসে ইরহানের সাথে নানান ধরনের কথা বলতে থাকে।
এরমধ্যে ভিতর থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শুনতে পায়। কি হয়েছে দেখবে বলে,, ইরহানকে বলে পরে কল দেওয়ার জন্য। তারপর কল কেটে ভিতরের দিকে যেতে থাকে দেখার জন্য।
এর মধ্যে সামনে আরেকজন কে পেয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে ভিতরে এতো চিৎকার চেচামেচি কেনো?
মহিলা টা জানায় কার নাকি গয়না চুরি হয়ে গেছে।
যুথি কৌতূহল বসতো ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় তাছলিমা বানু চি’ল্লা’চি’ল্লি করছে। লিমা কাঁদছে। আর দিনা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
বুঝতে আর বাকি নেই লিমার গয়না চু’রি হয়ে গেছে।
#চলবে,,,,,,