গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন পর্বঃ ১৭

0
2088

গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ১৭
লেখাঃ Shakil
..
..
..
—— ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙ্গল ভাগ্নের প্যাঁ প্যাঁ কান্নায়।
ভাই আমি রান্না করছি খোকা (মিসকাত) খুব জালাচ্ছে। তুই উঠে পর অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। ওকে একটু রাখ আমি রান্নাটা সেরে ফেলি।
—– ভাগ্নে কে আপু রেখে চলে যেতেই ওর সব কান্না শেষ। আমি এখন উঠি নাই ও পাশে বসে থেকে খেলা করছে। এবার আমার কান ধরে আমার পিচ্চি ভাগ্নে টা টানা শুরু করে দিলো। না উঠে আর পারলাম নাহ।
—– শুভ সকাল ভাগ্নে। (চোখ ডোলতে ডোলতে)
ও কিছু বুজলো নাহ অথচ বুড়ো মানুষের মত দাঁতবিহীন মুখে একটা ফোঁকলা হাসি দিলো।
—– ভাগ্নে দাঁত ব্রাশ করেছো চলো এবার দাঁতব্রাশ করে আসি। ওকে কোলে নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁতব্রাশ টা করে ফেললাম। এবার ভাগ্নে কে বিছানায় রেখে হাত-মুখ ধুঁয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রুমে এসে ওর সাথে মজা করছি।
—–তুমিও সবার মত এবার আব্বুর কোলে উঠবে ভাগ্নে । আর বেশি দেরি নেই। তোমার ফুফু ও আব্বু কে উচিৎ শিক্ষাটা এবার দিবো আমি।
কিসের উচিৎ শিক্ষা ভাই,,,,!! ভাই আমি চাই তুই এসব নিয়ে কিছুই করবি না । আমার ভালোবাসা সত্যি হলে ও ঠীকই একদিন আমাদের দুয়ারে কড়া নাঁড়বেন।
—- আমার দিব্যি রইলো ভাই তুই কিছু করবি নাহ। কথা দে আমায় তুই কিছু করবি নাহ,,,??
— ওকে আপু আমি কিছু করবো নাহ। লক্ষি ভাই আমার বলে আপু আবার রান্না ঘরে চলে গেলো।
আমি বুজি নাহ আপু এমন কেন,,,!! যে মানুষ টা তাকে এতটা কষ্ট দিয়েছে বা দিয়েই চলেছে তার প্রতি ও এত নরম কেন। হয়তোবা এটাই একজন স্ত্রী হয়ে স্বামীর প্রতি ভালোবাসা।
—- একদিন দুইদিন এভাবে তিনমাস পার হয়ে গেলো অথচ মাসুদ ভাইয়ার পক্ষ থেকে কোন সাড়া শব্দ কিছুই আসলো নাহ। চাতক পাখির ন্যায় আমি আপু চেয়ে রইলাম কবে আসবে ঐ দিনটা তার আশায়।
—- এরই মধ্যে আব্বু এসে একদিন বললো আমরা এখনো কোথাও একসাথে বেঁড়াতে যাই নি। চলো সবাই কোথাও একসাথে একদিন ফ্যামিলি পিকনিকে যাই।
—- আব্বুর কথা শুনে আম্মু বললো হুমম ঠীক বলেছো তুমি। আমরা এখনো কোথাও একসাথে বেড়াতে যাই নি। আম্মু আব্বুর সাথে আমিও রাজি হয়ে গেলাম। এখন আপু রাজি হবে কিনা তার পালা। আম্মু আপুকে রাজি করানোর দায়িত্বটা আমায় দিয়ে দিলো।
—- আমি আপুর রুমে প্রবেশ করে দেখি ভাগ্নে খেলা করছে আর আপু শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে। ভাগ্নে কে কোলে নিয়ে বলতে লাগলাম ভাগ্নে আমরা এখনও সবাই একসাথে কোথাও বেড়াতে যাই নি চলো এবার কোথাও বেড়াতে যাই ৷
—– সেটা যদি কোন সমুদ্র সৈকত হয় তবে বেশ মজা হবে ভাগ্নে। তোমার নানা-নানী আমি রাজি এবার তুমি রাজি তো,,??
—- কবে যাওয়া হবে ভাই…??
যাক তাহলে ভাগ্নের উছিলায় যাকে বুঝাতে চেয়েছি সে এবার বুজেছে।
খুব শীঘ্রই আপু। চল না যাই আব্বু আম্মু বলছিলো।
—– আচ্ছা যাবো আমি। তুই সব আয়োজনটা সেরে ফেল।
থ্যাংকু আপু অনেক খুশী হয়েছি।
আমি সব আয়োজন সেরে ফেললাম। এবং পরেদিনই আমরা এক সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর উদ্দেশ্য পাড়ি জমালাম। ঠীক হলো আমরা তিনদিনের ট্যুর দিবো।
—– সেই মোতাবেক আমি একটা হোটেলে তিন দিন থাকার উদ্দেশ্য ল্যাপটপে রুম বুকিং দিলাম।
হোটেলে পৌঁছাতে আমাদের রাত হয়ে গেলো।
— রাতে সবাই একসাথে বসে থেকে বেশ মজা করলাম। আব্বু আম্মু যেনো গল্পে আসর টা মাতিয়ে দিলো। দুটো রুম বুক দিয়েছি তাই আব্বু আমি একরুমে ও আরেক রুমে ভাগ্নেসহ আপু আম্মু ঘুমিয়ে পড়লো।
—– ঘুমানোর আগে আপু সবাইকে বলে দিয়েছিলো আমরা সবাই যেনো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পরি কেননা সমুদ্র সৈকতের সকালের সূর্য উডয়ন দৃশ্যটা নাকি বেশ সুন্দর লাগে।
—– তাই আপুর কথা মত আমরা সবাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পরলাম। নাস্তা সেরে ফেলে রওনা দিলাম সমুদ্র সৈকতে। বেশ মজা হলো। দুপুর পর্যন্ত আমরা সবাই একসাথে ঘুরাঘুরি করলাম ।
—- আপু বললো ভাই আমরা এখন রুমে ফিরে যাই আবার বিকালে আসবো বিকালের সূর্যাস্থ দেখতে। সবাই দুপুরের দিকে হোটেলে ফিরে আসলাম। দুপুরের খাবারটা খেয়ে নিয়ে একটু রেস্ট করলাম।
—- বিকাল হয়ে গেলে আমরা সবাই আবার চলে গেলাম সমুদ্র সৈকতে। আমি ভাগ্নে কে কিছু খেলনা জিনিসপত্র কিনে দিবো বলে ভাগ্নে কে নিয়ে এক দোকানে গেলাম।
—- দোকানে গিয়ে কিছু খেলনা কিনে চলে আসতে গিয়ে পাশে একটু চোখ যেতেই মনে হলো অনু ও মিতুর মত দুইজন কেউ। কি ব্যাপার এখানে অনু ও মিতু কোথা থেকে আসলো,,,??
—- ভালো করে দেখি সত্যিই ওরা দুজন। আসলে আমি পাগল। না হলে এটা ভাবি নাকি । না আসার কি আছে হয়তোবা আমাদের মতই ওরাও এখানে ঘুড়তে এসেছে।
—– যাইহোক চলে আসলাম ভাগ্নে ও আমি সূর্যাস্থ দেখতে । সূর্যাস্থ না দেখে আমি ভাগ্নে কে আপুর কোলে দিয়ে অনু ও মিতুকে খোঁজ করতে চলে আসলাম। ওদের খোঁজ করার উদ্দেশ্যটা হলো ওদের সাথে মাসুদ ভাইয়া এসেছে কিনা তার জন্য । এত মানুষের ভিড়ে খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হলেও ওদের তিনজনকে খুঁজে পেলাম এক খাবার হোটেলের সামনে।
—– সম্ভবত রাতের খাবারটি খেতেই ওরা হোটেলে প্রবেশ করছে বলে মনে হলো । তাই আমি আর এক মূহুর্ত ও দেরি না করে তাড়াতাড়ি এসে আব্বু, আপু, আম্মুকে নিয়ে খাওয়ার জন্য ঐ হোটেলেই যাওয়ার উদ্দেশ্য যেতে লাগলাম।
—-মাত্র কয়েক মিনিটে আমরা হোটেলটিতে পৌঁছে গেলাম। আপুকে বললাম তোরা ভিতরে গিয়ে বস কি কি খাবো আমি তার অর্ডার দিয়ে আসছি ভিতরে।
—– খাবার অর্ডার করে হোটেলের ম্যানেজারকে বললাম আচ্ছা একটু আগে এখানে একটি ছেলে ও দুটি মেয়ে যে খেতে এসেছিলো ওরা কি ভিতরেই আছে??
—- নাহ তো উনারা এই মাত্র খাবারগুলো পার্সেল করে নিয়ে চলে গেলো। ওহ সেটহ…বলে সামনে থাকা একটা টেবিলে থাবা মারলাম। হোটেল ম্যানেজার বললো কি হলো স্যার??
কিছু নাহ,, খাবার গুলো একটু তাড়াতাড়ি পরিবেশন করুন।
ওকে স্যার আপনি ভিতরে গিয়ে বসুন।
—– আমি ভিতরে গিয়ে সবার সাথে বসতে আপু বললো কি হয়ছে ভাই তোকে এত চিন্তিত লাগছে কেনও??
কই কিছু না আপু ।
বুজি না আমি আপুর থেকে যেনো কোন কিছুই লুকাতে পারি নাহ আমি। ও আমার মুখটা দেখলেই যেনো সব বুজে ফেলে।
—-খাওয়া-দাওয়া সেরে সবাই হোটেলে ফিরলাম রাত ৮ টার দিকে।
রুমে ফিরে আমি আজ একটু তারাতাড়ি শুয়ে পড়লাম।
—- সকালে ঘুম ভাঙ্গলে উঠে পড়লাম ।
হোটেলের এক জানালার সামনে যেতে দেখি মাসুদ ভাইয়া গেইট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমি খুব তাড়াহুরো করে সিড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে কারো সাথে একটু ধাক্কা খেলাম। কে সেটা না দেখে সরি সরি বলে চলে গেলাম।
—- গেইটের কাছে যেতে ততক্ষণে মাসুদ ভাই ওখান থেকে চলে গিয়েছে। খুঁজে না পেয়ে চলে আসছি। হঠাৎ মনে হলো এই হোটেলের গেইট দিয়ে মাসুদ ভাইয়া বার হয়ে গেলো তার মানে তো এই হোটেলেরই কোনো রুমে হয়তো উনারা উঠেছেন।
—- হোটেল ম্যানেজার কে গিয়ে বললাম..
আচ্ছা এই হোটেলে গতকাল কী দুইটি মেয়ে ও একটি ছেলে উঠেছে,,,??
ওদের তিনজনের বর্ণনা দিয়ে বললাম
উনি বললেন সরি আমি দুইদিন ছুটিতে ছিলাম আজ এসেছি তাই বলতে পারছি নাহ।
—- একটু আপনাদের ওয়েবসাইট টি চেক করে দেখুন নাহ এমন কেউ সিট বুক দিয়েছে কিনা,,,??
স্যার দেখুন সিকিউরিটির স্বার্থে কারো কাছে এমন তথ্য দেওয়া হোটেলের নিয়ম বহিঃভূত। আর তাছাড়াও আমি এখন ব্যস্ত সো সরি স্যার।
আচ্ছা ঠীক আছে বলে আমি রুমে চলে আসলাম।
—- এসে জানালা দিয়ে আবার তাকিয়ে থাকলাম। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম মাসুদ ভাইয়া আসে কিনা বলে। অনেক সময় পাড় হয়ে গেলেও উনি ফিরলেন নাহ। এত বড় হোটেলে সব রুমে গিয়ে গিয়ে ওদের খুঁজে বের করাও সম্ভব নয়।
—- অনেকে হয়তো বিষয়টা খারাপ ভাবেই নিবে।
একটুপর আব্বু এসে বললো কি হলো আবির তুই আজ যাবি নাহ ঘুরতে ??
আব্বু তোমার যাও আমি একটুপর আসছি বলে আমি দাঁড়িয়েই রইলাম।
—- সবাই বেরিয়ে গেলে আমি বিছানায় বসে ভাবতে লাগলাম,, আজ আমার জন্য আপু ও মাসুদ ভাইয়ার মাঝে দুরুত্বটা সৃষ্টি হয়েছে। জানিনা আমি কবে এই দুরুত্বটা ঠীক ঘুচিঁয়ে দুইজনকে আবার এক করতে পারবো।
জানিনা আপুর ভাগ্য আমাদের ভাগ্য কি লিখা রয়েছে।
—– আমিও একটুপর চলে গেলাম সমুদ্র সৈকতে। আপুকে ফোন দিয়ে জানতে চাইলাম ওরা কোন জায়গায়। আপু জায়গার নামটি বললো। আপুর সাথে ফোনে কথা বলার সময় পাশ থেকে একটা মেয়ের কণ্ঠ ভেসে আসছিলো।
— মনে হচ্ছিল কণ্ঠটা অনেক চেনা। এর আগেই যেনো কণ্ঠটা অনেকবার শুনেছি আমি।
যাইহোক আমি চলে গেলাম। একটুদুর থেকে খেয়াল করে দেখছি সবাই গোল হয়ে বসে আছে।
—- তবে আম্মু ও আপু ছাড়াও তৃত্বীয় কোনো এক মেয়েকে দেখছি যে কিনা আমার ভাগ্নে কে কোলে নিয়ে সবার মাঝখানে বসে আছে। মনে হচ্ছে বেশ গল্প জমিয়েছে সবাই কে অনেক হাসি-খুশী দেখাচ্ছে।
— কাছে গিয়ে দেখি মেয়েটি আর কেউ নই,,, মেয়েটি হলো অনু। আমার উপস্থিতিতে অনু উঠে চলে যেতে চাইলো। আম্মু বসতে বললেও ও একটু কাজের নামে চলে গেলো। অনুর সাথে আমার কথা আছে কিন্তু এখান থেকে এভাবে অনুর পিছু নেওয়া যাবে নাহ কেননা এখানে আমার পরিবারের সবাই উপস্থিত রয়েছে৷
—- তাই আমি বসে পড়লাম।
আম্মু আমায় বলতে লাগলো.. জানিস বাবা মেয়েটা বেশ মিষ্টি একটা মেয়ে কত সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে হেসে হেসে কথা বলে।
আম্মু যখন কথাগুলো বলছিলো আমি খেয়াল করে দেখি….
— আপু ও আব্বু মুচকি মুচকি হাসছে।
হাসির কারণটা বুজলাম নাহ।
আম্মুর বলা শেষ হলে বললাম আম্মু বাদ দেও তো চলো এখন আমরা ঘুরবো
বলে অনেক ঘুরাঘুরি করে সন্ধার দিকে সবাই রুমে ফিরলাম।
—- একটু ফ্রেস হয়ে বসে থেকে অফিসের এক ম্যানেজারের সাথে কথা বলছি।
একটুপর আপু এসে বললো ভাই মিসকাত আছে তোর কাছে,,,??
ম্যানেজারকে একটুপর কথা বলছি বলে ফোনটি কেটে দিলাম।
—- কই আপু ভাগ্নে তো নেই আমার কাছে। মিসকাতকে তো আপু তুই রুমে নিয়ে গেলি।
ভাই মিসকাতকে খুঁজে পাচ্ছি নাহ কোথাও ।
কি বলিস আপু,,?? দুটি রুম পুরো খোঁজাখুঁজি করেও আমার ভাগ্নে কে পেলাম নাহ।
আপু একেবারে ভেঙ্গে পড়লো। কিছুতেই ওর কান্না থামছে নাহ…
..
..
চলবে??
..
(গল্পটি কেমন লাগছে আপনাদের ??
ছোট্ট একটি কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here