গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন পর্বঃ ১৮

গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ১৮
লেখাঃ Shakil
..
..
..
—- সিঁড়ি বেয়ে আমি দৌঁড়ে নিচে নেমে আসলাম। হোটেল থেকে কেউ যাতে বের না হয়ে যেতে পারে তাই ম্যানেজারকে বলে হোটেলের প্রধান দরজাটি আটকে দিলাম।
—- এত বড় হোটেলে এবার এক এক করে প্রতিটি রুম খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিলাম।

—- একটুপর অনু দেখছি এক রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। এসে আপুকে বললো কি হয়েছে আপনারা কি খুঁজছেন…??
—- আমি অনুর কাছাকাছি এসে বলতে লাগলাম আমার ভাগ্নে কে খুঁজে পাচ্ছি নাহ।
আর তুমি এই হোটেলে,,,!! মিতু আর ওর ভাই মাসুদ কোথায় ??
—– উনারা তো আমার পাশের রুমেই।
কই কোন রুমে,,,?? অনু আমায় রুম দেখিয়ে দিলে আমি গিয়ে দরজায় টোকা দিতে লাগলাম।
— একটুপর মিতু দরজা খুললো।
খেয়াল করে দেখি মিতু বিছানার ওপর ওর সব জামা-কাপড় ব্যাগে ভর্তি করছিলো।
—- আমি মিতুকে কিছু না বলেই ওর পুরো রুম তল্লাশি করা শুরু করে দেই,,,??
—- ভাগ্নে ও ওর ভাই কে না পেয়ে এবার মিতুকে বললাম..
মিতু আমার ভাগ্নে কোথায়…??
—- মানে…? তোর ভাগ্নে কোথায় আমি কিভাবে জানবো।
আবারো বলছি আমার ভাগ্নে কোথায়..??
আরে আজিব তো আমি কিভাবে জানবো তোর ভাগ্নে কোথায়।
— দেখ মিতু শেষ বারের মত বলছি… এখনো সময় আছে বল আমার ভাগ্নে কোথায়??
দেখ আবির আমি কিছু জানিনা।
— বুজেছি এভাবে কাজ হবে নাহ।
বল শালি আমার ভাগ্নে কোথায় (মিতুর চুলের মুঠি ধরে)
—–ভাই কি করচিস এসব,,,??
আপু তুই সরে যা একদম কথা বলবি না । আজকে আমার মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছে।
শালি তোরা দুই ভাইবোন মিলে এই খানে এসেচিস আমার ভাগ্নে কে চুরি করতে।
—– আমি কিছু জানিনা আবির।
ঠাশশশশশ
মিতুর চুলের মুঠি ধরে ঠাশশ করে চড় বসিয়ে দিলাম।
—- তুই জানিস না তোর বাপ জানে।
তোর ভাই কোথায় বল….??
ভাই জরুরী কোন কাজে বাসায় চলে গিয়েছেন আমাকে না বলেই।
বাসায় গিয়ে আমাকে ফোন দিয়েছেন এবং অনুকে না বলেই বাসায় চলে যেতে বলেছেন।
—– মিতুকে একদম চুপ হতে বলে ওর মাসুদ ভাইয়ার ফোন নম্বরটা নিয়ে উনাকে ফোন দিলাম।
—- ছিঃ ছিঃ মাসুদ সাহেব চোরের মত আমার ভাগ্নে কে চুরি করে নিয়ে যেতে আপনার একটুও কী লজ্জা হলো নাহ,,,,??
—- এই তুই কেরে…??
আমি আবির। অনেকক্ষণ কথা বললেও উনি অস্বীকার করলো। কিছুতেই স্বীকার করলো নাহ যে উনি আমার ভাগ্নে কে নিয়ে গিয়েছেন।
—- আমি এবার কিছুটা অভিনয় করে মাসুদ সাহেব কে সরি বলে ফোন কেটে দিলাম।
আমি ভাগ্নে কে নিয়ে আসছি বলে আপু ও আমার পরিবারের সবাইকে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তুলে দিলাম। মিতু আর আমি ওর বাসার সামনে এক গাড়িতে করে পৌঁছে গেলাম।
—- মিতুকে গাড়িতে সিটের সাথে বাঁধা। ওর মুখে টেপ লাগানো।
আমি মিতুকে গাড়িতে রেখে ওর বাসায় ঢুকে পড়লাম।
—- গিয়েই মাসুদ সাহেবের পায়ের কাছে বসে পরলাম।
প্লিজ আমার ভাগ্নে কে ফিরিয়ে দিন।
আপুর কাছ থেকে আমার ভাগ্নে কে আপনি আলাদা করে দিলে ও হয়তো মারাই যাবে। প্লিজ মাসুদ সাহেব আপনি আমার ভাগ্নে কে আমার কাছে দিয়ে দেন প্লিজ।
—- আরে আজব আমি কেন আমার সন্তান কে চুরি করতে যাবো।
আমি এবার জিহ্বাতে একটা আস্তে কামড় দিলাম।
আমি এবার উঠে পরলাম। মাসুদ সাহেবের হাত চেপে ধরে বললাম ভাগ্নে কে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি নাহ।
মাফ করবেন আর ছবিটা রাখুন বলে আমার ভাগ্নের একটা ছবি মাসুদ সাহেব কে দিয়ে চলে আসলাম।
—- আবার গাড়িতে চড়ে ড্রাইভারকে চালাতে বললাম।
এক বন্ধুকে ফোন করে একটি হোটেলের এক রুম বুকিং দিলাম।
হোটলের সামনে গাড়ি থামিয়ে মিতুকে বললাম তুই যদি সাবলিল ভাবে আমার সাথে হোটেলে প্রবেশ না করিস তাহলে আজ এখানেই তোকে একদম ফিনিস করে দিবো।
—– মিতু আমার কথায় অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো।
ওর হাতের বাঁধন ও মুখের টেপ খুলে এক ব্যাগে নিলাম।
—- মিতু ভয়ে কোন চেঁচামেচি না করে খুবই সাবলিল ভাবে আমার সাথে হোটেলে গেলো।
—– হোটেলের রুমে ঢুকেই মিতুকে আবার পূর্বের ন্যায় বেঁধে বেডের সাথে রাখলাম।
শালি অনেক জালিয়েচিশ আমায়৷
আজ যদি আমার ভাগ্নে কে খুঁজে না পাই তাহলে এই হোটেলেই তোকে মেরে নদীর জলে ভাসিয়ে দিবো আমি।
—- তোর ভাইকে উচিৎ শিক্ষা দিবো আমি ৷
তোর এই হাতের অনেক জোর তাই না শালি,,,,??
দেখা দেখি আজ তোর হাতের কত জোর।
—– তোর মাথায় তো অনেক বুদ্ধি ঐ দিন আমাকে মিথ্যা জালে ফাঁসিয়ে আমার বোনের সংসারটা ভেঙ্গেছিলি আজ দেখি তোর মাথায় কত বুদ্ধি পালিয়ে দেখাস তুই এই হোটেল থেকে।
—- মিতুকে খাটের সাথে বেঁধে,,, একটু পাশে এসে বাসায় আপুর কাছে ফোন দিলাম।
—– ফোন ধরেই আপুর কান্না ভেজা কণ্ঠ ভেসে আসলো…
আরে আপু তুই কাঁদিস নাহ ভাগ্নের খোঁজ তো পেয়ে গিয়েছি আপু।
—- কি বলিস ভাই সত্যিই..??
হুমমম আপু সত্যি খোঁজ পেয়ে গিয়েছি।
—– ভাগ্নে কে কিডন্যাপ করেছে মাসুদ ভাইয়ার ভাড়াটে করা কিছু সন্তাসীরা।
পাঁচ লক্ষ টাকা ওরা মুক্তিপণ দাবি করেছে। আমি যত তাড়াতাড়ি পারি ওদের টাকা দিয়ে ভাগ্নে কে নিয়ে আসছি।
—- আর আপু শোন এই খবর যেনো কারো কানে না যায় নইলে ওরা ভাগ্নের ক্ষতি করবে বলেছে।
আপু তুই ভাবিস নাহ। আমি যেকোন মূল্য ভাগ্নে কে নিয়ে বাসায় ফিরবো।
—- রাখি আপু বলে ফোনটা কেটে দিলাম।
মিতুর কাছে আসতে ও বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকালো।
আমি ওর মুখের টেপ টি খুলে দিলাম।
—- আবির এগুলো কী,,,??
তুমি না বললে আমার ভাই তোমার ভাগ্নে কে চুরি করে নিয়ে গিয়েছে….??
হুমমম মিসেস মিতু
—- তাহলে এখন আবার তোমার আপুকে ফোন দিয়ে এসব কি বললে..??
আমি একটা হাসি দিলাম।
—- আবির এগুলো কি হচ্ছে। তোমার ভাগ্নে কে কিডন্যাপার রা তুলে নিয়ে গিয়েছে আর আমায় এভাবে নিয়ে এসে বেঁধে রেখেছো কেনও,,,,??
—- আমি আবার হাসি দিলাম।
আমার ভাগ্নে কে তোমার ভাই চুরি করে নিয়ে গেছে এটা হোটেলের সবাই জানে।
—- আমার ভাগ্নে কিডন্যাপ হয়েছে এটা তুমি,আমি,আপু আর আমার পরিবার জানে।
কিছুই বুজছো নাতো…. মিস মিতু??
—- মিতু মাথা নাড়িয়ে জানালো নাহ ও বুজছে নাহ।
গুড মিস মিতু দুই দিন এভাবে থাকলেই সব বুজতে পারবে।
—- একটুপর অনু ফোন দিলে আমি মিতুর মুখে আবার টেপ লাগিয়ে দিয়ে দরজা লক করে বাহিরে আসলাম।
—- আবির মিসকাত তো কান্না করছে অনেক।
অনু তুমি এক কাজ করো ওকে কিছু খাবার খাওয়াও আর তুমি মাথাটা ওর সামনে দাও।
অদ্ভুত হলেও সত্যি আমার ভাগ্নে দুই সেকেন্ডের মধ্যে ওর কান্না থামিয়ে দিবে তোমার চুল ও কান টেনে।
— আমার কথা মত অনু তাই করলো। এবং মিসকাত কান্না থামালে ও কিছুটা হয়তো অবাক হয়ে গেলো। আচ্ছা অনু তুমি ওকে দেখেশুনে রেখে বলে ফোনটা কেঁটে দিলাম।
— আপনারা ভাবছেন এসব কি হচ্ছে চলুন আপনাদের সব কথা খুলে বলা যাক….
—– আসলে আমার ভাগ্নে কে কেউ কিডন্যাপ বা মাসুদ সাহেব চুরি করেন নি।
ঐদিন রাতে আমার ঘুম আসছিলো নাহ।
তাই হোটেলের বাইরে পাইচারি করতে করতে এক সময় ছাদে চলে যায়।
— ছাদে গিয়ে এত রাতে অনুর মত কাউকে এত রাতে ছাদে বসে থেকে কাঁদতে দেখে আমি কিছুটা অবাক ও ভয় পেয়ে যাই।
— সাহস নিয়ে অনুর কাছে গেলে দেখি আসলেই অনুই ওটা৷ আমাকে দেখেই অনু আমার কাছে ক্ষমা চাই।
আমি ওকে ক্ষমা করে দেই এরপরই আমরা অনুর রুমে আসি।
— রুমে এসে মাসুদ ভাইয়ার ভুল ভাঙ্গানো ও শিক্ষা দেওয়া। মিতুকে ওর কর্মের উপযুক্ত ফল পাওয়ানোর ব্যবস্থা করার জন্যই এই প্ল্যানটা করি।
—- অনু ওর আব্বুকে ফোন করে কৌশলে মাসুদ সাহেব কে বাসায় নিয়ে যাই। এরপরই আমার ভাগ্নে কে অনুর রুমে রেখে আসি।
—– আর মাসুদ ভাইয়া ও আমার পরিবারের কাছে এই নাটক টা সাজাই।
আমার এসবের মুল উদ্দেশ্য হলো…
ওদের দুইভাই বোনকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া।
—- মাসুদ ভাইয়া জানবে আমার ভাগ্নের সাথে ওর বোনও কিডন্যাপ হয়েছে। আর আমাকে যাতে সন্দেহ না করে এইজন্য ফোন করে এসব বলি ও উনার বাসায় গিয়ে নাটক টা করে আসি।
—- একদিকে নিজের বোন অন্যদিকে সন্তান দুজনকে হারিয়ে অবশ্যই মাসুদ ভাই কিছুটা শিক্ষা পাবে।
একা হয়ে যাবেন উনি। তখনই আমি আপুকে নিয়ে আসল খেলাটি জমিয়ে দিবো।
আমি জানিনা এই প্ল্যানে ঠীক কতটা সফল হবো।
—- তবে ওদের দুইভাইবোনকে কতটা হেনস্তা করবো তা হয়তো ওরা ভাবতেও পারবে নাহ।
—- বাজারে চলে আসলাম।
এসে আমি কিছু খেয়ে নিলাম।
সাথে করে এক পেলেট ভাত, মরিচের গুঁড়া ও এক বোতল পানি নিয়ে আবার হোটেলে গেলাম।
— রুমে ঢুকে মিতুর এক হাত ও মুখের টেপ খুলে দিয়ে ওকে খেয়ে নিতে বললাম।
মিতু ভেবেছে ওর জন্য ভালো দামি খাবার এনেছি। খাবারের প্যাকেটটি তাড়াহুড়ো করে খুলে দেখতেই ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
—- কি দেখচিস কাল নাগীনি,,,??
সবে মাত্র শুরু। আরও কতকিছু দেখবি। তুই কি ভেবেছিলি আমার এতটা ক্ষতি করে বেঁচে যাবি তুই,,,??
আমি তোকে কিছুই বলবো নাহ। সব ভুল ভেবেচিস কাল নাগীনি সব ভুল।
— আমি শুধু উপযুক্ত সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সময় ও সুযোগ দুটাই এসে গিয়েছে।
এই কয়দিনে তোর জীবনটা আমি বিষিয়ে দিবো।
—- একটুপর মিতুর ফোন বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ না করে কেটে দিলাম।
এবং “” আপনার বোন ও সন্তান আমাদের কাছে বন্দি রয়েছে ” বলে ফোন বন্ধ করে দিলাম।
—- মিতু খাবার না খেয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে শুয়ে পড়লো। আমিও একপাশে সুয়ে পড়লাম।
—- মাঝরাতে খচরমচর শব্দ হচ্ছে তাই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
তাকিয়ে দেখি মিতু ঐ মরিচের গুড়া দিয়েই ভাত মাখিয়ে খাচ্ছে। আমি আবার চোখ বুজে ভাবছি কেন শালি খাবি না বলে এখন খাচ্ছিস কেন….
..
..
..
চলবে??
..
(গল্পটি ভালো লাগলে জানিয়ে দিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here