গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ৩
লেখাঃ Shakil
..
..
..
—- আহ আপু লাগছে তো ছাড় না প্লিজ
—- তোর আর মাসুদ ভাইয়ার শুভ দৃষ্টিতে সমস্যা হচ্ছিলো তাই তো আমি চলে আসতে চাচ্ছিলাম।
—– আপু আমার চিপ ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য নিরব হয়ে গেলো। কি হলো আপু?? ভাই তুই যে স্বপ্ন দেখছিস সেটা তো অবাস্তব কিছু।
—– উনার স্ট্যাটাসের সাথে কি আমরা যাই,,? আমরা কোথাকার এতিম। দুমুঠো খাবারের জন্য কতো কষ্ট করতে হয়। আপুর চোখ বেয়ে জল পড়লো। সরি আপু। আমি তোকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।
—– আরে নাহ যা হাত মুখ ধুয়ে আয় খাবি (চোখের পানি মুছে)
—- আপু খাবার বাড়তে চলে গেলো,, আজ আমার সন্দেহ দুর হয়ে গেলো। আপু মাসুদ ভাইকে শুধু পছন্দ নয় ভালোও বাসে।
—- খাওয়া-দাওয়া শেষে আপু আর আমি আবার বসলাম পরিকল্পনা করতে। আপু বললো কাল আমাদের সব ব্যবস্থা সেরে ফেলতে হবে ভাই,,।
—- পরেরদিন আপু আর আমি সেলাইমেশিন গুলো কিনে একটা রুম ভাড়া করে সেখানে স্থাপন করলাম।
এবার আমাদের দক্ষ কর্মী খোঁজ-করার পালা। আবার বের হয়ে পড়লাম কর্মী খুঁজতে। আপুর পরিচিত সবার সাথে কথা বললাম সবাই রাজি হলো কাজ করতে।
—- আমাদের বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো,,আপু বললো ভাই আজ অনেক ক্লান্ত। চল আজকে রান্না না করে আমারা হোটেলে কিছু খেয়ে বাসায় যাই।
—- আমি আর আপু এক হোটেলে ঢুকে কিছু নরমাল খাবার খাচ্ছি। হঠাৎ দেখলাম অপুসহ ওর অনেক বন্ধু-বান্ধব হোটেলে প্রবেশ করলো।
—- আপু এখান থেকে চল,, কি বলিস খাবার গুলো রেখে না খেয়েই চলে যাবো নাকি,,!! বস খেয়ে যাবো। তাহলে তোর ব্যাগে যে মাস্ক আছে ওটা আমায় দে। আপু ওর মাস্কটি বার করে দিলো। আমি তাড়াতাড়ি করে মাস্কটি পড়ে নিলাম।
—- খেয়াল করলাম পিছনের টেবিলে বসা অপুসহ ওর বন্ধুরা আপুকে নিয়ে বাজে বাজে মন্তব্য করছে।
আমার রাগে মাথা গরম হয়ে গেলো। বিষয়টা আপু বুঝতে পেরে আমার হাতটি ধরে নিয়ে বিল পে করে বের হয়ে গেলো।
—- আমি আর আপু রাস্তা দিয়ে চলে আসছি হঠাৎ একটা জিপ আমাদের রাস্তাটা আলগে দাঁড়ালো।
তুই কী মনে করেচিস আবিরের বাচ্চা,,, তোকে আমি হোটেলে চিনতে পারিনাই ?? হোটেলে সিসি ক্যামেরা ছিলো তাই কিছু না বলে তোদের বাইরে বার হতে বাধ্য করেছি।
—- সেদিন তো আমার সামনে আমার জানেমন টাকে চড় মেরেছিলি,, আমার বিয়েটাও তুই ভগে পাঠিয়ে দিয়েচিস। তোকে কী আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিবো বল,,,
—- মালডা কে তোর গার্লফেন্ড নাকি,, ?? দেখতে জোশ মায়েরি। অপুর কথা শুনে আমার চোখদুটো লাল হয়ে গেলো। আমার সামনে আমার বোনকে ও মাল বললো। আমি ওকে মারতে যাবো কী আপু আমার হাতটি ধরে বললো,, না চুপ করে থাক।
—- চল তোকে ছেড়ে দিচ্ছি মালটাকে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে চলে যাহ তুই,,, দেখ অপু তোর রাগ আমার উপর আমার জন্য আমার আপুকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করবি নাহ,,। তোর যত রাগ আছে আমার ওপর ঝাড়।
—- তুইতো এতিমের বাচ্চা,, তোকে মারলে ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করা হবে,,আর তোর আপুকে নিয়ে গিয়ে আদর দিলেই তোর আসল শিক্ষা হবে। আপু আমার হাত ধরে একটু টান দিয়ে চোখপানে চেয়ে বললো,,ভাই আর একটু এই কথাগুলো সজ্জ কর। ও আসছে। আমাদের কোন ভয় নাই।
—- আমি ভাবছি ও টা কে যে আমাদের আজকে বাঁচাবে,,, অপুর কয়েকটা বন্ধু এসে আমাকে কিল-ঘুষি মারলো,, আমি মাটিতে পড়ে থাকলাম,, আপুকে নিয়ে ওরা জিপে করে চলে যেতেই পুলিশের গাড়ি এসে ওদের ধরে ফেললো। আমি মাটি থেকে মাথা তুলে দেখলাম আপু আর মাসুদ ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
—- মাসুদ ভাইয়া আমাকে টেনে তুললো,, তুমি ঠীক আছো তো?? আমি উনাকে ধরে দাঁড়িয়ে বললাম হুমম ভাইয়া। চলো হাসপাতালে,, নাহ ভাইয়া আমি ঠীক আছি। আচ্ছা তাহলে চলো তোমাদের বাসা অবদি এগিয়ে দিয়ে আসি।
—- আমাদের বাসা অবদি উনি এগিয়ে দিয়ে আপুকে বললো,, ধন্যবাদ তোমাকে এই শয়তানের বাচ্চাটাকে ধরার জন্য একটা উপযুক্ত প্রমাণ খুঁজছিলাম,,,আজকে তা পেয়ে গেছি,, জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো এগুলো কে এখন আমি
—- আমি ভাবছি,, আপু মাসুদ ভাইয়াকে কখন বললো অপু আমাদের ঘেরাও করেছে,,, আর আপুই বা কিভাবে সাহায্য করলো,, আপু আর মাসুদ ভাইয়া কথা বলতে থাকলো,, আমি ভাবলাম ১ মিনিট হাঁটলে তো বাসা আমি এগোয় আপু আসুক
—– ঐ দ্বারা, আপু চলে আসলেন। বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে বসে আছি। ভাই তুই আজকে খুশি হোশ নাই?? খুশি কেন হবো আমি আপু??
কেনও অপুকে তো আজকে উনি ধরে নিয়ে গেলো তাই?? তুই খুশী হওয়ার কথা বলচিস,,!! ভাবতো মাসুদ ভাইয়া সময় মতো না আসলে কি হতো??
— উনি তো আসবেনই উনার কথা মতই তো সব করেছি আমি। মানে কি আপু কি বলিস তুই এসব??
এই দেখ পড়, (বাটন ফোনের মেসেজ বার করে দিয়ে)
— লাবণ্য কী করো? এইতো একটু কাজ সেরে আমি আর ভাই বাসায় ফিরছি ??
কোথায় এখন,,?? রোড নম্বরঃ৫ এ,,, ওহ ভালো ওখানে এক হোটেল আছে নাহ,, ওখানে গিয়ে তুমি আর তুমার ভাই বসো
—- কেনও,,,?? এক আসামীকে ধরবো,, তোমার কিছু সাহায্য লাগবে,,,
কোন প্রমাণ নেই, এরা ওখানে যে হোটেলটা আছে ওখানে প্রতিদিন ড্রিংক করতে যাই,, তুমি ওখানে গেলেই ওরা তোমার পিছু নিবে,, এবং ইফটিজিং করবে আর এই সুযোগে আমি ওদের কে এরেস্ট করবো। আর ঐ ছেলে গুলোর মাঝেই এক বখাটে আছে যে আমার বোন কে ফাসিয়েছে। পারবে নাহ এই হেল্পটা করতে??
— হুমমম পারবো,, আপু ছো মেরে ফোনটি নিয়ে নিলো। কেমন দিলাম ভাই,,?? তুই আমার সাথে কথা বলবি নাহ,, কেন ভাই??
যদি কিছু হয়ে যেতো তোর,,?? আমি কার কাছে বোনের আদরটা পেতাম,, কিছু হবে নাহ ভাই,, যে মানুষটা আমাদের জন্য এতটা করেছে উনার জন্য কি আমরা এতটুকু করতে পারি নাহ বল??
—– হুমমম,,,মিষ্টি ভাই আমার
আপু একটা কথা বলার ছিলো,?? বল। তুই মাসুদ ভাইয়াকে খালি (উনি,উনার) বলিস কেনও?? একবারও উনার নামটি মুখে নিস নাহ,, তুই বুজবি নাহ,, যা শুয়ে পড়
—– আমি শুয়ে শুয়ে ভাবছি,, তারমানে আপু মাসুদ ভাইয়ার সাথে মেসেজে চ্যাটিং করে,, মেসেজ গুলো সবটা না পড়তেই ফোনটা ছো মেরে নিয়ে নিলো।
—- ঘুমিয়ে পড়লাম,, পরেরদিন সকাল সকাল ঘুম হতে উঠলাম কেননা আজ থেকে শুরু হবে আজ আমাদের ভাগ্য লিখনের কাজ। দশটি সেলাইমেশিন আর দশজন কর্মী নিয়ে শুরু হবে আমাদের পথচলা। জানিনা আমরা পারবো কিনা । তবে হাল ছাড়তে আমরা রাজি নই।
—- ১০ জনের ভিতরে ৭ জন কড়মী আসলো আপু ওদের নিয়েই কাজ শুরু করে দিলেন,, প্রথম এক সপ্তাহ হাতে তেমন কোন কাজই পেলাম নাহ।
—- এরপরই শুরু হয়ে গেলো মানুষ জনের আসা যাওয়া আমাদের ওয়ার্কসপ-এ। ওর্ডারের ওপরে ওর্ডার। আমি বসে থেকে সব হিসাব-নিকাশ করতাম আর আপু সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতেন। আপু লেখাপড়া জানতো নাহ কিন্তু এই কাজ সম্পর্কে ওর ছিলো অনপক অভিজ্ঞতা কেননা এই কাজটির দ্বারাই আমাদের সংসার চলতো একসময়।
—- আপু ওর সর্বত্র দিয়ে সবাইকে কাজ ভালো করে বুজিয়ে দিতো,, যারা কাজ করতো তারাও ছিলো অর্ধবয়স্ক মহিলা। একসময় গার্মেন্টস কর্মী।
—- মাত্র একমাসের মধ্যে কাজের মান ভালো হওয়াই,, এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে পড়লো বস্তিতে ছোট্ট একটা ওয়ার্কশপের সুনাম। একমাসেই আমাদের মূলধন ডাবলে পরিণত হলো।
—- ভাই বলেছিলাম নাহ,, যা আছে তাই যথেষ্ট আমাদের ভাগ্যটা লিখার জন্য,,,হুমমম আপু।
আমাদের আরও অনেকটা পথ পারি দিতে হবে ভাই,,
আমরাও একদিন আমাদের বেঈমান বাবাটার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো উনার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে। হুমমম আপু।
— আপু কাল তো আমার রেজাল্ট দিবে পরীক্ষার,, ভয় হচ্ছে খুব আমার,,, কিছু হবে না ভাই আমার। তোর রেজাল্ট ভালো হবে আমি তা জানি।
—- পরের দিন বাটন ফোনটি দিয়ে রেজাল্টের জন্য ডায়াল করলাম। ফোনে মেসেজ আসলো যা দেখে আমি হুররে বলে চিল্লায় উঠলাম ।
— আপুসহ যারা কাজ করছিলেন সবাই এগিয়ে আসলো,,কি হয়েছে ভাই?? আপু আমি আবারো A+ পায়ছি। ভাই বলেছিলাম নাহ তুই ভালো রেজাল্ট করবি। আপু আমার রেজাল্টের জন্য মাসুদ ভাইয়ার অনেক অবদান রয়েছে।
— হুমমম ভাই,,, আপু হুমম বললো কেন ও না জেনে শুনেই হুমম বললো
ভাই তুই হুমম বলায় অবাক হয়েচিস তাইতো,, আসলে উনি আমায় সব বলেছেন,,
— আপু ফোন করে মাসুদ ভাইয়াকে জানাই কি বলিস,,,হুমমম
আমি ফোন করে রেজাল্টের কথা বললে মাসুদ ভাই আমাকে কংগ্রাচুলেশনস জানালো
আমি ভাবছি কি করে বলবো মিতুর রেজাল্ট কি,,,পেটে আসলেও মুখে বলতে পারলাম নাহ,, উনিই বললেন মিতু কান্না করছে,, ওর একটাই ফেল আসছে।
— কোনটাই ফেল আসছে,?? Ict – তে নাহ??
হুমমম,,,আমি কিছুক্ষণ নিরব হয়ে রইলাম,, কেননা মিতু ict mcq দিতে গিয়ে আমায় বারবার পিছন হতে কলম দিয়ে খোঁচা মারছিলো।
ঐদিনই পরীক্ষা শেষে বুজেছিলাম ও খারাপ রেজাল্ট করবে ict- তে
—- ওর রেজাল্টের জন্য আমিও কিছুটা দায়ী,, কিন্তু নিজেকে দোষ দিয়ে কি লাভ,,, ও তো ওর ওপরে আমার সব অধিকার কেঁড়ে নিয়েছে,,
।
।
চলবে??
(ভালো লাগলে জানাবেন
তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ৪র্থ
পর্ব নিয়ে হাজির হবো )