গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন পর্বঃ ৪+৫

গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ৪+৫
লেখাঃ Shakil
..
..
..
..

—- ভাই ফেল পড়েছে মিতু আর তুই মন খারাপ করলি যে??
— এমনি আপু। ওহ তাহলে ভাই আজকে সবাইকে ছুটি দিয়ে চল বাসায় যাই। আচ্ছা,, আপনাদের ছুটি আজকে,, সবাই অনেক খুশী হয়ে গেলো। আর শুনুন কালকে একটু সকালে আসবেন,, আমার ভাইয়ের পাশ করা উপলক্ষে মিষ্টি খাওয়াবো আপনাদের।
— বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে বসে আছি,,হঠাৎই আপু এসে হাসতে লাগলো,, ভাই ও ভাই
কি হয়েছে এত খুশী কেনও?? ও নাহ আমায় বিয়ে করতে চাইছে,,, মানে ওটা কে?? আরে উনি,, উনি মানে?? উফপ মিতুর ভাই। আপুর কথা শুনে আমিও হতবাক হয়ে গেলাম। মাসুদ ভাই আমার আপুকে বিয়ে করবে,,,!!
—- আপু মজা করচিস নাতো,,?? নাই ভাই সত্যি আর উনি আজকে আমার সাথে বিকালে দেখাও করবে বলেছে।
ভাই তোর কি হলো,, মন খারাপ করলি যে??
—- আপু আমায় ছেড়ে চলে যাবি তুই,, আমার তো কেউ নেই আমি অনেক একা হয়ে যাব তাই খারাপ লাগছে
—- আচ্ছা ভাই তাহলে উনাকে আমি না করে দেই?? নাহ আপু এমন মানুষ তুই কখনো পাবি নাহ,,মাসুদ ভাই এত বড়লোক তবুও কোনও অহংকার নেই মনে। তুই হয়তো জানিস নাহ আপু,,উনি যে এত ব্যস্ত থাকতেন তবুও প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা হাসপাতালে গিয়ে তোর পাশে বসে থাকতেন
—- উনি একদম মাটির মানুষ,উনাকে না করা ঠীক হবে নাহ। সত্যি আপু আমরা লাকি। আচ্ছা চল খাবি,,।
খাওয়া-দাওয়া সেরে ফেললাম। ভাই যাহ তাড়াতাড়ি বার হয়ে নে। উনি মেসেজ দিয়ে ঐ হোটেলটাও যেতে বলেছে।
আমি কিছু না বলে আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
— ভাবছি এই যুগেও এমন মেয়ে থাকে যে কিনা তার ভালবাসার মানুষ ডেকেছে আর ভাইকে সাথে নিয়ে যাবে বলছে।
— আপু তুই একটা,,, কি বল?
না থাক,, আর যাহ বার হো,,। হ আমি তো পাগল যে তোর সাথে যাবো। তুই যাহ মাসুদ ভাইয়া তোকে একা ডেকেছেন।
—- ভাই একটা কথা বলি?? আমার নাহ একা একা যেতে সরম পাচ্ছে। ওহ মেসেজে সারাক্ষণ কথা বলো আর এখন সরম পাচ্ছে তাই নাহ। তুই অনেক পেঁকে গিয়েচিস। দাঁড়া উনাকে তোর জন্য একটা দেখতো বলবো আজ।
—- যাহ যাহ বলিস,,আমি চলে আসলাম। এসে মনে মনে বলছি,,দেখতে বলার কি আছে উনার বোনই তো আছেন। তুই বিয়ে কর তারপর তোর ননদ টাকে আমাকে দিস তাই হবে।
— আপু বের হয়ে আমাকে বলে চলে গেলো,,, আমি শুয়ে থাকলাম। সন্ধ্যার পর পর দরজায় আপু এসে ঠকঠক করলো। আমি দরজা খুলেই অবাক। এ আমি কাকে দেখছি।
— কে আপনি কাকে চাই,,,?? কুত্তা আমি তোর আপু,, ওহ আপু তুই,, এগুলো কি পড়েচিস,,, আর চুলগুলো এমন স্টাইল,,,ওরে বাবা পুরাই হিরোইন দেখছি।
—মজা করিস নাতো,, এগুলো নিয়ে চল ভিতরে। কি এগুলো,,?? শপিং
— এসে সব বার করে দেখছি আপুকে মাসুদ ভাই অনেক কিছু কিনে দিয়েছে। ভাই কালকে তোকে উনার বাসায় ডেকেছেন।
—- কেনও,,,?? আর আমিতো উনার বাসা চিনি নাহ। আপু আমাকে ঠীকানা দিয়ে বললো আমাকে কারণ বলে নাই।
—- আচ্ছা আপু,,,। তাহলে কালকে সকালে আমি মাসুদ ভাইয়ার বাসায় যাবো,,, আচ্ছা।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি,, অনেক দিনপর কাল মিতুকে দেখতে পাবো
— সকালে ঘুম থেকে উঠে উনার বাসায় চলে গেলাম। বাসায় ঢুকতে এক কাজের মানুষ আমাকে বসতে বললেন। মাসুদ ভাইয়া কোথায় গেছে বললে বলেন উনি একটু বাহিরে গিয়েছেন একটু পরই আসবে।
— আমি মনে মনে শুধু মিতুকে খুঁজছি,, বাড়ির এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও দেখছি নাহ,, একটুপর একটা গান শুনতে পেলাম
— পাশে তাকাতেই দেখছি পিছন দিয়ে মিতু বাহিরে কোথায় যাচ্ছে।
কাক যতই চিল্লাই না কেন তার সুর কখনো কোকিলের মত হয় নাহ।
—- ও আমার কথা শুনে বুজতে পারলো আমি ওরই বাড়ি এসে ওকে কিছু বলেছি,,আমার কাছাকাছি এসে…
কি বললি আবার বল,,,, মুখ সামলে কথা বলবি,,,
আর তুই আমার বাসায় কেন?? তোকে বাসায় কে ঢুকতে দিয়েছে??
—- এখনি বের হয়ে যাবি নাকি,, তোর গাল দুটো চড় মেরে গরম করে দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দিবো।
আমি নিজের ইচ্ছায় আসিনাই ঠীক আছে,,,!!
— আমি মিতুর কথায় পাত্তা নিয়ে দিয়ে বরং সোফায় নড়ে চড়ে ভালো করে বসলাম।
ওর আর সজ্জ হলো না আমায়। আমাকে চড় মারতে যাবে কী,, অমনি মাসুদ ভাইয়া এসে হাজির হয়ে গেলো
— এগুলো কি হচ্ছে মিতু,,?? বাসায় আসা মেহমানের সাথে এমন ব্যবহার করা কে শিখিয়েছে তোমায়,,, ক্ষমা চাও ওর কাছে,, কখনো না
—- মিতু রাগ দেখিয়ে কোথাও যাবে বলে ঠীক করেছিলে তা না যেয়ে ওর রুমে চলে গেলো।
— আবির ওর ব্যবহারে কিছু মনে করো নাহ তুমি। নাহ কিছু মনে করি নাই।
মাসুদ ভাইয়া কাজের মানুষকে কফি নিয়ে আসতে বললেন,,
আমি বললাম ভাইয়া আমাকে ডেকেছেন যে?? হুমম
আসলে তোমার আপুর আর আমার বিষয়টা হয়তো তুমি জানো,, আমি তোমার আপুকে আমার বাসায় বউ করে আনতে চাই। তুমি কী বলো রাজি আছো??
— ভাইয়া আপনি কী আর আমরা কী,,,?? মানুষজন কী বলবে??
যে যাই বলুক আমার তাতে কিছু যাই আসে নাহ,,, তুমি রাজি কী??
— ভাইয়া আপনি তো জানেন ই আমি আর আপু সবে একমাস হলে একটা ওয়ার্কসপ খুলেছি,, আপুকে বিয়ে দেওয়ার মত সামর্থ্য তো এখন আমার নেই,,
তোমাদের কোন খরচ করতে হবে নাহ,,তোমার আপুর সাথে আমার বিয়েটা একটা হোটেল বুক দিয়ে হবে৷
— আর যা খরচ সব আমার,,,তুমি রাজি কিনা??
আমি রাজি হয়ে গেলাম। উনি বললেন তাহলে আগামী সপ্তাহে এই দিনে সব ব্যবস্থাটি করে ফেলি কি বলো??
—- আপুকে বলে ডেট টা করা উচিৎ,,তোমার আপুকে বলেছি ও বলেছে তুমি যা বলবা তাই হবে ,,, আচ্ছা তাহলে ডেট ফিক্সড করে ফেলুন।
— সবকিছু ঠীকঠাক হয়ে গেলো,, চলো তোমায় বাসা অবদি এগিয়ে দিয়ে আসি। আমি না করলেও উনি আমাকে গাড়িতে করে নিয়ে আসলেন।
— আমি গাড়ি হতে বাহির হলাম,,একটুখানি দুরে দেখলাম আপু দাঁড়িয়ে আছেন,, মাসুদ ভাইয়াও গাড়ি হতে নেমে দাঁড়িয়ে থাকলেন।
আমি আপুর কাছে আসছি আর ভাবছি আমাকে এগিয়ে দেওয়ার আসল কারণ তাহলে এটা
—- আপুর কাছাকাছি এসে পাশ দিয়ে চলে যেতে লেগে বললাম,,নে হয়েছে এবার চলে আয়,, সব ঠীক হয়ে গিয়েছে।
আপু একটু লজ্জা পেয়ে গেলো। এবং আমার সাথে চলে আসলো।
— আপুর সাথে বসে আপুকে সব বললাম।
রাতে শুয়েশুয়ে ভাবছি মিতু আমার উপরে এতটা রাগ পুষে রেখেছে। মাসুদ ভাই ঠীক সময়ে না আসলে আজ ও হয়তো আমার গাল সত্যিই চড় মেরে লাল করে দিতো
— তবে একটা জিনিস ভেবে অবাক হচ্ছি,, অপু তো জেলে অপুর সাথে ওর বিয়ে ঠীক হয়েও তা ভগে গেলো,, ও কোথায় একটু মন খারাপ করবে তা নয়,, উল্টো মনের সুখেে গান গাইছে ব্যাপার কী,,,!!
—- কয়েকদিন পর
বিয়ের সব আয়োজন শেষ,,কাল বিয়ে
মাসুদ ভাই বললেন,, তুমি আর তোমার আপু আজকেই হোটেলে চলে যাও,, ওখানে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন গিয়েছে
—– আমি বেশকিছু টাকা সাথে করে নিয়ে আপুকে নিয়ে চলে গেলাম। মাসুদ ভাই জানালো,, ওখানে আমার গাড়ির ড্রাইভার আছেন উনাকে সব বলা আছে তুমি উনার সাথে আজ শহরে চলে যাও,, কেনাকাটা করে আসতে আসতে হয়তো সকাল হয়ে যাবে ।
—- আমি গেলাম,, সব কিছু কিনে নিয়ে সকালে ফিরলাম। আপুকে সাজানো কিছু জিনিসপত্র দিতে ও যে রুমে রয়েছে ওখানে গেলাম।
রুমে ঢুকতেই মিতু আমাকে দেখে কিছুটা চমকিয়ে গেলো।
—- তুই এখানে কেনও,,,?? যা বের হও,,আর আমার ভাইয়ের বিয়েতে তোকে কে দাওয়াত দিয়েছে,,তুই কেনও এসেচিস??
আমাকে কেউ আসতেও বলেনি আর কেউ দাওয়াত ও দেয়নি,, আমি এসেছি আমার বোনের বিয়েতে।
—- আমার কথা শুনে মিতু যেনো আকাশ থেকে পড়লো ,, তোর বোন মানে তোর বোন কে??
একটু সাইডে যাহ,,,ঐযে ওটা আমার বোন।( লাবণ্যকে দেখিয়ে)
—- মানে তুই নাহ এতিম এগুলো কি বলিস?? মিতু এই দিকে এসো ও ঠীকই বলছে আমি ওর বোন,,আর তোমার ভাই কি তোমায় বলে নাই,, আমি ওর বোন??
— নাহ গত এক সপ্তাহ ভাইয়ার সাথে রাগ করে কথা বলি নাই আমি। আমি সব দিয়ে বাহিরে চলে আসলাম।
— কাজি সাহেব এসে বিয়ে পড়াতে লাগলেন,, ( মৃত অমকের একমাত্র মেয়ের সাথে) নাম বলতেই এক ভদ্রলোক বললেন কাজি সাহেব দাঁড়ান
তোমার নাম লাবণ্য??
আপু মাথা নাড়লেন,,,তোমার নাম কি??
আমি আমার মায়ের নাম বলতে উনি কিছুটা চমকিয়ে উঠে বললেন,,,তাহলে পাত্রীর বাবার নামের আগে কাজি সাহেব কেনো মৃত নামটি বললেন??
— আমি ভাবলম লোকটি কি আমার আব্বু বেঁচে আছে জানে নাকি,,আর আমার আম্মুর নামটা কেন জানতে চাইলো??
— আসলে আমি যখন আমার মায়ের পেটে ছিলাম আর আপুর বয়স যখন পাঁচ বছর তখন আমাদের বাবা আমাদের মাকে তালাক দিয়ে অন্য একজন কে বিয়ে করে আমাদের ছেড়ে চলে যাই।
— সেই থেকে আমার আর আপুর চোখে আমাদের আব্বু মৃত,,আমার সার্টিফিকেটেও মৃত লেখা আছেন,, তাই কাজি সাহেব মৃত বলেছেন।
—- কিন্তু আপনি কে?? আপনার নাম কী??
লোকটা মাথা নিচু করে থাকলে আমি আবারো জানতে চাইলাম আপনি কে কি হলে বলুন??
আরে উনাকে চিনহো না,,উনি হলেন এই শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী,, শফিক সাহেব।
—- আমার আর বুজতে বাকি থাকলো নাহ উনিই হলো আমার সেই মৃত বাবা,,,আমি চরম ক্ষোভে বলতে শুরু করলাম
আপনারা সবাই শুনুন,,,
টাকা-পয়সা ওয়ালা কোটিপতির মেয়েকে বিয়ের লোভে নিজের স্ত্রীর
পেটে ৮ মাসের সন্তান ও পাঁচ বছরের একটা মেয়েকে রেখে তালাক দিয়ে চলে যাওয়া আমার ও আপুর মৃত বাবাটি আর কেউ নই উনি হলেন , ওমনি আপু পিছন থেকে এসে আমার মুখটি চেপে ধরে বললেন চুপ কর ভাই,,
আপুর হাতটি সরিয়ে নাহ আপু বলতে দে আমায়,,,,
..
..
..
চলবে??
..
(#ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ৫
লেখাঃ Shakil
..
..
..
..

—- এতদিন নিজের ছেলে- মেয়ের কোন খোঁজ খবর নেই আর আজকে মেয়ের বিয়েতে নামের আগে মৃত বলায় পিতার পরিচয় নিয়ে এসেছেন। আমিসহ বিয়ে বাড়ির সবাই আমার পিতা নামের বেঈমান টাকে অপমান করে অনেক কথাই শুনিয়ে দিলাম।
—- ভাই হাজার হলেও উনি আমাদের বাবা, আমাদের জন্মদাতা। আপু তুই চুপ কর উনি আমাদের কিসের বাবা,,!! জন্মদিলেই কি বাবা হয়ে যাই,,?? উনি পিতা হিসাবে কি দায়িত্ব পালন করেছেন যে আমাদের পিতা হবেন উনি ।
—- আমার পিতা ও মাতা একমাত্র তুই আর কেউ নই। আপু তুই আমার সব। একটু পর উনি সহ আমার সৎ মা চলে গেলেন।
—– আপু এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করলেন। মাসুদ ভাইয়া এসে বললেন লাবণ্য শান্ত হও । কাজী আবার আপুর বিয়ের কাজ শুরু করে দিলেন।
— বিয়ে পড়ানো শেষ, এখন খাওয়া – দাওয়া হবে। আমি একটা জিনিস ভেবে পাচ্ছি না মিতুকে সেই সকালে আপুর সাথে রুমে দেখলাম। ও কোথায় গিয়েছে মনে মনে খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি নাহ।
—- অতপর মিতুসহ ওর বান্ধবীদের দেখা মিললো খাওয়ার টেবিলে। আমি খেয়াল করে দেখলাম মিতুর সাথে যারা বসে আছে একটাও আমার চিনা পরিচিত কেউ নই।
— আমি ওপর দিকে এক টেবিলে খাবার দিচ্ছি,, হঠাৎ মিতুর এক বান্ধবী আমায় ডেকে বললো ,, তুমি আবির নাহ??
—হুমমম,,, আরে চিনতে পারো নাই আমাকে,,,??
একদিন নাহ তুমি আমি মিতু একসাথে তোমাদের কলেজে গিয়ে আড্ডা দিয়ে আসলাম।
আসলে আমার তো মনে পড়ছে নাহ,,
ওহ,,, আচ্ছা
আমি আবার একটু এদিকে আসলাম,,
কিরে মিতু আবিরের সাথে কথাই বললি নাহ যে ?? ও না তোর বেস্টফেন্ড। ঝগড়া করেচিস নাকি??
—- মিতু কিছু না বলে খেতে থাকলো,, মিতু একটা কথা বলবো তোকে??
—- দেখ আবির আগে কত ক্ষ্যাত ছিলো,, এখন অনেক স্মার্ট হয়েছে তাই না??
—- কেন তোর কি পছন্দ হয়েছে আবির কে,, ডাক দিয়ে বলবো যে তুই প্রেম করবি ওর সাথে??
— আরে নাহ এগুলো কি বলিস। তাহলে চুপ করে খা৷
— খাওয়া – দাওয়া শেষ,, আপুকে এখন মাসুদ ভাইয়ার বাসায় নিয়ে যাওয়ার পালা। আমি শুধু ভাবছি আমি এখন বাসায় গিয়ে কি করবো,,?? কার সাথে গল্প করবো?? একা একা কিভাবে থাকবো?? আমায় কে রান্না করে খাওয়াবে??
— কিছু না হতেই কে এসে ভাই ভাই করে ডাকবে ??
আপু অনেক কান্না করলেন,, কিন্তু আমি চাইলেও আপুর মত চিৎকার করে কাঁদতে পারলাম নাহ শুধু দুচোখ বেয়ে জল বেয় হয়ে আসলো।
— আমি আপুকে বিদায় দিলাম। একে একে সবাই হোটেল হতে বিদায় নিলো৷ আমিও বের হয়ে আসছি আর ভাবছি,, আপু যখন মেয়ে হয়ে জন্মনিয়েছে তখন তাকে পরের ঘরে একদিন না একদিন যেতেই হবে৷ কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে আমি যেন আজ সত্যিই এতিম হয়ে গেলাম।
— বাসায় এসে বসতে আপু ওর বাটন ফোনে ফোন দিলো। অনেকক্ষণ আপুর সাথে কথা হলো৷ ও অনেক কান্না করলো। আমি কি বলে শান্তনা দিবো তার ভাষা খুঁজে পেলাম নাহ।
— দুইদিন পর ওয়ার্কশপে সেলাইয়ের কাজ করা সবাই আমার বাসায় আসলো
— বাবা তিনদিন হলো আমরা সবাই কাজ করতে এসে প্রতিদিন ঘুরে যাচ্ছি,, তোমরা কি আর আমাদের দিয়ে কাজ করাবে নাহ???
— আমরা কি ঠীক মতো কাজ করি নাহ,,?? নাকি আমাদের কাজে তোমাদের পুষাচ্ছে নাহ??
—– আসলে তা নয়,,আমার আপুর বিয়ে হলো তো তাই আরকি,,।
ওহ আচ্ছা লাবণ্য মামুনির বিয়ে হয়ে গেলো,,!! তা বাবা জামাই কী করে??
—- দুলাভাই পুলিশ অফিসার।
ওহ লাবণ্য মামনি ভালোই ভাগ্যবতী তাহলে এমন একটা বর পেলো ও।
— আপনারা বসুন একটু,, আমি ওনাদের একমাসের অগ্রিম বেতন দিয়ে দিলাম। উনারা টাকা পেয়ে এতটা খুশি হবে আমি ভাবিনাই৷ কেউ কেউ বললো বাবা এতদিন যে আমরা গার্মেন্টস এ নিজেদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলাম কোন সময় ঠীকমতো টাকা পাই নি,, আর তুমি আমাদের অগ্রিম বেতন দিয়ে দিলে। আমরাও আমাদের সর্বত্র দিয়ে কাজ করবো কথা দিলাম।
— আচ্ছা তাহলে কাল হতেই আপনারা আবার নিয়মিত কাজে আসা শুরু করুন। উনারা সবাই চলে গেলো। আমি জানি যারা এসেছিলেন তারা সবাই গরীব । একমাস পর তো উনাদের বেতন দিতেই হতো এখনি টাকা আছে তো দিতে সমস্যা কোথায়। তাই দিয়ে দিলাম এতে উনারা কাজ করতে ভালো উৎসাহ হবেন।
— ভেবেছিলাম নিজের ভাগ্যটা নিজেই লিখবো,, কিন্তু আপুও এসে সাময়িকের জন্য আমার সাথে যোগ দিয়ে আমায় সঠীক ও ভালো একটা পথ দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো। যাক নিজের ভাগ্যটা নিজেরই লিখতে হয় তা বুজতে পারলাম।
— পরেরদিন আমি সব কাজ দেখাশোনা করছি,, আপু ফোন দিয়ে বললো,, ভাই আজ ৪ দিন হলো তোরে দেখিনাই। আইনা আজকে আমার বাসায়। অনেক কাজ না হলে আমিই যেতাম ভাই।
—- আচ্ছা আমি তাহলে বিকালে যাবো,,
আমার যাওয়ার কথা শুনে আপু অনেক খুশি হলো,, বিকালে আপুর বাসায় চলে গেলাম।
—- আপুর রুমে যেতেই দেখলাম মিতু আর আপু বসে টিভি দেখছে, আমাকে দেখে মিতু তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো।
—-মিতুকে চলে যাওয়া দেখে আমি বললাম “রাগলে অনেক সুন্দর লাগে ”
ও দাঁড়িয়ে গিয়ে কিছু বলতে যাবে কি,, আপু নে এগুলো রাখ (মিষ্টি দিয়ে)
— ভাই বস তুই,, একটু পরেই আপু আমাকে খাবারের টেবিলে নিয়ে গেলো।
আমি টেবিলে গিয়ে তাকিয়ে ভাবছি এই বাড়িতে শুধু ২ টা কাজের মানুষ,মাসুদ ভাইয়া, মিতু, আপু আর উনার বৃদ্ধ বাবা আছেন তাহলে টেবিলে এত রকমের এত খাবার কেনো??
— কি হলো বস,, আমি খাওয়ার টেবিলে বসতে,,ভাবি অনেক খিদে পেয়েছে খেতে দাও বলতে বলতে মিতু আসলো খেতে,, ও আমাকে দেখে আবার ঘুড়পাক খেয়ে চলে যাবে কি আপু বললো কোথাই যাচ্ছ এসো খাবে নাহ??
—- পরে খাবো,, আমার রুমে খাবার দিয়ে রেখো। মুখটা বাকা করে চলে গেলো।
দেখচিস আপু তোর ননদ টা কেমন ডেমাকি,, আমি খেতে বসেছি দেখে ও খেতে এসেও চলে গেলো।
ওর কথা বাদ দে,,তুই খা
—– আপু আমাকে অনেক রকমের খাবার দিলো,,যেগুলো আমার আজ অবদি খাওয়া হয়নি। খাবার মুখে দিয়েই মনের অজান্তে চোখ বেয়ে জল আসলো।
—- আপুকে লুকিয়েই চোখের জল মুছে বললাম আপু রান্না অনেক স্বাদ হয়েছে। তাই ভাই খা তুই যত ইচ্ছে।
— খাওয়া – দাওয়া শেষে ভাবছি আসলেই আমার আপু অনেক ভাগ্যবতী তাই হয়তো এমন একটা বাড়ির বউ হতে পেরেছে।
—- খাওয়া – দাওয়া শেষে আপুর রুমে গিয়ে টিভি দেখছি,, একটুপর আপু আসলো টিভির রিমোট টা নিয়ে ও সিরিয়ালে দিলো,, কিহ আপু তুই এই চারদিনেই সিরিয়াল দেখা শুরু করে দিয়েচিশ??
—- আসলে ভাই আমি নাহ,, মিতু প্রতিদিন এসে আমার সাথে বসে সিরিয়াল দেখতো,, ওর সাথে সাথে আমিও একটু দেখতাম আরকি।
—– ওহ আচ্ছা তা আজ যে আসছে না দেখতে??
আসবে কি করে তুই আছিস যে,, ভাই শুননা মিতু নাহ আমার ওপর অনেক খুশী হয়েছে।
—- কেনও আপু,,,.? ঐযে অপু কেমন তা ওহ তো আমার জন্যই বুজতে পেরেছে। ওহ একটু রাগী হলেও ওর মনটা অনেক ভালো রে ভাই। জানিস না সারাদিন আমার সাথে কত মজা করে। তোর ভাই অনেক রাতে বাসায় ফিরে,, ততক্ষণ আমার কাছে এসে বসে থাকে।
—- ওর মনটা অনেক ভালো।
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছি,, আপু তুইতো মাত্র কয়দিন হলো ওকে চিনিস আর আমার সাথে ওর কতদিনের সম্পর্ক। কিন্তু আপু হঠাৎ মিতুর গুনগান নিয়ে পড়লো কেন??
—- আমি যে মিতুকে পছন্দ করি ও তা জানতে পেরে গিয়েছে নাকি??
সিরিয়াল দেখা শেষে আপু বললো ভাই যাই,, মিতুকে ওর রুমে খাবার দিয়ে আসি তুই বস।
—- আপু খাবার দিয়ে আসলে জানতে চাইলাম মাসুূদ ভাই কখন আসবে??
ও বললো ওর আসতে রাত হবে,, চল পাশের রুমে তোর থাকার ব্যবস্থা করা আছে। আমি আপুরে সাথে গিয়ে শুয়ে পড়লাম আপু চলে গেলো।
—- শুয়ে শুয়ে বলছি মিসেস মিতু,, তুমি যতই আমার থেকে দুরে সরে থাকার চেষ্টা করো না কেন এবার থেকে দুইদিন পরপর এই বাসায় আসবো,,আর তোমাকে জালাবো। দেখি তুমি কি করো।
— এ বাসায় আসার অধিকার এখন আমি পেয়ে গিয়েছি।
একটু পর বাহিরে মাসুদ ভাইয়ার গাড়ির শব্দ পেলাম। ভাই হয়তে এসে গেছে৷ আমি পাশের রুমে শুয়ে শুনছি,,
ভাই আপুকে বলছে,, কই তোমার ভাইকে যে ফোন করে সকালে আসতে বললে ও আসে নাই??
— হুমমম এসেছে,,, কোথায় ডাকো সালাবাবু প্রথম আসলো বাসায় একটু গল্প করি বসে। ও পাশের রুমে ঘুমাচ্ছে। ওহ ঘুমিয়ে গিয়েছে নাকি তাহলে ডেকো নাহ।
নাহ ঘুমায় নি,, তোমার জন্য বসে থেকে থেকে এই মাত্র গেলো ।
ভাইয়া আমাকে সালাবাবু বলে ডাকলো আমি উঠে গেলাম।
—- কিছু কথাবার্তা বলার পর উনি বললেন,, কালকে তোমরা দুজন আমার সাথে একটু থানায় যেও। তোমাদের আব্বু জেলে।
আমি কিছু বলতে যাবো কি আপু বলে বসলো,, আব্বু জেলে মানে কি হয়েছে আব্বুর ??
—- তোমার সৎমা আর উনার বাবা তোমার আব্বুর দ্বিতীয় পক্ষ ও ছেলে মেয়ে রয়েছে জানতে পেরেছেন। তোমার আব্বু উনাদের মিথ্যা কথা বলা ও সব গোপন রাখাই উনাকে চোরের অপবাদসহ আর কিছু মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন ।
—- তুমি আমার আব্বুকে জেলে দিতে পারলে,,?? আমার হাত আইনে বাঁধা।
আপু এত অস্থির ও কান্না করছে কেন উনাকে জেলে দিয়েছে তো কি হয়েছে,, উনি তো আমাদের কাছে মৃত,, বুজলাম নাহ আমি
— উনার যেমন কর্ম তেমনই ফল পেয়েছেন ,, আপুর কান্নাটা বেড়েই গেলো। মাসুদ ভাইয়া ও আমি আপুকে শান্তনা দিয়ে আমি রুমে চলে আসলাম।
—- পরের দিন সকালে উঠতেই মিতু আমার রুমে কফি নিয়ে আসলো,, আমি তো পুরাই অবাক মিতু আমার জন্য…
..
..
..
..
চলবে??
..
( ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here